#তোমার_জন্য_ফিরে_আসা
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১০
বাড়ির চারপাশে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। বেল গাছের তলায় কাঁচা বেল পোড়া দিচ্ছে এবং কালো গোলাপের মালা বাড়ির সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। এরকম অদ্ভুত কাজ দেখে কয়েকজন বুঝতে পেরেছে এই বাড়িতে কিছু ঘটতে চলেতে তাই লোকটা কিছু বলছে না।
ইভা সবার আড়ালে গিয়ে আলিবকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলো,
“লোকটা বাড়িতে কি সব করছে সেটা দেখেছেন? ”
“হুম, উনি যা করছে তা করতে দেও ”
“কেনো এরকম কাজ করছে? আর উনি আপনার বিষয়ে জানেন কেনো? ”
“বহু বছর থেকে উনি জ্বীন-ভূতে গবেষণা করছে একমাত্র উনি তোমাকে আমাকে সাহায্য করতে পারবে ”
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না, আমাদের সাথে ঠিক কি হতে চলছে? ”
“লোকটার কাছে পুরনো দিনের সাতরং পাথর আছে সেই পাথর তোমার কাছে রাখতে হবে তাতে তোমার ক্ষতি আর কোনো আত্মা করতে পারবে না। বট গাছের বাড়িতে ভয়ংকর রুপের আত্মা আছে সে আত্মা মুক্তি লাভের জন্য দরকার হবে যার সাথে আমার মতো কেউ আছে তাই সেই আত্মা তোমাকে চাইবে ”
“সব কিছু আমার সাথে ঘটে কেনো? ”
“আমাকে অভিশাপ্ত করেছে তোমাকে নিয়ে ”
“সেটা আবার কেমন অভিশাপ? “.
” এতো কথা বলার সময় নেই, তুমি লোকটার থেকে পাথর নিয়ে আসো যাও ”
“আচ্ছা তাহলে আপনি চলে যান ”
আলিব চলে যাওয়ার পরে ইভা বাড়ির উঠোনে যাবে লোকটার কাছে কিন্তু ওর মা বাঁধা দিলো। ইভা রুমের জানালা থেকে দেখছে লোকটা উঠানে ধুপ জ্বালিয়ে রেখেছে। বড় মামাকে বলছে,
-আজকে রাতে কেউ জেনো বাড়ির বাইরে বের না হয় আর বট গাছের বাড়ির ধারে কাছে কেউ যাবে না।
-জানি আপনি বড়মাপের অশুভ ছায়া দূর করতে পারেন তাই আমাদের বাড়িতে তেমন কিছু থাকলে আপনি দয়া সব অশুভ ছায়া দূর করে দেন।
-আমার পক্ষে যতোটুকু করা সম্ভব ততোটুকু করেছে বাকিটা আপনাদের সাবধানতার উপর নির্ভর করবে।
-হ্যাঁ আমরা সবাই আপনার কথা মেনে চলবো।
লোকটা চলে গেলো। ইভার মামা বাড়ির মেইন দরজা তালা লাগিয়েছে। সবার মধ্যে চিন্তার ছাপ, দু দিন পরে বিয়ে আর এখন বাড়িতে কিসব হচ্ছে? রাতে কোনো মতে সবাই একটু খেয়ে ঘুমাতে গেলো। ইভা, ওর নানু আর লিমা এক বিছানায় শুয়েছে। ইভা নানুকে বললো,
“নানু তুমি কি বট বাড়ির সম্পর্কে কিছু জানো? ”
“শুনেছিলাম কোনো এক জাদুমন্ত্রী জমিদার পরিবারের একজনের মাথা কেটে বট গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে তারপর ধীরে ধীরে জমিদার পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। সেই থেকে ওই বাড়ির নাম বট বাড়ি হয়। কেউ দিনের বেলাও সাহস পায় না বট বাড়ির ধারে কাছে যেতে। ”
” এই জাদুমন্ত্রী কি সবার ক্ষতি করেছে? ”
“সবার না যারা ক্ষমতাশালী ছিলো তাদের থেকে প্রিয় জিনিস কেড়ে নিয়ে শক্তিশালী হয়েছে”
“বট বাড়ি টা এখান থেকে কতো দূরে যে ওখানের আত্মার আমাদের ভয়ে থাকতে হচ্ছে ”
“দূর আছে তাও তান্ত্রিকসাধু যা বলেছে আমাদের ভালোর জন্য বলেছে। উনি অনেক মানুষের উপকার করে।”
“ওহ্ ”
ইভা অপেক্ষা করতেছে নানু আর লিমার ঘুমানোর জন্য। রাত বারোটায় আলিব এসে ইভাকে ঘুৃৃম থেকে ডেকে তুলে। ইভা অপেক্ষা করতে করতে ঘুৃমিয়ে গেছিলো।
“আমার মহারানীর ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না শুধু একটা মিষ্টি ফল দিতে এসেছি তাই ঘুমটা ভাঙ্গাতে হলো ”
“মিষ্টি ফল খাবো কেনো? ”
“তোমার শরীরে কোনো বিষ প্রবেশ করতে পারবে না তাই”
“আপনি তো আমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবেন তাহলে এই ফল খাওয়ার কি দরকার?”
“আমি তো সারাজীবন আমার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবো না তারজন্য আগে থেকে তোমাকে প্রস্তুত করছি যাতে তোমার ক্ষতি না হয় ”
“ওহ্ আচ্ছা ”
ইভা আলিবের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললো। সকালে ইভা মনে পরছে সাতরং পাথরের কথা। আলিবকে অভিশপ্ত থেকে মুক্ত করতে হলে যা যা করতে হবে ইভা তাই করবে। বাসা থেকে একা বের হতে দিবে না তাই রিয়াদের কাছে গেলো,
“ভাইয়া চল একটু ঘুরে আসি ”
“আমার ঘুম পাচ্ছে, বিকেলে ঘুরতে নিয়ে যাবো ”
“না না এখনই যাবি, বিয়ের পর তো বউকে নিয়ে ঘুরবি তখন আমি জ্বালাবো না ”
“হয়েছে থাক এবার চল ঘুরতে নিয়ে যাই ”
“হুম ”
ইভা আর রিয়াদ বাসা থেকে বের হলো। রিয়াদের মন চাইছে তান্ত্রিকসাধুর সাথে দেখা করতে, কেনো হঠাৎ করে উনি নিজে থেকে সাহায্য করেছে? রিয়াদের মনে হাজার টা প্রশ্ন ঘুরছে তাই ইভা বললো,
-তান্ত্রিকসাধুর বাড়ি চল, আমার জানতে ইচ্ছে করছে আমাদের বাসায় কি আছে?
ইভা মন খুশিতে নেচে উঠতো।
-হ্যাঁ আমিও জানতে চাই কিন্তু আমার উনার বাড়ি গিয়েছি এটা বাসায় জানতে পারলে আচ্ছামত ধোলাই দিবে
-কেউ জানবে না চল তো।
ওরা দুজনে তান্ত্রিকসাধুর বাড়িতে গেলো। উনি ধ্যানে মগ্ন আছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার সাথে কথা বলার জন্য তার কক্ষে প্রবেশ করে। তখন রিয়াদের ফোনে ওর হবু বউ কল করে তাই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে যায়। তান্ত্রিকসাধু ইভাকে বলে,
“আমি জানতাম তুমি আসবে, তুমি তাকে বাঁচাতে চাও এটা জেনে আমি তোমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে চেয়েছি ”
“আমি কি সত্যি তাকে বাঁচাতে পারবো তার অভিশাপ জীবন থেকে? ”
“তোমার লক্ষ্য ঠিক রাখলে অবশ্যই পারবে আর তুমি সাতরং পাথর নিতে এসেতো তাই তো? ”
“হুম ”
“তোমার জিনিস তোমাকে দিলাম, তবে সাবধান এটা যেনো হারিয়ে না যায় ”
“সাবধানে রাখবো ”
“তুমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছো কিন্তু এটা যে অনিশ্চিত সম্পর্ক। সে একটা সময় তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো শত ডাকলেও সে আসবে না ”
“জানি তাকে পাবো না তাও অদ্ভুত মায়া কাজ করে ”
“আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো তাকে যেনো তুমি পাও ”
রিয়াদ বললো,
-কি ইভার সাথে জ্বীন-ভূত আছে তাকে আবার ভালোবাসে?
ইভা ভয় পেয়ে গেলো বাসায় সবাই জানলে রক্ষা নেই। আলিবকে অভিশপ্ত থেকে কি বেড় করতে পারবে না??
চলবে,,,,,,