দুই হৃদয়ের সন্ধি পর্ব-০৭

0
390

#দুই_হৃদয়ের_সন্ধি
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মুসকান বাড়িতে ফিরে এসেছে। বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু হয়ে এসেছে মেয়েটা। আতিকা চৌধুরী মুসকানকে এভাবে দেখে বলল,
“কি হয়েছে মুসকান? তোমার এই অবস্থা কেন? কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”

মুসকান বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে একটু এগিয়ে এসেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। আতিকা চৌধুরী গিয়ে মুসকানকে সামলে নিলো। মুসকানের জ্ঞান ফেরানোর তোড়জোড় শুরু করে দিলো।

আরিফও ততক্ষণে চলে এসেছে সেখানে। মুসকানকে এভাবে দেখে তার ভীষণ ভয় লাগল। দৌঁড়ে এসে মুসকানকে কোলে তুলে নিল। আতিকা চৌধুরী বললেন,
“ওর এই অবস্থা কিভাবে হলো আরিফ? তুই তো বলেছিলি ও নাকি বাইরে ঘুরতে গেছে।”

আরিফ কিছু বলতে পারল না। আলগোছে মুসকানকে কোলে তুলে নিয়েই চলল রুমের দিকে।

★★★
কিছু সময়ের মধ্যেই মুসকানের জ্ঞান ফিরলো। জ্ঞান ফিরতেই মুসকান বলে উঠল,
“আমি দেখেছি…আমি ওনাকে দেখেছি।”

“কাকে দেখেছেন আপনি?”

আরিফের প্রশ্নের উত্তরে মুসকান কিছুই বলল না। চারিদিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমি থাকব না এখানে।”

বলেই ওঠার চেষ্টা করল সে। আরিফ মুসকানকে আটকে দিয়ে বলল,
“চুপচাপ বসে থাকুন এখানে। এক পাও ওঠার চেষ্টা করবেন না। আপনি অসুস্থ।”

“আমি একদম ফিট আছি। আমাকে নিয়ে আপনার চিন্তা না করলেও চলবে। আপনি আমার গায়ে হাত তুলেছেন। আমি অসহায় হতে পারি কিন্তু তার মানে এই নয় আমার কোন আত্মসম্মান নেই। আমি থাকব না এই বাড়িতে।”

“রাখুন আপনার আত্মসম্মান। আমি সেই রকম পুরুষ না যে বউ পে*টাব। আপনি তখন এমন কথা বলে ফেলেছিলেন যে আমি নিজের মেজাজ সামলে রাখতে পারি নি। আই এম সরি। এখন তো অন্তত আপনি আর রাগ করে থাকবেন না।”

“আমিও সরি। আমার ওভাবে বলা উচিৎ হয়নি। আসলে ভুল আমাদের দুজনেরই ছিল। ওটুকু একটা বাচ্চা সম্পর্কে আমি এমন কথা কিভাবে বললাম ছি! আসলে আমার মেজাজ হঠাৎ করে বিগড়ে গেছিল।”

“হ্যাঁ, বুঝতে পারছি। বাদ দিন এখন। যা হয়েছে তা তো বদলানো যাবে না। এখন আপনি রেস্ট নিন।”

মুসকান মিষ্টি হাসি উপহার দিলো। আরিফ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়েও আবার ফিরে এসে শুধাল,
“আচ্ছা আপনি তখন কি বলছিলেন? কাকে দেখেছেন আপনি?”

“ক..কই কাউকে না তো৷ আমি একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

“আচ্ছা, আমি তাহলে যাই।”

“ঠিক আছে, যাওয়ার আগে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যাবেন।”

“ওকে।”

★★★
মুসকান অন্ধকার রুমে বসে ভাবতে থাকে সেই ছায়ামূর্তির কথা। না, ভুল কিছু দেখে নি সে। লোকটাকে চিনতে তো তার ভুল হবার কথাও না। মুসকান হাতের তালুতে হাত চুলকে বলে,
“উনি তাহলে আবার ফিরে এসেছেন। এতদিন পর কেন এলেন উনি? আমি তো ওনাকে ভুলেই গেছিলাম প্রায়। উনি যদি আবার আমার সামনে আসেন তাহলে আমার এই নতুন সংসার টিকিয়ে রাখতে পারবো তো? ওনার প্রতি আমার অনুভূতি তো আমি কখনো অস্বীকার করতে পারব না। হ্যাঁ, আমি প্রচণ্ড ভালোবাসি ওনাকে।”

মুসকান চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে বলে,
“আই উইশ, সবটাই যেন আমার মনের ভুল হয়। এ জীবনে যেন আর কখনো ওনার মুখোমুখি হতে না হয়। যদি এমনটা হয় তাহলে যে আমি…”

★★★
এভাবে আরো দুই দিন চলে যায়৷ সময় এগোনোর সাথে সাথে মুসকানও সেদিনের খেয়াল থেকে বেরিয়ে আসে। এখন রুহির প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হয়ে উঠেছে সে। আরিফের সাথেও সম্পর্ক স্বাভাবিক। আতিকা চৌধুরী তো মুসকানকে নিজের মেয়ের মতোই দেখেন। তাই আর কোন সমস্যা হচ্ছে না।

মুসকান আজ সিদ্ধান্ত নিলো বাড়ির সবার জন্য স্পেশাল কিছু রান্না করবে। এই কদিন ইউটিউব দেখে বেশ ভালো ভালো রান্নাও করা শিখে নিয়েছে মুসকান।

এরইমধ্যে আরিফ এসে জানালো,
“আমার কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমার বিয়ের কথা শুনে খুব রেগে গেছে। তারা আমার স্ত্রী মানে আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।”

আতিকা চৌধুরীও তালে তাল মিলিয়ে বলেন,
“ভালোই তো বলেছে। তোর বন্ধুরা তো কেউ বিয়েতেও এলো না। এখন তো তোর বউ-কে দেখতে চাইবেই।”

“তো ওদেরকে কি আসতে বলব আম্মু?”

“হ্যাঁ, আসতে বল। মুসকানও তো ফ্রি আছে। সামনে আবার ওর এইচএসসি পরীক্ষা তারপর এডমিশন টেস্ট। সব মিলিয়ে তো মেয়েটা অনেক বিজি থাকবে। তাই এখন এলেই ভালো হয়।”

“ওকে, সব যদি ঠিক থাকে তাহলে আজ সন্ধ্যায় আমি ওদেরকে আসতে বলব।”

মুসকানেরও কোন অসুবিধা নেই। সে তো আরো খুশি হয়ে গেছে। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
“আমি সব ব্যবস্থা করে রাখছি। আপনি সন্ধ্যায় ডাকুন ওনাদের। এমনিতেও আমি ভাবছিলাম আজ আপনাদের জন্য স্পেশাল কিছু বানাবো। এখন যদি আপনার বন্ধুরা আসে তাহলে তাদের জন্যেও বানাব। আমি বরং বিরিয়ানি আর গরুর গোস্ত রান্না করি।”

“বেশ করুন। সাথে একটু ইলিশের ডিমের বড়াও করবেন। আমার এক বন্ধু খুব পছন্দ করে।”

হঠাৎ করেই চমকে উঠল মুসকান। মনে মনে বলল,
“ইলিশের ডিমের বড়া পছন্দ করে এমন একজনকেই তো আমি চিনি। আবার ওনার বন্ধুও…নাহ এসব কি ভাবছি কি আমি। ইলিশের ডিমের বড়া তো আরো অনেকেই পছন্দ করতে পারে। এর সাথে নিশ্চয়ই ওনার কোন সম্পর্ক নেই। সেদিন ওনার ছায়ামূর্তি দেখার পর থেকে আমি একটু বেশিই ভাবছি মনে হয়।”

মুসকান রান্নাঘরে চলে যায় রান্না বান্নার সব কাজ করতে। আরিফও তার সব বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানায়। আজ সন্ধ্যায় ভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানায় সে। আরিফের সব বন্ধুরা জানায় তারা সবাই আসবে। আরিফ খুশি হয় তার বন্ধুদের আসার খবরে।

★★★
বিকেল থেকেই ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। এই ঝুম বৃষ্টির মধ্যিখানেও আরিফের দুজন বন্ধু আবির এবং চয়নও চলে এসেছে। দুজন এসে আরিফের সাথে বেশ রসিয়ে রসিয়ে গল্প করছে।

আবির বলছে,
“কিরে আরিফ। আমাদের না বলেই বিয়ে করে নিলি। এটা কিন্তু ঠিক হলো না। আমরা কত আশায় ছিলাম জানিস তোর বিয়েতে কবজি ডুবিয়ে খাব। আর তুই কনজুসের মতো একা বিয়ে করে নিলি।”

“আরে ইয়ার আমি নিজেও বুঝতে পারিনি এভাবে বিয়েটা হয়ে যাবে।”

চয়ন বলে, “আচ্ছা হোক। আজ কবজি ডুবিয়ে খেয়ে সব কিছুর প্রতিশোধ নেব।”

আরিফ কিছু একটা ভেবে বলে,
“এই কূজন কোথায়? ও এখনো আসে নি কেন? ওকে না আমি কত করে আসতে বললাম। ওর জন্য ইলিশ মাছের ডিমের বড়াও করার ব্যবস্থা করছি। ও কি মন খারাপ করে এলো না?”

আবির সাথে সাথেই বলে উঠল,
“তুইও না আরিফ। তুই কূজনকে চিনিস না? ও কি এসব রাগ করে থাকার ছেলে নাকি। হয়তো কোথাও কোন কাজে আটকে গেছে। সঠিক সময় হলে ঠিকই আসবে দেখিস।”

এরমধ্যে মুসকান সবার জন্য খাবার নিয়ে উপস্থিত হলো। মুসকানকে দেখে চয়ন বললো,
“বাহ, আরিফ। তুই জিতেছিস। ভাবি তবে মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ।”

মুসকান লাজুক হাসে। অতঃপর বলে,
“আপনারা বসুন ভাইয়া। আমি খাবার পরিবেশন করছি। রান্না প্রায় শেষ।”

আবির বলে ওঠে,
“খাবার পরেও খাওয়া যাবে। আমাদের এখানে আসার মূল উদ্দ্যেশ্য তো আপনাকে দেখা।”

এমন সময় হঠাৎ কারো ভারী কন্ঠস্বর কানে ভেসে ওঠে। কেউ একজন বলে,
“আমি দেখব আরিফের বউকে। দেখি আরিফের বউ কেমন হয়েছে।””

চেনা কন্ঠস্বর শুনে মুসকান হতবাক হয়ে গেল। পিছনে ফিরে তাকাতেই তার চোখদুটো ছানাবড়া হয়ে গেল। তার মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো,
“কূজন ভাইয়া…”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨