পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-২৭+২৮

0
6037

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ২৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

বাসররাতে বিছানায় বসে চোখের জল ফেলছে ইরিনা। তার বাবা তাকেও ত্যাগ করেছে। ফারহাজের চোখেও সে দেখেছে এক রাশ ঘৃণা। ভালোবাসার মানুষটির চোখে ঘৃণা দেখা যে কতটা কষ্টের তা হয়তো ইরিনার থেকে ভালো কেউ বুঝবে নাহ। ভাবতেই অবাক লাগে ফারহাজ এখন অন্যকারো।
ইরিনা ভাবতে থাকে সকালের কথা ,,
ইরিনা নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো তখনি হঠাৎ করে
কেউ তার মুখ চেপে ধরে তারপর ইরিনার আর কিছু মনে নেই। যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন সে নিজেকে অন্য রুমে আবিষ্কার করে সে তাঁকিয়ে দেখে আহান পায়ের উপর পা দিয়ে একটা সোফায় বসে আছে।
আহান কে দেখে ইরিনা কিছুটা শুকনো ঢুক গিলল–
আপনি এইখানে? আমি কোথায়? আমাকে এখানে আনা হয়েছে কেন?

আহান শয়তানী হাঁসি দিয়ে বলে উঠে—কেন ইরিমনি আজকে তো আমাদের বিয়ে হবে আজকে তাই!

ইরিনা যেনো কথাটি শুনে থমকে যায়

ইরিনাঃ নাহ নাহ আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো নাহ। আপনি কী ভেবেছেন আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।

এই বলে ইরিনা উঠে যেতে নিলে আহান একটা ক্লিপ ভিডিও অন করে যেখানে মির্জা বাড়ির কিছু দৃশ্য ফুটে উঠছে। মির্জা বাড়ির আনাচে -কানাচে ছড়িয়ে আছে আহানের লোক যারা লুকিয়ে আছে।

আহানঃ আমি নাহ আবার এতো ভালো মানুষ নাহ বুঝেছো ইরিমনি তাই আর কি যখন তখন যার তার ক্ষতি করতে আমার বিন্দুমাত্র সময় লাগবে নাহ।
তার একটা ছোট্ট ক্লিপ তো তুমি সেদিন দেখলেই।

ইরিনা অসহায় চোখে আহানের দিকে তাঁকায়।

আহান উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে-
তো বিয়ের জন্য রেডি হয়ে নাও ইরিমনি আমি বরং উঠি কাজি সাহেব অপেক্ষা করছেন। আর বেশি চালাকি করার চেস্টা করো নাহ জান ( বাঁকা হেঁসে)

এই বলে আহান চলে যেতে নিয়ে আবারোও ফিরে এসে ইরিনার চোখের জলটুকু মুছে বলে উঠে-
তুমি তো জানো জান তোমার চোখের জল আমার সহ্য হয়না।
আর সবাই যখন আমাদের বিয়ের কথাটা জানবে তখন তুমি বলবে আমরা একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি ওকে ডার্লিং!

হঠাৎ কারো পায়ের শব্দে ভাবনা থেকে ফিরে আসে দরজার দিকে তাঁকিয়ে দেখে আহান এসেছে।
আহান কে দেখে সে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে বলে উঠে–

একদম আমার কাছে আসার চেস্টা করবেন নাহ বলে দিচ্ছি। খুন করে ফেলবো। আপনার সব অন্যায় আমি সহ্য করেছি!

আহান কিছুটা বাঁকা হেঁসে ইরিনার দিকে এগিয়ে বলে উঠে—
যদি করি কি করবে তুমি আমার ইরিমনি!
কিচ্ছু করতে পারবে নাহ আমার

(ইরিনার একেবারে কাছে গিয়ে)

ইরিনা পিছিয়ে যায়। আহান আরেকটু ইরিনার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠে–
স্বামীর অধিকার ফলানোর কোনো ইচ্ছেই আমার নেই বিকজ আমি তোমাকে ভালোবাসি ই নাহ। তোমাকে টাচ তো দূরে থাক

ইরিনা অবাক হয়ে আহানের দিকে তাঁকায়। এই লোকটা ক্ষনে ক্ষনে রং বদলাচ্ছে।

আহান এইবার ইরিনার থেকে দূরে গিয়ে বলে উঠে-
তুমি শুধু আমার গেমের একটা গুটি মাত্র। দাবার গুটি
এখন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো রাত অনেক হয়েছে।

এই বলে আহান রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

ইরিনা খানিক্টা পিছিয়ে যায়।

ইরিনাঃ কী বলল কি? আমি উনার নোংরা গেমের গুটি মাত্র।

ফিহাদের গাড়ি মির্জা বাড়ির কাছে এসে ব্রেক কোষে।

ফিহাদের গাড়িতে,,

দাদুন আর ফিহা বসেছে

ফিহা তার পামকিন কে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। মিঃ রাইজাদা জানেন আজকে যা হয়েছে তা সত্যিই অন্যায়। এতে ফিহার ছোট্ট মনে বেশ প্রভাব পড়বে।
কিন্তু মিঃ রাইজাদা মির্জা বা কি করবে।

আর সামনের গাড়িতে,

ফারহাজ, ফারহাজ এর কাকা ও বাবা।

ফারহাজ দ্রুত গাড়ি থেকে সদর দরজায় চলে যায় সেখানে দাঁড়িয়ে দেখে সবার মুখ টা কেমন শুকনো।
কেউ এই বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি। ফারহাজ কে দেখে মিসেস প্রিয়া এগিয়ে এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহাজ গট গট করে উপরে
নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

মিসেস প্রিয়া ঢুকড়ে কেঁদে উঠে। ফারহাজ এর দাদি মিসেস প্রিয়ার কাধে হাত রাখে।

মিসেস প্রিয়াঃ মা আপনি ভাবতে পারছেন?
অই আশ্রিতার মেয়েটা আমাদের বাড়ির আমার ফারহাজ এর বউ হয়ে এই বাড়িতে আসবে। আমি কিন্তু বলে দিলাম মা অই মেয়েকে আমি কিছুতেই মেনে নিবো নাহ। ওই আশ্রিতার মেয়ে এই বাড়িতে কি করে থাকে আমিও দেখবো।

দাদি আস্তে করে মিসেস প্রিয়ার কানের কাছে গিয়ে বলে উঠলেন—

এখন চুপ থাকো! দেখছো তো ইরিনার জন্য আমাদের কত বড় অসম্মান হচ্ছে। আত্বীয়- স্বজন, গেস্ট সবাই এইসব কেলেংকারীর কথা জানলে আমাদের মান- সম্মান কোথায় গিয়ে ঠেকবে বুঝতে পারছো? আমাদের মির্জাদের এই সোসাইটিতে একটা নাম আছে। এইসব জানাজানি হলে মান থাকবে নাহ। তোমার শ্বশুড় যা করেছে নিশ্চই বুঝে-শুনে করেছে।

মিসেস প্রিয়াঃ কিন্তু মা আপনি যাই বলুন আমার ওমন একটা হিরের টুকরো ছেলের সাথে এই মেয়ের বিয়ে যার কোনো পিতার পরিচয় নেই। তাকে আমি কিছুতেই মেনে নিবো নাহ।

দাদিঃ তুমি কী ভেবেছো? ওমন বংশহীন মেয়েকে আমি মেনে নিয়েছি? যার বংশের ঠিক নেই
কিন্তু আপতত যা হচ্ছে হতে দাও চুপচাপ থাকো।

মিঃ রাইজাদা নেমে ফিহার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠে–

ফিহা দিদিভাই নেমে পড়ো।

ফিহা নিজের হাত বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।

ফিহা বাড়িতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই মিসেস প্রিয়া মুখ বেকিয়ে চলে যায়।

ফিহাকে দেখে নিলয়ের বুক টা ছেত করে উঠে।
ফিহা তাও তার নিজের ভাইয়ের বউ। নিলয়ের বুকটা কেমন করে কেঁপে উঠলো। ফিহাকে কি সুন্দর লাগছে। কিন্তু ফিহা তার ভাইয়ের বউ। নাহ নাহ নিলয় এখানে আর থাকতে পারছে নাহ। পা দুটো আশাড় হয়ে যাচ্ছে। সে দ্রুত স্হান ত্যাগ করলো।

রাইজাদাঃ ইরা ( ফারহাজ এর দাদি) ফিহাকে উপরে পাঠিয়ে দাও। তোমাদের সবার সাথে আমার কথা আছে।

ফারহাজের দাদিঃ ছোট বউমা ( তানহাকে উদ্দেশ্য করে)
ওকে ফারহাজ এর ঘরে দিয়ে আসো।

তানহা ফিহার কাছে গিয়ে বলে উঠে–
চলো আমার সাথে।

ফিহা খানিক্টা ভয় পেয়ে পামকিনকে নিজের সাথে জড়িয়ে তানহার পিছন পিছন চলে যায়।

এদিকে,,

রাইজাদাঃ আশা করি তোমরা সবাই আমার সাথে কপারেট করবে। আমাদের বাড়ির সম্মানের বিষয় এইটা।

ফারহাজ এর দাদিঃ হুম এখন আর কি করার আছে।
আমরা সবাই চেস্টা করবো
এই বলে উঠে দাঁড়িয়ে ফারহাজ এর দাদি চলে যান।
মিঃ রাইজাদা নিজের ঘরের দিকে এগোতে থাকেন।

রাইহান আর রাহাতও নিজেদের ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

তানহা ফিহাকে ফারহাজ ঘরের সামনে এনে বলে উঠে–

তুমি এখন যাও ভিতরে ফারহাজ ভিতরেই আছে।
আমি বরং তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসি। তোমাদের তো কিছুই খাওয়া হয়নি।

ফিহা কিছুটা ভিতু স্বরে বলে উঠলো-
আমি একা যাবো? লাটসাহেব কে তো প্রচন্ড রেগে থাকতে দেখলাম যদি বকে!

তানহা হেঁসে বলে-
আরে বোকা মেয়ে বকতে যাবে কেন? আর এইটা তো এখন তোমারই স্বামীর ঘর।

এই বলে তানহা চলে যায়। ফিহা কিছুটা আস্তে করে পা টিপে ঘরে ঢুকে। ঘরে ঢুকেই কিছুটা থম মেরে বসে থাকে। ঘরের সব জিনিস- পত্র ভাজ্ঞাচুড়া। মনে হয় এই বিশাল ঘরটায় এক বড় টর্নেডো গেছে। আর এইসব যে ফারহাজ রেই কাজ তা বুঝতে বাকি থাকে ফিহার। ফারহাজ এর ঘর সাউন্ড প্রুফ বিধায় এই ভাজ্ঞচুড় এর আওয়াজ বাইরে অব্ধি যাইনি

ফিহা পামকিনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো-
দেখেছিস পামকিন? লাটসাহেব কত রাগি? কিন্তু মানুষটা কোথায় গেলো।

ঘরেও তো দেখছিনা।

এদিকে,,

ছাদের রেলিং ধরে আকাশপানে তাঁকিয়ে আছে ফারহাজ। সে বুঝেছে ইরিনার উপর রাগ করে ও তার জেদের বশে বড় একটা কান্ড করে ফেলেছে। যাকে বলে বাল্যবিবাহ। ফারহাজ বুঝতে পারছে নাহ একজন আইনের লোক হয়ে কী করে সে এমন একটা কাজ করতে পারলো। সে ফিহার সাথেও অন্যায় করেছে। ফারহাজ দেয়ালে একটা জোড়ে ঘুশি দেয়। তার হাত থেকে ফিনকি রক্ত বেড়িয়ে পড়ে। জেদের বশে এইটা কী করলো সে? ফারহাজ তার বন্ধু এশাদ কে ফোন করে যে একজন পেশায় নামকরা এডভোকেট।

এশাদঃ আরে আমার পুলিশ বাবু যে এতোদিন পরে আমাকে মনে পড়লো যে!

ফারহাজঃ সেসব বাদ দে আগে আমার কথা শুন। একটা বড় ভুল করে ফেলেছি।

এশাদঃ কী ভুল?

ফারহাজ সব খুলে বলে।

এশাদ ঃ ইরিনা যা করেছে আমি বিশ্বাস ই করতে পারছি নাহ। কিন্তু তুই জেদের বশে এই বিয়েটা করে মোটেও ঠিক কাজ করিস নি!

ফারহাজঃ আমি জানি রে। তাই আমি ভেবেছি। এই মিথ্যে সম্পর্ক থেকে বেড়িয়ে পড়বো। ফিহাকেও মুক্তি দিয়ে দিবো। তুই ডিভোর্স পেপার রেডি কর।

এশাদ ঃ কিন্তু এখন তো সম্ভব নাহ। ডিভোর্স বিয়ের ৬ মাসের আগে গ্রেন্টেড হয়না।

ফারহাজঃ তা আমি জানি! কিন্তু এখন আমি আপতত ডিভোর্স এর জন্য এপ্লাই করবো।

।।।।চলবে!।।

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ২৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা কিছুক্ষন রুম টায় ঘুড়ে ঘুড়ে দেখতে লাগলো।বেশ বড় ঘর।চারপাশে শুধুই লাটসাহেব এর ছবি। একটা মানুষের স্টাইল এতো সুন্দর? লোকটাও ভারি সুন্দর। এর আগেও এই ঘরে সে এসেছিলো কিন্তু তখন কার ঘটনা মনে পড়তেই ফিহার শরীর শিউরে উঠে।কেমন একটা ভয়ংকর সেই অনুভুতি। দরজায় কারো নক করাতে ফিহার ধ্যান ফিরে। সে তাড়াতাড়ি দরজার কাছে গিয়ে বলে উঠে– কে? তখনি একজন সার্ভেন্ট নয়না এসে বলে উঠে- বড় মেমসাহেব আপনার আর বড় সাহেবের খাবার। তানহা মেম পাঠিয়েছেন
ফিহা ছোট ছোট চোখ করে বলে উঠে– বড় মেম সাহেব বলছো কেন? আমার নাম ফিহা বুঝেছো! আর আমাকে তুমি করে বলবে আমি তোমার থেকে কত্ত ছোট
আরেকজন সার্ভেন্ট মিলি হেঁসে বলে উঠে-
সে কি? আপনি হইলেন কিয়া এই বাড়ির বড় বউ! আপনাকে কি আর নাম ধরে ডাকা যাইনি?

।।।।।।।।।।।।। 🌹🌹🌹🌹🌹🌹

ফিহা বলে উঠলো-
ঠিক আছে যা খুশি ডাকো কিন্তু মেম সাহেব নাহ!

মিলিঃ ঠিক আইছে তাইলে আমরা আফনারে মিস্টি ভাবি কইয়া ডাকমু আফনে তো মেলা মিস্টি দেখতে।

মিলির সাথে নয়নাও বলে উঠে–
হ্যা মেম সাহেব থুড়ি মিস্টি ভাবি!

ফিহা ওদের কথা শুনে হেঁসে দেয়।

ফিহাঃ আচ্ছা তোমরা কি আমার পামকিন এর জন্য গাজর দিতে পারবে? আমার পামকিনকে নাহ খাওয়াতে হবে!

মিলিঃ ঠিক আছে আমার কাছে এই খরগোশ টা রে দেন আমি খাওয়াই নিয়া আসি আপনি একটু রেস্ট করেন গিয়া মিস্টি ভাবি!

এই বলে মিলি পামকিনকে ধরতে নিলে পামকিন মুখ লটকিয়ে ফিহার দিকে তাঁকায় যার মানে আমি যাবো নাহ 🐸

ফিহা কিছুটা আন্দাজ করে বলে উঠে-
আমিও বরং যাই পামকিন আমার হাতে ছাড়া আবার কারো হাতে খায়না। চলো আমিও তোমাদের সাথে যাই!

নয়নাঃ ঠিক আছে! এই বাড়ির বাগানে প্রচুর গাজর আছে। সেখানে চলুন!

ফিহা বলে উঠে-
কিন্তু লাটসাহেব যদি বকে। বিনা পারমিশনে পাড়লে।

মিলি ঃ এইডা কি কন? মিস্টি ভাবি! এইডা আপনার শ্বশুড় বাড়ি। আপনার অধিকার কাছে।

নয়নাঃ হুন মিস্ট ভাবি! নিজের অধিকার একদম ছাড়বেন নাহ এই ঘর- বাড়ি সব ই তো আপনার।

ফিহা কিছুক্ষন ভাবলো। সত্যি সে এই বাড়ির বউ।
লাটসাহেব এর বউ।

ফারহাজ এশাদের সাথে কথা বলে ফোনটা কেঁটে দেয়। ফিহার কাছে যেতে হবে কথা বলতে হবে ডির্ভোস এর ব্যাপারে ফিহার সাথে। আচ্ছা ফিহা এখন কোথায় থাকতে পারে?

ফারহাজ ভাবনার ছেদ করে নিলয়ের প্রবেশ। মুখটা কেমন শুকিয়ে আছে।

নিলয় এক পলক ফারহাজ কে দেখে

নিজের গিটার টা বের করে ছাদের এক কোনে চলে যায়।

নিলয়ের চোখে যেনো ফারহাজ কেমন একটা অন্যরকম অভিমান দেখতে পারছে। অভিমান কথাটি মনে হলে এক পলক ইরিনার মুখটা ভেসে উঠে৷ হ্যা এই মুহুর্তে ইরিনার প্রতি শুধু অভিমান নাহ এক রাশ ঘৃণাও চলে আসছে।

ফারহাজ ছাদ থেকে বেড়িয়ে যায়।

এদিকে,,

নিলয় ছাদের গিটারে টুন টান সুর তুলছে।
প্রচন্ড কস্ট হচ্ছে ভিতর টা যেনো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।
আচ্ছা এক তরফা এতো কস্ট হয় কেন? তার লিটেল প্রিন্সেস এখন তার ভাবি ভাবতেও কেমন একটা লাগে।

ফারহাজ ঘরে ঢুকে দেখে তার রুম সার্ভেন্ট রা তার ঘর পরিষ্কার করে চলে গেছে।

ফারহাজ নিজের শার্ট টা খুলে ফেলে একটা সাদা গেঞ্জি পড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

ব্রাউন মনিটা হঠাৎ করেই জল জল করে উঠে। ইরিনা কী করে তাকে ঠকাতে পারলো এমন একটা বাজে গেম খেললো।

ফারহাজ ফুলদানি টা ছুড়ে ফেলে তা টুকরো টুকরো হয়ে নীচে পড়ে যায় নাহ আর এইসব নিয়ে সে ভাব্বে নাহ। ইরিনা নামটি চিরতরের জন্য সে মুছে ফেলবে।

ফারহাজ একবার নিজের ব্রেসলেট টার দিকে তাঁকায়।

আচ্ছা আজকে যদি তার নীলাঞ্জনা বেঁচে থাকতো তাহলে তার কাছে গিয়ে নিজের কস্ট গুলো ফারহাজ ভাগ করতে পারতো তাহলে এই কস্ট গুলো কোনো কস্ট ই মনে হতো নাহ ফারহাজ এর কাছে।

নীলঞ্জনা কথাটা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে ফিহার মুখখানা ভেঁসে উঠলো। ফারহাজ এর কেমন বুক টা চিন চিন করে উঠলো। ফারহাজ সেসব না ভেবে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট বের করে নেয়। তখনি তার চোখ বাগানের দিকে যায়। হ্যা ফিহাই তো কোমরে শাড়ির আচল বেঁধে গাছের গাজর পাড়ছে।

আহান বসে বসে কিছু ভাবছে তখনি কিছু লোক হাঁজির হয়।

আহানঃ কী খবর? বোন ঠিক আছে তো? অই বাড়িতে ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?

—নাহ স্যার! মির্জা বাড়ির সবাই আপতত মেনে নিয়েছে মান- সম্মান এর ভয়ে।

আহানঃ ঠিক আছে তুমি আপতত যাও! আর হ্যা তোমরা সবাই এখন থেকে লুকিয়ে আমার বোনের খেয়াল রাখবে দেখবে অই বাড়িতে যেনো ওর কোনো অসুবিধা না হয়।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
লোক গুলো মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো।

আহান ঃ সব কিছু উল্টো হয়ে গেলো। মির্জা বাড়িকে শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজের বোনের জীবনেরই
বোধহয় আমি নস্ট করে ফেললাম।

আহান ভাবতে ভাবতে ইরিনার ঘরে চলে যায়।

পর্দাটা সরিয়ে দেখে কাঁদতে কাঁদতে খাটের এক কিনারে ঘুমিয়ে পড়েছে
ইরিনার গাঁয়ে এখনো সেই বিয়ের পোষাক।

আহান একবার ইরিনার কাছে যায় বড্ড ছুতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা এমন কেনো? অদ্ভুদ সব অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

আহান নিজের ইচ্ছেটাকে দূরে রেখে ডোয়ারে থেকে একটা ওষুধ বের করে খেয়ে নেয়।

তারপর ইরিনার কাছে বসে গালে হাত দিয়ে ইরিনাকে দেখতে থাকে।

🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

মিসেস প্রিয়া চারপাশে পাইচারি করতে থাকে।
এই মেয়েকে আগে তার হিরের টুকরো ছেলের থেকে আলাদা করতেই হবে। তারপর অই মেয়েকে এই বাড়ি থেকে বের করবো। বলতে বলতে কারো নাম্বারে ফোন করে মিসেস প্রিয়া।

🌹🌹🌹
—-আপনি স্মোক করেন? জানেন না এইটা শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর।

কাশতে কাশতে ফিহা বলে উঠলো।

ফারহাজ পিছনে তাঁকিয়ে দেখে ফিহা হাতে তার পামকিনকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ফারহাজ ফিহার দিকে কিছুটা এগিয়ে বলে উঠলো–

হেই ইউ ব্লাডি! ডোন্ট ওয়ানট টু লার্ন মি!

ফারহাজ মির্জাকে অন্তত তোমার মতো চুরনির কাছ থেকে আমাকে শিখতে হবে না? আমাদের বাগানে এসেও চুরি করছে! মনে আছে? একবার ধরাও পড়েছে।

ফিহা রাগে ফুশতে ফুশতে বলে উঠে-
বেশ করেছি। আমি নিজের শ্বশুড় বাড়ির বাগানের টা নিয়েছি তাতে কি হুহ?

ফারহাজ ঃ শ্বশুড় বাড়ি? মানে কি? নিজেকে কি আমার বউ মনে করো এইরকম যদি মনে করে থাকো তাহলে তোমার মতো বোকা আর কেউ নেই।
( চোখ গরম করে)

ফিহা মুখ টা লটকিয়ে বলে উঠে-
মনে করার কি আছে? আমি তো আপনার সত্যি কারের বউ ই আর আপনি আমার লাটসাহেব বর!

ফারহাজ কিছুটা চুপ হয়ে যায়।

ফারহাজ ঃ ফিহা দেখো

ফিহা আবারোও বলে উঠে–

আচ্ছা আমার নাহ হেব্বি ঘুম পেয়েছি আমি ঘুমাই

এই বলে ফিহা বিছানার দিকে এগোতে নিলে

ফারহাজ ধমকে বলে উঠে—

এই পুচকি তুমি কী এখন এই রুমে ঘুমাবে?
তাও আমার বেডে? আর ইউ জোকিং?

ফিহা পামকিন কে নিয়ে এক লাফে বিছানায় বসে পড়ে।

ফিহাঃ এইটা যেহুতু আমারও ঘর তাহলে এই বিছানাই ও আমি ঘুমাবো আমার পামকিন এর সাথে! পামকিন এর প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। পামকিন এর আবার রাত ঠিক ১১ টা বাজে ঘুমানো চাই

ফারহাজঃ আর ইউ ম্যাড? আমার বিছানার বেডের কভার টা আমি অস্টেলিয়া থেকে আনিয়েছি তোমার এই সো কল্ড খরগোশ টার জন্য?নামো বলছি আমার বিছানা থেকে।

( গম্ভির কন্ঠে)

ফিহা মুখটা ফুলিয়ে বলে উঠে–
লাটসাহেব দেখুন দাদুন এসেছে

ফারহাজ পিছনে ঘুড়ার সাথে সাথে ফিহা পামকিন কে জড়িয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়।

ফারহাজ দরজার কাছে গিয়ে বলে উঠলো-
দাদুন তো নেই! পুচকি টা আবারোও আমাকে বোকা বানিয়েছে।

ফারহাজ পিছনে তাঁকিয়ে দেখে ফিহা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। গাঁয়ে এখনো সেই শাড়ি।

ফারহাজঃ। একটা মানুষ এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাতে কী করে পারে? কালকে এই পুচকির একটা ব্যবস্হা করতে হবে।

ফারহাজ ফিহার গায়ে নিজের অজান্তেই কম্বল টা জড়িয়ে দেয়
ফতারপর গায়ের ব্লেজার টা পড়ে বিরক্তি নিয়ে থেকে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

।।।।।।।।চলবে!