নীল হতে নীলান্তে পর্ব-১১

0
410

#নীল হতে নীলান্তে
#লেখিকাঃ তামান্না
একাদশ পর্ব

অর্নিতা – আপনি আমাকে তার সাথে যোগাযোগ করতে সাহয‍্য করুন স‍্যার। আমি চাই আমার বাবা মায়ের খুনিকে নিজের হাতে ধরতে।
তাকে শাস্তি দিতে এবং তাকে দেশের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগ করতে।

ডাইরেক্টর স‍্যার – অবশ‍্যই তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে।
আমি সেই আশাই করি তোমার থেকে।
অর্নিতা স‍্যারের সঙ্গে কথা বলেই বেরিয়েগেল বাহিরে।

দীর্ঘ একমাস পর,,,
অরুপ কিছুটা আগের থেকে সুস্থ হয়েছে। হাটতে কিছুটা পারে ও বেডে বসতে পারে। গুলির ক্ষতটাও শুকিয়ে গিয়েছে তার। অর্নিতা কাজের ফাকে ফাকে তাকে দেখতে চলে আসে।
অরুপের মা ও বাবার সাথে বেশ ভালোই সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তার।
এরই মাঝে অর্নিতা দুবাইয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। অনেকটা কাউকে না জানিয়েই সে একাই এইসব করে ফেলেছে। অর্নিতার কাছে তার বাবা মার খুনি কে নিজের হাতে শাস্তি দেওয়াই যেন বড় চ‍্যালেঞ্জ এখন।
এমনিতেই এতটা বছর সে এই দিনের অপেক্ষায় ছিল। এখন আর দেরী করা যাবে না।
তবে অর্নিতা তার বাড়িতে এবং অন‍্যান‍্যদের সাথে বলেছে সে একটিকাজে থাইল্যান্ড যাচ্ছে।
অর্নিতার বাবাকে ও সে এই কথাই বলেছে।
তার ধারণা বাবা এই কথা শুনলে তাকে কোনকালেই আসতে দিবে না।

এয়ারপোর্ট এ দাড়িয়ে আছে অর্নিতা, সঙ্গে তার বাবা জাহিদ আফসারী ও তার মামনি।
এই প্রথম সে বাংলাদেশ এর বাহিরে যাচ্ছে।
তাকে এগিয়ে দিতেই তার মামনি এসেছেন।
থাইল্যান্ডের ফ্লাইট নাম্বার এনাউন্স হচ্ছে।

মামনি অর্নিতার হাত ধরে রেখেছে। আর পাশেই অর্নিতার বাবা তাকে উপদেশ দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। অর্নিতার জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষক বা আদর্শবান ব‍্যাক্তি হচ্ছে তার বাবা।
বাবার পর আর কেউই তার জায়গায় আসতে পারবে না অন্তত।

অর্নিতার সময় হয়েগেছে একটু পরেই হয়তো এনাউন্স হবে। মামনিকে জড়িয়ে ধরেছে সে, আজ থেকে তার যুদ্ধের শুরু! এই যুদ্ধের শেষ কবে হবে তা ঠিক নেই। মামনিকে জড়িয়ে ধরেই তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। সবার আড়ালেই চোখের পানি লুকিয়ে ফেলল সে।
মুখে হাসি ফুটিয়ে মামনির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো। বাবার পায়ে ধরে সালাম করে নিল।
তিনিও অর্নিতাকে জড়িয়ে ধরলেন।
মেয়েকে এতদূরের পথ অতিক্রম করতে হবে।

জাহিদ আফসরী- সাবধানে থেকো! কোন সমস‍্যা হলে আমাকে জানিয়ে দিও।

অর্নিতা- জ্বী!

জাহিদ আফসারী – তোমার জন‍্য সব সময় আমার আশির্বাদ রয়েছে, যাও সময় হয়েগেছে, তোমাকে আর ধরে রাখতে চাই না।

অর্নিতা- ঠিক আছে বাবা,মামনি তোমরা নিজেদের খেয়াল রেখো,যাই।

অর্নিতা সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলেগেল তার গন্তব‍্যে।
থাইল্যান্ডের থেকে দুদিন পরই সে দুবাই শহরে পৌছবে।
দীর্ঘ সময়ের পর থাইল্যান্ডে ল‍্যান্ড করলো বিমানটি।
অর্নিতা সেখানকার একটি রেস্টুরেন্টে এ অপেক্ষা করতে লাগল এক বিশেষ ব‍্যাক্তির জন‍্য।
যার জন‍্যই অর্নিতার এখানে আসা আর সবাইকে থাইল্যান্ডের কথা বলাও এই কারনে।

অর্নিতার গায়ে স্লিভলেস একটি গাউন। হাইলাইট করা মেকাপের কারনে আসল চেহেরা তেমন ফুটে উঠেনি।
বাস্তব ও মেকাপ বিহীন চেহেরায় তার সৌন্দর্য যেমন ফুটে উঠে মেকাপে যেন সেই সৌন্দর্য ফিকে হয়েগেছে।
অর্নিতার চালচলন দেখে কেউ সহজেই বুঝতে পারবে না সে একজন গোয়েন্দার কর্মকর্তা।
বাঙ্গালী নারী হলেও আজ তাকে অন‍্যরকমই লাগছে।
বরং সবাই তাকে কোন মডেলই ভেবে নিবে।

এরই অর্নিতার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে প্রতিক্ষিত সেই ব‍্যাক্তিটি চলে এলো।
অর্নিতা হয়তো জানেই না তার উপরে একজন নজর রেখেছে।

অনেকক্ষণ বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে অর্নিতা ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলেগেল।
দীর্ঘ জার্নির পর এমনিতেই সে এয়ারপোর্টের ওয়াশরুমে ফ্রেশ হয়েছিল। এখন আবার এখানে এসেও।
অর্নিতা ওয়েটারকে ডেকে একটি কফির অর্ডার দিয়েদিল।

এর মধ‍্যেই একটি লোক তার সামনের চেয়ার টিতে বসে পরলো।
অর্নিতা তার হ‍্যান্ড ব‍্যাগ থেকে মোবাইল বের করে এখানকার সময় আর ম‍্যাপ দেখতে লাগল।
অর্নিতা তারদিকে একবার তাকিয়ে থেকে আবার মোবাইলে নজর দিলো।

লোকটি- Hi ! I am dihan, I think you are from Bangladesh ! Am I right?

অর্নিতা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে – yes, I am bangladeshi !

লোকটি- oh! can I talk to you in Bangla?

অর্নিতা- Why not?

লোকটি- Thank you so much!

লোকটি – আসলে আপনাকে দেখে আমার ভালো লাগলো! বাঙ্গালী মেয়ে থাইল্যান্ডের শহরে এসে একা একটা রেস্টুরেন্টে একা একা বসে আছেন তাই ভাবলাম
একটু আপনার সাথে সময় কাটানো যাক।

অর্নিতার কাছে বিরক্ত লাগছে। তবুও ধর্য‍্যের সহিত উত্তর দিলো অবশ‍্যই।

অর্নিতা এবার উঠে দাড়ালো। লোকটি ও দাড়িয়ে পরলো অর্নিতার সাথে।
এর মাঝেই একটি মেয়ে ডেকে উঠলো। আর লোকটিও সেই দিকে ফিরে তাকালো। ও তার মানে লোকটির নাম সাব্বির!
পিছনে ফিরে তাকানোর ফলে অর্নিতার মনে হলো লোকটির ব‍্যাক পকেটে কিছু একটা দেখেছে সে ।
অর্নিতা দেখেও না দেখার ভান করে বেরিয়েগেল রেস্টুরেন্ট থেকে।

থাইল্যান্ডের র রাজধানী ব‍্যাংকক হলেও! থাইল্যান্ডের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান হচ্ছে পাটায়া। পাটায়া যে শুধু শহর তা নয় , এখানে বিভিন্ন বড় বড় পর্যায়ের লোকজনের সমাগম এখানে।
রাজনীতি থেকে শুরু করে বড় বড় মাফিয়াদের অঞ্চল এই পাটায়া।
অর্নিতা দিনভর ঘুরাঘুরি করে এখানকার একটি হোটেলে উঠে পরেছে।
পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলল কিছুক্ষণ তারপর শুয়ে পরল বিছানায়।
অরুপ ফোন করেছে সবেমাত্র।

অরুপ – মিস অর্নিতা আমাকে বিদায় না জানিয়ে চলেগেলেন কাজটা কিন্তু একদম ঠিক নয়।

অর্নিতা- সরি সময় পাইনি জানানোর।

অরুপ- কখন সময় হবে আপনার?

অর্নিতা চুপ করে আছে তারপর বলল- বিশেষ একটা কাজ পরে গিয়েছিল তাই চলে এসেছি যখন কাজ শেষ হবে তখন আপনার সাথে দেখা করে সব বলব।

অরুপ -ও, আচ্ছা ঠিক আছে, সেই বিশেষ কাজের শেষে বিশেষ দিনে আপনার সাথে আমার দেখা হবে আবারো। কি দেখা করবেন তো?

অর্নিতা- জ্বী।

অরুপ- আচ্ছা রাখছি তাহলে কাল কথা হবে আবারো।

অর্নিতা- আচ্ছা আমিও কাল আপনার সাথে কথা বলবো।
____________________

রেস্টুরেন্টের আবারো এসেছে অর্নিতা।
দিহান রুপি সাব্বির এই মাত্রই এসেছে এখানে।
অর্নিতা যেন এই সময়েরই অপেক্ষায় ছিল।
সাব্বির আজ আবারো একটা মেয়ের সাথে তবে আরো কয়েকজন তার সঙ্গে আছে।

সাব্বির বসা থেকে উঠে সিড়ির কাছে একটা জায়গা এ গিয়ে দাড়িয়েছে। অর্নিতা ও পিছু নিয়ে তার পিছন দিয়ে গিয়েছে।
সিগারেটের গন্ধ পাচ্ছে সে। অর্নিতা আরেকটু কাছে যেতেই সাব্বির এক টান দিয়ে তাকে সিড়ির পাশেই সেই রুমে নিয়ে গেল। অর্নিতার মুখে তার হাত আর ওর হাতগুলো তার হাতের মুঠোয়।

অর্নিতা তার পা দিয়ে লোকটির পায়ে জোরে লাথি দিয়ে দিল লোকটি কিছু বুঝে উঠার আগেই অর্নিতা পকেট থেকে পিস্তল বের করে লোকটির বুকের পাশে ধরলো।

অর্নিতা- হ‍্যান্ডস আপ মিস্টার দিহান আয়াজ খান!
ক্রিমিনালদের সঙ্গে হাত মেলানোর জন‍্য আপনাকে আইনের আওতায় নেওয়া হলো।

দিহান কিছুক্ষণ বোকার মত চেয়ে রইল।
এমন ভাব যেন সে আকাশ থেকে পরল সবেমাত্র।
কিছুক্ষণ এভাবে থেকে হেসে দিয়ে অর্নিতার হাতে হাত মিলিয়ে নিল।
অর্নিতাও হেসেদিল,

দিহান- কেমন কাটলো থাইল্যান্ডের প্রথম দিন?

অর্নিতা- ভালোই,

দিহান – Good! একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আমার সঙ্গে

অর্নিতা- আপনার সঙ্গে অবস্থান করা লোকগুলো এবং মেয়েগুলোর থেকে সাবধানে চলবো তাই তো?

দিহান – হ‍্যা, ওরাও! ওরা যেন কোন ভাবেই বুঝতে না পারে আমরা এক এবং আমাদের কাজ হচ্ছে ক্রিমিনালদের সব ইনফরমেশন সরকারের কাছে পৌছে দেওয়া।

অর্নিতা- হুম, আপনার কি মনে হয় কতটুকু আমরা এগুতে পারবো?

দিহান – আমি পুরোপুরি আশাবাদী। এখান থেকেই তুমি
জানে আলমের খোঁজ পেয়ে যাবে।
শুনো কাল সকাল বেলায় আমার সঙ্গে শহর থেকে একটু দূরেই একটি গ্রাম আছে সেখানে আমার সাথে দেখা করতে আসবে।
সেখানে আমি তোমাকে সব কিছু খুলে বলবো।
কি করে কি করতে হবে।

অর্নিতা- আচ্ছা। তাহলে কাল দেখা হচ্ছে আবারো।

দিহান- হুম, এখন চলো। বেশিক্ষণ সময় হলে ওরা আমাকে খুজতে শুরু করবে।

চলবে।