#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:19
#Mishmi_muntaha_moon
আরিশ ভাইয়ার নামটা কানে যেতেই সারা শরীর আজানা কারণে শিউরে উঠলো।
সত্যি কি উনার নামটাই শুনলাম।সত্যি উনি এসেছেন।আমি কাউকে কিছু না বলে ছুটে আমাদেত ফ্লাটে গিয়ে আমার রুমে ঢুকলাম।বারান্দায় গিয়ে দারাতেই আরিশ ভাইয়াকে দেখা। সাদা পাঞ্জাবী সাথে ব্লাক জিন্স।চোখ ধাধানোর মতো কিলার লুক নিয়ে আমার বারান্দায় তাকাতেই দৌড়ে রুমের ভিতরে ঢুকলাম।
উনার সামনে যাওয়ার বিশেষ ইচ্ছে খুজে পেলাম না।মাথায় একটা ভাবনা ঘুরছে উনাকে শাস্তি কি করে দিবো।রাগ হওয়ার কথা ছিলো আমার উধাও হওয়ার কথাও তো আমারই ছিলো তাহলে পুরো ১ টা মাস ধরে উনি আমার সাথে রাগ করে উধাও হয়ে ছিলো এর কি কোনো শাস্তি দেওয়া উচিত নয়।
কিন্তু কি করা যায় অন্য কোনো ছেলে কে বিয়ে করে ফেলবো নাকি চোখ যেখানে যায় সেখানেই চলে যাবো।
চিন্তা ভাবনার মাঝেই দরজায় কেউ নক করলো।
–এই জিনাত দরজা খুল।
মাহিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে উঠে গিয়ে দরজা খুললাম।
–তুই এভাবে ছাদ থেকে চলে এলি কেনো।ওহ আরেকটা হেপি নিউস আরিশ ভাইয়া এসেছে আহা কি হ্যান্ডসাম লাগছিলো না।
–মাহিয়া তুই ছাদে যা আমি আসছি।শুধু এখানে দাঁড়িয়ে আমার মাথা খাস না।
–তোর আবার কি হয়ে গেলো কিছুক্ষন আগে তো ঠিকই ছিলি।
–আমি এখনো ঠিকই আছি তুই রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে রেস্ট করতে দিলো আরো ঠিক হয়ে যাবো।
আমার কথা শুনে মাহিয়া চলে গেলো।আমি কিছুক্ষন বসে থেকে আবারো বারান্দায় গিয়ে নিচে দেখলাম কেউ নেই।সবাই হয়তো ছাদে আরিশ ভাইয়াও ছাদেই হবে।আমি শাড়িটা ঠিক করে দরজা খুলে বের হলাম।
সব আজাইরা চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে সরাসরি ভাইয়ার সাথে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।
রাত ১০ টার মতো বাজে। ছাদে গিয়ে সব জায়গায় খুজেও কোথাও আরিশ ভাইয়াকে খুজে পেলাম না।তাছাড়া থাকলেও উনি হাইলাইট হয়ে থাকতো কারণ সবাই সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পরেছে কিন্তু আরিশ ভাইয়া সাদা পাঞ্জাবী পরেছে।
ছাদে দেখা শেষ করে নামতে নিবো তখনই আপু আর নাহিদ ভাইয়ার কথা শুনতে পেলাম আমাকে নিয়েই কিছু কথা বলছে।ভালো করে কান পাততেই নাহিদ ভাইয়ার কথাগুলো স্পষ্ট কানে আসতে লাগলো।
–মিথি রিজবী আছে না আমার চাচার ছেলে ও জিনাত কে দেখেছে ভীষণ পছন্দ হয়েছে বলল তাই আমি এই ব্যাপারে তোমার আম্মুর সাথে কথা বলতে চাচ্ছি।
আর কিছু শুনলাম না।
রিজবী ছেলেটা প্রথম ছাদে আসার পরেই এসেছিলো কিন্তু ওই ছেলেটার তো মাহিয়ার সাথে অনেক সখ্যতা গড়ে উঠেছিলো দেখলাম তাহলে আমি কোথা থেকে পছন্দ হলাম কিছুই মাথায় ঢুকলো না।
এলো মেলো পা ফেল আবার ফ্লেটে গেলাম।রুমে গিয়ে দরজা অফ করে বিছানায় বসতেই বারান্দায় চোখ গেলো আরিশ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। উনাকে দেখে বসা থেকে উঠে বারান্দায় গেলাম।আরিশ ভাইয়া পকেটে হাত ঢুকিয়ে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।
আমি কি বলে শুরু করবো তাই বুঝতে পারছি কেমন অস্বস্তি লাগছে।
তবুও মৃদু কন্ঠে ডাক দিলাম।
–আরিশ ভাইয়া।
আমার কণ্ঠস্বর শুনেও কোনোরকম হেলদুল দেখা গেলো না।
আমার কথা শুনেও না তাকাতে দেখে চাপিয়ে রাখা রাগ গুলো ধপ করে জ্বলে উঠলো।
–আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন না নাকি শুনতে চাচ্ছেন না।কিন্তু শুনতে না চাইলেও আমার অভিযোগ আমার অভিমান আমার এতোদিনের চাপিয়ে রাখা কথা সব শুনতে হবে আপনার বুঝলেন।
আমার কথা শুনে ভাইয়া স্বাভাবিক ভাবেই পিছে ফিরে আমার দিকে তকালো।উনার চাহনি দেখে বুক কেপে উঠলো কেমন যেনো লাগতে শুরু করলো।খেয়াল আসতে লাগলো উনাকে ছাড়া আমি কি করবো।
আমি সব ভুলে কন্ঠকে যথাসম্ভব কঠোর করে বললাম
–আপনি আমাকে কিছু না বলে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তারউপর আমি যতোবার আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি আপনি ততবারই আমাকে ব্যর্থ করেছেন।কেনো??
আমার কথা শুনে আরিশ ভাইয়া দাতে দাত চেপে বলল
–আমার যে ইতির সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তুই তো প্রথম থেকে সব জানতি তাহলে আমার সাথে সরাসরি কোনো কথা না বলে ইগনোর করছিলি আমি জিজ্ঞাসা করার পরও তুই কিচ্ছুটি বলিস নি।
উনার কথা শুনে আমি মুখ ফিরিয়ে বললাম
–কেনো বলতাম আপনার বিয়ে ঠিক করেছিলো আন্টি আর আপনি জানতেন না!!আমি কি করে বিশ্বাস করি এই কথা?
আমার কথা শুনে ভাইয়া অবাক হয়ে বলল
–আমাকে তুই বিশ্বাস করিস না।
ভাইয়ার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম।
আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই ভাইয়া আমার গালে হাত রেখে বলল
–তুই কি ভেবেছিলে আমি তোর টাইমপাস করছি লাইক সিরিয়াসলি।তোর আইডিয়া আছে আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি।প্রায় ৫ বছর আগে আমি তোর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়েছে এতো সহজেই তুই এক মুহূর্তে আমার দীর্ঘ বছরের আসক্তিকে তুচ্ছ করলি।করতে পারলি?
ভাইয়ার কথা শুনে চোখ টলমল করতে লাগলো।উনাকে শক্ত করে ঝাপটে ধরে কেদে কেদে বলতে লাগলাম।
–আপনি আমার সাথে কথাও বলতে চাইছিলেন না।খুব খারাপ করেছেন আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন।
ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল।
–এতোদিনে খুবই কষ্টে দিন কেটেছে।যাই হোক তোর তো ভালোই দিনকাল কেটেছে।আমাকে যে মিস করছিলি তা তো একদমই মনে হচ্ছে না।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে উনাকে ধাক্কা দিয়ে দু কদম পিছে গিয়ে দারালাম।
–কি বললেন আমি আপনাকে মিস করি নি?আমি আপনার সাথে কতো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি বরং আপনি আমাকে মিস করেন নি।
কথা বলতে বলতে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরতে লাগলো।ভাইয়া আমার কপালে চুমু খেয়ে হেসে বলল।
–আচ্ছা বুঝলাম তুই আমায় মিস করছিলি।আর তুই এতো সেজেছস কেনো আর চুলে এইটা কি গোলাপ ফুল লাগিয়ে রেখেছিস।
আরিশ ভাইয়া আমাকে পিছে ঘুরিয়ে খোপা থেকে গোলাপ ফুল খুলে কোথা থেকে বেলি ফুলের মালা বের করে চুলে পেচিয়ে দিলো।চুলে বেলি ফুলের মালা পেচিয়ে আমাকে উনার দিকে ফিরালো আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম
–গোলাপ ফুল গুলো আপনি পাঠান নি?
–আমি পাঠাতে যাবো কেনো।ওয়েট এই গোলাপ কি কেউ পাঠিয়েছে তোকে?
আমি চিন্তিত স্বরে বললাম
–হুম কেউ একটা চিরকুটের সাথে পাঠিয়েছে।
আরিশ ভাইয়া আমার কথা শুনে দরজার দিকে বাড়তে বাড়তে বলল
–তোর তো দেখছি প্রেমিক পুরুষের অভাব নেই।
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে মুখ হা হয়ে গেলো।আমি দৌড়ে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলি।
–আর আপনার পিছে যে মেয়েরা মৌমাছির মতো ঘুরে তা কিছু না।
আরিশ ভাইয়া আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে চলে যায়।
আরিশ ভাইয়া যাওয়ার পর আমিও উনার পিছে পিছে যাই।
এখন আর আগের মতো অস্থিরতা কাজ করছে না।খুবই প্রশান্তি লাগছে।
মনে হচ্ছে মাথা থেকে একটা বড় বোঝা কেউ তুলে নিয়েছে।হয়তো আরিশ ভাইয়া আর আমার মাঝে সব আবার ঠিক হয়ে গেছে বলেই এই অনুভূতি।
পরবর্তী চিন্তা সব বাদ দিয়ে এই মুহূর্ত কে ইঞ্জয় করাটাই উত্তম নাহলে তো ব্যাক্তি জীবনে প্রতি দিনই একটা নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
চলবে,,,