#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৮
মেইন রাস্তা ছেড়ে গাড়ি ঘুড়িয়ে এক জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে গেলো।হঠাৎ করেই এই কাঠ ফাটা রোদ ছেড়ে চলে গেলো এক নিকোশ কালো আধার জগতে,চারোদিকে সব কিছু কেমন নীরব আর শীতল লাগছে।শুধু রোদের তাপ কেনো,আকাশের আলোর একটা চিহ্ন অনুভব করা যাচ্ছে না।সাধারণত জঙ্গলে কখনোই আস্ত একটা গাড়ি নেওয়া সম্ভব না।কিন্তু অবাক করা বিষয় এই বিশাল জঙ্গলের এতো এতো বড় ছোট গাছ গাছালির ঠিক মাঝখান দিয়ে সোজা করে একটা রাস্তা বানানো।যেই রাস্তাটা দিয়ে অনায়াসে একটা গাড়ি যেতে পারবে তাও কোনো রকম রিস্ক ছাড়া!এই গুপ্তচর রাস্তাটা অধীক মানুষের দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে,এমনকি গাড়িতে বসা সামিরেরও তা একদম অজানা।পাশে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছে সিজান!এমন ভাবে রাস্তা গুলো পারি দিচ্ছে,মনে হচ্ছে এ জায়গা তার অনেক চেনা।এখানকার আনাচে কানাচেতে যা আছে সে চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে।
এভাবে প্রায় পচিশ মিনিট যাওয়ার পর তাদের সামনে একটা যায়গা আসে,সামির অবাক হয়ে যায়গাটা দেখে।এটা তো সে চিনে খুব ভালো করেই চিনে।কিন্তু সিজান ওকে এখানে নিয়ে আসলো কেনো,
-এই যায়গাটা তো আমি চিনি।
-হুম
-কিন্ত তুই এখানে নিয়ে আসলি কেনো?
-এখানেই মেইন কাজ,আমাদের চোখের সামনে এইসব ঘুরছিলো অথচ আমরা কিছুই বুঝতে পারি নি।
সামির শুধু অবাক হচ্ছে,এতোদিন ধরে তাদের শত্রু তাদের আশপাশ দিয়ে ঘুরছে অথচ তারা বুঝতেই পারে নি।
গাড়ি গিয়ে থামে জঙ্গলের শেষ সিমান্তে একটা বাংলোর সামনে, সামির আর সিজান গাড়ি থেকে নেমে বাংলোর ভেতরে যায়,,সিজান তার পকেট থেকে একটা চাবি বের করে ভেতরে ঢুকে,অন্ধকার এই রুমে কোনো মানুষের অস্তিত্বর সঙ্গা পাচ্ছে সামির।রুমে একজনকে বাধা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, একে চিনে সামির।এটা একটা মেয়ে,উপস্থিত মেয়েটাকে ভালোভাবে চিনতে পেরে চেয়াল শক্ত হয়ে আসে সামিরের,সবারটা আন্দাজ করতে পারলেও এই নারীকে এই অবস্থায় এই জঘন্যতম অপরাধে এখানে কল্পনাও করে নি সে।অবিশ্বাস্য চোখে একবার চেয়ারে হাত বাধা মেয়েটার দিকে তাকায়,তার পরনে ছোট টপস জিন্স ঘার অব্দি চুল!একে এক পলক দেখে বোঝার উপায় নি মেয়েটা আদৌকি মেয়ে নাকি।
সামির একবার পলক ফেলে আবার তাকায় তার দিকে,সামিরের উপস্থিতি টের পেয়ে চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটা ছটফট শুরু করে দেয়,সামিরের দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে বলতে থাকে
‘সামির, সামির তুই এসেছিস বিশ্বাস কর এতে আমার কোনো দোষ নেই’
সামির কিছু বলার আগেই পাশ থেকে সিজান আঙুল উচিয়ে বলে,
-এটা তোর লাষ্ট চান্স ছিলো রাকি!
সামির মেয়েটার সামনে যায়,মেয়েটার মুখ বরাবর একটা চেয়ার টেনে বসে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-আমি এটা তোকে দিয়ে আশা করি নি রাকি।
রাকি তাও ছোটার জন্য সামিরের কাছে ভুঙভাঙ বলে অনুনয় করতে থাকে,সামির আর তার নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে রাকির গালের থা’প্প’ড় মারে,মুহূর্তেই চোখ দুটো লাল বর্নে ধারন করে তার।এই সেই একটা মাত্র মেয়ে ফ্রেন্ড যাকে সে অনেক বিশ্বাস করতো,তার পরিবারের একটা অংশ ভাবতো কলেজে এতো এতো মেয়েদের ভীরে সামির শুধু রাকির সাথেই মেলামেশা করতো।আর এই সিক্রেট বাংলোর কথা শুধু মাত্র ও ই জানতো,,শেষমেশ সুযোগের সৎ ব্যবহার করলো?এটা যেনো মানতে পারছেনা সে,,
রাকি গালে হাত দিয়ে ছলছল নয়নে বলে,
-বিশ্বাস কর…!
-কাকে বিশ্বাস করবো তোকে?বিশ্বাস এর মর্যাদা রাখতে জানিস তুই?তোকে তো আমার ফ্রেন্ড ভাবতেই ঘৃণা লাগছে,,
বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সামির,রাকি এইবার মাথা ঝাকিয়ে সামনের চুল গুলো পেছনে দেওয়ার চেষ্টা করে হেসে উঠে,,
“রাকির এমন পাগলামো দেখে গা জ্বলে উঠে সিজানের,কপালের রগগুলো ফুলে উঠে,আগে থেকেই এই মেয়ের ভাব সাব তার ভালোলাগতো না কিন্তু সামিরের সাথে চলতে বিধায় এই মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলো,কিন্তু যেদিন শুনতে পেলো সাজি আর তার দাদুর এ’ক্সি’ডেন্ট এর সাথে সেও জড়িত ছিলো সেদিন বেশি অবাক হয় নি সে,শুধু সুযোগ মতো ধরার অপেক্ষায় ছিলো।সে চায়ছিলোনা কথাটা সামিরকে জানিয়ে তাকে কষ্ট দিতে,কিন্তু রাকির স্বামী আরাফাতের মৃ’ত্যু’র খবর শুনে তাকে সব খুলে বলতে হয় সামিরকে,,সে আগে থেকেই শিউর ছিলো কাজটা রাকি ই করেছে।অনেক দিন ধরে চুপিচুপি এর অভিযান চালায় সিজান অবশেষে তাদের ধরতে পারে।”
সিজান রাগ সামলাতে না পেরে রাকির গোলা টিপে ধরে,হাত পা বাধা থাকায় রাকি ছোটাছুটি করতে পারে না।সামির কপালে দুই আঙুল রেখে বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে সিজান কে বলে “ছাড় ওকে” সিজান নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে এনে রাকিকে ছেড়ে দেয়।
সিজান ছেড়ে দিতেই রাকি চিৎকার করতে থাকে,চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলে,
-হ্যা আমি খারাপ,আমি করেছি আরাফাতকে খু’ন ও কোনো কাজেরই ছিলোনা,,শুধু পারতো গুন্ডাদের চামচামি করতে।ওকে আমার হাসবেন্ড মানতেও রুচিতে বাধতো।কি দেখে বিয়ে করেছিলাম আমি ওকে?আমার লাইফটাই বরবাদ হয়ে গিয়েছিলো,এইবার আসি সাজি আর তোর দাদুর কথায়,সেদিন রাতে গাড়িতে শুধু সাজি আর দাদু ছিলো না,সাথে ছিলো সাজির ফ্রেন্ড পিয়া!সেদিন দাদু ড্রাইভিং সিটে থাকায় তার মাথায় বারি লাগে এবং প্রচন্ডভাবে আঘাত লাগে কিন্তু তখনো তার সেন্স ছিলো।পাশ দিয়েই মাতলামি করতে করতে কয়জন ছেলে যাচ্ছিলো নির্জন রাস্তায় দুটো মেয়েকে দেখে আর লোভ সামলাতে পারে না প্রায় আটজন নর পি’চা’শ মিলে ছোট ছোট দুটো বাচ্চাকে ধ’র্ষ’ন করে,সব দাদুর চোখের সামনেই ঘটে কিন্তু দাদু কিছু করতে পারছিলোনা।হ্যা সেদিন আমিও ওই দৃশ্যটা নিজের চোখের সামনে দেখেছিলাম,কিন্তু আমি তখন কারো সাহায্য নেয় নি বা কখনো কাউকে বলার সাহস পাইনি,কেনো জানিস?কারণ সেখানে আরাফাত ও ছিলো তখন তাকে আমি প্রচুর ভালোবাসতাম,আমি জানতাম কথাটা যদি তুই জানতি তাহলে আরাফাতকে তুই মে’রে ফেলতি তখন আমি কীভাবে সহ্য করতাম বল?কিন্তু এখন আমি পস্তাচ্ছি খুব করে পস্তাচ্ছি, সেদিন যদি তোকে সব বলে দিতাম তাহলে আজ এতো কিছু হতোনা।
লম্বা সময় ধরে কথাগুলো শুনে রাকির দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামির।সেদিন সাজি ধ’র্ষ’ণ হয়েছিলো সেটা শুধু সেই যানে,বাবা মা সারাজীবন অপরাধের বোঝা বেয়ে বেড়াবে ভেবে সবার কাছ থেকে কথাটা লুকিয়ে এ’ক্সি’ডে’ন্ট বলে দেয়।সিজানের কথায় সেদিন পুতুলদের গ্রামের সেই ইমন জড়িত ছিলো,তবে আরাফাত ও এর মধ্যে ছিলো এটা অবিশ্বাস্য!সব কিছুই কেমন অচেনা অচেনা লাগছে সামিরের কাছে,এতোদিন যাদের ভরসা করে আসছে তারাই অবশেষে বিশ্বাসঘাতক বেড়ুচ্ছে!
সামির এখনো রাকির মুখের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,কিছুক্ষণের জন্য যেনো তার কান স্তব্ধ হয়ে আছে,সব কিছু কেমন ভন ভন করছে,মনে হচ্ছে এই সব কিছুই তার ভ্রম!কিন্তু এর একটা কোথাও বিশ্বাস হচ্ছেনা সিজানের,তাই দাঁত কিড়মিড় করে বলল
-দেখ রাকি তোর এইসব বানোয়াট কথা বার্তা আমরা কেউ বিশ্বাস করবো না।
কিন্তু রাকি সিজানের কথা কানে নেয় না,সামিরের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে,
সামির আর সেখানে বসে থাকতে পারে না,ধুপ করে উঠে রুম থেকে বের হয়ে যায়,সিজানও রাকিকে এইভাবে রেখে সামিরের পেছন পেছন যায়,যাওয়ার আগে একবার পেছন মুরে নেয়,সিজানকে পেছনে ঘুরতে দেখে রাকি একটা বাকা হাসি দিয়ে দুই হাত দিয়ে লাভ সেড করে দেখায়।
সামির বাংলোর নিচ তোলায় এসে পকেট থেকে ফোন বের করে প্রণয়কে কল দেয়,কিন্তু এই জঙ্গলে নেট না থাকায় কল কোনো মতেই যাচ্ছিলো না তবুও সামির বার বার চেষ্টা করছিলো।পেছন থেকে সিজান দৌড়ে তার কাছে আসে,কিন্তু তার আগেই উপরের রুম থেকে কেমন একটা গু’লি জাতীয় কিছু শব্দ হয়,সামির আর সিজান আবার দৌড়ে উপরে গিয়ে দেখে,রাকির হাত পায়ের বাধন খোলা অন্যদিকে মুরে মাটিতে লুটিয়ে আছে,সিজান কাছে গিয়ে দেখে রাকির হাতে ব’ন্দু’ক নিজের কপালে নিজেই গু’লি করেছে রাকি।সিজান চেক করে দেখে শ্বাস নিচ্ছে নাকি,হ্যা এখনো কিছুটা ফুসফুস চলছে,
সামির নিশ্বাস নিচ্ছে,,
আপাতত কাউকে বলে এটাকে হসপিটালাইজ করার ব্যবস্থা কর,আমাকে ইমেডিয়েটলি পুতুলদের কাছে যেতে হবে,
বলে সামির আর একটুও সময় অতিবাহিত না করে দৌড়ে নিচে নেমে যায়,সিজানো কাউকে মেসেজ দিতে দিতে নিচে নেমে যায়।গাড়ির কাছে আসতে আসতে সামির অনেকবার প্রণয়কে কল করার ট্রাই করে কিন্তু একবার রিং হওয়ার পর আর নেট পায় না,মেসেজও সিন করছে না।সামির হন্তদন্ত হয়ে গাড়ির ডোর খোলার ট্রাই করে,কিন্তু চাবি সিজানের কাছে,সামির পেছনে ফিরে সিজানকে তাড়া দিয়ে বলে,
-তারাতারি খুল!
সিজান সামিরের কাছে এসে বলে,”এখান থেকে যেতে মিনিমাম দের ঘন্টা লাগবে।”
-অত কিছু জানিনা যত দ্রুত পারিস যেখান দিয়ে পারিস নিয়ে চল।
-এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো এখন রাত হয়ে গিয়েছে,এখন শর্ট রাস্তা খোজা পসিবল না,এখান দিয়েই যেতে হবে, তা ছাড়া আঙ্কেল এখন সুস্থ আজকে তাদের ডিসচার্জ দিয়ে দিবে,
-আরে সেটাই তো ভয়।
সিজান ভ্রু কুঁচকে বলে,
-ভয়?কিসের ভয়,তা এই ভয়টাকি আঙ্কেলের পরিবার নিয়ে নাকি বার্বি ডল??
-বাজে বকিস না সিজান,
“ভালোবাসিস পুতুলকে?”
চলবে..!
#পুতুল_বউ
#Afxana_Junayed
#পর্ব_১৯
পুতুল চেয়ারম্যান বাড়িতে এসেই আবার চঞ্চল হয়ে উঠেছে,একবার বাগানে যাচ্ছে তো একবার ছাদে। সারাক্ষণ শুধু ছোটাছুটি করছে আপাতত এই বাড়িতে বিশেষ অনুমতি ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়ার নিষেধ আছে।গার্ডরা করা করে নজরদারি করছে সারা বাড়ি!লম্বা স্কার্ট আর টপস পড়ে বাবার সামনে বসে আছে,তিনি চকিতে হেলান দিয়ে চা পান করছেন।হাতের যে সাইডে গু’লি লেগেছে সেখানে ব্যান্ডেজ করা কয় দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে,তবে নিয়মিত ঔষধের মধ্যে থাকতে হবে,আর এই দায়িত্ব নিয়েছে শ্রেয়া!কারণ পুতুলের মার মস্তিষ্ক এতো তেজ না কখন ভুলে যায় ঠিক নেই।
আজ প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে গেলো পুতুল এ বাড়িতে এসেছে,এই কয়দিনে মাত্র একবার পুতুলের সাথে সামিরের দেখা হয়,তার বাবাকে দেখতে এসেছিলো তারা সবাই সামিয়া আন্টি তাকে অনেক আদর করে দিয়ে যায়।তারো একটু মন খারাপ হয়,এ কয়দিন তাদের বাসায় ছিলো সবার সাথে কম হলেও ভালোই মজা করতো কখনো অনুভব হতো সে অচেনা বাড়িতে রয়েছে।আলিয়াকেও খুব মিস করছে,তবে সব চেয়ে বেশি মিস করছে প্রতিদিন একবার হলেও কালো গোলাপকে দেখা,হয়তো ছুতে পারতো না তবে খুব কাছ থেকে দেখতে তো পারতো।আসার আগে এক পলক দেখে আসতেও পারে নি সেই গাছটাকে,সে কি জানতো যে তার প্রিয় জিনিসটা এতো অপেক্ষার পর দ্রুত কাছে এসে আবার দ্রুত চলে যাবে?না জানি কবে আবার দেখা হবে,হসপিটালে থাকা অবস্থায় সামিরের সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়,আবার কেমন যেনো এই কয়দিনে সব আবার অচেনা হয়ে যায়,যখন সামির তাদের বাসায় এসেছিলো শুধু দু জনের চোখাচোখি হয়েছিলো।পুতুল আকস্মিক যখন সামিরের দিকে তাকাতো দেখতো তার পূর্বে থেকেই সামির তার দিকে তাকিয়ে আছে,সে মাথা নত করে নিতো।সাথে সিজানও এসেছিলো তার সাথে বেশ হাসাহাসি হয়েছিলো।
গত এক সপ্তাহ ধরে ইমন আর তার কিছু বন্ধু জেলে আছে,কেনো আছে কি অপরাধে আছে কিছুই জানেনা পুতুল।তবে এটা শুনে স্বস্তি পেয়েছে যে তার পরিবারের উপর এখন আর কোনো ঝুঁকি নেই,
বাবার পাশে বসে আরামচে আম খাচ্ছে পুতুল!গাছের ফর্মালিন মুক্ত মিষ্টি আম,মূলত তার বাবার জন্য আম গুলো কাটা হয়েছিলো শ্রেয়া এসে দিয়ে যায়,পুতুলের বাবা নিজে না খেয়ে পুতুলকে খেতে বলে,পুতুল আর না করে না একা একাই সব টুকু খেতে শুরু করে।পুতুলের বাবা পুতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,তৎক্ষনাৎ ঘরে প্রবেশ করে বাবার খুব বিশ্বেস্ত একজন মানুষ যাকে ম্যানেজার বললেও চলে,যার নাম শফিক তিনি এসে বলে,
-চাচা বাহিরে আতোয়ার মিয়া আসছে আপনার সাথে দেখা করতে।
-আচ্ছা আসতে বলো।
স্যার এর আদেশ পেয়ে শফিক উলটো ঘুরে চলে যায় তাকে আনতে।শফিক যেতেই পুতুলের বাবা নিচু হয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলে,
-পুতুল মা তুমি এই খাবার গুলো নিয়ে তোমার ঘরে যাও,আর কিছু লাগলে ভাবিকে বলিও।
পুতুল আর কোনো দ্বিধা না করে আম খাওয়া এঠো হাতে একটা প্লেট আরেক হাতে স্যুপের বাটি নিয়ে ঘরে থেকে বের হয়ে যায়।সিঁড়ির অপর প্রান্তে তার ঘর আর এই প্রান্তে তার বাবা মার ঘর।দুই হাত ভর্তি খাবার নিয়ে আস্তে আস্তে হাঠতে হাঠতে সিঁড়ির সামনে আসে পুতুল।তখন একজন বয়স্ক ফর্সা করে লোক সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে।পুতুল ভ্রু কুঁচকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে এনাকে সে চিনে,
আতোয়ার সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় পুতুলকে দেখে যেনো মহা খুশি হয়,দাঁত বের করে হাসি দিয়ে আরো দ্রুত ওঠার চেষ্টা করে।পুতুল দু হাত একটু ফাক করে একটা হাসি দেয়,আতোয়ার পুতুলের কাছে এসে বলে,
-আরে পুতুল নি।কেমন আছো তুমি,কতদিন পর তোমার লোগে দেহা।
-হুম মামা ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
-আর আছি ভালাই।আচ্ছা থাক মা আমি তোর বাপের লগে দেহা করে আসি,
পুতুল মাথা নাড়ায়,আতোয়ার পুতুলের বাবার ঘরের দিকে যায়।পুতুলের এই লোকটাকে ভালোই লাগে,তাকে সবসময় মা মা বলে ডাকে।তার চেয়ে বেশি ভালো লাগে তাহার ছোট ছেলেকে কেমন পাগল পাগল টাইপ মাঝে মাঝে তার কান্ড দেখে খুব হাসি পায় পুতুলের। মেয়েদের থেকেও বেশি লজ্জাবতী ছেলেটা।
পুতুল আর বেশি চিন্তা না করে ঘরে গিয়ে সব খাবার টুকু সাবার করে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পরে,এই বোরিং লাইফ আর ভালোলাগেনা।ভাবিও এখন ব্যস্ত নানা কাজে একটু ঘুরতে যেতে মন চায় কিন্তু এই মনটাকেই কেউ বুঝেনা আহাগো কতো কষ্ট!
কিছুক্ষণ এভাবে পরে থেকে হাতে ফোনটা দিয়ে মারজিয়াকে মেসেজ দেয় চটজলদি তাদের বাসায় আসার জন্য,কিন্তু মারজিয়া মুখের উপর না করে দেয়।পুতুল বুঝে এই মেয়েকে হাজার বলেও এখন রাজি করানো যাবে না,তাই সে উঠে রেডি হয়ে সবার কাছে অনেক রিকুয়েষ্ট করে রাজি করিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।এখন মারজিয়াদের বাসায় গিয়ে ওকে টানতে টানতে নিয়ে আসতে হবে।না হলে কোনোকালেই আসবে না।
______
সামির বিছানা থেকে ওয়ালেটটা পকেটে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়ে যায়।নিচে আলিয়া খাবারেরটা টেবিলটা গুছিয়ে রাখছিলো ড্রয়িং রুমে সামিয়া বসে বসে চা খাচ্ছে আর বই পড়ছে।সামির কোনো দিকে না তাকিয়ে খানিকটা দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়ে গেলো।আলিয়া এক ধ্যানে সামিরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। “এই ভর দুপুরে আবার কই যায়?”
সামির গেরাজে গিয়ে গাড়ির লক খুলতে যাবে তখন মনে পরে চাবি তো ঘরেই রেখে আসছে।বি’র’ক্তি ‘চ’ উচ্চারণ করে আবার দৌড়ে বাড়ির ভেতর গেলো।তখনো আলিয়া আবার তাকিয়ে রইলো এইবার দৃশ্যটি সামিয়ার চোখে পড়ে,সামির উপরে যেয়ে চাবি নিয়ে নিচে নামে।সামিয়া বইটা সামনের টেবিলে রেখে সামিরকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,
-কিরে এতো অস্থির হয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
-পরে এসে বলবো আসছি!
বলে কাউকে কিছু বলার না সুযোগ দিয়ে আবার দৌড়ে চলে গেলো।জলদি করে গাড়িতে উঠে,রওনা দেয় গন্তব্য স্থানে!খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে একটা হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি থামায়।গাড়ি পার্ক করে ভেতরে ঢুকে যায়,মুহুর্তেই আবার থেমে যায়।মুখ বন্ধ করে নেয়,,,নিজের প্রতি নিজের এতো বিরক্ত লাগছে সামিরের।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আবার উল্টো ঘুরে বাহির থেকে একটা ওয়ান টাইম মাস্ক কিনে বড় একটা শ্বাস নিয়ে আবার ভেতরে ঢুকে যায়।
লিফট দিয়ে সাত তোলায় উঠে একটা কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে যায়,কেবিনে দুইটা নার্স সহ সিজান আর একটা মেয়ে আছে,নার্স দুটো মেয়েটাকে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু মেয়েটা অতিরিক্ত পাগলামো করছে ছুটাছুটি করছে।সামনের সিজান রক্ত চক্ষু নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,তার আর সহ্য হচ্ছে না এইসব ওভার ড্রামা।তার উপর আবার সামিরের এতো উদয় হওয়া যেনো জাস্ট অ’স’হ্য লাগছে।
সামির এসে প্রথমেই মেয়েটাকে একটা ধমক দিয়ে নার্সগুলোকে বাহিরে যেতে বলে,তারা চলে যায়।মেয়েটা এইবার শান্ত হয়ে বেডে বসে কাপতে থাকে,সামির মেয়েটার সামনে এসে বলে,
-এইসব কিন্তু আর স’হ্য হচ্ছে না রাকি!এইবার অ’তি’রি’ক্ত হয়ে গিয়েছে।আচ্ছা তুই ক্লিয়ার করে বল তো তুই কি চাচ্ছিস?সেদিন নিজেকে নিজে গু’লি করলি এতো দিন কোমায় ছিলিস দু দিন ধরে ঠিক হয়ে আবার পাগলামো লাগিয়ে দিয়েছিস।কেনো এমন করছিস ক্লিয়ারলি বলবি তুই!
সামিরের কথায় রাকি বেডের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,
-আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল সামির!
-চল!
বলে সামির রাকির হাত ধরে টান দিয়ে বেড থেকে নামিয়ে কেবিনের বাহিরে চলে যায়।পেছন পেছন সিজান ও যায়,
পুতুল দুই হাতে তিনটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে একটা খেতে খেতে সাত মাসের গর্ভবতী মহিলাদের মতো রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে,পাশে মারজিয়াও রয়েছে,নানা রকম ইমোশনাল ব্লাকমেইল করে তাকে নিয়ে তারপর ছাড়ছে পুতুল।দুপুরের খারা রোদ একদম তার মুখে এসে পড়ছে,টিয়া কালার হিজাবের ভেতরে ফর্সা মুখটা একদম লাল টমেটো হয়ে আছে,আর এদিকে পুতুলতো বিন্দাস খেয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ হাটার পর পুতুল ওইপারে হাত দিয়ে লাফালাফাতে বলে,
-দেখ দেখ গোল্লা আইস্ক্রিম চল খাই!
-ওইটা তো ওই পারে,এই বরফ কুচি খাওয়ার জন্য তুই এখন রোড পার হয়ে ওখানে যাবি?
-হুম সমস্যা কি?আর ওখান দিয়ে আমাদের গ্রামের রাস্তা তাড়াতাড়ি,চল না যাই!
-আয়..!
মারজিয়া পুতুলের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে তার হাত ধরে সাবধানতা অবলম্বন করে ওপারে গিয়ে দোকানের সামনে দাঁড়ায়,আর তখন পুতুলের শুরু হয়ে যায়,
-মামা দুইটা দেও দাও,আর শুনো বরফ বেশি করে কুচি করে দিবা ওই সবুজ আর লাল কালার দিবা,কমলাটা তিতা ওটা দিও না।আর ড্যানিশ বেশি করে দিবা।জলদি দেও,,উফফ কি গরম।
-এই তুই চুপ থাক দিতেছে তো!
-তুই চুপ থাক!
দুই জনেই ভেংচি কাটে,লোকটা দুই জনের হাতে দুটো ওয়ান টাইম কাপ ধরিয়ে দেয় যেটার মধ্যে গোল্লা আছে,কিন্তু গোল্লায় ড্যানিশ কম থাকায় পুতুল চিল্লিয়ে উঠে,
-আরে মামা তোমারে না বলছি ড্যানিশ বেশি করে দিতে এতো কম দিছো কেন,টাকা দিয়ে কিনি নাই?
-আমরা সবসময় এইটুকুই দেই মা,
-সবাই আর আমি এক নাকি,না মামা আমি জানিনা আমার আরো ড্যানিশ দেও নাইলে আমার টাকা ফেরত দেও,
এইবার লোকটা তেতে উঠে,
-আরে মেয়ে কি বলো এইসব দশটাকা দিয়ে আইস্ক্রিম খেতে আসছো আবার ডিমান্ডের চেয়ে বেশি চাও?আর তুমি আমগো চেয়ারম্যান এর মাইয়া না?উনি কত ভালো মানুষ আর হের মাইয়া?
-এই,,এই মিয়া কি বলতে চান হ্যা আমি ঝগড়ুটে?মোটেও না,শুধু একটু ড্যানিশই তো চেয়েছি পুরো দোকান তো চাই নি।
মারজিয়া এদের দুজনের ঝগড়া দেখছে আর সেই ফিল নিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা গোল্লা খাচ্ছে,কিছুক্ষণ পর পর হেসে উঠছে,হঠাৎ সামনে কিছু একটা নজর পড়তেই ভ্রু কুঁচকায়।পুতুলকে খোঁচা দেয় দেখার জন্য।কিন্তু পুতুলে সেখানে খেয়াল না করে এক নাগারে ঝগড়া করতে থাকে,মারজিয়া এইবার পুতুলের মুখ ধরে ঘুড়িয়ে সামনের দিকে নেয়,পুতুলের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।ভালো করে চোখ ডলে দেখে নাহহ!সে তো ঠিকি দেখছে,সামনে সামির মাস্ক পড়া থাকলেও তার চোখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সেটা সামির।সঙ্গে সিজান দাঁড়িয়ে আছে,পাশে একটা মেয়েও আছে।
সামির গাড়ির পেছনের দরজা খুলে রাকিকে বসতে বলে,রাকি নীরব হয়ে বসে পড়ে।সিজান সামনে বসতে যাবে তখন তার চোখ যায় দূরের দোকানে থাকা দু টো মেয়ের দিকে।যাদের স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে,এবং মেয়েগুলো তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।সিজান সামিরকে বলে,সামির তাকাতে তাকাতেই পুতুল আর মারজিয়া উলটো ঘুরে চলে যায়।সামির আর কিছু না বলে গাড়িতে চরে চলে যায়।
চলবে..!