#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-৪
এদিকে সকালে রিয়ানা বেগম মুন কে কিছু খেতে না দিয়ে কাপড় কাঁচতে পাঠিয়ে দেয়৷ কাপড় অর্ধেক কেচে এসে মুন রান্না চরিয়ে আবার কাপড় কাচঁতে চলে যায় কিন্তু দূর্ভাগ্য বসত রান্না টা আজ অনেক টা পুরে গেছে মুন দ্রুত চুলা বন্ধ করে তরকারি টা নামিয়ে নেয় ৷ তখনি বাড়ির কলিং বেল টা বেজে ওঠে মুন দরজা ছুটে যায় দরজা খুলতে , দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে মানুষ টা কে দেখে মুন যেন পাথর হয়ে গেল , বিয়ের এক বছর পর আজ প্রথম আলিয়া বেগম মুনের চোখের সামনে দারিয়ে আছে ৷ মুন ভেবে পায় না তার মাকে আল্লাহ কোন মাটি ধারা সৃষ্টি করেছে ৷ এতোটা কঠিন হৃদয়ের মা কি করে হতে পারে? এমন টা নয় সে তার সৎ মেয়ে মুন তার নিজের রক্ত তারপরও কেনো এই ব্যবহার এটা মুন কখনো ভেবে পায় না ৷
হঠাৎ আলিয়া বেগমের কথায় মুন তার ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে…
“” কি হয়েছে মুন তোর শ্বশুর আমাকে ফোন করে তোকে এখান থেকে নিয়ে যেতে বললো কেন?”” বিরক্তি চোখে তাকিয়ে বললো আলিয়া বেগম…
আলিয়া বেগমের কথা শুনে মুন বুজতে পারলো তার মায়ের এখানে আসার কারন তবে এখন যদি রিয়ানা বেগম তার মাকে দেখতে পায় তাহলে মাকে অপমান করতে দ্বিতীয় বার ভাববে না ৷
আলিয়া বেগম মুন কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকে পরে এদিকে রিয়ানা বেগম নিজের রুমে বসে হিন্দি সিরিয়াল দেখায় ব্যাস্ত কিন্তু কলিং বেল এর আওয়াজ পেয়ে তিনি ড্রইং রুমে এগিয়ে যান কে এসেছে সেটা দেখতে ৷ তখনি মুনের মা কে দেখে চিনতে না পেরে জ্বিগাসা করে….
“” এই আপনি কে ? আর আমার বাড়িতে কি চান?””(রিয়ানা বেগম)
“” আপনি রিদ জামাই বাবাজির মা তাই তো?””
“” হ্যা কিন্তু আপনি কে?””
“” আমি মুনের মা বেয়াইন””
মুনের মা বলায় রিয়ানা বেগম আপাদমস্তক আলিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে”” আজ প্রথম বার মেয়ে শ্বশুর বাড়ি এসেছেন তাও খালি হাতে সামান্য মিষ্টি ফল ও আনতে পারেন নি ? কি ভিকিরি ঘড়ে আমার বাবু সোনার বিয়ে করালোরে বাবা…””
রিয়ানা বেগমের ঠেস মারা কথা শুনে আলিয়া বেগম ক্ষেপে ওঠে”” কি বলতে চান বিয়াইন আমরা ভিকিরি?””
“” তা নয়তো কি হ্যা মেয়ের শশুর আসছেন খালি হাতে আর বিয়ের সময় মেয়ে কে পাঠিয়েছেন খালি হাতে কেন ?””
“” কারন আপনার স্বামী এমন কিছু চাইনি তাই””
“” এর পর যখন আপনাকে ফোন করে দশ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলাম আপনি কি টাকা টা দিয়েছেন?””
“” দেখুন বিয়াইন আমার পক্ষে এতো গুলো টাকা আপনাদের দেওয়া কোন দিন সম্ভব না কারন আমার ছোট্ট দোকান থেকে খুব সামান্য আয় হয় যা দিয়ে আমি আমার সংস্যার চালাই””
“” ওহ তাহলে নতুন বাড়ি কি করে করলেন বিয়াইন ? কে দিলো?””
“” আপনি এতো কথা কি করে জানেন ?””
“” আমরা এতো কিছু কি করে জানি এটা বড় কথা নয় বড় কথা হলো আপনি এগুলো কি করে করলেন?””
“” আমি আমার সেভিংস থেকে করেছি””
“” বাহ তাহলে কিছুক্ষন আগে যে বললেন আপনার পক্ষে টাকা গুলো দেওয়া সম্ভব নয়?””
“” দেখুন বেয়াইন আমি আপনাকে কৈফত দিতে চাই না ৷ আপনার স্বামি কে ডাকুন৷””
” কেন তাকে দিয়ে আপনার কি কাজ?””
“” তিনি আমাকে ফোন করে আসতে বলেছে আর বলেছে মুন কে নিয়ে যেতে বলেছে””
আলিয়া বেগমের কথা শুনে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে মুনের দিকে তাকালো , মুন তার শাশুড়ীর চোখের চাউনি দেখে চোখ নামিয়ে নিলো… রিয়ানা বেগম মনে মনে ভাবতে লাগলো…
“” নাহ এই মেয়েটাকে এভাবে যেতে দেওয়া যাবে না ওর জন্য বাবুর বাবা আমার গায় হাত তুলেছে এর প্রতিশোধ না নিয়ে এই মেয়ে টাকে আমি ছাড়ছি না ৷””
“” দেখুন বিয়াইন রিদ এর বাবা আপনাকে কি বলছে এইডা আমি জানি না তবে বউমা কোথাও যাবে না এখন কারন বাবু বা বাবুর বাপ কেউ বাড়ি নেই””
“” তার মানে মুন কে নিয়ে যেতে হবে না?”
“” না””
রিয়ানা বেগমের কথা শুনে মুনের মায়ের চোখে মুখে খুশির ঝলক ফুটে উঠলো ৷ মুন কে নিয়ে যেতে হবে না বলে ভিষন খুশি আলিয়া বেগম…
“” তাহলে এখন আমি আসি বেয়াইন “”
“” আপনার ইচ্ছা””
রিয়ানা বেগম মুখ বাকিয়ে কথা গুলো বলে নিজের রুমের দিকে হাটা দিলো কারন তার প্রিয় সিরিয়াল শুরু হবার সময় হয়ে গেছে ৷
“” মুন তোর শশুর কেন তোকে নিয়ে যেতে বলেছে তা আমি জানি না তবে এর পর থেকে এবাড়ি থেকে আমার কাছে যেন কোন নালিশ বা ফোন না আসে ৷ এই বাড়ি এখন তোমার বাড়ি মানিয়ে গুছিয়ে নিবে ৷ শশুড় শাশুড়ির কথা মেনে চলবে আর একটা কথা ছোট বেলা থেকে অনেক টাকা তোমার পিছুনে খরচ করেছি আমি এবার দয়া করে আমাকে একটু রেহাই দে ৷ আর পারছি না তোদের ভাই বোন কে টানতে ৷ আর দশ লাখ কেন দশ টাকাও তোর পিছুনে খরচ করতে পারবো না তোর বিয়েছে আমার অনেক গুলো টাকা বেরিয়ে গেছে ৷””
আলিয়া বেগমের কথা শেষ হবার আগে মুন বলে উঠলো “” আম্মু তুমি কেমন আছো আর মৃন্ময় কেমন আছে?””
মুনের প্রশ্ন শুনে আলিয়া বেগম বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন ” ভালো আছি আমরা ৷ আর আমি এখন আসছি””
কথাটা বলে বেরিয়ে গেল আলিয়া বেগম৷ মুনের বড্ড মন খারাপ লাগছে এটা ভেবে তার মা একবার জ্বিগাসা করলো না মুন তুই কেমন আছিস? মুনের দুচোখ ভরে এলো ,, নিজের এই কষ্ট গুলো না পারে কাউকে বলতে না পারে সইতে ৷ চোখের পানি মুছে দরজা আটকে রান্না ঘরে গিয়ে বাকি রান্না সরে কাপড় ধুয়ে গোছল করে নেয় ৷
মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে মুনে হাত পাও ছেড়ে দিয়েছে ৷ উঠে দারানোর শক্তি নেই ৷ কিন্তু এটা মানতে নারাজ রিয়ানা বেগম , দুপুরে খাবার দিতে দেরি হওয়ায় রিয়ানা বেগম রেগে মুনের চুলের মুঠি ধরে ড্রইং রুমে এনে ফেলে…
“” নটির ঝি তোর এতো বড় সাহস আমার কথার অবাধ্য হোস ৷ তোর ওই মা আইসা তোরে এই সাহস দিসে তাই না ৷ আজ তোর এই সাহস এর আমি কি দেখ তুই””
রিয়ানা বেগম হাতের কাছে কিছু না পেয়ে রান্না ঘরে গিয়ে খুন্তি আগুনে লাল টকটকে করে পুরিয়ে নিয়ে আসে৷
“” আম্মা আমি সত্যি অসুস্থ গায় জ্বর আমার “”
“” কাজের কথা বললে তোর জ্বর উঠে যায় এটা আমি বুঝি না ভেবেছিস ৷ কাল তোর জন্য বাবুর বাপ আমারে থাপ্পড় মারছে তোরে আমি ছেড়ে দিমু ভাবছিস ৷ “”
“” আম্মা আমি কি দোষ করেছি আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেন আম্মা”
“” চুপ একদম চুপ আমাকে আম্মা ডাকবি না আমি তোর আম্মা না তুই আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিছিস ৷ তোর মতো ফকিন্নি কে আমার ঘরের বউ করতে হয়েছে তোর মা বাবুর বাপ কে কি জাদু করছে আল্লাহ জানে যে তোর মতো কালি কে আমার রাজ পুত্রের মতো বাবুর সোনার বউ করে এনেছে৷””
রিয়ানা বেগমের মুখের এতো বাজে কথা শুনে মুন যেন কোন শব্দ-ই খুজে পেল না ৷ আচমকা রিয়ানা বেগম গরম খুন্তি টা মুনের পিঠে চেপে ধরে … মুন সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো ৷ মুনের চোখে পানি দেখে রিয়ানা বেগমের ঠোটের কোনে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো…..
রিয়ানা বেগম গরম খুন্তি টা রান্না ঘরে রেখে ডাইনিং টেবিলে বসে পরে খাবার থেকে .. প্রিয়ন্তি এতোক্ষন রিদের সাথে ফোনে কথা বলছি হঠাৎ মুনের কান্নার আওয়াজ শুনে কেটে দিয়ে বাইরে এসে দেখে মুন ফ্লোরে বসে কাঁদছে পিঠের দিকে খেয়াল পরতে দেখে খানিকটা পুরে গেছে ৷ প্রিয়ন্তির বুজতে বাকি নেই এটা কে করেছে ৷ প্রিয়ন্তি আস্তে করে মুনের হাত ধরে ঠিয়ে সোফায় বসিয়ে বলে “” ভাবি তুমি এখানে বসো আমি রুম থেকে মলম টা নিয়ে আসি বেশ খানিক টা পুরে গেছে ৷””
প্রিয়ন্তির কথা শুনে মুন তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে উঠলো “” যার কপাল জন্ম থেকে- ই পোড়া তার এতো টুকু পিঠ পুরে যাওয়াতে কিছু হয় না প্রিয়ন্তি””
মুনের কথা গুলো শুনে প্রিয়ন্তির বুকের ভেতর কেমন যেন ছেৎ করে উঠলো ৷ প্রিয়ন্তির কেন যেন মনে হচ্ছে এই সব কিছু ওর জন্য হচ্ছে ৷ প্রিয়ন্তি চুপ চাপ রুম থেকে মলম টা নিয়ে মুনের পিঠে লাগিয়ে দিয়ে রিয়ানা বেগমের উদ্দেশ্য বলে উঠলো “” খালামনি আমি ভাবি কে রুমে নিয়ে যাচ্ছি ওখানে খাবার টা খেয়ে নিবে””
“” কোন খাবার হবে না ওর আজ সারা দিন না খেয়ে থাকবে ওই বে** ঝি “” মুখ বাকিয়ে কথা গুলো বললো রিয়ানা বেগম ,, প্রিয়ন্তি তার খালামনির কথা গায় না লাগিয়ে মুন কে ধরে নিজের রুমে নিয়ে যায়…
“” ভাবি তুমি এখানে বসো আমি তোমার খাবার টা নিয়ে আসি””
“” না প্রিয়ন্তি আমার জন্য তোমায় খাবার আনতে হবে না ৷ আমার খিদে নেই৷””
“” ভাবি একটা কথা বলি তুমি আমাকে ঠিক যতোটা খারাপ মনে করো না কেন আমি ওতোটাও খারাপ নই ৷ আমিও রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ ভাবি ৷ আমিও….. “”
প্রিয়ন্তি কথাটা বলতে গিয়েও বললো না বরং দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেল যেন আর একটু হলে কোন সত্যি কথা ওর মুখ থেকে বেরিয়ে যেত… মুনের কেন যেন প্রিয়ন্তি সন্ধেহ হলো ওর কথার ধারা , কিন্তু সন্ধেহ নিয়ে ভাবার কোন শক্তি বিন্দু মাত্র শরীলে অবশিস্ট নেই মুনের ৷ মুনের দু-চোখ জোড়া যেন বুজে আসছে তখনি প্রিয়ন্তি খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে….
“” ভাবি খাবার টা খেয়ে নেও তারপর একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিবে””
“” এগুলো নিয়ে যাও প্রিয়ন্তি মার খাবার বা ঔষধের কোন প্রয়োজন নেই “”
“” ভাবি এটা তোমার রাগের কথা কিন্তু প্রাকটিক্যালি ভেবে দেখো খাবার না খেলে তুমি আরো অসুস্থ দূর্বল হয়ে পরবে তাহলে তো তুমি আর এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারবে না আর না পারবে মাথা তুলে দারাতে….””
মুন প্রিয়ন্তির কথা শুনে হতবাক কারন এমন কথা যে গুলো তার-ই আপনজন দের বিরুদ্ধে বলছে ৷ কিন্তু কেন?
প্রিয়ন্তি মুন কে এভাবে তাকাতে দেখে মুচকি হেসে বলে… “” আমি জানি ভাবি আমার হাতের স্পর্শে তোমার সারা শরীল গুলিয়ে আসে কিন্তু বিশ্বাস করো এগুলো করতে আমি বাধ্য …”” এই টুকু বলে থেমে যায় প্রিয়ন্তি…
“” বাধ্য মানে কিসের বাধ্যবাধকতা তোমার যে অন্যে একজনের স্বামীর সাথে বিছানায় যেতে ও তোমার বাধে না আর সেই যদি হয় তোমার ভাই…””
“” খালাতো ভাই ভাবি”””
মুন আর কিছু বললো না ভাতের প্লেট নিয়ে নিজে খেতে লাগলো ৷ গতকাল থেকে না খেয়ে থাকায় মুন পুরো খাবার টা খুব দ্রুত খেয়ে ফেলে ৷ প্রিয়ন্তি তা দেখে মুনের উপর ভিষন মায়া হয় দৌড়ে গিয়ে আর একপ্লেট ভাত তরকারি নিয়ে এসে মুন কে দেয় মুন চেটেপুটে পুরো খাবার টা খেয়ে নেয় ৷
“” ভাবি ঔষধ টা খেয়ে আমার রুমে ঘুমিয়ে পড়ো “”
মুন চুপ চাপ ঔষধ টা খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে গভির ঘুমে তলিয়ে যায় মুন…..
হঠাৎ করে মুন শরীলে ভারি কিছু অনুভব করে ঘুম ছুটে যায় মুনের , চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে পুরো রুম ঘুট ঘুটে অন্ধকার আর কেউ ওকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে আছে ৷ মুনের ভিষন অসস্থি হয়ে লাগলো মুন ওই মানুষটার শক্ত হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালাতে দেখে………
.
.
.
.
#চলবে………….