#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৩৪ ( এইসব এর পিছনে কে?)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা ফারহাজ এর হাত ধরে স্টোরের দিকে নিয়ে যায়। ফারহাজ কিছুটা শান্ত গলায় বলে উঠে- ফিহা তুমি কী আমার কথা বুঝতে পারছো নাহ? ফিহা মুখটা বেকিয়ে বলে উঠে-কেন আমাদের বিয়ের আগে তো আমাকে এতো সুন্দর একটা বারবি ড্রেস কিনে দিয়েছিলেন তখন কীভাবে করেছিলেন? ফারহাজ বলে উঠে- ফিহা ড্রেস টা তুমিই চুজ করেছিলে বাট কিনোনি। আমি শুধু বিল টা পে করে তোমাকে অই ড্রেস টা কিনে গিফট করেছিলাম বুঝেছো? তখনি একটা ছেলে হুট করে বলে উঠে- ফিহারানী তুমি? ছেলেটাকে দেখে ফিহা ছুটে যায় তার কাছে। ফিহা তাকে দেখে বলে উঠে- নেহাল ভাইয়া তুমি এখানে?
নেহাল আদুরে গলায় বলে উঠলো- আমি তো এসেছিলাম ছোট্ট একটা কাজে! তুমি এখানে কি করছো? আন্টির সাথে এসেছো বুঝি
নেহাল কে দেখে ফারহাজ দ্রুততম গতিতে তাদের কাছে এসে বলে উঠে– ফিহা উনি কে?
ফিহাঃ উনি তো নেহাল ভাইয়া! আমাদের পাশের বাড়িতেই থাকতেন। তারপর চাকরীর বদলির জন্যে চট্টগ্রামে চলে যান।
আমি তো প্রায় উনাদের বাসায় যেতাম। আমাকে নেহাল ভাইয়া কত্ত চকলেট দিতো।অনেক ভালো নেহাল ভাইয়া।
ফিহার কথা শুনে নেহাল মুচকি হাঁসি দেয়।
ফারহাজ তিক্ন দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। ফিহার এই ছেলের সাথে এতো কথা কীসের ? ফিহা শুধু তার এর সাথে কথা বলবে। কেননা ফিহা তার স্ত্রী।
নেহাল এইবার বলে উঠলো—
কিন্তু ফিহা উনি কে? ( ফারহাজ কে উদ্দেশ্য করে)
ফিহা কিছু বলবে তার আগেই ফারহাজ বলে উঠে–
আমি ফিহার হাজবেন্ড! অফিসার ফারহাজ মির্জা!
নেহালের কথাটা হয়তো হজম হয়নি কেননা য়ার জানা মতে ফিহার এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তাও বলে উঠলো-
আপ্নার নাম আমি শুনেছি। আপনি যথেষ্ট সাহসী একজন অফিসার। কিন্তু আপনাদের বিয়েটা কবে হলো???
ফারহাজঃ সে অনেক কাহিনী তা না হয় একদিন আমাদের বাড়িতে এলে শুনবেন।
নেহালঃ ঠিক আছে সমস্যা নেই ( হেঁসে)
ফিহা কিছুটা আবদারের সুরে বলে উঠলো—
আচ্ছা নেহাল ভাইয়া আপনি আমাকে একটু কিছু ড্রেস চুজ করে দিবেন? আসলে আমার কিছুই ভালো লাগছে নাহ।
কথাটা শুনেই ফারহাজের মুখের দিকে তাঁকায় নেহাল। মুহুর্তের মধ্যে যেনো মুখটায় লাল বর্ণ ধারন করেছে।
ফারহাজঃ এই মেয়ের সাহস কী করে হয়? অন্য একটা ছেলেকে নিজের ড্রেস চুজ করতে। তাও নিজের হাজবেন্ড এর সামনে। (মনে মনে)
নেহাল ফারহাজ এর অবস্হা বুঝতে পেরে
মেকি হাঁসি দিয়ে বলে উঠলো—
মিঃ ফারহাজ তো আছেই! উনি না হয় চুজ করে দিবে। আমি না হয় এখন আসি। পরে কথা হবে ঠিক আছে ফিহারানী।
এই বলে নেহাল দ্রুতগতিতে পা চালায়।
ফিহা নেহাল ভাইয়া বলে ডাকতে যাবে তার আগেই
ফারহাজ ফিহার হাত দুটো খপ করে ধরে ফিহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইরে নিয়ে আসে।
ফিহা কিছু বলতে না দিয়ে ফারহাজ বলে উঠে–
এই পুচকি? তুমি কেন অই ছেলেটাকে তার ড্রেস চুজ করতে বলেছিলে?
ফিহা বলে উঠলো– কেন? নেহাল ভাইয়া তো ইশিআপুর ড্রেস কত সুন্দর করে চুজ করে দেয়।
আমাকেও ভালো করে দিতো।
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ফারহাজঃ ইশি আপু কে??
ফিহাঃ কে আবার নেহাল ভাইয়ার জিএফ।
ফারহাজঃ ওকে। একবার বলেছো বলেছো কিন্তু আর যেনো আমি না শুনি!
ফিহঃ কেন? আপনি নিজে তো চুজ করে দেন নাহ এখন অন্যদের বললে রাগ করেন হুহ ( মুখ ফুলিয়ে)
ফিহার আজকাল ফারহাজকে বুঝতেই পারে নাহ।
উনার মনে কি চলে তার ফিহার ছোট্ট মাথায় ঢুকেই নাহ।
ফারহাজ ফিহার দিকে ঝুকে বলে উঠে–
আমি রাগ করবো আবার আমিই তোমাকে সব ড্রেস চুজ করে দিবো। কেননা এই অধিকার টা শুধুই আমার। তোমার সব কিছুতেই শুধু এই ফারহাজ মির্জার অধিকার। তোমার প্রত্যেকটা হ্রদপৃন্ডের প্রতিটি কম্পনও এই ফারহাজ মির্জার নামে কম্পিত হবে পুচকি৷!
ফারহাজ এর প্রতিটা কথাই ফিস ফিস করে বলছিলো। যার প্রতিফলে ফিহার ছোট্ট হ্রদপৃন্ডে ছোট্র করে কম্পন করে উঠলো।
গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে ফিহা। ফারহাজ ড্রাইভিং করে যাচ্ছে।
ফারহাজ জানে নাহ সে হঠাৎ করে কথাটি কেন বললো? কিন্তু ফিহার জন্য কথাটি প্রযোয্য ছিলো।
আচ্ছা ফারহাজ নিজে কিছুক্ষনের জন্য হলেও কী জেলাস ছিলো? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে ফারহাজ।
মধ্যবয়স্ক লোকটি নিজের লোকদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠে—
কি খবর? বিষ এর সাপ্লাই কতটুকু হলো?
—-স্যার প্রায় হয়ে গেছে। আপনি চিন্তা করবেন নাহ
যারা যারা আমাদের সাথে ডিল করতে নাকোছ করে দিয়েছে তাদের সবাইকেই আজ রাতের মধ্যে শেষ করে দেওয়া হবে।
মধ্যবয়স্ক লোকটা মুখের হাঁসিটা চওড়া করে বলে উঠে–গুড ভেইরি গুড। আমার বইয়ে শুধু এক্টাই কথা যারাই আমার সাথে শত্রুতা করবে আমার পথে কাটা হয়ে আসবে তাদের সবাইকে আমি আমার পথ থেকে সরিয়ে ফেলি।
—-কিন্তু কিং স্যার পুলিশ রা তো এই কেসের সুরাহা করতে পাগল প্রায় হয়ে গেছে। আহান স্যার এর ফোন এসেছিলো। ফারহাজ মির্জা আমাদের ধরতে বিভিন্ন প্ল্যান কষা শুরু করে দিয়েছে।
লোকটি এইবার উচ্চ সুরে বলে উঠলো—
পুরো পুলিশ ফোর্সকে নাকানিচুবানি খাওয়ার ক্ষমতা রাখি।
ফারহাজ মির্জার ভয় আমাকে দেখাতে এসো নাহ?
ওর মতো আরেকজনও এই সাহস দেখাতে এসেছিলো তার পরিনামও ছিলো খুব ভয়ংকর।
আর আহানের কথা? আহানকে আমি এইসব খুনের দায়ে ফাঁসিয়ে দিবো। যেখানে আহানের এইসব খুনের পিছনে কোনো হাতেই নেই।
এদিকে,,
আহান বার বার ফোন করে যাচ্ছে। কিন্তু তার কিং স্যার ফোনটা তুলছেই নাহ। বাধ্য হয়ে আহান ফোনটা কেটে দেয়।
আহানঃ কিং স্যারের কী হয়েছে টা কি?
আহান উঠে দাড়িয়ে দেখে ইরিনা বাগানে হেটে হেটে সব কিছু দেখে যাচ্ছে। মুখে রয়েছে এক রাশ বিষন্নতা। পড়নে আহানের এনে দেওয়া সবুজ রং এর শাড়ি। আহানের কেনো যেনো ইরিনাকে বিষন্ন চেহারা টা দেখতে ভালো লাগছে।
সে বাইরে চলে যায়।
পাশে কারো উপস্হিতি টের পেয়ে ইরিনা পিছনে তাঁকিয়ে দেখে আহান পড়নে নরমাল একটা শার্ট।
তাতেও যেনো তাকে বেশ সুন্দর লাগছে।
ইরিনা মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।
আহানঃ আরে আজিব! মুখ ঘুড়ানোর কী আছে? তোমারই তো বর।
ইরিনা কিছুটা সোজা হয়ে বলে উঠে—
আচ্ছা আপনি যেহুতু আমার বর একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন প্লিয???
আহানঃ বলো!
ইরিনাঃ কে এই কিং স্যার!
আহান পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে উঠে–
ইরিমনি আজকাল তুমি আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপ প্রত্যেকটা কথা লক্ষ করছো। কারণ টা জানতে পারি কি?
ইরিনাঃ আগে আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিন!
আহানঃ আপতত এইটুকু জেনে রাখো
কিং স্যার আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বলতে পারো কিংস্যার আছে বলেই আমি আজকে আহান আহমেদ। কিং স্যার না থাকলে হয়তো আজকের আহান আহমেদ অকালেই ঝরে যেতো।
এদিকে,,,
ফিহা অবাক চোখে তাঁকিয়ে আছে ফারহাজ এর দিকে। কেননা ফারহাজ নীচে ছোট্ট বিছানার মতো তৈরি করে ফেলেছে।
ফিহা ঠোট উল্টে বলে উঠে—
লাটসাহেব বর এখন আপনি এই ফিহাকে আর তার কিউট পামকিন এর জন্য নীচে বিছানা করে দিলেন। আমরা দুজন নীচে ঘুমাবো???
ফারহাজ উঠে দাঁড়িয়ে ফিহার কাছে গিয়ে বলে উঠে–
সেই সাধ্য কী আমার আছে? আমি নীচে ঘুমাবো আর আপনি এবং আপনার পামকিন নিয়ে বেডেই ঘুমান!
দাদুনের জন্যে তো আর আমি এখন অন্যরুমে ঘুমাতে পারবো নাহ।
ফিহা কিছুটা অবাকের সুরে বলে উঠে–
কিন্তু আপনার তো নীচে ঘুমানোর অভ্যাস নেই! আপনি বরং বেডে ঘুমিয়ে যান আমি নীচে ঘুমিয়ে পড়ি।
এই বলে ফিহা নীচে ঘুমাতে গেলে ফারহাজ ফিহাকে থামিয়ে বলে উঠে—
একদম নাহ বেডে ঘুমাতে যাও! ভুলে গেলে কালকে তোমার স্কুল। নীচে ঘুমালে পিঠ ব্যাথা করবে। তখন কী হবে??
ফিহাঃ আপনারো তো কালকে থানায় যেতে হবে। আর পিঠ ব্যাথা করলে কি আমার একা করবে আপনার করবে নাহ? সারাজীবন তো লাটসাহেব এর মতো এইসব দামি দামি বিছানায় ঘুমিয়েছেন।নীচে কী আপনার ঘুম আসবে??
ফারহাজ রাগান্বিত সুরে বলে উঠে*—
তা তোমাকে দেখতে হবেনাহ পুচকি। অনেক পাঁকা পাঁকা কথা হয়েছে এইবার যাও ঘুমাতে কালকে স্কুল আছে।
এই বলে ফারহাজ নীচে ঘুমিয়ে পড়ে।
ফিহাও আর কিছু না বলে লাইট টা অফ করে পামকিনকে নিয়ে বেডে চলে যায়।
ফারহাজ বলে তো দিয়েছে সে দিব্যি ঘুমাতে পারবে কিন্তু নিজের বেড ছাডা সে ঘুমাতেই পারবে নাহ। তাও ফারহাজ কোনোরকম এডজাস্ট করে নিচ্ছে।
ফিহা একপলক ফারহাজ কে দেখে নেয়। ফারহাজের প্রতিটা কাজেই সে মুগ্ধ হচ্ছে। নিজের কস্ট হওয়া সত্ত্বেও ফিহার কস্ট হবে বলে সে নীচে ঘুমানোর চেস্টা করছে।
।।।।।চলবে কি?
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৩৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা বেড থেকে নেমে ফারহাজ এর কাছে গিয়ে দেখে ফারহাজ ঘুমে আছন্ন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ফারহাজের কস্ট হচ্ছে ঘুমাতে। ফিহা কিছুটা নরম সুরে বলে উঠে– লাটসাহেব এর এখানে ঘুমাতে কস্ট হচ্ছে আর আমি বেডে কি করে ঘুমাবো? ফিহা বিনা সংকচে ফারহাজ এর পাশে আস্তে করে শুয়ে পড়ে। বাইরের জানালা থেকে চাঁদের আলো এসে ফারহাজ এর মুখটাকে যেনো আরো আলোকিত করে রেখেছে। মন- মুগ্ধকর পরিবেশ যাকে বলে। ফিহা হাতের উপর ভর করে তার বরকে দেখে যাচ্ছে। ফিহা জানেনা তার কেনো এতো ফারহাজকে আপন লাগে। ফিহার ধারণা মতে সে যদি কারো কাছে সব থেকে বেশি সুরক্ষিত থাকে তা হলো তার লাটসাহেব বর এর কাছে। আচ্ছা লাটসাহেব কে তার কাছে এতো আপন লাগে কেন? তাহলে কি বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সাথে সাথেই কি ফারহাজ ফিহার সবকিছুতে অবস্হান করছে? এমনকি ফিহার প্রতিটি স্পন্দনও ফারহাজ এর নামে কম্পতি হয়।
✨✨✨✨✨✨✨✨✨
মাঝরাতে নিজের হাতে ভারি কিছু অনুভব করতে ফারহাজের ঘুম টা আগলা হয়ে যায় সে পাশে তাঁকিয়ে শুনতে পায় ফিহার ছোট্ট নিঃশ্বাস এর শব্দ।
ফিহা ফারহাজ এর হাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
ফারহাজ এর বুঝতে বাকি রইলো নাহ ফিহা বেড ছেড়ে নীচে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই পুচকিটাও নাহ। যার জন্য এতো কস্ট করে নীচে ঘুমিয়েছে ফারহাজ। সে দিব্যি এখন নিজে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ফারহাজের উচিৎ এখন রাগ করা প্রচুর রাগ করা। ফিহাকে উঠিয়ে গালে আস্তে করে একটা চর বসিয়ে দেওয়া কিন্তু ফারহাজের কেনো যেনো রাগ হচ্ছে নাহ।অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে।
ফারহাজ এর বেড জুড়ে এখন পামকিন এর রাজ্যত্ব চলছে।
ফারহাজ খুটিয়ে খুটিয়ে ফিহাকে দেখতে থাকে। ফিহার সেই নীল মনিযুক্ত চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে রয়েছে। যখন সেই চোখ জোড়া ফারহাজ এর দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তখন যেনো ফারহাজ একেবারেই ঘায়েল হয়ে যায়। ফারহাজ মির্জাকে এইটুকুনি মেয়ে ঘায়েল করার ক্ষমতা রাখে? স্ট্রেঞ্জ!
ফারহাজের বড্ড ইচ্ছে করছে পুচকিটার চোখের পাতায় হাল্কা করে ঠোটের স্পর্শ দিতে। ফারহাজ নিজের ইচ্ছেকে দমন করতে পারলো নাহ। হাল্কা করে ফিহার চোখের পাতায় চুমু খেলো।
ফারহাজ তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ায়। কি করছি কি সে?
ফিহার ঘুমন্ত অবস্হায় এইভাবে চুমু খাওয়াটা কি উচিৎ হলো? আপতত ফারহাজকে নিজের কাছে নিজেরই চোর লাগছে। কাউকে না বলে চুমু খাওয়াটাও মনে হয় অন্যায়। কিন্তু ফিহা তো ফারহাজের বউ!
ফারহাজ জানালার কাছে ঘেসে দাঁড়ায়।
ফারহাজ নিজেকে নিজে বুঝাতে চেস্টা করে
কিছু কিছু অনুভুতি সত্যি অদ্ভুদ। এইসব অনুভুতি আমাদের কাছে এসে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সাথে পরিচয় করে দেয়।
রাতের সকলের চোখে ঘুম থাকলেও একজন এর চোখে ঘুম নেই সে হলো ইশিকা। যার জন্য সে প্রতি রাতে কস্ট পায় সে তো দিব্যি তাকে ছেড়ে ভালো চাকরী করছে । হয়তো বিয়েও করে ফেলেছে। সব থেকে বড় কথা তার কাছে ইশিকা তো একটি অযোগ্য মেয়ে। যার কোনো গুন নেই। সে শুধু নিজের বাবার টাকা উড়াতে পারে। সারাদিন নাইট-ক্লাব পার্টি করে কাটিয়ে দেয়। নিজের ফোনটা বের করে ইশিকা কারো ছবি দেখতে থাকে। নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে নেহাল নাম টি।
সকালে,,
রেনু বেগম নীচ থেকে নামতে নামতে মিসেস ইরাকে ( ফারহাজ এর দাদি) দেখে বলে উঠে–
কই এই বাড়ির ঝগড়ুটে বড় বউ কোথায়??
তখনি মিসেস প্রিয়া ঘুম ঘুম মুখ নিয়ে এসে বলে উঠে–
মনে হয় এখনো ঘুমাচ্ছে। এইসব মেয়ে পারেটা কি?
মিসেস প্রিয়াকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন।
✨✨✨✨✨✨✨✨✨✨
তখনি তানহা বলে উঠে–
সবাইকে নিজের মতো মনে করো ভাবি?সারাদিন নিজের বান্ধুবিদের সাথে গল্প করে কাটিয়ে দাও। আর ঘুম থেকে উঠো সকাল ১০ টার দিকে।
মিসেস প্রিয়াঃ এই ছোটো আমার সাথে একদম সকাল সকাল লাগতে আসবি নাহ। বলে দিলাম।
মিসেস ইরা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে—
আরে তোমরা থামবে???সকাল সকাল কি শুরু করেছো??
তানহাঃ মা আপনি শুধু আমার দোষ টাই দেখেন। আমি তো শুধু বলতে চেয়েছিলাম আমাদের ফিহা সেই সকাল থেকে উঠে সকলের জন্যে নাস্তা তৈরি করছে।
মিসেস তানহার কথা শুনে সবাই কিছুটা অবাক হয়।
বলতে বলতেই ফিহা, নয়না ও মিলি মিলে সকলের জন্য নাস্তা টেবিলে রেখে দেয়।
ফিহা টেবিল গুজাতে গুজাতে বলে উঠে–
তোমরা ভাবলে কী করে? ফিহা এখন পড়ে পড়ে ঘুমাবে কালকে যখন ফিহা কথা দিয়েছে আজকে সকলের জন্যে সে রান্না করবে তার মানে করবেই ফিহা কখনো তার কথার খেলাফ করে নাহ হুহ।
মিসেস প্রিয়াঃ কিন্তু এই খাবার মুখে দাওয়া যাবে তো??
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
ফিহাঃ খেয়েই দেখুন নাহ মাদার ইন্ডিয়া শ্বাশুড়ি।
আর তোমরা সবাইও বসে পড়ো।
দাদুন টেবিলে বসে বলে উঠে–
বাবাহ! আমার ফিহা দিদিভাই এতো রান্না করেছে। কীভাবে করলে দিদিভাই? একা হাতে?
ফিহাঃ দাদুন! আমি তো অনেক আগে থেকেই রান্না পারি। মা শিখিয়েছিলো আজ কাজে লেগে গেলো।
আর আমি একা কোথায়?? মিলি আপু আর নয়না আপুও সাহায্য করেছে আমাকে।
ফারহাজ ঘড়ি পড়তে পড়তে নীচে নেমে এসে দেখে
ফিহা সবাইকেই খাবার সার্ফ করছে।
ফারহাজ তাড়াতাড়ি এসে কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠে—
ফিহা তুমি এখানে?
খাবার সার্ফ করছো?
স্কুলে যেতে হবে তো। সময় দেখেছো? তুমি নাকি আবার রান্নাঘরেও ঢুকেছো? কেন ঢুকেছো যদি হাত পুড়ে যেতো।
বাড়িতে এতো সার্ভেন্ট থাকতে তুমি কেনো সার্ফ করতে গেলে।
ফিহাঃ এইভাবে বকছেন কেন? আমি তো শুধু ভালোবেসে রান্না করেছি।
রেনু বেগম ঃ সত্যি বাপু! এই ছেলের দেখি কোনো লাজ-লজ্জা কিচ্ছু নেই! কীভাবে বাড়ির বড়দের সামনে বউকে বলছে রান্নঘরে কেন গিয়েছো? তা বাড়ির বউ রান্না করবে নাহ তো কী করবে?
মিসেস ইরা ওদের কান্ড দেখে শুধু হেঁসে দেয়
মিসেস প্রিয়া ঃ মনে হয় ওর বউ সামান্য রান্না করাতে মুচড়ে যাবে ঢং!
ফারহাজ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দাদুন বলে উঠে—
ফারহাজ থামো। ফিহা দিদিভাই আজকে একটু ভালোবেসে রান্না করেছে আর বকো নাহ।
তখনি রাইহান আর রাহাত এসে বসে পড়ে।
ফিহাঃ লাটসাহেব শুশুড় জ্বী আর কাকাজ্বীও চলে এসেছে আপনি বসে পড়ুন।
ফারহাজ ও একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে।
ফিহা সবাইকে নাস্তা সার্ভ করে দেয়।
ফারহাজ পরাটা খেয়ে আবারোও সেই স্বাদ টা পেলো। অন্যকেউ পেলো কিনা জানে নাহ কিন্তু ফারহাজ সেই স্বাদ টুকু পেলো। কেনো বার বার সেই এতোবছর আগের স্বাদ ফিহার রান্নাতে ফারহাজ পায় তার উত্তর নেই ফারহাজের কাছে। দাদুন হয়তো ফারহাজের অবস্হাটা বুঝতে পারলো। এতোদিন পরে সেই আগের স্বাদটুকু পেয়ে চোখে জল চলে আসলো তার। দাদুন ও ফারহাজ এর সাথে সাথে আরেকজনও সেই একি স্বাদ পেলো
গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফারহাজ।
ফিহার অপেক্ষায়৷ ফিহাকে একেবারে স্কুলে নামিয়ে সে থানায় যাবে।
তখনি ফিহা আসে। স্কুল ড্রেস পড়ে কাধে স্কুল ব্যাগ।
দুই বেনী করা।
ফারহাজ এর মনে পড়ে গেলো তাদের প্রথম দেখা। অদ্ভুদ মজাদার ছিলো।অজান্তেই মুচকি হাঁসে ফারহাজ।
ফিহার ডাকে ফারহাজ ভাবনা থেকে ফিরে আসে—
লাটসাহেব বর আমি রেডি।
ফারহাজঃ ঠিক আছে চলো।
ফিহা গাড়িতে উঠে পড়ে। আজকে তার অন্যরকম খুশি লাগছে। বরের সাথে এই প্রথম স্কুলে যাবে বলে কথা।
গাড়ি ব্রেক কষাতে ফিহা ভাবনা থেকে বেড়িয়ে গাড়ি থেমে নেমে পড়ে।
ফারহাজও নেমে পড়ে।
ফিহা যেতে গিয়েও আবার ফারহাজ এর কাছে বলে উঠে—
আমি আসছি লাটসাহেব!
ফারহাজঃ ঠিক আছে।
ফিহা যেতে গিয়ে খেয়াল করে সব মেয়েরা ফারহাজকে দেখে যাচ্ছে। এক প্রকার ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছে ফারহাজকে। ফিহা একপলক ফারহাজ এর দিকে তাঁকায়। সে তো লক্ষ ই করেনি আজ তার বরকে কতটা সুন্দর লাগছে। ব্লাক শার্ট। কালো সানগ্লাস। ব্যাস আর কি লাগে?
।।।।।।চলবে কি?
(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু,,)