পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ পর্ব-৫৮+৫৯

0
2049

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব- ৫৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা একপলক ফারহাজের তাঁকালো। ফারহাজের এলোমেলো চুল গুলো উড়ছে বাতাসে। ফারহাজ এখন ঘুমে। দেখেই মনে হচ্ছে অনেক বছর পর, লাটসাহেব পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
ফিহার বড্ড ইচ্ছে করছে,একটিবার লাটসাহেব এর চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ফিহা চুলগুলো নিয়ে খেলতে শুরু করে দিলো। ফারহাজ কপাল কুচকে ফেললো। ঘুমের মধ্যেই সে বিরক্ত হচ্ছে, তা বেশ বুঝা যাচ্ছে। ফিহা হেঁসে দিলো। লাটসাহেব এর বিরক্তিমাখা ঘুমন্ত চেহারাও বেশ প্রেমে পড়ার কারন পাচ্ছে ফিহা। নতুন করে প্রেমে পড়ার কারন? কিশোরী বয়সের প্রেমটি তরুনী বয়সে এসে নতুনভাবে যেনো জাগ্রত হচ্ছে, নিজের স্বামীর প্রতি। ফারহাজ এর প্রতিটি ছোয়ায় যেনো প্রেমটি আরো গাঢ় হচ্ছে। কিন্তু এই প্রেমে কোনোরকম অপবিত্রতা নেই। শুধুই আছে এক চিলতি সুখ, শান্তিময় ঘেরা ভালোবাসা। হু ভালোবাসা।
ফারহাজ ঘুমের মধ্যেই ফিহাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এইবার তো ফিহার নড়ে উঠার সুযোগ টাও নেই। ফিহা নিজের অজান্তেই মুচঁকি হেঁসে, ঘুমিয়ে পড়ে ফারহাজের বুকে, কত বছর পর এই বুকে ঠায় পেলো সে।
সকালে,
ফিহা ঘুম থেকে উঠে ফারহাজকে কোথাও দেখতে না পেয়ে, মন খারাপ করে ফেললো। কোথায় গেলো তার লাটসাহেব? চলে গেলো? কিন্তু ফিহাকে না বলে চলে গেলো কেনো? ফিহা যতই ফারহাজের প্রতি রাগ দেখাক না কেন…। সে এখনো ফারহাজের প্রতি গভীরভাবে দুর্বল, যাকে বলে ভয়ংকর দুর্বলতা।
ফিহার ভাবনার মাঝেই আদিয়া তাড়াতাড়ি এসে বলে উঠে, ফিহুরে তাড়াতাড়ি নীচে চল।
ফিহা বলে উঠে, আচ্ছা কালকে কেউ কি বাসায় এসেছিলো?

আদিয়াঃ কই না তো। আমরা তো কাউকেই দেখেনি।
হঠাৎ এই প্রশ্ন করছিস কেন? (ভ্রু কুচকে)

—–তাহলে লাটসাহেব , কীভাবে বাড়িতে ঢুকলো? আবার চলেও গেলো। লাটসাহেব বাড়িতে এলো আবার চলেও গেলো কেউ ই টের পেলো নাহ। ভাব্বার বিষয়।

ফিহা মনে মনে কথাটি আওড়াতে লাগলো।

আদিয়াঃ কিরে ফিহা?

ফিহা এদিকে সেদিক তাঁকিয়ে বলে উঠে, তুই যা আমি আসছি। আদিয়া ফিহার হাত ধরে বিছানা থেকে উঠিয়ে বলে উঠে, আর তোকে এখানে থাকতে হবে এখুনি চল। কলেজে যেতে হবে। ফিহা আর কী করবে? সেও আদিয়ার সাথে উঠে নীচে চলে গেলো।

আদিয়ার আব্বু আম্মু (আংকেল আন্টি) ড্রাইনিং টেবিলে বসে ছিলো । ফিহাকে দেখে আদিয়ার আম্মু বলে উঠে- ফিহা তাড়াতাড়ি খেতে বসো, মা। তোমার না কলেজ আছে?

ফিহা জ্বী বলে টেবিলে বসে পড়ো।

আদিয়ার আব্বু এইবার ফিহার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে-
তা ফিহা মা, আজকে কখন যাবে?

আদিয়ার আব্বুর কথা শুনে ফিহা বলে উঠে,
কোথায় যাবো আংকেল?

আদিয়া তার আব্বুর এইসব বোকামি প্রশ্ন চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে বলে উঠে–

আরে ফিহুরানি আব্বু এইটাই বলছে যে, আমরা কখন কলেজে যাবো তাইনা?

আদিয়ার আব্বুও তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠে- হ্যা হ্যা তাই।

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসী রিমি)

—– আদিয়ারে, তোরা তাড়াতাড়ি খেয়ে বেড়িয়ে পর।
আমার ও আজকে কত কাজ আছে। সবকিছু আমাকে গুছাতে হবে, প্যাক করতে হবে।

বলেই আদিয়ার আম্মু আচারের প্যাকেটটা রান্নাঘরে নিয়ে গেলো।

আদিয়ার আম্মুর কথা শুনে ফিহা আরেকদফা অবাক হলো।

আদিয়ার ইচ্ছে করছে নিজের কপাল চাপড়াতে। মানে টা কী ভাই? বাবা-মা দেখি প্ল্যান বেস্তে দিয়ে দিবে। এদের নিয়ে সত্যি আমি পারিনা।

ফিহা বলে উঠলো,
আন্টি কিসের প্যাকিং করার কথা বললো?

—–আরে তুই জানিস না? মায়ের আচার এই পাড়ায় কত ফেমাস। পাশের বাড়ির কয়েকজন মায়ের কাছে
আচার চেয়েছে তাই আর কি, মা ভেবেছে আচার প্যাক করে তাদের দিয়ে দিবে।
আদিয়া চটজলদি উত্তর দিয়ে দিলো থামলো।

ফিহা আদিয়ার দিকে এক গ্লায়া পানি এগিয়ে বলে উঠলো-
তোকে বেশ অস্হির লাগছে, কী হয়েছে বল তো?

আদিয়া এইবার হেঁসেই জবাব দিলো–
কিছু না রে, আমার কথা বাদ দে। কলেজে চল।

ফারহাজ আপতত হোটেলে একটি রুম বুক করে আছে। ফারহাজ সকাল হতে হতেই চলে এসেছে। যাতে আপতত ফিহার কোনো প্রশ্নের উত্তর যেনো তাকে না দিতে হয়। ফারহাজ টি- শার্ট গাঁয়ে জড়িয়ে, আহানের নাম্বারে ফোন দেয়। সজ্ঞে সজ্ঞে আহান ফোনটি রিসিভ করে বলে উঠে, হুম শালা বল।

ফারহাজঃ তুই আমার শালা আমি নই, বুঝেছিস? (কিছুটা রেগে)

আহান এইবার ফোনটা কান থেকে সরিয়ে বলে উঠে-
বুঝলাম নাহ এই ব্যাটা আমার সাথে এইভাবে কথায় কথায় ছ্যাৎ করে উঠছে কেন?

ফারহাজঃ অই তুই কি বলছিস?

আহান ফোনট কানে লাগিয়ে বলে উঠে- নাহ রে ভাই কিচ্ছু নাহ।

ফারহাজঃ শুন সব কিছু ব্যাবস্হা করে ফেলেছিস তো?

আহানঃ হ্যা হ্যা সব হয়ে গেছে। কিন্তু বোনু?

ফারহাজ বাঁকা হেঁসে বলে উঠে-
তোর বনুর চিন্তা তোর বোনুর জামাইয়ের উপর ছেড়ে দে। তোরা শুধু প্রপারলি সব কিছুর আয়োজন করতে থাক, দাদুনের সাথে আমি সব কথা বলে ফেলেছি। কোনো কিছুর যেনো ত্রুটি ন থাকে।

বলেই ফারহাজ ফোন কট করে কেটে দিলো।

ফিহা ও আদিয়া আপতত রাস্তায় মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। কাটফাটা রোদে দাঁড়িয়ে ফিহার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে। ফিহা আদোও বুঝতে পারছে আদিয়া ঠিক কী উদ্দেশ্যে তাকে এই কাটফাটা রোদে দাঁড় করেছি তা জানে না ফিহা। ক্লাস সেই কখন শেষ, কিন্তু কখন ধরে আদিয়া ফিহাকে এই অই কথা বলে রাস্তায় আটকে রেখেছি। এইবার ফিহা না পেরে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলেই উঠে,
আচ্ছা তোর উদ্দেশ্য ঠিক কী বলতো?

আদিয়া কিছু এনিয়েবিনিয়ে বলার আগেই কেউ ফিহার সামনে ঠান্ডা শরবত এগিয়ে দেয়। ফিহা তাঁকিয়ে দেখে রাফিদ।

ফিহাঃ তুমি এইখানে?

রাফিদ দাঁত কেলিয়ে বলে উঠে-
আপনি হলেন আমার একটা মাত্র ভাবি। এই কাটফাটা রোদ্দুরে আপনে কাটফাটা রোদ্দে দাঁড়াইয়া আছেন৷ তাই ভাবলাম আপনের জন্যে
ঠান্ডা শরবাত খান লইয়া আসি।

ফিহা মুখটা বেঁকিয়ে বলল–
নিশ্চই তোমার ভাই বলেছে তাইনা? আর উনি এখানেই আছে।বলো কোথায় উনি?

রাফিদঃ নাহ নাহ আমার ভাই এখানে থাকবে কেন? সে তো, এখানে একেবারেই নেই।

ফিহা কথার মাঝেই খেয়াল করলো আদিয়া এদিকে ওদিকে শুধু তাঁকাচ্ছে। কিন্তু ফারহাজ এখানে এসেছে কিংবা রাফিদ সম্পর্কে আদিয় তো কিছুই জানে নাহ তাহলে কোনো কৌতহল দেখা যাচ্ছে না কেন? আদিয়ার মাঝে।

তখনি একটা গাড়ি এসে, আগের ন্যায় ফিহার হাত খপ করে ধরে এক ঝটকায় গাড়ির ভিতর নিয়ে গিয়ে সব দরজা বন্ধ করে ফেলে। ফিহা চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে দেখে ফারহাজ।

ফিহা কিছু বললো ফারহাজ ফিহার মুখে টেপ লাগিয়ে দেয় । ফিহা ছটফট করতে নিলেই…

ফারহাজ ধমক দিয়ে বলে উঠে-
ডোন্ট সাউট —! আর একবার যদি ছটফট করেছো কিংবা এই টেপ খুলার চেস্টা করেছো, তাহলে হাত-মুখ একেবারে বেঁধে দিবো। আর রোমান্টিক অত্যাচার এর কথা নিশ্চই ভুলে যাওনি ফিহু বলেই বাঁকা হাঁসলো ফারহাজ।

ফিহা ঢুক গিলে চুপ হয়ে গেলো। ফারহাজ এইবার রাফিদ ও আদিয়ার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো-

তোমরা তাড়াতাড়ি পৌছে গিয়ো।

ফিহা একবার রাফিদ তো একবার আদিয়ার দিকে তাঁকায়। আদিয়া কেমন কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠে- আপনি চিন্তা করবেন নাহ, জিজু। আমরা ঠিক সময় চলে আসবো
রাফিদ আবারো হেঁসে বলে বলে উঠে-
সমস্যা নাই ভাই। আমরা ঠিক মতো চইলা আমু।

আদিয়ার কথা শুনে ফিহা আরেকটা ঝটকা খেলো। তার মানে আদিয়া ফারহাজকে আগে থেকেই চিনতো? কিন্তু কীভাবে? আদিয়া বলে উঠে,

ফিহু শোন। জিজু যা বলে তাই শুনবি ওকে?

এই বলে আদিয়া কেটে পড়ে। রাফিদ হেঁসে চলে যায়।

ফিহার ভাবনার মাঝেই ফারহাজ গাড়িটি ঘুড়িয়ে ফেলে। ফিহা শুধু ভাবছে কোথায় যাচ্ছে সে? আর রাফিদ কিংবা আদিয়াকেও ফারহাজ কোথায় যেতে বললো?

চলবে?

#পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ
#পর্ব – ৫৯ (Special something)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ফিহা ফারহাজের দিকে তাঁকিয়ে আর কিছু বলার সাহস পেলো নাহ। সে জানে এখন কিছু বললেই ফারহাজ তার ভয়ংকর রোমান্টিক অত্যাচার শুরু করে দিবে, যা সহ্য করা ফিহার জন্যে সত্যি ভয়ংকর ব্যাপারে। ফিহা এইটুকু তো বুঝতে পারছে ফারহাজ গাড়িটা ঢাকার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার মানে কী ফারহাজ তাকে মির্জা বাড়িতে নিয়ে যাবে?
ফিহা নিজের প্রশ্ন গুলো কিছুটা দমিয়ে রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকালো। চট্টগ্রাম শহরটাও তার কাছে বড্ড আপন হয়ে গিয়েছিলো। আদিয়া, আদিয়ার বাবা-মা সকলেই। কিন্তু ফিহার কাছে এই বিষয়টা তো ক্লিয়ার। আদিয়ার বাবা-মা এমনকি আদিয়াও ফারহাজের ব্যাপারে সবকিছু জানতো, কিন্তু ফিহাকে কিছুই বলেনি। এতোগুলো প্রশ্ন ফিহার মাথায় যেনো সবকিছু ঝটলা পাঁকিয়ে দিচ্ছে। ফারহাজ ফিহার অবস্হা টা বুঝতে পেরে এক হাত দিয়ে ফিহার মুখের টেপ টা খুলে দিয়ে, একটি পানির বোতল এগিয়ে দেয়। ফিহা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ফারহাজের দিকে তাঁকায়। ফারহাজ সামনের দিকে তাঁকিয়ে ড্রাইভিং করতে করতে বলে উঠে-
পানিটা খেয়ে নাও। তাহলে কিছুটা রিলাক্স হবে। ফিহা ও পানির বোতল টা নিয়ে পানি খেয়ে ফেললো।

ঢাকার কাছে গাড়ি আসতেই,ফিহার চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। কত স্মৃতি আছে তার বন্ধুদের সাথে, তার মায়ের সাথে, তার আপনজনদের সাথে এমনকি তার লাটসাহেব এর সাথেও।

মায়ের কথা মনে পড়তেই ফিহার বুকটা হু হু করে উঠে। কতদিন ধরে মায়ের সাথে তার যোগাযোগ নেই। কেমন আছে তার মা? ফিহা প্রশ্নটা বুকের ভিতরে না দমিয়ে, ফারহাজকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল—
আচ্ছা আমার মা কেমন আছে? আমার প্রতি বুঝি রাগ করেছে?

ফারহাজ ফিহাকে উৎকন্ঠা দেখে বলে উঠে—
তোমার মা একেবারেই ভালো আছে। সবটাই দেখতে পারবে, একটু অপেক্ষা করো।

অপেক্ষা, হ্যা এই অপেক্ষা টুকু ছাড়া ফিহার কাছে এখন তেমন কিছুই নেই।

ফিহা খেয়াল করলো ফারহাজের গাড়ি মির্জা বাড়ির সামনে না থেমে, একটি বড় ফাইভ স্টারে হোটেলের সামনে থামে।

——— ফিহু নেমে পড়ো, আজকে আমরা এখানেই থাকবো।

ফারহাজ সিট বেল্ট টা খুলতে খুলতে বললো।

ফিহা চোখ বড় বড় করে বলে উঠে-
আমরা এখানে কেন? আমাদের তো মির্জা বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিলো।

ফারহাজ কিছুটা বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো-

হানিমুন করতে

ফিহাঃ মানে? (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)

ফারহাজ এইবার সোজা হয়ে বলে উঠে-
আরে তুমিই তো ঢাকায় নিজের শ্বশুড় বাড়িতে আসতে চাইছিলে নাহ, আমি জোড় করে নিয়ে এলাম। চট্টগ্রামে মুখটা ফুলিয়ে রেখেছিলে, বাবা কি রাগ।
এখন মির্জা বাড়িতে যেতে চাইছো কেন?

ফিহা মুখটা বেঁকিয়ে মনে মনে বলে উঠে-

উনি শুধু আমার মুখের অভিমানের কথা ই বুঝলেন, কিন্তু আমার মনের কথাটা বুঝলেন নাহ। আমার কী মির্জা বাড়ির সকলের সাথে দেখা করতে মানুষগুলোকে একপলক দেখতে কি আমার ইচ্ছে করেনা? কার কাছে কি এক্সপেক্ট করছিস ফিহা সে তো কোনোদিন তোর মনটা বুঝেই উঠতে পারলো নাহ। ভাবতেই ফিহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

ফারহাজ জানে ফিহা তার উপর রেগে আছে, কিন্তু রাতের জন্যে ফিহার রাগ টা না হয় সে সহ্য করেই নিবে।

ফিহাঃ কিন্তু

ফারহাজ ঃ আর কোনো কিন্তু নেই৷ গাড়ি থেকো নামো ফাস্ট।

ফিহা আর কি করবে সে ও নেমে পড়লো। ফিহা ও ফারহাজ হোটেলের একটা রুম বুক করে নিয়ে, কিছু হাল্কা নাস্তা করে নিলো। কিন্তু ফ্রেশ হতে গিয়ে, ফিহা পড়লো বিপাকে। চট্টগ্রাম থেকে সে তো কোনো জামা আনেনি, কী পড়বে? ফিহা ফারহাজের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাঁকালো।

ফারহাজঃ কী হয়েছে?

ফিহাঃ গোসল করতে যাবো। কিন্তু কীভাবে করবো?

ফারহাজ দুষ্টু হেঁসে বলে উঠে-
কেনো আমি করিয়ে দিবো? যদিও আমার সমস্যা নেই।

ফিহা রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে বলে উঠে-
অসভ্য লোক, সারাদিন শুধু বাজে চিন্তা, এদিকে আমার যে জামা নেই সেদিকে কোনো খেয়াল আছে কি?

ফারহাজ কিছুটা ভাব নিয়ে বলে উঠে-
ওহ এই কথা? এখুনি প্রব্লেম সলভড করে দিচ্ছি।

বলেই ফারহাজ আলমারি খুলে একটা প্যাকেট বের করে, ফিহার দিকে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল–

আপতত এই ড্রেসটা পড়ে নাও।

ফিহাঃ কোথায় পেলেন?

ফারহাজঃ ফারহাজ মির্জার সবদিকেই খেয়াল থাকে, বুঝতে পেরেছো? যাও এখন গোসল করে এলো।

বলেই ফারহাজ সোফায় বসে ফোন টিপতে শুরু করে দিলো।

ফিহা ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে ফারহাজকে না দেখে কিছুটা অবাক ই হলো বটে। সন্ধ্যা এখন ৭টা বাজে।
কোথায় গেলো, লাটসাহেব ?

ফিহাঃ লাটসাহেব আবার এইসময় কোথায় গেলো?

ফিহা অনেক্ষন অপেক্ষা করলো রাত প্রায় ১১ ঃ৩০ বেজে গেলো এখনো লাটসাহেব এলো নাহ। ফিহার এখন ভয় লাগতে শুরু হলো

তখনি রুমের কলিং বেল বেজে উঠে। ফিহা ভাবলো হয়তো ফারহাজ এসেছে তাই সে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে একজন মেয়ে স্টাফকে দেখে কিছুটা হতাশ হলো।

ফিহাঃ কোনো দরকার?

মেয়েটা মুচকি হেঁসে বলে উঠলো-
ম্যাম স্যার আপনার জন্যে কিছু পাঠিয়েছে।

বলেই মেয়েটি রুমে ঢুকে বিছানার উপর শাড়ি-গহনা রেখে দিলো। এতো দামি শাড়ি-গহনা সব দেখে ফিহা কিছুটা নয় অনেকটাই অবাক হলো বটে। লাটসাহেব এইসব পাঠিয়েছে কেন? ফিহা মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেয়েটি কোনোরকম গটগট করে বেড়িয়ে গেলো….।

তখনি ফিহার ফোন বেজে উঠে, অচেনা নাম্বার থেকে
কেউ কল করেছে। ফিহা ফোনটি রিসিভ করে সজ্ঞে সজ্ঞে অইপাশ থেকে কেউ মৃদু কন্ঠে বলে উঠে-
ফিহু–।

কন্ঠটি শুনে ফিহার বুঝতে বাকি রইলো না ফারহাজ তাকে ফোন করেছে।

ফিহা বলে উঠে-
আপনি কোথায় আর এতো দামী শাড়ি আর এতো গয়না পাঠিয়েছেন কেনো হুহ?

ফারহাজঃ ফিহু বললাম নাহ, সব প্রশ্ন তুমি পেয়ে যাবে আগে শাড়িটা আর গয়না গুলো পড়ে নাও। আর বেশি সাঁজতে হবে নাহ। তুমি এম্নিতেই সুন্দর,কিন্তু তোমার সেই নীল মনি বিশিষ্ট চোখ জোড়ায় গাঢ়ো করে কাজল দিয়ো। একেবারেই আমার নীলাঞ্জনার মতো লাগবে।

ফারহাজের ঘোর লাগা কন্ঠ শুনে ফিহার শরীর এক প্রকার শিউরে উঠে।

ফিহাঃ নীলাঞ্জনা নামের মানে টা বুঝলাম নাহ?

ফারহাজঃ অইযে বললাম, ঠিক সময় হলে বুঝিয়ে দিবো আপতত রেডি হয়ে নাও—!
আর হ্যা পরেরটুকু না হয় পরেই বলবো। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পড়ো।

ফিহার ছোট্ট মাথায় আবার এতো কিছু ঢুকছে নাহ তাই সে শাড়িটা হাতে নেয়, খুব সুন্দর শাড়িটা। নীল হুয়াইট ডায়মন্ড স্টোনের মিশ্রনে নীল বেনারসি।

নীলা বেনারসিটি ফিহা গাঁয়ে জড়িয়ে নিলো ফিহা।

————————————
(লেখিকা ঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফিহা নিজেকে দেখছে। ফর্সা শরীরে নীল বেনারসির সাথে সোনার গয়নাগুলো যেনো ফিহার সৌন্দর্য কে যেনো দ্বীগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ফিহা ফারহাজের কথামতো তার চোখে পড়েছে কালো কালজ। নিজের চুলগুলো ফিহা খোপা করে নিয়েছে। নিজেকে দেখে নিজেই কেমন যেনো লজ্জা লাগছে, কেননা নিজেকেই সে আজ অন্যরকম রুপে দেখছে।

তখনি কেউ পিছন থেকে ফিহার চুলের খোপা গুলো খুলে দেয়। বেড়িয়ে আসে ফিহার কালো লম্বা কেশ।

_———–এইবার ঠিক আছে। চুলগুলো খোলা অবস্হাতেই তোমাকে বেশ সুন্দর লাগে নীলাঞ্জনা।

বলেই ফারহাজ হাঁসলো।

ফিহা পিছনে তাঁকিয়ে দেখে ফারহাজকে। ফারহাজকে দেখে ফিহা যেনো ক্রাশ খায়। কেননা ফারহাজকে দেখলে যে কারো চোখ বড় বড় হয়ে যাবে। ফারহাজকে আজকে হোয়াট -ব্লাক কন্বিনেশনে নীল পাঞ্জাবি পড়েছে তার উপরে রয়েছে নীল স্টোনের কালো কটি পড়েছে। ফারহাজের চুলগুলোও কপালে এসে একেবারেই লেপ্টে রয়েছে।
তার লাটসাহেব বরের দিকে চোখ ই সরছে নাহ ফিহার।

ফারহাজ ফিহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠে-
ইউ ডোন্ট নো! আজকে যেনো তোমার প্রতি আলাদা ভাবে আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছি আজকে তোমার রুপটা যেনো বেশ ভালো ভাবেই আমাকে নেশায় ফেলে দিচ্ছে বউ।

বলেই ফারহাজ ফিহার কানের লতিতে ঠোট ছুয়ালো। ফিহা কেঁপে উঠলো। ফারহাজ বলে উঠলো-
এইটুকুতেই কেঁপে গেলে হবে? আর কতকিছু বাকি আছে তার বেলায়?
You know How much i have to control my self…

(তুমি জানো কী কত কস্ট করে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে হচ্ছে?)

ফিহা লজ্জা পেলো। ফারহাজ এইবার পিছন থেকে কাপড় দিয়ে ফিহার চোখ-জোড়া বেঁধে ফেলল।

ফিহাঃ আরে আরে করছেন টা কী?

ফারহাজঃ এক জায়গায় নিয়ে যাবো। সারপ্রাইজ আছে।

ফিহাঃ কী সারপ্রাইজ?

ফারহাজঃ গেলেই দেখতে পারবে?

ফারহাজ ফিহার হাত ধরে পিছনের বাগানের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো……

হঠাৎ করেই ফারহাজ ফিহার চোখের বাঁধন খুলে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো। ফিহা কাউকে দেখতে পারছে নাহ। কেননা জায়গা টা বেশ অন্ধকার। লাটসাহেব কোথায় গেলো, কাউকেই দেখতে না পেয়ে ফিহার কেমন ভয় লাগতে শুর‍ু করলো। সে জোড়ে চিৎকার করে লাটসাহেব বলে উঠলো। কিন্তু কারো সাড়া পাওয়া গেলো নাহ

তখনি কারো কন্ঠ বেজে উঠলো-
টেন

নাইন

এইট

সেভেন

সিক্স

ফাইভ

ফোর

থ্রি

টু

ওয়ান

জিরো…..

১২ টা বেজে গেলো। সজ্ঞে সজ্ঞে আকাশে বড় বড় আতশবাজি ফুটতে শুরু হলো। ফিহা অবাকপানে তাঁকিয়ে রইলো। আকাশে ফানুশ উড়তে শুরু হলো যাতে বড় বড় অক্ষেরে লেখা—

Happy 3rd marriage anniversary my Fihu my nilanjona
my wife….

ফিহা মুখে অজান্তেই হাতে চলে গেলো।

সাথে সাথেই ফারহাজ ফিহাকে পিছন থেকে জড়িয়ে কানে আস্তে করে মৃদু কন্ঠে বলে উঠে-
আজকে আমাদের বিয়ের ৩ বছর হয়ে গেলো। মনে আছে ফিহু? ৩ বছর আগে এই দিনটিতে তুমি আর আমি বিয়ে নামক #পবিত্র_বন্ধনে_আবদ্ধ হয়েছিলাম……।

চলবে….