তুমিময় আসক্তি পর্ব-১৯

0
1272

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“১৯”

–” দোলা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু ভয়ের ছাপ এখনো বিদ্যমান তার চেহারায়। রুদ্র রাগী লুকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে দোলাকে ধরে।

– কিছু সময় যেতে দোলা সোজা হয়ে দাঁড়াতে চাই। রুদ্র দোলাকে ছেড়ে দিয়ে ডান হাতের বাহু ধরে বলে, এই মেয়ে কি সমস্যা তোমার? স্থীর থাকতে পারো না তুমি। একে তো এই হাল করেছো নিজের৷ এরপরও তোমার পাকামি করা লাগবে। যদি পড়ে যেতে আবার কি অবস্থা হতো বুঝতে পারছো ইডিয়ট। একটু জোরেই বলে কথাটা রুদ্র। রুদ্র মৃদু চিৎকার তানিয়ার কর্ণপাত হতেই ঘুম ভেঙে যায়। ধড়ফড়িয়ে উঠে বলে কি হয়েছে? এরপর রুদ্রকে দেখে বলে ব্রো তুমি? কখন এলে?

– “” এসেই তো এই ষ্টুপিডটার ষ্টুপিডিটি দেখতে পেলাম। একে তো নিজের এই অবস্থা করেছে এরপর আবার কি করতে যাচ্ছিলো জানিস? আমি না থাকলে এতখনে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতো।

— মানে কি হয়েছে। কি করেছে বউমনি? তানিয়ার ঘুমের রেশ পুরোপুরি উবে গেছে রুদ্রর কথায়৷ আর দোলা অপরাধ সূচক মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে ।

–” একা একা উঠে দাঁড়িয়েছে। পায়ে চোট লেগেছে জানে তারপরও পন্ডিতি করতে গিয়েছে। পড়ে যেতে ছিলো একা হাঁটতে গিয়ে। ভাগ্যিস আমি এসেছি টাইমলি। কটমটে চোখে তাকিয়ে বলে রুদ্র।

– “” বউমনি তুমি উঠেছো কেনো? কোনো দরকার হলে আমাকে বলতে দৃঢ় কন্ঠে বলে তানিয়া।
— আমার ওয়াসরুম যাওয়া লাগবে। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই ভাবলাম আমি একাই চেষ্টা করি। কিন্তু এমন একটা কান্ড হবে বুঝিনি নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা।

— হ্যাঁ তুমি তো কিছুই বুঝো না ইডিয়ট একটা। এরপর রুদ্র সম্পুর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দোলার দিকে। দোলার মাথায় ব্যান্ডেজ, গালে চোট। রুদ্র পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে পায়েও ব্যান্ডেজ করা৷ দোলাকে এইভাবে দেখে রুদ্র খারাপ লাগে একটু। রুদ্র তানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে ওকে ওয়াসরুম পর্যন্ত দিয়ে আয়। আমি বাইরে আছি কোনো দরকার লাগলে বলিস বলে রুদ্র বেরিয়ে যায়।

– দোলা রুদ্রর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। দোলার মনটা খুশিতে ভরপুর। এটা রুদ্র এসেছে তার জন্য নয়। রুদ্র যে দোলাকে নিয়ে ভাবে তার জন্য চিন্তিত এটা ভেবে। নাহলে তার পড়ে যাওয়া নিয়ে এত বকতো না রুদ্র।
– তানিয়া দোলাকে ধরে ওয়াসরুমে নিয়ে যায়।

–“” রুদ্র অফিস থেকে ফিরে অনেক রাত করে। সারাদিনে রুদ্র কাজে মন বসাতে পারিনি গতরাতের ঘটনার জন্য। সকালের মিটিংটা কেনচেল করে রুদ্র সন্ধ্যায় করে। তাই সে মিটিং শেষ করতে বেশ রাত হয়ে যায়। রুদ্র পরে আর ফোন চেক করিনি।

— মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরতেই দেখে জাহির চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে আছেন একা। রুদ্র এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে রুমে যেতে যায় তখন জাহির চৌধুরী রুদ্রকে ডেকে সব বলে। রুদ্র দোলার এমন অবস্থা শুনে নিজেকে কেনো জানি ধরে রাখতে পারিনি। তখনই বেরিয়ে যায় হসপিটাল যাওয়ার জন্য।

–“” সকালে রুদ্র ডক্টর এর সাথে কথা বলে সব ফর্মালিটি শেষ করে দোলাকে নিয়ে বাড়ি যেতে চাই। দোলার যেহেতু তেমন কোনো সমস্যা নেই তাই ডক্টর বাধা দেয়নি। দোলাকে বিকালে ডিসচার্জ দেওয়ার কথা ছিলো কিন্তু রুদ্র সকালের দিকেই নিয়ে যেতে চাই।

-“” জাহির চৌধুরী আসতে চেয়েছিলেন দোলার কাছে। কিন্তু রুদ্র বারণ করে দেয়৷ সে দোলাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছে জানায়।

–” তানিয়া সব গুছিয়ে চল আমরা বাড়ি ফিরব। দোলাকে ডক্টর ডিসচার্জ দিয়ে দিয়েছে। দোলা রুদ্রর দিকে তাকায় তখনই রুদ্রও দোলার দিকে তাকায়। দোলার চোখ মুখ শুকনো লাগছে একদিনে৷ দোলার তাকানো দেখে রুদ্র চোখ সরিয়ে নেয় তার দিক থেকে।
— তানিয়া সব গুছিয়ে ওসুধপত্র নিয়ে বেরিয়ে যায়। ঘরে নার্স রুদ্র আর দোলা আছে। তানিয়া ইচ্ছে করে চলে যায় আগে। যাতে দোলাকে রুদ্র নিয়ে আসে। নাহলে রুদ্র তানিয়াকে বলতো দোলাকে ধরার জন্য।

-“” তানিয়াকে যেতে দেখে দোলা অসহায় চোখে তাকায় রুদ্র দিকে। রুদ্র নার্সের সাথে কথা বলে দোলার দিকে তাকিয়ে দেখে দোলা এখনো বসে আছে।
— তুমি এখনো বসে আছো কেনো? এখানে কি সারাজীবন থেকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে থমথমে গলায় বলা রুদ্র। রুদ্রর কথায় দোলা ফ্যালফ্যালে চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলে আমাকে বলে ইডিয়ট,, বেটা তুই নিজেই একটা ইডিয়েট। হাঁটতে পারলে কি আর বসে থাকতাম। কমন সেন্সটাও নেই। কিন্তু মেজাজে ১৬আনা।

— রুদ্রর পরোক্ষে মনে পড়ে দোলার পায়ের চোটের কথা। রুদ্র এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে তানিয়া নেই। তারপর দোলার দিকে তাকাতেই রুদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে বলে স্টপ দিস। রুদ্রর কথায় দোলা চমকে উঠে ভয়ার্ত চোখে তাকায়।
–” কি করছিলে আবার। তোমাকে এতবার বারণ করার পরও তুমি একই কাজ করতে যাচ্ছিলে। মানে কারো কথা শোনার প্রয়োজন মনে করো না তুমি৷ আবার কেনো একা একা নামতে যাচ্ছিলে ষ্টুপিড চোখ গরম করে বলে রুদ্র।

– দোলার এবার রাগ হয় রুদ্রর কথায়। তাই দোলা এবার আর ভয় না পেয়ে চোখ মুখে সাহসের ছাপ নিয়ে বলে তো কি করব আমি? এখানেই বসে থাকবো সারাজীবন। আমি না নামকে কে নিয়ে যাবে আমাকে৷ আপনি? আপনি না আমাকে বললেন যাওয়ার জন্য আর এখন আপনি.. বাকিটা শেষ করার আগেই রুদ্র দোলাকে অবাক করে দিয়ে কোলে তুলে নেয়।

– হঠাৎ এমন হওয়ায় দোলা ভয় পেয়ে রুদ্রর শার্টের কলার খামচে ধরে। রুদ্র দোলাকে নিয়ে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।

-” দোলা মুগ্ধতায় ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে আছে অপলকভাবে রুদ্রর দিকে। আর রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

– কেবিনের বাইরে তানিয়া অপেক্ষা করতে ছিলো। রুদ্র আর দোলাকে এইভাবে আসতে দেখে মুচকি হাসে সে। রুদ্র দোলাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় তখনই তানিয়া সামনে দেখে সজলকে। হাতে একটা ফাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে। সেও তানিয়া আর দোলাকে দেখতে পেয়েছে।

– ”” সজল ভ্রু কুচকে তানিয়ার কাছে আসতে গেলে, তানিয়া ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে আসতে বারণ করে৷ কিন্তু সজল বুঝতে পারে না। কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে আগাতে থাকে। তানিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না৷ সজল যদি এসে দোলার সাথে কথা বলে তাহলে রুদ্র রেগে যাবে৷ আবার ভুল বুঝবে৷ রুদ্র এই সব একদম পছন্দ করে না।

–‘ রুদ্র সজলের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যায়। তানিয়া একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে সেও দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যায়৷ আর সজল বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে রইলো।

– কি হলো কিছুই বুঝেনি সজল৷ তানিয়া তাকে ইশারা করে কি বলল সেটাও বুঝতে পারেনি৷ তবে তানিয়া যে তাকে আসতে বারণ করছিলো এটা পরে বুঝতে পারে সজল৷ কিন্তু কেনো? আর দোলাকে ওইভাবে কেনো নিয়ে গেলো লোকটা। তাহলে কি উনি দোলার স্বামী এইসব ভাবতে ভাবতে সজলও বেরিয়ে যায়।

–“রুদ্ররা বাড়ি চলে আসে। দোলাকে কোলে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে রুদ্র। জাহির চৌধুরী তার ঘরে ছিলেন৷ জেসমিন চৌধুরী ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলেন৷ দোলাকে এইভাবে কোলে নিয়ে আসতে দেখে জেসমিন চৌধুরী বাঁকা চোখে তাকায়। রুদ্রর কোলে নেওয়া ব্যাপার টা মোটেও ভালো লাগে নি তার কাছে। রুদ্র দোলাকে নিয়ে সোজা উপরে উঠে আসে।

–” তানিয়া রুদ্রির পেছন পেছন আসছে। রুদ্রর ঘর বরাবর আসতেই তানিয়া রুদ্রকে বলে ব্রো, বউমনিকে নাহয় আমার ঘরে দাও। ওর তো এখন একজনকে দরকার সব সময়। আর তুমি তো বউমনির কেয়ার করতে পারবে না। তাই বলছিলাম কি। তানিয়ার কথায় পাত্তা না দিয়ে রুদ্র তার ঘরেই নিয়ে যায় দোলাকে।

–” তানিয়া বিশ্বজয়ের একটা হাসি দিয়ে সেও রুদ্রর ঘরে প্রবেশ করে। আসলে তানিয়া কথাটা ইচ্ছে করেই বলে। রুদ্র মনের মধ্যে কি চলছে এটা বোঝার জন্য। রুদ্র যে এখন দোলাতে আসক্ত এটা তানিয়া বুঝে যায়।

‘”””” রুদ্র দোলাকে বিসানায় বসিয়ে দিয়ে, আলমারি থেকে টাওয়াল বের করে ওয়াসরুমে যাওয়ার সময় বলে, চিন্তা করিস না৷ ওর কোনো অযত্ন হবে না এই ঘরে। আমি যতখন থাকবো খেয়াল রাখবো৷ বাকিটা সার্ভেন্ট বা তুই সামলে নিস আমার অনুপস্থিতিতে কথাটা বলেই ভেতরে চলে যায় রুদ্র।

— তানিয়া ছুটে এসে দোলার গলা জড়িয়ে ধরে বলে এখন বসে বসে স্বামীর আদর খাও৷ আমার কি যে খুশি লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না।

— আমার কি মনে হয় জানো বউমনি? দোলা তানিয়ার দিকে ভ্রু কুচকে আগ্রহ পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে কি?

– ব্রো তোমার প্রেমে পড়ে গেছে। কথাটা বলেই হেসে উঠে তানিয়া। এইদিকে দোলা লজ্জায় লাল নীল বর্ণ ধারণ করে তানিয়ার কথায়।

–‘ জেসমিন চৌধুরী তার ঘরের মধ্যে পায়চারি করছে। রাগে চোখ মুখ দিয়ে যেনো লাল বারুদ ছুটছে তার৷ দোলা আর রুদ্রকে এত কাছাকাছি কোনো ভাবে মানতে পারছে না সে।

— যত চাইছি এদের দূরে করতে তত আরো কাছে চলে আসছে। রুদ্র দিন দিন কেমন বদলে যাচ্ছে৷ এমন হলে তো আমি হেরে যাবো। আমার প্ল্যান সাকসেসফুল কখনোই হবে না৷ এদের দুজন কে আলাদা করতে হবে । আর রুদ্রকে বদলাতে দিলে চলবে না৷ রুদ্র যদি চেঞ্জ হয়ে যায় তাহলে দোলাতে আসক্ত হয়ে যাবে। আর দোলাতে আসক্ত হওয়া মানে সংসারী হয়ে ওঠা। তাদের ভবিষ্যৎ বংশধর আসবে। তাহলে আমি কি করবো৷ এইভাবে কি গোলামী করে যাবো সারা জীবন৷ আর বসে বসে অন্যের সুখের সংসার দেখব?৷ নাহ এটা কখনোই হবে না৷ আমি আমার সংসার খোয়া দিয়েছে এই সম্পত্তির জন্য। আর আমি এই সম্পত্তি অন্য কাউকে ভোগ করতে কোনো ভাবেই দেবো না৷ আমাকে সাবধানে এগুতে হবে। এবং খুবই ভালো ভাবে সব কাজ করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যেনো রুদ্র নিজেই দোলাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় বলে জেসমিন চৌধুরী একটা ডেভিল হাসি দেয়।

-“”” দোলাকে জাহির চৌধুরী এসে দেখে গেছেন৷ তানিয়া বেশ কয়েকবার এসে দেখে গেছে৷ কোনো কিছু লাগবে নাকি জিজ্ঞেস করেছে৷ রুদ্র আজ অফিসে যায়নি। সারারাত হসপিটালে থাকার ফলে রুদ্রর ঘুম হয়নি৷ ভীষণ ক্লান্ত সে৷ তাই বাড়িতে থেকেই রেস্ট নেয় সে।

— দোলা লক্ষ্য করে একজন সার্ভেন্ট বেশ কিছুখন ধরে রুদ্রর ঘরের পাশ দিয়ে আনাগোনা করছে৷ মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে চাই৷ কিন্তু রুদ্রর জন্য পারছে না সে আসতে।।
–‘ বিকালে রুদ্র একটা কাজের জন্য বাইরে যায়৷ যাওয়ার আগে তানিয়াকে বলে যায় দোলার দেখাশোনা করার জন্য।

— রুদ্র যেতেই সার্ভেন্ট টি দোলার জন্য নাস্তা নিয়ে আসে। দোলা সার্ভেন্টটাকে দেখে একটু নড়েচড়ে বসে।

— সার্ভেন্টের নাম রাণুমা৷ রুদ্রর থেকে সব সময় দূরে দূরে থাকে এরা। রুদ্রকে দেখলে ভীষণ ভয় পাই৷ রাণুমার বয়স ২৪ বছর। একটা বাচ্চাও আছে তার৷ স্বামী অসুস্থ হওয়ায় বাড়ি বাড়ি কাজ করে সে।

–“” রাণুমা দোলাকে নাস্তা দিয়ে দাঁড়িয়ে দুইহাত মোচড়ামুচড়ি করছে। দোলা সন্ধিহান চোখে তাকিয়ে বলে কিছু বলবে রাণু আপা। দোলা তাকে আপা বলেই ডাকে। কারণ দোলার বড় সে।

–‘ রাণুমা ঘরের বাইরে তাকিয়ে, ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে বউমনি আপনারে একটা কতা কওনের ছিলো।
— দোলা স্বাভাবিক ভাবে বলে হুম বলো না কি বলবে?

— “” বউমনি আমার মনে হয় আপনার পড়ে যাওয়ার পেছনে ওই মহিলার হাত আছে। রাণুমার কথায় দোলা কৌতুহল নিয়ে বলে কার কথা বলছো?

–“” আরে ওই জেসমিন চৌধুরী। জানেন! আপনারে যখন হসপিটাল নিয়া যায় সবাই তখন ওই মহিলা জোরে জোরে হাসতেয়াছিলো আর কি সব কইতাছিলো। এরপর একটা কাপড় দিয়া সিঁড়িতে কি যেন মুছতেছিল।

– দোলা যা বোঝার বুঝে যায়৷ তার আগেই সন্দেহ হয়েছিলো।। এখন একদম নিশ্চিত হয়ে যায় দোলা৷ এই সবের পেছনে কে আছে।

–” দোলা রাণুমাকে এই কথা কাউকে বলতে বারণ করে৷। সে দেখছে বলে রানূমাকে বিদায় দেয়।

–‘ দোলা রুমে একা বসে বসে ভাবছে। জেসমিন চৌধুরী কি চাই৷ কেনো এমন করে। তাকে কেনো মারতে চাই। আচ্ছা রুদ্রুর মায়ের যাওয়ার পেছনে এর হাত নেই তো। এই সব ভাবনা চলছে দোলার মাথায়। তখনই জেসমিন চৌধুরী প্রবেশ করে হাসতে হাসতে ঘরে। দোলা জেসমিন চৌধুরীকে দেখে ভ্রু কুচকে সাবলীল ভাবে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।

—” ইসস কি অবস্থা হয়েছে একদিনে চোখ মুখের৷ দেখেই করুণা হচ্ছে গো আমার৷ উপহাস করে বলে জেসমিন চৌধুরী। দোলা মুখে একটা সুন্দর মুচকি হাসি নিয়ে এসে বলে, আপনার যে আমার জন্য করুণা হচ্ছে জেনেও ভালো লাগলো। আমি তো ভাবতাম আপনি আমার কথা ভাবেনই না।

–‘ দোলার এমন খোচা মারা কথায় জেসমিন চৌধুরী মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে এখনো বড় বড় কথা কমেনি তোমার তাই না। নিজের অবস্থাটা দেখেছো৷ হাঁটতে পারছো না। কিছু করতে পারছো। তারপরও একটু ভয় হচ্ছে না?

– কেনো ভয় হবে। ভয় হওয়ার কথা কি ফুপি শ্বাশুমা টেনে বলে দোলা।

–“‘ তোমার বড্ড সাহস আছে মেয়ে।

– সেটা বরাবরই আছে। নাহলে দেখুন না আপনার সিংহের মতো ভাইজির সামনে কি বাঘিনীর মতো আর টিকতে পারতাম।

— বেশিদিন পারবে না টিকতে৷ রুদ্রই তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে৷ আর নাহলে লাশ হয়ে বের হবে এই বাড়ি থেকে। এখনো সময় আছে নিজের ভালো চাও তো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাও।

– জেসমিন চৌধুরীর কথায় দোলা না জানার ভান করে বলে কোথায় যাবো ফুপিমা৷ স্বামীর ঘরই তো মেয়েদের আসল ঠিকানা। আর আমি আমার ঠিকানা রেখে কোথায় যাবো? সবাই তো আর আপনি না৷ স্বামী সংসার রেখে অন্যের সংসারে বসে অন্য ধ্বংস করবে আর কুটনিতী করব।।
— দোলার কথায় জেসমিন চৌধুরী রেগে আঙ্গুল তুলে বলে এই মেয়ে মুখ সামলে কথা বলো। তুমি কার সাথে কথা বলছো ভুলে গেছো।

— একদম ভুলিনি৷ আর ভুলতে চাইলেও যে আপনি ভুলতে দিবেন না আমাকে সেটাও জানি৷ তবে আপনার করা সব অন্যায়ের জবাব আমি দেবো৷ আমি বলছি আপনাকে এখনো সময় আছে ভালো হয়ে যান৷ সব কিছু ছেড়ে সংসার করুন স্বামী সন্তান নিয়ে। অন্যের সংসারে বসে তাদের সংসার নষ্ট করবেন না প্লিজ৷ আপনি এখানে থাকুন আমার সমস্যা নেই কিন্তু আমার পেছনে লাগতে আসবেন না। তাহলে এর ফল ভালো হবে না। রেগে বলে কথা গুলো দোলা

–” কে থাকবে আর কে যাবে তা সময় বলে দিবে। এখন তো শুধু পা ভেঙেছি এরপর জান টাই নিয়ে নেবো বলে জেসমিন চৌধুরী রুদ্রর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। দোলা জেসমিন চৌধুরীকে নিয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। রুদ্রর মায়ের সাথে কিছু একটা খারাপ হয়েছে এটা দোলা এখন উপলব্ধি করতে পারে৷

— আমাকে বাবার সাথে কথা বলতে হবে। মায়ের ব্যাপারে সব জানতে হবে । কোথায় আছেন উনি আমাকে সব জানতে হবে। আমি ইনার মুখোশ সবার সামনে খুলে দেবো। মনে মনে বলে দোলা।

–” রাতে রুদ্র বাড়ি ফিরে। ফ্রেস হয়ে নিচে যায় খাওয়ার জন্য। তানিয়া, জাহির চৌধুরী, জেসমিন চৌধুরী, খেতে বসে৷ রুদ্রকে খাবার দিতে গেলে রুদ্র কিছু একটা ভেবে বলে তার আর দোলার খাবার টা উপরে দিয়ে আসার জন্য। এরপর সে উঠে চলে আসে। তানিয়া জাহির চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে৷ জাহির চৌধুরীও একটা তৃপ্তিময় হাসি দেয়।

– জেসমিন চৌধুরী এদের হাসি দেখে রাগে প্লেট সরিয়ে উঠে যায়৷ দোলার কোনো ভালো তার সহ্য হচ্ছে না যেনো।

–” রুদ্র ঘরে এসে দেখে দোলা একটা বই নিয়ে পড়ছে৷ মুলত একটা উপন্যাসের বই৷ রুদ্র দোলার দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়৷ দোলা নামে বইয়ের দিকে তাকিয়ে কিন্তু খেয়াল রুদ্রর দিকে।

— দোলার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসে৷ রুদ্রকে জ্বালানোর জন্য সে বইটা নিচে রেখে ওমা গো বলে চিৎকার করে উঠে। দোলার চিৎকারে রুদ্র চমকে উঠে ছুটে আসে৷ দোলা তার চোট লাগা পায়ে হাত দিয়ে ন্যাকা কান্না জুড়ে আহাজারি করে।

–” রুদ্র দোলার হাত সরিয়ে দিয়ে তার উপর হাত দিয়ে বলে কি হয়েছে। ব্যথা পেলে কি করে? খুব কষ্ট হচ্ছে বলো আমায় ব্যস্ত হয়ে বলে রুদ্র। দোলা তো মায়া ভরা চোখে রুদ্র কান্ড দেখছে৷ এই মানুষ টার মনে একটু হলেও যে জায়গা করতে পেরেছে ভেবে দোলার সুখের আবেশে ভাসে৷

— রুদ্র দোলার উত্তর না পেয়ে, গম্ভীর কন্ঠে বলে কি হলো বলছো না কেনো? কোথায় লেগেছে বলো কথাটা বলে রুদ্র ফু দিতে থাকে দোলার পায়ে। দোলা পা সরিয়ে নেয়৷ রুদ্র তার পায়ে হাত দিচ্ছে এটা ভালো দেখায় না।

–” দোলাকে পা সরাতে দেখে রুদ্র রাগী চোখে তাকিয়ে বলে আর একবার পা টেনে নিলে খবর আছে৷ রুদ্রর হুমকিতে দোলা সেন্টি মেরে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র পাশেই টেবিলের ড্রয়ার থেকে স্প্রে বের করে দোলার পায়ে মারে। দোলা তো অবাক হয়ে সব দেখছে৷ তার একটু কষ্ট দেখাতে রুদ্র এত ব্যস্ত হয়ে পড়বে ভাবিনি। তাহলে কি তানিয়ার কথায় সত্যি৷ রুদ্র কি সত্যি তার প্রেমে পড়ে গেছে। তার জন্য মনে কোথায় জায়গা তৈরি হয়েছে৷ নাকি অসুস্থ বলে করুণা দেখাচ্ছে। আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে না তো৷ এইসব ভেবে দোলার মনটা আবার কালো মেঘে ছেয়ে আসে।

–” রুদ্র দোলার পায়ে স্প্রে করে বলে আর ব্যথা করছে? দোলা মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে না বললে রুদ্র একটা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে আসে।

— আমার খুদা লেগেছে নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা। দোলার কথায় রুদ্র দোলার দিকে তাকায়৷ তখন দোলা মাথা নিচু করে ফেলে৷ আসলে দোলার অনেকখন আগেই খুদায় পেট জ্বলছে৷ কিন্তু সে তো খেতে যেতেও পারছে না৷ আবার কেউ এখনো পর্যন্ত খাবার দিয়ে যায়নি৷ তাই দোলা উপায় না পেয়ে নিজ মুখে বলে।।
— রুদ্র দোলার কথায় কিছু না বলে ঘর থেকে বেরুতে যাবে এমন সময় একজন সার্ভেন্ট খাবার নিয়ে আসে। রুদ্র গম্ভীর স্বরে বলে এত সময় লাগে খাবার নিয়ে আসতে।

– সার্ভেন্ট সরি ছোট সাহেব বলে চলে যায়। রুদ্র খাবারটা দোলার সামনে দিয়ে আবার বারান্দায় চলে যায়৷ কিন্তু দোলা লক্ষ্য করে দেখে এখানে দুজনের খাবার রাখা। দোলা বুঝে যায় রুদ্রও খায়নি। দোলার খুশি যেনো আর ধরে না৷ দোলা ভেবেছিলো রুদ্র নিচে থেকে খেয়ে এসেছে৷ কিন্তু রুদ্র যে খায়নি তা খাবার দেখে নিশ্চিত হয়ে মুখে একটা বিশ্বাজয়ের হাসি রাখে।

–“‘ দোলা গলাটা পরিষ্কার করে বলে, বলছিলাম কি এখানে খাবার তো দুই প্লেট দেখছি৷ আমি কি এক সাথে দুই প্লেটই খাবো? কথাটা বলে মুখ চেপে ধরে হাসে দোলা।

– রুদ্র দোলার কথা শুনে বারান্দা থেকে এসে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে একটা প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে। দোলা মুচকি হাসি দিয়ে সেও একটা প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে। কিন্তু এখানে বাধে আরেক বিপত্তি। দোলার নজর রুদ্রর দিকে থাকায় আনমনে হয়ে খেতে থাকে৷ কখন যে মাছের কাটা ভাতের সাথে গেছে দোলা খেয়ালই করেনি৷ মাছের কাটা গলায় বাধলে দোলা কাশতে শুরু করে গলায় হাত দিয়ে। চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে দোলার। চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করে।

– রুদ্র দোলার এমন অবস্থা দেখে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে প্লেট রেখে দোলার কাছে এসে মাথায় হাত বুলাতে থাকে।

” চলবে….

– —