#নীরব_সাক্ষী
#ফারহানা_ছবি
#পর্ব-৬
“” আবিদ আমি তোমাকে তিন মাস সময় দিলাম তুমি যদি এর ভিতর কিছু করে দেখাতে না পারো তাহলে তুমি আমাদের বিজনেসে জয়েন করবে””
আবিদের বাবার কথা শেষ হতে-ই আবিদের ফোন টা বেজে ওঠে ৷ আবিদ ফোন বের করে দেখে সুমিতের নাম ,,, আবিদ তার বাবার কথা উপেক্ষা করে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় এদিকে আফজাল হোসেন তার ছেলের এতো অধপতন দেখে রাগে যেন ফেটে পরলো …..
.
.
.
“” হ্যালো সুমিত মুনের কোন খবর পেয়েছিস ?”” ( আবিদ)
” হ্যা দোস্ত পেয়েছি তবে …..”
বলতে বলতে থেমে যায় সুমিত , সুমিত কে চুপ করে যেতে দেখে আবিদের মনে যেন মুনকে নিয়ে ভয় এর বাসা বাধতে লাগলো ৷ সুমিতের এই নিরবতা আবিদের যেন সহ্য হচ্ছে না ৷
“” সুমিত তুই সব টা বলবি নাকি আমি আসবো?” রেগে বললো আবিদ
“” না না আবিদ তুই প্লিজ আসিস না তাহলে মুনের জীবন টা আরো নরকে পরিনতো হবে৷ তুই জানিস না মুনের শাশুড়ি আর স্বামী কতো টা জঘন্য ৷ আমি ওদের বাড়ির প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি ওরা দিন রাত কতো টা টর্চার করে মুনের উপর আর তার চেয়ে বড় কথা তোর কথাই ঠিক ওই রিদ হলো একটা জানোয়ার সালা নিজের কাজিনের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রেখে যাচ্ছে মুনের সামনে ৷ কিন্তু মুন কোন ভাবে প্রতিবাদ করতে পারছে না তাহলে অকথ্য অর্তাচার নেমে আসছে ওর উপর ….””
সুমিতের কথা শুনে আবিদের শরীলের রক্ত যেন রাগে টকবগিয়ে ফুটতে লাগলো আবিদের ইচ্ছে করছে এখুনি ওদের খুন করে মুন কে নিজের কাছে নিয়ে আসতে ৷ আবিদ কয়েকবার জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে রাগটা দমানোর চেষ্টা করতে লাগলো ৷ সুমিত কলের ওপাশে থেকে এপাশে আবিদের অবস্তা বুজতে পারছে ৷
“” আবিদ শান্ত হো আমাদের মাথা গরম করে কাজ করলে চলবে না আমরা এমন কিছু করবো যাতে মুন খুব সহজে ওই নরক থেকে বের হতে পারে কিন্তু তার জন্য তোকে কিছু করতে হবে””
আবিদ বুজতে পারলো সুমিতের কথার মানে ,
“” তুই ফিরে আয় সুমিত আর আসার সময় ওই পরিবারের প্রত্যেকটা ব্যাক্তির ফোন নাম্বার নিয়ে আসবি “”
“” ওকে দোস্ত””
আবিদ কল ডিসকানেক্ট করে আবারও জোরে জোরে কয়েকবার নিশ্বাস নিয়ে , নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতে দেখে মনিরা বেগম দারিয়ে … মনিরা বেগম কে দেখে আবিদ নরে চরে যেতে নিলে পিছু ডাকে আবিদ কে মনিরা বেগম….
“” কিছু বলবে আম্মু?””(আবিদ)
“” আবিদ তোমাকে আমি একটা কথাই বলবো তুমি যা করছো বা করতে চাইছো তোমার আব্বু কখনো তা মেনে নিবে না ৷ তাই একটাই কথা বলবো যা করবে ভেবে চিন্তে করবে তবে নিজের পায়ে দারিয়ে করবে যাতে তোমার আব্বুর থেকে কোন প্রকার সাহায্য তোমাকে না নিতে হয়””
কথাটা বলে মনিরা বেগম চলে গেলেন তবে আবিদ ঠায় দারিয়ে রইল ৷ আবিদ বুজতে পারছে তা মা তাকে কি বলতে চেয়েছে ৷ আবিদ তার মায়ের এতোটুকু কথায় ভিতর থেকে আরো উৎসাহ পেলো … আবিদ রুমে গিয়ে নিজের সার্টিফিকেট জরুলি কাগজপত্র নিজের জামা কাপড় প্যাক করে নিয়ে বেরিয়ে যায়৷
_________________
ভোর বেলায় ঘুম ভেঙে যায় মুনের ৷ ডিসেম্বর এর শীতের আবহাওয়া বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না মুনে ইচ্ছে করছে আরো কিছুক্ষন গরম কম্বল টা গায়ে জরিয়ে শুয়ে থাকতে ৷ মুন হঠাৎ করে পুরনো দিনে কথা মনে পরে যায়……
ক্লাস এইটে টেনে টুনে পাশ করে নাইনে ভর্তি হয়ে যায় মুন ৷ আলিয়া বেগমের কোন প্রকার ইচ্ছে নেই মুন কে পড়ানো তিনি চান মেয়ে তার কাজে হাত লাগান আর ঘরে বসে রান্না করুক ৷ কিন্তু মুন চায় পড়তে কারন এই একটা জিনিস আছে যেটা ও নিজের ইচ্ছে তে করতে পারছে ৷ মুন প্রতিদিন স্কুলে সানজির সাথে যাওয়া আসা করতে লাগলো হঠাৎ একদিন সানজি বলে উঠলো “” মুন দোস্ত দেখ ওই ছেলেটা কে আমি কয়েকদিন ধরে ফলো করছি ৷ ছেলেটা আমাদের প্রতিদিন ধরে ফলো করে “”
সানজির কথা মতো পিছুনে তাকিয়ে দেখে আবিদ ৷ আজ প্রথম বার মুন ভালো করে আবিদের দিকে তাকালো উজ্জ্বল শ্যাম বর্নের গায়ের রং অবশ্য ওর থেকে ফর্সা , উদ্ভত মায়া ভরা দু-চোখ আর খাম্বার মতো লম্বা , হালকা কোকড়ানো ঘন চুল , মুনের হৃদয়ে হুট করে হিম শীতল বাতাস বয়ে গেল ৷ আবিদ কে দেখে আজ প্রথমবার মুনের কিশোরী মনের ভিতর প্রেমের বীজ বুনে গেল…
মুন কে চুপ থাকতে দেখে সানজি বলে উঠলো …
দোস্ত এখন আমি বুজতে পারছি না ছেলে টা কাকে পছন্দ করে তোকে না আমাকে আর কে এই ছেলেটা?”
মুন তখনি ফট করে বলে উঠলো উনি আমাদের বাড়িওয়ালার ছোট ছেলে আবিদ পুরো নাম জানি না ৷ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে ৷
“” ওয়াও তাহলে তো হয়ে গেল তাহলে ছেলেটা তোকে পছন্দ করে আমি শিওর “”
সানজির কথা শুনে মুনের ভালো লাগলো তবে সানজি কে বুজতে না দিয়ে উলটো ধমক দিলো৷
“” সানজি আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে বাসায় চল তারাতারি””
“” হু বুঝি বুঝি মনে তো এখন লাড্ডু ফুটছে”” বলে কিটকিটিয়ে হাসতে লাগলো সানজি…
এভাবে কয়েকমাস কেটে গেল না আবিদ মুন কে সাহস করে কিছু বলেছে না মুন বলছে ৷ আবিদ মুনের মায়ের জন্য মুনের থেকে দুরে দুরে থাকে যাতে ওর জন্য কখনো মুন কে মারতে না পারে ৷ তবে এতো গুলো মাসের ভিতর এমন কোন দিন নেই যে মুন মার খায়নি ৷
মুন কিছুদিন পর বুজতে পারে সেও আবিদ কে ভালোবেসে ফেলেছে ৷ মুন না চাইতেও আবিদের কাছে চুম্বক এর মতো টানে আবিদ ও বুজতে পারে মুন তাকে ভালোবেসে ফেলেছে ৷ এর মাঝে একদিন মুনে আর্তচিৎকার শুনে আবিদ আর আবিদের মা সাথে অন্যান্য ভাড়াটিয়া রা ছুটে আসে মুনদের ঘরে এসে দেখে মুন বা হাত ধরে কেঁদে যাচ্ছে আর আলিয়া বেগমের হাতে চলা কাঠ, মনিরা বেগম মুনের হাত ধরতে মুন চিৎকার করে আবার ও কেদে ওঠে ৷ মনিরা বেগম বুজতে পারে মুনের হাত হয়তো ভেঙে গেছে ৷ তিনি আলিয়া বেগমের দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে বলতে লাগলো”” মেয়েটাকে এভাবে জায়োয়ারের মতো মারলেন কেন ?””
“” আমার মেয়ে কে আমি মারবো না কাটবো এটা কি আপনার কাছ থেকে শুনবো আমি? “”
মুনের মায়ের কথা শুনে আবিদের মায়ের যেন রাগে গা যেন জ্বলতে লাগলো তিনি দাতেঁ দাতঁ চেপে মুনের মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো”” আপনি ভূলে যাচ্ছেন আপনি আমার বাড়িতে ভাড়া থাকেন ৷ আর আমার বাড়িতে এই সব মার পিট চলবে না ৷ আপনারা পরের মাসে আমার রুম ফাঁকা করে দিবেন নাহলে আমি আবিদ এর বাবা কে বলতে বাধ্য হবো””
কথাটা বলে আবিদ এর মা চলে যায় ৷
আবিদ এর মায়ের কথা শুনে মুনের মা কিছুটা নরম হয়ে যায়৷ দ্রুত রেডি হয়ে মুন কে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় ৷ মুনের ডান হাত ভেঙে গেছে ৷ মুন কে ডাক্তার দেখিয়ে হাতে প্লাস্টার করে ঔষধ নিয়ে আসে ৷ মুনের মায়ের উপর আবিদের প্রচন্ড রাগ হয় ৷ আবিদের ইচ্ছে করছে এই মহিলা কে নিজের হাতে খুন করতে কিন্তু আফসোস সেটা সম্ভব নয় ৷ মুনের হাত ভাঙায় কিছুদিনের জন্য আলিয়া বেগম চুপ হয়ে যায় তবে খিট খিট লেগেই থাকে কারন তাকে এখন সংস্যারের সব কাজ করতে হচ্ছে ৷
দেখতে দেখতে কয়েকমাস কেটে যায় মুনের হাত ঠিক হয়ে গেছে ৷ ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠার কিছুদিন পর আবিদ মুন কে প্রপোজ করে ৷ মুন রাজি হয়ে যায় ভুলে যায় নিজের মায়ের কথা একটু ভালোবাসা পাওয়ার লোভে মুন তার দু-হাত বাড়িয়ে দেয় আবিদের দিকে …চলতে থাকে দুজনের খুনসুটিময় ভালোবাসা ….
____________
হঠাৎ মুন বিছানা থেকে ফ্লোরে পরে যায় ৷ কোমরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে মুন তবুও খাটের কোনা ধরে উঠে দারিয়ে দেখে রিদ আর তার মা দারিয়ে আছে ৷ মুন বুজতে পারলো তাকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিয়েছে ৷ মুন ছলছল চোখে রিদের দিকে তাকিয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত তারপর ওয়াসরুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে বের হতে রিয়ানা বেগম মুনের চুলের মুঠি ধরে বলে”” কি গো নবাবজাদীর বেটি আমার বাবু সোনার মাথা চিবিয়ে খেতে চেয়েছিলি না এখন বুঝাবো তোকে কতো ধানে কতো চাল… “”
রিয়ানা বেগম মুনের চুলের ধরে রুমের বাইরে নিয়ে যেতে সামনে রিদের বাবা কে দেখে থতমত খেয়ে যায় ৷
“” তুমি এখানে?”( রিয়ানা বেগম)
“” কেন তোমার কোন অসুবিধা হলো নাকি রিদের মা?””
“” না মানে””
“” চুপ একদম চুপ আর একটা কথাও বলবে না ৷ বউ মা তুমি তোমার জামাকাপড় গুছিয়ে নেও আমি তোমাকে এখুনি তোমার মায়ের বাসায় রেখে আসবো এই নরকে আর তোমাকে থাকতে হবে না””
মুন তার শশুরের কথা শুনে ভয়ে আতকে উঠলো কারন গতকাল যে তার মা এসেছিলো তা হয়তো তার শশুর জানে না আর তাই আজ নিজে দিয়ে আসার কথা বলছে কিন্তু গতকাল মুনের মা যা যা বলে গেলো তার অন্যথা হলে এর দ্বিগুন নরকযন্ত্রণা যে ওকে সহ্য করতে হবে এ কথাটা মুন তার শশুর কে বলে উঠতে পারছে না ৷ এদিকে রায়হান আহাম্মেদ মুন কে এ বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাবে ৷ হঠাৎ করে রিয়ানা বেগম বলে উঠলো …”” কোথাও যাবে না মুন “”
“” মানে কি বলতে চাইছো রিদের মা ? তুমি তো চাইতে বউমা এ বাড়ি থেকে চলে যাক তাহলে?””
“” এই মেয়ে আমার বাড়ি আর আমার বাবু সোনার জীবন থেকে চলে যাক এটা আমি চাই না? আমার কাছে ক্ষমতা থাকলে এই অলক্ষী কে এখুনি বের করে দিতাম কিন্তু এভাবে তো আর একে বের করে দিতে পারি না রিদের বাপ””
“” কি বলতে চাও পরিষ্কার করে বলো রিদের মা”” খানিকটা রেগে বললেন রায়হান আহাম্মেদ ..
“” ডিভোর্স “”
________________
” ভেবে বলছিস আবিদ ? পরে ডিসিশন চেন্জ হবে নাতো?””( নিরব)
“” তোর কি মনে হয় নিরব? “”””(আবিদ)
“” ওকে ফাইন আমি মামু কে বলছি তোকে মামুর দোকানে নিতে এর মাঝে কোন একটা ব্যাবস্তা হয়ে যাবে কি বলিস?”(নিরব)
“” ব্যাবস্তা তো আমাকে করতেই হবে নিরব আমার জন্য না হলেও আমার মনপাখির জন্য “””
অন্যদিকে আবিদ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ায় আফজাল সাহেব প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে আছে মনিরা বেগমের উপর , তিনি তার দুই ছেলে সামনে মনিরা বেগম কে ডেকে পাঠান..মনিরা বেগম তার স্বামীকে প্রচন্ড রকমের ভয় পান তার সামনে আসতে মনিরা বেগম চুপ হয়ে যায়৷ আফজাল হোসেন বলতে লাগলেন………
.
.
.
.
#চলবে……………