#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১৬
#Jechi_Jahan
আমি রুম থেকে বের হয়ে দৌঁড়ে মায়ের কাছে চলে গেলাম।মায়ের কাছে এসে দেখি মা নাস্তা বানাচ্ছে।আমি মায়ের পাশে অনেকক্ষণ হলো দাঁড়িয়ে আছি।আসলে জিজ্ঞেস করতেও ভয় করছে।সকালে নামাজ পড়তে যখন উঠলাম তখন তো মানুষটাকে দেখিনি।এবার আর দেরি না করে জিজ্ঞেস করলাম।
আমি-মা,,,
মা-হুম।(কাজ করতে করতে)
আমি-বলছিলাম কি,,,লোকটা কখন এলো???
মা-লোকটা কি??(রেগে)
আমি-আচ্ছা উনি কখন এলো??
মা-সকালে।
আমি-বাহ বাহ এলো তো এলো,,,আবার এসেই ঘুমিয়ে পড়লো।
মা-অনেক সকাল করে এসেছিলো তাই।
আমি-তো আমি নামাজ পড়ার সময় দেখলাম না যে।
মা-তোর বাবার আর শান্তর সাথে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিল তখন।
আমি-ওহ,,,তো না এলেই তো পারতো।
মা-একটা থাপ্পড় দিব তোকে।হ্যাঁ রে তোর কি কোনো আক্কেল নেই।এখানে আসছিস একবার জামাইকে বলতে পারলি না।জামাই কত চিন্তা করছিল জানিস।তোকে ফোন দিয়ে পাচ্ছিলো না।তাই তোর বাবাকে ফোন দিয়েছিলো।পরে আমরা বলি যে তুই এখানে সকালে এসেছিস।তবে জামাইকে না বলে তোর এখানে আসা একদম উচিত হয়নি।
আমি-বেশ করেছি এসেছি,,,আর জামাই বলো না তো উনি তোমারই সমান।
মা-চুপ কর,,,মুখে যা আসছে তা বলে যাচ্ছে।
আমি-বলবো না,,,তুমি জানো আমাদের বয়সের পার্থক্য কত।
মা-কত???(কোমড়ে হাত দিয়ে)
আমি-সতেরো বছরের পার্থক্য বুঝছো।
মা-১৭ বছর??(ব্রু কুঁচকে)
আমি-হুম।
মা-১৭ বছরের পার্থক্য কিভাবে হয়,,,তাও যখন জোবানের বয়স ৩০ বছর।
আমি-কি???(জোরে চিল্লিয়ে)
মা-হুম,,,জোবানের বয়স তো ৩০ বছর।
আমি-কি বলো,,,জোবানের বয়স ৩৮ বছর।
মা-তোর মাথা।(বলে আবার কাজ করতে লাগলো)
আমি এবার চিন্তায় পরে গেলাম।বুঝতে পারছি না ভুল টা কার হচ্ছে আমার নাকি মায়ের।আমি এবার রুমে এসে জোবানের দিকে একনজর তাকিয়ে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে গেলাম,,,উদ্দেশ্য লিনার বাড়ী।লিনার বাড়ী আর আমার বাড়ী প্রায় কাছাকাছি। হেঁটে হেঁটে গেলে ১০-১৫ মিনিট লাগে।আমি হাঁটতে হাঁটতে লিনার বাড়ী পৌঁছে গেলাম।
————
জোবান ঘুম থেকে উঠে দেখে ওর পাশে শিশির নেই।ও ভেবেছিলো হয়তো নীচে থাকবে তাই ও হাত মুখ ধুয়ে নীচে গেলো।নীচে গিয়ে দেখলো সেই একই কারবার শিশির নেই।আসলে ও শিশিরকে সরি বলতে চায়।ও না বুঝে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে।ও এবার শিশিরের বাবার সাথে সোফায় বসে।
বাবা-কি জোবান,,,ঘুম ভালোভাবে হলো?
জোবান-জ্বি বাবা।
বাবা-যাও গিয়ে নাস্তা করে নাও।
জোবান-আপনারা??
বাবা-আমরা কিছুক্ষণ পরে নাস্তা করবো।
জোবান-তাহলে আমিও আপনাদের সাথে নাস্তা করবো।
বাবা-আসলে ওই তিন গর্দভ এর জন্য বসে আছি।
জোবান-গর্দভ??
বাবা-শান্ত,শিশির,শিরিন।
জোবান-ওহ।(বলে হেসে দিলো)
বাবা-শান্ত আর শিরিন এখনো ঘুম থেকে উঠে নাই।আর শিশির তো বাইরে গেছে।ওরা আসলে তারপরই নাস্তা করবো।
জোবান-শিশির বাইরে গেছে??
বাবা-হুম,,,আমি বাড়ি আসার সময় দেখলাম কই জানি যাচ্ছে।জিজ্ঞেস করার পর বলে হাঁটতে যাচ্ছে।
জোবান-ওহ। (কি চালাক,,,আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে গেলো।)
বাবা-আচ্ছা,,,কালকে শিশির তোমাকে না বলে কেনো এলো??
জোবান-আব,,,জানিনা।(থতমত খেয়ে)
বাবা-তোমাদের মাঝে কি ঝগড়া হয়েছে??
জোবান-না তো বাবা।
বাবা-ওহ,,,আসলে মেয়েটা না বড্ড জেদি।জানোই তো,,,তোমাকে বিয়ে করবেনা বলে কত তালবাহানা করেছিলো।মেয়ের এমন করাতে আমিও বিয়েতে না করে দিই।কিন্তু তোমার বাবার রিকুয়েষ্টে মেয়ের শত না করাতেও বিয়েটা তোমার সাথেই দিই।
জোবান-হুম,,,
বাবা-ওই তো,,,শান্ত আর শিরিন এসে গেছে।
শিরিন-দুলাভাই আপনি??
জোবান-হুম।
শিরিন-কখন???
শান্ত-ফজরের আযানের আগে।
শিরিন-ওহ,,,তা এই অসময়ে???
জোবান-এমনে।
শিরিন-এমনে,,,ওকে।
বাবা-ওই চল,,,নাস্তা করতে চল।
শিরিন-আপু কই??
বাবা-বাইরে গেছে কিছুক্ষণ পরে চলে আসবে।
———–
আমি-তোর কাছে কেনো যে এলাম।
লিনা-আরে কি হয়েছে??
আমি-আমি তোর কাছে এলাম একটা জিনিস শেয়ার করতে আর তুই এখানে আমায় নাস্তা করাচ্ছিস।
লিনা-আরে তো কি এমন ক্ষতি করলাম তোর??
আমি-কথা সেটা না,,,কথা হলো বাড়ী থেকে এখানে আসার সময় বাবা দেখেছে আমাকে।
লিনা-তো??
আমি-এখন তাড়াতাড়ি বাড়ী না গেলে আমাকে বাঁশ খেতে হবে।
লিনা-সেটা আমি সামলে নিব।
আমি-তুমি যে কত ভালো সামলাও সেটা আমি জানি।
লিনা-আচ্ছা ওসব ছাড় কেনো এসেছিস সেটা বল।
আমি-জানিস,,,জোবান এখানে চলে এসেছে তাও সাত সকালে।
লিনা-এটা বলার জন্য এতটুকু এলি।আরে জোবান তোর স্বামী তো তোর রাগ ভাঙ্গাতে তো আসবেই।
আমি-আরে কথা সেটা না।
লিনা-তাহলে??
আমি-আচ্ছা জোবানের বয়স কত তুই জানিস??
লিনা-তুই না ৩৮ বছর বলেছিস।
আমি-হুম,,,কিন্তু আজ সকালে মা বললো ওনার বয়স ৩০ বছর।
লিনা-আরে আন্টির হয়তো ভুল হচ্ছে।
আমি-দেখ,,,মায়ের ভুলটাই বা কিভাবে ধরি বল।জোবানকে দেখলে তো লাগেনা,,,যে উনি ৩৮ বছরের যুবক।
লিনা-সেটা অবশ্য ঠিক।আচ্ছা তোকে কে বলেছিল জোবানের বয়স ৩৮ বছর।
আমি-আমি তো বিয়ে করবোনা বলে ওদের ব্যাপারে কিছু জানতেই চাইনি।কিন্তু বিয়ের আগের দিন মানে গায়ে হলুদের শেষে শান্ত এসে আমাকে এটা বললো।
লিনা-কি বললো???
আমি-এসেই বলেছিলো “আপু জানিস ছেলের বয়স কত” আমি বললাম কত??।শান্ত এবার বললো ছেলের বয়স ৩৮ বছর।
লিনা-আল্লাহ,,,
আমি-কি??
লিনা-শান্তকে জিজ্ঞেস করিস তো এমন কেনো করলো??
আমি-কি করলো??
লিনা-মানে তোকে মিথ্যা কথা কেনো বললো।
আমি-মিথ্যা বললো??
লিনা-হ্যাঁ মিথ্যা কথাই তো।মানে একবার ভেবে দেখ শান্ত এতটুকু একটা ছেলে তোর বরের বয়স তোকে বলছে।এটা একটু অস্বাভাবিক না।
আমি-ঠিক বলেছিস।
আমি আর লিনা এবার বসে বসে গল্প করতে লাগলাম।এর মাঝে হঠাৎ আমার ফোনে একটা কল আসে।আমি ফোন অন করে দেখি বাবা ফোন করেছে।আমি তাড়াতাড়ি করে কলটা রিসিভ করলাম।
আমি-হ্যাঁ বাবা।
বাবা-এই তুই বাড়ী কখন আসবি রে।
আমি-দুপুরে।
বাবা-কি???
আমি-হুম,,,আমি লিনার কাছে আছি।ওর সাথে এক জায়গায় ঘুরতে যাবো।তো আসতে দেরি হবে।
বাবা-ওই বেক্কল মেয়ে,,,জামাই এখানে একা।আর তুই ওখানে ঘুরতে গেছিস।
আমি-আজব,,,জামাই আছে বলে কি ঘুরতে পারবো না?
বাবা-আচ্ছা ঘুরতে গেছিস ভালো কথা।জামাইকে নিয়ে গেলিনা কেনো??
আমি-মানে আমি এখন ওনাকে ছোট বাচ্চাদের মত ঘুরাবো।
বাবা-এখন বেশি কথা না বলে জামাইকে সহ নিয়ে যা।
আমি-পারবোনা।
বাবা-যেটা বলেছি সেটা কর।
আমি-বাবারে আমি আবার ওখানে আসতে পারবোনা।তোমরা বরং তোমাদের জামাইকে এখানে পাঠিয়ে দাও।
বাবা-কি বলিস জামাই কি লিনার বাড়ী চিনে নাকি।
আমি-তো ঠিকানা দিয়ে দাও।(বলে কেটে দিলাম)
লিনা-কিরে কি হয়েছে??
আমি-কিছু না।
লিনা-আচ্ছা চল বাইরে যাই।তোর স্বামী হয়তো আমাদের বাড়ী পার হয়ে চলে যাবে।
আমি-তুই ও না।(লিনাকে একটা ধাক্কা দিয়ে)
লিনা-আরে চল না।(আমাকে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হলো)
—————–
আবির-Come on dude,,,,She is married.
আশিক-So what,,,
আবির-So what???Are you crazy Ashik.
আশিক-No.
আবির-তুই কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি করছিস।
আশিক-আমি কি করছি আমি জানি।
আবির-কিচ্ছু জানিস না তুই,,,তুই শিশিরকে ভালোবাসিস এটা ঠিক আছে।কিন্তু শিশির তো তোকে ভালোবাসে না।আর সবচেয়ে বড় কথা শিশির বিবাহিত।জোবান রহমানের স্ত্রী ও বুঝতে পারছিস,,,তুই কার উপর নজর দিচ্ছিস।
আশিক-বুঝতে পারছি।
আবির-শুন,,,তোর বোন একবার জোবানকে কষ্ট দিয়েছে।আর এখন তুই জোবানকে কষ্ট দিতে চাচ্ছিস।প্লিজ তোরা এসব বন্ধ কর।
আশিক-এতো সহজে না।
আবির-তুই জোবানকে কষ্ট দেওয়ার জন্য শিশিরকে ভালোবাসছিস???
আশিক-না তো।
আবির-তাহলে??
আশিক-টাশ খেলায় নিজের পাতা কাওকে দেখাতে নেই আবির।(আবিরের কাঁধে হাত দিয়ে)
আবির-Ashik,,,I am warning you.Don’t do anything so that I will punish you for it…
(বলে কাধঁ থেকে হাত সরিয়ে চলে যেতে নেয়)
আশিক-(আবিরের কাঁধে হাত দিয়ে ওকে দাঁড় করালো)আবির ব্রো,,,আমি এমন কিছুই করবোনা যার জন্য তোর আমাকে শাস্তি দিতে হবে।
আবির-যা করছিস,,,এতে তুই নিজে তো সুখি হবি না উল্টো বাকি তিনজন কেও সুখি হতে দিবিনা।
আশিক-সেটা ফিউচার এ দেখা যাবে।
আবির-যা মন চায় তাই কর।(বলে চলে গেলো)
আশিক-আবির,,,আবির,,,আবির তুই ভালোবাসার কি বুঝবি।যে ভালোবাসে সে বুঝে ভালোবাসার সুখটা কেমন আর দুঃখটা কেমন।(বলে বাঁকা হাসলো)
————-
আমি আর লিনা অনেকক্ষণ হলো দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু জোবানের আসার কোনো নামই নেই।এতক্ষণ অপেক্ষা করতে করতে আবার এবার বিরক্তি উঠে গেলো।এবার আর ওয়েট না করে আমি সামনে দিকে হাঁটা ধরলাম।
লিনা-ওই কই যাস???
আমি-আমার জামাইর বাড়ী।
লিনা-এত তাড়াতাড়ি।
আমি-উফফ,,,চুপ থাকতো।
লিনা-ওই দেখ কে আসছে।(পেছনে আঙ্গুল দেখিয়ে)
আমি-কে আসছে???(পেছনে ফিরে)
লিনা-ভাইয়া,,,,,
-চলবে।