নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৬৬

0
1206

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৬ {ধামাকা🔥}

আব্রাহাম সোজা তনয়াকে ফোন দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যালো, কিছু জানতে পারলে?

তনয়া;; স্যার আমি গত প্রায় কয়েক বছরের প্রায় সব কেস চেক করেছি। সব ফাইল চেক করেছি। তা কোন এক্সিডেন্ট হোক বা মিসিং এর। তেমন বেশি কিছু তো পাই নি তবে হ্যাঁ একটা ব্যাপারে বেশ খটলা লাগলো।

আব্রাহাম;; কি?

তনয়া;; একটা মেয়ের মিসিং কেস এখানে ফাইল করা হয়েছিলো প্রায় এক বছর আর কয়েক মাস আগে। ধরতে গেলে দুই বছরই। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে এটা যে মেয়েটাকে কেউ খুঁজতে আসে নি বা পরে এই মেয়ের বিষয়ে কোন খবরাখবর রাখে নি। পরবর্তীতে আর না পেরে বাধ্য হয়েই এই কেসটা ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে।

আব্রাহাম;; মেয়ের নাম কি?

তনয়া;; নাম? নাম? ওহ হ্যাঁ মেয়ের নাম প্রীতি।

আব্রাহাম;; প্রীতি??

তনয়া;; জ্বি স্যার প্রীতি নাম ওর৷

আব্রাহাম;; ওকে।


এই কথা বলেই আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। মাথায় হাজারো চিন্তা ভর করে বসেছে৷ হাজারো কথা মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। আব্রাহাম তনয়া কে দিয়ে পুলিশ স্টেশনে সব এক্সিডেন্ট & মিসিং কেস গুলো চেক করাচ্ছিলো। তনয়াকে যেনো পুলিশ তার কাজে বাধা না দেয় তার জন্য তনয়ার কাছে পারমিশন টাও ছিলো। আর চেক করানোর কারণ হচ্ছে যে আব্রাহামের যখন এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তখন কেস কতটুকু এগিয়েছিলো বা কীভাবে ক্লোজ হয়েছে তা জানা। যেই কারণে এইসব করা তা তো জানা যায় নি তবে হ্যাঁ উল্টো আরেক প্রশঙ্গ উঠে এসছে। এই প্রীতির কথা তো আব্রাহামের মাথা থেকে পুরো পুরি বেরই হয়ে গিয়েছিলো। প্রীতি নামে যে কোন মেয়ে আছে তাও প্রায় ভুলে গিয়েছিলো আব্রাহাম। সে ভাবতেও পারে নি যে এখানে প্রীতির এমন কোন কেস তার কাছে পরবে। আর মিসিং মানে? প্রীতি মিসিং কীভবে আর কবে হলো। আব্রাহাম এগুলো ভেবে ভেবেই গাড়ি ড্রাইভ করছে এখন বেশ রাত হয়ে গেছে তাই রাস্তা ঘাটে মানুষজনও কম। আব্রাহাম তার এক হাত মুখের কাছে রেখে আরেক হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এক ফাকা রাস্তা ক্রস করে যেতেই কিছু একটা বাধে আব্রাহামের চোখে। একজন লোক কালো চাদরের মতো কিছু একটা পরে মনে হলো দ্রুত আব্রাহামের গাড়ির সামনে দিয়ে চলে গেলো। আব্রাহাম গাড়ির ব্রেক কষে কপাল কুচকে তাকায়। লোকটার অবয়ব দেখে আব্রাহামের তাকে বেশ চেনা জানা মনে হলো। আর লোকটাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে খুব তাড়ায় আছে। আর মূল কথা হচ্ছে আব্রাহাম এখন আইরাতের অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। মানে সেই রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলো আর কি। সেই চাদরে ঢাকা লোকটিও ঠিক চোরের মতো করে এখান দিয়ে চলে গেলো। এমনি আইরাতের ওপর বিপদের সীমা নেই তারওপর আবার এই অজানা অচেনা লোকটা। আব্রাহামের বেশ সন্দেহ লাগলো। সে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে লোকটার পিছু নিলো। লোকটা শুধু অলিগলিতে যাচ্ছে। আর রাস্তা গুলো বেশ অন্ধকার। একটা সময় হুট করেই কিছু একটার সাথে বেধে লোকটার ওপর থেকে কালো চাদর টা সরে যায়। সে তার পেছনে ঘুড়ে। আর আব্রাহাম সেই লোকটার চেহারা দেখে বেশ অবাক হয়। লোকটা আর কেউ না রায়হান নিজে। আব্রাহাম বহু বছর পর রায়হান কে দেখছে। এভাবে হুট করেই এমন একটা জায়গায় সে রায়হান কে দেখবে তা আব্রাহাম ভাবে নি। তবে এবার রায়হান উল্টো ঘুড়ে দ্রুত চলে যায়। আব্রাহাম নিজেও দ্রুত পায়ে রায়হানের পিছু পিছু যায়। রায়হান যাতে আব্রাহাম কে দেখতে না পারে আব্রাহামের সেইদিকেও খেয়াল রাখতে হচ্ছে। রায়হান যেতে যেতেই একটা মোড় ঘুড়ে। তার কিছুক্ষন পরেই আব্রাহামও তার পিছু যায় কিন্তু দুভার্গ্যবশত আব্রাহাম রায়হান কে হারিয়ে ফেলে। রায়হান হুট করেই গুম হয়ে যায়। আব্রাহাম তাকে সবদিকে খুঁজতে থাকে৷ আশে পাশের সব জায়গাতেই খুঁজে কিন্তু রায়হান হঠাৎ করেই নাই হয়ে যায়। আব্রাহামের রাগ উঠে গেলো। একটুর জন্য, একটুর জন্য সে রায়হান কে হারিয়ে ফেললো। আব্রাহাম আবার এসে নিজের গাড়িতে বসে পরে। রাত অনেক, তাই এখন তো অবশ্যই আইরাতের অফিসে কারো থাকার কথা না। আব্রাহাম একবার অফিসের দিকে তাকিয়ে চলে যায়।



রাশেদ;; কিন্তু ম্যাম বোমা? বোমা কোথা থেকে আসবে? কখন করলো এইসব?

আইরাত;; জানি না আমি কিচ্ছু জানি না। তবে আমি এই টুকু সিওর যে যাই হচ্ছে, যেকিছুই হচ্ছে সবকিছুর পেছনে ওই রায়হানেরই হাত আছে। আই এম ড্যাম সিওর। কারণ রায়হান জেল থেকে পালিয়ে গিয়ে তো আর হাতে চুড়ি পরে বসে থাকবে না। সেইদিন আমার ওপর গুলি চালানো থেকে শুরু করে কাল আমার গাড়িতে বোমা ফিট করা পর্যন্ত সবকিছুতেই কোন না কোন ভাবে ওই রায়হানই আছে। ভাগ্যিস আব্রাহাম ছিলো। আমি বেচে গেছি।

রাশেদ;; ম্যাম এইটুকু একদম চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে স্যার থাকতে আপনার কিছুই হবে না। কিন্তু এভাবে রিস্কের ওপর তো আর জীবন চলে না তাই না।

আইরাত;; দেখি কি করা যায়। তনয়া কোথায় ও এসেছে?

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম,,

আইরাত;; ওকে আমার কেবিনে পাঠাও।

রাশেদ;; জ্বি।

এই বলেই রাশেদ চলে গেলো তার কিছুক্ষন পর আইরাতের কেবিনে তনয়া আসে।

তনয়া;; বেবি আমাকে ডেকেছিস?

আইরাত;; ভেতরে আয় (গম্ভীর মুখে)

তনয়া;; এলাম, কিন্তু হয়েছে কি?

আইরাত;; এই দুই-তিনদিন তোর এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ ছিলো শুনি?

আইরাতের কথায় তনয়া কিছুটা আটকে যায়।

তনয়া;; না মানে আসলে এমনি কিছু কাজ ছিলো আরকি?

আইরাত;; কাল রাত কোথায় ছিলি?

তনয়া;; হ্যাঁ??

আইরাত;; হ্যাঁ!! কোথায় ছিলি?

তনয়া;; আরে ছিলাম কিছু কাজে। তুই বল না কিছু বলবি আমায়?

আইরাত;; কিছু জনিস না তুই?

তনয়া;; না কেনো 🙄?

আইরাত;; রায়হান জেল থেকে পালিয়েছে + আমার ওপর গুলি চালিয়েছে + আমার গাড়িতে বোমা ফীট করেছিলো। ভাগ্য ভালো বেচে আছি।

তনয়া;; হুয়াট?

আইরাত;; ইয়েস।

তনয়া;; কীভাবে কি?

আইরাত;; জানিস মাঝে মাঝে ভয় লাগে। আমিও মানুষ, খুব তো স্ট্রোং থাকার ভং ধরি কিন্তু মঝে মাঝে আমারও ভয় হয়। প্লিজ অনেক হয়েছে আর চাই না আমি। আমার মাঝে আর সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আমি এখন একটু হ্যাপি হতে চাই একটু। আমার আব্রাহামের সাথে।

তনয়া;; সব ঠিক হয়ে যাবে,, চিন্তা করিস না। সব এলোমেলো হয়ে গেলেই যা তা শেষ বা শুরুর কোন পথ নেই তা একদমই না। আর এখানে! এখানে তো কিছুই শেষ হয় নি। সব ঠিকই আছে। তুই শুধু আরো একটু ধৈর্য ধর, ভরসা রাখ, আশা ছাড়িস না ব্যাস। (আইরাতের হাতের ওপর হাত রেখে)

আইরাত তনয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। তারপর আরো বেশ কিছুক্ষন সময় তনয়া আইরাতের কেবিনে থেকে বের হয়ে পরে।

তনয়ার চলে যেতেই আইরাত আব্রাহাম কে ফোন করে। আব্রাহাম প্রথম বারেই তা রিসিভ করে নেয়।

আইরাত;; হ্যালো..!

আব্রাহাম ফোনের ওপর পাশ থেকে আইরাতের মিষ্টি কন্ঠস্বর টা পেয়েই তার চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম কিছু বলছে না দেখে আইরাত আবার বলে ওঠে…

আইরাত;; হ্যালো আব্রাহাম! আমি জানি আপনি শুনছেন সবই।

আব্রাহাম;; হুমম।

আইরাত;; কোথায় আপনি?

আব্রাহাম;; বাসায় আছি।

আইরাত;; কি করছেন?

আব্রাহাম;; ভাবছি।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; সবচেয়ে বেশি ঘৃণিত ব্যাক্তি কে তোমার কাছে?

আইরাত;; বলাটা কি জরুরি?

আব্রাহাম;; হয়তো।

আইরাত;; যদি বলি আমি নিজে??

আব্রাহাম;; আমি মানবো না।

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; তোমার নিজেরই কোন অধিকার নেই নিজেকে ঘৃণা করার।

আইরাত;; অধিকার খাটানোর মানুষ টা কাছেও থেকে বেশ দূরে যে আমার।

আব্রাহাম;; প্রীতির সাথে লাস্ট কবে কথা হয়েছিলো তোমার??

আইরাত;; প্রীতি?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ মনে আছে??

আইরাত;; হ্যাঁ থাকবে আবার না,, ও তো আপনার পেছনেই ঘুরঘুর করতো। যত্তসব লুচ্চি মাইয়া।

আব্রাহাম;; ও মিসিং। ইন ফ্যাক্ট বছরের ওপরে হবে সে মিসিং। কোন খবরই নেই।

আইরাত;; ওহহহ,,

আব্রাহাম;; রায়হানের কোন খবর পেলে?

আইরাত;; আপাতত না।

আব্রাহাম;; ওহহ,, আচ্ছা। তো! কি করছো?

আইরাত;; এইতো বসে বসে ফাইল চেক করছি।

আব্রাহাম;; করো আর হ্যাঁ ওই আহসানের কাছ থেকে দূরে থেকো প্লিজ।

আইরাত;; কেনো?

আব্রাহাম;; পছন্দ না আমার ওকে।

আইরাত;; ওহ হো, আমার জামাইজানের জ্বলছে বুঝি?

আব্রাহাম;; মোটেও না।

আইরাত;; হাহাহাহাহা, আচ্ছা বুঝলাম। এবার রাখি।

আব্রাহাম;; বায়।

এই বলেই আব্রাহাম ফোনটা কেটে দেয়। সে করিডরে একটা বেতের চেয়ারে বসে রয়েছে। পরণে এশ কালারের টি-শার্ট, চুল গুলো বেশ এলোমেলো হয়ে কপালে পরে রয়েছে। প্রচুর খোলা বাতাস রয়েছে, ছোট ছোট বেশ কিছু গাছপালা রয়েছে। পরিবেশ টা সুন্দর। আব্রাহামের আজ কেমন যেনো মনে হচ্ছে। তার কাল রাতের রায়হানের কথা মনে পরছে। রায়হান লুকিয়ে ছিলো তা মানা যায়,, গা ঢাকা দিয়ে আছে মানা যায় কেননা সে জেল পলাতক আসামী। কিন্তু সে আইরাতের অফিসের নিচে কি করছিলো, অবশ্যই তাহলে আইরাতের কোন না কোন ক্ষতি করার জন্যই এসেছিলো। আব্রাহাম বসে বসে এগুলোই ভাবছিলো তখনই হঠাৎ এক আননোন নাম্বার থেকে আব্রাহামের কাছে একটা ফোন আসে। আর ফোনের ওপর পাশে থাকা ব্যাক্তিটির কন্ঠস্বর শুনে মূহুর্তেই যেনো আব্রাহামের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়।

রায়হান;; কেমন আছিস ভাই?

আব্রাহাম;; নির্লজ্জের মতো কেনো ফোন করেছিস?

রায়হান;; হায়াত অনেক লম্বা রে তোর। তাই তো এতো উঁচু থেকে পরে গিয়েও বেচে ফিরেছিস।

আব্রাহাম;; কিন্তু এখন হয়তো তুই আর বাচবি না।

রায়হান;; কে মারবে আমাকে? তুই?

আব্রাহাম;; তোকে মেরে আমি আমার হাত অপবিত্র করতে চাই না।

রায়হান;; আর আমি যদি তোর আইরাতকে মেরে দেই তো?

আব্রাহাম;; রায়হান নিজের লিমিটে থাক,৷ আইরাতের ওপর একটা আচড় অব্দি এলেও আমি তোকে জেন্ত পুতে দিবো।

রায়হান;; তাই না? আচ্ছা। আসলে কি এটা মানোটই হবে যে তোরা দুইজন দুইজনের জন্য অনেক বেশিই লাকি। নয়তো তুই চলে যাওয়ার পর আমি আইরাতের কাছে গিয়েছিলাম ওকে সুন্দর করে বুঝিয়ে নিজের করে নিতে কিন্তু না। তোর বউ তো এর জন্যই ত্যাড়া। আমার কাছ থেকে পাখির মতো পালিয়ে গেলো। আমাকে শুট অব্দি করলো। তারপর আমাকে জেলের পেছনে বন্দি করে দিলো। বিশ্বাস কর ভাই তারপর আইরাতকে মেরে ফেলার কতো কিছুই না করেছি আমি। কিন্তু মাইয়া হেব্বি স্মার্ট।

আব্রাহাম;; কাল রাত চোরের মতো আইরাতের অফিসের নিচে কি করছিলি?

রায়হান;; ওহহহ তো ওইটা তুই ছিলি? আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছিলো যে কেউ আমাকে ফলো করছে বা আমার পেছনে কেউ আছে। তাহলে সেটা তুই ছিলি।

আব্রাহাম;; কথা না ঘুড়িয়ে যা জিজ্ঞেস করছি তাই বল।

রায়হান;; আইরাত কে দেখতে গিয়েছিলাম। মেয়েটার মাঝে এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে।

আব্রাহাম;; অন্যের জিনিসে নজর দেওয়ার স্বভাব বন্ধ কর। যদিও তোর এই স্বভাব পুরানা।

রায়হান;; আমার বাড়ির গ্যারাজে এসে পরিস। বেশ কিছু সত্য বলার আছে তোকে। আর কতোদিন আবছা ঘোরের মাঝে থাকবি বল। সত্যি জানিস তুই কিন্তু অর্ধেক, আয় দেখা করি। কথা মিটমাট করি।

আব্রাহাম;; নিজের মরণ কে নিজে আমন্ত্রণ জানাস না রায়হান।

রায়হান;; আগে তুই আয় তো,, দেখি কে কাকে মারে।

আব্রাহাম ফোন টা কেটে দেয়। রাগ যখন আউট অফ কন্ট্রোল চলে যায় তখন মানুষ স্বাভাবিকের থেকে আরো বেশ চুপচাপ থাকে। আব্রাহামের ক্ষেত্রেও তাই। আব্রাহাম এখন একদম চুপ করে বসে আছে। রাগের সীমা একদম অতিক্রম করে গেছে। যাই হোক আব্রাহাম উঠে পরে। রুমে এসে নিজের ব্লেক+ব্রাউন কালারের জেকেট টা নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। এক্ষেত্রে আব্রাহাম একটু চালাকি করে। নিজের জেকেটের বাটনের সাথে একটা ছোট্ট ক্যামেরা ফিট করে নেয় অর্থাৎ বাটন ক্যামেরা। এটা করার কারণ হলো রায়হান সেখানে যাই করবে বা যাই হবে সেগুলো রেকোর্ড হয়ে যাবে। আব্রাহাম তার কাবার্ড থেকে রিভলবার টা হাতে নিয়ে নেয়,, বুলেট”স একদম লোড করা তাতে। তবে পরক্ষণেই আবার কি যেনো একটা ভেবে আব্রাহাম রিভলবার টা কাবার্ডের ভেতরেই আবার ছুড়ে মারে। নিজের সাথে কিচ্ছু নেই না। সোজা বাইরে বের হয়ে গাড়িতে করে চলে যায়। গাড়িতে বসে আব্রাহাম তার কানে এয়ার পড লাগিয়ে নেয়। তনয়ার সাথে কানেক্ট করে নেয়।

তনয়া;; হ্যালো

আব্রাহাম;; হ্যালো তনয়া!

তনয়া কিছুটা দূরে চলে যায় কথা বলার জন্য।

তনয়া;; জ্বি স্যার।

আব্রাহাম;; লিসেন মি কেয়ারফুলি,, আমি রায়হানের কাছে যাচ্ছি ওকে, আর হ্যাঁ আমার সাথে ক্যামেরাও আছে। আর এই ক্যামেরার কানেকশন তোমার ফোনের সাথেই করা। মনে আছে?

তনয়া;; জ্বি স্যার আছে।

আব্রাহাম;; আমি সেখানে গেলে সেখানকার সব কিছুই এখানে রেকোর্ড হবে। যা তোমার ফোনে দেখা যাবে। ওটাকে সেভাবেই রেখে দিবে,, আমি যখন তোমাকে কিছু করতে বলবো দ্যান কিছু করবে বুঝলে।

তনয়া;; ওকে।

এই বলেই আব্রাহাম কল কেটে দেয়। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট সময় পর আব্রাহাম রায়হানের কাছে এসে পরে। এইতো এটাই রায়হানের ২ নাম্বার বাড়ি। আর এটার শেষের দিকেই একটা গ্যারাজ আছে। বেশ বড়ো সড়ো। আব্রাহাম এসে দেখে বাড়ির সামনে না আছে কোন গার্ড আর না ই আছে অন্য কোন কিছু। আব্রাহাম বাড়ির একদম পেছনে গিয়েই দেখে গ্যারাজ টা একদম খোলা। সে ভেতরে চলে যায়। বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘর টা। ঘরটার ঠিক মাঝ বরাবর জ্বলছে একটা হলুদ কালারের বাতি। পাশেই ওপর থেকে বেশ কিছু ইলেকট্রিকের তার ঝুলে আছে। সেগুলো থেকে কিছুটা আগুনের ফুলকির মতো বের হচ্ছে। আব্রাহাম গিয়ে একদম ঘরের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে পরে। ওপরে কিছুর কিচির মিচির আওয়াজ শুনে আব্রাহাম ওপরের দিকে তাকায় দেখে যে একটা লোহার ফ্যান বেশ জোরে জোরে দুলছে। যেনো এই নিচে পরে গেলো এমন। বেশ বিরক্তিকর একটা অবস্থা। আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে তার পেছনের ডাকে সে থেমে যায়।

রায়হান;; আব্রাহাম!! কোথায় যাচ্ছিস ভাই। আমার সাথে দেখা না করেই চলে যাচ্ছিস?

আব্রাহাম তার পেছন ঘুড়ে তাকায়। দেখে রায়হান দাঁড়িয়ে আছে। এতো বছর জেলে থাকার ফল বা খাতির দারি তার চোখে মুখে স্পষ্ট। আগে থেকে বেশ কালো হয়ে গেছে। চোখের নিচে গাঢ় কালো দাগ। মুখে বেশ কিছু স্পর্ট পরেছে। চুল গুলো উষ্কখুষ্ক। তবে আগের সেই শয়তানি হাসি মুখে আছেই।

রায়হান;; দেখ তোর বউ আমার কি হাল করে দিয়েছে। পাগল কুকুর বানিয়ে দিয়েছে আমাকে ওর পেছনে।

আব্রাহাম;; কি বলবি জলদি বল।

রায়হান;; আগে তুই বল যে তুই আইরাত কে কতো টুকু ভালোবাসিস?

আব্রাহাম;; হাহ, সেই কৈফিয়ত অবশ্যই আমি তোকে দিবো না।

রায়হান;; বিশ্বাস আছে আইরাতের ওপর?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ আছে, আইরাত যদি আমাকে নিজ হাতে মেরে রেখেও যায় তবুও আমি ওকেই ভালোবাসি, বাসবো আর বেসেই যাবো।

রায়হান;; তাহলে ওর সাথে এতো রাগ আর অভিমান কেনো?

আব্রাহাম;; না রাগ আর না ই অভিমান। শুধু কিছু এমন ঘটনা জীবনে ঘটেছে যার ফলে আমাকে তার কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে।

রায়হান;; মনে পরে কি সেইদিন সেই রাতের কথা? যখন তোর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো?!

আব্রাহাম;; সেই অভিশপ্ত ঘটনাই আমার জীবনের চেহারা পুরো পালটে দিয়েছে,, আমি কি করে ভুলি তা।

রায়হান;; আইরাত তোকে মেরেছে??

আব্রাহাম;; হয়তো না হয়তো হ্যাঁ,, তবে আমি এই টুকু জানি যে এই সবগুলোর পেছনে কেউ না কেউ তো অবশ্যই আছে। আর সত্যি বলতে আমার পুরো সন্দেহ তোর ওপরে।

রায়হান;; ঠিক ধরেছিস। আমিই তোকে মেরেছি।

আব্রাহাম;;

রায়হান;; লেট মি এক্সপ্লেইন,, আমি আইরাতকে ভালোবাসতাম আর এখনো বাসি বুঝলি। বাট কি করবো বল ওর ওপরে তো তোর নজর ছিলো। আর হ্যাঁ কে যেনো ঠিকই বলেছে যে “” মেয়েদের জন্য ঘর যেমন জুড়ে আসে ঠিক তেমনই মেয়েদের জন্য ঘর তেমন বরবাদও হয়ে যায়””। আজ পর্যন্ত দুনিয়াতে যতো যুদ্ধ-বিবাধ ই হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই মেয়ে জনিত। মেয়েরা খুব বেশি অদ্ভুত হয়। তাই তো দেখ না আমার অবস্থা এখন এমন। এই আইরাতকে পাওয়ার জন্য কম কিছু করেছি আমি?? কত্তো কিছু না করেছি। এমনকি তোকেও খুন করতে দুইবার ভাবি নি। কিন্তু ফলাফল কি হলো দেখ শূন্য। পাই নি আমি ওকে। তাই ভাবলাম যে যখন আইরাতকে পাবোই না তখন ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ মেরে ফেলি। হ্যাঁ আমিই মেরেছি তোকে, আর আইরাতকে মারার চেষ্টা করেছি। সেইদিন পার্কে গুলি, আইরাতের গাড়িতে বোমা আমার লোকেরাই লাগিয়েছে। যখন আইরাতকে আমি পাবোই না তখন ওকে কেউ পাবে না। আর শোন, প্রীতিও কিন্তু কম ভালোবাসতো না তোকে। কিন্তু মেয়েটা আর নেই। প্রেমের জন্য তাকেও মরতে হয়েছে। তাকেও আর কেউ না এই আমিই মেরেছি। নাও কাম টু দি মেইন পয়েন্ট। তুই যখন সেইদিন রাতে আসছিলো ওই পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে। আমি আগে থেকেই তোর গাড়ির ব্রেক ফেইল করে রেখেছিলাম। তোর গাড়ির এক্সিডেন্টও আমিই করিয়েছিলাম। তারপর তুই কিছুটা আঘাত পেলি বাইরে বের হয়ে পরলি গাড়ি থেকে। আমি ভেবেছি তুই মরে গেছিস কিন্তু না তোর হোস তখনও ছিলো। তখন তোর মতে তোর কাছে আইরাত যায় তাই না??? আসলে না সেটা আইরাত ছিলো না, সেটা প্রীতি ছিলো, প্রীতি। এখন প্রশ্ন হলো প্রীতি কীভাবে আইরাতের মতো দেখতে হলো। এটা 2021 এখন একজনের চেহারা, আরেকজনের মতো করে করতে বেশিকিছু করতে হয় না। আর্টিফ্যাশিয়াল ওয়ার্ক্স & সাম ট্যাম্পোরারি কসমেটিকস সার্জারি ব্যাস। প্রীতি কে তোর আইরাতের মতো করে দিতে বেশি সময় লাগে নি। তবে হ্যাঁ আমার জন্য একটা প্লাস পয়েট ছিলো। তা হচ্ছে এই যে সেই রাস্তা টা একদমই ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিলো তার ওপর তুই তোর মাথার পেছনে আঘাত পেয়েছিলি। যার ফলে তুই সব ঝাপসা দেখেছিস। সেইভাবেই আইরাতকে দেখেছিস তাও আবার এই রূপে। তোরই খুনির রূপে। আইরাত ওরফে প্রীতি যখন সেখান থেকে চলে আসতে নিয়েছিলো তখনও তুই সহজে বিশ্বাস করতে চাস নি, তারপর তুই ভালোভাবে প্রীতির মুখ দেখিস যা ৯৯.৯% আইরাতের মতো ছিলো। তুই মরলি না উঠে দাড়ালি। আর জানিস তো তখন কি হলো আমি রড নিয়ে তোর মাথার পেছনে আঘাত করি। ব্যাস তুই স্যান্সলেস। তোকে তোর গাড়িতেই তুলি আর খাদ থেকে আমি এই যে নিজ হাতে তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেই। কিন্তু প্রীতি বারাবারি করছিলো বেশ। নিজের জীবন হারানোর জন্য দায়ী একমাত্র সে। তোকে মেরেছি তো তাই ওর অনেক খারাপ লাগছিলো। আমার কলার খামছে ধরেছিলো আমাকে গালিও দিয়েছে। তোকে চাইতো ও। এখন আমি কি করে প্রীতি কে কষ্ট দিতে পারি বল বিকজ প্রীতি আমার অনেক হেল্প করেছে। ইন ফ্যাক্ট সে না থাকলে তোকে আর আইরাতকে আমি এতো বছর দূরে রাখতেই পারতাম না। তাই ওকে এবার আমি একটু হেল্প করি। প্রীতি কেও আমি তোর পরে সেই খাদে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। ব্যাস, খাতাম কাহানী। কিন্তু দেখ তোর কৈ মাছের প্রাণ এখনো বেচেই আছিস। আর আইরাতের কাছেও পৌঁছে গেছিস। (রাগে দাত কটমট করে)

রায়হান আব্রাহাম কে সব খুলে বলে। আর সবকিছু শুনে যেনো আব্রাহামের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। তাহলে আইরাত কিছু না করেই দোষী। আইরাত তো এগুলোর কিছুই জানে না। আইরাত হয়তো ধারণাও করতে পারবে না যে তার পিঠ পিছেই কত্তো বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেছে। আব্রাহাম কেনো দূর ছিলো, কীভাবে ফিরে এলো আর গায়েবই বা কোথায় ছিলো আইরাত এগুলোর কিচ্ছু জানে না। কেউ একজন যে মিথ্যে আইরাত সেজে এসে তারই নাকের নিচ দিয়ে এত্তো বড়ো একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে তার একফোটা আন্দাজও আইরাতের নেই। না, আব্রাহাম যে একদম আইরাতকে নিজের খুনি হিসেবে ভেবে এসেছে তা না। আব্রাহাম দ্বিধায় ছিলো। কিন্তু এবার যেনো সব ক্লিয়ার তার কাছে। একদম পানির মতো পরিষ্কার সব। আব্রাহাম রায়হানের অগোচরেই তার জেকেটে থাকা বাটন ক্যামেরা টার একটা জায়গায় প্রেস করে। অর্থাৎ এতোক্ষন সবকিছুই রেকোর্ড হচ্ছিলো। আর ক্যামেরাতে প্রেস করার ফলে তা একটা এমএমএস হসেবে তনয়ার ফোনে চলে যায়। মেসেজের শব্দ পেয়ে তনয়া তা ওপেন করে। আর সবকিছু দেখে তনয়ার নিজেও মুখ একদম হা হয়ে যায়। তনয়া আর এক মূহুর্ত দেরি না করে সেই এমএমএস টা সোজা আইরাতকে সেন্ড করে দেয়। আইরাত তার ফোনে শব্দ পেয়ে তা ওপেন করে। দেখে একটা ভিডিও এসেছে। আইরাত ভিডিও ক্লিপ টা অন করে দেখতে থাকে।


রায়হান;; কি অবাক লাগছে? কিন্তু এটাই সত্যি। এটাই হয়েছে তোদের সাথে। আইরাত জানেই না যে তারই নকল ধরে তার সাথেই কেউ এমন টা করেছে। ওহহ হ্যাঁ আরেকটা খবর। খুব জলদি তোর আইরাত জেলে যাচ্ছে।

আব্রাহাম;; হুয়াট?

রায়হান;; হ্যাঁ ভাই। কেনো জানিস? কারণ আইরাতের নামে প্রচুর ব্লেক মানির ইলিগ্যাল কেস আছে। আইরাত তার বাড়িতে ইভেন অফিসেও অনেক ব্লেক মানি জড়ো করে রেখেছে। যেগুলো সরকার কতৃক নিষিদ্ধ। আর হ্যাঁ চিন্তা করিস না। সেগুলো ভুয়া, ফেইক। ভুল নিউজ কিন্তু সত্য। কেননা সেখানে টাকার মানে ব্লেক মানির হিসেবের যে ফাইল গুলো আছে সেগুলোর সবগুলোতেই আইরাতের সিগন্যাচার আছে।

আব্রাহাম;; আইরাত জেনে শুনে এমন কোন পেপারে সিগন্যাচার কখনোই করবে না।

রায়হান;; হ্যাঁ তা তো আমিও জানি আর জন্যই তো আমাকে উল্টো পথ বেছে নিতে হয়েছে। আমার যে ২-১ জন লোক আইরাতের পেছনে জাসুস হয়ে আছে,, তারাই আইরাতের সাইন কপি করে। কিন্তু আইরাত এতো বড়ো একজন বিজন্যাস ওম্যান। তার সিগন্যাচার তো আর এতো সহজে কপি করা যায় না তাই না। তাই একজন লোককে আমি আইরাতের অফিসে এস এ স্টাফ হিসেবে পাঠিয়েছি। আর আইরাত তো অনেক ব্যাস্ত মেয়ে। তার এতো সময় কই যে সবার বায়োডাটা নিয়ে ঘুড়বে। আর সেটাই আমার সুবিধা হয়েছে। স্টাফ টা মানে যে কিনা আমার লোক সে ফাইল গুলো কালেক্ট করে কোন না কোন কাজের ফলে। আর তখনই সেই ফাইল গুলো থেকে আইরাতের সিগন্যাচার কপি করে নেয়। এইতো হয়ে গেলো। এখন এই যে এই ব্লেক মানির সব পেপারস আছে সেখানেও আইরাতের সাইন মানে কপি করা আর কি। তবে সবাই তো এই ভাববে এখন যে আইরাত ব্লেক মানির সাথে জড়িয়ে আছে। এতোক্ষনে পুলিশের কাছে এই খবর চলেও গিয়েছে। আর কিছু সময়ের মাঝে তারা আইরাতকে এরেস্ট করেও নিয়ে যাবে। নে সব হয়ে গেলো। মরার আগে তোকে সব সত্য আমি জানিয়েই দিলাম। এবার বল আমার প্ল্যান টা কেমন হয়েছে?? একদম মাস্টারপিস না??

রায়হানের কথা শুনে আব্রাহাম বেশ তাচ্ছিল্যের একটা হাসি হেসে দেয়। যা দেখে রায়হানের রাগ উঠে যায়।

আব্রাহাম;; ব্লাডি বুলশিট!! জানিস তো ক্রিমিনাল যতোই চালাক হোক না কেনো এমন কিছু সে রেখেই যাবে যা তাকে ফাসানোর জন্য যথেষ্ট। অতি চালাকের গলায় দড়ি।

রায়হান;; মানে??

আব্রাহাম;; মানে এই যে আমার সাথে ক্যামেরা ছিলো,, যা বলেছিস তুই যা যা করেছিস সব ক্যামেরা তে বন্দি হয়ে গেছে। আর এর থেকে ভালো আর কি হয় যে ক্রিমিনাল যখন নিজের মুখেই নিজের সব কুকীর্তি স্বীকার করে।

রায়হান;; কিহ? ক্যামেরা? ক্যামেরা কোথায় আমি তা ভেঙে ফেলবো।

আব্রাহাম;; কোন লাভ নেই। সব রেকোর্ড হয়ে গেছে। আর এতক্ষণে তা আমি একজন কে পাঠিয়েও দিয়েছি। কত্তো কিছু করলি তুই কত্তো কিছু। কতো প্ল্যান তোর। কিন্তু দেখ আমাকে শুধু একটা ক্যামেরা আনা ছাড়া আর কিছুই করতে হয় নি। সব একা একাই হয়ে গেছে। রায়হান ব্যাটা ফেসে তো তুই গেছিস।


আব্রাহামের কথায় রায়হানের বেশ রাগ উঠে পরে। সে চিল্লিয়ে তার পাশে থাকা একটা বড়ো লোহার রড নিয়ে আব্রাহামের দিকে ধেয়ে আসে। কিন্তু আব্রাহাম তাকে তার হাত দিয়ে আটকিয়ে দেয়। রায়হানের হাত শক্ত করে ধরে পেচিয়ে তাকে উল্টিয়ে দেয়। রায়হানের এক হাত পেছনের দিকে মুচড়ে ধরে। এতে রায়হানের হাতে বেশ টান লেগে তার হাত থেকে লোহার রড টা পরে যেতে ধরে। আব্রাহাম রড টা তার হাতে নিয়ে বিনা বাক্যে সোজা রায়হানের পিঠ পিছে মেরে দেয়। রড টা রায়হানের পিঠের মাঝে দিয়ে ঢুকে একদম সামনে দিয়ে বের হয়ে পরেছে। মূহুর্তেই জায়গা টা একদম শান্ত হয়ে গেছে। রায়হান না পারছে কথা বলতে না পারছে অন্য কিছু করতে, গলগল করে রক্ত ঝরে যাচ্ছে। রায়হান খুব কষ্টে তার মাথা ঘুড়িয়ে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহামকে দেখে তার আত্না আতকে উঠে। চোখে যেনো তার রক্ত জমে গেছে। রাগে মুখ টা কাপছে। মাথার রগ গুলো সব ফুলে গিয়েছে তার। আব্রাহাম রায়হান কে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে সোজা বুক বরাবর একটা লাথি মেরে দেয়। যার ফলে রড টা আরো বেশি করে রায়হানের মাঝে ঢুকে পরে। এবার যেনো রায়হানের মুখ দিয়েও রক্তের ধারা বের হয়ে পরে। আব্রাহাম পাশে তাকিয়ে দেখে এক ধারালো চাকু পরে আছে। আব্রাহাম তা সাথে সাথে হাতে নিয়ে বাতাসের গতিতে রায়হানের কাছে চলে যায়। রায়হান দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে একটা লোহার চেয়ারে মরার মতো করে পরে ছিলো। আব্রাহাম তার এক পা রায়হানের চেয়ারের হাতলি তে রেখে দিয়ে তার বাম হাত দিয়ে রায়হানের গলা চেপে ধরে। আব্রাহাম একটা কথাও বলছে না সে শুধু তার মতো করে রাগ মিটাচ্ছে। আব্রাহাম ছুরি দিয়ে রায়হানের গাল বরাবর দেয় এক ঘা বসিয়ে। এতে রায়হানের গালের ভেতর দিয়ে ছুরি টা একদম তার মুখে মাঝে চলে যায়। রায়হান কিছু বলতে পারছে না। শুধু যন্ত্রণায় ছটফট করে যাচ্ছে। আব্রাহাম ছুরি টা গাল থেকে তুলে আবার সোজা তার গলার শ্বাসনালিতে বসিয়ে দেয়। এতে যেনো রায়হানের শ্বাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। রায়হানের উভয় হাতের রগ গুলোও আব্রাহাম কেটে দিয়েছে। অর্থাৎ রায়হানের শরীর রক্তে একদম ছেয়ে গেছে। অবশেষে আব্রাহাম রায়হানের গলাতে একদম ছুরি দিয়ে একটা টান দিয়ে দেয়। রায়হান শেষ, এক ফোটা শক্তিও আর বাকি নেই। তবে পুরো জীবন যায় নি তার। এবার আব্রাহাম ঠিক একটা সাইকোর মতো করে রুমের আশে পাশে তাকাতাকি করতে থাকে। হয়তো সে খুজছে যে এখন রায়হান কে আর কীভাবে যন্ত্রণা দেওয়া যায়। আব্রাহাম পাগলের মতো করে খুজছে। অবশেষে আব্রাহাম দেখতে পেলো যে গ্যারাজেই বেশ বড়ো বড়ো পানির কিছু ড্রাম রয়েছে। আব্রাহাম সেগুলো সব নিয়ে আসে। এক এক করে ড্রাম থেকে সব পানি রায়হানের ওপরে ঢালতে থাকে। রক্ত আর পানি মিশে একাকার হয়ে গেছে। প্রায় তিন ড্রাম পানি আব্রাহাম রায়হানের ওপর ঢালে। তারপর আব্রাহাম সোজা সেই ইলেকট্রিক তারের কাছে চলে যায়। খুব সাবধানে তা নিয়ে এসে রায়হানের সামনে দাঁড়ায়। রায়হান আধো আধো চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখতে খুব বিভৎস লাগছে তাকে। গলা, চেহারা, শরীর একদম ক্ষত-বিক্ষত। এমনকি শরীরের ঠিক মাঝ বরাবর লোহার রডটা বিধেই আছে, তার ওপর পানি দিয়ে একদম ভেজা। আব্রাহাম এসে রায়হানের দিকে তাকিয়ে আছে। রায়হান যে আব্রাহাম কে মারার জন্য এতো প্ল্যানিং করেছে তার জন্য আব্রাহামের বিন্দুমাত্র চিন্তা বা রাগ নেই। রায়হান আইরাতকে কেড়ে নিতে চেয়েছে আব্রাহামের কাছ থেকে এটাই যেনো আব্রাহাম কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিচ্ছে। আব্রাহাম রায়হানের দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথাই বলে…..

আব্রাহাম;; হ্যাপি জার্নি সৎ ভাই…!!

এই বলেই আব্রাহাম তার হাত থেকে ইলেকট্রিক ওয়ার টা রায়হানের গায়ের ওপর ছুড়ে মারে। ব্যাস, রায়হান যে ঠিক কীভাবে ছটফট করছে তা বলার বাইরে। একে তো রায়হানের ওপরে পানি আর তার ওপর কারেন্ট। ইলেকট্রিক শক খুব ভাজে ভাবে লাগছে রায়হান কে। রায়হান তার চোখ গুলো উল্টিয়ে দিয়েছে। এভাবেই কাতরাতে কাতরাতে রায়হান মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। আর আব্রাহাম তার জেকেটের কলার ঠিক করতে করতে গ্যারাজের বাইরে এসে পরে যেনো কিছুই হয় নি।

অন্যদিকে ক্যামেরা তে শুধু আব্রাহাম কে মারার কথা রেকোর্ড হয়েছে। এই ব্লেক মানির কথা রেকোর্ড হয় নি। আইরাত তার চোখ গুলো বড়ো বড়ো করে দিয়ে তার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। সে এতো টাই অবাক যে আশে পাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তারও খেয়াল নেই তার। আইরাতের চোখ থেকে টপ করে পানি গড়িয়ে পরে। আইরাত তার হাতে ফোন টা নিয়ে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে আছে। রায়হান & প্রীতি যে এমন কিছু করেছে তার কল্পনা মাত্র আইরাতের ছিলো না। আইরাত নিজের হিতাহিত জ্ঞ্যান শূন্য হয়ে গেছে। তখনই কিছুটা দ্রুত বেগে আইরাতের কেবিনে কয়েকজন পুলিশ অফিসার আসে। আইরাত তাদের এভাবে এখানে দেখে অবাক হয় না। কেননা যে ঝটকা আইরাত খেয়েছে তার কাছে এটা কিছুই না।

অফিসার;; মিসেস. আইরাত আপনাকে একটু এই সময়ে আমাদের সাথে যেতে হবে।

তখনই আইরাতের কেবিনে রাশেদ আসে। সে পুলিশ কে অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে আইরাত তাকে থামিয়ে দেয়।

অফিসার;; দেখুন মিসেস. আইরাত। আমরা কিছু ব্লেক মানির পেপার্সের ওপরে আপনার সাইন পেয়েছি যেগুলো ইলিগ্যাল। তাই এখন আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।

আইরাত;; চলুন।

আইরাতের এখন কথা কাটাকাটি করার মতো মেজাজা একদমই নেই। তাই অফিসার আইরাতকে যেভাবে নিয়ে গেলো আইরাতও সেভাবেই চলে গেলো। তবে ওদিকে তো আব্রাহামের চিন্তার শেষ নেই। যাই হোক সব পরে, কিন্তু এই মূহুর্তে তাকে আগে আইরাতের সাথে দেখা করতে হবে। আব্রাহাম গাড়ি হাওয়ার বেগে চালিয়ে নিয়ে গিয়ে সোজা আইরাতের অফিসে চলে যায়। আব্রাহাম গাড়ির দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে অফিসের ভেতরে চলে যায়। গিয়েই দেখে রাশেদ, অয়ন, আহসান সহ বাকিরা বেশ চিন্তায় আছে। এই মূহুর্তে আব্রাহাম কে অফিসে দেখে তারাও অবাক হয়। আব্রাহাম দ্রুত রাশেদের কাছে এগিয়ে যায়।

আব্রাহাম;; রাশেদ আইরাত কোথায়?

রাশেদ;;

আব্রাহাম;; আইরাত কোথায়? (চিল্লিয়ে)

রাশেদ;; স্যার,, স্যার আইরাত ম্যাম জেলে।

আব্রাহাম;; কিহহ? কখন নিয়ে গেছে?

রাশেদ;; কিছু পুলিশ অফিসার এসেছিলো তাদের মতে ব্লেক মানির পেপার্সে ম্যামের সাইন আছে কিন্তু ম্যাম তো কখনোই সেগুলোতে সাইন করবে না। জানি না ম্যামের সাইন কি করে এলো। তাদের কাছে এনাফ প্রুভ ছিলো তাই তারা ম্যাম কে নিয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; Damn It…!!

আব্রাহাম আবার বাইরে এসে দ্রুত গাড়িতে উঠে পরে।রাগে গা কাপছে। ওদিকে আইরাত জেলের ভেতরে বসে আছে। মাথা নিচু করে। এই এতো গুলো বছর যাবৎ আইরাত এক ভুল ধারণা নিয়ে বেচে ছিলো। আইরাত না শুধু প্রায় সবাই। এগুলোই যেনো আইরাতের মন-মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় ৩০ মিনিট পর আব্রাহাম পুলিশ স্টেশনে এসে পরে। দ্রুত পায়ে গিয়ে পুলিশ স্টেশনের ভেতরে চলে যায়। আব্রাহাম যেদিক দিয়ে আসছিলো সেইদিক দিয়েই সবাই দাঁড়িয়ে পরছিলো তাকে দেখে। কিন্তু আব্রাহাম সবাইকে এক প্রকার ইগ্নোর করেই ভেতরে এসে পরে। আব্রাহাম এসেই পুলিশ অফিসারের টেবিলে ঠাস করে নিজের হাত রাখে। পুলিশ অফিসার আব্রাহাম কে এই রূপে দেখে দ্রুত দাঁড়িয়ে পরে।

অফিসার;; আব..আব্রাহাম স্যার আপনি এখানে?

আব্রাহাম;; আপনারা কিসের ভিত্তিতে আইরাতকে এরেস্ট করেছেন?

অফিসার;; স্যার কিছু বেআইনি কাগজে উনার সাইন পাওয়া গেছে ত……..

আব্রাহাম;; তার জন্য এটাই যথেষ্ট।

আব্রাহাম অফিসারের দিকে তার জেকেটে থাকা ক্যামেরা টা এগিয়ে দেয়। যাতে রায়হানের নিজের মুখে স্বীকার করা সবকিছুই রয়েছে। সেটা অফিসারকে দিয়েই আব্রাহাম আরো ভেতরে চলে যায়। ভেতরে কয়েক কক্ষ পেরিয়েই আব্রাহাম থেমে যায়। তার ডান পাশে তাকিয়ে দেখে আইরাত একটা জেলের কক্ষের ভেতরে একদম একা বসে আছে। আব্রাহাম আর কিছু না বলেই জেলের দরজা সই দেয় এক লাঠি মেরে। সাথে সাথেই ঠাস করে দরজা টা ভেঙে নিচে পরে যায়। এমন বিকট শব্দে আইরাত ফট করে মাথা তুলে তাকায়। দেখে আব্রাহাম এসেছে। আইরাত আব্রাহাম কে দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম এসে কোন কথা না বলেই সোজা আইরাতের হাত ধরে তাকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে।

.

চলবে~