#তোমার_হাতটি_ধরে
#পর্ব_১৭
#Jechi_Jahan
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি অর্ক ভাইয়া আসছে।লিনা অর্ক ভাইয়াকে দেখে দৌঁড়ে ওনার কাছে চলে গেলো।আমিও এবার ওর পেছন পেছন গেলাম।অর্ক ভাইয়ের কাছে যাওয়ার পর উনি যেন আমাকে চিনেনি এমন ভান করে রইলো।আমি ভাইয়ার এমন করাতে একটু অবাক হলাম।
আমি-ভাইয়া কেমন আছেন??
অর্ক-যেমন থাকি তোকে বলতে হবে।
আমি-মানে??
অর্ক-মানে,,,আমি কি তোর কেও হইনা।
আমি-এমন কেনো বলছো??
অর্ক-তো কথা মন করে বলবো।
লিনা-এই ভাইয়া,,,কি হয়েছে তোমার।এভাবে কথা বলছো কেনো??
অর্ক-তো কিভাবে কথা বলবো,,,একবার ভেবে দেখ।ও বিয়ে করেছে আজ ছয় মাস হতে চললো আর ও আমাকে একবার বলেও নাই।
লিনা-দূর,,,এটার জন্য এমন করছো।
আমি-তোমার আর কোনো এক্সকিউজ নেই তাইনা।আমার বিয়ের সময় তো তুমি ওখানে ছিলে না।তো তোমাকে কিভাবে বলতাম বলো।
অর্ক-তোর কি ফোনের অভাব পরেছে।
আমি-না পড়েনি,,,কিন্তু তোমার নাম্বার আমার কাছে তখন ছিলোনা।আমি বিয়ের আগে সিম বদলাই ছিলাম।তারপর বিয়ের ব্যস্ততায় তোমার সহ বাকি কয়েকজনের ও নাম্বার সেভ করা হয় নাই।
অর্ক-বাহ,,,এমন করে বলছিস যেনো তোর বিয়ে টা অনেক ধুমধাম করে হয়েছে।আর এত অনুষ্ঠানের চক্করে তুই নাম্বার সেভ করিসনি।
আমি-মানলাম ধুমধাম করে হয়নি কিন্তু বিয়ের কনে টাতো আমি ছিলাম নাকি।
অর্ক-যাক গে,,,তোর স্বামী এসেছে এখানে।
আমি-হুম,,,কিছুক্ষণ পর আসবে এদিকে।
অর্ক-এ কিরে,,তুই সাথে করে আনিসনি।
আমি-উনি তো ঘুমে ছিলেন তাই।
লিনা-ওই দেখ ভাইয়া আসছে।
আমি আর অর্ক ভাইয়া লিনার কথায় সামনে তাকালাম।জোবান অনেক হেলেদুলে এদিকে আসছে।ওনাকে দেখে আমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো।আমি হুট করে অর্ক ভাইয়ার হাত ধরে ফেললাম।ওনাকে দেখিয়ে হাতটা এপিঠ ওপিঠ করে দেখতে লাগলাম।উনি যখন আমাদের কাছে আসলেন আমি অর্ক ভাইয়াকে বললাম।
আমি-এই,,,তুমিতো অনেক শুকিয়ে গেছো।হাতের রগগুলো একেবারে বেরিয়ে গেছে।
অর্ক-আরে কাজের চাপে একটু শুকিয়ে গেছি।তুই এটা নিয়ে এত চিন্তা করিস না।
আমি-দূর কি যে বলো না।আমি চিন্তা না করলে আর কে করবে।
অর্ক-তাও ঠিক বলেছিস,,,আচ্ছা ইনিই কি তোর স্বামী। (জোবানকে দেখিয়ে)
আমি-হুম।
অর্ক-হাই,,,আমি অর্ক মাহবুব।(হাত বাড়িয়ে)
জোবান-হ্যালো,,,আমি জোবান রহমান।(হাত মিলিয়ে)
অর্ক-আপনার কথা মাত্র শুনলাম শিশিরের থেকে।
জোবান-হুম।
অর্ক-আচ্ছা আপনাকে কি শিশির জ্বালায়?
জোবান-না তো।
অর্ক-বাহ বাহ তাহলে আপনি বেঁচে গেছেন।জানেন ও আগে আমার পিঠে উঠে যেতো।মানিব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে নিতো।আমার চুল ছিড়ে ফেলতো আরো কত কি।(মুচকি হেসে)
জোবান-হুম,(রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে)
অর্ক-আর এটা শুধু শিশির একা করতোনা ওর পাশের জনও করতো।
জোবান-ওহ,,,
অর্ক-ওহ আমার পরিচয়ই তো দিলাম না।আমি লিনার খালাতো ভাই।
জোবান-ওহ,,
এর মাঝে জোবান আর অর্ক ভাইয়া কথা বলতে বলতে হাঁটতে লাগলো।আমি আর লিনা ওনাদের পেছন পেছন হাঁটতে লাগলাম।ওদের এমন কথা কথা বলা দেখে মনে হচ্ছে যেনো কতদিনের চেনা।
লিনা-আজ তুই শেষ।(আমার কানের কাছে এসে)
আমি-মানে??
লিনা-তুই যখন অর্ক ভাইয়ার হাত ধরছিলি আমি তখনই বুঝতে পারছি।
আমি-কি বুঝতে পারছিস তুই।
লিনা-এই যে তুমি ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্য অর্ক ভাইয়ার হাত ধরছিলে।দেখেছিস ভাইয়ার মুখটা তখন,,,কেমন রেগে তাকিয়ে ছিলো।
আমি-তো??
লিনা-তো মানে,,,বাড়ীতে গেলে তোমার হচ্ছে।
আমি-ওই একদম ভয় দেখাবি না।
লিনা-আমি ভয় দেখাচ্ছি না এটা সত্যি কথা।
আমি-মাথার সত্যি।
লিনা-ঠিক আছে,,,বাড়ীতে গেলে দেখা যাবে।
লিনার কথায় আমার এবার প্রচন্ড ভয় হতে লাগলো।ভাবলাব জোবান কি সত্যি আমায় বকবে নাকি।কিন্তু জোবানের সাথে যখন বাড়ি গেলাম তখন উনি আমাকে অবাক করে কিছুই বললেন না।দুপুর গেলো,বিকাল গেলো,সন্ধ্যা গেলো আর এখন রাত এলো।কিন্তু উনি আমাকে এবারও কিছু বললনা।
জোবান-শিশির,,
আমি-(বাপরে,,,এতক্ষণে কথা বললো)জ্বী।
জোবান-তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
আমি-হুম বলুন না।
জোবান-সরি,,,
আমি-কেনো??
জোবান-,,,,,,(চুপ করে আছে)
আমি-বলুন।
জোবান-কেনো তুমি জানোনা।
আমি-ওহ,,,বুঝতে পেরেছি।
জোবান-ক্ষমা করেছো আমায়??
আমি-ভেবে দেখবো।
জোবান-তুমি আজ ওই ছেলেটার হাত ধরেছিলে আমাকে দেখানোর জন্য তাইনা।
আমি-(চুপ করে আছি)
জোবান-সত্যি বলতে আমি জ্বলেছি।তখন ইচ্ছে করছিলো তোমাকে টেনে নিয়ে আসি।কিন্তু পারিনি কারণ তুমি আমার উপর আগে থেকে রেগে ছিলো।এখন এমন করলে তুমি আমার উপর আরো রেগে থাকতে।তাই তখন ধৈর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আমি-আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না তো আমাকে নিয়ে জ্বেলাস ফিল কেনো করলেন।
জোবান-জানিনা।
আমি-হুম,,,সরুন শুবো।(জোবানকে সরিয়ে)
জোবান-আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
আমি-ওকে বলুন,,,
জোবান-I think I love you.(মাথা নিচু করে)
আমি-(জোবানের এই কথা শুনে আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো।আমি তো প্রথম দিন থেকেই চাইতাম যে জোবান আমাকে ভালোবাসুক।কিন্তু আজ উনি আমাকে ভালোবাসি বলার পরও আমার কোনো খুশি লাগছেনা কেনো???)
জোবান-কালকে তোমার ওই কথাগুলো আমাকে অনেক ভাবিয়েছে।তুমি চলে যাওয়ার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি কত বড় ভুল করেছি।একজন এর দোষ সবার মাঝে দিয়ে দিলাম।তবে এটা সত্যি,,,প্রথম যখন ছবিগুলো এসেছিল তখন আমি একদম বিশ্বাস করিনি।কিন্তু পরেরবার বিশ্বাস না করে পারলামই না।আমার তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিলো।I am sorry Shishir. চলোনা আমরা আবার নতুন করে শুরু করি।আমি আজ থেকে তোমাকে আর কোনোদিনও অবিশ্বাস করবো না।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসবো।(জরিয়ে ধরে)
আমি-আপনার মনে হচ্ছে আবার সব নতুন করে শুরু করি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমাদের ডিভোর্স দিয়ে দেওয়া উচিত।ডিভোর্স ছাড়া তো আমি আর কোনো সালুসান দেখছিনা।যেই বিয়ের ছয় মাস পর মনে হলো আমাদের আবার সব নতুন করে শুরু করা উচিত।সেখানে তো ডিভোর্স টাই শ্রেয় তাই না??
জোবান-শিশির,,,এই সামান্য কারণে তুমি ডিভোর্স চাইছো।শিশির আমি তো তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি প্লিজ ক্ষমা করে দাও না।
আমি-এই পাঁচ মাস আপনার কাছে সামান্য ব্যাপার লাগছে।আরে আপনি তো শুধু আমায় কষ্ট দিয়েছিলেন।আর আমি শুধু কষ্ট সহ্য করেছিলাম।
জোবান-আমি সরি বলছি তো।
আমি-(কিছু না বলে নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছি।)
জোবান-শিশির প্লিজ,,,(আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে)
আমি-আমার ঘুম পাচ্ছে।
জোবান-ঠিক আছে,,,আমি তোমার মাথায় বেলি কেটে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও।(বলে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় বেলি কেটে দিতে লাগলো।আমিও চোখে ঘুম থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালেঃ-
আশিক-আপু,,,তুমি কিন্তু জোবানকে ছেড়ে অনেক বড় ভুল করেছো।
তিশা-তা কি আর বলতে।
আশিক-আচ্ছা তুমি ওকে কেনো ছেড়ে দিলে??
তিশা-সত্যি বলতে আমিও জোবানকে ভালোবাসতাম।একটা মেলায় ওর সাথে আমার দেখা হয়।ও ওর বোনের সাথে মেলায় গিয়েছিলো।জোবান এত কিউট একটা ছেলে আমি সেদিনই ওর উপর ক্রাশ খেয়ে যাই।লুকিয়ে ওর আর ওর বোনের ছবি তুলে ফেলি।
আশিক-জোবান এখনো সেই আগের মত জানো।
তিশা-ওর বয়স যতই বাড়ুক ও একিরকমই থাকবে।
আশিক-আচ্ছা তারপর কি হলো??
তিশা-তারপর আর কি,,,বান্ধবীদের সাহায্য ওদের ফেসবুক আইডি খুঁজে নিই।রিকুয়েস্ট পাঠালে শুধু জেরিন একসেপ্ট করে।তাই প্রথমে ওর সাথে কথা বলে বলে একটু বন্ধুত্ব করে নিই।এরপর জোবানকে আবার রিকুয়েষ্ট পাঠাই।
আশিক-একসেপ্ট করেছিলো কি???
তিশা-করেছিলো এবং ওই প্রথমে মেচেজ করেছে।তারপর থেকে কথা বলা শুরু করি।একসময় আমি ওকে দেখা করতে বলি আর ও রাজি হয়।যেদিন দেখা করবো সেদিন আমি একটা গোলাপি রংয়ের শাড়ি পরেছিলাম।আমাকে ওই শাড়িতে দেখেই ও আমাকে পছন্দ করে ফেলে।
আশিক-তোমাদের মাঝে সবকিছু কত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো।মানে জোবানকে ইমপ্রেস করতে তোমার শুধু ওই গোলাপি শাড়ি টাই লেগেছিলো।
তিশা-হুম,,,দেখা করার কিছুদিন পর জোবান আমাকে প্রোপ্রজ করে।ব্যাস আমাদের প্রেম কাহিনি শুরু।
আশিক-নাইচ,,,বাট শেষ করলে কেনো??
তিশা-আমাদের সম্পর্কের চার বছরের সময় আমি একটু চেঞ্জ হই।জোবানের অতিরিক্ত কেয়ার আমার অসহ্য লাগতে শুরু করে।কিন্তু আমি তাকে কিছু বলতেও পারতাম না।কারণ আমাদের সম্পর্কে সবাই জানতো।আমার ফ্যামিলি,জোবানের ফ্যামিলি,আমার বন্ধু বান্ধবী সবাই।আমার বান্ধবীরা তো আমায় নিয়ে হিংসা করতো।আমার থেকে সুন্দর একটা ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড কিভাবে হয়।
আশিক-জানো,,,শিশিরও অনেক কিউট একটা মেয়ে।জোবানের থেকে দ্বিগুণ কিউট ও।আমার তো জোবানের উপর হিংসা হয় ও শিশিরকে কিভাবে পেলো।
তিশা-হুম,,,আসলে আমি ওকে না ছাড়লে ও শিশিরকে পেতো না।
আশিক-ওহ,,,বলোনা কেনো ছাড়লে??
তিশা-জোবানের সাথে সম্পর্ক চলা কালীন তোর দুলাভাই মানে আকিব আমাকে প্রপোজ করে।আমি প্রথমে না করলেও পরে আর না করতে পারিনি।
আশিক-কেনো???
তিশা-তখন জোবান নতুন নতুন ওর বাবার কোম্পানি তে ঢুকে।তো প্রথম অবস্থায় আমাকে তেমন সময় দিতে পারতো না।যার জন্য আমারও মনে হলো ওকে ছেড়ে দেওয়া উচিত।জানি এটা করা ঠিক হয়নি কিন্তু কি করতাম।পরে জোবানের সাথে যোগাযোগ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দিই।ও একদিন জিজ্ঞেস করলো আমি এমন কেনো করছি।সেদিন আমি বলেছিলাম আমি আর ওর সাথে সম্পর্ক রাখতে পারবোনা।সেদিন ও আমাকে কিছু না বলে চলে গিয়েছিলো।
আশিক-কি,,,এত তাড়াতাড়ি মেনে নিলো।
তিশা-ও সেদিন কিছু না বললেও পরের দিন থেকে ঠিকই আমাকে বোঝাতে লাগলো।কিন্তু আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা আমি ওর কথায় গলিনি।এর মাঝে আকিবের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।এটা শুনে জোবান আরো পাগলের মত শুরু করে।আমি আর সহ্য করতে না পেরে ওকে বিভিন্ন ভাবে অপমান করে ব্লক করে দিয়েছিলাম।কিন্তু ও তাও মানলো না,,,ও একদিন আমার কাছে আসলো।ওকে দেখে আমার ভয় হয়ে লাগলো কিন্তু ভয়টা প্রকাশ করলাম না।সেদিন ও আমার কাছে একটা জিনিস চাইলো।
আশিক-কি জিনিস??
তিশা-আমার সাথে একটু আলাদা কথা বলতে চেয়েছিলো শেষ বারের মত।কিন্তু আমি ওর কথা না রেখে ওকে অনেক বাজে কথা শুনিয়ে দিই।যার জন্য ও কষ্ট পেয়ে সেদিন চলে যায়।আমার আর আকিবের বিয়ের বেশ কিছুদিন পর শুনি ওর মা মারা গেছে।সেদিন আমার খুব কষ্ট লাগলো কারণ ওর মা আমাকে খুব ভালোবাসতো।
আশিক-আর কিছু???
তিশা-না,,,
আশিক-জানো,,,জোবান এখন অনেক স্ট্রং একটা ছেলে।হয়তো তোমার আগের জোবানের মতো না।কিন্তু শিশির একদম সহজ সরল।জানো আমি না চাইনি শিশিরের নামে মিথ্যা ছবি গুলো দিতে।আমি তো জানতাম ও না যে শিশির জোবানের স্ত্রী।আমি তো জানতাম ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড।ওদের ব্রেকআপ করানোর জন্যই ছবিগুলো দিয়েছিলাম।আমিও কি করতাম বলো আমিও যে শিশিকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তিশা-ওদিন যদি তোর ফোনে শিশির আর জোবানের ছবিগুলো না দেখতাম।তাহলে জানতামই না যে জোবান বিয়ে করে ফেলেছে।
আশিক-শুনো,,,আমরা আমাদের প্ল্যান মতো কাজ করলে শিশির আমার আর জোবান তোমার হবে।
তিশা-হুম।
-চলবে