#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_৫
খাবার টেবিলে বসে ভাবির বানানো বার্গার খাচ্ছিলো পুতুল!সস্ দিয়ে পুরো মুখ মাখামাখি,বার বার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখ মুচ্ছে আবার বার্গারে কামর দিচ্ছে।সামনের চেয়ারে বসেই নিজের মার সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে পুতুলের ভাবি ‘শ্রেয়া’।
একে একে বাড়ির সকলেই এসে হাজির খাবার টেবিলে,প্রণয় এসে পুতুলের মাথায় একটা চাটি মারলো।কিন্তু আশ্চর্য বিষয় পুতুল কোনো প্রতিক্রিয়াই করলো না,অন্য সময় হলে তো সে উল্টো দু টো বসিয়ে দিতো কিন্তু আজকে চুপ!আর এই চুপ থাকারো অবশ্যই কারন আছে,আর সেটা হলো ‘ভয়’ কোনো কারণে যদি তার বাবা বা ভাই টের পায় সে চুরি করতে গিয়েছিলো এবং ধরা খেয়ে নিজের এই হাল করেছে তাহলে তো পুরো বাড়ি আগুন লেগে যাবে,তার চেয়ে চুপচাপ থাকাই ভালো।
পুতুলের এই চুপচাপ থাকা দেখে প্রণয় বেশ অবাক হলো,ইশারা দিয়ে শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে,শ্রেয়া কিছু না জানার ভান করে একি ইশারায় বলল ‘সে কিছু জানে না’, প্রণয় আর কিছু না বলে ঠোঁট উল্টিয়ে খাবার খেতে লাগলো যেনো পৃথিবীতে এরকম জঘন্য খাবার আর কোথাও নেই।প্রণয়ের এমন মুখের রিয়েকশন দেখে শ্রেয়া একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বাবাকে খাবার দিতে লাগলো।
খাবারের মাঝেই পুতুলের বাবা পুতুল কে জিজ্ঞেস করলো,
-রাতে কি এই বার্গার খেয়েই থাকবে পুতুল?
-হুম বাবা ভাবিপু এতো ভালো বার্গার বানায় যা না খেয়ে থাকাই যায় না,আর এটা খেয়েই আমার পেট ভরে যাবে আর কিছু খাবো না।
-কিন্তু সবসময় এগুলো খাওয়া তো শরীরের জন্য ক্ষতি রে মা..!
-আরে বাবা কিছু হবে না আমার ভাবিপুর হাতে জাদু আছে,উনি যেরকম আনহেলদি খাবার খুব পারফেক্ট ভাবে বানাতে পারে ঠিক সেরকমি সবাই হেলদিও খুব পারফেক্ট ভাবে করতে পারবে নো চিন্তা।
পাশ থেকে প্রণয় বিড়বিড় কম আস্তে বেশি স্বরে বলে উঠলো,,
-হু আসছে ভাবির গান গাইতে,,
পুতুল এইবারো কিছু বলল না,বার্গারের লাস্ট বাইটটা মুখে নিয়ে নেয়।পুতুলের বাবা ছেলে মেয়ের খুনসুটি দেখে হালকা হেসে পুতুলের হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-নে এটায় অনেক চকলেট আছে ফায়াজের ছেলে সামির বিদেশ থেকে এনেছে,তোর জন্য ফায়াজ আমার অফিসে এসে এগুলো দিয়ে গিয়েছে।ফায়াজের ছেলে সামিরও একদম তার মতো হয়েছে,আমি কালকে তাদের ইনভাইট করেছি তারা আসবে বলেছে।
পুতুল ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে,ফায়াজ হলো আব্বুর বন্ধু!সঙ্গে এখানকার এম পি যে বাসায় কালো গোলাপ আছে,আর ফায়াজ আঙ্কেলের ছেলে সামির!মানে সকালে যার কাছে ধরা খেলো তার নাম সামির,আর সেই এই চকলেট গুলো পাঠিয়েছে?
সকালে সামিরের সাথে ঘটা কাহিনী মনে পড়তেই পুতুলের মুখের বার্গার চিবুতে যেয়ে দাঁত জ্বিব্বার সাথে লেগে র’ক্ত বেড় হতে থাকে।আকস্মিক চিৎকারের শব্দে সবাই তাকায় পুতুলের দিকে,দেখে মুখ দিয়ে র’ক্ত বেড় হচ্ছে তা দেখে সবাই অস্থির হয়ে পরে,,পুতুলের বাবা খাবার ছেড়ে পুতুলকে গিয়ে ধরে।
বেসিনের সামনে নিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে বার বার কুলি করাচ্ছে,তাও র’ক্ত থামার নাম নেই।এক পর্যায়ে পুতুলের মা কান্না শুরু করে দেয়,তা দেখে পুতুলের বাবা তাকে ধমক দিয়ে বলে, ‘আগে মেয়েকে ধর তা বাদ দিয়ে ন্যাকা কান্না শুরু করে দিয়েছে’
এভাবেই অনেক্ক্ষণ পড় র’ক্ত পড়া বন্ধ হয়।একদিনেই এতো কাটা ছেড়া আর ভয়ের কারনে রাতে প্রচন্ড জ্বর আসে পুতুলের,শরীর পুড়ো আগুনের মতো গরম হয়ে যায়।সারা রাত পুতুলের মা আর তার ভাবি তার সেবা আরে একটু পর পর মাথায় পানি দেওয়া বার বার করে তেল দেওয়া হাতে পায়ে মালিশ করা সব করে,,কিছুক্ষণ পর পর পুতুলের বাবা এসে দেখে যায় তার অবস্থা। এই গ্রামে এতো রাতে কোনো ডাক্তারো পাওয়া যাবে না,খুব চিন্তায় পড়ে যায় তারা!
ভোরের আগে আগে পুতুলের জ্বর পুরোপুরি কমে যায় এ যেনো শুধু রাতের দেখাই দিয়েছে,ভরের আলো ফুটতেই উধাও..!
সকাল সাতটার দিকে পুতুল কফি হাতে নিয়ে বারান্দার দোলনায় বসে আছে পুতুল,পাশেই গালে হাত দিয়ে বসে আছে শ্রেয়া।হয়তো কোনো ভাবনায় মগ্ন!প্রণয় গেছে তার শশুর বাড়ি অর্থাৎ শ্রেয়ার বাবার বাড়ি,তাদের মেয়ে স্নিগ্ধাকে আনতে।এতোদিন নানু বাসায় ছিলো আজকে এ বাড়িতে আসার জন্য বায়না ধরেছে,তার নাকি আর ঘুরতে ভাললাগছে না তাই প্রণয় নিজেই গিয়েছে।
সেই সকাল থেকে বাড়ির গার্ড থেকে শুরু করে কাজের লোকগুলো লেগে পড়েছে কাজ করতে,এ বাড়িতে এমপি সাহেবরা আসবে বলে কথা।যত ধরনের রান্না আছে সব করা হচ্ছে বাড়িতে পুরাতন ডাইনিং টেবিল সরিয়ে নতুন আনা হয়েছে,পুরো বাড়ি চকচক করছে।
এগুলোই ঘুরে ঘুরে দেখছিলো পুতুল!”তার খুব ভয় করছে না জানি আজকে কি হয়,যদি ওই এমপির ছেলে সামির না বামি’র বাবাকে সব বলে দেয় তখন কি হবে?বাই দা ওয়ে সে তো আর জানেনা যে আমি চেয়ারম্যানের মেয়ে,আমি যদি লুকিয়ে থাকতে পারি তাহলেই তো আর ধরা খাবো না,ইয়েসস আল্লাহ বাচায়ছে”
এই কথা বলেই ধেই ধেই করে নাচতে থাকে পুতুল।তখন প্রণয় সামনে এসে বলে,
-কিরে রুগী,,এমন ধেই ধেই করে নাচছিস কেনো?মনে হচ্ছে পুরো বিশ্ব জয় করে ফেলেছিস।আর কি বস্তির মতো এখান দিয়ে ঘুড়ছিস চুলের অবস্থা দেখেছিস ফ্রিতে তেল পেয়ে কি সব ঢেলে দিয়েছিস নাকি?
পুতুল এইবার আগুনে ঘি ঢালার মতো ছ্যাত করে উঠে প্রণয়কে বল,
-আমি মাথায় তেল দেই না পাউডার অল্প দেই না বেশি তাতে তোর কিরেএএএএ?আর বস্তি আমি না তুই,তোর চোদ্দগুষ্টি বস্তি হু..!
-কিরে কাঠপুতলি আমার চোদ্দগুষ্টির মধ্যে কিন্তু তুই সবার আগে পড়িস।
-ধ্যাত ভাল্লাগেনা,,স্নিগ্ধা কই ওকে আনো নি?
-হ্যাঁ তোর ভাবির কাছে দিয়ে এসেছি।
-আচ্ছা.!
বলেই ধুপধাপ পা ফেলে রুমে চলে গেলো পুতুল।ওয়াশরুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে তারপর বেড় হলো।আহহহ শান্তি…!
বাড়িতে মেহমানরা এসে পড়েছে,এই খবর পেতেই পুতুলের তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে গিয়েছে,
আয়নার সামনে বসে আরামছে গান গেতে গেতে মুখে পাউডার লাগচ্ছিলো পুতুল,উদ্দেশ্য এমপিরা আসার আগেই বাসা থেকে বেড় হয়ে যাবে,মারজিয়াকে ফোন করে বলা শেষ।পেছনে থেকে স্নিগ্ধা দৌড়াতে দৌড়াতে এসে তোতলা স্বরে বলে,
-ফুপি ফুপি মেহমানরা এতে পড়েছে,
কথাটা শুনে আঁতকে উঠে সে,,জলদি করে হাত দিয়ে পাউডার মুছতে থাকে কিন্তু কোনো কাজ হয় না তাই কোনো উপায় না পেয়ে নিজের পড়নের স্কার্ট দিয়ে মুখে মুছে ঠোঁটে লিম্বাম দিয়ে,দেয় দৌড়.! এক দৌড়ে রুমের বাহিরে এসে তার মনে পরে “হায়হায় এখন আমি বেড় হবো কিভাবে?” আবার এক দৌড়ে ঘরে চলে যায়,আর ভাবতে থাকে কিভাবে বেড় হতে হবে।যে ভাবে হোক তাকে তাদের সামনে আনা যাবে না, নাহলে তো আজকেই তার কেল্লাফতে,,,,
কোনো মতে ছাদের ঝুলানো মই দিয়ে নিচে নেমে,নিচের দিকে তাকিয়ে মেইন গেইটের দিকে দেয় দৌড়!কিন্তু সামনে আসতেই আবার প্রথম দিনের মতো কারো সাথে খুব বড়সড় ভাবে ধাক্কা খায়,,কিন্তু এইবার সে পড়ে না।’আবার কে’ এটা বলে সামনে তাকিয়ে পুতুল হা…!যার জন্য এ বাড়ি ছেড়ে কিছুক্ষণের জন্য পালাতে চেয়েছিলো সে শয়ং এখানে হাজির। ‘হ্যাঁ সামির’ পুতুল না দেখার ভান করে সাইড কাটিয়ে যেতে নিবে তার আগেই সামির পুতুলের হাতের কব্জি ধরে বলে,
-হেই ইউ!তুমি সেই চোর মেয়েটা না?এখানে কি করো আবার এ বাড়িতে চুরি করতে আসো নি তো?কি নির্লজ্জ মেয়েরে বাবা এক বাড়ি থেকে চুরি করতে এসে ধরা খেয়ে আবার আরেক বাড়িতে ঢুকেছো।কিন্তু এইবারো ধরা খেয়ে গেলে ম্যাডাম! তাও আবার আমার হাতে,চলো সবার সামনে এইবার তো তোমাকে আমি দড়ি দিয়ে বাঁধবোই।
বলেই পুতুলে হাত ধরে টানতে থাকে,পুতুল বার বার বলছে ছাড়ুন ছাড়ুন তবুও সামির তাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছে।পুতুল কি করবে দিশেহারা হয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সামিরের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়।সামির মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে,পুতুল আবার পালানোর জন্য দৌড় দিতে যাবে কিন্তু তার আগেই পেছনে কারো আওয়াজ শুনতে পায়,পুতুল পেছনে তাকিয়ে দেখে প্রণয় আর সামির কথা বলছে।সামিরের মুখে হাসি!পুতুল অবাক হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে,পালানোর কথা যেনো ভুলেই গেছে।তখন প্রণয়ের চোখ পড়ে পুতুলের দিকে,ভ্রু কুঁচকে বলে,
-কিরে পুতুল তুই এখানে কি করিস,তুই না ঘরে ছিলিস।এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস?
প্রণয়ের মুখের নামটা শুনে সামির অবাক হয়ে তাকায় পুতুলের দিকে,তাহলে সেই চেয়ারম্যানের এক মাত্র মেয়ে পুতুল?আরেকবার ভালো করে দেখে নিলো, ‘না এটাই তো সেই মেয়ে যে আমার গাছের ফুল চুরি করতে এসেছিলো
সামিরের ভাবনার মাঝেই প্রণয় পুতুলকে হালকা ধমকের স্বরে বলে,,
-এখন কোথাও যাওয়া চলবে না,আয় আমার সাথে বাসায় আয়।আর সামির তুমিও চলো।
পুতুল চোরের মতো মাথা নিচু করে প্রণয়ের পেছনে পেছনে যেতে থাকে,এদিকে সামির বার বার পুতুলের দিকে তাকাচ্ছে এই যদি চেয়ারম্যানের মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে কেনো তাদের বাসায় চুরি করতে যাবে?
ভেতরে গিয়ে ফায়াজ এবং সামিরের সাথে পরিচয় হয়ে নেয় এবং খুব তাড়াতাড়ি মিশেও যায়।প্রথমে একটু লজ্জা পেলেও পরে সব ভুলে জীবনের সব আজাইরা গল্প জুরে দেয় তাদের সাথে।পাশেই সামির বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে ‘এতো কথা কেও বলতে পারে?আর বাবা মাও কিভাবে এই মেয়ের বকবকানি সহ্য করছে’
কথার মাঝেই ফায়াজ পুতুলের গাল টেনে বলে,
-আমাদের পুতুল একদম পুতুলের মতো কিউট.!
তখন আবার সামিয়ার কোল থেকে স্নিগ্ধা বলে ওঠে,
-শুদু কিউত না আমার ফুপি হল কিউতি পাইই..!
সবাই এক সঙ্গে হেসে উঠলো..!এভাবে তারা সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত থেকে চলে যায়।যাওয়ার আগে সামির স্নিগ্ধাকে ডেকে দুই বক্স চকলেট দিয়ে বলে, ‘এক বক্স তুমি নিবে আরেক বক্স তোমার ফুপিকে দিবে’
স্নিগ্ধা তখন গাল ফুলিয়ে বলে,
-না না এতে হবে না তুমি নিজে গিয়ে ফুপিকে বলো এক বক্স আমার আরেক বক্স ফুপির,নাহলে দুটাই ফুপি নিয়ে নিবে আমাকে আর দিবে না।
-কেনো দিবে না?
-আলে ফুপি অনেক চককেট পছন্দ করে যখন বাবাই আমার জন্য চককেট আনে সব ফুপি খেয়ে পেলে আমাকে একটাও দেয় না।
-তাহলে একটা তোমার কাছে লুকিয়ে রেখে আরেকটা দিও কেমন।আর আমি তোমাকে পরে আরো চকলেট এনে দিবো তখন শুধু তুমি তোমার ফুপিকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবা।
-ওকে,,
চলবে..!