#নিষিদ্ধ_সে
(৮)
নির্মাঃ কি বললি তুই এই মাত্র?
সায়রঃ পা পাটক্ষেতে____
নির্মাঃ নিষ্ঠা ও সত্যিই তোমায় প্রপোজ করলো?
আমি হাসতে হাসতে নিরীহের মতো মাথা নাড়লাম।
সায়রঃ ঐ মিথ্যে বলিস কেন? আমি____
নির্মা আপু গজগজ করতে করতে বকতে লাগলো সায়র ভাইকে। মাঝখান থেকে কেটে পরলাম। ফোনের রিংটোনে ফোন বের করে দেখি মা কল করেছে।
আমিঃ হ্যালো মা?
মাঃ [ধমকে] কল ধরতে এতোক্ষন লাগে?
আমিঃ কই সাথে সাথেই তো ধরলাম।
মাঃ তুই এখনি চট্টগ্রাম থেকে রওনা দে ঢাকায়।
আমিঃ মানে? সায়রির বিয়ে____
মাঃ তোর ভাইয়ের বিয়ে আগে না সায়রির বিয়ে আগে?
আমিঃ [চিল্লিয়ে] ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে?
মাঃ উমহু করবে! তুই বাসায় আয় তাড়াতাড়ি।
আমিঃ [কাঁদোকাঁদো হয়ে] আমি কি সায়রির বিয়ে খাবো না তাহলে?
মাঃ আরে পরশু আমাদের সাথে আবার যাবি। এখুনি তুই ঢাকায় আয়!
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে] আচ্ছা আসছি।
ফোন কেটে পিছন ঘুরে দেখি মার্কেটের সবাই কেমন করে তাকিয়ে। একটু দূরে রনক ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে কৌতুহলি হয়ে। সায়রিকে ফোন লাগালাম। ফোন তুললো না সে। শেষে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।
আমিঃ আমাকে ঢাকায় যেতে হবে।
রনকঃ [ভ্রু কুচকে] কোন সমস্যা হয়েছে?
আমিঃ [হেসে] ভাইয়াকে মনে হয় বিয়ে করার ক্রিমি কামড়েছে! সায়রিকে ফোনে পাচ্ছি না আপনি একটু কষ্ট করে বলে দিয়েন।
রনকঃ মেসেজ করে দাও। চলো তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।
ব্যাগ গুছিয়ে আন্টিকে বলে রওনা হয়েছি। রনক ভাইয়া আমাকে স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। টিকেট কেটে হাতে চিপস, চকলেট খাবারের প্যাকেট এনে ধরিয়ে দিয়েছে। বাসে উঠতে সিট ঠিক করে দিয়ে নিচে নামলেন।
আমিঃ থাংকু ভাইয়া!
রনকঃ বাস তো ছাড়বে কিছুক্ষন পর। ঝগড়া করো না আবার কারোর সাথে সায়র ভেবে।
আমি হাসতে লাগলাম মাথা নেড়ে। উনি মৃদু হেসে আমার জানালার কাছে এসে দাঁড়ালেন।
রনকঃ আগামী কাল যদি কল পেয়ে কারোর খাপছাড়া কথাবার্তা শুনো তাহলে অবাক হয়ো না।
আশ্চর্য হয়ে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। এই সময়ে এই ডায়লগ কেন? হাত নেড়ে চলে যেতে লাগলেন।
আমিঃ [জানলা দিয়ে মুখ বের করে] ভাইয়া, কারনটা তো বলে যান!
রনকঃ [পেছন মুড়ে] সময় আসলে ঠিকই বুঝতে পারবে!
•
•
•
রেগে সোফাতে বসে আছি। ভাইয়া সামনে বসে হাসছে। আম্মু তখন থেকে ফ্রেশ হতে তাড়া দিচ্ছে। এখনো ঠায় বসে আছি। কিসের বিয়ে কিসের কি? আমাকে শুধু শুধু চট্টগ্রাম থেকে এনেছে আম্মু। দুইদিনের জন্য শুধু শুধু সায়রি মেয়েটাকে মন খারাপ করানো।
নিভৃতঃ আম্মু সিরিয়াসলি তোকে ঐটা বলে আনিয়েছে যে আমার বিয়ে হচ্ছে?
আমিঃ তা নয়তো কি? বলেছে তুই নাকি বিয়ে করছিস!
নিভৃতঃ হাহাহা, তোর মা আসলেও পাগল!
আমিঃ [উঠে দাঁড়িয়ে] ধুরু! আমি আবারো রওনা দিচ্ছি। আমার ভালো লাগছে না এখানে!
আম্মু রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে তেড়ে এলো। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে ভাইয়ার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আম্মুঃ কি বললি? আবার বল! মানুষের বাসায় এতোদিন থাকার এতো শখ কিসের তোর? তার মধ্যে বললাম তোর খালামনির বাসায় গিয়ে থাক। তা না সে ঐখানেই থাকবে!
আমিঃ ওরা কি পর? আমার বেস্টফ্রেন্ডের বাসাই তো।
আম্মুঃ তাতে কি হয়েছে? ওদের আত্মীয় সজন এসে তোকে বিনা নোটিশে থাকতে দেখলে সমালোচনা করবে না?
আমিঃ উফ আম্মু তুমি এর জন্য আনলে আমাকে?
আম্মুঃ নাহ, কালকে তোর ভাইয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। রেডি হয়ে থাকিস। শুনেছি পাত্রীর নাকি সুদর্শন বড় ভাই আছে। পছন্দ হলে গছিয়ে দিয়ে আসবো তোকে কালকে।
আমিঃ আম্মু!
আম্মুঃ মেউ মেউ চেঁচাবি না। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।
আম্মু আবার রান্নাঘরে চলে গেলো। ভাইয়াকে পিঠে চিমটি কাটলাম সজোরে।
নিভৃতঃ আহ! নিষ্ঠা! লাগে তো।
আমিঃ শালা বিয়ের এতো তাড়া তোর! প্রেম করেও এরেঞ্জ ম্যারেজ করছিস লজ্জা লাগে না?
নিভৃতঃ [গালভরা হাসি নিয়ে মাথায় গাট্টা মেরে] তাকেই তো দেখতে যাচ্ছি!
আমিঃ [ব্যাগ ভাইয়ার দিকে ছুড়ে মেরে] এর জন্যই এতো লাড্ডু ফুটছে!
গোসল করে আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি। অবচেতন মন বারবার সায়র ভাইয়ের স্মৃতি চোখে মেলে ধরছে। চোখ বন্ধ করলেও উনার চেহেরা ভেসে উঠে। ভাবনায় যাই ভাবি ঘুরে ফিরে সেই সায়র সম্পর্কিত ভাবনা দিয়েই সমাপ্তি হচ্ছে তাদের। মনে খুব অযৌক্তিক একটা ইচ্ছে জাগছে।
আমিঃ [মাথা চেপে ধরে] ও খোদা! এই ছেলে তো দেখি মাথার ভিতর ভন ভন করা শুরু করেছে!
নিভৃতঃ সেই আনলাকি ছেলে কে রে?
মাথা ছেড়ে দরজার দিকে তাকালাম। ভাইয়া দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।
আমিঃ [হেসে] এতো টিটকারি মেরে লাভ নাই। সেই ছেলেটা আগে থেকেই নিষিদ্ধ আমার জন্য!
ভাইয়া কতোক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে হেসে পাশে বসে গেলো। নিজের ফোন এগিয়ে দিলো আমার জন্য। অবাক হয়ে ভাইয়ার ফোন নিয়ে দেখি “ছোটু” লেখা জ্বলজ্বল করছে। লাইনে এখনো আছে।
আমিঃ ছোটু আবার কে?
নিভৃতঃ সায়র ফোন করেছে।
অবাক হয়ে ফোন স্ক্রিনে আবারো তাকালাম। কানে ঠেকালাম ফোন। কোন শব্দ নেই।
আমিঃ [ফোন কানে ঠেকিয়ে হাসতে হাসতে] হ্যালো!
সায়রঃ কই তুই?
আমিঃ কি অসামাজিক কথা এগুলা? নিভৃত ভাইকে ফোন দিয়ে আমাকে যেহেতু পেয়েছেন তাহলে নিশ্চিত বাসায় আছি।
সায়রঃ থাপ্পড় খেয়েছিস কখনো? থাপড়ে গাল লাল করে দিবো। অসভ্য বেহায়া বদমেয়ে। সামাজিকতা কি বুঝিস? জঙলি কোথাকার!
আমিঃ এই গালিগুলো দেবার জন্য ফোন দিয়েছেন?
সায়রঃ তোকে বলতে হবে?
আমিঃ আজকেও কিছু খেয়েছেন নাকি?
সায়রঃ তুই বিরাট বড় একটা আজাইরা!
ফোন কেটে দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে চেয়ে আছি। এইগুলো বলার জন্য ফোন দিলো। আজব! আমি দেখি সব পাগলের ভিড়ে তলিয়ে যাচ্ছি।
নিভৃতঃ কি বললো রে?
আমিঃ হুহ, গালি দিলো কয়েকটা! এই বেটা ফোন দিলে আর আমাকে দিবি না।
নিভৃতঃ [হাসতে হাসতে] এগুলোই ওর ইম্পর্টেন্ট কথা! আমাকে ফোন দিয়ে বেশ সিরিয়াস হয়ে বললো কি নাকি আছে তোকে বলার তুই ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।
ভ্রু কুচকে অন্যদিকে তাকালাম। ভাইয়া মুচকি হাসি হেসে উঠে দাঁড়লো।
নিভৃতঃ সায়রই কি সে? [আমি চমকে তাকালাম] তার সাথে কথা বলার আগেই হাসছিলি অযথা!
আমিঃ [দীর্ঘশ্বাস ফেলে] আমার চয়েজ এতোটাও বাজে না!
নিভৃতঃ [রুম থেকে যেতে যেতে] আমার মনে হয় সেও তোকে পছন্দ করে!
ভাইয়া চলে গেলে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। শেষ কথাটা সত্যি হলে খুব কি খারাপ হতো? ফোন অন করে দেখি বেশ কিছু কল এসেছে আননোন নাম্বার থেকে। বিছানায় পরে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। নিষিদ্ধ হলেও আমার অনুভূতিগুলো তার জন্য ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
•
•
•
“নে এই শাড়ি পরে রেডি হয়ে নিস!”
ভ্রু কুচকে তাকালাম। সকালের খাবারও ঠিক মতো খেতে দিচ্ছে না। ভাইয়া, আব্বুরও সেম রিয়েকশন।
আম্মুঃ এটা পরে নিস।
আব্বুঃ মেয়েটা কি ছেলে দেখতে যাচ্ছে নাকি? ও কেন শুধু শুধু গরমে শাড়ি পরতে যাবে?
আম্মুঃ তোমার মেয়ে তো জীবনে প্রেম করলো না। ছেলের তো তাও বিয়ের সম্ভবনা আছে! এর তো সেইটাও নেই।
খাওয়া চুপচাপ চাবাতে লাগলাম। আব্বুর কথায় আম্মু শেষে শাড়ি নামক ঝামেলা থেকে রেহায় দিলো আমাকে। বেশ অসন্তুষ্ট তিনি আমার উপর। বুঝি না সব মায়েরা প্রেম বিরোধী আমার মা কেন এমন! পাত্রী দেখতে সোফায় বসে আছি। বেশ আলোচনা চলছে বড়দের মধ্যে। আমি পুরো বাসাটা স্ক্যান করে দেখছি। মাঝখানে আবার ফোন ভাইব্রেশন করে উঠলো। দেখি সায়রি কল দিচ্ছে। কল কেটে টেক্সট পাঠালাম ওকে। কিছুক্ষন পর আম্মুর তথাকথিত সেই “সুদর্শন” পুরুষ সামনে এসে বসলো। চা খেতে খেতে কাশি উঠে গেলো আমার। আম্মু পিঠ থাপড়াচ্ছে।
আমিঃ [ফিসফিসিয়ে] তুমি এই গর্ভবতী ছেলের জন্য আমায় সাজিয়ে আনতে চেয়েছিলে আম্মু? একে তো অলরেডি মেরিড লাগছে।
চলবে_______❤
#এ্যাগ্নেস_মার্টেল