প্রেম আমার পর্ব-৪৭+৪৮

0
6777

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৪৭♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
ভোরের পাখিদের কিচিরমিচির কোলাহল কানে ভেসে আসতেই চোখজোড়ায় কম্পন সৃষ্টি হলো আমার।
ঘুমু ঘুমু চোখদুটো পিটপিট করে খুলতেই নিজেকে নীবিড় ভাইয়ার বাহুডোরে আবদ্ধ অবস্থায় আবিষ্কার করলাম আমি।

চোখজোড়া আধখোলা রেখেই জানালার দিকে এক পলক তাকিয়ে বুঝতে পারলাম হয়তো বা আযান দিয়েছে প্রায় অনেক্ষণই তবে ওয়াক্ত অবশিষ্ট রয়েছে এখনোও। রাতের কালো আভা কাটিয়ে হাল্কা ফর্সা ভাব ফুটে উঠতে শুরু করেছে আকাশে। নীবিড় ভাইয়া এখনোও উঠেন নি ঘুম থেকে, যা দেখে খানিকটা অবাক হলাম আমি। সচরাচর ফজরের আযানের সাথেসাথেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন উনি। হয়তো ক্লান্ত থাকার ফলে ঘুমটা বেশি হয়েছে আজ।

নামায ছুটে যেতে পারে তাই নীবিড় ভাইয়াকে ডাকতে লাগলাম আমি। কানের কাছে দুবার ডাকতেই কপালে ভাঁজ ফুটে উঠলো উনার। উনি চোখ বন্ধ রেখেই ঘুমু ঘুমু কন্ঠে মৃদু সুরে বলে উঠলেন,
—- আর একটু ঘুমোতে দাও না প্রেয়সী!
.
উনার মুখে প্রেয়সী ডাকটা শুনে পুরো শরীর জুড়ে এক শীতল স্রোতধারা বয়ে গেলো আমার। তবে সময় কম দেখে আপাতত নিজের অনুভূতিটা কে সাইডে রেখে উনাকে আবারও ডেকে উঠলাম,
—- ভাইয়া! নামাযের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে!
.
ওমনি এক লাফ মেরে শুয়া থেকে আমায় নিয়েই উঠে বসলেন উনি। একবার জানালার দিকে তাকিয়েই “ওহ শিট!” বলে ছুট লাগালেন বাথরুমে।
২ মিনিটের মাঝেই উনি অযু করে আসতেই আমিও চলে গেলাম অযু করে নিতে।
.
এসে নীবিড় ভাইয়াকে সালাম ফেরাতে দেখে উনার পাশে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে নামাযে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি।
নামায শেষে পাশ ফিরে তাকাতেই চোখ আটকে গেলো আমার। নীবিড় ভাইয়া খাটে বসে গালে হাত দিয়ে এক নজরে চেয়ে রয়েছেন আমার দিকে। উনার এমন চাহনি দেখে লজ্জায় চোখ নামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি।
হঠাৎ কালকের ঘটনা মনে পড়তেই চোখ বড়বড় হয়ে এলো আমার। আমি হন্তদন্ত হয়ে উনাকে জিজ্ঞেস করলাম,
.
—- ভাইয়া….! আমি আর আপনি যদি এখানে ঘুমিয়ে থাকি তবে অগ্নি ভাইয়া আর রুশো ভাইয়া কোথায় ঘুমিয়েছে?
.
আমার প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠে কপালে চিন্তার ছাপ ফেলে উনি বলে উঠলেন,
—- এইরে! এদের কথা তো কয়েক মুহুর্তের জন্য ভুলেই গিয়েছিলাম।
.
বলেই উঠে দাঁড়ালেন উনি। উনাকে উঠে দাঁড়াতে দেখে চটজলদি উল্টো দিকে ঘুরে পা বাড়ালাম দরজার দিকে। দরজা খুলে পাশের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করার জন্য হাত ছোঁয়াতেই দরজাটা হাল্কাভাবে একটু সরে গেলো। তার মানে ছিটকিনি ভেতর থেকে লাগালো নেই। তাই নিঃশব্দে দরজা খুলে পা টিপেটিপে ভেতরে প্রবেশ করলাম আমি। আমার পেছন পেছন প্রবেশ করলেন নীবিড় ভাইয়াও।
.
ঘরের ভেতরে ঢুকতেই আমার চোখ ছানাবাড়া! খাটে উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে অগ্নি ভাইয়া! খাটের পাশেই হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে ঘুমোচ্ছে রুশো ভাইয়া।
এদিকে কাঠের চেয়ারে মাথা বাঁকা করে ঘুমের মাঝে ঘনঘন শ্বাস ফেলছে রাত্রি।
আমাদের ঠিক সামনে জানালার কোল ঘেঁষে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে নিত্য আপু। আমি আপুকে দেখে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
.
—- আপু, কখন উঠলে? আর কাল কে কিভাবে ঘুমিয়েছো?
.
আপুর কিছুটা চমকে উঠে আমাকে আর নীবিড় ভাইয়াকে দেখে চোখ মুখ কুঁচকে জড়ো করে বলে উঠলো,
—- সেটা তোমার এই ঘুমকাতুরে ভাইকে জিজ্ঞেস করো! ওর জন্য আমরা তিনজনের কেউই ঠিক মতো ঘুমোতে পারিনি। রাতে আমার সাথে গল্প করতে করতে ঘুমে কাত হয়ে গিয়েছিলেন মহারাজ! হাজার ডেকেও উঠাতে পারিনি তাকে। এদিকে রুশো-রাত্রি ছাদে মশার কামড় খেতে খেতে প্রায় অনেকক্ষণ পরেই এসে আমাদের ডাকতেই ওদের ঘরে ঢুকিয়ে তোমার ভাইয়ের অবস্থা দেখাই আমি। আবার মায়ার জন্য পানি মেরে ঘুম ভাঙাইও নি ওর। উফফ….! ওর জন্য আমরা তিনজনের একজনও ঘুমোতে পারিনি।

রুশো ভাইয়া অবশ্য তোমায় ডাকতে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু একবার ডাকে ভেতর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে তোমরা ঘুমিয়ে গিয়েছো ভেবে ঘুরে এসেছে।
.
নিত্য আপুর পুরো কথা শুনে নীবিড় ভাইয়া ধপ করে খাটে বসে পড়লেন। হায় হায় করতে করতে অবশেষে অগ্নি ভাইয়াকে নিজের পিঠে উঠিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলে উঠলেন,
—- রাত্রি কে খাটে শুইয়ে দে নিত্য। আমি এই বস্তাটাকে রেখে রুশোকে নিয়ে যাচ্ছি ৷ আর একটু ঘুমোক। ৭ টার আগে আগে ডেকে দিস।
.
বিনিময়ে নিত্য আপু সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালো। নীবিড় ভাইয়া যেতেই আমি আর নিত্য আপু মিলে রাত্রিকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে খাটে এনে শুইয়ে দিলাম। রাত্রির পাশেই ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো নিত্য আপু।
আমার দিকে ছোট ছোট চোখ করে ভ্রু নাচিয়ে আপু বলে উঠলো,
.
—- কাল দুজনে কি কি করলে হুম হুম?
.
আপুর প্রশ্নে নিমিষেই আমার গোলক রন্ধ্র বড়বড় হয়ে গেলো। গলা খাকারি দিয়ে উঠে নিজেকে সামলিয়ে প্রতিউত্তরে বললাম,
—- ক…কি আবার করবো? গিয়ে তো দেখলাম উনি বেঘোরে ঘুমোচ্ছেন। আমিও উনার পাশে বসে পড়লাম, আর কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরই পাই নি। হিহি!😅
.
নিত্য আপুর বোধহয় আমার কথাটা ঠিক বিশ্বাস হলো না। তাই সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরও কিছু বলবে তার আগেই আবারও নীবিড় ভাইয়া এসে হাজির হলেন। যার ফলে নিত্য আপুর আর কিছু বলা হয়ে উঠলো না। উনি রুশো ভাইয়াকে বসা থেকে তুলতে নিলেই রুশো ভাইয়া “মাম্মিইইইই….!” বলে এক লাফ মেরে সরে গিয়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে বলে উঠলো,
.
—- ওহ ব্রো তুমি! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এই ভেবে যে আবারও এটম বোম্ব ফুটলো টুটলো নাকি!
.
নীবিড় ভাইয়া রুশো ভাইয়ার কথায় হাসতে হাসতে খাটে বসে পড়লেন। সাথে ফিক করে হেসে উঠলাম আমি সাথে নিত্য আপুও। উনি হাসি থামিয়ে রুশো ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
—- সিরিয়াসলি! ড্রিমার, তুমি ড্রিমেও রাত্রিকে তোমার ওপর বোম্ব ব্লাস্ট করতে দেখো! উফফফফ….!😂
.
রুশো ভাইয়া মুখটা পেঁচার মতো করে রাত্রির দিকে এক পলক চেয়ে বললো,
—- তো কি আর দেখবো বলো? আদর করবে নাকি? পারে তো জাস্ট বোম্ব ব্লাস্ট করতেই! হাই পাওয়ার ওয়ালা এটম বোম্ব একটা! হুহ!
.
এবার উচ্চস্বরেই হেসে উঠলাম আমরা সবাই। হাসির আওয়াজে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় রাত্রির কপালে বিরক্তির ভাজ ফুটে উঠতেই রুশো ভাইয়া উল্টো পায়ে দৌড়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। রুশো ভাইয়ার পেছন পেছন দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন নীবিড় ভাইয়াও! আমরা দুজনের এভাবে ছুটে পালিয়ে যাওয়া দেখে মুখ টিপে হাসতে লাগলাম। সোরগোল কমতেই রাত্রি আবারও ডুব দিলো অতল ঘুমের রাজ্যে।
.
🌸
.
বেলা ৮ টা বেজে ৩২ মিনিট,

নিত্য আপু রান্না করতে নিচে গিয়েছে। এদিকে আমি আর রাত্রি ঘরে পায়চারি করছি। কিছু ভালো লাগছে না।
হঠাৎ নিচ থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ কানে ভেসে আসায় চমকে উঠলাম আমি। রাত্রি আর আমি একে অপরের দিকে এক পলক তাকিয়েই ছুট লাগালাম নিচে।
.
দিদুন গায়ের জ্বালায় ছটফট করছেন। দু হাত দিয়ে পিঠ,গলা, হাত চুলকে যাচ্ছেন। দিদুনকে ঘিরে বাড়ির সবাই বড়বড় চোখ করে চেয়ে আছে। সবাই বোঝার চেষ্টা করছে যে এক্সাক্টলি হয়েছে টা কি দিদুনের। এর মধ্যেই মামুন ভাইয়া গিয়ে দিদুনকে ধরে চুলকাতে মানা করায় দিদুন আরোও বেশিই চুলকোচ্ছেন। সব কিছু আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে দিদুনের হলো টা কি!
.
মামুন ভাইয়া বালতি থেকে পানি এনে দিদুনকে থামতে বলে হাত ধুইয়ে দিতেই যেনো দিদুনের ছটফটানি আরোও বেড়ে গেলো। এদিকে আম্মু আব্বু, চাচিমনি, বড় চাচি, চাচ্চুরা কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না।
হঠাৎ করে দিদুনকে সামলাতে গিয়ে মামুন ভাইয়ার হাতেও চুলকানি উঠে গেলো। হাতে চুলকোতে চুলকোতে একসময় ছড়িতে গেলো পুরো গায়েই। দিদুন আর মামুন ভাইয়া দুজনেই গা চুলকোতে চুলকোতে গা লাল করে ফেলেছেন!
.
—- একি আমার গা এখন চুলকোচ্ছে কেনো? আহহ…..! মা……..! (মামুন)
.
চুলকালে বরফ লাগালে অনেকটা আরাম পাওয়া যায় তাই নিত্য আপু ফ্রিজ থেকে বরফ আনতে ছুটে গিয়েছে।
পুরো বাড়ি খুঁজেও না ফ্রিজ আর না বরফ পেয়ে হতাশ হয়ে এসে খানিকবাদেই এসে আমার পাশে এসে মুখ কালো করে দাঁড়ালো আপু।
সবার চোখেমুখেই চিন্তার ছাপ। শুধুমাত্র মাঝখান থেকে দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে রুশো ভাইয়া! ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক সুবিধের ঠেকছে না। আচ্ছা দিদুন আর মামুন ভাইয়ার চুলকা-চুলকির পেছনে রুশো ভাইয়ার কোনো হাত নেই তো?
.
আমার মতোই নিত্য আপুও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুশো ভাইয়ার দিকে চেয়ে আছে। হয়তো আপুও কিছু আঁচ করতে পারছে যে, হয়তো রুশো ভাইয়াই কোনো না কোনো গন্ডগোল পাকিয়েছে।
.
—- রুশো ভাইয়া….! হাসছো কেনো তুমি?
.
রুশো ভাইয়া মুখ টিপে হাসতে হাসতেই জবাব দিলো,
—- হাসবো না মানে? দেখনা কিভাবে চুল্কাতে চুল্কাতে লাফাচ্ছে! উফফফ….! কি সিন মাইরি! না হেসে কি আর পারা যায়?
.
এবার আমি সন্দেহের দৃষ্টি রুশো ভাইয়ার থেকে সরিয়ে নিক্ষেপ করে বসলাম রাত্রির দিকে। রাত্রি এতোক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তামাশা দেখলেও বর্তমানে সে লুকিয়ে লুকিয়ে হাসছে। যা আমার কারণ আমার বোধগম্য না হলেও চোখের আড়াল নয়।
তাই রাত্রির পাশে গিয়ে এমন ভাবে রিয়াকশন দেখালাম যে আমি সব জানি কিন্তু আবারও তার মুখ থেকে শুনতে চাইছি।
.
—- রাত্রি, এটা কোনো কাজ করলি তোরা? দেখ দিদুন আর মামুন ভাইয়া কিরকম গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছেন।
.
রাত্রি হাসতে হাসতেই বললো,
—- আমি আবার কি করলাম, যা করার ওই ধলা ইন্দুরই তো করেছে!
.
আমি চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞেস করলাম,
—- কি করেছে?
.
—- কি আবার? কি জানি নাম….ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। বিছুটি পাতার রস গিয়ে দিদুনের বালতির পানিতে মিশিয়েছে!
.
রাত্রির কথায় ধপ করে মাথায় হাত রেখে দাঁড়ালাম আমি। নিত্য আপু আমার কাছে এসে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—- কি হলো অনন্যা? রাত্রি কি বললো?
.
আমি শুধু বোকার মতো বড়বড় চোখ করে নিত্য আপুর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলাম “বিছুটি পাতা!”
সাথেসাথেই নিত্য আপুর চোখও রসগোল্লার আকার ধারণ করলো! “সর্বনাশ!” বলেই আপু ছুট লাগালো নিজের ঘরে। এদিকে বাড়ি যেনো মাছের বাজার হয়ে গিয়েছে। এতো চেঁচামেচি হচ্ছে যা বলার বাহিরে। আমাদের সকলের কেন্দ্রবিন্দু বর্তমানে মামুন ভাইয়া আর দিদুন। যারা দুজনেই নিজেদের শরীরের সাথে যুদ্ধে নেমে পড়েছে।
.
নিত্য আপু ঝড়ের গতিতে নিচে নেমে এসে সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, “আপনারা কেউ উনাদের ছোঁবেন না! আমি পেভিসন লাগিয়ে দিচ্ছি। সেরে যাবে!” বলেই আপু আগে দিদুনকে ধরে বসিয়ে পুরো হাত, পিঠের খোলা অংশ আর গলায় ম্যাসেজ করে দিলো। দিদুনের পরে মামুন ভাইয়াকেও পেভিসন লাগিয়ে দিলো নিত্য আপু।
এই ফাঁকে আমি গিয়ে বালতির পানিগুলো ফেলে দিয়ে নতুন করে আবারও পানি ভরিয়ে এনে রাখলাম। এদিকে নীবিড় ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া শুধু এদিক থেকে ওদিকে চোখ ঘুরিয়ে বোকার মতো চেয়ে চেয়ে কাহিনী দেখছে।
.
—- আপনারা প্লিজ চুলকোলেও চুলকাবেন না। এলার্জি জাতীয় যেহেতু তাক চুলকোলে আরোও বাড়বে।
.
নিত্য আপুর কথায় মামুন ভাইয়া আর দিদুন কষ্ট হলেও চুলকানো থামিয়ে দিলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর চুলকানি সেড়ে গেলে দিদুন সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
.
—- এরকম টা হলো কিভাবে? আমি তো গোসল সেড়ে আসছিলাম। হঠাৎ এমন চুলকানি শুরু হলো কেনো?
.
রুশো ভাইয়া দিদুনের প্রশ্নে একটা শুকনো ঢোক গিললো। নিত্য আপু পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে উঠলো,
—- বর্ষার মৌসুম! এলার্জি কম বেশি সবার হয় দিদুন! আপনি আর মামুন ভাইয়া ঘরে গিয়ে আরাম করুন। খাবার আমি গিয়ে নাহয় দিয়ে আসবো।
.
দিদুন আর কিছু বললেন না। গম্ভীর মুখ করে নিজের ঘরে চলে গেলেন। কিন্তু মামুন ভাইয়া হয়তো নিত্য আপুর যুক্তিটা ঠিক মেনে নিতে পারেন নি। তাই বালতির পানির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছেন উনি। কিছুক্ষণ ওভাবে চেয়ে থেকেই হুট করে পানিতে হাত ডুবিয়ে দিলেন মামুন ভাইয়া। প্রায় ২ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখার পরও কোনো অনুভূতি না হওয়ায় হাত তুলে দাঁড়িয়ে পড়লেন উনি।
হতাশ হয়ে বড়বড় পায়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়লেন। ভাজ্ঞিস পানি ফেলে দেওয়ার সময় আমায় দেখে নি কেউ। নাহল ঠিক রুশো ভাইয়ার উত্তম-মধ্যম হয়ে যেতো আজ! উফফফ……! বড্ড বাঁচা বাঁচলাম।
.
🌹
.
ভয়ে থরথর করে পুরো শরীর কাঁপছে আমার। আমার পাশেই দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে রুশো ভাইয়া। অগ্নি ভাইয়া নিজের কাঁপা হাটু ঢাকতে ব্যস্ত! এদিকে নিত্য আপু আর রাত্রি ঘেমে ভিজে একাকার!
.
আমাদের সামনে মুখোমুখি বসে রয়েছেন দিদুন ও নীবিড় ভাইয়া। তাদের মাঝখানে দাবার বোর্ড! দাবা এমন একটা বুদ্ধির খেলা যেখানে আজ পর্যন্ত কেউ দিদুন কে হারাতে পারে নি। আর আজ সেই প্রতিযোগিতায় দিদুনের বিপক্ষে রয়েছেন নীবিড় ভাইয়া। সবার মাঝেই ব্যাপক উত্তেজনা! আর আমার মাঝে কাজ করছে এক আকাশ সমান ভয়। যদি নীবিড় ভাইয়া হেরে যান তবে কি সত্যি সত্যি হারাতে হবে উনাকে আমার?
.
প্রায় আধঘন্টা যাবৎ খেলা চলছে কিন্তু দিদুনের একটা গুটিও মারা পরে নি যেখানে অলরেডি নীবিড় ভাইয়ার দু দুটো সৈন্য মারা পরেছে! উনার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে!
উনার হার শব্দটা মাথায় আসতেই ভয়টা আরোও তীব্র ভাবে গ্রাস করতে শুরু করে দিয়েছে আমায়। একটু পর পরই পানি খেয়ে পেট ফুলিয়ে যাচ্ছি আমি কিন্তু তৃষ্ণা যেনো কিছুতেই মিটছে না। এদিকে রুশো ভাইয়া নখ খাওয়ার স্পিড আর অগ্নি ভাইয়ার হাটুর কম্পনের বেগ উভয়ই সুষম গতিতে বেড়েই চলেছে যেনো।
.
চলেছে………….💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৪৮♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
এই নিয়ে নীবিড় ভাইয়ার তিন তিনটে সৈন্য মারা পড়লো অথচ দিদুনের একটাও না। কি সাংঘাতিক ভাবে খেলে দিদুন। যতই পানি খাচ্ছি ততই গলাটা আরোও শুকিয়ে আসছে। মাথাটা কেমন যেনো ঝিমঝিম করছে আমার! কি হবে এখন যদি উনে হেরে যায়? ভাবলেই বুক ফেটে কান্না আসছে আমার।
এদিকে নিত্য আপু আর রাত্রি আল্লাহ আল্লাহ করে যাচ্ছে! অগ্নি ভাইয়া ঘেমে যাচ্ছে সাথে হাটু কাঁপাতে কাঁপাতে ভূমিকম্প সৃষ্টি করে ফেলেছে। আর রুশো ভাইয়া তো এবার নখ ছেড়ে আঙুলই কামড়ানো শুরু করে দিয়েছে।
.
নীবিড় ভাইয়া এবার মনে হলো ইচ্ছে করেই একটা সৈন্যকে সামনে মারা খাওয়ার জন্য এগিয়ে দিলেন। যা দেখে আমি অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে ফেললাম! করছেন কি উনি? স্বইচ্ছায় হারতে চাইছেন নাকি?
.
কিন্তু আমার ধারণা বদলে দিয়ে দিদুন যেই না মন্ত্রী দিয়ে সৈন্য খেয়ে নিলেন ওমনি উনি নিজের ঘোড়া দিয়ে মন্ত্রীকে মেরে দিলেন চোখের পলকে। নিমিষেই খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো আমার। রুশো ভাইয়া আঙুল মুখে দেওয়া অবস্থাতেই শিটি মেরে দিলো! রুশো ভাইয়ার শিটি বাজানোতে অগ্নি ভাইয়া হাটু চেপে ধরেই ফিক করে হেসে ফেললো। এদিকে দিদুন একবার রুশো ভাইয়ার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারও খেলায় মনোযোগ দিলেন।
.
প্রথমেই মন্ত্রী খেয়ে ফেলায় দিদুনের পাওয়ার কমে গিয়েছে। তবুও থেমে নেই দিদুন! নীবিড় ভাইয়া আবারও ইচ্ছে করে হাতি সামনে খেতে দিয়ে দিতেই নৌকা দিয়ে মেরে দিলেন দিদুন। নীবিড় ভাইয়া বাঁকা হেসে ফট করে নিজের মন্ত্রী দিয়ে মেরে দিলেন দিদুনের নৌকা! ব্যস! দিদুনের আরোও একটা পাওয়ার কমে গেলো।
দিদুনের চোখেমুখে এই প্রথম দাবা খেলতে গিয়ে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে। দিদুন হয়তো এবার নীবিড় ভাইয়ার ট্রিক টা ধরতে পেরে গেছেন। তাই আবারও নীবিড় ভাইয়া নিজের আরেকটা হাতি এগিয়ে দিতেই তা মারা যাবে সত্ত্বেও না খেয়ে অন্য গুটি এগিয়ে দিলেন দিদুন! নীবিড় ভাইয়া আবারও বাঁকা হেসে একেবারে শেষ প্রান্তে গিয়ে খেয়ে ফেললেন দিদুনের অবশিষ্ট নৌকোটাও! দিদুনের কুচকে যাওয়া কপাল এবার আগের থেকেও কুচকে এলো। নীবিড় ভাইয়া যে উনাকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এরকমটা করছে তা এতোক্ষণে বেশ বুঝতে পেরেছে দিদুন। কিন্তু অগ্যতাই উনার ৩ টে হাই পাওয়ারের গুটিই মারা পড়লো, অথচ যেখানে নীবিড় ভাইয়ার শুধু সৈন্য মারা পড়েছে।
.
এবার দিদুন আর নীবিড় ভাইয়ার ফাঁদে পা দিলেন না। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে খেলতে লাগলেন দিদুন!
খেলতে খেলতে নীবিড় ভাইয়ারও হাতি মারা পড়লো! যা দেখে নীবিড় ভাইয়ার কপালে সামান্য চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো।
এভাবে একে একে দুজনেরই গুটি মারা যাবার পর দিদুনের কাছে অবশিষ্ট শুধু একটা ঘোড়া আর একটা হাতি সাথে রাজা তো আছেই। আর এদিকে নীবিড় ভাইয়ার আছে একটা ঘোড়া, একটা সৈন্য ও সাথে রাজা! পাওয়ারের দিক থেকে দিদুন নীবিড় ভাইয়ার থেকে অনেক এগিয়ে আছেন। যেকোনো মুহূর্তে নীবিড় ভাইয়া হেরে যেতে পারেন যার আশংকা করেই চোখে রীতিমতো ঝাপসা দেখতে শুরু করে দিয়েছি আমি।
মামুন ভাইয়া আমাদের থেকে খানিকটা দূরে চেয়ারে আরাম করে বসে রয়েছেন, এই খেলায় যেনো কি ফলাফল আসবে তার সম্মন্ধে আগে থেকেই অবগত সে!
.
নীবিড় ভাইয়া এবার বুদ্ধি খাটিয়ে এক ঘর সৈন্য তো একঘর রাজা এভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন। আর এদিকে দিদুনের লক্ষ্য ঘোড়া আর সৈন্যটাকে মেরে রাজাকে হারিয়ে জিতে যাওয়া!
কিন্তু দিদুনের আশাটা তীরে এসে তরী ডুবে যাবার মতোই অস্ত গেলো নীবিড় ভাইয়ার সৈন্যটাকে শেষ মাথায় নিয়ে গিয়ে মন্ত্রী তুলে নেওয়ার পর! মন্ত্রী তুলেই এক এক করে দিদুনের দুটো গুটিকেই ঘরে পাঠিয়ে দিলেন উনি। এখন বাকি শুধু দিদুনের রাজা। একের পর এক চেক খেয়ে যাচ্ছে দিদুন। তবুও পালানো থামাচ্ছেন না। একটা সময় গিয়ে কোণায় আটকা পড়ে গেলো দিদুনের রাজা। এক ধাপ দিলে ঘোড়া দিয়ে চেক পড়বে আরেক ধাপ যেকোনো দিকে দিলেই মন্ত্রী দ্বারা চেক পড়বে। আর সামনে আছে নীবিড় ভাইয়ার রাজা। যাওয়ার পথ শুধু একটাই। তাই পেছনে যেতেই আবারও মন্ত্রী দিয়ে চেক দিয়ে দিদুনের মুখে ঝামা ঘুষে দিলেন নীবিড় ভাইয়া। টানা দেড় ঘন্টা খেলার পর অবশেষে বিজয়ী হলেন উনি। কিন্তু এটা যে শুধু খেলার জিত নয়! জিত দুটি জীবনের দুটি ভালোবাসার ১ টি প্রেমের!
.
—- বেটার লাক নেক্সট টাইম দিদুন!
.
বলেই নীবিড় ভাইয়া দাবার বোর্ড রেখে উঠে পড়লেন। আমার দিকে একটা চোখ টিপ মেরে দিয়ে আবারও একদফা ক্রাশ খাইয়ে দিলেন উনি। সাথেসাথে আবারও বুকের বাম পাশে চিনচিন করে উঠলো আমার। নীবিড় ভাইয়া পকেটে দু হাত গুঁজে উপরে চলে যেতে নিতেই আবারও দিদুন পেছন থেকে শান্ত গলায় বলে উঠলেন,
.
—- খেলা এখানেই শেষ নয়! বিকেলে প্রস্তুত থেকো। এটাই শেষ পরীক্ষা! সাথে তোমার নিভে যাওয়া আশার শেষ প্রদীপও।
.
🍂
.
ভাইয়াদের ঘরে অবস্থান করছি আমি,রাত্রি নিত্য আপু সহ ভাইয়ারা! অগ্নি ভাইয়া নিত্য আপুর হাতে ফোঁসকা পড়েছে কি না তা দেখতে ব্যস্ত। অবশেষে যখন দেখলো আজ হাত পোড়া যায় নি তখন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত হয়ে বসলো অগ্নি ভাইয়া।
.
—– সিরিয়াসলি ব্রো এই বুড়ি তো বুড়ি না এ তো পুরোই ডাইনি বুড়ি! আমি স্টোরিতেও এতো ভিলেনি বুড়িকে আনি না সেখানে এ তো পুরো রিয়েল লাইফেই ঢুকে গেলো! আই সুয়্যার যদি নীবিড় ব্রো হেরেও যায় তো আমি ওই বুড়ির মাথায় একটা চুলও রাখবোনা।
.
—- একদম ঠিক! (রাত্রি)
.
—- আহহহ! থামবে তোমরা? কি শুরু করেছো দুজনে? তোমরা প্লিজ শান্ত হও। আমার ভাই ঠিকই পারবে দেখে নিও! (নিত্য)
.
—- বাট যদি না পারে? (অগ্নি)
.
—- যেটা হবেই না সেটা ভেবে মাথা খারাপ করার আদৌ কোনো মানে হয়? সো প্লিজ তোমরা একটু চুপ থাকো! আমাকে ভাবতে দাও।
.
এতোক্ষণ চুপচাপ ছিলেন শুধু নীবিড় ভাইয়া। সবার কথা শুনার পর খানিক নড়েচড়ে বসলেন উনি। চিন্তিত গলায় বললেন,
—- আচ্ছা অগ্নি, তোদের এখানে পরীক্ষা দেওয়ার মতো আর কি আছে? লাইক এবার পুকুরে মাছ ধরতে বলবে না তো? অবশ্য ওটা একটু কষ্ট হলেও পারবো।
.
অগ্নি ভাইয়া ঠোঁট উল্টে জবাব দিলো,
—- যেহেতু এটাই লাস্ট, দ্যট মিনস এতোটা ইজি টাস্ক দেবে না দিদুন।
.
অগ্নি ভাইয়ার জবাবে আবারও নীরবতা ছেয়ে গেলো সবার মাঝে। এদিকে আমার বুকের মাঝে শুরু হয়েছে উথাল-পাতাল! একমাত্র ভরসা এখন শুধুই উপর ওয়ালাই! তিনি ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে পারবে না আমাদের।
.
🍁
.
চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে আমার। চারিদিক থেকে কোলাহল কানে ভেসে আসছে। এ যেনো কোলাহল নয়, এক তীব্র আর্তনাদ যা আমার মস্তিষ্ককে খন্ড-বিখন্ডে পরিণত করে চলেছে।
বাড়ির সকলে গ্রামের ক্লাবের পেছনের মাঠে এসে জোড়ো হয়েছি। আমাদের সামনে মাঠে একটি নির্দিষ্ট দাগাঙ্কিত গোলাকার এলাকার মাঝে একদিকে অবস্থান করছে নীবিড় ভাইয়া আর অপর দিকে বিপুল দা!
.
আমি ভাবতেও পারিনি শেষমেশ দিদুন উনাকে এমন একটা বিপদজনক পরীক্ষায় ফেলবেন। বিপুল দা জাতে হিন্দু। এই গ্রামে সবথেকে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত উনি। উনার সামনে শহর থেকে আসা ভালো ভালো বডিবিল্ডারও হার মেনে নেয়। সেখানে নীবিড় ভাইয়া কে তো বোধহয় সেকেন্ডের মধ্যে আঁছড়ে ফেলে দেবে বিপুল দা।
আজ বিকেলে দিদুনের মুখে বিপুল দার বিরুদ্ধে নীবিড় ভাইয়ার মোকাবেলার কথা শুনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম আমি, নিত্য আপু ভাইয়ারা সাথে বাড়ির সকলেই শুধু নীবিড় ভাইয়া বাদে। উনার একটাই কথা যতো কঠিন পরীক্ষাই দিক না কেনো তিনি তা দেবে সাথে বিজয়ীও হবেন। অনেকবার বারণ করা স্বত্তেও উনাকে ফেরাতে পারিনি আমি। উনি সেই আমার কথায় পিছ পা না হয়েই দিদুনের শর্ত মেনে মাঠে এসেছেন বিপুল দা’কে হারাতে।
.
বর্তমানে এখনোও প্রতিযোগিতা শুরু হয় নি। দিদুনের বলা মাত্রই শুরু হয়ে যাবে৷ বিপুল দাও আজ বেশ প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
দিদুন চেয়ার টেনে বসেই
“শুরু করা হোক” বলতেই বিপুল দা ঝাঁপিয়ে পড়তে নিলো নীবিড় ভাইয়ার ওপর কিন্তু বিপুল দা কে সুযোগ না দিয়ে নীবিড় ভাইয়ার চট করে পূর্বের স্থান ত্যাগ করায় বিপুল দা ধরতে পারলো না উনাকে। নীবিড় ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে “আয় আয়!” বলে হাতের ইশারায় কাছে ডাকছেন বিপুল দা কে৷ নীবিড় ভাইয়াকে নিজেকে নিয়ে ব্যঙ্গ করতে দেখায় পায়ের রক্ত যেনো মাথায় উঠে গেলো বিপুল দা’র।

বিপুল দা তেড়ে এগিয়ে যেতেই নীবিড় ভাইয়া এক লাফ মেরে সরে গিয়ে উল্টো দিক থেকে লাথি মেরে দিলেন বিপুল দার পিঠে। লাথি খেয়ে ছিটকে মাটিতে পড়লো বিপুল দা। নীবিড় ভাইয়া বাঁকা হেসে বললেন “একজন ড্যান্সারের সাথে পাঙ্গা নিতে আসাও কিন্তু মুখের কথা নয়।” নীবিড় ভাইয়ার কথা শেষ হবার আগেই বিপুল দা নিচ থেকে নীবিড় ভাইয়ার পা টেনে মাটিতে ফেলে দিলো।
.
—- ভাইয়ায়ায়ায়া……!
—- নীবিড়……..! উঠ! কাম অন….!
.
এই সময়ে অগ্নি ভাইয়া, নিত্য আপু নীবিড় ভাইয়াকে ডাকতে পারলেও পারছিনা শুধু আমি। গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছে না আমার। যেনো বাক প্রতিবন্ধী হয়ে গিয়েছি আমি।
.
নীবিড় ভাইয়া পরা থেকে দু পায়ের ওপর ভর করে চোখের পলকে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। আমার দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি হেসে আবারও বিপুল দার দিকে মুখ ফিরিয়ে সোজা মুখ বরাবর একটা ঘুষি মেরে দিলেন বিপুল দার। সাথেসাথেই বিপুল দার একটা দাঁত ভেঙে রক্ত পড়তে শুরু করলো। বিপুল দা ব্যাথায় ছটফট করতে করতে মুখ চেপে ধরলো। রুশো ভাইয়া বিপুল দার দাঁত ভেঙে যাওয়া দেখে খুশিতে এক লাফ মেরে জোড়ে একটা শিটি বাজিয়ে উঠলো।

নীবিড় ভাইয়া নিজের ঘেমে ভিজে যাওয়া চুলগুলোর মাঝে হাত চালিয়ে ঝাকিয়ে পানি ঝেড়ে নিলেন। এদিকে বিপুল দা আগের থেকেও আরোও রেগে গিয়ে অগ্নিমূর্তির ন্যয় রূপ ধারণ করে নীবিড় ভাইয়া গায়ে ঘুষি মারতে নিলেই নীবিড় ভাইয়া বাঁকা হয়ে সরে গিয়ে নিজেই উল্টে বিপুল দার পেট বরাবর ঘুষি মেরে দিলেন। সাথেসাথেই চিৎকার করে আছড়ে পড়লো বিপুল দা। নীবিড় ভাইয়া ফিক করে হেসে দিয়ে ঠোঁট কু্ঁচকে “চু চু চু….!” শব্দ করে বলে উঠলেন,
.
—- ইশশশস বেচারা! শুধু হাতির মতো বিশাল দেহ থাকলেই সব হয় না মি. হোয়াট?
.
রুশো ভাইয়া বললো “বিপুল দা!” নীবিড় ভাইয়া “থ্যাংক্স ড্রিমার” বলে আবারও বলতে শুরু করলেন,
—- হুম মি. বিপুল! সাথে বুদ্ধিরও দরকার হয়।
.
বলেই নীবিড় ভাইয়া হাত পা থেকে ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে চলে আসতে লাগলেন। খুশিতে আমার চোখে শুখের অশ্রু এসে জমাট বাঁধতে শুরু করে দিয়েছে!
কাঁপাকাঁপা পা নিয়েই আমি ছলছল চোখে উনার দিকে এক পা একপা করে এগিয়ে যেতে লাগলাম। পেছন থেকে ব্যাপক হৈ-হুল্লোড় কানে ভেসে আসছে। রুশো ভাইয়া আর অগ্নি ভাইয়া তো নীবিড় ভাইয়ার বিজয়ের খুশিতে লুঙ্গি ছাড়াই মাঠে সবার সামনে লুঙ্গি ড্যান্স করা শুরু করে দিয়েছে।
.
আমি নীবিড় ভাইয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর উনি ঠোঁটে সেই ভুবন ভুলানো হাসির রেশ ফুটিয়ে এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। হঠাৎ পেছন থেকে নিত্য আপুর “ভাইয়া….! সরে যা!” বলে করা আর্তনাদ কানে পৌঁছোতেই সচেতন চোখে নীবিড় ভাইয়ার পেছনে বিপুল দার হাতে লাঠি দেখতে পেয়ে দৌড়ে নীবিড় ভাইয়ার কাছে গিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলাম উনাকে। উনার সাথে টাল সামলাতে না পেরে আমিও পরে গেলাম উনার বুকের ওপর। ভুলবশত আমার ঠোঁট গিয়ে লাগলো সোজা উনার ঠোঁটের ওপর। আর এদিকে বিপুল ভাইয়ার নিক্ষেপ করা লাঠিটা গিয়ে লাগলো সোজা মামুন ভাইয়ার মাথায়!
মামুন ভাইয়া ব্যাথায় চিৎকার করে মাথা চেপে ধরলেন। ততক্ষণে নিশানা সঠিক না হওয়ায় ভয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে পালিয়ে গিয়েছে বিপুল দা।
.
—- যেমন কর্ম তেমন ফল! প্রতিযোগিতা শেষ হবার পরও আপনি কোন সাহসে উনাকে ইশারা করলেন আমার ভাইয়াকে আঘাত করার? (নিত্য)
.
নিত্য আপুর কথায় হকচকিয়ে উঠলো সবাই। নীবিড় ভাইয়া আর আমি উঠে সবার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। নিত্য আপু যে প্রচন্ড রেগে গিয়েছে তা আপুকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নীবিড় ভাইয়াকে দেখে আপু মামুন ভাইয়ার দিক থেকে নজর সরিয়ে নীবিড় ভাইয়াকে এসে জড়িয়ে ধরলো,
.
—- ভাইয়া, ঠিক আছিস তুই?
.
নীবিড় ভাইয়া নিত্য আপুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
—- আমি একদম ঠিক আছি বুদ্ধু!
.
নিত্য আপু নীবিড় ভাইয়াকে ছেড়ে দিয়ে আমার গালে হাত রেখে বললো,
—- ঠিক সময়ে তুমি গিয়ে ভাইয়াকে না ধাক্কা দিলে আজ ভাইয়ার লেগে যেতো!
.
আমি বিনিময়ে শুধু মৃদু হাসলাম। এতোক্ষণে মামুন ভাইয়াকে ধরে উঠিয়েছে চাচ্চুরা। চাচিমনি তো নিত্য আপুর মুখে কথাটা শুনার পর মামুন ভাইয়ার ওপর চরম ক্ষেপে গিয়েছে। চাচ্চুরা চাচিমনিকে কোনোরকমে থামিয়ে মামুন ভাইয়াকে ধরে বাড়িতে নিয়ে গেলেন।
ওরা যেতেই আম্মু আব্বু দৌড়ে এসে আমাদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
আম্মু দিদুনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
.
—- দেখলেন তো আম্মা, আপনার সব পরীক্ষাতেই বাবুই পাশ করে গেলো। আর পাশ করবে নাই বা কেনো দেখতে হবে না স্বয়ং উপর ওয়ালা ওদের জুটি বানিয়ে দিয়েছে। ওদের কেউই আলাদা করতে পারবে না।
.
দিদুন কিছুক্ষণ ভাবলেশহীন ভাবে থেকে মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
—- জানি, আর জানি দেখেই নীবিড়কে দিয়ে এসব পরীক্ষা দিইয়ে নিয়েছি আমি।
.
দিদুনের কথায় আমরা সবাই এক বাক্যে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম “মানে….?” দিদুন বসা থেকে উঠে নীবিড় ভাইয়ার সামনে গিয়ে উনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে শুরু করলেন,
.
—- আমি তোমায় দেখেই বুঝেছিলাম তুমি অনন্যাকে ভালোবাসো আর ওর জন্য সব করতে পারো! কিন্তু মামুনের সাথে অনন্যার বিয়ে ঠিক করে রখেছিলাম আমি। মামুন অনেক আগে থেকেই জানতো যে ওর বিয়েটা অনন্যার সাথেই হবে। আর যেহেতু তোমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয়নি তাই যদি আমি তোমায় এসব পরীক্ষার মধ্যে না ফেলতাম তবে মামুন অন্য কোনো ভাবে তোমাকে অনন্যার জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে চাইতো।

(একটু থেমে দিদুন আবারও বলতে শুরু করলেন)

—- মামুন ছোট থেকেই চুপচাপ আর জেদি স্বভাবের। উপর থেকে শান্ত দেখালেও ও ভীষণ ঠান্ডা মাথার কূটবুদ্ধি সম্পন্ন! ওকে দেখে বোঝার ক্ষমতা নেই ও কিভাবে কার ক্ষতি করে বসে। তাই এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ওকে আস্বস্ত করে রেখেছিলাম যে যেভাবেই হোক অনন্যার সাথে ওর বিয়ে দেবো আমি।

আর যেহেতু সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েওছো তাই আর আমার কিছু করার নেই এটা ভাবিয়েই ওকে থামিয়ে রাখবো এরকমটাই ভেবে রেখেছি আমি। তাছাড়া আমি চেয়েছিলাম অনন্যার জীবনে এমন কেউ থাকুক যে হবে বুদ্ধিসম্পন্ন, ধৈর্য্যশীল এবং ধূর্ত! যেকেনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারবে। এই পরীক্ষা গুলো মূলত তোমার আর অনন্যার বিয়ে নিয়ে নয় বরং তোমার ভালোবাসার জোড়ের প্রমাণ হিসেবে নিয়েছি আমি। শুধু তুমি নও। তোমারা দু ভাই বোনই আমার চাওয়া মতে যোগ্য! এবার তোমাদের শুধু সব নিয়ম-কানুন মেনে বিয়েটা দিয়ে দেবো! তাহলে আর কেউ কিছু করতে পারবে না। মামুন কে আমিই সামলে নেবো। তবে এখন যা যা বললাম তার একটা কথাও যেনো মামুন জানতে না পারে। ও শুধু জানবে এটুকুই যে তুমি জিতেছো অনন্যাকে নিজের ভালোবাসাকে।
.
দিদুনের কথায় সবার মুখের কালো মেঘ কেটে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো। আমি আর নীবিড় ভাইয়া দিদুনকে জড়িয়ে ধরে প্রশান্তির হাসি হাসলাম। এদিকে রুশো ভাইয়া আর রাত্রি জ্বিবে কামড় দিয়ে ধরে আছে।
.
—– ইশশস রে ভালা বুড়িডারে শেষমেশ বিছটু পাতার চুলাকানি খাওয়াইলাম! (রুশো)
.
.
.
.
চলবে…………….💕