পরিণীতা পর্ব-০৫

0
2803

#পরিণীতা
#নাহিদা ইসলাম
#পর্ব ৫

১০.
ইলা আপু আর অর্ণব এর সামনে চুপটি করে মাথা নিচু করে বসে আছি।

–পরী তুমি কোথায় যাও হুটহাট না বলে। এতে আমাদের টেনশন হয় বুঝো তুমি।

–আপু সরি আর কখনো এমন হবে না।

–হে আমাকে তো যা ইচ্ছা বুঝ দিতে পারো কিন্তু অর্ণবকে কী দিয়ে বুঝ দিবে।

আমি অর্ণবকে কী বলবো। অর্ণব এর মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। আমার ভাবনা ছেদ করে ইলা আপু বলে উঠলো,

–অর্ণব আম্মু কল দিয়েছিলো আমাদেরকে গ্রামে যেতে হবে।

–যাও তুমি আমি যাবো না।

–আরে পরীর উপর এখন ও রেগে আছিস কেনো ছোট্ট মেয়ে এতোকিছু বুঝে উঠতে পারেনি।

–কেনো পারবে না আপু, অনেকটা বড় হয়েছে। আমি কতোটা খুজেছি ওকে তার কোনো হিসাব নাই। অফিসে গিয়ে ই উধাও হয়ে গেছে কাউকে কিছু না বলে।

–সরি আপু উনাকে বলে দেও আর কখনো না বলে কোথাও যাবো না।

— জিজ্ঞেস করো তো আপু নিজের মুখে কী পচনধরা যে তোমাকে বলতে পারছে আমাকে বলতে পারে না।

–আমার মুখে পচন ধরলে কী আপনি খুশি নাকি।

–হে মসজিদে সিন্নি দিবো।

–হে আমাকে কেউ ভালোবাসে না জানি আমি এতিম তো। এতিমকে কেউ ভালোবাসে না।

এটা বলে ই পরী নিজের রুমে চলে গেলো। খুব কষ্ট হচ্ছে পরীর। অল্পতে ই কষ্ট পায় পরী কান্না ও আসে অনেক। চুপচাপ রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। অর্ণব এর এনে দেওয়া জামাগুলো থেকে একটা জামা পড়ে নেয়। অর্ণব এর পছন্দ আসছে বলতে হবে।

–হে না হয় কী আপনাকে পছন্দ করি।

পিছনে ঘুরে অর্ণব কে দেখতে পায় পরিণীতা।

–কারো রুমে নক না করে ডুকতে হয় না জানেন না।

–আগে জানতাম না। এখন জানলাম। আপনার কাছ থেকে তো অনেক কিছু শিক্ষলাম। প্রাইভেট পড়াবেন আমাকে।

–এমন ষাড়ের মতো ছেলেকে প্রাইভেট পড়ানোর কোনো ইচ্ছা ই না।

পরিণীতার এমন কথায় অর্ণব রেগে গিয়ে পরিণীতার অনেকটা কাছে চলে আসে।

–কে ষাড়ের মতো।

–যাকে বলছি সে।

–কাকে বলেছেন।

অর্ণব পরিণীতার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। পরিনীতা পিছনে যেতে যেতে দেওয়ালে আটকে গেছে। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে সব ভুলে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছে কেনো। অর্ণব একনজরে পরিণীতার দিকে তাকিয়ে আছে। এতোক্ষণ কথা বললে ও এখন দুজনে ই চুপ। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো।

অর্ণবকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পরিনীতা ফোন এর কাছে যায়। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আদি আর ইরার অনেকগুলো পিক। দেখে বুঝা যাচ্ছে খুব ভালো ই মুহুর্তে কাটাচ্ছে আদি ইরা। আদির প্রতি ঘৃণা চলে এসেছে, এই পিকগুলো আগে দেখলে আমি হয়তো অনেক কান্না করতাম। কিন্তু এখন একটু ও খারাপ লাগতেছে না।

–কী দেখছেন ফোনে এতো মনোযোগ দিয়ে।

–কিছু না।

–রেডি হয়ে নেও আপুদের বাসায় যাবো। একটু পরে ই বেরিয়ে যাবো। আরেক বার যেনো বলার প্রয়োজন হয় না।।।

এটা বলে ই অর্ণব চলে যায়।।

হঠাৎ করে কেনো গ্রামে যাবে বুঝতেছিনা। যাই হক আমি যেহেতু তাদের বলতে গেলে আশ্রিতা ই। তাদের ইচ্ছে ই আমার ইচ্ছে। একটা দৈর্ঘ শ্বাস ফেলে পরিণতা ও নিজের ব্যাগ ঘুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

১১.

ইলা পরীকে নিয়ে পেছনে বসে অর্ণব সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে পড়ে।।। অর্ণব ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত।

–আপু আপনার ভাই এতো কার সাথে কথা বলে।

–জানিনা তো।

–এতো কথা কার সাথে আর বলবে রিলেশন করে হয়তো। দেখে তো এমন মনে হয় না। সামনে থেকে দেখে কাউকে ই চরিত্র বিচার করা যায় না। যেমন আমি আদিকে চিন্তে পারিনি। কথাগুলো মনে মনে বললো পরী।

ইলা আপু ফোন নিয়ে ব্যস্ত। অর্ণব কথা বলা নিয়ে ব্যস্ত পরিণতা বেশ নিঃসঙ্গতা অনুভব করছে। তাই ঘুমানোর চেষ্টা করছে।।।।

নিজেকে হাওয়াতে ভাসছি এমন অনুভব হলো ভাবলাম স্বপ্ন দেখতেছি কিন্তু ভালোভাবে খেয়াল করে দেখলাম আমি অর্ণব এর কোলে কারণ এমন পারফিউমের গন্ধ আমি ঐসময় অর্নব এর কাছ থেকে পেয়েছি।

–আরে আরে এতো নাড়াচাড়া করছো কেনো।

–আপনি আমাকে কোলে নিলেন কেনো।

—দাড়াও কোল থেকে নামিয়ে নেই তারপর বলি সব।

–নামান আমি হেটে ই যেতে পারি।

–চলে এসেছি। তোমার হেটে যেতে হবে না।

–তাহলে নামাচ্ছে না কেনো।

–এই এতো নামান নামান করতেছো কেনো। কতক্ষণ ডাকলাম। ঘুম থেকে উঠোনি এখন কেনো এতো নাড়াচাড়া করছো।

হে আল্লাহ কোথায় আনলা আমাকে এরা যদি আমাকে বিক্রি করে দেয়। যদি পাচারকারি হয়ে থাকে। মানুষকে এতো দ্রুত বিশ্বাস করা কী আমার ঠিক হচ্ছে। এখানকার পরিবেশ কেমন জানি বড্ড ভয় করছে যে।

চলবে