পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-৪০+৪১

0
6637

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৪০ (ভালোবাসি)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসেন আমায় লাটসাহেব? ফিহা আবারোও পাল্টা প্রশ্ন করেলো ফারহাজকে। ঘরে নিস্তবতা। ফারহাজ এক পলক ফিহার দিকে তাঁকায়। ফারহাজ
হাতের টাওয়ালটা রেখে ওয়াশরুমের দিকে এগোতে নিলে ফিহা আবারোও বলে উঠে– আমার প্রশ্নের উত্তর আমি কিন্তু পাইনি! ফিহার এইরকম প্রশ্নে ফারহাজ কিছুটা সংকোচ বোধ করছে তাও নিজেকে সামলিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে গম্ভীর বলে উঠে– উত্তর টা কী খুব জরুরী? ফিহা থমথমে গলায় বলে উঠলো–
আমার জন্য আপতত জরুরী! জানেন যখন আপনি আমাকে যত্ন করেন মনে হয় আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু যখন গম্ভীর হয়ে থাকেন তখন মনে হয় আমি শুধুই আপনার দায়িত্ব এক প্রকার বোঝা!
বলুন নাহ লাটসাহেব
আমি কি আপনার দায়িত্ব নাকি ভালোবাসা?

ফারহাজঃ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সঠিক সময় নয় এখন ফিহা!

ফিহা এইবার ফারহাজ এর কাছে এসে বলে উঠে–
সময় হয়নি? মানে কি? আমার এক্ষুনি উত্তর চাই ..
আমি পারছি নাহ আর।

ফারহাজ আর না পেরে ফিহার কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠে—

শুনতে চাও উত্তর? শুনে নাও উত্তর তুমি শুধুমাত্র আমার কাছে দায়িত্ব এক প্রকার বোঝা। আমি নিজ দায়িত্বে তোমাকে এই বাড়িতে এনেছিলাম। তাই তোমার যত্ন করাও আমার দায়িত্ব!

ফারহাজের কথায় ফিহা কোনোরকম রিয়েক্ট না করে আবারও বলে উঠলো–
বিয়ের এতোদিন পরে কী? আমার প্রতি আপনার এইটুকু ভালোবাসাও জন্মালো নাহ? আমি শুধুই আপনার বোঝা আপনার দায়িত্ব হয়ে রইলাম?
কথাটা বলতে গিয়েও ফিহার গলা ধরে আসছিলো।

ফারহাজ ফিহার কাঁধ আরো শক্ত করে চেপে ধরে
এতে ফিহা ব্যাথা পেলেও সে চুপ করে থাকে ফারহাজ আবারোও বলে উঠে—
ভালোবাসা? কিসব ভালোবাসা ভালোবাসা শুরু করেছো? হ্যা? এইটুকু বয়সে কি বুঝো ভালোবাসার মানে? এইটুকু একটা মেয়ে ভালোবাসার কথা বলো? আমাদের বয়সের পার্থক্যটা দেখেছো? গুনে গুনে ১১-১২ বছরের বড় আমি। এইসব ভালোবাসা ই আর যাই হোক এই ফারহাজ মির্জা অন্তত এখন বিশ্বাস করেনা।

কথাটা শুনে ফিহার নীল মনি বিশিষ্ট চোখ জোড়ায় নোনা জল গড়িয়ে পড়ে।

ফারহাজ ফিহার থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। কেননা ফিহার সেই ভয়ংকরী চোখজোড়ার জল যে তার বুকে তীরের মতো বিধে যায়।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

ফিহা নিজের চোখের জলটুকু মুছে ফারহাজ এর দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে–
মুখ ঘুড়িয়ে নিলেন কেন? আমাকে তো আপনি ভালোবাসেন ই নাহ তাহলে কেন আমার চোখের জল দেখতে পারেন নাহ? লাটসাহেব?

ফারহাজ ফিহার দিকে না ঘুড়েই বলে উঠে–
তেমন কিছুই নাহ।

ফিহা এইবার কিছুটা হেঁসেই বলে উঠলো–
ভালোবাসেন নাহ ঠিক আছে কিন্তু আমার ফিলিং গুলোকে অসম্মান করার কোনো অধিকার আপনার নেই! আর বললেন নাহ? বয়স। ভালোবাসা বয়স দেখে হয়না। কখন কোথায় ভালোবাসা টা হয়ে যায় কেউ বুঝতে পারেনা। ভালোবাসতে বয়স লাগেনা ভালোবাসতে লাগে মন! পবিত্র দুইটি মন। হ্যা আমি আপনাকে ভালোবাসি।

কথাটা সোজা ফারহাজ এর বুকে গিয়ে বাঁধলো। এক শীতল শান্তি বইয়ে গেলো
ফারহাজ অসহায় দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাঁকালো।

ফিহা বলে উঠে-
শরিয়ত মোতাবেক আপনি আমার স্বামী আর স্বামীকে ভালোবাসা টা আমার কাছে দোষের কিছু নয়।

ফারহাজঃ ফিহা তুমি কি ভুলে গেলে? কোন পরিস্হিতে আমাদের বিয়েটা হয়েছিলো? একপ্রকার জিদের বশে আমাদের বিয়েটা হয়েছিলো। তুমি আমার শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব । সো এইসব সো ক্লড ভালোবাসা নিজের মাথা থেকে যত তাড়াতাড়ি ঝেড়ে ফেলতে পারো ততো ভালো। এইসব ছেলে-মানুষি বাদ দাও
এই বলে ফারহাজ নিজের ওয়ালেট টা নিয়ে আবারো বেড়িয়ে পড়ে।

ফারহাজ চলে যেতেই ফিহা ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ফারহাজ এর প্রতিটা কথা তার গা্ঁয়ে কাটার মতো বিধছে। ফারহাজ তার ভালোবাসাকে ছেলে- মানুষি বললো? ফারহাজ কেনো ফিহার ফিলিংস টুকু বুঝলো নাহ। তার লাটসাহেব কি কখনো বুঝতে পারবে?

মিসেস ইরা ( ফারহাজ এর দাদি) ওষুধ হাতে নিয়ে দেখে মিঃ রাইজাদা ঘরে নেই। কোথায় গেলো লোকটা?

রেনু বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিঃ রাইজাদার কাঁধে হাত রাখেন। মিঃ রাইজাদার চোখ দেয়ালে আটকানো একটি সুখী পরিবারের ফ্রেমের। মিঃ নিবিড় মির্জা মিসেস আরিশা মির্জা তাদের মাঝখানে
১৪ বছরের একটা ছেলে আদ্র ও চার বছরের একটি বাচ্ছা মেয়ে নীলা । হ্যা রেনু বেগম ও মিঃ রাইজাদা নিবিড় ও আরিশা তথা ফিহার বাবা-মায়ের রুম.। রুম গুলো প্রায় বন্ধ হয়েই থাকে। তেমন কেউ এই রুমে আসে নাহ। মিঃ রাইজাদার মনটা যখন খারাপ হয়ে যায় তখন এই রুমে ছুটে আসে।

রেনুঃ ভাই হঠাৎ এই রুমে?

রাইজাদাঃ নাহ আসলে আমার মন হয় কি ফিহার জানা উচিৎ নয় কী তার পরিচয় টা?

রেনুঃ আমি তো বললাম ই ফিহাকে সব বলে দে। ফারহাজকেও ফিহার আসল পরিচয় টা বলে দে।

রাইজাদা মির্জার চোখ ভোরে উঠে।

রাইজাদাঃ কীভাবে বলবো? রে যতই হোক। ফিহাদের এই পরিনতির জন্যে আমরা কি পরক্ষভাবে দায়ী নই? কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবো আমরা?

অতীত,,,,

আরিশা কোমরে শাড়ি গুজে লাফাতে লাফাতে সকলের জন্যে চা বানাচ্ছে। নিবিড় রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে
আরিশার কান্ড দেখে এক ধমক দিয়ে বলে —
এক ছেলের মা হয়েও এই লাফানো কমে নাহ তোমার?

আরিশাঃ তো আমি কী করবো? আমি হলো গ্রামের মেয়ে। আমার আবার লাফালাফি না করলে একটুও ভালো লাগে নাহ।

নিবিড় ঃ কিন্তু আপনার পেটে যে আমার ছোট্র রাজকন্যা টা বেড়ে উঠছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে তো তাইনা??

আরিশাঃ চিন্তা করবেন নাহ জনাব। আপনার রাজকন্যা আমার পেটে একেবারে সেফ থাকবে।

এই বলে আরিশা চায়ের কাপ নিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে গেলো। নিবিড় মুচকি হেঁসে কফি কাপে চুমুক বসালো।

এইবার পরিচয়ে আসা যাক নিবিড় মির্জা একজন সৎ পুলিশ অফিসার। ছোটবেলায় তার বাবা-মা মারা যায়। সে ছোট বেলা থেকেই সে তার কাকা রাইজাদা মির্জার কাছে বড় হয়েছে। রাইজাদা মির্জারা দুই ভাই ছিলেন। ছোট ভাইয়ের একমাত্র ছেলে । নিবিড় একবার গ্রামে ঘুড়তে যায় সেখানেই আরিশার সাথে তার প্রেম হয় অতপর বিয়ে। যদিও এই বিয়েতে মিসেস ইরার ঘোর আপত্তি ছিলো।৷ কেননা তিনি তার বোনের মেয়ের সাথে নিবিড়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন। তাই তিনি আরিশাকে এক প্রকার দেখতেই পারে নাহ।

আরিশা মিঃ রাইজাদার রুমের সামনে এসে নক করে বলে উঠে–
আসবো কাকা?

রাইজাদাঃ আরে আরিশা মা আয়!

আরিশা রুমে প্রবেশ করে। মিঃ ইরা এতে কিছুটা বিরক্ত হয়।

আরিশাঃ কাকু তুমি চা টা খেয়ে নাও। তারপর তোমার ওষুধ টাও খেয়ে নিবে।

রাইজাদাঃ সত্যি রে মা! এই বাড়িতে আরো দুইজন বউ আছে কিন্তু বাড়ির সব কিছু তুই খেয়াল রাখিস।

ইরাঃ হ্যা হ্যা উনি ই সব কাজ করে আর আমরা কিচ্ছুটা করিনা।

রাইজাদাঃ আহ তুমি থামবে।

আরিশাঃ আচ্ছা থাক কাকু! বাদ দাও নাহ।

এদিকে,
আদ্র(অথার্ৎ আমাদের আহান) মনোযোগ সহাকারে ভিডিও গেম খেলছে। সারাদিন গেমিং নিয়েই সে শুধু বিজি থাকে।
তখনি ছোট্ট ইশিকা ও ছোট্ট নিলয় ছুটে চলে আসলো তাদের আদ্র ভাইয়ার কাছে। তারাও তাদের আদ্র ভাইয়ার কম্পিউটারে গেম খেলবে।

ইশিকাঃ আদ্র ভাইয়া আমারাও গেম খেলবো।

আদ্র কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো–
এই হলো! আমি যখনি গেম খেলতে চলে আসি।
তখনি তোরা আমাকে বিরক্ত করতে চলে আসিস কেন হুহ? যাহ বলছি।

আদ্রর কথা শুনে নিলয় কিছু না বুঝলেও ইশিকা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়।

ফারহাজ সবে মাত্র এক্সারসাইজ করে এসেছে। ছোটবেলা থেকেই নিজের ফিটনেস নিয়ে ফারহাজ যথেস্ট সচেতন।
ইশিকা কান্না শুনে সে চলে আসে।

ফারহাজঃ কীরে আদ্র! তুই আমাদের ছোট্ট বোন টাকে এইভাবে কাঁদাচ্ছিস???

আদ্রঃ এইতো চলে এসেছে আমাদের বাড়ির মিঃ এংরি ম্যান।

আদ্র ও ফারহাজ সম বয়সী! দুজনের মধ্যে প্রায় ঝগড়া লেগে থাকলেও দুজন ভালো বন্ধু।

ফারহাজকে দেখেই ইশিকা তার কাছে ছুটে যায়।

ইশিকাঃ ভাইয়ু দেখ আদ্র ভাইয়া আমাদের গেম খেলতে দিচ্ছে নাহ।

ফারহাজঃ আমি দেখছি তুই কাঁদিস নাহ।
আর তুই এংরি ম্যান বলা থামবি?

আদ্রঃ তা বলবো নাহ তোর যা রাগ।

ফারহাজঃ দেখ আমিও নিবিড় কাকাইয়ের মতো পুলিশ হবো সো পুলিশদের রাগ থাকাটা কি স্বাভাবিক নয়? রাগি না হলে ক্রিমিনালদের কীভাবে ধরবো? যেমন কাকাই ধরে। ইউ হো কাকাই ইজ মাই আইডল

আদ্রঃ হুহ পুলিশ? আমি তো বাবা পুরো লাইফ টা ইঞ্জয় করবো। জাস্ট চিল ওকে?

উপর থেকে সবকিছুই শুনছেন মিসেস প্রিয়া ও ইরা।

মিসেস প্রিয়াঃ দেখলেন মা? কীভাবে নিবিড় আমার ছেলেটার মাথা খাচ্ছে।

ইরাঃ তা নয়তো কী? এতো বড় বিসনেজ থাকতে আমার নাতি কিনা পুলিশে জয়েন করবে হুহ।
সব হলো অই আরিশা আর নিবিড়ের আস্কারা। নিজেদের ছেলেকে ঠিকই বিসনেজ এ ঢুকাবে। আর আমাদের নাতিকে পুলিশে পাঠাবে।

।।।।।বর্তমান,,,,

গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছে ফারহাজ। তার পাশেই রাগে ফুশছে।

এশাদঃ ফারহাজ তুই শেষে কিনা বয়স নিয়ে কথা বললি ? আর পাগল ভালোবাসা কি বয়স দেখে হয়? ভালোবাসা হয় দুইটি হ্রদয়ের গহীন থেকে। ফিহার ফিলিংসটা কী স্বাভাবিক নয়? তুই কী করে পারলি ফিহাকে এইভাবে কথা শুনাতে?

এশাদের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে ফারহাজ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে–
জানিস আমার পুচকি আমাকে আজকে বলেছে সে আমাকে ভালোবাসে ভাবা যায়? কত গম্ভীর গম্ভীর কথা বললো। হঠাৎ করেই আমার পুচকি যেনো বড় হয়ে গেলো। জানিস যখব আজকে আমার পুচকি বউ টা ভালোবাসি শব্দটি উচ্চরণ করলো বিশ্বাস কর আমার মনে অজানা এক শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।
পুরো শরীর যেনো কেঁপে উঠলো। সত্যি অনুভুতি টা ভয়ংকর ছিলো।

এশাদ স্পষ্ট দেখতে পারছে ফারহাজ এর চোখ-মুখে খুশির ঝলক।

এশাদঃ এইসব এর মানে কি ফারহাজ? তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই খুশি। তাহলে ফিহাকে এতো বাজে কথাগুলো বলার মানে কি?

ফারহাজ ঃ তোর উত্তর টা অজানা নয়? আজকে থানায় যা হলো এরপরে আমার আর বুঝতে বাকি নেই। এর পিছনে শুধু আহান আহমেদ নয় আরো অনেকের হাত আছে। আমি এখন যেই মিশনে এ যাবো। সেই মিশনটা সম্পুর্ণ আমাকে একা করতে হবে। পদে পদে রয়েছে বিপদ। আমার সামনে কি রয়েছে তাও আমি জানি নাহ। আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে আমার পুচকিকে জড়ানোর কোনো মানেই হয়না। ফিহার সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। তাই আমার থেকে ফিহাকে দূরে সরানোর জন্যে এই কথাগুলো জরুরী ছিলো।

এশাদঃ কিন্তু তোর এই কথাগুলো ফিহাকে কতটা বাজেভাবে এফেক্ট করবে তুই জানিস? ফিহার বয়স টা ঠিক নয়। এই বয়সে অনেকেই আবেগের বশে অনেক রকম পদক্ষেপ নিয়ে নেয়। ফিহাও যদি আবেগের বশে কোনো ক্ষতিকর পদক্ষেপ নিয়ে নেয় তখন কি করবি?

।।।।।।চলবে কি?

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব -৪১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ভালোবাসা দিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো?আমি তো অধিকার চাইনি। শুধু একটুখানি ভালোবাসা চেয়েছি কিন্তু আজ বুঝে গেলাম আমি এমন একজনের কাছে ভালোবাসা চেয়েছিলাম যার কাছে আমি দায়িত্ব কিংবা একটা বোঝা ছাড়া আর কিছুই নই। আপনমনে কথাগুলো বলে চোখের পানি গুলো ছাড়লো ফিহা। মির্জা বাড়িতে সে ফারহাজের বউ হয়ে প্রবেশ করেছিলো কিন্তু আজ যেনো সেই সম্পর্কের শিকরটাই ফিকে হয়ে গেলো তার কাছে। কাউকে ভালোবাসা টা কী খুব দোষের?
সে তো মন প্রাণ তার লাটসাহেব বরকে ভালোবেসে ফেলেছে। তাহলে কি ফিহা দোষ করলো? পামকিন ও কেমন মিউয়ে পড়েছে ফিহার চোখের জল দেখে।
ফিহা পামকিন এর মাথায় হাত-বুলিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নাহ আর সে এই বাড়িতে থাকবে নাহ। তার ছোট্ট বুকে ফারহাজ এর তিক্ত মাখা সত্য কথা তীরের মতো বিধেছে। এই ব্যাথা ফিহা আর সহ্য করতে পারবে নাহ। হয়া সে চলে যাবে সে কিছুতেই ফারহাজ এর বোঝা হয়ে থাকবে নাহ।

এদিকে,

ফারহাজ তড়িঘড়ি করে এশাদকে থামিয়ে বলে উঠে-
একদম এইসব আজেবাজে কথা বলবি নাহ বলে দিচ্ছি । আমার পুচকি যথেষ্ট স্ট্রং বুঝেছিস। অনেক সাহসী সে। সবার সাথে আমার ফিহুকে একেবারে গুলাতে যাবি নাহ এশাদ।

এশাদঃ তা না হয় ঠিক আছে। কিন্তু তুই কি বুঝতে পারছিস? তুই যা করতে যাচ্ছিস এতে তোর কত রিস্ক আছে।

ফারহাজ ঃ এছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।
তুই জানিস আজকে থানায় ঠিক কী হয়েছে? আমাকে এই ক্যাস থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ফ্ল্যাসব্যাক…..

ফারহাজ কিছুটা বাঁকা হেঁসে বলে উঠে–
এইবার কাটা দিয়ে কাটা তুলবো!

রুপঃ স্যার সত্যি বুঝতে পারছি নাহ! আপনি কি বলতে চাইছেন।

ফারহাজঃ আহা রুপ! এইটা তো খুবই সিম্পল কথা। আমি যতটুকু জানি তুমি জানো রুপ আহান আহমেদের মেইন ডেরা টা ঠিক কোথায়? যেখানে
বিষাক্ত বিষ গুলো তৈরি করা হয়। আমরা এখুনি সেখানে সিল করে ফেলবো।

রুপ কিছুটা মিনমিনিয়ে বলে—

আসলে স্যার!

রুপকে থামিয়ে ফারহাজ বলে উঠে-
আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা! রুপ তুমি জানো তুমি যদি আজকে মুখ না খুলো তাহলে তোমার জন্য ঠিক কতটা ভয়ানক শাস্তি অপেক্ষা করছে তুমি কিন্তু জানো তা!

রুপ পড়েছে মহা বিপাকে সে জানে সে যদি ফারহাজকে ডেরার সন্ধান দিয়ে দেয়। তাহলে আহান তাকে মেরেই ফেলবে উল্টো দিকে ফারহাজকে সে যদি মিথ্যে বলে তাহলে ফারহাজ সহজেই তা বুঝে যাবে।

রুপের ভাবনার মাঝেই ফারহাজ ডেকে পাঠায় ইন্সপেকটর রয়কে।

ইন্সপেক্টর রয় ঃ জ্বী স্যার বলুন!

ফারহাজঃ আপনি এখুনি ফোর্সদের রেডি হতে বলুন! আমরা এখন বেড়োবো।

ইন্সপেক্টর রয়ঃ ওকে স্যার! আমি এখুনি সবাইকে রেডি হতে বলছি!

এই বলে রয় চলে যায়।

রুপ আর কোনো উপায় না পেয়ে ফারহাজ এর সাথে গাড়িতে উঠে পড়ে।

ফারহাজঃ কোথায় যেতে হবে? লোকেশনটা আমাদের বলো রুপ!

রুপ ভাবছে এখন সে কী বলবে? কোন উপায় তার কাছে খুলা নেই।

রুপঃ আসলে স্যার আমি সিউর নাহ কিন্তু একবার শুনেছিলাম

চোরাবালির দিকে যে জজ্ঞলটা আছে সেখানে
হয়তো ডেরাটা থাকতে পারে।
রুপ বলার সাথে সাথেই ফারহাজ রয়কে বলে চোরাবালির দিকে গাড়িটা ট্রান করায়।

জজ্ঞলের কাছে আসতেই প্রথমে রুপ নেমে পড়ে। তারপর এক এক করে ফারহাজসহ সকলে নেমে পড়ে। জজ্ঞল টা বেশ গভীর। দূরে একটা বড় ব্লিডিং এর মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে।

ফারহাজ নিজের ফোর্স দের সেখানে গিয়ে দেখে ব্লিডিং টা একটা অনাথ আশ্রম। সেখানে কিছু ছোট্ট ছোট্ট ছেলে- মেয়েরা মাঠে খেলছে।

ফারহাজ সহ সকলেই অবাক হয়ে যায়। রুপ ও হিসাব মিলাতে পারছে নাহ। তার ভাষ্যমতে এখানে তো ডেরা থাকার কথা।

পুলিশদের দেখে অনাথ আশ্রমের একজন এগিয়ে আসেন।

—জ্বী আপনারা এখানে? কোনো প্রব্লেম?

ফারহাজঃ আসলে আমরা ইনফরমেশন পেয়েছি এখানে বিষাক্ত কিছু ক্রেমিকাল তৈরি হচ্ছে। তাই আমরা একটু সার্চ করে দেখতে চাই আশ্রম টা!

—-এইসব কি বলছেন? এইটা একটা সামান্য অনাথ -আশ্রম এখানে কি করে এইসব কাজ হবে? আর আপনার যদি এখানে সার্চ করুন এতে বাচ্ছাদের মনে কতটা খারাপ প্রভাব পড়তে পারে আপ্নারা বুঝতে পারছেন নাহ।

ফারহাজ কিছু বলবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠে।

ফারহাজ ফোনটা তুলে দেখে ওসি স্যার এর ফোন।

ফারহাজঃ হ্যালো স্যার!

ওসিঃ ফারহাজ তুমি কোথায় আছো? এখুনি থানায় চলে আসো।

ফারহাজঃ কিন্তু স্যার আমি তো একটা জায়গার সন্ধান পেয়েছি যেখানে বিষ গুলো তৈরি করা

ফারহাজকে বলতে না দিয়ে ওসি স্যার বলে উঠে–
আমি খবর পেয়েছি ফারহাজ। তোমরা অনাথ আশ্রমে গিয়ে সার্চ করতে গিয়েছো? ওখানে ছোট ছোট বাচ্ছারা আছে।

তুমি এখুনি থানায় চলে আসো! কমিশনার স্যার এর ওর্ডার। কমিশনার স্যার এসেছেন তুমি জলদি চলে এসো।

ফারহাজঃ রয়!

রয়ঃ জ্বী স্যার!

ফারহাজঃ গাড়ি ঘুড়াও আমাদের এখুনি থানায় চলে যেতে হবে।

যেহুতু কমিশনার স্যার এর নির্দেশ অগত্যা তাদের থানায় ফিরে যেতে হলো। ফারহাজ কেনো জেনো বুঝতে পারছে এইখানে নিশ্চই কোনো ঝামালা আছে।

ফারহাজ রা চলে যেতেই মহিলাটি কাউকে ফোন করে—
জ্বী কিং স্যার! আপনার কথামতো সব কাজ হয়ে গেছে। সবাই জানবে এইটা অনাথ আশ্রম কিন্তু এখানে আসলে তৈরি হবে বিষাক্ত ক্রেমিকাল।

কিং স্যার বাঁকা হাঁসে।

এদিকে থানায়,,,

ফারহাজ মাথা নিচু করে আছে।

কমিশনার স্যারকে দেখেই মনে হচ্ছে তিনি বেশ রেগে আছে।

কমিশনারঃ সত্যি আমি অবাক! এতোদিন কেসের এই সুরাহা করলে তুমি ফারহাজ। তোমাকে যথেষ্ট বিশ্বাস করতাম।

ফারহাজঃ কিন্তু স্যার আমার কথাটা তো শুনুন।

কমিশনারঃ আমি এখন তোমার কোনো কথাই শুনতে চাইনা। এই কেসের সাথে আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এর সম্মান জড়িয়ে আছে
আমি একটা সিদ্বান্ত নিয়েছি। তুমি এই কেস থেকে সরে এসো।

কমিশনার স্যার কথা শুনে সবাই তার দিকে তাঁকায়।

ওসিঃ কিন্তু স্যার। আমার মনে হয় ফারহাজ এই কেসের অনেক ইনফরমেশন ই কালেক্ট করতে পেরেছি। ওকে আরো কয়েকটা দিন সময় দিলে কি হয়না?.

কমিশনারঃ নাহ। আমি আর সময় দিতে পারছি নাহ সরি। অফিসার রয়! আজকে থেকে এই ক্যাস তুমি হয়ানড্যাল করবে।

রয়ঃ ওকে স্যার!

ফ্ল্যাশব্যাক ইন্ড,,,,

এশাদঃ সত্যি অনেক বড় ষড়যন্ত্র চলছে এখানে। কিন্তু এমনও হতে পারে রুপ মিথ্যে বলেছে।

ফারহাজঃ নাহ রুপ এখন মিথ্যে বলবে নাহ। আমি সিউর অই আশ্রমেই কিছু একটা আছে। কিন্তু সত্যিটা আমি বের করেই ছাড়বো।

এশাদঃ কিন্তু কী করে ফারহাজ? তোকে তো এই ক্যাস থেকে সরিয়ে ফেলেছে। আর এখন তোকে কেউ হেল্প ও করবে নাহ। যথেষ্ট রিস্ক আছে ভাই

ফারহাজ হাত দুটো ভাজ করে মৃদু হেঁসে বলে উঠে-
আমি তো জানি! এখন আমার পদে পদে বিপদ। আমার নিবিড় কাকাই ও আমার মতো পুলিশ ছিলো। তিনি সবসময় বলতেন একজন পুলিশ অফিসারের অনেক দায়িত্ব। তাকে সৎ উদঘাটন করার জন্যে কিংবা দোষী কে ধরতে রিস্ক নিতেই হবে। তাই আমি এখন চাই যতটুকু সম্ভব ফিহু আমার থেকে দূরে থাকুক। আমি জানি নাহ সামনে আমার জন্য কি আছে কিন্তু বাকি লড়াই টুকু আমাকে একাই লড়তে হবে।

এদিকে,,,,

আহান ইরিনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তখনি দেখে কিং স্যার এর ফোন।

আহান উঠে দাঁড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করে–

আহানঃ হ্যালো কিং স্যার!

কিং স্যারঃ তুমি জানো তুমি কতটা বোকামি করেছো? রুপ আমাদের ডেরার খবর ফারহাজকে বলে দিয়েছিলো।

আহানঃ ওয়াট? কিন্তু রুপ কি করে জানলো?

কিং স্যারঃ অইসব বাদ দাও! আপতত আমি ফারহাজকে কেস থেকে সরিয়ে ফেলেছি। তুমি এখন রুপের একটা ব্যাবস্হা করো। পারলে ওকে মেরে ফেলো। জাস্ট ফিনিশড অকে?

এই বলে কিং স্যার কট করে ফোন কেটে দেয়।
আহান কি করবে বুঝতে পারছে নাহ। সব টা যেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আহান চুলগুলো খামচে ধরে।
আহানের ভাবনার মাঝেই
ইরিনা নড়ে উঠে। আহান তড়িঘড়ি করে ইরিনার কাছে যায়। ইরিনার কপালে হাত রাখতেই সে চমকে উঠে বিষণ জ্বর উঠেছে মেয়েটার।

বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরে ফারহাজ। সকলে এখন ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু ফারহাজ জানে একজন এখনো ঘুমাওনি।

ফারহাজ রুমে ঢুকতেই সে খেয়াল করে
ফিহা খাটের এক কোনো কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। ফিহা বোধহয় ফারহাজ এর উপস্হিতি টের পেয়েছে তাও সে তৎখনাক অইপাশে ঘুড়ে শুয়ে পড়ে। লোকটাকে আর সে দেখতে চায়না। ফারহাজ আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ফ্রেশ হয়ে ফারহাজ বেডে শুতে নিলেই অইপাশ থেকে ফিহা বেশ কড়া গলায় বলে উঠে–
আপনি তো সবসময় নীচে ঘুমান। তাহলে আজকে বেডে কেন?

ফারহাজ খানিক্টা মৃদু কন্ঠে বলে উঠে-
আমি তো নীচে চলে গেলে কেউ একজন বেড ছেড়ে ঠিকই নীচে ঘুমিয়ে পড়ে তাই ভাবলাম আজকে বেডেই ঘুমাই। শুধু শুধু বেড খালি থাকার কোনো মানেই হয়না।

ফিহা কোনো কথা বলে নাহ। ফারহাজও লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। ফিহা ফুপিয়ে উঠে। বড্ড কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে কাঁদবে নাহ কিছুতেই নাহ। লোকটার কাছে সে আর দুর্বলতা প্রকাশ করবে নাহ যে তার ভালোবাসার মর্যাদা দিতে জানে নাহ তার কাছে কেনো ফিহা থাকবে ? তার লাটসাহেবের কাছে তো সে বোঝা ছাড়া কিছুই নাহ। চলে যাবে সে কাল্কেই চলে যাবে।

ফারহাজ ফিহার ফুপানির আওয়াজ শুনে দিব্যি বুঝতে পারছে তার পুচকি কাঁদছে। ফারহাজের ফিহার ফুপানির আওয়াজে বুকটা যে জ্বলে যাচ্ছে ফিহা কি সেই খবর রাখে? তাহলে তো সে এইভাবে তার লাটসাহেব এর প্রতি অভিমান করতে পারতো নাহ।

দুজনের মনের মধ্যেই যে ঝড় প্রবাহিত হচ্ছে তা একে অপরের কাছে অজানা। ফারহাজ আর সহ্য করতে না পেরে উঠে বারান্দায় চলে যায়। আজ নিজেকে খুব পুড়াতে ইচ্ছে করছে। ফারহাজ সিগারেট ধরায়। নিজের কস্টটাকে একটু হলেও কমাতে।

এদিকে,,

ফিহা বালিশকে জড়িয়ে শব্দ করে কেঁদে দেয়। তার ছোট্ট মনটা যে ব্যাকুল হয়ে উঠছে তার লাটসাহেব এর কাছে ছুটে যাওয়ার জন্যে। আচ্ছা সে কি আদোও পারবে তার লাটসাহেব কে ছেড়ে চলে যেতে?

ফিহাঃ আপনি কবে বুঝবেন লাটসাহেব আমার ভিতরের কস্টটা? বড্ড পুরায় আমাকে আপনার এই অবহেলা গুলো। ( কাঁদতে কাঁদতে)

।।।।।চলবে!

(কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু)