#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৪২
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
চারদিকে নিস্তবতা। ফারহাজ একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে যাচ্ছে। ফিহা কেঁশে উঠে। সে সিগারেটের গন্ধ একেবারেই সহ্য করতে পারে নাহ। ফিহা উঠে পড়ে ফারহাজ এর কাছে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ায়। ফারহাজ সিগারেট টা আবারোও মুখে নিবে তখনি ফিহা খপ করে সিগারেট টা নিয়ে ফেলে দেয়। ফারহাজ শান্ত কন্ঠে বলে উঠে-ফেলে দিলে কেন? ফিহা কিছুটা রেগে বলে উঠে- আপনি জানেন সিগারেটের গন্ধ আমি সহ্য করতে পারিনা । তারপরেও খেয়ে যাচ্ছেন। বুঝি বুঝি আমি এই ঘরে থাকি এইটাই আপনি সহ্য করতে পারেন নাহ। চিন্তা করবেন নাহ কালকের থেকে ফিহা নামক বোঝাটাকে আর সহ্য করতে হবে নাহ। আমি কালকেই চলে যাবে আমি আমার মায়ের কাছে । খানিক্টা অভিমানের কন্ঠে বলে উঠলো ফিহা। কথাটা শুনে ফারহাজের বুকটা মোচর দিয়ে উঠে। কিন্তু তার কেনো কস্ট হচ্ছে? সে তো এইটাই চেয়েছিলো। ফিহা চলে যেতে নিলে ফারহাজ ফিহার হাত জোড়া ধরে ফেলে। ফিহা ফারহাজের দিকে ছলছলে চোখে তাঁকায়। ফারহাজ ফিহার হাত ছেড়ে বলে উঠে-
কিন্তু এই বাড়ির লোকেদের কি বলবে? দাদুন জানলে কস্ট পাবে আর সব থেকে বড় কথা তুমি আমার দায়িত্ব! তোমার সমস্ত দায়-ভার আমার।
ফিহাঃ আমি দাদুনকে নিজের মতো কিছু একটা বুঝিয়ে দিবো। আর আমি আগেও বলেছি আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা।
এই বলে ফিহা গটগট করে বেড়িয়ে যায়। ফারহাজ মেঝেতে বসে কিছুটা হাঁসে। এই হাঁসিতে শুধু যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই নেই!
আহান ইরিনার অবস্হা দেখে কিছুটা উত্তেজিত হয়। বেশ জ্বর হয়েছে মেয়েটার। এখনি ডক্টর ডাকতে হবে। আহান উঠতে নিলেই ইরিনা জ্বরের ঘোড়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। ইরিনা বিড়বিড় করে বলে উঠে-
আমাকে ছেড়ে যাবেন নাহ আহান! আমার বড্ড ভয় করছে। আম ফিলিং সো টায়ার্ড! এই বলে ইরিনা আহানেত বুকে ঢলে পড়ে। আহান বুঝেছে এই মুহুর্তে ইরিনাকে ছেড়ে যাওয়াটা ঠিক হবেনা। আর তাদের বাড়িটা শহর থেকে বেশ দূরে। তাই আহান ইরিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যাতে কিছুটা হলেও ইরিনার কাপনি টা কমে।
কিং স্যার নিজের প্রয়োগের ঘরে বসে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করছেন। তখনি কমিশনার স্যার প্রবেশ করে। কমিশনারকে দেখে কিং স্যার বলে উঠে-
আরে আহসান সাহেব বসুন বসুন!
কমিশনার বসে পড়ে বলে উঠে-
তোমার কথামতো ফারহাজকে এই ক্যাস থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে!
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
কিং স্যারঃ জানো তো এই জন্যই তোমাকে আমার এতো ভালো লাগে! থ্যাংকস!
কমিশনারঃ প্লিয কিং তুমি অন্তত এইসব ফর্মালেটি করো নাহ। আজকের থেকে নয় সেই ১১ বছর আগের থেকে তোমার কম্পানির সাথে আমার ৩০% শেয়ার। তুমি যদি ফেঁসে যাও তাহলে তো আমিও ফেঁসে যাবো তাই নয় কি? তাই তোমাকে প্রটেক্ট করা আমার দায়িত্বের উপরে পড়ে। নিশ্চিন্তে তুমি তোমার এক্সপেরিমেন্ট করে যাও। বিষ বানিয়ে যাও আর এদিকে আমি একটু লাভের আশা পাই বলেই
খানিকক্ষণ হাঁসলো আহসান সাহেবে।
কিং স্যার কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো-
অকারনে হাঁসাটা আমি মোটেও পছন্দ করিনা।
ফারহাজকে আমি যতটা চিনি সে একেবারেই নিবিড়ের মতো হয়েছে। মির্জা বাড়ির রক্ত বইছে তো।
এতো সহজে হার মানবে বলে মনে হয়না।
কমিশনারঃ তুমি যদি নিবিড়ের ছেলে আহানকে নিজের কন্ট্রোল করতে পারো তাহলে ফারহাজ তো তোমার কাছে পানি-ভাত।
কিং স্যারঃ মির্জা বাড়ির কাউকে আমি ভরসা করিনা। আহানকেও আজকাল আমার বেশি একটা ভরসা করছি নাহ। নিবিড় মির্জার ছেলে সে। ওর উপরও কড়া পাহাড়া বসাতে হবে।
ফারহাজ যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে ফারহাজের পরিনতিও তার কাকাইয়ের মতো হবে।
সকালে,,,
ফিহা পামকিনকে কিছু গাজর খেতে দিয়ে। ব্যাগ গুজাচ্ছে। আজকে সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
দাদুনকে ও রেনু বেগমকে সে মেনেজ করে নিয়েছে। মায়ের জন্যে মন খারাপ করছে তাই কয়টাদিন মায়ের কাছে থাকতে চায় ফিহা। তাই মিঃ রাইজাদা কিংবা রেনু বেগম ও আপত্তি করেন নি।
তানহা ফিহাকে সাহায্য করছে। রেনু বেগম পান খানি মুখে দিয়ে ফিহার রুমে এসে বলে উঠে-
দিদিভাই তুই যে আজকে যাচ্ছিস। আমি কার সাথে ঝগড়া করবো বল দেখি?
রেনু বেগমের কথা শুনে কিছুটা হেঁসে দেয়। ফিহা
ফিহার রেনু বেগমের কাছে গিয়ে রেনু বেগমকে জড়িয়ে বলে উঠে-
আমি তো খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবো! তারপর কিন্তু তোমার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করবো স্টার জলসার ভয়ংকরী দিদা।
দাদুন ও চলে আসলো।
দাদুনঃ আমাদের পার্টনারশিপ এর কি হবে দিদিভাই?
ফিহাঃ আগের মতোই থাকবে। আমার উপস্হিতি এই বাড়ির লোকেদের একটু তুমি টাইট দিয়ে দাও তো দাদুন
ইশিকা পিছন থেকে বলে উঠে-
আমাকে টাইট দেওয়ার জন্যই তো তোমাদের এই পার্টনারশিপ! কিন্তু বাবা আমি কিন্তু এখন আর এইসব পার্টি করিনা বলে দিলাম। কিন্তু ফিহা আজকে তুমি চলে যাচ্ছো আমার সত্যি খারাপ লাগছে।
ইশিকার কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো। আসলে কয়দিনে ইশিকা ফিহার সাথে বেশ ফ্রেন্ডলি হয়ে গেছে। বলতে গেলে আগের মতোই চঞ্চল হয়ে গেছে। ইশিকার এই পরিবর্তনে বাড়ির সবাই খুশি।
নায়নাও মিলির মনও বেশ খারাপ। এই কয়দিনে ফিহার সাথে তারা কত্ত মজা করেছে। ফিহা সবাইকে খুব আপন করে ফেলে।
নয়নাঃ মিস্টি ভাবি! আপনাকে অনেক মিস করমু।
মিলিঃ হ ভাবি! আমার যে এখন কি যে খারাপ লাগতাছে কি কমু!
ফিহাঃ তোমরা মন খারাপ করে থেকো নাহ। তোমরা মন খারাপ করে থাকলে কী আমার ভালো লাগে বলো? আমি তো তাড়াতাড়ি চলে আসবো। কিন্তু এখান যাওয়ার সময় যেনো কেউ যেনো মন খারাপ না করে হুহ। সবাই হাঁসবে
বলতে বলতে ফিহার চোখে জল চলে আসে। সে তো বলে দিলো সে চলে আসবে কিন্তু আদোও কি এই বাড়িতে তার ফিরে আসা হবে?
রেনু বেগম ফিহাকে জড়িয়ে ধরে।
গাড়ির ড্রাইভার এসে ফিহার লাগেজ গুলো নিয়ে যায়। মিসেস ইরা ও মিসেস প্রিয়া তো বেশ খুশি।
ফিহা গিয়ে তাদের সালাম করে।
ফিহাঃ আমি তাহলে আসছি!
মিসেস ইরাঃ ঠিক আছে।
আপদ টা বিদাই হলেই বাঁচি(বিড়বিড় করে)
ফিহাঃ কিছু বললে?(ভ্রু কুচকে)
মিসেস ইরা(ফারহাজের দাদি)ঃ নাহ নাহ কিছু নাহ।
মিসেস প্রিয়াঃ আল্লাহ আল্লাহ করে এই মেয়েটা যেনো আর না আসে কোনোদিন এই বাড়িতে।
এই মেয়ের ভুত যেনো আমার ছেলের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারি। তারপর ভালো একটা মেয়ে দেখে আমার ছেলের বিয়ে দিবো হুহ
( মনে মনে)
দাদুন বলে উঠে-
কিন্তু ফারহাজ কোথায়? সে ফিহাকে ছাড়তে যাবে নাহ?
নিলয়ঃ আমি দেখছি ভাইয়া মেইবি ছাদে।
ফারহাজের কথা শুনে ফিহার বুক্টা কেমন একটা করে উঠলো
লোকটার সাথে কালকের পর থেকে আর দেখা হয়নি। উনি কি আমাকে ছাড়তে যাবে? নাকি যাবেনা?
ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে ফারহাজ। সে জানে আজকে ফিহা চলে যাবে। হুম যাক চলে যাক সে। তার অনিশ্চিত জীবন ফিহাকে সে মোটেও জড়াবে নাহ
তার পুচকির তো সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে।
ফারহাজের জীবন ঠিক কোনদিকে মোড় নিবে ফারহাজ নিজেও জানে নাহ। এদিকে রুপের সাথেও কোনো প্রকার কন্ট্রাক্ট করতে পারছে নাহ। যা করার ফারহাজকেই করতে হবে। এই কেসের একটা কিনারা সে করেই ছাড়বে।
তখনি নিলয় এসে বলে উঠে—
ভাইয়া লিটেল প্রিন্সেস চলে যাচ্ছে। দাদুন তোমাকে ডাকছে।
নিলয় এর কথা শুনে ফারহাজ বলে উঠে-
ঠিক আছে আমি আসছি।
গাড়িতে,,
সিল্ট বেল্ট পড়ে নিলো ফারহাজ। ফিহাকে পৌছেই সে থানায় যাবে।
গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তখনি খেয়াল করলো ফিহা পলকহীন ভাবে মির্জা বাড়ির দিকে তাঁকিয়ে আছে। এই কয়দিনে এই বাড়ির প্রতিটা ইট-পাথর। প্রতিটা মানুষ ফিহার পরম আপন হয়ে গেছে। ভালো করে বাড়িটা দেখে নিলো ফিহা। কত সুখময় স্মৃতি কাটিয়েছে এখানে সে। আচ্ছা এখন তো সে চলে যাচ্ছে সে তাহলে এখন তো তার লাটসাহেব খুব ভালো থাকবে তাইনা?
নাকি কিছু অভিমানের জন্য সম্পর্ক গুলো আলাদা হয়ে যাবে। ফারহাজ ফিহার মনের অবস্হা টা বুঝতে পারছে। কিন্তু তার মনের উপর দিয়েও তো বয়ে যাচ্ছে ঝড়। সেও তো তার পুচকিকে ছাড়া থাকতে পারবে নাহ। তার কান টা ফিহার মুখে এক্টিবার লাটসাহেব ডাক টা শুনার জন্যে আকুল হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফিহা এক্টিবারের জন্যও ফারহাজের সাথে কথা বলেনি।
ফিহাদের বাড়ির সামনে আসতেই ফিহা পামকিনকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। ফারহাজ নামতে নিলে ফিহা তাকে থামিয়ে বলে উঠে-
আমি পারবো! কাউকে আমার জন্যে শুধু শুধু কস্ট করতে হবে নাহ।
এই বলে ফিহা গাড়ির থেকে লাগেজ টা নিয়ে গটগট করে এগোতো থাকে। ফারহাজ ফিহার যাওয়ার পানে শুধু তাঁকিয়ে আছে । তার পুচকি কি একবারও পিছনে ঘুড়ে তাঁকাবে নাহ? একটিবার বলে ডাকবে নাহ লাটসাহেব বেশি রাগারাগি করবে নাহ কিন্তু সবার সাথে। ঘরের জিনিস ও ভাজ্ঞবেন নাহ। কিন্তু ফিহা পিছনে তাঁকালো নাহ।
ফারহাজঃ আমার পুচকি টা সত্যি অভিমান করেছে।
ফিহু! ভালো থেকো।
এই বলে ফারহাজ গাড়িটা ঘুড়িয়ে নেয়। এখন সে থানায় যাবে নাহ। চোরাবালির অনাথ আশ্রম টাই যাবে সে।
ফিহা হাটতে হাটতে হঠাৎ পিছনে ঘুড়ে তাঁকায়। উদ্দেশ্য এক্টিবারের জন্য হলেও লাটসাহেবকে দেখতে পাওয়া। কিন্তু ততক্ষনে ফারহাজ গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। ফিহা আশাহত হয়।
।।।।।।চলবে!
#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৪৩
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফারহাজ গাড়ি ঘুড়িয়ে অনাথ আশ্রমের দিকে যায়।ফিহা কোনোরকম ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। জোড়ে জোড়ে কিছুক্ষন শ্বাস নেয়।
বাড়িতে ঢুকতেই ফিহার মা এবং মিসেস রিহা তাকে চেপে ধরে। ফারহাজ কেনো আসেনি? ফারহাজ ফিহাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো কেনো? শেষে ফিহা কোনোরকম সবাইকে বুঝিয়েছে আপতত ফারহাজ কাজে খুব ব্যস্ত তাই ফিহা একাই এসেছে। ফিহা পামকিনকে তার ছোট্ট বেডে রেখে। ওয়াশরুমের দিকে যায় । মাথাটা ভীষন ব্যাথা করছে ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন।
সকালের আলো মুখে পড়তেই ঘুম ভেজ্ঞে যায়। ইরিনার। সে চট জলদি উঠে পড়ে।
সে ঘড়ির দিকে তাঁকায় ১২টার বেশি বাজে এতো সময় হয়ে গেছে? আর ইরিনা এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। আহানের জন্যে নাস্তা বানাতে হবে। আজ বেশি দেরী হয়ে গেছে কিন্তু আহান কোথায়? ইরিনা উঠতে যাবে তখনি সে খেয়াল করলো। আহান বিছানার এক পাশে বসে বসে ঘুমাচ্ছে। আহানকে এই অবস্হা দেখে ফিক করে হেঁসে দেয়। বেঁচারা বেশ কস্ট করেই ঘুমাচ্ছে। তাহলে কালকে রাতে যা যা হয়েছে তাহলে সেইটা কি সত্যি ছিলো? কালকের রাতের ঘটনাকে নিছক একটি স্বপ্ন ভেবেছিলো ইরিনা. । কিন্তু ইরিনার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিলো আহান। ইরিনা কেনো যেনো বেশ খুশি হলো।
লোকটা অতোটাও খারাপ নয়। ইরিনা উঠে দাঁড়ায়। সকালের ব্রেকফাস্ট বানাতে হবে।
ফারহাজ চোরাবালির দিকে গাড়িটা থামায়। খুব দূরে গাড়িটা পার্ক করে সে। কেউ যাতে না জানে সে এখানে এসেছে। ফারহাজ কিছুটা লুকিয়ে এগিয়ে যায় আশ্রম টার দিকে। কিন্তু আশ্রম টা আগের দিনের তুলনায় বেশ চুপচাপ। বাচ্ছা-কাচ্ছাও দেখা যাচ্ছে নাহ।
ফারহাজের সংদেহ টা আরো প্রখর হলো। রুপের ভাষ্যমতে এখানেই ডেরাটা থাকার কথা। যেকরেই হোক ডেরাটাই ফারহাজকে ঢুকতে হবে। কিন্তু ফারহাজ গেলেই তাকে ঢুকতে দিবে নাহ । এই কেসে ফারহাজ কিছু করতেও পারবে নাহ। কিন্তু কি উপায়? তখনি ফারহাজ খেয়াল করে দূরে একটা কুড়েঘরের মতো কিছু একটা দেখে যাচ্ছে। ফারহাজ কোনোরকম কুড়িঘরটার দিকে এগিয়ে যায়। কুড়িঘরটাও গিয়ে ফারহাজ খেয়াল করে ট্রাকের চাকার দাগ । দেখেই বুঝা যাচ্ছে এখানে ট্রাক দিয়ে কিছু আনা নেওয়া হয়। ফারহাজ কিছুটা নিচু হয়ে বুঝার চেস্টা করে আসলে এই ট্রাক কোনদিক দিয়ে গেছে। ফারহাজের চোখ একটি ছোট্ট প্যাকেটের দিকে যায়। ফারহাজ প্যাকাট টা তুলে নেয়। খালি প্যাকেট কিন্তু ছোট্ট করে লিখা আছে টোফিও!
টোফিও ব্রেন্ড। এই ব্রেন্ড এর নাম ফারহাজ শুনেছে বলে মনে হয়না। তাহলে যেই ব্রেন্ড এর নামে বিষ গুলে তৈরি করা হয়। সেই ব্রেন্ড এর নাম টোফিও?
এই ব্রেন্ড এর নাম সে তার নিবিড় কাকুর কাছে ও শুনেছিলো।
তার মানে এই টোফিও ব্রেন্ড অতীতের সাথে কোনোপ্রকার সংযুক্ত। হ্যা হবে হয়তো। ফারহাজ দ্রুত প্যাকেট টা নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগোয়।
আহানকে বসে থাকতে দেখে কিং স্যার বলে উঠে-
রুপকে সরিয়ে ফেলেছো?
আহানঃ জ্বী! রুপকে আউট অফ কান্ট্রি পাঠানো হয়েছে। যাতে ফারহাজ কিছুতেই রুপের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে না পারে।
কিং স্যারঃ তোমাকে আমি বলেছি রুপকে মেরে ফেলতে। তুমি জানো নাহ এতে কতটা রিস্ক আছে?
আহানঃ কিং স্যার আপনিও জানেন হ্যা হয়তো আমি একজন গ্যাং এর মেম্বার বাট আপনিও জানেন আমি এখনো পর্যন্ত করেনি কোনো খুন করেনি।
অকারনে কোনো খুন করা আমি সবসময়ই বিরুদ্বিতা করি। কিন্তু আপনার করা খুন গুলো ঠিক কি জন্য করছেন সেইটাই বুঝতে পারছি নাহ।
কিং স্যারঃ তুমি কি এখন আমাকে প্রশ্ন করাও শুরু করেছো আহান? ( গম্ভীর হয়ে)
বিয়ে হয়ে যথেষ্ট অবনতি হয়েছে তোমার।
কিং স্যার এর কথা শুনে কিছুক্ষন দমে যায় আহান।
কিছুক্ষন আগের কথা ভাবতে থাকে,,,,
আহান বেড়োতে যাবে তার আগেই ইরিনা বলে উঠে-
কোথায় যাচ্ছেন?
আহানঃ একটা ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে।
ইরিনা শুধু এক্টাই কথা বলে–
আমি জানি নাহ। আপনি ঠিক কি কাজে যাচ্ছেন কিন্তু
একটা কথা বলবো। কাউকে কোনোদিন অন্ধ বিশ্বাস করবেন নাহ। পরে নিজেকেই পস্তাতেই হবে।
ইরিনার কথা এখনো কানে বাজছে আহানের।
কিং স্যার এর কথায় তার হুশ আসে।
কিং স্যারঃ আমি তোমার সাহস দেখে সত্যি অবাক হচ্ছি আহান! ভুলে যেও নাহ আজকে তুমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছো!
আহানঃ আসলে….
কিং স্যারঃ থাক বাদ দাও! আমার ব্যাপার নিয়ে তোমাকে মাথা খাটাতে হবে নাহ। তুমি শুধু চেস্টা করো কীভাবে মির্জা বাড়ির থেকে প্রতিশোধ নেওয়া যায়।
ফিহা কোচিং এর উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে। মির্জা বাড়ি থেকে আসার পথে কয়েকটা বই নিয়ে এসেছিলো সে। পড়াশোনা নিয়েই তাকে এখন বেশি সিরিয়াস হতে হবে। লাটসাহেব এর কথা সে ভাব্বে নাহ কিছুতেই নাহ। ফিহার ছোট্ট মনের কথা কী তার লাটসাহেব বর বুঝে নাহ? ফিহার ছোট্ট মনটাযে শুধু প্রতিবার বলে ফারহাজ লোকটার প্রেমে পড়ে গেছে ফিহা। এই প্রেম কস্ট ছাড়া আর কিচ্ছু দিবে নাহ। নিজেকে সামলে কোচিং রুমের এর দিকে পা বাড়ায় ফিহা।
ফিহা ঢুকতেই খেয়াল করে। পটকা একটা পড়া বার বার আওড়িয়ে যাচ্ছে। টিউপ অংক করার চেস্টা করছে কিন্তু সে প্রতিবার ই ব্যর্থ! সিমি তাদের কান্ডকারখানা দেখে যাচ্ছে। স্যার এখনো আসেনি।
ফিহা তাদের কাছে গিয়ে বলে উঠে-
কিরে? কি করছিস তোরা?
টিউপ ঃ দেখছিস নাহ? অংক করছি!
পটকাঃ আমরা এখন পড়ছি।
সিমিঃ দেখলি ফিহা ভাবা যায়? আমাদের পটকা আর টিউপ ও আজকাল পড়ে।
পটকাঃ না পড়ে কি উপায় আছে বল?
এইতো সেদিন ই আমরা ক্লাস সেভেন পাশ করে ক্লাস এইটে উঠলাম। তার মধ্যে এতোগুলো মাস পেরিয়েও গেলো। সামনে বোর্ড এক্সাম।
টিউপঃ বোর্ড এক্সাম এর পরে আবার ক্লাস নাইনের পেরা। ভাবতেই কান্না চলে আসে।
সিমি জোড়ে হেঁসে দেয়। ফিহা আর কিছু না বলে চুপচাপ করে নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়ে।
সিমি ফিহাকে চুপচাপ দেখে বলে উঠে-
তোর লাটসাহেব এর গাড়ি তো দেখতে পারছি নাহ।
ফিহাঃ আজকে উনি আসেন নি!
সিমিঃ কেন? প্রতিদিন তো তোর লাটসাহেব বর তোকে ছেড়ে যায়।
ফিহাঃ আমি কয়েকটা দিন মায়ের কাছে থাকবো।
আর এখন থেকে আমাদের বাড়ি থেকেই প্রতিদিন স্কুল, কোচিং করবো।
সিমি কিছুড়া ভেবে বলে উঠে-তাই বলি
আজকে আমাদের ফিহারানি চুপচাপ কেন। বুঝি ভাই সব বুঝি ! (
ফিহা ঃ কি বুঝেছিস? ( ভ্রু কুচকে)
সিমিঃ এইযে লাটসাহেব এর কাছ থেকে কয়দিন দূরে থাকবি। দেখা হবে নাহ তোদের। তাই মনটা খারাপ। তুমি তো আবার তোমার লাটসাহেব বরকে চোখে হারাও।
ফিহাঃ কিসব বলছিস হ্যা???মোটেও আমি তাকে চোখে হায়াই নাহ হুহ ( কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে)
ফিহার এই অবস্হা দেখে সিমি না হেঁসে পারে নাহ।
সিমিঃ আমি কি বলেছি,? শুধু তুই চোখে হারাচ্ছিস?
তোর লাটসাহেব বরও তোকে চোখে হারাচ্ছে।
সিমির কথা শুনে কিছুটা তাচ্ছিল্যের হাঁসি হাঁসে ফিহা।
এদিকে,,
ফারহাজ নিজের কেবিনে বসে ভাবছে। কাকাইয়ের রুমে গেলে হয়তো কিছু একটা ক্লু পাওয়া যাবে। কেননা সে তার নিবিড় কাকাইয়ের কাছে এই টোফিও নাম টা শুনেছে। বড্ড ক্লান্ত লাগছে ফারহাজের। ফারহাজ চোখ বন্ধ করে নেয়। সাথে সাথে ফিহার হাঁসিমাখা মুখ ভেসে উঠে। ফারহাজ চোখে খুলে ফেলে। বড্ড অস্হির লাগছে। ফিহার কাছে এক্টিবার ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে ফারহাজের।মন যে বড্ড অবাধ্য। ফারহাজ আর কোনো উপায় না পেয়ে ফোন হাতে নেয়।
ফিহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠে। ভেসে উঠে লাটসাহেব বর নামটি। ফিহা বুক ধুক করে উঠে। নামটি দেখে সিমি ঠাট্টার সুরে বলে উঠে-
কিরে মিললো তো আমার কথা? শুধু আপনিও নাহ
আপনার লাটসাহেব বরও আপনাকে চোখে হারাচ্ছে। ফিহা বুঝতে পারছে নাহ ফারহাজ কেনো তাকে ফোন করেছে। ফিহা কিছু না ভেবে ফোনটা রিসিভ করে ফেলে-
অইপাশ থেকে ফারহাজ কিছুটা মিহু কন্ঠে বলে উঠে—
ফিহু!!
ফিহার শরীরে কাপুনি ধরে গেলো। ফারহাজের কন্ঠে ফিহু ডাকটি শুনে।
চলবে!