#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ১
১.
প্রেগন্যান্সির টেস্ট এর রিপোর্ট এর পরিবর্তে ডিভোর্স পেপার পেয়ে এক টুকরো পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছি। মুখ দিয়ে কোনো কথা ই বের হচ্ছে না।স্তব্ধ হয়ে মাটিতে বসে পরেছি।শুধু যে ডিভোর্স পেপার পেলাম তা না সাথে ইরা নামক আদির ভালোবাসা ও দেখতে পেলাম। কিন্তু নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছে আমার চাচতো বোন এমন করে আামর সংসারটা ভাঙ্গতে এসেছে।
—স্বপ্ন দেখতে পারবি কিন্তু আদিত্য চৌধুরী বউ হতে পারবিনা। ঐ যোগ্যতা তোর নেই।
আমার থেকে খানিকটা দূরে দাড়িয়ে ছিলো আদি। বসা থেকে উঠে পা জরিয়ে ধরে বললাম, আদি প্লিজ আমাকে বুঝার চেষ্টা করলো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না বড্ড ভালোবাসি তোমায়।
আমাকে এক লাথি দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো।তাহলে মরে যা। তোকে তো দেখার আমার কোনো সখ ই নেই। তো বেচে থেকে কী করবি মরে যায়। আর আমার রুচি এতো খারাপ না আমি তোকে স্পর্শ করবো।কার না কার বাচ্চা আমাকে ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে।
আদি প্লিজ আমার কোনো ভুল হলে ক্ষমা করে দেও প্লিজ তাও আমাকে এতো বড় অপবাদ দিও না। আমি সারাজীবন তোমার বাসার কাজের লোকের মতো থাকবো তাও আমাকে ছেড়ে যেয়ো না। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায় আদি।
আমার কথার কোনো উওর না দিয়ে ইরাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে। নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। আলতো করে কপালে চুমু খেয়ে হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠে চলে যায়।
নিজের ভালোবাসা সাথে অন্য মেয়েকে দেখে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। হে আল্লাহ আমাকে তুমি উঠিয়ে নেও।আদি আমাকে একা রেখে যেয়ো না। ভালোবাসি অনেক আমি যে বড্ড একা হয়ে যাবো। ভালোবাসি আদি বড্ড বেশি ভালোবাসি।
মাটিতে বসে জোরে চিৎকার করে বলছি কিন্তু আমার এই আর্তনাদ শোনার মতো কোনো মানুষ আছে বলে মনে হচ্ছে না। সবাই শুধু দেখছে আর আমাকে খারাপ বলছে।
কার না কার বাচ্চা পেটে ধরেছে। এখন বড়লোকের ছেলেকে ফাসানো প্রাণপণ চেষ্টা করছে।
আরে বলিস না বাবা মা নাই তো এতিম তাই তো এমন নষ্ট পথে পা বাড়িয়েছে। শাসন ছাড়া থাকলে যা হয়।
এসব মেয়েদের জন্য অন্য মেয়েদের বদনাম এর শেষ নেই। পৃথিবীতে কী হচ্ছে এমন নির্লজ্জ মেয়ে আমি কম দেখেছি।
মানুষজনের এমন কথা শুনে এখানে বসে থাকাটা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উঠে দাড়িয়ে পা বাড়ালাম গন্তব্যহীন পথে।
২.
দুবছর আগে প্রথম যেদিন কলেজে আসি এই কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ই আমার আর আদির দেখা হয়েছিলো। আর আজ কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ই সব হারালাম।আমি সবেমাত্র উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পার হয়েছি। নাম পরিণীতা ইসলাম। বাবা মা মারা গেছে সেই ছোটবেলা। চাচা চাচির কাছে ই মানুষ হয়েছি। চাচির অত্যাচার সহ্য করে ই থেকেছি।
আদি শুধু বলতো একটু কষ্ট করে থাকো আমার পড়ালেখা শেষ হলে তোমাকে আমার ঘরের রানী করে নিয়ে আসলো। সারাদিন শুধু তুমি আমার পাশে বসে থাকবে কোনো কষ্ট দিবো না পরী।
ইরা আপু আমার সাথে এমনটা করবে স্বপ্ন ও ভাবতে পারি নাই। এখন কী হবে আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটার। বিয়ে করেছি তিনমাস হবে। কিন্তু কথাছিলো আদির মাস্টার্সের রেজাল্ট বের হলে ই আদির আমাকে বাসায় নিয়ে আসবে।
রাস্তা দিয়ে হাটতেছি আর এগুলো ভাবতেছি। সিদ্ধান্ত নিলাম আদির বাসায় যাবো। আদির বাবা মাকে সব বলবো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ই একটা রিক্সাতে উঠলাম। গন্তব্য আদির বাসা।
বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে পা বাড়ালাম। আদির মা অনিতা চৌধুরী আর বাবা আসাদ চৌধুরী আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।
কী ব্যাপার তুমি কে। আমাদের এইখানে কী চাই।
আমি সব কিছু খুলে বলাম। পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম কিন্তু তারা আমার কথা কোনো মতে ই বিশ্বাস করতে রাজি না।
হঠাৎ সজোরে ছিটকে গিয়ে সঙ্গে থাকা টি-টেবিলে এর সাথে লেগে আমার মাথায় অনেকটা আঘাত পাই কিন্তু কেটে যায়নি। তাকিয়ে দেখলাম আদি।
এখন আমার বাবা মার কাছে আমাকে খারাপ করতে এসেছি। আমি ইরাকে বিয়ে করে ফেলেছি। আর এ বাচ্চা আমার না। তোর পাপের বোঝা তুই ই রাখ আমার ঘাড়ে চাপাতে আসবি না।
আমার কথা শুনো আদি।
আদি আর কোনো কথা শুনবে না টেনে হিঁচড়ে ইরা আপু আমাকে বাসা থেকে বেড় করে দিচ্ছে। দাড়য়ান দিয়ে আমাকে রাস্তায় বের করে দেয়।
৩.
কী করবো এখন। চাচির বাসায় যেতে ও পারবো না। আমি কনসিভ করেছি শুনে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। ইরা আপু তো সব জানে। তাও আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বের করে দিয়েছে। পেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি। এ বাচ্চাকে আমি কীভাবে পৃথিবীর মুখ দেখাবো। আমি ই তো কষ্টে থাকি তাহলে বাচ্চাটাকে কীভাবে রাখবো।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কিন্তু কোথায় যাবো আমি কোনো ঠিক নেই। পড়নে গোলাপি সাদা সংমিশ্রণ একটা শাড়ি যা আদি আামকে প্রথম গিফট করেছিলো। বলেছিলো শাড়িটা কোনো দিন আদিকে না জানিয়ে পড়ার জন্য।
ভেবেছিলাম আজকের এর খবরটা শুনে আদি বড্ড খুশি হবে। আমাকে আদির বাসায় নিয়ে যাবে। সবাইকে জানিয়ে দিবে বিয়ে করছি।চাচিকে ও জোর গলায় বলতে পারবো বাচ্চাটা আমাদের ভালোবাসা ফল। কিন্তু হলো উল্টো।
অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম। বেচে থাকা সম্ভব না। সুইসাইড করবো আমার সাইড ব্যাগ থেকে একটা ওড়না বের করে নিলাম। একটু দূরে একটা গাছ দেখতে পেলাম। রাস্তার সাইডে। গাছে ওড়নাটা বেধে নিলাম। উপরের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম। আদির মুখটা ভেসে আসছে বার বার। আর না ভেবে ওড়নাটা হাতে নিয়ে ফাঁস তৈরি করলাম।
চলবে