#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৩
স্যার স্যার বাহিরে একটা বাচ্চা মেয়ে দারোয়ান চাচার সাথে ঝগড়া করছে,,
বহু বছর পর ছেলের সাথে বসে একসাথে সাথে নাস্তা করছিলেন ফায়াজ সাহেব!টেবিলে সাজানো ছিলো হরেক রকম নাস্তা,খাওয়ার মাঝেই সে অনেক কথা বললেও তার ছেলে সামির ছিলো একদম নিশ্চুপ।কথার মাঝেই বাড়ির ম্যানেজার হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে, ‘কোন পিচ্চি মেয়ে নাকি বাড়ির দারোয়ানের সাথে ঝগড়া করছে,’ কথাটা শুনে সামির খাওয়া ছেড়ে ম্যানেজারের দিকে তাকায়।ফায়াজ অবাক হয়ে বলে,
-মেয়ে?কোন মেয়ের এতো বড় সাহস যে আমাদের বাড়ি এসে ঝগড়া করে যায় তাও আবার বাড়ির দারোয়ানের সাথে?
-স্যার জানিনা,মেয়েটা স্কুল ড্রেস পড়া মাঝে মাঝে দেখি এখান দিয়ে যেতে।শুনেছিলাম দারোয়ানের সাথে কিসের যেনো শত্রুতা!
-দেখতে হবে তো মেয়েটাকে,,
বলেই হাত ধুয়ে উঠে পরে দেখার জন্য কে সেই মেয়ে!বাবার পেছনে পেছনে সামিরও যায় কেনো যায় সে নিজেও জানেনা।সিঁড়ি পেরিয়ে বাড়ির মেইন গেইটের দিকে যেতেই পেছন থেকে সেই গার্ডটা বলে উঠে,
-স্যার এই গেট না পেছনের বাগান গেইটে।
বাগান গেইটের কথা শুনে সামিরের ভ্রু কুঁচকে যায় তাই তো বলি একটা মেয়ে দু টো পুরুষের সাথে কিভাবে ঝগড়া করে,আর বাগান গেইটে তো শুধু একটাই দারোয়ান।
ফায়াজ সাহেবের আগেই সামির বাগানের দিকে চলে যায়।ফায়াজ বুঝতে পারে বাগানের কথা শুনে ছেলে তার ক্ষেপেছে,,
কিন্তু সেখানে এসেও লাভের লাভ কিছুই হলো না,তাদের আসার আগেই মেয়ে চলে গেছে।দারোয়ান কে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে আহামরি কিছু বলে না সামিরের ভয়ে।শুধু বলে “মেয়েটা বাগানের কালো গোলাপ চেয়েছিলো আমি দেই নি তাই ঝগড়া করেছে,স্যার বাচ্চা মেয়ে ছেড়ে দিন”
এতে সবাই শান্ত হলেও সামিরের মেজাজ হয়ে যায় ১৮০ ডিগ্রি,আজ পর্যন্ত ওর মা ছাড়া কেও এই গাছকে ছোয় নি পর্যন্ত আর এই মেয়ে কিনা এই গাছের ফুল নিতে চায়,,এই মেয়েকে তো সে দেখে নিবে!
____________
আকাশে তপ্ত রোদ একদম খারাভাবে কিরণ দিচ্ছে,দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখন সময় বারোটা।এই রোদে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর বিরক্তে “চ” উচ্চারণ করছে মারজিয়া।সেই কখন থেকে পুতুলের জন্য অপেক্ষা করছে সে,কিন্তু তার আসার নাম নেই,কে জানে এতক্ষণ কি করছে ওও।’এইই আবার ওকে বাড়ির গার্ডরা ধরে পিটাচ্ছে না তো?হায় আল্লাহ তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। নানা রকম চিন্তা মাথা দিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে!
মারজিয়া পুতুলের স্কুলের ফ্রেন্ড,আর কেও না জানলেও মারজিয়া, পুতুল এর এই কালো গোলাপ ওয়ালা বাড়ির রহস্যটা যানে।তারা দু জন মিলে অনেক চেষ্টা করেছে এই গোলাপ নেয়ার জন্য কিন্তু প্রতিবারের মতো তারা দারোয়ানের সাথে গন্ডগোল বাধিয়ে তারপর আসে।
এমনি তো গরম তারমধ্য ভয়,সব মিলিয়ে ঘেমে একাকার হয়ে আছে মারজিয়া।কিন্তু পুতুল তো আর আসে না,
অবশেষে সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্কুল ব্যাগ সামনে দু হাতে চেপে ধরে দৌড়ে দৌড়ে এখানেই আসছে পুতুল।দু বেনি করা কাধ পর্যন্ত চুল গুলো দু সাইড দিয়ে উড়ছে,দেখে মনে হচ্ছে ছয় বছরের বাচ্চা চুরি করতে গিয়ে ধরা পরেছে তাই এভাবে দৌড়াচ্ছে।দৌড়াতে দৌড়াতে পুতুল মারজিয়ার সামনে এসে হাপানি রোগীদের মতো হাপাতে থাকে।মারজিয়া তার চোখ ছোট ছোট করে কোমড়ে এক হাত গুজে দিয়ে বলে,,
-ও মা ম্যাডাম এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লেন যে,,একটু পরে আসলেই পারতেন।
পুতুল তার ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে,,
-আরে আর বলিস না প্রতিবারের মতো আজকেও ওই বে’ডার সাথে ঝগড়া লেগেছে,,আমি বুঝি না বাপু একটা ফুল দিয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়?তবে আমি এই পুতুল হাল ছাড়ছি না।শুধু মাত্র একটা ফুল চেয়েছি তাই দেয় নি একদিন ওই গাছটাই আমি নিয়ে নিবো দেখিস!
পুতুলের কথা শুনে মারজিয়া ব্যঙ মেরে বলল,
-হুম হয়েছে তুই এই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সপ্ন দেখতে থাক আমি যাই!
-আচ্ছা যা এখন সোজা বাসায় যাবি বাসায় গিয়ে ব্যাগ রেখেই ফ্রেশ হতে যাবি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে ২মিনিটে তিন রাস্তার মোড়ে এসে দাড়াবি না হলে তোর খবর আছে,,,
-ইশশ আসছে মামার বাড়ির আবদার নাকি?আমি এখন সোজা বাসায় যাবো গিয়ে একটা লম্বা ঘুম দেবো।আহহ,,এমনি যেই গরম তার মধ্যে এই খারা রোদের মাঝে তুই আমাকে কতক্ষণ দাড় করিয়ে রেখেছিস জানিস?
-বোন প্লিজ আসিস আমার কাজ আছে এই কালো গোলাপ তো আমি নিবোই তাও আজি সেটা যে কোনো উপায়ে,,,
পুতুলের কথা শুনে মারজিয়া হাই তুলতে তুলতে বিড়বিড় করে বলে,,
-”হা এই কথাটা গত ছয় মাস ধরে শুনতে শুনতে আমার কান বুড়ো হয়ে গেছে,”
পুতুল অসহায়ের ভঙ্গিতে বলল,,
-প্লিজ দোস্ত,,,,,
হয়ে গেলো, মারজিয়াকে মন গলানোর জন্য শুধু এতুটুকুই যথেষ্ট ছিলো।এটাই নতুন না হত ছয় মাস ধরেই মারজিয়াকে এমন ব্রেইন ব্লাকমেইল করেই সব সময় রাজি করায়।আজো তাই হলো,,
মারজিয়া এক বিরক্তিকর শ্বাস নিয়ে বলল,
-আচ্ছা যাবো,,,কিন্তু আমাকে এক ঘন্টা টাইম দিতে হবে,,
মারজিয়ার কথায় পুতুল খুশিতে গতগত করতে করতে মারিজিয়ার স্কার্ফ এর মধ্যের গাল চেপে ধরে বলে,,
-থাংসু জান্স
-হুম এখন আমায় বাড়িতে যেতে দে,,
-আচ্ছা যা
তারপর তারা দু জোন দু রাস্তা দিয়ে বাড়ি চলে যায়।
দুপুরের দিকে মারজিয়া আর পুতুল আবার বের হয় তাদের গন্তব্য স্থানে,,মারজিয়া পুতুলকে এই গেটাপে দেখে তো অবাকের চরম সীমায় চলে গেছে।প্রথমে তো সে চিনতেই পারছিলো না পরে যখন মুখ দেখে তখন চিনতে পারে।পুতুলের পড়নে তার ভাবির নীল বোরকা সাথে ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা সাথে একটু লম্বা দেখানোর জন্য পড়েছে হিল!ছোট মোট পুতুলকে এভাবে দেখেলে ওই বাড়ির এমপি কেনো তার মা বাবাকে চিনতেও লাগবে অনেক সময়।
কিছুক্ষণ হাটার পর মারজিয়া একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে গেলো,আর পুতুল সামনে হাটা দিলো।খুব সাবধানতা বজায় রেখে বাড়ির বাগান গেটে যেয়ে পৌছায় পুতুল।সেখানে যেতেই তার চোখ তো চড়কগাছ!গেইটে দারোয়ান নেই,তার মানে এই সময় এখানে কেও নেই?”এতো দেখছি মেঘ না চাইতেও বৃষ্টি”
আর কোনো দিকে না তাকিয়ে তুরুতুরু করে সোজা গেইটের ভেতর চলে গেলো আশে পাশে সামনে পেছনে কেও আছে নাকি সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।দৌড়ে একেবারে কালো গোলাপ গাছের নিচে দাঁড়ায়!এদিকে যে রাস্তায় তার বোরকার একটা পিন পরে যায় সেটা খেয়াল করে নি।গোলাপ গাছের উপরে তাকিয়ে তার চোখ চক চক করে উঠে বাহির থেকে যতটা না সুন্দর তার চেয়ে সামনাসামনি দ্বিগুণ সুন্দর!মনে হচ্ছে এখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেই যাই সারা জীবন।
এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট থাকার পর তারমনে হয় সে এখানে ফুল দেখতে না নিতে এসেছে,,তাই নিজের হিল খুলে পাশে রেখে ফুল পারার জন্য লাফাতে থাকে,কিন্তু অনেক লাফালাফি করেও ফুল কেনো একটা গাছের পাতাও নড়াতে পারে নি।লাফানোর ফলে পুতুলের ওড়না দিয়ে বাঁধা হিজাব প্রায় খুলেই গেছে কিন্তু সে টের পায় নি,এখন পুতুলের খুব কান্না আসছে, এত দিন অপেক্ষা করে আজকে সুযোগ পেলো তাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে?
কিছুক্ষণ অভাবেই ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে পুতুল!চোখে টলমল পানি,,মনে হচ্ছে এখনি কেঁদে ভাসিয়ে দিবে।অসহায় ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার লাফানো শুরু করে ফুল পাড়ার জন্য। তখন পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,
-আমি কি সাহায্য করবো।
পুতুল ফুল নিতে এতোই মগ্নছিলো যে পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে খেয়ালি করে নি!
পেছনে কোনো পুরুষালী কন্ঠ শুনে পুতুল পেছনে তাকায়!তাকিয়ে দেখে সেদিনের ওই ইমনের চামচাটা,,কিন্তু এই বেডা এখানে কি করে?পুতুল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,
-এই এই তুই ওই ইমনের চ্যালা না?হুম চিনছি,,কিন্তু এখানে কি করিস?নিশ্চয় এই গাছেরফুল ছিড়তে এসেছিস?
একেই তো তার প্রিয় ফুল চুরি করতে এসেছে তার উপর তাকে চুরির অপবাদ দিচ্ছে,তাও আবার তুই তুকারি করে কার না কার চ্যালা নামে সমন্বয় করে?তাও আবার সেদিনের সেই ফাজিল মেয়েটা। এমনি বাগানে কাওকে আসতে দেখে তার রাগ উঠে গেছে তার মধ্যে পুতুলের এই কথাটা যেনো সামিরের কাছে,’আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো’
সামিরের উত্তর দেওয়ার সময় না দিয়েই পুতুল বলতে থাকে,,
-থাক থাক আর বলতে হবে না বুঝছি!আজকে আপনাকে আর কিছু বলবো না চুরি করতে যখন এসেই পড়েছেন তখন আর খালি হাতে আপনাকে ফিরতে দিবো না।কিন্তু আমার সর্ত মানতে হবে,,এমনি তো আপনি অনেক লম্বা হুম ঠিক আছে।নিন এখন গাছ থেকে ফটাফট কয়টা ফুল ছিঁড়ে নিন আমি এদিকটাই পাহাড়া দিচ্ছি আর হ্যাঁ আমাকেও কিন্তু দিতে হবে।
সামির আঙ্গুল উঁচিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুতুল সামিরের আঙুল ধরে টানতে টানতে বলে,
-প্লিজ ভাইয়া আপনি হয়তো আমার আব্বুর শত্রুর ভাই বন্ধু চ্যালা যাই হক হতে পারেন তবে আমার তো আর না।প্লিজ এই পিচ্চিটার উপর একটু দোয়া মায়া করে কয়টা ফুল ছিঁড়ে দেন না।সত্যি বলছি আপনার বা আপনার ওই বস ইমনের নামে আমি আর জীবনেও বিচার দিবো না প্রমিস,,পিলিস.!
মুখ কাদো কাদো করে কথা গুলো বলল পুতুল!সামির তার চেয়ে বেশি লম্বা হওয়ায় গলা উঁচু করে কথা বলতে হয়েছে।
হঠাৎ থমকে গেলো সামির!কি ছিলো এই মেয়ের মুখে,চোখ গুলো পানিতে টলমল করছে।মনে হচ্ছে এখন ফুল না দিলে কেঁদে একদম ভাসিয়ে দিবে,,একদম ছোট বাচ্চাদের মতো বায়না ধরেছে।মুহুর্তের জন্য সামিরের মনে হয়েছিলো পুরো গাছটা এই সামনে থাকা মায়াবিনীকে দিয়ে দিতে।কিন্তু পরক্ষণেই আবার মনে পড়লো এই ফুলগুলো ছোয়া তো দূর তাকানো সবার জন্য নিষেধ আর সেখানে কিনা এই মেয়ে চুরি করতে এসেছে?এর তো শাস্তি পাবেই!পরক্ষনেই সামিরের মুখ আবার রাগে লাল হয়ে গেলো,কপালের রোগ গুলো ফুলে উঠেছে যা একদম স্পষ্ট!
-হ্যা সামির বাবা এই সেই মেয়ে যে আপনার ফুল নিতে চেয়েছিলো।কত বড় সাহস এই মেয়ের আমাকে গেইটে না দেখেই ঢুকে পড়েছে।ভালোই ভালোই বলেছিলাম এই ফুলে নজর না দিতে,এখন লও ঠ্যালা সামির বাবার হাতে ধরা পড়ছো এখন আর তোমার নিস্তার নাই!
বলেই পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসতে লাগলো ওই দারোয়ানটা।পুতুল পেছনে তাকিয়ে দেখে কে এই কথাগুলোর মালিক।এতক্ষণে সে কিছু না বুঝতে পারলেও এই ছোট মাথায় এতটুকু বুঝে যায় যে এই ছেলে কোনো ইমন ফিমনের চ্যালাপেলা না,এই ছেলেই এমপির একমাত্র ছেলে ‘সামির’ যার কথা বাবার নামে অনেক শুনেছে কিন্তু দেখা হয় নি কখনো।অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে, আশে পাশে তাকিয়ে দেখে পলানোর কোনো পথ নেই,তাই আবার মাথা উঁচু করে সামিরের দিকে কাদো কাদো হয়ে তাকায়।দেখে সামির ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে হাত ভাঝ করে দাঁড়িয়ে আছে,তার মুখের রিয়েকশন কিছুটা এরকম “কি ব্যাপার বাচ্চু এখন কই পালাবা?আজ তো তোমার খবর আছে,”
-আসলে ইয়ে মানে ভা ভাইয়া
বলেই সামিরের এক বাহু ধাক্কা দিয়ে এক দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে পুতুল।তার ওরনা আর জুতা সেখানেই পরে আছে,,গেইটের বাহিরে এসে এক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে আবার দৌড় দিতে নিবে তখনি পায়ে কিছু একটা খুব বাজে ভাবে বিধে যায়।টালসামলাতে না পেরে পুতুল সেখানেই বসে পরে।
এতক্ষণে সামির আর দারোয়ান এখানে এসে পড়েছে,,
চলবে,,