দ্বিধা চক্র পর্ব-১০

0
225

#দ্বিধা_চক্র
পর্ব ১০

-হ্যালো
– জ্বি, কে বলছেন?
– অবনি?
– কে বলছেন?
– নিলয়
-কোন নিলয়?
-কয়টা নিলয়কে চেনো?
– চিনি একটাকেই, একটু বোকা, একটু ভীতু, একটু..
– আমি ওটাই।
নাম্বার পেলেন কোথা থেকে?
-পেয়েছি। তুমি কলেজ আসো নি কেন?
– মাইগ্রেন ছিল।
এখন ভালো আছো?
-হুম। আমি কলেজ যাইনি আপনি জানলেন কী করে?
– আমি অপেক্ষা করেছিলাম।
– ওমা, কেন?
– তুমি ভেবে জানাবে বলেছিলে।
– আমি তো ভাবার সময়ই পাইনি। মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর ছিলাম।
-আজ দেখা করতে পারবে?
– না। কারণ ছাড়া কেন শুধু শুধু দেখা করবো?
– প্লিজ, দেখা করার চেষ্টা করো।
– আপনার কন্ঠে প্রেমিক প্রেমিক ভাব কেন? আপনি বললেই আমি দেখা করবো ভাবলেন কি করে?
– তোমার গলার স্বর বদলে গেছে কেন, অবনি?
– কই না তো, আমি এমন সুরেই কথা বলি।
– একটা প্রশ্ন ছিল?
– বলুন?
– তোমার কি আজকালের মধ্যে কোনো প্রপোজাল এসেছে? মানে…
– হ্যাঁ এসেছে তো। ছেলে আর্মির ক্যাপ্টেন। কেন বলুন তো।
নিলয়ের গলা কাঁপতে থাকে।
-তোমার পরিবারে, আই মিন ছেলেটার সাথে তোমার দেখা হয়েছে?
-হ্যাঁ হয়েছে।
নিলয় মানতে পারছে না। প্রপোজাল এলেই কেন দেখা করতে হবে? অবনি মানা করে দেয় নি কেন?
— তুমি দেখা করলে?
-হ্যাঁ করেছি তো। জানেন, ক্যাপ্টেন্ট সাহেব বেশ স্মার্ট, হ্যান্ডসাম, মেধাবী তো বটেই। অথচ আপনার মতো মোটেও অহংকারী নয়। খুব নম্র, ভদ্র, ভালো মানুষ।
করুন গলায় নিলয় বলল, আমাকে কেন বলছো এসব? আমি আমার ব্যবহারের জন্য সরি বলেছি তোমাকে।
– আপনি জানতে চেয়েছেন বলেই তো বলছি।
নিলয় চুপ করে থাকে। বুকের ভেতর পুড়ে যাচ্ছে যেন।
– অবনি, তুমি এসব ইচ্ছে করে বলছো, তাই না? আমাকে কষ্ট দিতে চাইছো?
– দেখুন, আমি বলেছিলাম, ভেবে দেখবো। উত্তর হ্যাঁ হতে পারে, নাও হতে পারে। আমার যদি বেটার অপশন আসে তাহলে আপনারই সেটা বুঝে নেয়া উচিত।
নিলয় কম্পিত কণ্ঠে বলল, এটাই কি তোমার উত্তর?
অবনি চুপ করে থাকে।
– আমার সামনে দাঁড়িয়ে তুমি তোমার সিদ্ধান্ত জানাবে তবেই আমি তোমার সবকথা বিশ্বাস করবো।
অবনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দেয় নিলয়।
নিলয়ের কান্ডে অবনি ফিক করে হেসে ওঠে। নিলয় সাহেব খেপেছে দারুণ !
পেছনে নিরবে এসে দাঁড়ানো শিরিন প্রশ্ন করেন, কাকে তুই এমন ডাহা মিথ্যা কথা বললি?
– চিনবে না।
– তুই চিনিস?
– এতোটা না, মোটামুটি।
– সত্যি করে বল তুই কি প্রেম করছিস?
– না।
– ফোনের ছেলেটা কি নিলয়?
– হ্যাঁ।
– তোর মাথায় কী ঘুরছে বল তো? নিজেই মানা করে নিজেই ওর সাথে কথা বলছিস।
– আমি কোথায় কথা বললাম? কল তো আমি দেই নি।
– মানা করতে চাইলে একবারে সরাসরি বলে মানা করে দে। ছেলেটাকে ঘুরাচ্ছিস কেন? ছেলেদের নাচিয়ে বেড়ানো মেয়ে হতে যাচ্ছিস নাকি?
– মা, আমি এমন মেয়ে নই। নিলয় আমার পিছে পড়েছে।
– তুই প্রশ্রয় দিচ্ছিস কেন? তোরও পছন্দ নাকি? পছন্দ হলে বল আমরা বিয়ের ব্যবস্থা করি। ছেলেটাকে আমরা পছন্দ করেছিলাম।
– আমি জানি না আমার পছন্দ কিনা। তাছাড়া এতো জলদি পুরো জীবনের সিদ্ধান্ত কিভাবে নিবো? উনার সাথে আমার কিছুই মেলে না। আমি চাই আমার জীবনসঙ্গীর প্রতিটি কাজের প্রতি আমার মুগ্ধতা কাজ করুক।
– সবকিছু এতো হিসাব করে হয় না। মনের টান বলেও একটা ব্যাপার আছে। তোর যদি ছেলেটার প্রতি কোনো টান অনুভব হয় তাহলে বুঝবি কোনো না কোনোভাবে সে তোকে মুগ্ধ করছে।
-ওসব আমি বুঝি না।
-দেখ অবনি, তুই যে সুরে কথা বললি এতে ছেলেটা কষ্ট পাবে। শুধু শুধু কেন মিথ্যা কথা বলে কষ্ট দিচ্ছিস?
অবনি কিছুসময় চুপ থেকে বলল, সোনা পুড়িয়ে খাঁটি করছি। সে সত্যিই আমাকে চায় কিনা সেটা তারও বুঝতে হবে। আমি কাউকে বদলাতে চাই না, আমাকেও কেউ যদি বদলে যেতে বলে তা আমি কখনো মানতে পারবো না।
শিরিন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, সংসারের ঠেলায় যখন পড়বি তখন এসব তাত্বিক কথা কই যাবে। তোর বয়সে আমারও বড্ডো ঢং ছিল। নিজেকে সুচিত্রা সেন ভাবতাম, কত শখ ছিল উত্তম কুমারের মতো বর পাবো, দেশবিদেশ ঘুরাঘুরি করাবো। অথচ পেলাম কি, তোর বাপকে। ঘুরাতে বললে পদ্মা পাড়ের হাওয়া খাইয়ে বাসায় ফেরত আনে। বিয়ের প্রথম রাত থেকে আজ অবধি নাকডাকা চলছে, বারোমাস গরম পানি দিয়ে গোসল করা, প্রতিদিন মাথায় কদুর তেল মেখে বের হওয়া এমন একটা মানুষকে নিয়ে আমার জীবন কিন্তু ভালোভাবেই কেটে গেছে।

_________
হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নিলয়। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। ইচ্ছা করছে সব ভেঙে চুরমার করে দিতে। দরজা আটকে নিজেকে রুম বন্দি করলো । কারো সামনে যাওয়ার মুখ নেই। আজ সে হেরে যাওয়া মানুষ। পরিবারের মুখোমুখি হওয়ার সাধ্য নেই। কি বলবে মাকে। নদী এসে প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবে। নদী যদি হাসাহাসি করে?
এক হৃদয়হীনাকে ভালোবেসে কি ভুলটাই না করেছে!

চলবে।
ঝিনুক চৌধুরী