প্রীতিলতা আসবে বলে
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
সিজন :৪
পার্ট :১১
প্রদীপ প্রীতিলতার গলা চেপে ধরলো ৷তারপর দাতেঁ দাতঁ চেপে বলল
তোকে আজ শেষ করেই দেব আমি ৷ তোকে আরো আগে শেষ করা উচিত ছিল আমার ৷কিন্তু আমি প্লানে ভুল করে ফেলেছি ৷প্রদীপ নিজের কোমরে গুজে রাখা বন্দুক বের করতে যাবে ৷এমন সময় প্রীতি নিজের হাটু দিয়ে প্রদীপের পেটে আঘাত করলো ৷প্রদীপ কিছু করার আগেই প্রীতি ওকে পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দিল ৷শক্ত বুটের আঘাতে প্রদীপ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে ৷প্রদীপ নিজের লোকদের ডাক দিবে ৷কিন্তু তার আগে প্রীতি ওর গলায় পারা দিয়ে ধরলো ৷আরেক পা দিয়ে প্রদীপের ডান হাত আটকে ফেললো ৷প্রদীপ বচাঁর জন্য চেষ্টা করতে লাগলো ৷কিন্তু প্রীতিলতার সাথে পেরে উঠছিল না ৷প্রীতি মুখ দিয়ে হাতের বাধঁন খুলতে লাগলো ৷অন্যদিকে প্রদীপের প্রান যায় যায় অবস্থা ৷প্রীতিলতা হাতের বাধঁন খুলে ফেললো ৷তারপর প্রদীপের মুখ চেপেঁ ধরলো ৷প্রীতিলতা বাকাঁ হেসে বলল
প্রীতিলতাকে মরবি তুই ৷অনেক মেয়েদের জীবন শেষ করেছিস ৷আজ তোকে বোঝাবো বিক্রি করা মেয়ে গুলো কতটা কষ্ট পায় ৷ওরা যখন নানা লোকের কাছে রাতের পর রাত থাকে ৷তখন ওরা কত কষ্ট পায় ৷বিনা অপরাধে আত্মহত্যা করে ৷কেউ বা প্রতিদিন মরে জানোয়ারদের হাতে ৷একটা মেয়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিলেও তারা ওতটা কষ্ট পায় না ৷যতটা একটা পুরুষ অবৈধ ভাবে তাকে ছুয়ে দিলে পায় ৷ আজ আমার পৌষ মাস ৷আর তোর সর্বনাশ ৷প্রীতিলতা প্রদীপের বন্দুকটা একটানে নিয়ে নিল ৷তারপর প্রদীপের মুখের ভেতর বন্দুকের সামনের অংশ ঢুকিয়ে দিল ৷পর পর তিনটা গুলি প্রদীপের মুখে চালিয়ে দিল ৷প্রদীপের মাথার নিচে রক্তে লাল হয়ে গেছে ৷রক্তলাল হওয়া চোখ দুটো তাকিয়ে রইলো উপরের দিকে ৷বন্দুকের গুলির আওয়াজ পেতেই কয়েকজন দৌড়ে ভেতরে এলো ৷ওরা সবাই প্রদীপের লোক ৷ওরা প্রীতির দিকে দৌড়ে এলো ৷এবং মারামারি লেগে গেল ওদের মধ্যে ৷কিন্তু প্রীতির সাথে ওরা পেরে উঠছিল না ৷ তাই প্রীতিলতার সাথে মারামারির এক পর্যায়ে একজন প্রীতিলতার পেছন থেকে পিঠে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলো ৷প্রীতি পেছনে তাকানোর আগে কোমরেও তীব্র ব্যথা অনুভব করলো ৷হ্যা কোমরেও ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে ৷পরবর্তী আঘাতের আগেই পেছনের লোকটার দিকে ঘুড়লো প্রীতি ৷লোকটার হাত ঘুড়িয়ে ছুড়িটা নিয়ে নিল ৷তারপর লোকটার গলায় শুধু একটা কোপ বসিয়ে দিল ৷
আটটা লোক রক্তাক্ত হয়ে পরে আছে ফ্লোরে ৷একটা ভাঙ্গা টেবিলের কোনায় পরে আছে প্রীতিলতা ৷ উঠে দাড়াতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে ৷প্রীতিলতা গায়ের শার্ট টা খুলে নিল ৷ভেতরের হাতা ওয়ালা সাদা গেঞ্জিটা রক্তে লাল হয়ে গেছে ৷প্রীতি নিজের শার্টটা কোমরে শক্ত করে গিট দিল ৷প্রচন্ড ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো সে ৷তারপর আস্তে আস্তে ঘরটা থেকে বেড়িয়ে এলো ৷শরীরের শক্তি যেন ফুরিয়ে আসছে ৷ভেতরে থাকা একটা লাশের কোমর থেকে একটা বন্দুক নিজের সাথে নিয়ে এলো প্রীতি ৷ বাড়ীটা বেশ বড় ৷ছয় তলা তো হবেই ৷প্রীতি নিজে কত তলায় আছে তা জানে না ৷প্রীতি সিড়ির দিকে তাকালো ৷যতটা আন্দাজ করলো ৷তাতে সে ছয় তলায় আছে ৷প্রীতি ছয়তলার সব গুলো ঘর চেক করলো ৷ কিন্তু কেউ নেই ৷প্রীতি সিড়ি বেয়ে পাচঁ তলায় আসলো ৷ সিড়ির পাশের একটা রুম থেকে একজন বলল
এসিপির সাহায্যে সব পুলিশ গুলোকে আটকে ফেলেছি ৷আর অন্য পুলিশও আসবে না ৷কারন আমরা খবর পাঠিয়েছি ৷যদি একটা প্রসাশনের লোক পাঠায় ৷তবে সব গুলোর মাথা যাবে ৷আর এসিপি তো অনেক আগে উপরে গেছে ৷এখনো তো এলো না ৷এই একজন যা তো এসিপির কাছে ৷গিয়ে দেখ ঐ মেয়ে অফিসারটা কে শেষ করলো কি না ৷প্রীতিলতা ওদের কথা শুনে উপরে উঠে গেল আস্তে আস্তে ৷
একটু পরে একটা ছেলে উপরে উঠে গেল ৷ কিন্তু অনেকক্ষন হয়ে যাওয়ার পরেও ছেলেটা আসছে না ৷ এর জন্য দুটো ছেলে উপরে গেল ৷ কিছুক্ষন পরেই তারা হাপাতে হাপাতে দৌড়ে নিচে এসে বলল
ভাই উপরে আমাদের লোক মরে পরে আছে ৷এসিপিও মারা গেছে ৷একটু আগে যে গিয়ে ছিল ও মরে গেছে ৷উপরে সবাই পরে আছে ৷ পাচঁতালার সিড়ির পাশের রুম থেকে বিশটা ছেলে বেড়িড়ে গেল ৷ঐ ছেলে গুলো ছয় তলার রুমে ঢুকতেই প্রীতিলতা বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিল ৷ওরা দৌড়ে আসতে আসতে দরজা বন্ধ হয়ে গেছে ৷প্রীতি পাচঁতালার সব গুলো ঘর খুজতে খুজতে একটা ঘরের সামনে গেল ৷ প্রীতি দরজার ছিটকিনি খুলে ভেতরে যেতেই কয়েকটা মেয়ে ভয়ে গুটিয়ে গেল ৷প্রীতির আর বুঝতে বাকি রইলো না এরা কারা ৷এদের কেও কিডন্যাপ করা হয়েছে ৷তার মধ্যে প্রীতির গায়ে রক্ত দেখে মেয়ে গুলো আরো ভয় পেয়ে গেল ৷প্রীতি ওদের শান্ত করতে বলল
আমায় দেখে ভয় পেও না ৷আমি পুলিশের লোক ৷এখানে আমি একা আছি ৷ বাকিরা কোথায় আছে আমি জানি না ৷আমি একা তোমাদের বাচাঁতে পারবো না ৷আমার তোমাদের সবার সাহায্য লাগবে ৷আমাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে ৷তোমরা যদি নিজেদের বাচাঁতে চাও ৷তাহলে তোমাদের সবার ভয়কে জয় করতে হবে ৷তোমরা কি নিজেদের বাচাঁতে চাও ৷নাকি নিজেদের সাথে সবাইকে শেষ করতে চাও ৷
মেয়ে গুলোর মধ্যে একজন উঠে দাড়িয়ে বলল
আমি আছি তোমার সাথে ৷আমরা নিজেদের বাচাঁবো ৷আমরা আছি তোমার পাশে ৷
পাশের রুমে থাকা অস্ত্র গুলো প্রীতি সবার হাতে তুলে দিল ৷বন্দুক গুলো গুলিতে লোড করা ৷প্রীতিলতা ওদের বন্দুক দিয়ে বলল
শত্রুর শেষ রাখতে নেই ৷এখান থেকে বের হতে গেলে ওদের শেষ করতে হবে ৷ নিজেদের ভিতু ভাববে না ৷দুনিয়াতে টিকে থাকতে তুমি একাই যথেষ্ট ৷আর যারা দুনিয়ার নিষ্ঠুরতার সাথে মানাতে পারে না ৷তারা সময়ের আগে বিলীন হয়ে যায় ৷
প্রীতিলতা মেয়ে গুলোকে তার পেছনে আসতে বললো ৷নিজে আগে চার তলায় নেমে গেল ৷কোনো মতেই সে রিস্ক নেবে না ৷কেননা সামনে বিপদ অপেক্ষা করছে তার জন্য ৷যেই ভয়াবহ বিপদের সামনে মেয়ে গুলোকে ফেলতে চায়না ৷দরকার হলে নিজে আগে জীবন দেবে ৷তার আগে সব অফিসারদের বের করতে হবে ৷শান্তকে খুজতে হবে ৷জবাকেও খুজতে হবে ৷ কিন্তু তারা এখনো বেচেঁ আছে কি না প্রীতিলতা জানে না ৷শুধু জানে ওদের বের করতে হবে ৷এভাবে হারলে চলবে না ৷নিজের প্রতিশোধ পূরন করতে হবে ৷নিজের কষ্টের দিকে আর রক্তমাখা শরীরের দিকে তাকালে হবে না ৷শেষ কাজটা জীবন দিয়ে হলেও করতে হবে ৷
চলবে