#তোমাতেই_সীমাবদ্ধ
#part:21
#Mishmi_muntaha_moon
এতো ঝামেলা কখনো ফেস করতে হয় নি আমার।একটার পর একটা ঝামেলা আসতেই আছে।মাত্রই আমার আর আরিশ ভাইয়ার মাঝে সব ঠিক হলো এখন আবার এই রিজবী।আর আম্মুদেরই কি প্রয়োজন ছিলো এই রিজবী টিজবীর প্রস্তাবে রাজি হওয়া।মাত্রই তো আপুর বিয়ে হলো এখন আবার আমাকেও বিয়ে করিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চায় নাকি!!
আরিশ ভাইয়ার কথা ভেবে আরো টেনশন লাগতে শুরু করলো।উনি তো প্রচুর রেগে আছে কাল তো সোজাসুজি ভাবে বলে দিয়েছে এখন যা করার উনি করবে।
এখন উনি কি করার কথা ভাবছে তা তো উনিই ভালো জানে।
ভাবতে ভাবতে মাথাটা ধরে গেলো।
রাতের ১০ টার মতো বাজে।চোখে ঘুম নেই কিভাবে ঘুম আসবে কেমন যেনো খালি খালি লাগছে রুমটা।আপু নেই এখন তো রুমটা শুধুই আমার।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে বাহিরে যেতেই আম্মুর ঘরের আলো জ্বালানো দেখে অবাক হয়ে উনাদের রুমের কাছে যাই।
–আজব তো আপনি এমন করছেন কেনো। আমি তো নাহিদের চাচি কে কালই না করে দিয়েছি।একটা মেয়ের মাত্র বিয়ে হলো এখন তো এই মেয়ের বিয়ের কথা আমি ভাবিও না।কিন্তু উনারা দেখতে চেয়েছিলো তাই বিয়ের দিন দেখালাম নাহলে খারাপ দেখায় না।
–হুম ঠিক করেছো।জিনাতের বিয়ের কথা এখন চিন্তায় না আনাই ভালো।এখনো ছোট ও। আর তাছাড়া ওকে বিয়ে দিলে ঘর তো পুরো খালি হয়ে যাবে,,,
আম্মু আর আব্বুর কথা শুনে খুশিতে লাফাতে ইচ্ছা করতে কিন্তু নিজের ইচ্ছাকে এইমুহূর্তে প্রশ্রয় না দিয়ে ডায়েনিং টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে ধীর পায়ে রুমে গেলাম।
মনে হচ্ছে এখন ঘুম টা চোখে ধরা দিতেও পারে
–
সকালে উঠে বাহিরে যেতেই ঘর টা কেমন শুন্য শুন্য লাগতে শুরু করলো।
টিভি দেখার মাঝেই মনে পরলো আম্মু আর আব্বুর বলা কথাগুলো তো আরিশ ভাইয়াকে বললামই না।
টিভি অফ করে রুমে গিয়ে আরিশ ভাইয়াকে কল লাগালাম।কিন্তু আরিশ ভাইয়া তুললো না।কি করছেটা কি যে কে কল করেছে তার খবরা খবর নেই।
মোবাইল রেখে রুম জুরে পায়চারী করার মাঝেই ফোন বাজতে লাগলো।উত্তেজন নিয়ে ফোন হাতে নিতেই আননোন নাম্বার দেখে বিরক্ত লেগে গেলো।
–হ্যালো।কে?
আমি বলার পরও ওইপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে বিরক্তের পরিমান বেড়ে এলো।
–আরে বাবা কে? বলছেন না কেনো?
–আরে আপনি তো রেগে যাচ্ছেন কুল।আমি হলাম নাহিদের চাচাতো ভাই রিজবী।
রিজবী নামটা শুনে ইচ্ছে করলো কাট করে কল টা কেটে দেই কিন্তু এমন মুখের ওপর কেটে দিতে পারি না। নাহিদ ভাইয়ার ভাই হয় বলে কথা।
না চাওয়া সত্ত্বেও মৃদু কন্ঠে বললাম
–ও আপনি!
–হুম কেমন আছো?
–ভালো।
ওখান থেকে কিছু ক্ষন পর আওয়াজ ভেসে এলো
–আপনি হয়তো বিজি আছেন।
–জ্বী আসলে আমি কিছু কাজ করছিলাম।
–ও আচ্ছা তাহলে আমি রাখি আর ডিস্টার্ব করার জন্য সরি।
–ইটস ওকে।
কল কেটে দিয়ে প্রশান্তির শ্বাস নিলাম।উফ ভালো হলো রেখে দিয়েছে।
কোথা থেকে যে এই প্রেমিক পুরুষ উদিত হয়।উফ!
–
বিকেল দিক দিয়ে আন্টি আর আংকেল কে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে গেলো।আংকেল বেশি একটা আসে না।
আরিশ ভাইয়ার খোজে তারাতারি গিয়ে আংকেল আর আন্টির কাছে গিয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম কিন্তু আন্টি আর আংকেল ছাড়া আর কেউকেই চোখে পরলো না।
–আরে জিনাত মা কেমন আছো?
–জ্বী আংকেল ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
–আমিও ভালো আছি।
আমার সাথে কথা বলার মাঝেই আম্মু তাড়াহুড়ো করে এসে উনাদের বসালো।
আমি ঘুরে আমার রুমে যেতে নিতেই আংকেলের কথা শুনতে পাই।
–আপনাদের সাথে কিছু জরুরি কথা বলতে এসেছিলাম।ভাই কে ও আসতে বলুন।
আংকেলের কথা শুনে ভ্রু কুচকে পিছে তাকালাম।আম্মুও কিছুটা অবাক নিয়ে উঠে দারালো আব্বুকে ডেকে আনতে।
আমি তারাতারি করে রুমে গিয়ে উকি দিলাম আন্টি আর আংকেল কি বলবে তা শুনতে।
আব্বু আর আম্মু আসতেই আন্টি বলল
–জিনাতকে আমি সবসময় আমার মেয়ের চোখে দেখেছি।কখনো ভাবি নি যে এটা আমার নিজের মেয়ে না।
আন্টির কথা শুনে আম্মু আর আব্বু অবাক হয়েছে তাদের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমিও অবাক হলাম।আমাকে নিয়েই কথা বলতে এলো নাকি?
আন্টির কথা শেষ হতেই আম্মু বলল
–হুম তা তো আমরাও জানি।কিন্তু তুই এই কথা বলছিস কেনো?
আন্টি আবারো বলল
–আমি আরিশের বিয়ের কথা বলতে এসেছি জিনাতের সাথে।
আন্টির কথা শুনে চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আব্বুর কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম।
–কি বলছিস। জিনাতের আরিশের সাথে বিয়ে!
আন্টি বলল
–কেনো আমাদের আরিশের মধ্যে কি কোনো কমতি আছে নাকি?
–না এইটা কমতির কথা না কিন্তু জিনাতের বিয়ে এখন আমরা দিতে চাচ্ছি না।মাত্র আমার বড় মেয়ে মিথিলার বিয়ে হলো তাই এখন জিনাতের বিয়ে দেওয়ার কথা আমরা ভাবতেও চাইছি না।
আব্বুর কথা শুনে আংকেল বলল
–আমরা এখন শুধু কাবিন করে রাখি কোনো অনুষ্ঠান করতে হবে না।কেউ জানবেও না। পরে নাহলে সবাইকে নিয়ে বিয়ে টা হবে।
আম্মু বলল
–কিন্তু আমি জানি জিনাত এই বিয়েটা করতে রাজি হবে না ও সবসময় আরিশ কে ভাইয়ের চোখে দেখেছে এখন হুট করে বিয়ের কথা কিভাবে বলতে পারি।
আর কিছু না শুনে বিছানায় এসে বসলাম।মোবাইল হাতে নিয়ে আরিশ ভাইয়া কে কল করলাম।প্রথমবার রিং হতেই কল রিসিভ করে।
–হ্যালো?
আরিশ ভাইয়ার কন্ঠ শুনে বললাম
–আংকেল আর আন্টিকে আপনি পাঠিয়েছেন?
–হুম।
–কেনো আমাকে তো কিছুই বললেন না আপনি?
–কেনো তোকে বলতে হবে কেনো?
আরিশ ভাইয়ার কথা শুনে হতাশ কন্ঠে বললাম।
–তো আপনি সত্যি চাচ্ছেন বিয়ে করতে কেনো?
–কেনো তুই কি বিয়ে করতে চাইছিস না?
–আরে না এমন কিছুই না আমি কেনো করতে চাইবো না।
–দেট মিন্স করতে চাইছিস।
–উফ আপনি আমাকে বিভ্রান্ত করাছেন কেনো।
আমার কথা শেষ হতেই আরিশ ভাইয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
–পরে কল করছি।
বলেই কল কেটে দিলো।আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থেকে মোবাইল সাইডে রেখে দিলাম।
–
৩ দিন পর।
গতকাল আমার আর আরিশ ভাইয়ার বিয়ে হলো।আমি যতটুকু জানতাম তার হিসেবে বিয়ের কথা কারো জানার কথা ছিলো না কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বাচ্চা থেকে বয়স্ক পর্যন্ত সকলে জানে আমার বিয়ের কথা আহা কি কষ্ট।কিন্তু আম্মু যে কিভাবে রাজি হলো এটাও বুজতে পারছি না।
এখন বসে আছি আংকেলের কোনো কথাই মনে হচ্ছে না এখন আর সত্যি হবে কে জানে কবে আবার আমাকে বিদায় ও দিয়ে দেয়।
ভাবতেই বুক ধকধক করে উঠলো।
কাল ভাইয়াকে দেখেছিলাম হয়তো দুইবার।আপুও এসেছিলো কাল।
আজ আবার ভাইয়ার কোনো দেখা নেই।
কি যে হলো আপুর বিয়ের দিনের পর থেকে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।ওই রিজবী ইডিয়ট এর সাথে দেখা হওয়াটাই ভুল ছিলো।এই ব্যাক্তি টার জন্যই আমার বিয়ে গেলো।
আমি আজ থেকে বিবাহিত মেয়ে বলে গন্য হবো।
ভাবতেই একটা দুঃখী দুঃখী ভাব জেগে উঠলো।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন♥♥)