নীল হতে নীলান্তে পর্ব-১৩

0
479

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
ত্রয়োদশ পর্ব

” সবার জীবনের গুগলির সমাধান করতে গিয়ে
নিজের জীবনের গুগলি সমাধান করতে পিছিয়ে যেয়ো না ”

অর্নিতার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো-“বড় অদ্ভূত বাক‍্য”!

আরেকটি চিরকুট পেলো সে -” Happy birth day miss Arnita Afsari ”

অর্নিতা চিরকুট টা হাতে নিয়ে ভালো ভাবে দেখল।
চিরকুট টা লাল কালিতে লেখা! গোটা-গোটা হাতের লেখা খুব সুন্দর! এই হাতের লেখাটা খুব চেনা!
কোথায় দেখেছে! খুব পরিচিত! কার হাতের লেখা এটা?
কে জানে তার পছন্দের কথা?
লাল আর সাদা লিলি যে তার পছন্দ! লাল রঙ্গ পছন্দ এটাও জানলো কিভাবে?
চিরকুট টা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে দিয়ে।
শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে চলেগেল সে।
শাওয়ার শেষ করে এসে হোটেল সার্ভিস ম‍্যানদের ফোন করল –

Are you Got something?

হোটেল সার্ভিসম‍্যান- No madame! We didn’t get anything!

অর্নিতা- oh,Send me a breakfast!

হোটেল সার্ভিসম‍্যান – ok madame!

হোটেল সার্ভিসম‍্যানদের সঙ্গে কথা বলার পর বাবার সঙ্গে কথা বলতে লাগল অর্নিতা। মামনি-বাবা
ভাই বোন এদের সবার সঙ্গে কথা বলার পর।
ফোন নিয়ে অরুপকে একটা কল করলো।
অরুপকে ফোন করার পর ফোন বন্ধ পেলো সে।
তবে হোয়াট্সআ‍্যাপ গিয়ে তাকে পেয়েও গেল সময় মত।
তারপর দুজনে মিলে অনেকক্ষন অনেক কথা বলল।
যার মধ‍্যে অর্নিতা অফিসিয়াল কথাবার্তাই বেশি বলেছে।
অফিসে আজকাল কি হচ্ছে। কেমন চলছে এ সমস্ত কথা।
রুমের একপাশেই কফি মেকার আছে যেখান থেকে খুব সহজেই কফি বানানো যাবে।
অর্নিতা এক কাপ কফি বানিয়ে নিল।
সকালের ধোয়া ওঠা এক কাপ কফি বড্ড প্রশান্তি দেয় তাকে।
কফি নিয়ে বেলকনিতে এসে বসে পরলো অর্নিতা, সকালের সূর্যস্নানের এই মূহুর্তটা তার কাছে খুব ভালো লাগে।
সূর্যের দীপ্তময় তপ্ত হলকা যখন শরীরে তীর তীর করে ধীরগতিতে শরীরে প্রবেশ করে তখন খুব ভালো লাগে তার।
সূর্য শুধু যে গ্রহ তা কিন্তু নয় সূর্য এক আদর্শের প্রতীক!
দীপ্তময় সূর্য শুধু যে আলো দেয় তা নয় দেয় জলন্ত অবস্থায় লক্ষ কোটি বছর টিকে থাকার উদাহরণ!

____________________________________

অপর পাশে……

খুব সকালে এ শহরে
হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি নামে
খুব সকালে এ শহরে
হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি নামে

সূর্য ঢাকে মেঘের ফাঁকে
বৃষ্টিস্নানে নগর মাতে
ঘুম ভেঙে যায় হঠাৎ করে
নিদ্রাবিহীন আঁধার ঘরে
কোনো এক শ্রাবণে
কোনো এক শ্রাবণে…

অমন অমন সকাল বেলা
আধো স্বপন জাগরণে
অমন অমন সকাল বেলা
আধো স্বপন জাগরণে
তোমার কথা মনে পড়ে
অন্য রকম শিহরণে
ব্যর্থতাতে থমকে থাকে
একটু দেখার তৃষ্ণা জাগে
কোনো এক শ্রাবণে…
কোনো এক শ্রাবণে…

গানের প্রলেপ শুনে চলেছে অন‍্য আরেক জন আজ ঠিক এই সময়ে। তারমুখে হাসির ঝলক! হোক দুষ্টু মিষ্টির এই সম্পর্ক নতুন করে! লুকোচুরি লুকোচুরি এই খেলায় কে যেতে যায়!
প্রথম দেখার মেয়েটির ছবিগুলোকে খুব যত্ন করে না তুললেও এখন অনেকটা যত্ন করে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে সে।

আচ্ছা যার ছবি সে এত সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে সে কি জানে?
সে যখন জানবে তার পাশেই দাড়ানো মানুষটি তার প্রেমে মাতোয়ারা তখন? তখন কি সে তাকে দিবে তার হাতটি ধরার সুযোগ? নাকি হারিয়ে যাবে উড়ো প্রজাপতির মত!
ভাবনায় বিভোর সেই ব‍্যাক্তিটি আ‍্যালবামে হাত বুলাতে লাগল।
____________________________________

আজ ও সেই বন্দি মেয়েগুলোর সাথে দেখা করতে গিয়েছে অর্নিতা।
মেয়েগুলো তাকে দেখে যেন খুব খুশি হয়েছে।
সবাই তাকে ঘিরে ধরেছে।
অর্নিতা প্রতেকের সঙ্গে কথা বলতে লাগলো।
ওদের কে কিভাবে নিয়ে আসা হয়েছে কি বলে আনা হয়েছে।
অনেকেই তাদের পূর্বের ভুল বুঝতে পেরে কান্নাকাটি করতে লাগল। অর্নিতা ওদের সবাইকে সান্ত্বনা দিলো।
ওরা পাচার কারীদের হাতে পরেছে। ওদের নিয়ে কিছু হবে এমন কোন কিছুই সে তাদের কাছে প্রকাশ করেনি এখনো।
বরং সবাইকে শক্ত ও সামর্থ্যবান কি করে হতে হবে তাই শেখাচ্ছে।
কালকের মত করে আবারও অর্নিতা তাদের শেখাচ্ছে কিভাবে ক‍্যারাটে শিখতে হয়। প্রতেককে কালকের শিখানো সেই ট্রিকস গুলোই সে আবারও করাতে লাগল।

এইদিকে……..

সিসিটিভির ফুটেজে ফুটে উঠেছে অর্নিতার ক‍্যারাটে শিখানোর দৃশ‍্য! সেই সাথে মেয়েগুলোর হাস‍্যজ্জল মুখশ্রী। সবাইকে সেখান থেকে বের করে দিয়ে অর্নিতা এগুলো শেখাচ্ছে।
মেরিন্ডা যেন আরও বেশি রেগে গেলো। এমনিতেই এত বছর অবদি কেউ তার উপর কথা বলতে পারেনি অর্নিতার জন‍্য কাল সবাই তার সঙ্গে জোড় দিয়ে কথা বলেছে। এত বড় সাহস! নতুন এই মেয়েটিকে তার কাছে মনে হচ্ছে খুব দূরন্ধর! রহস‍্যময়ী এক নারী সত্বা!
না হলে এমনটা কি করে করতে পারে ও?

মেরিন্ডা হেনজেল কে উদ্দেশ্যে করে – দেখেছো হেনজেল? মেয়েটার সাহস?

হেনজেল- হুম, এটা ও ঠিক করেনি!

মেরিন্ডা- আসতে না আসতে এত বড় কান্ড ঘটিয়ে ফেলল! তোমরা ওকে আরও মাথায় তুলে ফেলেছো! কি দরকার ওকে এভাবে মেয়েগুলোর কাছে ছেড়ে দেওয়া?
এখন এর সমাধান করবে কি করে?

হেনজেল- কিসের সমাধান?

মেরিন্ডা- আচ্ছা হেনজেল তোমার বুদ্ধিসুদ্ধি কবে হবে বলতে পারো?

হেনজেল- আমি আবার কি করলাম?

মেরিন্ডা- এই যে মাথাটা! মাথাটা কি একটু ও কাজে লাগাতে পারো না তুমি?
তুমি কি কিছুই বুঝতে পারছো না?
মেয়েগুলো যদি ওর মত করে চলে, বা আমাদের ভয় না পায় তবে কি হবে জানো? জানো না! জানবে কি করে?

হেনজেল মেরিন্ডার মুখের দিকে চেয়ে আছে।

মেরিন্ডা – তুমি দেখেছো মেয়েগুলোর মধ‍্যে প্রথমে যে ভয়ভীতি ছিল এখন কি তা আছে?
একদিনেই মেয়েগুলো ওর সাথে এতটা সাবলীল কি করে হয়েগেল? ভেবে দেখেছো কিছু?

হেজেল – মেরিন্ডার কথা শুনতে লাগল আর ভাবলো সত‍্যিই তো! এই বিষয় তো সে ভেবে দেখেনি।

মেরিন্ডা আবার বলতে লাগল- হেনজেল ওরা আমাদেরকে যদি ভয় না পায় তাহলে ওরা আমাদের পরোয়া করবে না! ওরা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাবে!
এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না! ঐ মেয়েটাকে আটকাও নাহয় এদেরকে আটকাও! দুপক্ষের একপক্ষকে তটস্থ করো নাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
রাগে অগ্নিশর্মা মেরিন্ডা চলেগেল।

মেরিন্ডা- স‍্যার আপনার জন‍্য নতুন একজন অতিথির আয়োজন করেছি!

অপর পাশ থেকে- তাই নাকি? নতুন অতিথি দেখতে কেমন?

মেরিন্ডা- আপনার পছন্দ হবার মতই, খুব সুন্দরী!
এক ঝাক কিশোরীর মাঝে তাকে পাবেন।
খুব সুন্দরী!

অপর পাশে থাকা ব‍্যাক্তি- Very good! তার‍দিকে যেন কোন শেয়াল কুকুরের নজর না পরে! সে আমার গুহায় বন্দি হবে! পাখি যেন না পালায়!

মেরিন্ডা- স‍্যার পাখি তো পোষা পাখি! এ পাখি উড়ে যাবে না!

অপরপাশে- তাহলে তো আরও ভালো!
আমি তৈরী শিকার করার জন‍্য! নজর রাখো তার উপর!
আমি তাকে চাই! বিশ্রীভাবে হেসে উঠলো ব‍্যাক্তিটি!

মেরিন্ডার মুখেও মুচকি মুচকি হাসি।
আড়াল থেকে মেরিন্ডা আর তার সেই বসের সব কথাই
একজন রেকর্ড করে ফেললো তাদের অজান্তেই!
বস আর মেরিন্ডার কথায় এই বিষয়টা ক্লিয়ার যে বন্দিমেয়ে গুলোকে পাচারের সময় চলে হয়ে এসেছে।
তবে অন‍্য আরেকজনের কথা বলায় বুঝতে পারছেনা আড়ালে থাকা ব‍্যাক্তিটি! কে সেই মেয়ে! যাকে চোখে চোখে রাখতে বলা হয়েছে?
ভাবতে ভাবতেই চমকে উঠলো সে! এতো সর্বনাশ করেছে…..

চলবে।