তোমার খোলা হাওয়া পর্ব-০৫

0
327

#তোমার_খোলা_হাওয়া
#পর্ব_০৫
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“বাড়িতে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। সবাই বলছে ‘উষা ছিলো বাড়িটাই পানিতে পড়ে ছিলো’। আস্তে আস্তে উষা সবার সাথে ফ্রী হয়ে গেলো। উজানের মনে জায়গা করার আপ্রান চেষ্টা করছে উষা। এভাবে সময় পার হতে লাগলো”। একদিন রাতে উজান অফিস থেকে এসে রেস্ট নিচ্ছিলো তখন উষা এসে বললো…

‘আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারি না’?

‘পারি তবে কখনো স্ত্রী হতে আসবেন না’।

‘ঠিক আছে। শুধু বন্ধু হলেই চলবে’।

‘আচ্ছা’।

‘কিন্তু একটা শর্ত আছে’?

‘কি’?

‘বন্ধু যখন হয়েছি তখন সবকিছু শেয়ার করতে হবে। মন খুলে কথা বলতে হবে আর আজকে থেকে তুমি করে কথা বলবেন’।

‘কিন্তু’?

‘কোনো কিন্তু নয়, কোনো জায়গায় দেখছেন বন্ধু বন্ধুকে আপনি করে বলে? তাহলে আপনি বলবেন কেন’?

‘তাহলে আপনাকেও আই মিন তোমাকেও কিন্তু আমাকে তুমি করে বলতে হবে’।

‘উষা একটু মুচকি হেসে বললো, আচ্ছা বলবো’।

‘হুম’।

‘একটা কথা জিজ্ঞেস করি’?

‘করো’?

‘তোমার অতীত সম্পর্কে জানতে চাই আমি’?

‘তোমাকে বলছি আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাবে না তারপরও’?

‘স্ত্রী হিসেবে তো জানতে চাই নি। বন্ধু হিসেবে জানতে চেয়েছি। বন্ধু হয়ে এটুকু না জানলে কেমন বন্ধু হলাম’?

……….

‘বলবে না’?

‘বলছি শুনো তাহলে’।

‘বলো’।

‘ও আমার কলেজ লাইফের ভালোবাসা। ওর নাম ছিলো লিজা। ও আমার এক বছরের জুনিয়র ছিলো। দু’জন দু’জনকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম। প্রথমে দু’জন বন্ধু হয়েছিলাম সেখান থেকে কিভাবে কখন ভালোবাসা হয়ে গেলো বুঝতেই পারি নি। ও ছিলো বড়লোক পরিবারের মেয়ে। সবার অনেক আদরের। তখন আমার কাছে এতো টাকা-পয়সা ছিলো না। কিন্তু যতটুকু ছিলো তা দিয়ে ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতাম, গিফট কিনে দিতাম। ও কখনো আহামরি কিছু চায় নি। আমার ছোট ছোট গিফট গুলোতেই ও ভালোবাসা খুঁজে নিতো। মেয়েটা বড্ড ভালো ছিলো। এভাবেই দু’জন পড়ালেখা করতে লাগলাম। আমি তখন মাস্টার্সের ফাইনাল ইয়ারে আর লিজা মাস্টার্সের ১ম বর্ষে। তখনই হঠাৎ করে ওর বাবা-মা ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলে। ছেলে ভালো, ডাক্তার। বিয়ে করে বউকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে। এমন ভালো পাত্র ওর বাবা-মা হাতছাড়া করতে চান নি। তাই ওকে না জানিয়েই সবকিছু ঠিক-ঠাক করে ফেলে। ও যখন জানতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু ও তাও বাসায় আমার কথা বলেছিলো। তারা কেউ মেনে নেয় নি। এতো ভালো পাত্রের কাছে তখন আমি কিছুই না। ও গায়ে হলুদের দিন শেষ বারের মতো আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো। আমার হাত দু’টো ধরে বলেছিলো, ও শুধু আমাকে চায়। আমার সাথে পালিয়ে যেতেও রাজি ছিলো। কিন্তু তখন আমি বেকার ছিলাম। কি করবো, ওকে কি খাওয়াবো এসব ভেবে আমার অনিশ্চিত জীবনের সাথে ওকে জড়াতে চাই নি। বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে দিলাম। সেই থেকে ঠিক করেছিলাম আর কোনোদিন বিয়ে করবো না কিন্তু…বাকিটা তুমি জানো’।

“কথাগুলো একদমে বলে বড় একটা নিশ্বাস ছাড়লো উজান। মানুষ’টার ভিতরে এতো কষ্ট অথচ সে কোনোদিন কাউকে বুঝতে দেয় না। মানুষ’টা একদম নরম। শুধু নিজেকে ঠিক রাখতেই এমন গম্ভীর হয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর উজান শীতল চোখে আমার দিকে তাকালেন। সাথে সাথে আমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। এই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস আমার নেই। এই চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় আমি অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছি। আমি সেখান থেকে উঠে চলে গেলাম”।

————–

দেখতে দেখতে কে’টে গেছে ৭ মাস। উষা এই বাড়ির সবার অনেক আপন হয়ে উঠেছে শুধু আপন হতে পারে নি উজানের। তাদের সম্পর্ক’টা আর পাঁচ’টা স্বামী-স্ত্রী’র মতো এখনো হয় নি। উজান এখনো উষা’কে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারে নি। তাদের সম্পর্ক’টা বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঊষা অনেক চেষ্টা করেছে উজানের মনে জায়গা তৈরি করার কিন্তু ঊষা ব্যর্থ। এমন একটা দিন যায় নি যেদিন ঊষা’র চোখ দিয়ে অশ্রু ঝড়ে নি। তবে ভিতরে ভিতরে উজান অনেকটা দূর্বল হয়ে গেছে উষা’র প্রতি কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেয় না। আজ উষা বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছে। অনেক হতো হলো, উষা আর পারছে না। হাঁপিয়ে উঠেছে। এবার একটু সত্যি মুক্তি দরকার। আর ভালো লাগছে না এতো অবহেলা পেতে। উষা হাল ছেড়ে দিয়েছে। সে নিজেও মুক্ত হবে আর উজানকেও মুক্ত করে দিবে। আজ উষা চলে যাবে তার জন্য বাসার সবার মন খারাপ। এই একটা মেয়েই পুরো বাসা মাতিয়ে রাখতো। প্রথমে কেউ যেতে দিতে রাজি হয় নি কিন্তু অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে সবাই রাজি করেছে। উষা’র ধারনা যদি দুরত্ব তৈরি হয় তবেই যদি উজান ওর মূল্য বুঝতে পারে। কিন্তু সব দূরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায় নাকি দূরে যাওয়ার বাহানা মাত্র? হয়তো কখনো কখনো ভালোবাসাও বাড়ায়। শেষবারের মতো আশা নিয়ে আজ এই বাড়ি ছাড়ছে উষা। যদি উজান ওকে ফিরিয়ে আনতে চায় তবেই আসবে নয়তো না। কিন্তু উজান কি ওর শূন্যতা বুঝবে? হয়তো বুঝবে, হয়তো বুঝবে না। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। উজান এখন বাসায় নেই, অফিসে গেছে। তাই এখনই উষা চলে যাবে কারণ উজানকে দেখলে ও আর যেতে পারবে না আবার দূর্বল হয়ে যাবে। উষা যে উজানকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে ঊষা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো”।

“রাত ৮.০৫। উজান অফিস থেকে এসে কলিংবেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উফফ শহরের রাস্তায় এতো জ্যাম, একদম বিরক্ত ধরে যায়। কেউ এসে দরজা খুললো না বলে বিরক্ত হয়ে আবার একবার দিলো। এবারও কেউ খুলছে না দেখে একটু অবাক হলো কারণ এতোদিন একবার কলিংবেল দেওয়ার সাথে সাথেই ঊষা এসে দরজা খুলে দিতো। ঊষা যেনো উজানের অপেক্ষাতেই থাকতো। তাহলে আজ কি হলো? ভাবতে ভাবতে আবার একবার দিলো, এবার উজানের ছোটবোন এসে দরজা খুলে রাগী কন্ঠে বললো ‘কি হয়েছে? এতোবার দিস কেন ভাইয়া’? উজান অবাক হয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো ‘ঊষা কই? আর কেউ দরজা খুলিস নি কেন’? কথা বলতে বলতেই রুমে চলে গেলো। উজানের বোনও আর কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো। ঊষা চলে গেছে, পুরো বাড়িটায় ফাঁকা হয়ে গেছে। কারো মন-মেজাজ ভালো নেই। উজান রুমে এসে দেখে রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার। উজান লাইট অন করে দেখলো রুমে কেউ নেই। উজান চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো, ওয়াশরুম, বেলকনি সব জায়গায় দেখলো কোথাও ঊষা নেই। উজান অবাক হলো এই সময় মেয়েটা কোথায় গেলো। উজান আসার সাথে সাথেই তো লেবুর শরবত করে নিয়ে আসে তাহলে আজকে কোথায়? এসব ভাবতে ভাবতে উজান ফ্রেশ হতে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে এখন হাতের কাছে প্রয়োজনীয় কিছুই পাচ্ছে না। কি বিপদ! এখন কি করবে? কোনো-রকম একটু ঠিকঠাক হয়ে খাবার টেবিলে গেলো সেখানে গিয়ে দেখে একটা প্লেটে কিছু খাবার ঢাকা আছে। উজানের তেমন একটা পছন্দ হলো না। প্রতিদিন খাবার টেবিলে এসেই দেখতো খুব সুন্দর করে খাবার সাজানো যা দেখেই খাওয়ার আগ্রহ আরও বেড়ে যেতো। উজান চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে ওর মা’র রুমে গেলো”। উজানের মা আলমারি গুছাচ্ছিলো উজানকে দেখে বললো…

‘কিছু বলবি’?

‘হুম’।

‘বল’?

‘আজকে বাড়িটা এমন নিরব কেন? সবাই কোথায়’?

‘যে যার ঘরেই আছে’।

‘কিন্তু প্রতিদিন তো সবাই এই সময় বসার ঘরের আড্ডা দেয় তাহলে আজকে’?

‘প্রতিদিন যা হয় আজকেও তাই হবে এমন কোনো কথা আছে’?

‘কিন্তু’?

‘কি’?

‘ঊষা কোথায়’?

‘চলে গেছে’।

‘মানে’?

‘মানে ওর বাবার বাড়ি চলে গেছে। মেয়েটা আর কত অবহেলা নিয়ে এই বাড়িতে পড়ে থাকবে? কম তো হলো না। এবার একটু মেয়েটা শান্তিতে থাকবে আর তুইও তো ভালো থাকবি। তুই তো ঊষা’কে পছন্দ করতি না’?

…….

‘যাই হোক টেবিলে খাবার আছে খেয়ে নে’।

“উজান আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে আসলো। হঠাৎ করেই মন’টা খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু কেন? ঊষা চলে গেছে ওর তো আরও ভালো থাকার কথা তাহলে? উজান আর খেলো না, খাওয়ার ইচ্ছে’টাই যেনো চলে গেছে”।

#চলবে….

(রি-চেইক করি নি। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)