তুমিময় আসক্তি পর্ব-৪০

0
1121

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“৪০”

–“কেটে গেছে চারদিন। তানিয়া এখন অনেকটা সুস্থ আছে। আজ তাকে বাড়ি নিয়ে আসা হবে। এই ক’দিন দোলা,রুদ্র আর সজলের উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে। কেউ না কেউ হসপিটালে তানিয়ার পাশে ছিলোই। বেশি সময় দোলা দিয়েছে! সাথে তাকে বাড়ির দিকটাও সামলাতে হয়েছে। রুদ্র সেদিনই রত্না চৌধুরীকে বাড়ি ফিরে নিয়ে যায়৷ দীর্ঘদিন পর নিজের বাড়িতে পা দিতেই রত্না চৌধুরী শিউরে উঠেছিলেন। এই বাড়িতে সে আবার ফিরে আসবে তাও তার সন্তানের হাত ধরে কখনো ভাবেনি। জাহির চৌধুরী সেদিনের পর নিজেকে ঘর বন্দি করে নিয়েছে। তার মধ্যকার অনুতাপ অনুশোচনা ক্রমশ গ্রাস করছে তাকে। নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে চিনতে ভুল করেছে। তার ভালবাসার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি৷ এইসব ভেবে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেন তিনি। রত্না চৌধুরীর সামনে তার এই অপরাধী মুখ যেনো দেখাতে চাই না। রত্না চৌধুরী বাড়ি আসার পর থেকে জাহির চৌধুরীকে দেখেনি রুম থেকে বের হতে। এতে রত্না চৌধুরী হতাশ হয়৷ জাহির চৌধুরী যে অপরাধবোধ থেকে সব কিছু করছে সেটা রত্না চৌধুরী বুঝতে পারে। কিন্তু একটাবার কথা বলার প্রয়োজন মনে করলো না। অভিমান করে দূরে থাকার কথা তো রত্না চৌধুরীর ছিলো। সে যখন সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করতে যাচ্ছে তাহলে তার আপন মানুষগুলো কেনো পারছে না?

–” জেসমিন চৌধুরী সেদিনের পর কারো সাথে কথা বলে না। সব সময় চুপচাপ হয়ে থাকে। তানভীর আহমেদ গিয়েছিলো দেখা করার জন্য। কিন্তু জেসমিন চৌধুরী দেখা করেনি তার সাথে। কারো সামনে আসতে চাইনা সে। তার করা কাজের জন্য ভীষণ অনুতপ্ত এখন। প্রতি মুহূর্তে তার করা পাপ তাড়া করে বেরাচ্ছে। সময় থাকতে বুঝেনি সে৷ এখন যখন সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। পরিবেশ অনুকূলের বাইরে৷ এখন তিনি তার পাপ উপলব্ধি করতে পারছে৷ কিন্তু কি লাভ তাতে? সব কিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সময়ও সব কিছুর জন্য একটা সঠিক সময় দেয়। যাতে করে বুঝতে পারে তার করা কাজটা ভালো কি খারাপ। আসলে লোভ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। যার জন্য জেসমিন চৌধুরী সব কিছু দেখে, বুঝেও মানতে চাইনি।

–” তানিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে সকালের দিকে। দোলা নিজ হাতে আজ সবার পছন্দের খাবার রান্না করে। দোলা ভীষণ খুশি এই পরিবারে সবাইকে একসাথে করতে পেরে। জেসমিন চৌধুরীর জন্য একটু মন খারাপ হয় সবার। দোলাও তার ব্যতিক্রম নয়। আজ যদি সে ভালো হতো। সব কিছু স্বীকার করে ক্ষমা চাইতো তাহলে নিশ্চয় তার পরিবার তাকে মাফ করে দিতো। সেও থাকতে পারতো সবার সাথে। তাহলে পরিবারটা একদম পরিপূর্ণ হয়ে যেতো৷ যদিও জেসমিন চৌধুরীকে ছাড়া কোনো কিছু থেমে নেই। তারপর একটা শুণ্যস্থান তো থেকেই যায়।

–” দোলা দুপুরের রান্নাবান্না শেষ করে ফ্রেস হয়ে রত্না চৌধুরীর ঘরে যায়। রত্না চৌধুরী এখন একটা আলাদা ঘরে থাকে। আজ সজলেরও আসার কথা৷ দুপুরে একসাথে খাবে সবার সাথে। রত্না চৌধুরী মন খারাপ করে জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে। দোলা রত্না চৌধুরীর ঘরে যেতেই রত্না চৌধুরী দোলার দিকে তাকায়। দোলা মুচকি হাসি দেয় একটা। বিপরীতে রত্না চৌধুরীও একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে। যে হাসিতে মলিনতা ছাড়া আর কিছু নেই।

— মা একটা কথা বলব? নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা। দোলার হঠাৎ এই কথায় রত্না চৌধুরী কৌতুহলী হয়ে তাকায়৷ দোলা তাকে কি বলবে হয়তো কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে সে। তারপরও মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।
– দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে! বাবা হয়তো ভেতর ভেতর নিজেকে অপরাধী মনে করছে৷ অনুশোচনার দেয়াল আষ্টেপৃষ্টে রেখেছে তাকে। তাই তোমার মুখোমুখি হওয়ার সাহস পাচ্ছে না। বলছিলাম তুমি যদি.. কথাটা বলে দোলা থেমে যায়। রত্না চৌধুরী আহত চোখে তাকায় দোলার দিকে।
— একটিবার গিয়ে কথা বলো মা। তুমি যদি গিয়ে কথা বলো৷ সবকিছু ঠিক করে নাও আমার বিশ্বাস বাবা সব কিছু থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারবে। বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসে মা। তোমার জন্য দুচোখ ভরে ভালবাসা আমি দেখেছি। সবাই যখন তোমাকে ঘৃণায় ছায়ায় ঢেকে রেখেছে! বাবা তখনো তোমার ছবি দেখে আশার পথ গুণেছে। হয়তো তিনিও মনে মনে চাইতেন তুমি ফিরে এসো। আজ যখন সব কিছু ঠিক আছে তাহলে তোমরা কেনো দূরে থাকবে এত কাছে থাকার পরও। জানি না আমি ঠিক বলছি নাকি ভুল। তবে আমার মনে হলো কথা গুলো তোমাকে বলা দরকার। খাবে এসো বলে দোলা বেরিয়ে যায় রত্না চৌধুরীর ঘর থেকে।

— দোলা বেরিয়ে যেতেই রত্না চৌধুরী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তিনি তো চাই সব কিছু স্বাভাবিক হোক। তাহলে কেনো এতো সংকোচ, এত বাঁধা।
— দোলা সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকে। সজল এসেছে একটু আগে। এসেই তানিয়ার রুমে চলে গেছে। সজল তানিয়াকে এখন যেনো চোখে হারায়। তানিয়ার গুলি লাগার পর থেকে তাকে হারানোর ভয় সজলকে সব সময় যেনো তাড়া করে বেড়ায়৷ সজল চাই খুব শীগ্রই তানিয়াকে বিয়ে করে তার কাছে রাখতে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তার আর তানিয়ার বিয়ের কথা সবাইকে বলবে। এমনিতে সবাই জেনে গেছে তানিয়া আর সজল দুজন দুজনকে ভালোবাসে।

— সবাইকে একে একে এসে টেবিলে বসে। দোলা জাহির চৌধুরীর জন্য খাবার রেডি করে। কারণ তিনি ঘরেই খাওয়া দাওয়া করেন এখন। দোলার মনটা খারাপ হয়ে যায় জাহির চৌধুরীর জন্য খাবার বাড়তে গিয়ে। কবে আবার সব ঠিক হবে। সবাই একসাথে বসে খাবে এই সব ভেবে দোলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একজন সার্ভেন্টকে ডেকে বলে খাবারটা দিয়ে আসার জন্য। তখনই রত্না চৌধুরী বলে, খাবারটা এখানেই রাখ দোলা। উনি এখানে এসে সবার সাথে খাবে মুখটা গম্ভীর করে বলেন তিনি।

– রত্না চৌধুরীর কথায় দোলার মুখে হাসি ফুটে। রুদ্র, তানিয়া তানভীর আহমেদ সবাই মুচকি হেসে নড়েচড়ে উঠে। সবার চোখ মুখে অনেকটা আশা,প্রত্যাশার ছাপ ফুটে উঠেছে। রত্না চৌধুরী কথাটা বলে জাহির চৌধুরীর রুমের দিকে হুইলচেয়ার টেনে নিয়ে যায়। জাহির চৌধুরীর রুমের দরজা ভেঁজানো আছে। রত্না চৌধুরী রুমের সামনে এসে থেমে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভেতরে যায়।

–“” জাহির চৌধুরী জানালার ধারে জানালার গ্রিলে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে। রত্না চৌধুরী কাতর দৃষ্টিতে জাহির চৌধুরীকে একবার পর্যবেক্ষণ করে। চোখ দিয়ে অজান্তে একফোঁটা পানি গাল বেয়ে পড়ে। রত্না চৌধুরী সংগোপনে সেটা মুছে নেয় শাড়ির আঁচল দিয়ে।
— আসতে পারি? দৃঢ় কন্ঠে বলে রত্না চৌধুরী। তার কথা শুনে জাহির চৌধুরী চমকে উঠে পেছনে তাকিয়ে রত্না চৌধুরীকে দেখে থমকে যায়। ব্যথিত চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুখন তার দিকে৷ রত্না চৌধুরী আর জাহির চৌধুরী দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে অপলকভাবে৷ জাহির চৌধুরী আগে চোখ সরিয়ে নেয় রত্না চৌধুরীর দিক থেকে। তার দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস শেষ পর্যন্ত হয়না জাহির চৌধুরীর। অপরাধে চোখ নামিয়ে নেয়। আবার উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ায় সে৷

-” কি সমস্যা তোমার? কেনো করছো এমন? তুমি কি খুশি নও আমি ফিরে আসায়? যদি এমন হয় তো বলে দাও না আমি চলে যাচ্ছি। কেনো মুখ লুকিয়ে সবার থেকে আড়ালে থাকছো। কেনো আমাকে সবার সামনে ছোট করে দিচ্ছো? অভিমান নিয়ে বলে রত্না চৌধুরী কথাগুলো। রত্না চৌধুরীর কথায় জাহির চৌধুরী কেঁপে কেঁপে উঠে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তার। কি বলবে রত্না চৌধুরীর কথার বিপরীতে তার জানা নেই।
নিজ মুখে নিজের জন্য সাফাই কেমন করে গাইবে সে।

— জাহির চৌধুরীকে চুপ করে থাকতে দেখে রত্না চৌধুরী হতাশ হয়।
– এখনো চুপ করে থাকবে? কথা বলবে না আমার সাথে? আমি যে নিজ থেকে এসেছি তোমার কাছে এর কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে? এতটা দূরের মানুষ হয়ে গেছি আমি। অবশ্য এটা তো অনেক আগেই হওয়ার ছিলো। আমি বা কে তোমার? কথা বলতে হবে না। থাকো তোমার ইগো নিয়ে। আমি চলে যাবো এই বাড়ি ছেড়ে। আমার জন্য তোমাকে তোমার আপনজনদের থেকে দূরে থাকতে হবে না। অনেক দূরে চলে যাবো আমি। তুমি ভালো থাকো। সারাজীবন এটাই চেয়ে এসেছি এখনো চাই। আর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সেটাই চাইবো। আসছি আমি বলে রত্না চৌধুরী ফিরে যেতে গেলে জাহির চৌধুরী ঘুরে দাঁড়ায় ছলছল চোখে।

— কোন মুখ নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়াবো বলতে পারো রত্না? কোন মুখে আমি নিজের গুণগান করবো তোমার সামনে। আমি তো অন্যায় করেছি তোমার সাথে। তোমাকে অবিশ্বাস করেছি। তোমাকে বুঝতে পারিনি। আমার ভালোবাসার উপর বিশ্বাস রাখতে পারিনি। আমি তো অপরাধী। অপরাধ করেছি। কথাগুলো একসাথে বলে কেঁদে উঠেন জাহির চৌধুরী। রত্না চৌধুরীর চোখে পানিতে টলমল করছে জাহির চৌধুরীর কথা শুনে।
– আমি তো কখনো তোমাকে দোষ দেইনি। আমরা সবাই পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম। যার জন্য আমাদের আলাদা থাকতে হয়েছে এতগুলো বছর। এর জন্য কারো একার দায় নেই। তাছাড়া তুমি কেনো নিজেকে দোষ দিচ্ছো। তুমি তো কিছু করোনি। যা করার তো জেসমিন.. কথাটা বলে থেমে যায় রত্না চৌধুরী।

— হ্যাঁ মানছি আমরা পরিস্থিতির স্বীকার ছিলাম। কিন্তু আমার তো তোমাকে বোঝা উচিত ছিলো। একটাবার তোমার সামনাসামনি হওয়ার দরকার ছিলো। তোমাকে খোঁজা উচিত ছিলো আমার। কিন্তু আমি এর কিছুই করিনি৷ উল্টো তোমার উপর রাগ অভিমান করে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি। তোমার সাথে হওয়া অন্যায় সম্পর্কে একবারও জানার চেষ্টা করিনি। অন্ধের মতো জীবন পার করেছি আমি। আমি তো অন্যায়ই করেছি তোমার সাথে৷ জেসমিনের একার দোষ নয় রত্না আমিও দোষী। আমি তো ওর কথা বিশ্বাস করেছি। তোমাকে তোমার সন্তানের কাছে খারাপ করে রেখেছিলাম কথাটা বলে জাহির চৌধুরী দুইহাতে মুখ ঢেকে কান্না করেন।

— রত্না চৌধুরী জাহির চৌধুরীর কাছে এগিয়ে আসে। জাহির চৌধুরীর হাত ধরে দুই হাতের মুঠোয় রাখে। জাহির চৌধুরী রত্না চৌধুরীর সামনে বসে করুণ চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
— আমার কথাটা শুনো! যা হওয়ার হয়েছে গেছে। সেগুলো তো আমরা আর বদলাতে পারবো না। অনেক কষ্ট, দুঃখ উপেক্ষা করে আজ আমরা সবাই একসাথে আছি। তাহলে কেনো আমরা ওই দিনগুলোর কথা ভেবে এখনকার মুহূর্ত গুলো নষ্ট করবো। অনেক তো হলো কষ্ট, দুঃখ পাওয়া। এখন যখন আমাদের সুখের দিন এসেছে তাহলে কেনো আমরা সেটা আঁকড়ে ধরছি না। কেনো নিজেকে দোষ দিয়ে আমার থেকে দূরে থাকছো। সব কিছু ভুলে চলো না একসাথে চলি। অনেক তো হলো আর কত? রত্না চৌধুরীর কথায় জাহির চৌধুরী রত্না চৌধুরীর হাঁটুর সাথে কপাল ঠেকিয়ে নিরবে চোখে পানি ফেলতে থাকে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, আমাকে ক্ষমা করে দাও রত্না৷ আমি সত্যি ভুল করেছি। তোমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারিনি। ভরসা করতে পারিনি। আমি কি করতাম বলো ওই মুহূর্তে। রুদ্রর অসহায় মুখ, ওর কান্না মাখা চেহারা দেখে আমি নিজেকে সামলাতে পারিনি। দিনের পর দিন তোমার প্রতিটি রাগ অভিমান তীব্র হতে থেকেছে। কোনটা উচিত অনুচিত ভাবিনি একবারও। ভেবেছিলাম নিজ থেকে চলে গেছো যখন আমিও ভালো থাকার চেষ্টা করবো রুদ্রকে নিয়ে। কিন্তু ভাবিনি আমার বোন আমার সংসারটা এইভাবে ভেঙে দেবে৷ আমাকে ক্ষমা করে দাও রত্না। আমি ভুল করেছি তোমাকে ভুল বুঝে।

— রত্না চৌধুরী জাহির চৌধুরীকে আগলে নেয় তার বক্ষমাঝে। জাহির চৌধুরীও শক্ত করে চেপে ধরে রত্না চৌধুরীকে। দুজনেই চোখের পানি ফেলছে। যে পানিতে ধুয়ে মুছে যাচ্ছে সব রাগ,অভিমান। নতুন করে সুখের জোয়ার বয়ে নিয়ে আসবে এবার।

— দরজার আড়ালে থেকে সবটাই দেখছিলো তানিয়া আর দোলা। ওদের মিল হওয়া দেখে তানিয়া লাফিয়ে দোলার হাত চেপে ধরে খুশিতে। তানিয়ার কান্ডে দোলা মুচকি হাসে।

— যাক বাবা সব মিটে গেলো৷ এবার শান্তি একটা টানা শ্বাস নিয়ে বলে তানিয়া। দোলা তানিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে গেলে তানিয়া যেতে চাইনা।
– অনেক হয়েছে মামা মামির মান অভিমানের পর্ব দেখা৷ এবার উনাদের একা থাকতে দিই আমরা৷ চলো তানিয়া।
– এটা ঠিক না বউমনি। রাগ অভিমান দেখলাম এখন উনাদের ভালবাসা দেখবো না মুখটা মলিন করে বলে তানিয়া।
– ইসস! এই সব কি কথা তানু৷ উনারা আমাদের গুরুজন। দিন দিন অনেক অসভ্য হয়ে যাচ্ছো তুমি। খুব শীগ্রই তোমার একটা ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি। চলো এখান থেকে বলে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় দোলা। তানিয়া মুখটা গম্ভীর করে রাখে।

— কি হয়েছে? তোর মুখটা এমন বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেনো? রুদ্র বলে তানিয়ার দিকে তাকিয়ে তানিয়াকে গম্ভীর মুখে বসে থাকতে দেখে। তানিয়া একটা অসহায় লুক নিয়ে বলে দেখো না ব্রো! বউমনি আমাকে মামা মামির রোমান্স… কথাটা বলে মুখ চেপে ধরে হাত দিয়ে। রুদ্র আর সজল বড় বড় চোখ করে তাকায়। আর দোলা সে বেচারা বিশাল বড় শক নিয়ে তাকায় তানিয়ার দিকে রসগোল্লার ন্যায় চোখ করে।

— তানভীর আহমেদ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কৌতুহলী হয়ে বলে কি?
– তানিয়া মুখ থেকে হাত নামিয়ে মুখে হাসি নিয়ে আসার চেষ্টা করে দুইদিকে মাথা ঝাকিয়ে বলে নাহ, কিছু না। ওই এমনি কথাটা বলে দোলাকে কনুই দিয়ে গোতা মেরে বলে সামলাতে।

— রুদ্র আর সজল তো এখনো তানিয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে জানার জন্য।
– আচ্ছা সবাইকে খেতে দিয়ে দিই আমি বরং বলে দোলা সবার এটেনশন অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করে।

— মনিমা’রা আসুক তারপর নাহয় শুরু করছি আমরা। সজলের কথা শেষ হতেই রত্না চৌধুরী হাজির হয় জাহির চৌধুরীকে সাথে নিয়ে।
– জাহির চৌধুরী হুইলচেয়ার ঠেলিয়ে নিয়ে এসেছে রত্না চৌধুরীকে।
– ওদের দুজনকে একসাথে দেখে সবার মুখে সুন্দর হাসি ফুটে উঠে। রুদ্র দুচোখ ভরে তার বাবা মাকে দেখছে।
– যাক বাবা সব মিটে গেছে তাহলে? কৌতুহল নিয়ে বলে তানভীর আহমেদ। তার কথায় রত্না চৌধুরী আর জাহির চৌধুরী মুচকি হাসে।
– এসো এসো এবার বসে পড়ে তো খেতে। কতটা সময় চলে গেছে। খাবার গুলো তো ঠান্ডা হয়ে গেলো মামা। আমার তো খুব জোর খুদা পেয়েছে। তানিয়ার কথায় রুদ্র তানিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে অল্প করে খাস পেটুক একটা। দিন দিন তো মুটকি হয়ে যাচ্ছিস। এরপর দেখা যাবে কোনো ছেলে আর বিয়ে করবে না তোর মতো মুটকিকে।
– রুদ্রর কথায় তানিয়া পাত্তা না দিয়ে বলে! তোমাকে বলেছে কোনো ছেলে বিয়ে করবে না। ছেলে তো সামনেই আছে জিজ্ঞেস করো বিয়ে করবে কি করবে না। এক পায়ে রাজি হ্যাঁ ভাব নিয়ে বলে তানিয়।

— তানিয়ার কথায় সজল বিষম খাই। সজলকে কাশতে দেখে দোলা তাড়াতাড়ি করে পানি দেয় এক গ্লাস।
– তুই কি মেয়েরে তানু৷ এখানে সবাই তোর গুরুজন। কোথায় লজ্জা পাবি একাট্টু তা-না করে। ছিছি তুই নাকি আমার বোন নাক সিঁটকে বলে রুদ্র।
– দেখো ব্রো একদম ভালো হবে না। মামি তুমি কিছু বলো ব্রোকে। শুধু শুধু আমার পেছনে লাগছে। কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে তানিয়া।। ওর মুখোভঙ্গি দেখে সবাই হো হো করে হেসে উঠে।

— আমাকে ছাড়া খুব মজা করা হচ্ছে দেখছি। বাড়ির মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে বলে রাজ। রাজের কথায় সবাই সেদিকে তাকায়। রাজকে দেখে সবার মুখের হাসি দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ শুধু রত্না চৌধুরী কৌতুহলী হয়ে তাকিয়ে আছে। রাজকে রত্না চৌধুরী এর আগে কখনো দেখেনি। তাই চিনতেও পারছে না কে হতে পারে।

– রাজ এসে একটা চেয়ারে বসে যায়। রুদ্র মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে তুই কখন আসলি দেশে? একবার জানাসনি তো দেশে আসছিস।
— জানালে কি আর এমন হুট করে এসে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম। কত ছটফট করেছি ওইখানে থেকে জানিস। কবে দেশে আসবো আর সবার সামনে এসে দাঁড়াবো৷ কত ঝড়ঝাপটা গেলো তোদের উপর কিন্তু আমি পাশে থাকতে পারলাম না। মুখটা মলিন করে বলে রাজ।

–‘ আপনি তো সব সময় আমাদের পাশে থাকেন রাজ ভাইয়া। এখনো ছিলেন৷ দূরে থেকে কি পাশে থাকা যায় না। তাছাড়া আপনি তো সর্বক্ষণের সঙ্গী আমাদের। তাই তো ঠিক সময়ে চলে এসেছেন হাসি মুখে বলে দোলা।
– তা ঠিক বলেছো ভাবি৷ একদম রাইট টাইমে চলে এসেছি। যাকে বলে মিলন তিথি মুহূর্ত ।

–” আচ্ছা ওইদিকের কি খবর তাই বল? রুদ্রর কথায় রাজ মুখের হাসিটা চওড়া করে বলে প্রজেক্টটা আমরাই পেয়েছি দোস্ত। রাজের কথায় রুদ্র উঠে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরে বলে সত্যি। তাহলে আগে জানাস নাই কেনো ইডিয়ট। কত চিন্তায় ছিলাম আমি এটা নিয়ে জানিস।

– আরে একবারে এসে বড় সারপ্রাইজ দেবো ভেবে সব হাইড রেখেছি। ( রাজ অফিসের কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলো। আজ সকালেই দেশে ফিরে আসে)। এইসব কাজের কথা ছাড়৷ আমাকে আগে আন্টির সাথে সাক্ষাৎ করতে দে। আমি যে কত খুশি হয়েছি তোকে বলে বোঝাতে পারবো না হাসি মুখে বলে রাজ।
– রত্না চৌধুরী এখনো কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে।

— মা এটা আমার বন্ধু রাজ৷ শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে। ও আমার সুখ দুঃখ সব কিছুর সাথী। এমন কোনো মুহূর্ত নেই ওকে আমি পাশে পাইনি৷ তুমি চলে যাওয়ার পর! বাবার পরে ওই ছিলো আমার সাথে সব সময়। অনেক বিশ্বস্ততার সাথে বলে রুদ্র কথা গুলো।
– রত্না চৌধুরী এবার হাসি দেয় একটা। রাজ রত্না চৌধুরী কে সালাম দিয়ে কৌশল বিনিময় করে। খুবই অল্প সময়ে রত্না চৌধুরীর মন জয় করে নেয় সে। আর হবে না কেনো? রাজ তো সত্যি অসাধারণ একটা মানুষ। যে সহজে একটা মানুষের আপন হওয়ার যোগ্য।

চলবে…..