তুমিময় আসক্তি পর্ব-১১+১২

0
1299

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১১”

–” কেটে যায় দুদিন…
–” রুদ্র আর দোলার বিয়ের প্রায় এক সপ্তাহ শেষ। এই দুদিনে দোলা রুদ্রকে অনেক ভাবে জ্বালিয়েছে। আর বেচারা রুদ্র দোলার হুমকিতে মুখ বুজে সব সহ্য করে যাচ্ছে। কারণ সে দোলাকে এক দন্দ বিশ্বাস করে না। তাই দোলা যে রুদ্রর নামে বাইরে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে বেড়াবে না এর কোনো বিশ্বাস নেই এমনটাই মনে করে রুদ্র।

–“” তবে রুদ্রও দোলাকে অনেক কথা শুনিয়েছে৷ অনেক ভাবে অপমানও করেছে৷ কিন্তু দোলা সে সব হাসি মুখে সয়ে গেছে। কারণ সে জানে তার জন্য এই গুলো প্রাপ্য থাকবে৷ রুদ্র যেমন মানুষ সেখানে থেকে তার সামনে থাকতে পারছে, লড়াই করতে পারছে এটাই যথেষ্ট দোলার জন্য। রুদ্র প্রায় রাতে সোফায় ঘুমানোর জন্য যায়। কিন্তু সকাল হলে দুজনকে এক বিসানায় পাওয়া যায়। দোলা সকালে উঠে রুদ্রকে তার পাশে দেখে মুচকি হাসে প্রতিদিনই। দোলা বিশ্বাস করে রুদ্র একদিন দোলাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। তার অনুপস্থিতি রুদ্রকে ভীষণ ভাবে পোড়াবে। তবে দোলার ভয় হয়,সে দিন টা আসতে আবার বেশি দেরি না হয়ে যায়। সব কিছু উল্টো পালটা হওয়ার পর যেনো তার শুন্যতা অনুভব না করে রুদ্র।

-জাহির চৌধুরী তার ঘরে বসে আছে। হাতে তার একটা ছবির ফেম। কিন্তু কার এটা দেখা যায় না৷ কারণ ফেমটা উল্টো দিক ভাবে রয়েছে৷ দোলা জাহির চৌধুরীর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে আসবো বাবা?

— কারো কন্ঠস্বর পেয়ে জাহির চৌধুরী হাতে থাকা ছবির ফেমটা সংগোপনে আড়াল করে, যেটা দোলার চোখ এড়ায় না। জাহির চৌধুরী এমন কাজে দোলার কৌতুহল বেড়ে যায় একটু। কার ছবি লুকালেন বাবা এমনটা ভাবে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দোলা।

– জাহির চৌধুরী নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসি মুখে বলে কে দোলা’মা? দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে আয়। তোর আবার অনুমতি লাগে নাকি আমার ঘরে আসার জন্য। যখন ইচ্ছে চলে আসবি বলে জাহির চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে তার আলমারির কাছে যায়। এরপর সেটা লক করে এসে দোলাকে উদ্দেশ্য করে বলে কিছু বলবি?

– দোলা এখনো কৌতুহলী ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে জাহির চৌধুরীর দিকে। জাহির চৌধুরীর কথায় মুখটা স্বাভাবিক আকৃতি বজায় রেখে বলে বাবা একটা কথা বলার ছিলো। যদি অনুমতি দিতেন তো বলতাম? বেশ সংকোচ নিয়ে বলে কথাটা দোলা।

“” দোলার সংকোচ পূর্ণ কথায় জাহির চৌধুরী সাবলীল ভাষায় বলে এতো কিন্তু কিন্তু করার কি আছে দোলা’মা৷। বলনা কি বলবি?

– আসলে বাবা! আমাদের তো বিয়ের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত আমরা ওই বাড়িতে যায়নি। এর জন্য পাড়াপ্রতিবেশি এবং আত্মীয়স্বজন রা অনেক কথা বলছেন।৷ তাই বাবা বলতেছিলো…. বাকিটা বলার আগে থেমে যায় দোলা।

– দোলার এমন বাচ্চামো স্বভাব দেখে জাহির চৌধুরী হো হো করে হেসে উঠে শব্দ করে। জাহির চৌধুরীর হাসি দেখে দোলা লজ্জা পায় কিছুটা।

-“” এই কথাটা বলার জন্য এত সংকোচ কেনো রে মা। তাছাড়া এটা তো নিয়ম। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী শ্বশুর বাড়ি ঘুরতে যায়। আমার নিজেরই উচিত ছিলো তোদের পাঠানো। কিন্তু আমি ভুলে গেছি একদম ব্যাপারটা মুখটা মলিন করে বলে এবার কথাটা জাহির চৌধুরী।

– কিন্তু বাবা আপনার ছেলে কি রাজী হবে যাওয়ার জন্য। তাছাড়া উনি না গেলে আরো অনেক কথা শোনাবে সবাই বাবাকে।

– ও নিয়ে তুই চিন্তা করিস না৷ আমি বলব রুদ্রকে। ও আমার কথা ঠিক রাখবে। তুই যা ওই বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নে। আজ বিকেলেই যাবি তোরা ওকে। রুদ্র আসলে আমি বলছি।

– জাহির চৌধুরী কথায় দোলার মুখে হাসি ফুটে। হাসি মুখে বলে ঠিক আছে বাবা৷ তাহলে আমি সব গোছগাছ করি বলে দোলা ছুটে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। দোলার আনন্দ মাখা মুখটা দেখে জাহির চৌধুরীর ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু তার অন্য চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ রুদ্রকে কিভাবে সে ম্যানেজ করবে। দোলাকে তো বলে দিলো রুদ্র যাবে সাথে। কিন্তু সত্যি কি রুদ্র যাবে?

–” দোলা তার জামা কাপড় ল্যাগেজে রাখছে আর এইদিকে তানিয়া মুখ ভাড় করে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। তানিয়ার মুখভঙ্গি দেখে দোলা ফ্যাকাসে চেহারায় বলে এমন করে তাকিয়ে থেকো না তানিয়া। খারাপ লাগছে কিন্তু।
— তুমি আমাকে রেখে চলে যাচ্ছো বউমণি। আমি এখন একা একা কি করবো বাড়িতে। তুমি না থাকলে তো আমার ভালো লাগবে না।

– দোলা একটু ভেবে বলে আচ্ছা বাবাকে বলি তুমি সহ আমাদের সাথে যাবে৷ যদিও জানি না তোমার ভাইয়া যাবে নাকি। কিন্তু তুমি তো যেতে পারো আমার সাথে। আমাদের ওইখানটা তোমার দেখে হয়ে যাবে হাসি মুখে বলে দোলা কথাটা।
– দোলার প্রস্তাবটা তানিয়ার ভীষণ ভালো লাগে। তাই সে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বলে রিয়েলি বউমণি আমিও যাবো তোমাদের সাথে?

– দোলা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে। তানিয়া খুশি হয়ে দোলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এতে দোলার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।

– আরে আরে তানিয়া কি করছো ছাড়ো। খুশিতে কি দম বন্ধ করে মেরে দিবে নাকি। দোলার কথায় তানিয়া দোলাকে ছেড়ে দিয়ে বলে সরি সরি বউমনি। আসলে আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। আচ্ছা যায় আমিও রেডি হয় বলে তানিয়া আনন্দের সাথে বেরিয়ে যায়। তানিয়ার কাজে দোলা হেসে বলে পাগলী মেয়ে একটা। এরপর সে তার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়।

— দোলা সব কিছু রেডি করে নিয়ে নিজে রেডি হয়ে রুদ্রর অপেক্ষা করছে। এখন প্রায় সন্ধ্যা। রুদ্র এখনো বাড়ি ফিরেনি৷ দোলা তার বাবাকে অনেক আগে জানিয়ে দিয়েছে আজ তারা আসছে সেখানে। কিন্তু রুদ্রর পাত্তা নেই। তানিয়া দোলা দুজনেই মন খারাপ করে বসে আছে। জাহির চৌধুরীও চিন্তিত হয়ে আছে। রুদ্রকে ফোন করা হচ্ছে বারবার কিন্তু ফোন বারবারই সুইচ অফ বলছে।

— বাবা আমাদের যাওয়া মনে হয় হবে না। আমি বাবাকে ফোন দিয়ে বলে দিই আমাদের যাওয়া হচ্ছে না। নাহলে বাবা আবার পথ চেয়ে থাকবে। অনেকটা চাপা কষ্ট নিয়ে বলে কথাটা দোলা। দোলার রুদ্রর প্রতি অভিমানটাও তীব্র হচ্ছে৷ যদিও রুদ্র এইসবের কিছু জানে না। তারপরও ফোন টা তো মানুষ খোলা রাখে। তার থেকে কিছু আশা করা যায় না ঠিক আছে তাই বলে কোনো কিছুতেই তার উপস্থিতি থাকবে না এটাও তো হয়না। এই সব কথা গুলো ভাবছে দোলা আর রুদ্রর প্রতি রাগের পরিমাণটা বাড়ছে। আসলে এটা রাগ বলাও চলে না। অভিমানের বহিঃপ্রকাশ সব।

— রাত ১০ টা বাজে। দোলা সন্ধ্যা পর থেকে ঘর থেকে বের হয়নি। মনটা ভীষণ ভাবে খারাপ তার। কত আশা নিয়েছিলো আজ সে নিজের বাড়ি যাবে। বাবা ভাইয়ের সাথে সময় কাটাবে কিন্তু তার কিছুই হলো না। আসলে মেয়েদের জীবন বুঝি এমনই। সব ঠিক থেকেও ঠিক হয়না। দোলা একপাশ ফিরে শুয়ে আছে। তানিয়া দুবার এসে দোলাকে দেখে গেছে। দোলার জন্য তানিয়ারও মন খারাপ। সে জানে দোলা আজকের জন্য কষ্ট পেয়েছে। তাই তানিয়া দোলাকে আর বিরক্ত করে না। দরজার আড়াল থেকে দেখে দেখে চলে গেছে।

– “””” জাহির চৌধুরী ভীষণ ক্ষিপ্ত রুদ্রর প্রতি। সব কিছুর একটা লিমিট থাকে। রুদ্রকে কিছু বলা হয়না বা তার মুখের উপর কেউ কথা বলতে পারেনা বলে এই না সে যা ইচ্ছে করবে। রুদ্রকে আজ ভীষণ বকবে এই মনস্থির করে অপেক্ষা করছে রুদ্রর জন্য তিনি।

— ভাইজান খাবে না? রাত তো অনেক হয়েছে৷ এসো খেয়ে নিবে। আজ বাড়িতে কি হচ্ছে কিছু বুঝছি না। মনে হচ্ছে শোকসভা বসেছে বাড়িতে। একজন মহারানীর মতো উপরে গিয়ে বসে আছে নিচে নামার খোঁজ নেই। বাড়িতে যে আরো মানুষ আছে। তাদের খাওয়া দাওয়া লাগবে এইসবে খোজ নেই। সে নাকি বাড়ির বউ। বাড়ির বউয়ের এমন গুণ জানা ছিলো না। বিদ্রুপ করে বলেন কথা গুলো জেসমিন চৌধুরী। এমনকি একটু উচ্চস্বরেও বলে যাতে করে দোলার কর্ণপাতও হয়।

– আহ জেসু। এই ভাবে চিৎকার করছিস কেনো। তোর দরকার তুই খেয়ে নে না। তাছাড়া বাড়িতে কি কাজের মানুষের অভাব নাকি৷ তুই কেনো সব কাজে দোলাকে জড়াস৷ ও এই বাড়ির বউ। কাজের লোক না। আর যদি কাজের কথা বলিস তুইও তো একটু নিজে কাজ করে নিতে পারিস৷ সব সময় তো শুয়ে বসে পার করিস। গম্ভীর কন্ঠে বলে কথা গুলো জাহির চৌধুরী।

– জাহির চৌধুরীর কথায় জেসমিন চৌধুরী সেই ন্যাকা কান্না জুড়ে বলে ভাইয়া তুমিও আমাকে খোটা দিচ্ছো। আমি এই বাড়িতে থাকি খাই তাই আমাকে এইভাবে বললে। এখন আমিও তোমার কাছে পর হয়ে গেলাম।। দুদিনের আসা ওই মেয়েটা তোমার কাছে এত প্রিয় হয়ে গেছে। আর হবে না কেনো জাদু করে রেখেছো তো তোমাদের৷ আমার আর দাম কোথায় এই বাড়িতে৷ থাকবো না আমি আর এই বাড়িতে। যেখানে সম্মান নেই সেখানে না থাকায় ভালো। আমি কালই চলে যাব এই বাড়ি ছেড়ে। আসলে রুদ্র বাবাকে অনেক ভালোবাসি তার মায়ায় পড়ে থাকি। কিন্তু বুঝিনি এখন রুদ্ররও আমার প্রয়োজন নেই এই বাড়িতে কথা গুলো বলে কান্না করে জেসমিন চৌধুরী। কিন্তু চোখে তার একটু পানি নেই। শুধু ককণ্ঠস্বরেই কান্নার রেস তার।

– জেসমিন চৌধুরীর কথায় জাহির চৌধুরী অনেকটা বিরক্ত নিয়ে বলে তোর যা খুশি তুই তাই কর। দয়া এখন এখান থেকে যা। আমাকে একা থাকতে দে। ভালো লাগছে আর এই সব। এর মধ্যে রুদ্রর প্রবেশ।

– জেসমিন চৌধুরী রুদ্রকে দেখে কান্নার স্বর টা আরো বাড়িয়ে বলে রুদ্র বাবা তুই এসেছিস। তুই বল আমি কি করবো? তুই যেটা বলবি আমি সেটাই করবো। যদি বলিস এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে তাই যাবো তাও অপমান আর করিস না আমাকে বাবা।
— বাড়িতে প্রবেশ করেই এমন কিছুর সম্মুখীন হবে রুদ্র ভাবেনি। সারাদিনের কাজে ক্লান্ত সে। তার উপর বাড়ি ফিরতে এমন অবস্থা।

– কি হয়েছে পিপি৷ তুমি কান্না করছো কেনো? আর বাড়ি ছেড়ে বা যাবে কেনো? এটা তো তোমার বাড়ি। তোমারও অধিকার আছে। বেশ থমথমে গলায় বলা রুদ্র।

– এটা তুই মনে করিস রুদ্র কিন্তু বাকিরা কি তাই ভাবে৷ আমাকে দূর ছাই করে সব সময়। যে ভাইজান আমাকে চোখে হারাতো সে ভাইজান আজ আমাকে কাজের খোটা দেয়৷ তাও ওই বাইরের মেয়েটার জন্য।

– জেসু এবার কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে। আমি মোটেও তোকে সেই ভাবে কিছু বলিনি৷ তুই তিলকে তাল করে রুদ্রকে নালিশ দিস না। তাছাড়া রুদ্রর সাহস নেই আমার উপর দিয়ে কিছু বলার। তাই তোর জন্য ভালো হবে তুই এখন চুপচাপ এখান থেকে চলে যাবি। আমার রুদ্রর সাথে কথা আছে।

– জেসমিন চৌধুরী বুঝতে পারে তার ভাই এখন অনেক রেগে আছে। তাই বেশি বাড়াবাড়ি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই জেসমিন চৌধুরী আর রিস্ক না নিয়ে কান্নার অভিনয় করে ঘরে চলে যায়। রুদ্র জেসমিন চৌধুরীকে যেতে দেখে একটা স্বস্তি শ্বাস ত্যাগ করে। কিন্তু এখন চিন্তা তার বাবার কথায়। রুদ্র এতখনে উপলব্ধি করতে পেরেছে তার বাবা ভীষণ রেগে আছে। কিন্তু কেনো রেগে আছেন এটাই বুঝতে পারছে না।

— এত দেরি করলে কেনো বাড়ি ফিরতে?
– জাহির চৌধুরীর গম্ভীর কন্ঠের কথায় রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে রিয়েলি ড্যাড। এখন তুমিও আমার থেকে কৈফিয়ত চাচ্ছো। তাছাড়া আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে রাত করে বাড়ির বাইরে থাকতে বা ফিরতে পারবো না।

— বেশি হেয়ালিপনা না করে সোজা প্রশ্নের সোজা জবাব দাও রুদ্র।

-“” একটা কাজে গিয়েছিলাম গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে কথাটা।
– তোমার ফোন বন্ধ কেনো তাহলে?
– হয়তো চার্য আউট হয়ে গেছে। এনিওয়ে তুমি কেনো আমাকে এইভাবে জেরা করছো। রিজেনটা বলো। আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে। রেস্টের প্রয়োজন।

– জানো তোমার জন্য আজ দোলা কত কষ্ট পেয়েছে৷ ওইটুকু একটা মেয়ে যে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছে৷ শুধু মাত্র তোমার জন্য। আজ যেখানে একটু খুশি করার কারণ পেলাম সেখানেও মেয়েটা কষ্ট পেলো তাও তোমার জন্য।

– জাহির চৌধুরীর কথায় রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে মানে?

– আজ তোমাদের রাশেদের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো। মেয়েটা কত আশা নিয়ে অপেক্ষা করতে ছিলো সেখানে যাবে বলে আর তোমার কোনো খোঁজ নেই।

– তো? এই সবে আমার কিছু যায় আসে না। কার কি হলো না হলো আই ডোন্ট কেয়ার। আমার জন্য অপেক্ষা করা তোমাদের বোকামি ছিলো আমার নয়। আমি কখনোই ওই ষ্টুপিড মেয়েটার সাথে ওই বাড়িতে যাবো না৷ তাছাড়া যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কেনো যাবো আমি সেখানে? আমি জাস্ট তোমার কথা রাখতে বিয়েটা করেছি। এর বাইরে আমার থেকে তোমরা আর কিছু এক্সপেক্ট করতে পারো না শক্ত ভাবে বলে কথা গুলো রুদ্র।

— দেখো রুদ্র৷ জীবনটা কোনো ছেলে খেলা নয়৷ আর জীবনে হয়ে যাওয়া বিষয় গুলো হেয়ালির জিনিস নয়। তোমার ইচ্ছে তে হোক আর অনিচ্ছায় হোক বিয়েটা তোমাদের হয়ে গেছে। তাই এটা তোমাকে এখন মানতেই হবে। দোলার জীবন তোমার সাথে জড়িয়ে গেছে৷ তোমাকে ছাড়া এখন দোলার কোনো নিজস্ব পরিচয় নেই। তাই ওর সব কাজে তোমাকে লাগবে এবং তুমি কাল দোলার সাথে দোলাদের বাড়িতে যাবে এটা আমার আদেশ রুদ্র। জাহির চৌধুরী দৃঢ় কন্ঠে বলেন।

– আমাকে এমন কোনো আদেশ দিও না ড্যাডি যেটা আমি পালন করতে পারব না। আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই ওই মেয়েটার জন্য। এটা আগেও বলেছি এখনো বলছি। আই রিপিট আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট দ্যাট গার্ল।

– রুদ্রর কথায় জাহির চৌধুরী হতাশ হয়। হতাশা পূর্ণ গলায় বলে একবার আমার বা রাশেদের সম্মানের কথাটা ভাবো রুদ্র। রাশেদকে তার পাড়াপ্রতিবেশি এমনকি আত্মীয়স্বজন রা পর্যন্ত নানা কথা শোনাচ্ছে। এটা তো নিয়ম বিয়ের পর শ্বশুর যাওয়া স্ত্রী কে নিয়ে। তুমি অন্তত আমার সম্মানের কথা ভেবে একটা দিন কাটিয়ে এসো রুদ্র প্লিজ। বাবা হয়ে আমি তোমাকে হাত জোড় করে বলছি।

— প্লিজ ড্যাডি এমন করে বলো না। আমি যেটা পারবো না সেটা আমাকে দিয়ে করিও না। আমি এমনি অনেক ঝামেলার মধ্যে আছি তোমার কথায় বিয়েটা করে। প্লিজ আর কোনো কিছুর মধ্যে আমাকে জড়িয়েও না নরম হয়ে বলে কথা গুলো রুদ্র।

— দোলা উপর থেকে রুদ্র সব কথা শুনে। দোলার ভেতরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে যেনো। সব কিছু তোলপাড় করে দিয়ে যাচ্ছে ভেতরে। রুদ্রর বলা প্রতিটি কথা তার কাছে ছুড়ির আঘাতের ন্যায় ছিলো।। দোলা ওড়নার আঁচলে মুখ চেপে ধরে কান্না করতে করতে রুমের মধ্যে চলে যায়। বারান্দার এক পাশে গুটিসুটি মেরে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে সে। আজ দোলা নিজেকে কোনো ভাবেই সামলাতে পারছে না। রুদ্রর মনে তার জন্য কোনো জায়গা নেই ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে একটা মানুষ হয়ে কি তার কাছে কিছু আশা করতে পারবে না। নারী হয়ে এত ভুল করেছে দোলা। তার জন্য এত ঘৃণা, এই সব কথা ভেবে আরো বেশি কান্না আসতে চাই দোলার।

– রুদ্র গটগটে পায়ে রুমে চলে আসে। জাহির চৌধুরী হতাশ হয়ে সোফায় বসে পড়ে। কপালে হাত ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে বলে, আমাকে মাফ কর দোলা মা। আমি সত্যি তোর জীবনটা নষ্ট করে দিলাম। আমার ভাবনা ভুল ছিলো রে মা। আমার জন্য তুই সব ভোগ করছিস। আমাকে মাফ কর মা তুই বিড়বিড় করে বলে কথা গুলো জাহির চৌধুরী।

– পেছন থেকে তানিয়া কাধে হাত রাখে তার৷ জাহির চৌধুরী অসহায় চোখে তানিয়ার দিকে তাকায়। জাহির চৌধুরীর চোখ মুখে অনুশোচনার ছাপ।

-“”” চিন্তা করো না মামু। দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া ব্রো তো এমনই। তবে আমার বউমণির উপর বিশ্বাস আছে। দেখবে সে একদিন এই রুদ্রনীল চৌধুরীকে চেঞ্জ করে নতুন রুদ্রনীল চৌধুরীর জন্ম দিবে।

– সেই আশায় তো ওই মেয়েটার সাথে এই হৃদয়হীন মানবের বিয়েটা দিলাম তানিয়া মা। কিন্তু আমার ভাবনা মনে হচ্ছে ভুল ছিলো। আমি মনে হয় সত্যি দোলার জীবন টা নষ্ট করে দিলাম৷ আমি এখন রাশেদের সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো বলতে পারিস?

– তানিয়ার কিছু বলার নেই এই কথার বিপরীতে। সত্যি ভাগ্য আজ সবাইকে এমন একটা জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সব কিছু দেখা ছাড়া কোনো কিছু করার নেই৷ তবে দোলার জন্য বড্ড খারাপ লাগে তানিয়ার৷ ওই মেয়েটা কিভাবে এই সব উপেক্ষা করে চলে এটা ভেবেই দম বন্ধ আসে প্রায় তানিয়ার। সে হলে নিশ্চয় কখনো পারতো না এমন করে সব সহ্য করতে৷ যতই তার ভাই হোক। একটা মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের মন তো বুঝে সে।

…চলবে…

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১২”

-“”” কেটে গেছে একদিন। দোলা এই একদিন তেমন রুদ্রর সামনে যায়নি। আসলে রুদ্রর বলা কথা গুলো দোলা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না৷ জাহির চৌধুরীও রুদ্রর সাথে কথা বলছে না৷ রুদ্র জাহির চৌধুরীর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছেন। রুদ্র তার বাবার কাজে অবাক হয় একটু। কিন্তু তারপরও সে তার সিদ্ধান্তে অটুট থাকবে এই মনস্থির করে।

– রাতে সবাই খেতে বসেছে। আজ রুদ্রও আছে সবার সাথে ডাইনিং-টেবিলে। দোলা খাবার সার্ভ করছে। তানিয়া, জেসমিন চৌধুরী,রুদ্র জাহির চৌধুরী খাচ্ছেন। জাহির চৌধুরী দোলাকে বসতে বলে তাদের সাথে কিন্তু দোলা পরে খাবে বলে জানায়। রুদ্র একবার দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করে। তবে দোলার মুখটা একদিনে কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। মুখে হাসি নেই তার। তানিয়ার খারাপ লাগে এইভাবে দেখতে দোলাকে৷ কিন্তু দোলার মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে একমাত্র দোলায় জানে। তাই তানিয়া আর এই ব্যাপারে ঘাটায়নি দোলাকে।

– একটু পরেই রুদ্র হঠাৎ করে কাশতে শুরু করে। আস্তে আস্তে তার কাশির পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। সাথে শ্বাস কষ্টও শুরু হয়। রুদ্রর এমন অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই চমকে যায়। দোলা তাড়াতাড়ি করে রুদ্রর পাশে এসে রুদ্রকে ধরে পিঠে হাত বুলাতে থাকে।

– রুদ্র যেনো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে৷ কিন্তু হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ কারোই মাথায় আসছে না।

– কি হয়েছে রুদ্র তোমার? শরীর খারাপ করছে? হঠাৎ কি হলো কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলো ব্যস্ত হয়ে বলে জাহির চৌধুরী। দোলার চোখে পানি চলে আসে রুদ্রর অবস্থা দেখে। রুদ্রকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় ভীষণ দোলা।

— বাবা আপনি প্লিজ ডক্টরকে কল করুন উনার খুব কষ্ট হচ্ছে বলে কেঁদে দেয় দোলা। রুদ্র দোলার এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে কাশতে থাকে।

– একি চিংড়ি মাছ? চিৎকার করে বলে উঠে জেসমিন চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরীর কথায় সবার মনোযোগ তার দিকে যায়।

– কিসের চিংড়ি মাছ। এখানে চিংড়ি মাছ এলো কোথায় থেকে জেসু ?ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে জাহির চৌধুরী।

– এই দেখো ভাইজান সব্জিতে চিংড়ি মাছ৷ এই জন্য রুদ্রর এমন শ্বাস কষ্ট হচ্ছে৷ ওর শরীর খারাপ করছে৷ রুদ্রর তো চিংড়ি মাছে এলার্জি আছে ভাইজান৷ বেশ আগ্রহের সাথে বলে কথাটা জেসমিন চৌধুরী।

– দোলা সব্জিতে চিংড়ি মাছ দেখে চমকে যায়। অবাক হয়ে বলে এখানে চিংড়ি মাছ এলো কিভাবে? আমি তো কোনো তরকারিতে চিংড়ি মাছ দেয়নি। তাছাড়া উনার যে চিংড়ি মাছে এলার্জি আছে সেটা তো আমি জানি।

– তাহলে কি ভুতে এসে দিয়ে গেছে মা আমার, কটাক্ষ করে বলে জেসমিন চৌধুরী দোলাকে।
– বিশ্বাস করুন ফুপি আমি চিংড়ি মাছ দেয়নি।

– একদম চুপ। আর একটা কথাও বলবে না তুমি৷ সব সময় বড় বড় কথা৷ নিজের স্বামীর কিসে সুবিধা অসুবিধা এটা জানো না৷ আবার বাড়ির বউ বলে দাবি করো। লজ্জা করছে না এখনো বড় মুখ করে কথা বলতে।

— আহা গো বাছা আমার৷ খুব কষ্ট হচ্ছে তোর তাই না বাবা। তাই বলে রুদ্রর কাছে যায় জেসমিন চৌধুরী। দোলাকে রুদ্রর পাশ থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে, এখন আর নাটক করতে হবে না সবার সামনে। দেখাচ্ছো স্বামীর জন্য কত ভাবো তুমি। তোমার জন্য রুদ্রর এই অবস্থা আজ। না জানি কত কষ্ট হচ্ছে আমার ছেলেটার।

– রুদ্র এখনো ভীষণ অস্বস্তিতে আছে। শ্বাস কষ্ট টা একটু কম লাগলেও কাশিটা অনবরত হতে আছে। রুদ্রর শরীর ক্রমাগত নেতিয়ে পড়ছে যেনো। আসলে রুদ্রর চিংড়ি মাছে বাজে ভাবে এলার্জি আছে। তাই রুদ্র কখনো চিংড়ির ধারেপাশেও যায়।

– জাহির চৌধুরী নীরব দর্শকদের ভুমিকা পালন করছে। আসলে এমন কি করে হলো সেও বুঝতে পারছে না৷ দোলা যে এমন একটা কাজ করবে না সে বিশ্বাস তার আছে। কিন্তু সব কিছু তো দোলায় রান্না করেছে তাহলে চিংড়ি সে না দিলে আর কে দিবে। এই দোটানার মধ্যে ভুগে জাহির চৌধুরী।

– দোলা কিছু একটা ভেবে সোজা দৌড়ে উপরে যায়। জেসমিন চৌধুরী রুদ্রর বুকে পিঠ মালিশ করতে থাকে। তানিয়াও অবাক হয়ে গেছে। তানিয়া সবজির বাটিটা এগিয়ে নিয়ে দেখে সত্যি তার মধ্যে চিংড়ি মাছ। কিন্তু দোলা কি জেনে এমন কাজ করবে?

– দোলা ঘরে এসে রুদ্রর ওসুধের বক্স থেকে এলার্জির ওসুধ বের করে আবার দৌড়ে নিচে চলে আসে।

– ওসুধটা রুদ্রর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে এই নিন ওসুধটা খেয়ে নিন। রুদ্র চোখ লাল করে দোলার দিকে তাকায়, কিন্তু কাশি এখনো থামেনি রুদ্রর।

-রুদ্রর তাকানো দেখে দোলা অসহায় চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে। যে চোখ বলে যাচ্ছে দোলা কিছু করেনি। জাহির চৌধুরী দোলার হাত থেকে ওসুধটা নিয়ে রুদ্রকে খায়ে দেয়। কিছু মিনিট যেতে রুদ্র একটু শান্ত হয়৷ কিন্তু ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার।

– তানিয়া রুদ্রকে ঘরে দিয়ে এসো ধরে। ওর বিশ্রামের প্রয়োজন।
– তার কোনো দরকার নেই ড্যাড আমি একাই পারবো যেতে বলে উঠে দাঁড়ায় সে। এরপর এলোমেলো পায়ে উপরে যায়। দোলা ছলছল চোখে তাকায় জাহির চৌধুরী দিকে।

— বিশ্বাস করুন বাবা আমি এই সব কিছু করিনি। আমি চিংড়ি মাছ সবজিতে দিইনি। তাছাড়া আমি যখন জানি উনার চিংড়ি মাছে সমস্যা তাহলে কেনো এমনটা করতে যাবো?

– কেনো আবার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। রুদ্র তোমার সাথে বাপের বাড়ি যায়নি৷ সে রাগে তুমি প্রতিশোধ নিয়েছো।

– ফুপি… চিৎকার করে বলে দোলা।
– এই একদম চোখ রাঙ্গাবে না আমাকে। আঙ্গুল তুলে বলে জেসমিন চৌধুরী।

– চোরের মায়ের বড় গলা৷ তোমার হয়েছে তেমন। শুনো একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, ফের যদি রুদ্রর কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করছো তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না এটা মনে রেখো।

– মা এই সব কি বলছো তুমি?বউমনি কেনো ভাইয়াকে কষ্ট দিতে যাবে। তাছাড়া আমার পুর্ণ বিশ্বাস আছে বউমনি এমন কিছু করেনি। কোনো একটা সমস্যা তো আছেই। কিন্তু চিংড়ি মাছ এখানে এলো কি করে এটাই বুঝতে পারছি না ভাবান্তর হয়ে বলে তানিয়া.।

-“” শুনো তানিয়া৷ তোমরা ওর ভালো মানুষীতে ভুলতে পারো কিন্তু আমি না। এই মেয়ে যে কতটা চালাক আর ধরিবাজ মেয়ে সে আমি জানি৷ সবার খাওয়ার মুড টাই নষ্ট করে দিলো এই মেয়ে।

– দোলা আর সহ্য করতে পারে না এই সব। কিছু না করেও তাকে অপরাধী হতে হচ্ছে। দোলা দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে। জাহির চৌধুরী উঠে চলে যায়। তানিয়াও তার ঘরে চলে যায়। জেসমিন চৌধুরী চোখ মুখে প্রশান্তির ছায়া। মুখে তৃপ্তিকর হাসি৷ বাকা হাসি দিয়ে সেও চলে যায় তার ঘরে।

— দোলা ঘরে এসে দেখে রুদ্র ঘুমিয়ে গেছে। দোলার অনেক কান্না পাচ্ছে। দোলা মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে। রুদ্রর কান পর্যন্ত যেনো সে কান্নার শব্দ না যায় সে চেষ্টায় করছে দোলা।

– দোলা দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াসরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে পানির ট্যাপ ছেড়ে জোরে কান্না করতে থাকে।
— রুদ্রকে সে কষ্ট দিতে চাই এটা যেনো কোনো ভাবেই মানতে পারছে না দোলা। যদিও সে জানে জেসমিন চৌধুরী একটু সুযোগ পেলে কথা শোনাতে ছাড়েন না৷ যা নয় তাই বলে , কিন্তু দোলা রুদ্রর ক্ষতি করবে এটা কি করে বলতে পারলো সে।

– দোলা কিছুক্ষণ কান্না করার পর চোখ মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসে৷ রুদ্র নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঘুমাচ্ছে এক হাত মাথার নিচে দিয়ে। দোলার একটু আগে রুদ্রর মুখোশ্রী ভেসে উঠে। রুদ্রর চোখ মুখ কেমন লাল বর্ণ ধারণ করেছিলো। কেমন ছটফট করতে ছিলো যেনো।

– দোলা আস্তে আস্তে রুদ্র কাছে এগিয়ে যায়। রুদ্র মাথার কাছে দাঁড়িয়ে কিছুখন অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে। দোলা হাত ডান রুদ্রর মাথার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়েও আবার থেমে যায়। একটা টানাশ্বাস ছেড়ে রুদ্রর পায়ের কাছে এসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে।

– আমি জানি আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না৷ আমাকে নিয়ে আপনার কোনো ইন্টারেস্ট নেই এটাও জানি। কিন্তু একটা কথা সত্যি করে বলবেন, ফুপির মতো কি আপনিও বিশ্বাস করেন আমি এমনটা করেছি। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চেয়েছি? কথা গুলো বলতে চোখ ভরে আসে দোলার। দোলা খাটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। কিছুখনের মধ্যে সেও ঘুমিয়ে যায় এইভাবে।

– দোলা ঘুমাতেই রুদ্র চোখ খুলে ফেলে। আসলে এতখন রুদ্র ঘুমের ভান ধরে ছিলো। দোলাকে আসতে দেখেই চোখ বন্ধ করেছিলো রুদ্র। কিন্তু দোলার শেষের কথা গুলো শুনে রুদ্রর একটু খারাপ লাগে। দোলার জন্য আজ প্রথম রুদ্রর এমন অনুভূতি।

– রুদ্র খাট থেকে নেমে দেখে দোলা খাটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে৷ কান্না করার ফলে চোখ ভুলে গেছে৷ এমনকি চোখের কোণে পানি শুকিয়ে সাদা দাগ পড়ে আছে৷ আজ দ্বিতীয় বারের মতো রুদ্র হয়তো দোলাকে এমন নিখুঁত ভাবে দেখছে। দোলার মধ্যে কিছু একটা আছে। অচেনা মায়ার টান কাজ করে। যার জন্য রুদ্র দোলার দিকে তাকালে সে মায়ায় আবদ্ধ হয়ে যায়।
— রুদ্র ভাবে কি করবে সে। দোলাকে এইভাবে রাখবে নাকি ভালো করে শুয়ে দিবে। এই দোটানার মধ্যে রুদ্রর আসল চরিত্র প্রকাশিত পায়।

– এই সব কি করছি আমি? আমি কেনো এই মেয়েটাকে নিয়ে ভাবছি। যা ইচ্ছে করুক আমার কি তাতে। আমার সাথে এই গুলা কি হচ্ছে? এই মেয়ের থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে আমাকে। আমি কোনো মেয়ের সংস্পর্শে যেতে চাই না। কারো মায়ায় আবদ্ধ হতে চাই না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে বলে রুদ্র আবার বিসানায় শুয়ে পড়ে কাঁথা মুড়িয়ে।

– দোলা ওইভাবেই ঘুমিয়ে থাকে।

– সকালে রুদ্র অফিসে চলে গেছে। দোলা আজ কোনো রান্নায় হাত লাগায়নি। টুকটাক কাজ গুলো সেরে রুমে যেতে নেয় তখনই একজন সার্ভেন্ট এসে বলে, বউমনী আপনাকে বড় সাহেব ডাকছে।

– সার্ভেন্টের কথায় দোলা ভ্রু কুচকে উঠে। তারপর ওড়নাটা মাথায় টেনে জাহির চৌধুরীর রুমে যায়।

– জাহির চৌধুরীর রুমের সামনে আসতেই দোলা নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে বাবা আসব?
– দোলার কথা শুনে জাহির চৌধুরী হাসার চেষ্টা করে বলে তোকে না বলেছি আমার রুমে আসতে পারমিশন লাগবে না। চলে আসবি।

– দোলা কিছু বলে না এই কথার জবাবে।

– আচ্ছা শুন যে কারণে তোকে ডেকেছি।
– দোলা আগ্রহ পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।

– রুদ্র তো যেতে চাই না ওইখানে। তাই বলে তো তোর যাওয়া আটকে থাকতে পারে না। তুই আর তানিয়া গিয়ে থেকে আয় দুদিন৷ তাহলে রাশেদের ভালো লাগবে। জাহির চৌধুরীর প্রস্তাবে দোলার মনটা একটু ভালো হয়। বাবার কাছে যেতে পারবে ভেবে ভালো লাগছে দোলার৷ কিন্তু রুদ্রর জন্য মন খারাপও হচ্ছে। তার বাবা কত আশা করে ছিলো রুদ্রও যাবে কিন্তু সেটা কখনো হওয়ার নয়।

– যা তৈরি হয়ে নে। তানিয়াকে বলা আছে সব। ও রেডি হচ্ছে। জাহির চৌধুরীর কথায় দোলা মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে চলে যেতে চাইলে, জাহির চৌধুরী পিছু ডেকে বলে কালকের কথা ভেবে মন খারাপ করিস না। আমি জানি তুই কিছু করিস নি। তুই ইচ্ছে করে কখনো আমার ছেলেকে কষ্ট দিবি না এটাও জানি। তাই কালকের ঘটনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।

– আর একটা কথা, আমাকে মাফ করে দিস। আমি আমার ছেলের সাথে তোর বিয়েটা দিয়ে ঠিক করিনি৷ তোর জীবনটা আমি নষ্ট করে দিয়েছি। আমার ছেলে যে একই রকম থেকে যাবে ভাবিনি৷ আসা করেছিলাম আমার কথা রাখবে অন্তত। তোর সাথে যাবে কিন্তু সে তার সিদ্ধান্তে অটুট আছে।

– জাহির চৌধুরীর কথায় দোলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নিজেকে দায়ী করছেন কেনো বাবা? এই সব তো আমার ভাগ্যের লেখা। যা ছিলো কপালে তাই হচ্ছে৷ তবে আমি কিন্তু আফসোস করিনা। তাই আপনারাও করবেন না। তবে আপনার ছেলেকে ঠিক আমি করব এটা আমার নিজের কাছে প্রতিঙ্গা। দেখি না উপর আল্লাহ কত ধৈর্যর পরিক্ষা নেয় আমার। আসি বাবা বলে দোলা বেরিয়ে যায়।

– দোলার মাঝে এমন আত্মবিশ্বাস দেখে জাহির চৌধুরী মনটা একটু হাল্কা হয়ে আসে। চিন্তার পরিমাণ টা কমে যায়।। আবার নতুন করে আশার আলো পায় সে।

— দোলা আর তানিয়া সকালে দিকে এসে রাশেদ মিয়ার বাড়ি। দোলাকে দেখে রাশেদ মিয়া অনেক খুশি সাথে রোকনও বোন কে পেয়ে আনন্দে বিমোহিত হয়ে আছে।

– তানিয়ার সাথে রোকনের অনেক ভাব হয়ে গেছে। আসলে তানিয়া এত মিশুক স্বভাবের যে কেউ সহজে বন্ধুত্বে পরিনত হয়ে যাবে।
— রুদ্র সন্ধ্যার একটু আগে অফিস থেকে ফিরে। ঘরে এসে ফ্রেস হয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ পানির গ্লাস নেই। কিন্তু দোলা প্রতিদিন রুদ্র আসার পর পানির গ্লাস রেখে যায় এখানে। এই কদিনে রুদ্রর এটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। পানির গ্লাস না দেখতে পাওয়াতে রুদ্র ভ্রু কুচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে থাকে। কিন্তু দোলার কোনো পাত্তা পায় না। আসার সময় ড্রয়িং রুমেও দোলাকে নজরে পড়েনি তার। রুদ্র ফ্রেস হয়ে নিচে যায়।

–“” জাহির চৌধুরী নিউজ পেপার হাতে নিয়ে বসে আছে৷ রুদ্র জাহির চৌধুরীর পাশে গিয়ে বসে।

– জাহির চৌধুরী রুদ্রর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে আবার কাগজে চোখ বুলায়।

– রুদ্র কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে অনেকখন থেকে কিন্তু পারছে না। তাই ছটফট ছটফট করছে বসে।

– তোমার শরীর খারাপ করছে নাকি রুদ্র? হঠাৎ বাবার এমন কথায় রুদ্র চমকে উঠে বলে এ হ্যাঁ এই না না৷ আইম ফাইন ড্যাড।

– তাহলে এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে? কিছু বলবে?

– রুদ্র একটা ঢোক গিলে বলে বাড়িতে আর কাউকে দেখছি না কেনো ড্যাডি?
– রুদ্র এমন কথায় জাহির চৌধুরী অনেক অবাক হয়। রুদ্র যে দোলার কথা বলছে এটাও বুঝতে পারে কিন্তু সেটা কোনো ভাবে প্রকাশ করে না জাহির চৌধুরী।
*-” গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে কার কথা বলছো রুদ্র? বাড়িতে তো সবাই আছে?

– রুদ্র এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না। সোজাসুজি দোলার কথা বলতেও পারছে না সে। তখনই তানিয়ার কথা মাথায় আসে তার। রুদ্র চট করে বলে তানিয়া কোথায় দেখছি না তো ওকে?

– তানিয়া তো দোলার সাথে দোলার বাবার বাড়ি গেছে সকালে। দুদিন থাকবে ওরা সেখানে। কাগজে চোখ রেখে সাবলীল ভাবে বলে কথা গুলো জাহির চৌধুরী। কিন্তু তার হাসি পাচ্ছে ভীষণ এমন অভিনয় করতে রুদ্র সাথে। কিন্তু হাসলে চলবে না তার৷ তবে জাহির চৌধুরীর এটা জেনে ভালো লাগছে যে রুদ্র একটু হলেও দোলার কথা চিন্তা করছে।

–” জাহির চৌধুরীর কথা শুনে রুদ্র ওহ বলে বসে থাকে কিছুখন। এরপর গলাটা পরিষ্কার করে বলে তা হঠাৎ গেলো যে ওরা?

– হঠাৎ কোথায় রুদ্র। একদিন আগেই তো যাওয়ার কথা ছিলো তোমাকে নিয়ে। কিন্তু তুমি তো যাবে না৷ দেখলাম মেয়েটা মন খারাপ করে থাকছে তার থেকে ভালো ঘুরে আসুক তানিয়াকে নিয়ে। কারো জন্য তো কিছু থেমে রাখা যায় না।

—“” কথাটা যে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলল এটা রুদ্র বেশ বুঝতে পারছে। রুদ্র উঠে চলে আসে সেখান থেকে।

– সন্ধ্যার সময় সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। রাশেদ মিয়া বাইরে থেকে এসেছে একটু আগে। দোলা সবার জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করেছে। রাশেদ মিয়াকে চা দিয়ে চলে আসতে যায় তখনই রাশেদ মিয়া দোলাকে জিজ্ঞেস করে, জামাই আসবে না দোলা’মা?

– রাশেদ মিয়ার কথা শুনে দোলার মুখটা মলিন হয়ে যায়। চোখ মুখে অসহাত্বের ছাপ। কিন্তু রাশেদ মিয়া কৌতুহল ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে..

— চলবে…