দ্বিধা চক্র পর্ব-০৯

0
169

#দ্বিধা_চক্র
পর্ব ৯

মাইগ্রেনের সমস্যার জন্য দুইদিন কলেজ যায়নি অবনি। জানালায় ভারি পর্দা টেনে মোবাইল সুইচ অফ করে মরার মতো পড়ে ছিল। শরীর কিছুটা ভালো হওয়ায় আজ বিকালে রুম থেকে বেরুলো। মোবাইল হাতে নিয়ে চেক করলো। দুই বন্ধু ছাড়া আর কারো কোনো কল আসে নি। মনে মনে হতাশ হল। কারো যখন গরজ নেই তাহলে অবনি কিসের অপেক্ষা করছে। সে তো আর ভালোবাসি বলে নি। হুজুগে প্রেমে পড়া মানুষটাকে খামখাই পাত্তা দিতে গিয়েছিল।
“আচ্ছা, এমনও হতে পারে মানুষটার কাছে ওর নাম্বার নেই”। পরক্ষণেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো। নাম্বার না-ই থাকতে পারে তাই বলে যোগাড় করা তো অসম্ভব নয়। ঘটককে বললেই তো দিয়ে দেয়। স্বদিচ্ছা থাকলে বাঘের চোখও পাওয়া যায় অথচ দুইদিন ধরে নিখোঁজ অবনিকে একটা কল করে খোঁজ নেয়া গেল না!

নিলয় পরপর দুদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে করে অস্থির হয়ে ওঠে। শেষে ঘটককে কল দিলে ঝগড়া বেঁধে যায় দুজনার মাঝে।
ঘটক নাম্বার না দিয়ে উল্টো জেরা করতে শুরু করে। কেন লাগবে, কি করবেন, কবে দেখা হয়েছে, কেন দেখা হয়েছে, কি কথা হয়েছে শেষে বলে কিনা আপনারা নিজেরা প্রেম শুরু করেছেন আমার পেটে লাথি মেরে?
নিলয়ের মাথা ছাপ্পান্ন হয়ে যায়। ইচ্ছে করে মোবাইলের ভেতরে ঢুকে ঘটক বেটার কলার চেপে ধরতে।
-শালা, প্রেম করলে তোমার কী?
-আমার কী মানে! আপনারা আমাকে বলবেন বিয়ে বাতিল। পরে নিজেরা নিজেরা মিলে যাবেন। এ কেমন ছোটলোকি?
– একটা নাম্বার চাওয়াতে এতোকথা বলছো কেন তুমি?
– নাম্বার দিবো না যান, কি করবেন?
– কি মনে করো, আমি নাম্বার যোগাড় করতে পারবো না?
– তা পারবেন, তবে মনে রাখবেন উপরে একজন আছে। সে সব জানে সব দেখে। আমার সাথে আপনারা যা করছেন তা বেঈমানি।
– বেঈমানি কি দেখলা, এতো লাফালাফির কারণটা কি?
– আপনারা দুজনে যদি বিয়ে করেন তাহলে জানিয়ে রাখলাম আল্লাহ আপনাদের বিচার করবে। আমাকে টাকা না দেয়ার ধান্দা।
– এই ঘটক, অবনির সাথে আমার যদি বিয়ে হয় তবে যা চাইবে তাই পাবে কিন্তু যদি না হয় তাহলে তুমি শালা আর আমার সামনে আসবা না বলে দিলাম। তোমাকে পেলেই আমি কাটা চমচ দিয়ে খুঁচিয়ে মোরব্বা বানাবো। বুঝলা?

বিড়বিড় করে নিলয়, বিয়ে করা তো দূর দুইদিন ধরে ভালোবাসার মানুষ উধাও হয়ে আছে আর আরেকজন আল্লাহর কাছে নালিশ দেয়ায় ব্যস্ত।

__________
সকালে ঘুম ভাঙ্গে খুব বাজে অনুভূতি নিয়ে। এতো বাজে স্বপ্ন কেন দেখলো নিলয়। ঘটক শালার অভিশাপ নয় তো? দেখলো, আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছে। সবাই ছুটোছুটি করে বলছে হেলিকপ্টারে চড়ে বর এসেছে বিয়ে করতে। নিলয় সবার সাথে দাঁড়িয়ে দেখছে বরটা কে। সোনালী শেরওয়ানি পরা সুদর্শন যুবকটি নামতে নামতে যার দিকে চেয়ে হাসলো তাকে দেখে নিলয় হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কনে সাজে অবনি দাঁড়িয়ে। গোলাপ ফুলের মালা হাতে বরকে বরণ করতে এসেছে। নিলয় অবনির দিকে ছুটতে থাকলো কিন্তু পথ এতো দীর্ঘ যে কেনোভাবেই পৌছুতে পারলো না।
ছুটতে ছুটতেই নিলয়ের ঘুম ভেঙে গেল। ধড়ফড়িয়ে উঠে জোরে জোরে শ্বাস টানলো নিলয়। না না, এমন কিছু হয়নি। এমন হওয়ার কথা নয়।

শুক্রবার তাই অবনির কলেজও নেই। কী করে পাবে অবনির দেখা? কথা বলা খুব জরুরি। ঘটক তো নাম্বার দিলো না। কোথা থেকে যোগাড় করবে। অবনির বাসা যাওয়া মোটেও ভালো বুদ্ধি হবে না। কি করা যায়?
নিলয় মায়ের কাছে ছুটে গেল।
-মা, তোমার কাছে অবনির বায়ো ডাটা আছে?
– অবনি, কাজিহাটার মেয়েটা? না তো, ঘটককে ফেরত দিয়ে দিয়েছি। কেন?
– আরে, এতো জলদি ফেরত দিলে কেন?
– মেয়ে তো মানা করে দিলো, বায়োডাটা আটকে রেখে কী করবো?
– মেয়েটা পরে হ্যাঁ ও তো বলতে পারে।
– পরে কেন হ্যাঁ বলবে? তুই কি প্রমোশন পেয়েছিস?
– ইশ মা, তোমাকে কিছু বলে লাভ নেই। অবনির মোবাইল নাম্বার আমার খুব জরুরি দরকার। বাবার কাছে আছে?
-জানি না, দেখ জিজ্ঞেস করে।
নিলয় বুঝছে না কি করা উচিত। মনে হয় না বাবার কাছে নাম্বার থাকবে।
-তুই এক কাজ কর, ঘটককে কল দে। ওর কাছে থাকবে।
– দিয়েছিলাম, ঘটক ঝামেলা শুরু করেছে। ওর সাথে ঝগড়া হয়েছে।
অবাক চোখে তাকালো নিলয়ের মা। নিলয় সরে এলো সেখান থেকে।
নদীকে জিজ্ঞেস করে দেখবে? দুজনে একই কলেজে পড়ে। হয়তো চিনতে পারে, নাম্বারও পাওয়া যাবে হয়তো।
নদী ওর বন্ধু চিত্রার বাসায় গেছে। নিলয় কল করল নদীকে।
– তোর কলেজের অবনিকে চিনিস?
– অবনি, হ্যাঁ চিনি তো। কি হয়েছে?
– ওর নাম্বার আছে?
– নাম্বার নেই। সে আমার বন্ধু নয়, সিনিয়র।
– নাম্বার জোগাড় করতে পারবি?
– আবার জিগায়! এটা ঘটনাই না। কিন্তু কেন?
– কাজ আছে।
– তোর কি মনে হয়, কাজ আছে কথাটা শুনে আমি তোকে নাম্বার যোগাড় করে দেবো? এতো ভালো বোন আমি তোর?
নিলয় আমতা আমতা করে বলল, ও অফিসে এসেছিল চাকরীর খোঁজে, আমার কাছে সিভি দিয়েছিল কিন্তু আমি সেটা হারিয়ে ফেলেছি। তাই ওর নাম্বারটা চাইছি।
-কাহিনী জমলো না যে ভাই!
– তোর না জমলে আমি কী করবো? নাম্বার দে।
– নাম্বার নাই। ভাগ। নদী কল কেটে দিলো।
নিলয় বোকার মতো বসে রইলো। ভালো করে কথা সাজিয়ে কল দিল আবার।
-আমার বন্ধুর পছন্দ হয়েছে অবনিকে তাই নাম্বার নিতে বলেছে।
– কোন বন্ধু?
– তুই চিনবি না।
– যাকে তাকে কেন একটা মেয়ের নাম্বার দিবো আমি?
– উফ নদী প্লিজ, দে নাম্বারটা। আমি মরে যাচ্ছি।
– তুই কেন মরছিস?
– আমি অবনিকে ভালোবাসি তাই, এবার তোর কাহিনী জমেছে?
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ পাওয়া গেল না।
-নদী, এই নদী, হ্যালো……
নদী স্তম্ভিত কণ্ঠে ধীর লয়ে জিজ্ঞেস করলো, ভাইয়া তুই অবনি আপুকে ভালোবাসিস? কবে থেকে?
– বেশিদিন নয়। আর কিছু জানতে চাস নে, উত্তর আমার জানা নেই। নাম্বারটা দে..
– আপু তোকে ভালোবাসে?
– জানি না, সেটাই তো জানতে চাইছি।
– তুই সত্যিই ভালোবাসিস ভাইয়া। অবনি আপুতো তোর মতো নয়। তুই উত্তর হলে সে দক্ষিণ। তোর মতো নাকউঁচু ছেলেকে সে গোনায় ধরে না।
নিলয় মিইয়ে গেল কিছুটা। দ্বিধা নিয়ে বলল, আমি নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করছি।
নদী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, আচ্ছা নাম্বার মেসেজ করছি। কিন্তু ভাইয়া, একটা কথা বলি?
– হুম!
অবনি আপু ভালো মেয়ে, আমার ভাবী হয়ে এলে আমি খুব খুশি হবো। কিন্তু তুই নিজেকে বদলেও যদি ওর মন না পাশ, তখন?
নিলয় উত্তর দিতে পারলো না।

চলবে।।
ঝিনুক চৌধুরী।।