প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা :আফরিন ইসলাম
সিজন :২
পার্ট :২
(যারা গল্পটার পাঠক পাঠিকা তাদের বলবো ৷ আপনারা নিচের লেখা গুলো পড়বেন ৷এতে গল্পটা বুঝতে আপনাদের সুবিধা হবে ৷)
বৃষ্টি পড়ছে খুব ৷একটা ছোট দোকানের পাশে দাড়িয়ে আছে চারুলতা ৷ বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ীতে যাওয়া যাবে না ৷কাধেঁর ব্যাগটা বুকের সাথে ঝাপটে ধরে দাড়িয়ে আছে সে ৷আশে পাশে মানুষ খুব কম ৷চারুর একটু ভয়ও লাগছে ৷হঠাৎ চারুলতা নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেল ৷পাশে তাকাতেই সে চমকে গেল ৷ কাক ভেজা হয়ে আয়ান তার পাশে দাড়িয়ে আছে ৷সেও হয়তো কলেজ থেকে এসেছে ৷কিন্তু এ কি কলেজের ব্যাগ একদম ভিজে গেছে তার ৷
আয়ান চারুলতাকে দেখে মুচকি হেসে বলল
অনেকক্ষন দাড়িয়ে আছেন তাই না ৷আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি ৷এখানে আর দাড়াতে হবে না চলুন ৷আজ বৃষ্টি থামবে বলে মনে হয় না ৷
কিন্তু এত বৃষ্টির মধ্যে যাব কিভাবে চারু বলল ৷
আয়ান মুচকি হেসে বলল কিছু হবে না ৷চলুন আমার সাথে ৷আয়ান চারুর মাথায় দুইটা বড় বড় কচু পাতা ধরলো ৷তারপর আবারো বলল
এবার চলুন চারু ৷
চারু আর আয়ান পাশাপাশি হাটছে ৷চারু বৃষ্টির ঝাপটায় কিছুটা ভিজেছে ৷কিন্তু আয়ান তার শরীরে কাপুনী উঠে গেছে ৷চোখ কিছুটা লাল হয়ে গেছে ৷তবুও তার মুখে মুচকি হাসি ৷চারুর চোখ সেই হাসি ফাকিঁ দেয় নি ৷চারু আজকে আবারো অবাক হলো এই ছেলেটাকে দেখে ৷কতটা সহজ সরল এই ছেলে ৷মনের মধ্যে এতটুকু খাদঁ নেই ৷শুধু একটা সমস্যা সে বয়সে ছোট ৷নানা কথা ভাবতে ভাবতে চারু বাড়ীর কাছে চলে এলো ৷আয়ান চারুর দিকে মুচকি হেসে বলল
এবার চলে যান চারু ৷নিজের খেয়াল রাখবেন ৷ মনে রাখবেন আপনার ভালো থাকা মানেই আমার ভালো থাকা ৷নিজের যত্ন নেবেন ৷আসি ৷
আয়ান রাস্তার উল্টো দিকে হাটাঁ দিল ৷চারু এখনো আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে ৷চারুর থেকে এক পা এক পা করে দূরে চলে যাচ্ছে আয়ান ৷বেশ কিছুটা দূরে যেয়ে আয়ান পেছনে তাকালো ৷চারু এখনো আগের জায়গায় দাড়িয়ে আছে দেখে সে আবারো হাসলো ৷এই হাসি অনেক দূর থেকেও চারুর চোখে স্পষ্ট ৷চারু তাকে দেখছে কথাটা ভেবেই আয়ানের মনে প্রশান্তি ছেয়ে যাচ্ছে ৷
চার দিন পার হয়ে গেছে ৷আয়ানের সাথে চারুর এই কয়েক দিন দেখা হয় নি ৷চারুর কাছে ব্যাপার টা খুব জোড়ালো নয় ৷কিন্তু মনের কোথাও আয়ান নামক ব্যক্তিকে দেখার প্রয়াস তার জাগে ৷বিকেলের দিকে জানালার কাছে চারু বসে আছে আনমনে ৷কেউ একজন চারুর মাথায় হাত রাখতেই সে ঐ দিকে তাকালো ৷ দেখলো তার দাদী দাড়িয়ে আছে ৷আপন বলতে দাদা আর দাদী ছাড়া তার আর কেউ নেই ৷বছর কয়েক আগে তার বাবা যক্ষ্মায় মারা গেছে ৷বাবা মারা যাওয়ার ছয় মাস পরে হঠাৎ করে মা ও মারা যায় ৷দাদা দাদীর বড্ড আদুরে চারুলতা ৷দাদীকে দেখে আলতো হাতে জরিয়ে ধরলো চারু ৷তার দাদী চারুর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আমার গোলাপীর কি হইছে ৷কালকে থেইকা দেখতাছি কেমন উদাস উদাস ৷
চারু কিছু বলল না ৷সে তো নিজেই জানে না ৷কেন সে এত উদাস ৷
রাত নয়টা বাজে ৷ চারুর মন ভালো নেই ৷আজ পড়তেও ভালো লাগছে না ৷বুকের ভেতরটা কেমন যেন হু হু করছে ৷চারুর চিন্তার মাঝেই কেউ একজন তার জানালায় শব্দ করলো ৷চারু কিছূটা চমকে গেল হঠাৎ শব্দে ৷চারু জানালার কাছে যেয়ে আস্তে করে বলল
কে ৷
ওপাশ থেকে শব্দ এলো ৷একবার জানালাটা খুলবেন চারু ৷আপনাকে একবার দেখেই চলে যাব ৷একটা বার খুলুন না ৷
চারুর এই কন্ঠটা খুব চেনা ৷গত দুই বছর ধরে হাজার হাজার বার এই কন্ঠ সে শুনেছে ৷কিন্তু এই কন্ঠের মালিক কোথায় ছিল এতদিন ৷ চারু দেরি করলো না জানালাটা খুলে দিল ৷
জানালা খুলে চারু আয়ানের সেই সহজ সরল হাসিটা দেখতে পেল ৷মানুষটার মুখে যেন হাসি লেগেই থাকে ৷কিন্তু একি তার চোখের নিচ টা এমন কালো কেন হয়ে গেছে ৷অনেকটা শুকিয়ে গেছে ৷চুল গুলো কেমন এলোমেলো ৷
চারুলতার হাত আনমনেই জানালার ওইপাশে চলে গেল ৷তার হাত আয়ানের ডান গাল আলতো স্পর্শ করতেই আয়ানের চোখে পানি চলে এলো ৷তার চারুলতা তাকে স্পর্শ করেছে ৷চারু যেন নিজের মাঝে নেই ৷সে আবারো বলে উঠলো
এত দিন কোথায় ছিলেন আয়ান ৷আপনাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছিল আমার ৷কিন্তু এই চার দিনে একবারও আপনি আসেন নি ৷
আয়ান চারুর দিকে তাকিয়ে বলল আমারও আপনাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছিল ৷দেখা হয়ে গেছে চারু ৷এবার আমায় যেতে হবে ৷কেউ দেখলে সন্দেহ করবে ৷জানালাটা লাগিয়ে দিন ৷আর এটা আপনার জন্য ৷কখনো যদি আমার জন্য এতটুকু ভালোবাসা অনুভব করেন ৷ঐ দিন পড়বেন চারু ৷ আর হ্যা যেই দিন বুঝবেন আমায় ভালোবাসেন ৷ ঠিক ঐ দিন এই প্যাকেট টা খুলবেন চারু ৷ আমাকে মুখে বলতে হবে না ভালোবাসি ৷আপনার সাজেই আমি বুঝে নেব চারু ৷আয়ান জানালার থেকে দূরে সরে এলো ৷আর চারু সে জানালার কাছে এখনো দাড়িয়ে ৷অন্ধকারে আস্তে আস্তে আয়ান মিলিয়ে গেল ৷
বাসায় এসে শুয়ে পড়লো আয়ান ৷মাথাটা বড্ড ব্যাথা করছে ৷চার দিনের জ্বরে সে কোথাও যেতে পারে নি ৷ঐ দিন বৃষ্টিতে ভেজার পর আয়ান বাসায় আসে ৷কিন্তু বাসায় আসার পরপরই তার জ্বর এসেছে ৷কিন্তু চারুর সব খবর নিয়েছে সে ৷তার পাশের বাড়ীর বন্ধু জামিলের কাছ থেকে ৷এখনো শরীরটা ভালো না ৷আয়ান বিছানা থেকে আবারো উঠে দাড়ালো ৷তারপর নিজের ছোট দুই ভাইয়ের ঘরের দিকে হাটা দিল ৷চার দিন তাদের সাথেও কথা হয় নি খুব একটা ৷যদিও ছোট ভাই দ্বীপ এসে বারবার তার খোজঁ নিয়েছে ৷কিন্তু মিহান আসে নি খুব একটা ৷সে ছোট থেকেই অন্যরকম ৷মিহান অনেকটা গম্ভীর টাইপের ৷আয়ানকে খুব একটা পছন্দ সে করে না ৷দ্বীপ আর মিহান জমজ ৷কিন্তু দুই জনের মধ্যে অনেক তফাৎ ৷দ্বীপ আয়ান বলতেই পাগল একদম ৷আর মিহান দুই চোখে আয়ানকে দেখতে পারে না ৷
আয়ান ভাইদের ঘরের সামনে এসে উকি দিল ৷তাকিয়ে দেখলো তারা ঘুমিয়ে গেছে ৷দ্বীপ আর মিহান দুইজনই বড্ড ঘুমায় ৷ওদের ঘুমাতে দেখে আয়ান নিজের ঘরের দিকে হাটাঁ দিল ৷
(আপনার যারা প্রথম খন্ডের শেষ পার্ট পড়েছেন ৷অর্থাৎ যারা ১৩ পার্ট পড়েছেন ৷তাদের বলবো ঐ পার্টটার শেষে লেখা ছিল ৷প্রীতি একটা পুরনো ডায়রী খুলে ৷আর তারপর সেটা পড়তে শুরু করে ৷আর সিজন টু এর প্রথম পর্বে চারু আর আয়ান এর কাহিনী শুরু হয় ৷আমি প্রথম খন্ডে অনেক বার বলেছিলাম যে প্রীতির মায়ের নাম চারু ৷আর বাবার নাম আয়ান ৷কম হলেও একশ বার বলছি ৷কিন্তু আপনারা চরিত্রের নাম গুলো মনে রাখেন না ৷ কালকে আয়ান আর চারুলতা নাম লেখার পর অনেকে তাদের চিনতেই পারেন নাই ৷ একটা গল্প সব চরিত্র নিয়েই তৈরি হয় ৷যারা বুঝতে পারেন নি তাদের আমি অনেক সুন্দর করে বুঝিয়ে দিয়েছি ৷ কিন্তু কয়েক জন না বুঝে উল্টা পাল্টা ব্যবহার করেছেন মেসেজে ৷যেটা আমার কাম্য ছিল না ৷আর একটা কথা আয়ার আর চারুর প্রেমটা নব্বই দশকের প্রেম কাহিনীর মতো ৷ ৷কারন চারু আর আয়ান যখন মারা যায় তখন আবেশের বয়স পনেরো ৷তার চৌদ্দ বছর পর প্রীতি ফিরে আসে ৷ চারু আয়ানের প্রেম, বিয়ে, মৃত্যু সব মিলিয়ে পয়ত্রিশ বছর আগের অতীত প্রীতি তার ডায়রী থেকে পড়ছে ৷এটা একটু বুঝে পড়লেই আপনি বুঝতে পারব ৷ অনেকে তো বলেছে মরা মানুষ আবার প্রেম করে কিভাবে ৷আল্লাহ মরা মানুষের কি অতীত থাকে না ৷ সিজন টু প্রীতির ডায়রীতে থাকা অতীত ৷যেখানে আপনি বর্তমানের কিছুই পাবেন না ৷প্রীতিলতাকে ২৫ পার্টের পর পাবেন ৷একটু মনোযোগ দিয়ে সব পার্ট পড়েন ৷তাও যদি না বুঝেন ৷ তাহলে পড়তে থাকেন বুঝে যাবেন ৷ আপনারা প্রথম পর্ব থেকে সুন্দর করে পড়েন ৷একদম মাথা ঠান্ডা করে ৷দেখবেন একদম সোজা ৷)
চলবে…..