তুমিময় আসক্তি পর্ব-১৭

0
1221

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১৭”

–” রুদ্র আর কিছু না ভেবে ওয়াসরুমে চলে যায়। তার একটা মিটিং আছে সকালের দিকে। অলরেডি ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে তার। দোলা রুম থেকে বেরিয়ে তানিয়ার রুমে যায়।
– তানিয়া সকাল সকাল উঠে ঘুম থেকে। নামাজ পড়ে বারান্দায় বসে হয় বই পড়ে নয়তো হেডফোন কানে গুঁজে গান শুনে৷ এটা তানিয়ার অনেক আগে থেকে অভ্যাস।

– দোলা এক প্রকার দৌড়ে তানিয়ার ঘরে আসে। তানিয়ার ঘরে ঢুকে একটা স্বস্তি শ্বাস ছাড়ে বুকে হাত দিয়ে। তানিয়া কফি হাতে বারান্দায় যাবে এমন সময় দোলাকে রুমে দেখে ভ্রু কুচকে বলে কি ব্যাপার বউমনি তুই এই সময়ে আমার ঘরে। কিছু বলবে?

– দোলা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে কই কিছু না তো। এমনি আসলাম তোমার সাথে গল্প করতে। কেনো আসতে পারি না বুঝি সকাল সকাল তোমার ঘরে?
– আরে এমন টা কেনো বলছো বউমনি। অবশ্যই আসবে। আচ্ছা বসি চলো বলে তানিয়া ঘাটের উপর বসে যায়। দোলাও বসে তানিয়ার থেকে একটু দুরত্ব রেখে।

– তানিয়া দোলার দিকে ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে দোলার গলায়, গালের এক পাশে কেমন লালচে দাগ হয়ে। তানিয়া এবার দোলার চুলের দিকে তাকিয়ে দেখে চুলটাও ভেজা। আঁচড়ানো নেই।

– তানিয়ার এমন অদ্ভুত ভাবে তাকানো দেখে দোলা লজ্জা পায়। লজ্জার লাল আভা ফুটে উঠে চোখ মুখ জুড়ে।

– তানিয়া দোলার কাছে সরে এসে বলে বউমনি তোমার গলায় এই গুলো কিসের দাগ তাই বলে হাত দেয় সেখানে৷ দোলা তো তানিয়ার কথায় একদম ব্লাশিং করতে থাকে।

— দোলার মুখো ভঙ্গি আর লজ্জাটে ভাব দেখে তানিয়া উল্লাসীত কন্ঠে বলে বউমনি…. তানিয়ার এমন ডাকে দোলা ঘাবড়ে যায়। চমকানো চোখে তাকায় তানিয়ার দিকে।

– ব্রো আর তোমার রোমান্স… বাকিটা বলার আগে দোলা তানিয়ার মুখ চেপে ধরে বলে চুপ করো তানিয়া। ছিহ এই গুলো কি বলছো৷ আমার বুঝি লজ্জা করে না।
– তানিয়া মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে বরের আদর নিয়ে এখন লজ্জা পেলে হবে। তবে আমার কি যে ভালো লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। এটাও সম্ভব মানে কেমনে কি? আমি বিশ্বাসী করতে পারছি না। তানিয়ার চোখ মুখে প্রচুর এক্সাইটমেন্ট।

– “” তানিয়ার ঘরের দরজার আড়ালে ছিলো জেসমিন চৌধুরী। তার সকাল সকাল মাথা ব্যথা শুরু করে । তাই তানিয়ার কাছে এসেছিলো মাথা ব্যথার ওসুধ নেওয়ার জন্য। তানিয়ার কাছে টুকিটাকি সব রকম প্রাথমিক ওসুধ থাকে। কিন্তু জেসমিন চৌধুরী যে এমন একটা কথা শুনবেন সে কল্পনাও করেনি।
–” জেসমিন চৌধুরীর রাগে শরীর রিরি করে উঠে। দরজার সাথে পর্দার একটা অংশ চেপে ধরে।

– এমনটা কোনো ভাবে হতে পারে না। রুদ্র ওই মেয়েটার সাথে কোনো ভাবে নাহ। কিছু একটা করতে হবে। নাহলে এই সম্পত্তি আমার হাত থেকে বেরিয়ে যাবে। এতদিন আমি এত কিছু করে আসছি, সব অপমান মুখ বুজে সহ্য করে আসছি শুধু মাত্র সম্পত্তি হাতানোর জন্য। আর ওই মেয়েটা এসে আমার সব স্বপ্ন এভাবে ভেঙে দিতে পারে না৷ কিছু একটা করতে হবে এই মেয়ের। আমার রাস্তা থেকে সরাতে হবে। যেভাবে রুদ্রর মাকে সরিয়ে ছিলাম৷ এখন দেখছি এই মেয়েটাকেও তাই করতে হবে। উফফ এই সব ঝামেলা শুধু আমার কাছে আসে। এরপর জেসমিন চৌধুরী চলে যায় সেখান থেকে।

-“” বউমনি বউমনি বলো না কেমনে কি হলো। ব্রো তো সজ্ঞানে কখনো তোমার কাছে যাবে না আমার বিশ্বাস৷ তাহলে কেমনে কি হলো। আমার মাথায় কিছু যাচ্ছে না কৌতুহল নিয়ে বলে তানিয়া।

— তানিয়ার কথায় দোলা মুখটা মলিন করে বলে ঠিকই ধরেছো তানিয়া। তোমার ভাইয়া সজ্ঞানে আসেনি আমার কাছে। এরপর দোলা তানিয়াকে গতরাতের কথা খুলে বলে। তানিয়া তো অবাক হয়ে শুনছে সব।

— কিন্তু দোলার সব কথা তানিয়া বাদেও যে আরেকজন শুনছে সেটা কেউ খেয়াল করিনি।
– রুদ্র দোলার কথা শুনে চমকে উঠে। তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে এমন ভাব। তার মানে গতরাতে আমি আর দোলা নাহ বলে চুল টেনে ধরে রুদ্র।

– আসলে রুদ্র রেডি হয়ে অফিসে যাচ্ছিলো। রুদ্র আর তানিয়ার রুম পাশাপাশি। তানিয়ার রুম ক্রস করে রুদ্রর রুমে যেতে হয়। রুদ্র এই ফ্লোরে একাই থাকে। তানিয়া আসায় পাশের রুমটাই তানিয়া উঠেছে।

– এখন কি হবে বউমনি। ব্রো যদি একবার বুঝতে বা জানতে পারে তাহলে তো কুরুক্ষেত্র বাধিয়ে দেবে। দোলা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে আমি কি করতাম ওই সময়টা বলো। আমি অনেক চেষ্টা করেছি উনাকে বাধা দেওয়ার কিন্তু আমি পারিনি।

– আমার ভয় হচ্ছে তানিয়া৷ যদি উনি এই সব জানেন তাহলে আমাকে দোষারোপ করবেন৷ বলবেন উনার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছি আমি।

– রুদ্র আর দাঁড়ায় না৷ জোরে হেঁটে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে। দোলার কথা গুলো কোনো ভাবে মানতে পারছে না। তার দ্বারা এমন একটা ভুল হয়েছে কিছুতে মানতে পারছে না। রুদ্রর এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে। কেনো সে ড্রিংক করতে গেলো। যদি ড্রিংক না করতো তাহলে এর কিছুই হতো না তার আর দোলার মধ্যে। এই জন্য দোলা সকালে তার থেকে পালিয়ে গেলো এক প্রকার। রুদ্র এখন সব বুঝতে পারছে।

— চিন্তা করো না বউমনি। কিছু হবে না। তাছাড়া এখানে তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ যদি কারো থেকে থাকে সেটা ব্রোর। আচ্ছা বউমনি শুনো না, আমার না কিছু জিনিস কেনাকাটা করার আছে৷ আমার সাথে শপিংয়ে যাবে প্লিজ।
– তানিয়ার কথায় দোলা মুচকি হেসে বলে এইভাবে বলার কি আছে৷ ওকে যাব তবে বিকেলে। আমার কলেজে আজ কাজ আছে৷ কলেজ থেকে ফিরে যাবো ইনশাআল্লাহ।

– তানিয়াও মুচকি হেসে বলে ওকে। তাহলে তুমি কলেজ থেকে এসো। এরপর দোলা তানিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ঘরে এসে দেখে রুদ্র চলে গেছে৷ দোলা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

— দোলা রেডি হয়ে কলেজে যায়। আজ রাজের সাথে তার দেখা করার কথা আছে। রাজের থেকে সব জানবে দোলা আজ। দোলা কলজে গিয়ে আশাকেও সাথে নিয়ে নেয়।

– “” দোলা কফিশপে বসে আছে আশাকে নিয়ে। রাজ এখনো আসেনি।

– কি রে কখন আসবে সে বেডা৷ এতখন বসাই রাখছে। আসবে তো আবার? আশার কথায় দোলা মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে আসবে নিশ্চয়। একটু বস চুপ করে।

– একটু পর রাজ আসে হন্তদন্ত হয়ে। সরি সরি ভাবি একটু লেট হয়ে গেলো বলতে বলতে বসে রাজ দোলার অপরদিকে চেয়ারে।

– একটু না আপনি অলরেডি ৩৫ মিনিট লেট রাগী লুক নিয়ে বলে আশা। দোলা আশার হাত চেপে ধরে৷ সরি আসলে একটু কাজে আটকে পড়েছিলাম৷ আচ্ছা কি খাবেন আপনারা বলে রাজ ওয়েটারকে ডাকে।

– এরপর ৩ টা কফি অর্ডার করে।

— আচ্ছা বলো আমাকে কেনো ডেকেছো? দোলাকে উদ্দেশ্য করে বলে রাজ।

– ভাইয়া আমি যা যা জিজ্ঞেস করব দয়া করে আমাকে সব প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
– আমি জানলে অবশ্যই বলব। চিন্তার কিছু নেই বলো।

– আপনার বন্ধু এমন কেনো? ও কেনো মেয়েদের সহ্য করতে পারে না। কেনো এত রাগ,অভিমান মেয়েদের প্রতি?

– দোলার কথায় রাজ চমকানো চোখে তাকায়।
– প্লিজ ভাইয়া৷ আমি তো আপনার ছোট বোন আপনি বলেছেন। তো বোনের কাছে কিছু লুকাবেন না। আমার জানাটা খুবই দরকার। প্লিজ বলুন হাত জোড় করে বলে দোলা। আশা নিরব দর্শক হয়ে সব দেখছে।

–” রাজ কিছুখন চুপ থেকে বলে ওকে বলছি। আশা আর দোলা একটু নড়েচড়ে বসে৷ আগ্রহ পুর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। চোখ মুখ ভরা কৌতুহল দুজনের।

–” রুদ্রর মা ছোটবেলা রুদ্রকে ছেড়ে চলে যায়। শুনেছি কোনো একজনের সাথে নাকি সে চলে গেছেন রুদ্রকে ৫ বছর বয়সী রেখে। আন্টি আর আঙ্কেল রিলেশন করে বিয়ে করেছিলো। আন্টি নাকি গরিব ঘরের মেয়ে ছিলো। প্রথমে আঙ্কেলের বাড়ি কেউ মেনে নেয়নি তাদের সম্পর্ক। কিন্তু আঙ্কেলের জেদের কাছে হেরে গিয়ে সবাই মেনে নেয়। কিন্তু জানো দোলা, আমি যতদুর শুনেছি আন্টি নাকি অনেক ভালো ছিলো৷ আমি আঙ্কেলের থেকেই শুনেছি আন্টি অনেক লাজুক প্রকৃতির ছিলেন। কম কথা বলতেন। তবে আঙ্কেলকে অনেক ভালোবাসতেন। তিনি যে এমন একটা কাজ করবে কেউ ভাবেনি।

– রুদ্র মায়ের জন্য দিনরাত কান্না করতো। আমাদের সবে ফ্রেন্ডশিপ হয়েছে। রুদ্র স্কুল ভর্তি হয় । আমিও ভর্তি হয় রুদ্রর সাথে। দেখতাম ওকে সারাদিন চুপচাপ থাকতে। কারো সাথে কথা বলত না। কিন্তু স্টুডেন্ট হিসেবে ছিলো অনেক ভালো। রুদ্র ছোট থেকে মেয়েদের এড়িয়ে চলত। হয়ত তার মায়ের জন্য।

– আমাদের ফ্রেন্ডশিপটা তখনই হয়। আমি আস্তে আস্তে রুদ্রর খুব কাছের হয়ে উঠি। তবে রুদ্র ছোট থেকে এমন একজন মানুষ যে, তার মধ্যে যত কষ্ট থাক কাউকে সেটা বুঝতে দিবে না। কিন্তু আমি সে জায়গাটা দখল করতে পেরেছি ওর মধ্যে। একটা সময় এসে ও নিজে আমাকে ওর মনের সব কথা খুলে বলতে শুরু করে। ওর দুঃখ কষ্ট সব শেয়ার করতে থাকে।

– জানো ও আন্টিকে ভীষণ ভালোবাসতো। ইনফ্যাক্ট এখনো বাসে৷ কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে চাই না। উপর উপর ঘৃণাটাই দেখায় শুধু।

– এরপর আমরা একের পর এক ক্লাস পার করে এসএসসি পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিকে গেলাম। রুদ্র কিন্তু সেই ছোট থেকে মেয়েদের এড়িয়ে চলে। কেউ বন্ধুত্ব করতে আসলে তাদের ইগ্নোর করে। একমাত্র আমি যে ওর এত কাছের বন্ধু কি করে হয়ে উঠলাম জানি না।

— আমরা যখন উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হলাম তখন আমাদের ক্লাসে আমাদের সাথে একটা মেয়ে ভর্তি হয়। নাম রোজা আফরিন। মেয়েটা দেখতে সুন্দর আর অনেক ফ্যাশনাবল ছিলো।

– জানি না রুদ্রর হঠাৎ কি হলো৷ রোজার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায়। রোজাকে রুদ্রর ভালো লাগতে শুরু করে। রুদ্র এই প্রথম যেচে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে যায় নিজ থেকে এবং বন্ধুত্বর হাত বাড়িয়ে দেয়৷

— রুদ্রর সাথে অন্যর মেয়ের কথা শুনে দোলার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে। দম বন্ধকর একটা পরিবেশের সৃষ্টি হয় তার কাছে।

– আমার কিন্তু রোজা মেয়েটাকে সুবিধার মনে হতো না। রুদ্র একবার বলাতে সে রাজী হয়ে যায় ফ্রেন্ডশিপ করতে। আর হবে না কেনো? রুদ্র দেখতে হ্যান্ডসাম, ট্যালেন্টেড সবার ক্রাশ বয়। এরপর থেকে ওদের দু-জনের প্রায় কন্টাক্ট হতে থাকে। রুদ্রর সব কিছু জুড়ে রোজার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিলো।

– রোজা হয়তো রুদ্রর বিহেভিয়ার দেখে বুঝে গিয়েছিলো রুদ্র তার উপর দুর্বল। তাই সে সুযোগ বুঝে রুদ্রর থেকে টাকা নিতো নানান বাহানা দেখিয়ে৷ আর রুদ্র সে রোজা বলতে অজ্ঞান ছিলো। তাই রোজা যা বলত ও সেটাই করত। কখনো কোনো প্রশ্ন করতো না রোজাকে৷

— একদিন আমি রুদ্রকে বারণ করি রোজাকে এইভাবে টাকা দিতে৷ কিন্তু রুদ্র আমার উপর রেগে যায়। এমনকি আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপটা শেষ করে দেওয়ার ও হুমকি দেয়। সেদিন অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম আমি রুদ্রর কথায়৷ কিন্তু সেটা ওকে বুঝতে দিইনি৷ আর যদি বোঝাতামও তাও রুদ্র বুঝতো না। কারণ তখন সে রোজাতে অন্ধ ছিলো।

— এইভাবে যায় দুই বছর। রোজাকে রুদ্র তার মনের কথা এখনো জানাতে পারেনি। কিন্তু পুরো কলেজ জানে রুদ্র আর রোজার সম্পর্কের কথা। তাদের দুজনের রিলেশন দেখে অনেকে হিংসে করত।

– রুদ্র ধরে নিয়েছিলো রোজাও তাকে ভালোবাসে৷ যখন আমরা ভার্সিটি উঠলাম তখন রুদ্র ঠিক করে রোজাকে সে প্রপোজ করবে৷ এবং সেটা অনেক বড় আয়োজন করে।

– রুদ্র একটা রেস্টুরেন্ট বুক করে। আর সেখানে অনেককে ইনভাইট করে। আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধবও আসে সেখানে। রুদ্র রোজাকে কিছু জানায় না এই ব্যাপারে। আসলে রোজাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো রুদ্র সব কিছু।

– সন্ধ্যার দিকে আমরা সবাই যায় সেখানে৷ আর রুদ্র আগে থেকে ওইখানে ছিলো৷ রোজার পছন্দ অনুযায়ী সব কিছু এরেঞ্জ করে। আর একটা সুন্দর ডায়মন্ড রিং নেয় রোজার জন্য।

– কিন্তু সেদিন টা যে রুদ্রর জীবনে সব সুখ নিয়ে যাবে ভাবিনি। সমস্ত হাসি, আনন্দ, আবেগী রুদ্রকে নিঃস্ব করে দিয়ে যাবে সত্যি ভাবিনি।

– কি-কি হয়ে ছিলো সেদিন ভাইয়া? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে দোলা। আশা অবাক হয়ে সব শুনছে।

– রাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, রোজা রুদ্রর প্রপোজাল রিজেক্ট করে দেয় সবার সামনে এবং অনেক অপমান করে সেদিন।

– রুদ্র যখন রোজাকে তার মনের কথা বলে রিংটা সামনে ধরে তখন রোজা রাগে সেটা নিয়ে ছুড়ে মারে। রুদ্রকে চড় মারে সবার সামনে। রুদ্র শুধু অবাক হয়ে নিরব চাহনিতে দেখছিলো সেদিন সব কিছু।

— আর পাঁচটা ট্রিপিক্যাল ছেলের মতো তুমিও এমন হবে ভাবিনি রুদ্র৷ আমি তোমার সাথে মিলামিশা করেছি এর মানে এই নয় যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার টাকা ছিলো, তোমার এটিটুড সব কিছু দেখে আমার ভালো লাগে তাই আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে রাজী হয়েছিলাম। এর বাইরে আর কিছু ছিলো না।

– কিন্তু তুমি যে এত কিছু ভেবে নেবে ভাবিনি৷ দেখো রুদ্র আমার লাইফে অনেক কিছু করা বাকি এখনো। আমি ইঞ্জয় করতে চাই। আমি এই সব রিলেশন জড়িয়ে কোনো প্যারা নিতে চাই না।

– তুমি যেমন ভাবে চলতে চাও তেমন ভাবে চলবে রোজা৷ আমার কোনো সমস্যা নেই৷ আমি তোমার স্বাধীনতায় কখনো হস্তক্ষেপ করবো না। তাও প্লিজ তুমি এই ভাবে বলো না৷ আমি তোমাকে ভালোবাসি রোজা বোঝার চেষ্টা করো। অনুনয় করে বলে রুদ্র।

– ‘”” কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না। সোজা ভাবে বলে দেয় রোজা।

— রোজার কথায় রাজ রেগে বলে তাহলে এতদিন রুদ্রর সাথে এমন নাটক করার মানে কি রোজা?

–” কিসের নাটক৷ আমি কোনো নাটক করিনি৷ আমি জাস্ট ফ্রেন্ড হয়ে ছিলাম তোমার ফ্রেন্ডের লাইফে৷ কিন্তু তোমার বন্ধু যে এত ষ্টুপিড ভাবিনি। শুনো এই রোজা যেখানে টাকা, সম্মান,মান মর্যাদা থাকে সেখানে বন্ধুত্ব করে। জাস্ট ইট.. গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে রোজা।

– তার মানে তুমি এতদিন রুদ্রর টাকার জন্য ওর সাথে ফ্রেন্ডসিপ করেছিলে?

– রাজের কথায় রোজা বলে তাছাড়া আর কি কারণ থাকতে পারে এখানে। তোমার ফ্রেন্ড যা গুমরোমুখো, আনরোমান্টিক এর সাথে আর যাই হোক কখনো রিলেশন করা যায় না। তাছাড়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। ইনফ্যান্ট রুদ্রর চেয়েও বড়লোক তারা।

— রুদ্র ভেঙে পড়ে রোজার কথায়। ওইখানে বসে পড়ে রুদ্র৷ এতকিছু মানতে পারছে না। রোজার উপেক্ষা সহ্য করতে পারছে না রুদ্র। এতদিন মন দিয়ে যাকে ভালোবেসে আসলো আর সে কি-না এমন ঠকালো তাকে। রুদ্র এটা কোনো ভাবেই মানতে পারছে না।

–” তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? কৌতুহল নিয়ে বলে রাজ।
— হ্যাঁ আমার বয়ফ্রেন্ড আছে৷ আর সে আমেরিকা থাকে৷ রিসেন্টলি সে দেশে ফিরবে এবং আমাকে সাথে নিয়ে যাবে। আমি এইসব ছেড়ে তোমার বন্ধুর মতো মানুষের সাথে রিলেশন করতে যাবো কেনো?

— শাট আপ রোজা৷ আসলে তুমি ভীষণ লোভী একজন মেয়ে। রুদ্রর ভুল তোমাকে ভালোবাসা। তুমি এতদিন ওর ভালোবাসার সুযোগ নিয়ে গেছো।
– রাজ এবার রুদ্র কাছে গিয়ে হাঁটুমুড়ে বসে বলে, আমি তোকে বলেছিলাম রুদ্র রোজা মেয়েটা সুবিধার না। দেখ তার প্রমাণ। ও কেমন লোভী আর স্বার্থপর মেয়ে একবার দেখ তুই।

– রুদ্র মাটির দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে আসে৷ আসলে তার বলার মতো কিছুই নেই এখন। বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে রুদ্র। একটা মানুষের তিলে তিলে গড়ে উঠা আশা, স্বপ্ন যখন এক নিমিষে শেষ হয়ে যায়। তখন যে কেমন অনুভূতি হয়। একমাত্র সে ব্যক্তি জানে।

— রুদ্র সেখান থেকে বেরিয়ে আসে কাউকে কিছু না বলে। রাজ রুদ্রর পেছন পেছন চলে আসে। কিন্তু রুদ্র ধরতে পারে না পিছু এসেও৷ রুদ্র গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে আসে৷

– “” এরপর রুদ্র এক সপ্তাহ ঘরবন্দি থাকে৷ খাওয়া দাওয়া, কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আঙ্কেল রুদ্রকে নিয়ে আপসেট হয়ে পড়েন। একমাত্র ছেলের এমন পরিনতি তিনিও মানতে পারছিলেন না।

– রুদ্র এক সপ্তাহ বন্দী থাকার পর, নিজেকে আবার চেঞ্জ করে ফেলে৷ মুডি, গোমড়া মুখী রুদ্রতে পরিনত হয়। কিন্তু সব থেকে অবাক করার ভীষণ হলো এরপর থেকে রুদ্র কোনো মেয়েকেই দুচোখে দেখতে পারে না। তাদের বিশ্বাস করে না। রুদ্রর মুখের হাসি ওই মেয়েটা কেড়ে নিয়েছে৷ সাথে মেয়েদের প্রতি ঘৃণা জন্ম দিয়ে গেছে৷ এরপর থেকে রুদ্র এমন। মেয়ে মানে এলার্জি তার কাছে।

– “” দোলা এতখন মনোযোগ দিয়ে শুনে রাজের কথা। কিন্তু ভেতর টা তার কষ্টে ফেঁটে যাচ্ছে। রুদ্র মধ্যে যে এত কষ্ট থাকতে পারে ভাবিনি দোলা৷ মানুষ ভালোবাসার আঘাত পেলে কতটা শক্ত হতে পারে সেটা রুদ্রকে না দেখলে হয়তো দোলা জানতো না

–“” ভালোবাসা মানুষকে সহনশীল করে তোলে আবার শক্ত ভীতেও পরিনত করে দেয়। আসলে ভালোবাসার রঙ কখন কোন রুপে প্রকাশ নেয় এটা কেউ জানে না। কিন্তু একটা মানুষকে নতুন করে বাঁচাতে আবার জীবিত মানুষকে জিন্দালাশে পরিনত করতে পারে ভালোবাসা।

— চলবে….