প্রেম আমার পর্ব-৬৩+৬৪

0
6149

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৬৩♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
—- হেই ব্রোস! আর কতোক্ষণ এভাবে হাত পা উঠিয়ে কাকড়ার ঠ্যাং বগের ঠ্যাং নাচবো বলো তো ? (রুশো)

—- আরে ব্যাটা চুপচাপ নাচতে থাক নয়তো এই ভাঙা টেপ রেকর্ডার আবারও ভ্যা ভ্যা করে মরা কান্না জুড়ে দেবে। (অগ্নি)

—- লাইক সিরিয়াসলি! একজন ড্যান্সার কে দিয়ে এরকম বিশ্রী নাচ নাচানো হচ্ছে! আগে জানলে শালার পার্টি ফার্টি বোম্ব মেরে উড়িয়ে দিতাম। (নীবিড়)

—- আবে এ এতো হাইপার হোস না। বাচ্চা মানুষ তো! চুপ থাক! নয়তো আবারও সেই কান ফাটানো কান্না করলে কিন্তু বিশ্বাস কর আমি ছাদ থেইকা লাফ দিমু!

—- কি ব্রো…নাচতে নাচতে ল্যাংগুয়েজের চেঞ্জ করে ফেলছো কেনো? হুয়াই হুয়াই?

—- আবে রাখ তোর ভাষা! এদিকে জীবন যায় যায় অবস্থা…..
.
রুশোর প্রশ্নের জবাব স্বরূপ অগ্নি আরোও কিছু বলবে তার আগেই ধিক্কার জানানো হাত তালির তীক্ষ্ণ শব্দে চুপ হয়ে গেলো তিনজনই। তবে মেয়েটি থেমে নেই, এখনো ওদের কেন্দ্র করে গোল গোল ঘুরেই চলেছে সে।
.
না চাইতেই চোখ দুটো ভরে আসছে আমার। আজ এই দিনটাও দেখার বাকি ছিলো তবে? ভাইয়ারা বেগানা মেয়েকে নিয়ে রং-তামাশায় মেতেছে, এমনকি নীবিড় ভাইয়াও! যাকে নিয়ে দুঃস্বপ্নেও এমন কিছু কল্পনা করি নি শেষে কিনা তিনিই এরকম, এতোটা জঘন্য কাজ করতে পারলো? উনার কি একটুও বিবেকে বাধা দিলো না? এতো বড় একটা ধোঁকা দিতে পারলেন উনি আমায়?

পা দুটো কেমন যেনো আসার হয়ে আসছে। বল পাচ্ছি না৷ যেনো এক্ষুনি নেতিয়ে পড়বে মেঝেতে। তবে নিত্য আপু আর রাত্রি থেমে নেই। তাদের হবু জামাইদের কৃতি-কলাপ দেখে হাত তালি দিতে দিতে এগিয়ে গিয়েছে তারা ভাইয়াদের নিকটে।
.
আমাদের দেখে ভাইয়াদের মুখ বিস্ময়ে হা হয়ে গিয়েছে, যেনো আমরা এখানে আসবো তার বিন্দুমাত্রও সম্ভাবনা কল্পনা করে নি তারা।

—- বাহ বাহ বাহ, দারুণ তো! হোয়াট আ ব্যাচেলর পার্টি, আরে সাথে আবার whiskey, Vodka ও আছে দেখছি! গ্রেট! হ্যাটস অফ টু ইউ গাইস…..! (নিত্য)

অগ্নি নিত্যর এভাবে না জেনে রিয়াক্ট করায় চিন্তায় পড়ে গেলো। আজ নিজের গাধামোর জন্য এতো বিশ্রী অপবাদ তাকে নিত্যর থেকে পেতে হবে দুঃস্বপ্নেও ভাবে নি সে। অগ্নি নিত্যকে বোঝানোর উদ্দেশ্যে মাথা ডানে-বামে নাড়িয়ে “নিত্য তুমি ভুল বুঝছো….” এটুকু বলতেই হাত মেলে থাময়ে দিলো তাকে নিত্য। রাত্রি ক্ষেপে গিয়ে নিজের এটম বোম্ব রূপে কনভার্ট হয়ে সোজা নাক বরাবর ঘুষি মেরে দিলো রুশোর। রুশো তৎক্ষণাৎ নাক চেপে ধরে ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলো। রাত্রি আবারও মারতে যাবে তার আগেই রুশো কয়েক হাত দূরে গিয়ে নাক চেপে ধরে বলে উঠলো,

—- হেই এটম বোম্ব ট্রাস্ট মি, আমরা শালীকে এখানে আসতে বলিনি! শি…..

আর বলা হয়ে উঠলো না রুশোর। এবার নাকের বদলে তার পিঠে কিল বসানো শুরু করে দিলো রাত্রি।
রেগেমেগে দাঁতে দাঁত চেপে সে বললো,

—- শয়তান, ফাজিল ছ্যাড়া! এখন এক ঠ্যালায় ভাড়া করে আনা মেয়েকে শালী বানায় দিলি? তোরে ভালোবাসার এই দাম দিলি আমায়? তুই এরকম আগে জানলে তো দিদার ভাইয়াকেই বিয়ে করে নিতাম অামি। ইউ ব্লাডি বিচ!
.
বলেই একনাগাড়ে রুশোকে উত্তম-মধ্যম প্রহার করতে করতে তার অবস্থার দফারফা করে ফেলছে। রুশোর আকুতিভরা কন্ঠে তাকে থামতে বলা বাক্যগুলো কানে তুলছে না রাত্রি। এদিকে নিত্য অগ্নিকে একের পর এক কথা শুনিয়েই যাচ্ছে অগ্নি এতোবার বলছে তার কথাটা শুনতে বাট না সে তাকে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছে না। মাঝখান থেকে চিপায় পড়েছে নীবিড়। নারী শক্তির হাত থেকে অগ্নি-রুশোকে বাচানোর জন্য সে ছোটাছুটি করছে স্রেফ।
.
আর সামলাতে পারলাম না নিজেকে ধপ করে হাটুতে ভর করে বসে পড়লাম আমি। সবকিছু কেমন যেনো ঘোলাটে লাগছে আমার। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে দিয়েছি আমি। আমায় এভাবে গা ছেড়ে দিতে দেখে দৌড়ে এলেন নীবিড় ভাইয়া, আমায় নিজের বুকে টেনে নিয়ে গাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলতে লাগলেন,

—- হেই অনন্যা, গেট আপ! কি হয়েছে তোমার?
শিট…..! নিত্য…..অগ্নি….পানি নিয়ে আয় ফাস্ট! (চেঁচিয়ে)
.
উনার শেষের কথা গুলো আর কানে পৌঁছালো না আমার। অন্ধকার হয়ে এলো সবকিছু, চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে নিস্তেজ শরীরটা নেতিয়ে পড়লো উনার বুকেই।

নীবিড়ের ডাকে নিত্য থেমে গিয়ে পেছন ফিরে তাকাতেই ঘোমটার আড়ালে থাকা মেয়েটা প্রকান্ড চিৎকারে উচ্চস্বরে কান্না করতে শুরু করে দিলো। মেয়েটির কান্নায় রাত্রি রুশোকে মারতে মারতে হুট করে থেমে গিয়ে অস্ফুট কন্ঠে আনমনেই বলে উঠলো,

—- রিমি….!
.
🍂
.
জ্ঞান ফিরে পেয়ে আধো আধো করে চোখ দুটো খুলতেই আবারও মাথায় সেই তীক্ষ্ণ চিনচিনে ব্যথাটা অনুভব হলো আমার। কপালে ভাঁজ ফেলে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিতেই বুঝলাম আমি আমার ঘরেই শুয়ে রয়েছি। আমার পাশেই ঠোঁট কামড়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ অবস্থায় এক হাতে কপালে স্লাইড করছেন নীবিড় ভাইয়া। আমার বা পাশে নিত্য আপু আর অগ্নি ভাইয়া চিন্তিত ভাব নিয়ে বসে আছে।
রুশো ভাইয়া চেয়ার টেনে বিছানার পাশে বসে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আমার মুখখানায়, তার পাশেই অপরাধীর দৃষ্টিতে ছলছল চোখে মাথা নিচু করে রয়েছে রাত্রি।

আমায় জ্ঞান ফিরে পেতে দেখেই সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। রুশো ভাইয়া আমার হাতটা নিজের মুঠোয় ধরে মৃদু হেসে বলে উঠলো,

—- ছুটকি!

“ছুটকি” ডাকটা কানে পৌঁছোতেই কপাল থেকে হাত নামিয়ে চটজলদি আমার মুখপানে হেলে পড়লেন নীবিড় ভাইয়ার। আমায় উঠিয়ে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে জোড়ে জোড়ে বার কয়েক শ্বাস নিয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে কাঁপাকাঁপা গলায় উনি বলে উঠলেন,

—- তু…তুমি ঠিক আছো অনন্যা? জানো কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি? এতোটা উইক কেনো তুমি বলতে পারো? একটুতেই সেন্সলেস হয়ে যাও কি করে?

আমি উনার কোনো প্রশ্নেরই জবাব দিলাম না। একটা সময় উনার এই বুকের মাঝেই সব থেকে বেশি প্রশান্তি খুঁজে পেলেও আজ আমি অনুভূতি শুণ্য! বারবার সেই ছবিটাই ভেসে উঠছে আমার দুচোখের সামনে।

উনার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিতে লাগলাম উনাকে। উনার হাতের বাঁধন আলগা হতেই মুখ ফিরিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গেলাম আমি। মৃদুস্বরে চোখ দুটো বুজে নিয়ে ভারী গলায় বলে উঠলাম,

—- প্লিজ আপনি যান এখান থেকে। আমায় একা থাকতে দিন! আপনার ঐ পার্টির মেয়েটার কাছে গিয়ে মজ-মাস্তি করুন। কিচ্ছু বলবো না আপনাকে অামি।

আমার কথায় নিমিষেই সবার মুখভার হয়ে এলো, নিত্য আপু আর রাত্রি আমায় কিছু বোঝাতে মুখ খুলবে তার আগেই ওদের থামিয়ে দিয়ে আমার দুবাহু চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন নীবিড় ভাইয়া। চোখদুটো যেনো রক্তবর্ণ ধারণ করেছে উনার। তার থেকে নিসৃত হচ্ছে রক্তিম আভা। উনার চোখের দৃষ্টি স্থির। যেনো কতশত অভিযোগ লুকায়িত রয়েছে সেই দৃষ্টিতে। সেই চোখে তাকানোর ইচ্ছে বা সাহস কোনোটাই এই মুহুর্তে কাজ করছে না আমার। উনার চোখ থেকে নিজের দৃষ্টি নামিয়ে নিতেই আরোও শক্ত করে চেপে ধরলেন উনি আমায়। দৃঢ় কন্ঠে উনি বলে উঠলেন,

—- কি বললে তুমি? আমি কোনো মেয়ের সাথে মজ-মাস্তি করেছি? হ্যা? ইউ স্টুপিড! কোনো কিছু না জেনে শুনে জাজ করো কিভাবে তুমি? এই বিশ্বাস তোমার আমার ওপর? কি মনে হয় আমাকে, আমি ক্যারেক্টর লেস?
.
উনি যে খুব ভালো মতোই ক্ষেপে গিয়েছেন এটা স্পষ্ট কিন্তু উনি ক্ষেপছেন কোন হিসেবে? সব সময় বুঝি রাগ দেখিয়ে আমায় চুপ করিয়ে রাখবেন? এমন কি যেখানে অন্যায় উনি করেছেন সেখানেও? কিন্তু না, আমি এই অন্যায় মুখ বুজে সইবো না। অন্যায় যে করে এবং অন্যায় যে সহ্য করে দুজনেই সমান অপরাধী!
এই প্রবাদটাকেই ধার্য করে উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি। তা দেখে রুশো ভাইয়া আমায় কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আমায় ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিয়ে বড়বড় পায়ে হাটা ধরলেন উনি ছাদের উদ্দেশ্যে। হৃদয় টা মোচড় দিয়ে উঠলেও মুখ ফুটে একটা টু শব্দও করলাম না আমি। স্টাচুর মতো বসেই রইলাম স্রেফ।
.
—- এটা কি করলি তুই অনু? সবটা না জেনেই ছেলেটাকে হার্ট করলি?
.
অগ্নি ভাইয়ার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার। এমনটা তো নয় যে ভাইয়াও অপরাধ করে নি। নীবিড় ভাইয়ার মতো সেও একই অপরাধের অপরাধী। সেই হিসেবে ভাইয়ার দিক থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিলাম আমি। রাত্রি রুশো ভাইয়ার পাশ থেকে আমার কাছে এসে দু বাহু ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো,

—- অনন্যা…! তুই আসলেই একটা স্টুপিড। আমরা নাহয় ভুল ভেবে নিয়েছিলাম বাট আমাদের একসাথে দেখেও কি তোর মনে হলো না যে মামলাটা সেটা নয়?

রাত্রির কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি কিছুই বলতে পারলাম না। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকয়েই রইলাম স্রেফ। রাত্রি আবারও একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো,

—- ওটা অন্য কোনো মেয়ে ছিলো না অনন্যা। ওটা রিমি ছিলো। ভুল করে Vodka খেয়ে নয়ে মাতাল হয়ে পড়েছিলো। আর রুশোদের ঘিরে নাচ করছিলো। রশোরা ওকে থামাতে অনেক চেষ্টা করেছে বাট কোনো কাজ হয়নি বরং ও তিনজনকেই নাচিয়ে ছেড়েছে। না নাচলে মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে।

রাত্রির কথার মাঝেই রুশো ভাইয়া মুখ ফুলিয়ে বললো,
—- এন্ড দ্যটস হোয়ায়, আমরা ওকে থামিয়ে রাখার জন্য হাত পা উঠিয়ে ওরকম কাকড়ার ঠ্যাং বকের ঠ্যাং নাচছিলাম। আর ওসব whiskey, vodka আমরা আনাই নি। ডেলিভারিতে রেস্টুরেন্ট থেকেই গন্ডগোল হয়েছিলো। কোল্ড ড্রিংকস এর বদলে ওসব ভুল করে দিয়ে দেওয়ায় ব্রো বাইরে গিয়েছিলো কোক আনতে।

একটু থেমে ভাইয়া মুখ কালো করে আবারও বলা শুরু করলো,
—- আর তোরা তো না বুঝেই…..ইনফ্যান্ট এতো মার আমাকে আব্বুও মারে নি ছোটতে যতটা না এটম বোম্ব আজ মেরেছে। আই ওয়াস ট্রাইং টু সে দ্যট শি ইজ মাই সিসটার ইন ল! বাট এটম বোম্ব ভেবেছে আমি বাজে ভাবে মেয়েটাকে “শালী” বলেছি!

কথাগুলো বলেই রাত্রির দিকে অভিমানে ভরা নজরে এক পলক তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো রুশো ভাইয়া। অগ্নি ভাইয়া নিত্য আপুর দিকে একবার তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

—- তোদের আমাদের ওপর বিশ্বাস দেখে আমি জাস্ট মুগ্ধ রে অনু। কি করে ভাবলি তোরা আমরা এরকম লো মাইন্ডেড কাজ করবো? এই চিনলি তোরা আমাদের? জানিস তুই সেন্সলেস হয়ে যাবার পর নীবিড় কি পরিমাণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো? বারবার একটা কথাই বলছিলো “আজ যদি এই পার্টি না করতাম তবে আমার অনন্যা অসুস্থ হয়ে পড়তো না!”
পুরো পাগলদের মতো বিহেব করছিলো ছেলেটা। আমরা অনেক কষ্টে ওকে বুঝাই যে তুই জাস্ট সেন্সলেস হয়েছিস নাথিং এলস। মুখে পানি ছিটা দিলেই জ্ঞান ফিরবে। কিন্তু না নীবিড় মানতেই চায়নি। ওর ধারণা এতোকিছুর জন্য জাস্ট ও ই দায়ী। একবার ভাব কতোটা ভালোবাসে ও তোকে। তুই ওর মনে কতোটা আঘাত দিয়েছিস ভাবতে পারছিস?

নিত্য আপু বুঝলো ভাইয়া কথাগুলো শুধু আমাকেই নয় আপুকেও মিন করে বলেছে। যার দরুন আগের থেকেও মুখটা ছোট হয়ে এলো আপুর। টলমলে চোখে আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আপু বললো,

—- আমাদের দেখায় ভুল ছিলো অনন্যা। সবসময় আমরা যা চোখে দেখি তাই সত্যি হয়না। আবার দূর থেকে না দেখেও অনেক কিছুই বিশ্বাস করে নেওয়া যায় যা কিনা সত্য। আসলে আমিও বুঝতে পারছি তোমার মনের পরিস্থিতি। আকস্মিক এমন একটা ঘটনা চোখে দেখে আমরা কেউই নিজেদেরর সেন্সে ছিলাম না। নিজের সব থেকে কাছের মানুষকে এরকম জঘন্য কাজ করতে দেখলে কারোরই মাথা ঠিক থাকে না এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদেরও ভুল রয়েছে যথেষ্ট। আমরা কেউই ভাইয়াদের এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দেইনি।

দেড়ি করো না অনন্যা! ভাইয়ার রাগ সম্মন্ধে তোমার ধারণা থাকার কথা, কিন্তু এটা রাগ নয় যে তা ঠান্ডা করতে পারবে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে। ভাইয়া অভিমান করেছে অনন্যা! ভাইয়ার কাছে যাও ভাইয়াকে বোঝাও। গো ফাস্ট………….
.
আমি আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালাম না। এতোক্ষণ ধরে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া নোনা জলগুলো মুছতে মুছতে ছুট লাগালাম ছাদের উদ্দেশ্যে। নিজের ওপর অাজ বড্ড ঘৃণা হচ্ছে আমার। কিভাবে ভাবতে পারলাম আমি উনাকে এরকম? ভুল হয়ে গিয়েছে আমার। বড্ড ভুল হয়ে গিয়েছে। নিজের গালে নিজেকেই থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে। ছিঃ সেম অন ইউ আনানয়্যা….!
.
🌹
.
ছাদে পা রাখতেই আৎকে উঠলাম আমি। টেবিলে রাখা রকমারি খাবার, প্যান্ডেল, মরিচ বাতি সবকিছু বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। টেবিলটাও আগের মতো নেই ভেঙে উল্টে পড়ে রয়েছে সেও। নিঃসন্দেহে এসব নীবিড় ভাইয়ারই কাজ। উনি ব্যতীত কেউই এসব ভাংচুর করবে না এ বাড়িতে।

ছাদের রেলিং ধরে দৃষ্টি দূর আকাশে ফেলে দাঁড়িয়ে আছেন নীবিড় ভাইয়া। উনাকে দেখে ভয়টা আরোও শতভাগ বেড়ে গেলো আমার। উনার কাছে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? রাগের মাথায় ছাদ থেকে ফেলে দেবেন না তো উনি? না না ফেলে দেবেন না। কারণ উনি তো রাগ করেই নেই, উনি তো করেছেন অভিমান। উফফফ বাঁচা গেলো। কিন্তু উনার অভিমান আবার কি রকম? আমার মতোই কি অভিমান করলে চুপ করে থাকেন উনি? নাকি দু-চারটে থাপ্পড় বসিয়ে ক্ষান্ত হবেন উনি? এতো মহা চিন্তার বিষয়! বিয়ের দিন কণের গালে পাঁচ আঙুলের দাগ দেখলে লোকে কি বলবে? আবার উনার কাছে না গেলেও তো নয়। হয়তো পরিশেষে দেখা যাবে বিয়েটাই ভেঙে ফেলেছেন উনি? না না আমি বিয়ের আগেই ডিভোর্সি হতে পারবোনা। বিয়ে করতে হলে ভয়কে জয় করতেই হবে আমায়।

এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই পা টিপেটিপেটিপে এক পা দুপা করে এগোতে লাগলাম আমি। দোয়া-দরুদ পড়ে বুফে ফু মেরে নিয়ে আল্লাহ কে ডাকতে ডাকতে এগিয়ে চললাম নিঃশব্দে। তবে ভাগ্য আমার, ধোঁকা তো দেবেই! তিন কদম এগোতেই আগের মতো আকাশ পানে চেয়ে থেকেই উনি কড়া গলায় বলে উঠলেন,

—- ভালোয় ভালোয় এখান থেকে চলে যাও অনন্যা! আমার কাছে এসো না।

উনার গম্ভীর গলায় শান্ত নিষেধাজ্ঞায় হৃদপিন্ড বার কয়েক কেঁপে উঠলো আমার। ঠোঁট কামড়ে ধরে আগাবো নাকি পেছাবো ভাবতে ভাবতেই আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলাম আমি। আজ এখান থেকে ভীতুর মতো লেজ গুটিয়ে পালানো মানে তীরে এসে তরী ডুবে, যাওয়া! মনে মনে খানিক সাহস সঞ্চার করে আবারও এগিয়ে গেলাম আমি।
আমায় পেছানোর বদলে এগিয়ে যেতে অনুভব করে কপালে ভাজ ফেলে ধমকে উঠবেন তার আগেই আমি উনার বুকে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম। উনাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে অস্ফুট স্বরে ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম,

—- কে…কেঁচো! ও…. ওখানে কেঁচো আছে। প্লিজ বাঁচান আমায়……

আমার কথায় যেনো সাত আসমান থেকে ধুপ করে মুখ থুবড়ে পড়লেন উনি। ভ্রু কুঁচকে ফ্লোরের দিকে তাকাতেই কপালের ভাজটা আগের থেকেও দৃঢ় হয়ে এলো উনার। কিছুক্ষণ সেদিকে চেয়ে থেকে হঠাৎ কেঁপে উঠতে লাগলেন উনি। উনার শরীরে কম্পন সৃষ্টি হওয়ায় অবাক হলাম আমি। ভয়ের নানি-দাদি ফেলে উনার বুক থেকে মুখ তুলে তাকালাম আমি।
উনি হাসছেন! রাতের অন্ধকারে মরিচ বাতির আধো আধো আলোয় উজ্জ্বল উনার হাস্যজ্বল মুখখানা সোজা এসে বিধলো আমার বুকের বা পাশটায়। উনার মন খোলা হাসির ঝংকার কানে সুমধুর স্রোত হিসেবে বইতে শুরু করলো আমার। উনার স্নিগ্ধ হাসি দেখে অজান্তেই মুখে মুগ্ধতার হাসি ফুটে উঠলো আমারও। উনি হাসতে হাসতে ” ওহ মাই গড, চাওমিন কে শেষমেশ কেঁচোর উপাধি দেওয়া হলো!” বলেই আবারও হাসতে লাগলেন উনি। পরম আবেশে আমায় নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে কপালে নিজের নরম ওষ্ঠদ্বয় স্পর্শ করিয়ে হাল্কা স্বরে বলে উঠলেন,

—– “পাগলি একটা!”
.
চলবে……………..💕

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-৬৪♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
ঘড়ির এলার্মের সেই বিরক্তিকর তীক্ষ্ণ আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। দু হাতে দু কান চেপে ধরে চোখ পিটপিট করে মেলে তাকাতেই অগ্নি ভাইয়াকে আমার কানের কাছে এলার্ম ক্লোক ধরে থাকতে দেখে হকচকিয়ে উঠলাম আমি। এটা নিঃসন্দেহে ভাইয়ার রূপধারী জ্বিন ছাড়া আর কিছুই নয়। নাহলে এতো সকালে অগ্নি ভাইয়া ঘুম থেকে উঠে আমার ঘরে আসবে এ নিতান্তই স্বপ্ন মাত্র। বাস্তবে এর কোনোই অস্তিত্ব ছিলো না যে মিরাকল স্বরূপ আজ থাকবে।

চোখের সামনে জলজ্যান্ত জ্বিন দেখে যে কেউই ভয়ে আঁতকে উঠবে, আবার কেউ কেউ ফিট ও লাগতে পারে। আমিও ব্যতিক্রম নই। মানুষ হিসেবে জ্বিন সামনে আসায় ভয় পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক আমার ক্ষেত্রেও। যার দরুন এক প্রকাণ্ড বাড়ি কাঁপানো চিৎকার করে বিছানা থেকে ধপাস করে ফ্লোরে আছড়ে পড়লাম আমি। আমায় এভাবে ভয় পেয়ে পরে যেতে দেখে ভাইয়া রূপী জ্বিনটা যেনো পৈশাচিক আনন্দ পেলো। ঘর কাপিয়ে হু হা করে ভয়ংকর হাসির ঝংকার তুলে দিলো সে। আমি এদিক ওদিক ভয়ার্ত চোখে তাকে প্রহার করার কিছু একটা অস্ত্র না হোক ছোট একটা বস্ত হলেও খুঁজছি। আদৌ জানি না জ্বিনদের পেটালে তারা ব্যাথা পায় নাকি কিন্তু এর থেকে ভালো উপায় আর চোখে পড়ছে না আমার। আশেপাশে চোখ বোলাতেই আমার টেডিবিয়ার টা দেখতে পেয়ে ঠোঁট উল্টালাম আমি। মনে মনে তাকে বার কয়েক সরি বলে নিয়ে ভাইয়া রূপী জ্বিনের দিকে নিক্ষেপ করতেই ভ্রু কুঁচকালো জ্বিনটি। আমায় ভেঙিয়ে সে বলে উঠলো,

—- ঘুম থেকে উঠেই মারামারি করার শখ জাগছে ভালো কথা, তাই বলে তোর এই ০.০০০১ গ্রাম টেডিবিয়ার দিয়ে মারতে চাইছিস কোন আক্কেলে? লাইক সিরিয়াসলি!

বলেই আবারও হু হা করতে হাসতে শুরু করে দিলো সে। জ্বিনকে হুবুহু ভাইয়ার মতো কথা বলতে দেখে বড্ড অবাক হলাম আমি। কাঁপাকাঁপা হাতে ভাইয়া রূপী জ্বিনের পায়ে একটা চিমটি বসিয়ে দিতেই “আউউউউউ…..!” বলেই চেঁচিয়ে উঠলো সে। পা চেপে ধরেই সে বিছানায় বসে পড়ে বলে উঠলো,

—- ওই শাঁকচুন্নি! এগুলো তোর নখ নাকি কোদাল? সালাম করবি ভালো কথা তাই বলে চিমটি?

এবার আমি আগের থেকেও বেশি অবাক হয়ে পড়লাম। এটা যদি জ্বিন হতো তাও এতোটা অবাক হতাম না কিন্তু এতো আমার ঘুম কাতুরে ভাইয়া! যাকে কিনা ১০ টার আগে ঘুম থেকে পিটিয়েও উঠানো যায় না। সে আজ এতো সকাল সকাল উঠলো কি করে? এবার নিজেই নিজের হাতে চিমটি বসিয়ে দিলাম, উদ্দেশ্য ঘুমের মধ্যেই ঘুম থেকে উঠার স্বপ্ন দেখছি কিনা তা শিওর হওয়া। কিন্তু না ব্যাথা অনুভব হলো তার মানে এটা কোনো স্বপ্ন নয়! এটা সত্য, বাস্তব। এতে কোনো সন্দেহ নেই আর আমার।
ভাইয়া আমায় নিজের হাত নিজেকেই চিমটি কাটতে দেখে কপালে ভাজ ফেললো। হাতে থাকা এলার্ম ক্লকটা বেড টেবিলে রেখে দিয়ে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—- এইরে কাল পুরো তিন গ্লাস দুধ খেয়ে কি পাগল টাগল হলি নাকি? তাহলে তো বেশ চিন্তার বিষয়!

আমি ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার পাশে বসে পড়ে বোকা বোকা চাহনিতে জিজ্ঞেস করলাম,

—- আরে আমার কথা ছাড়! তুই এতো সকালে উঠলি কিভাবে? আমি তো তোকে জ্বিন ভেবে ফেলেছিলাম চকলেটের কসম।

আমার কথায় হতভম্ব হয়ে গেলো ভাইয়া। চোখ দুটো বড়বড় করে ফেলে টেবিল থেকে ঘড়িটা নিয়ে আমার সামনে ধরতেই আঁতকে উঠলাম আমি। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে জুড়ে দিয়ে ভাইয়ার কানে পর্দা ফাটিয়ে বসলাম অবশেষে।

—– নেহিইইইইইইইইইইইইইই………….!

আমার চিৎকারে ভাইয়া দু কানে দু হাত দিয়ে চেপে ধরে উঠি দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

—- ওই আমার কান কি এতোই সস্তা যে কাল নিত্য ফাটিয়ে ছাড়লো আর আজ তুই! বিয়ের আগেই কি ঠসা বাবা বানিয়ে ফেলতে চাইছিস নাকি?

আমি চটজলদি দাঁড়িয়ে পড়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস বানিয়ে বলে উঠলাম,

—- বেলা ১১ টা বাজতে আর মাত্র ৬ মিনিট! আমি এতোক্ষণ ঘুমোলাম কি করে?

অগ্নি ভাইয়া চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে আমার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠলো,

—- হ্যা তুমি সারারাত জেগে থাকবা আর ঘুম বাবাজি তোমায় টাটা বায় বলে চলে যাবে নাকি?
ডাফার! যা জলদি ফ্রেশ হয়ে নে, গায়ে হলুদের দিন বাড়ি ভর্তি মেহমান আর কণে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে!

বলেই বড়বড় পায়ে শার্টের হাত গুটাতে গুটাতে চলে গেলো অগ্নি ভাইয়া। আমি কিছুক্ষণ থম মেরে থেকেই স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে গতকাল রাতের বিভৎস দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
.
🍂
.
গতকাল………..

—- আপনি কি তাহলে আইসক্রিমের মতো গলে গিয়েছেন? আর রাগ বা অভিমান করে নেই তো আপনি?

আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো নীবিড় ভাইয়ার। আমায় নিজের থেকে ছাড়িয়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন উনি। প্যান্টের পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের সিল্কি চুকগুলো ঝাঁকিয়ে উনি বলে উঠলেন,

—- আ আ আ! এতো সহজে নীবিড় তোমার ওই আইসক্রিমের মতো গলে না সোনা। ভুল যখন করেইছো তার শাস্তি তো পেতেই হবে।

শাস্তির কথা শুনেই ঠোঁট উল্টালাম আমি। হাজার হোক ভুল যে করেছি এটা যেমন সত্য তেমনই ভুলের জন্য শাস্তি পাওয়াটাও কাম্য। তাতে যদি উনি খুশি হন তাহলে যত বড় শাস্তিই দিক না কেনো আমি মাথা পেতে নেবো। সেই ভেবেই একটা শুকনো ঢোক গিললাম আমি। বুক ফুলিয়ে শ্বাস টেনে খানিক সাহস সঞ্চার করে নিয়ে মিনমিন করে বললাম,

—- আপনি আমায় যেই শাস্তিই দিবেন আমি তাই মাথা পেতে নেবো। আফটার অল দোষ টা আমার। আমিই আপনাকে ভুল বুঝে, অবিশ্বাস করেছি। শাস্তিটা আমার প্রাপ্য!

আমার জবাবটা বোধহয় বেশ পছন্দ হলো উনার। উনি বাঁকা হেসে আমার কাছে এগিয়ে এসে সামান্য ঝুঁকে পড়লেন। ঠোঁটের কোণে ঘায়েল করা সেই রহস্যময় হাসি হেসে বলে উঠলেন,

—- দ্যটস লাইক আ গুড গার্ল। নাও ফলো মি।

.
বেডরুমের বিছানায় গুটিশুটি মেরে কান্না কান্না ফেইস বানিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে বসে রয়েছি সামনে থাকা একটা নয় দুটো নয় পুরো তিন তিনটে দুধের গ্লাসে ওপর। কিন্তু নির্দয় সাদা বিলাইয়ের এক ফোটাও দয়া হলো না আমার ওপর। সামান্য একটু ভুল বুঝার জন্য এমন ভয়ানক শাস্তি দেবেন কল্পনাও করিনি আমি। আগে যদি জানতাম তো না উনাদের ব্যাচেলর পার্টিতে উঁকি ঝুঁকি মারতাম আর না নৃত্যরত রিমিকে পচা মেয়ে ভাবতাম আর না উনাকে ভুল বুঝে এতো বড় পাপ করতাম।
দুধ না খাওয়ার কোনো পথই খোলা রাখেন নি উনি। আমি হয়তো শাস্তি ভোগ করবো বলার পরও দুধ দেখে টেরিবেরি করবো বুঝতে পেরে আগে থেকেই লবণের বয়াম আনিয়ে রেখেছেন উনি। এখন না পারছি গিলতে আর না পারছে দিন দুনিয়া ভুলে যেদিকে চোখ যায় সেদিকে ছুটে যেতে।

নীবিড় ভাইয়া আমার এরকম করুন দশা দেখে বাম সাইডের ভ্রু উঁচু করে ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে উনি বলে উঠলেন,

—- বুঝেছি পারবেনা তুমি। ওকে দেন আল্লাহ হাফেজ!

বলেই উল্টো দিকে ফিরে হাটা ধরতে নিলেই দৌড়ে গিয়ে উনার পথ আটকে দাড়ালাম আমি। ভয়ার্ত চোখে একবার দুধের গ্লাস গুলোর দিয়ে চেয়ে অসহায় কন্ঠে বললাম,

—- না…আপনি যাবেন না প্লিজ। আমি একটু সময় নিয়েছি তার মানে তো এই না যে খাবো না।
জাস্ট ২ মিনিটেই শেষ করে আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি ওয়েট।

বলেই বুক ফুলিয়ে শ্বাস টেনে বড়বড় পায়ে এগিয়ে গেলাম টেবিলের নিকটে। নিঃশ্বাস বন্ধ করবার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালিয়ে চোখ খিঁচে নাক চেপে ধরে ঢকঢক করে একের পর এক গ্লাস খালি করতে শুরু করলাম আমি। দুনিয়া উল্টে যাক আমার পেট ফুটবল হয়ে যাক তাও আজ এই অসাধ্য সাধন করতে হবেই আমায়, এই ভেবেই টানা তিন গ্লাস দুধ নাক চেপে সাবার করার পর অবশেষে ক্ষান্ত হলাম আমি।
আমায় এরকম সুপার ফাস্ট স্পিডে একের পর এক গ্লাস খালি করা দেখে বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে ফেললেন নীবিড় ভাইয়া। এতোক্ষণ ধরে বহু কষ্টে চাপিয়ে রাখা হাসির ফোয়ারা ব্লাস্ট করে ঘর কাপিয়ে হু হা করে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া শুরু করে দিলেন উনি।

উনার হাসি দেখে মুখ ফুলিয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে নিয়ে দুধের স্বাদ দূর করবার চেষ্টা চালালাম আমি। পেটের অবশিষ্ট বিন্দুমাত্র জায়গাও আর ফাঁকা রইলো না। না জানি আজ রাতে ঘুমোতে পারবো কিনা! নাকি বাথরুমকেই বেডরুম বানাতে হবে সন্দেহ!

বেশ কিছুসময় বিছানায় গড়াগড়ি খাবার পর ক্লান্ত হয়ে উঠে বসলেন নীবিড় ভাইয়া। এদিকে এতোগুলা তরল পদার্থ নিজের ছোট্ট পেট টা তে ধারণ করার ফলে আমার নাজেহাল অবস্থা! উনাকে উঠে বসতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম আমি। পেট চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম,

—- খুব হাসি পাচ্ছে আপনার তাইনা? নিজেই আমায় বিপাকে ফেলে নিজেই মজা নিচ্ছেন! আপনার মনে হয় না এটা নির্যাতন? এতো রীতিমতো বাচ্চা নির্যাতন!

আমার কথায় আমারও ঠোঁট চেপে ধরে ফিক করে হেসে উঠলেন উনি। আমার ফুলিয়ে রাখা গাল দুটো নিজের ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে চুপসে দিয়ে দুষ্টু হেসে বললেন,

—- ইউ নো হোয়াট, তোমায় একদম প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মতো লাগছে।

বলেই বিছানা থেকে উঠে দৌড় মারলেন উনি। আমি রেগেমেগে চেঁচাবো সেই সুযোগ টা পর্যন্ত দিলো না ফাজিল পোলা। মনে মনে উনাকে হাজারটা গালি গালাজ করতে করতে নিজের ফুলে উঠা পেট টার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম আমি। বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছে হতাশ হয়ে ওভাবেই শুয়ে পড়লাম অবশেষে। আজ সারারাত যে ঘুম বাবাজির নানু দাদুও আমায় কাবু করতে পারবে না তা বেশ বুঝতে পারছি আমি।
.
🌹
.
হঠাৎ রুশো ভাইয়ার ডাক পরায় ভাবনা জগৎ থেকে বর্তমানে ফিরলাম আমি। ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে আবারও আমায় ডেকে বলে উঠলো,

—- কিরে ছুটকি, কোন ভাবনায় ডুব দিয়েছিস? এখনোও ফ্রেশ হোস নি কেনো?

ভাইয়ার ডাকে হকচকিয়ে উঠে চোখ তুলে তাকাতেই থমকে গেলাম আম। হলুদ! রুশো ভাইয়া ইয়েলো এন্ড হোয়াইটের কম্বিনেশনে পাঞ্জাবি পড়েছে। এই কালারটা দেখলেই কেনো যেনো মেজাজ টাই বিগড়ে যায় কিন্তু রুশো ভাইয়া হলুদে দারুণ মানিয়েছে। আমি ভাইয়ার পা-মাথা অবদি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিয়ে অবাক হয়ে আনমনেই বলে উঠলাম,

—- ওয়াও ভাইয়া! ফাটাফাটি লাগছে তোমায়!

কমপ্লিমেন্ট পেয়ে যেনো হাওয়ায় উড়ে গেলো রুশো ভাইয়া । নিজের ব্রাউন চুলগুলোর মাঝে হাত চালিয়ে ভাইয়া বললো,

—- আরে এটা আজ নতুন কি? আমায় তো অলওয়েজ ঝাক্কাস ই লাগে।
আচ্ছা শুন না তোকে একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে, তার বদলে পুরো শপের চকলেটস এনে দেবো তোকে প্রমিজ।

চকলেটের নাম শুনেই চোখ চিকচিক করে উঠলো আমার। খুশিতে গদগদ হয়ে নরম গলায় বললাম,

—- আরে তুমি বলেই তো দেখো, তোমার ছুটকি চুটকি বাজিয়ে চোখের পলকে সব কাজ করে দেবে।

আমার জবাবে মিষ্টি হাসলো রুশো ভাইয়া। আমার গাল দুটো টেনে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,

—- আমি জাস্ট আধা ঘন্টার জন্য বাহিরে যাবো, কেউ আমায় খুঁজলে তুই প্লিজ কিছু একটা বলে চালিয়ে দিস। কেউ যাতে বুঝতে না পারে আমি বাইরে গিয়েছি। ওকে?

গালে হাত দিয়ে চোখ ঘুরিয়ে খানিক ভেবে ছোট্ট করে জবাব দিলাম,

—- ওকে ডান!

.
ফ্রেশ হয়ে একরাশ অলসতার বশিভূত হয়ে হেলেদুলে ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই চমকে উঠলাম আমি। অগ্নি ভাইয়াও রুশো ভাইয়ার মতো ইয়েলো কালার পাঞ্জাবি আর হোয়াইট পায়জামা পরে ওয়াশরুমের দরজার একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক চোখ বোলাচ্ছে। যেনো এতোক্ষণ আমার বেড়োনোরই অপেক্ষায় ছিলো ভাইয়া। কিন্তু নিজের ঘরের ওয়াশরুম ছেড়ে আমার ঘরের ওয়াশরুমে আসার কোনো মানে খুঁজে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকালাম আমি। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আমি প্রশ্ন ছুড়লাম,

—- কিরে নিজের ওয়াশরুমে কি তালা লাগিয়েছিস যে আমার ঘরে এসেছিস?

অগ্নি ভাইয়া তৎক্ষণাৎ আমার হাত ধরে ওয়াশরুম থেকে বের করিয়ে এনে খাটে বসিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,

—- আরে তোর ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবো কোন দুঃখে? আমি তো তোর বেড়োনোর অপেক্ষা করছিলাম। আচ্ছা শুন আমি একটু বেড়োচ্ছি, প্লিজ আম্মু আন্টি, এদের ম্যানেজ করে নিস।

ভাইয়ার কথায় টাস্কি খেলাম আমি। একটু আগে রুশো ভাইয়া যেই আবদার নিয়ে এসেছিলো অগ্নি ভাইয়াও সেই একই আবদার করছে দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না। কিন্তু কিছু পেতে হলে যে কিছু দিতে হয় এই সিস্টেম টা যে এই কিপ্টুস ভাইয়ের মধ্যে কবে সেট হবে আল্লাহ মালুম।
তাই বিনিময়ে মুখ বাঁকালাম আমি। মুখভার করে বলে উঠলাম,

—- কিছু না দিয়েই কাজ করিয়ে নিতে চাস লজ্জা করে না?

আমার কথার বিপরীতে অগ্নি ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আমি ভ্রু নাচাতেই মুখে জোড়পূর্বক হাসি ফুটিয়ে ভাইয়া বললো,

—- আচ্ছা যা ম্যাগনাম আইসক্রিম খিলাবো! আব তো মান যা মেরি মা।

বিনিময়ে মিষ্টি হাসলাম আমি। দুষ্টু হাসি দিয়ে বললাম,

—- যা, জলদি আসবি। বেশিক্ষণ ম্যানেজ করতে পারবো না আমি।

আমার পুরো কথাটা শুনার পূর্বেই ভাইয়া হাওয়া! এক ছুটেই পগারপার! স্ট্রেঞ্জ! যাচ্ছে কোথায় এরা? হলুদের দিন তো কোনো পার্টি-শার্টি হবার কথা নয়। তবে?
.
🍁
.
ঘরে লাইভ কুস্তি খেলা চলছে। এই কুস্তি খেলার একদিকে আমি এবং অপরপক্ষে আম্মু-খালামুনি! অদ্ভুত হলেও এই কুস্তি খেলার মূলে রয়েছে ইয়েলো শাড়ি। এই শাড়ি আমায় পড়িয়ে দেবার জন্য আমার সাথে কুস্তি লড়ছেন তারা দুজনেই। এইদিকে আমি তাদের কুস্তি লড়ার চূড়ান্ত প্রতিনিধি! আমার কথা একটাই, সুনামি এসে যাক, টর্নেডো বয়ে যাক আমি হলুদ শাড়ি পড়বো না না না। সেটা কথাটা এতোবার বলার পরও যেনো তাদের স্নায়ুতন্ত্র অবদি পৌঁছোচ্ছেই না।
বিয়েতে ডিপ রেড পড়তে রাজি হয়েছি তার মানে এই নয় যে গা জ্বলানো বিরক্তিকর রংটাও গায়ে জড়াতে হবে আমায়। গায়ে হলুদ তো কি হয়েছে? হলুদ বাটা ছোঁয়াবে, ছোটখাটো মিষ্টি-ফল খাওয়াবে, দ্যটস এনাফ! এর সাথে হলুদ শাড়ি পড়ার কি দরকার সেটা তো বুঝতে পারছি না আমি।

—- অনন্যা দেখ এবার কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছিস তুই! ভালোয় ভালোয় খাট থেকে নেমে আয়। বাড়ি ভর্তি মেহমান এসেছে সবাই অপেক্ষা করছে।

—- হ্যা রে মা আর না করিস না। শুধু একটা দিনেরই তো ব্যাপার।

আম্মু আর খালামুনির কথা প্রতিবারের মতোই উপেক্ষা করে আরো একধাপ পিছিয়ে এলাম আমি।
আম্মু বুঝলো এভাবে হবে না তাই অন্য ফন্দি আঁটতে হবে ভেবেই শাড়ি বিছানায় রেখে দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে গেলো আম্মু। যেতে যেতে আম্মু বলে উঠলো,

—- ঠিক আছে, আমি নীবিড়দের বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি, মেয়ে আমার বিয়ে করবে না। তারা যেনো অনুষ্ঠান এখানেই বন্ধ করে দেয়।

কথাগুলো একদমে বলে নিয়ে আবারও হাটা ধরতেই এক লাফে খাট থেকে নেমে পড়লাম আমি। অবশেষে কোনো পথ খোলা না পেয়ে অগত্যাই হলুদ শাড়ি পড়তে রাজি হতে হলো আমায়।
.
🌼
.
আম্মু আর খালামুনি আমায় শাড়ির সাথে ফুলের অর্নামেন্টস পড়িয়ে দিয়ে ঘর থেকে যেতেই দুটো পার্লার থেকে আগত মেয়ে হাতে এতো বড় বড় সুটকেসের সমান মেকআপ বক্স নিয়ে ঢুকতে নিলেই দরজার সামনে দুহাত মেলে তাদের ঢুকতে নিষেধ করে দিয়েছি আমি। “অল্প সাজে সুশ্রী আর অতি সাজে পেত্নি” কথাটায় প্রচন্ড রকমভাবে বিশ্বাসী আমি। তাই তাদের বের করে দিয়ে একাই সাজতে লেগে পড়েছি আমি।
আম্মু বা খালামুনি কেউই আমায় এবার মানাতে পারেনি। তারা খুব ভালো করেই জানে যদি জোড়পূর্বক মেয়েদুটোকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয় তবে দুটোর একটাও সোজা কোমড় নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে না। বেড়ালের মতোই খিলকা বানিয়ে ছিলকা তুলে দেবো আমি দুজনেরই।

অগ্নি ভাইয়া বা রুশো ভাইয়া কেউই এখনোও ফেরে নি যার দরুন ইচ্ছে করেই ধীরে ধীরে সাজছি আমি। সাজছি বললে ভুল হবে, গত ১০ মিনিট যাবৎ চুলে শুধু চুরুনীই করে চলেছি স্রেফ। এমন সময় দরজায় টোকা পড়তেই টনক নড়লো আমার। ভাইয়ারা বোধহয় এসে গিয়েছে ভেবেই হেয়ার ব্রাশটা ড্রেসিং টেবিলে রেখে উঠে পড়লাম আমি। শাড়ির কুঁচিতে বেল লেগে পড়ে যাবো ভেবে সাবধানে কুচি ধরে হেটে গিয়ে দরজা খুলতেই ঝড়ের গতিতে ঘরে ঢুকে পড়ে আমার মুখ চেপে ধরলো কেউ। আমি চোখ বড়বড় করে তাকাতেই এক হাত দরজা লাগিয়ে দিয়ে আমায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন নীবিড় ভাইয়া। হঠাৎ এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইলাম আমি। উনি আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দু কদম পিছিয়ে গিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে নিচ-উপরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন আমায়। আমি অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম,

—- একি আপনি? কখন, কিভাবে, কোথায় থেকে ভূতের মতো টপকে এলেন?

উনি কোনো প্রশ্নেরই জবাব না দিয়ে আমার একদম কাছে চলে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন। কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

—- সারাজীবন তো শুধু ব্লাক ব্লাক করেই মাথাটা খেয়ে নিলে, নিজেকে আয়নায় দেখেছো কি লাইট কালারে কতোটা মানিয়েছে তোমায়?

উনার কথার কোনো জবাবই দিতে পারলাম না আমি। কোমড়ে শীতল এক অনুভূতি হতেই চমকে উঠলাম সাথেসাথেই। মুচকি হেসে নিজের হাতে লাগিয়ে রাখা হলুদ আমার কোমড়ে ছুঁইয়ে হাত উঠিয়ে নিজের গালে হলুদ লাগালেন উনি। আমি স্তব্ধ হয়ে জমে গিয়েছি যেনো। নড়বার বিন্দুমাত্র শক্তিও অবিশিষ্ট নেই আমার মাঝে।
এবার নিজের ঠোঁটের কোণে ঝুঁলিয়ে রাখা ঘায়েল করা দুষ্টু হাসির রেখা দীর্ঘ করে ঝুঁকে পড়লেন উনি। আমার গালে নিজের হলুদ লাগানো গাল ছোঁয়াতেই আবারও কেঁপে উঠলাম আমি। শ্বাস-প্রশ্বাস ঘোড়ার বেগে ছুটতে লাগলো আমার। কিন্তু তাতে উনার কোনো হেলদোল নেই। উনি আমার গালের সাথে নিজের গাল ঘষতেই ব্যস্ত!
এভাবে বেশ কিছুক্ষণ নিজের গাল আমার অসহায় গালের সাথে ঘষে নিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালেন উনি। নেশা ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলেন,

—- লুকিং বিউটিফুল! প্রথম হলুদটা তোমার গায়ে ছোঁয়ানোর অধিকারটা আমারই ছিলো। সেই হিসেবেই লাগিয়ে দিতে এসেছিলাম। আল্লাহ হাফেজ!

বলে খুবই সাবধানে এবার দরজার বদলে জানালা দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন উনি।
আমি এখনো আগের মতো স্ট্যাচু সেজে দাঁড়িয়ে রয়েছি। এতোক্ষণ ঠিক কি হলো তার কোনো অর্থই খুঁজে পাচ্ছি না আমি। উনি কি ভূত নাকি এলিয়েন? এলেন ঝড়ের বেড়ে আবার চলে গেলেন একরাশ নিস্তব্ধতা দিয়ে!

.

দেয়াল টপকে খুবই সাবধানে বাগানে নেমে পড়লো অগ্নি। বাড়ির পেছনে দিকটায় কেউই নেই দেখে বুক চিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। এদিক-ওদিক চোখ বুলাতে বুলতে এক ধাপ এগোবে তার আগেই আসমান থেকে ধপাস করে ৬২ কেজি ওজনের বস্তা পড়লো তার ওপর। ভার সামলাতে না পেরে দুজনেই পড়ে গেলো ঘাসের ওপর। হঠাৎ এমন আকস্মিক ঘটনার সাথে আঘাতের সংমিশ্রণে ঠোঁট চেপে ধরে কুঁকিয়ে উঠলো অগ্নি।

রুশো বুঝলো তার ল্যান্ডিং পজিশন একেবারেই ঠিক ছিলো না যার দরুন কোনো মানুষের ওপর এভাবে দেয়াল টপকে লাফ দিতে গিয়ে ধুপ করে পড়েছে সে। কিন্তু যার ওপর পড়েছে তাকে দেখতে সচেতন চোখে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার। দাঁত কেলিয়ে হেসে দিয়ে সে বলে উঠলো,

—- আরে ব্রো! ভেবেছিলাম এই বুঝি ভান্ডা ফুটলো, বাট আই ওয়াজ রং। আসমান সে গিরা লেকিন খাঞ্জুর মে তো নেহি আটকা! ভাজ্ঞিস তোমার ওপরই ল্যান্ড করলাম আমি।

অগ্নি বুঝলো আসমান থেকে কোনো বস্তা হয় বরং দেয়াল টপকে তার মতোই রুশোও লাফ মারতে গিয়ে ওর ওপর পড়েছে। ব্যাথায় দাঁতে দাঁত চেপে সে রুশোকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—- আবে নাম ওপর থেকে, এদিকে ব্যাথায় জান বেড়িয়ে যাচ্ছে আমার।

রুশো জিহ্বায় কামড়ে ধরে “উপপপসসস…! সরি ব্রো” বলে নামতে নিতেই বাগানের গাছের আড়াল থেকে নীবিড় লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়োতে যেয়ে হোচট খেয়ে ধরাম করে পড়লো তাদের ওপর। একে তো রুশো তার ওপরে নীবিড়! দুজনই অগ্নির ওপর ভর করে পরায় ব্যাথাটা আরোও তীব্রতর হয়ে উঠলো অগ্নির। এবার আর সহ্য করতে না পেরে “ওরে মারে মাইরা লাইচ্চে রে…..! বলে চাপা আর্তনাদ করলো অগ্নি।
রুশোও “আইয়াম্মমায়ায়া…..!” বলে চিৎকার জুড়ে দিলো অগ্নির সাথে তাল মিলিয়ে।

নীবিড় তৎক্ষণাৎ তাদের ওপর থেকে উঠে পড়তেই কোমড় চেপে ধরে উঠে পড়লো রুশো। অগ্নি একা উঠে দাঁড়াবার মতো অবস্থায় নেই দেখে নীবিড়-রুশো দুজনেই টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে দিলো তাকে।
তিনজনই জোড়ে জোড়ে বার কয়েক শ্বাস টেনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

—- তোরা….!

মাঝখান থেকে রুশো ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো,

—- এইবার বুঝলাম। আমরা তিনজনই তবে একি গোয়ালের গরু!
.
.
চলবে………………💕