প্রেমনদীর মাঝি পর্ব-১৬

0
435

#প্রেমনদীর_মাঝি
#পর্ব_১৬
#মুসফিরাত_জান্নাত

বেলা দুপুর।খাবার টেবিলে চলছে রমরমা আয়োজন।আমি ভ্রু কুটি করে আমার পাশের চেয়ারে বসা ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি অসহায় মুখভঙ্গি করে তাকিয়ে আছেন নিজের প্লেটের দিকে।ইতস্তত করে আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করছেন বারংবার।আমি একটু নড়েচড়ে বসে নিচু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,

“কি হয়েছে?লোক সম্মূখে এমন করছেন কেন?মুরুব্বিরা কি ভাববেন বলুন তো!”

উনি চাপা গলায় ফিসফিসিয়ে জবাব দেন,

“তোমার চাচী-দাদীকে বলো আমাকে আর খাবার তুলে না দিতে।”

কথাটা শুনে আমি পাশে দাঁড়ানো দাদীকে দেখলাম।দাদী আমার বড় চাচার কাছে থাকেন।আমাদের আসার সংবাদ পেয়ে আজ সকালেই দেখতে এসেছেন উনি।আজ দুপুরে পিঠা পুলির আয়োজন করায় চাচা চাচিদেরও দাওয়াত করা হয়েছিলো।তারাও উপস্থিত আছেন এখানে।আম্মু এখনো এ কাজ ও কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।খাওয়ার দায় ভার দিয়েছেন দাদী ও চাচীর উপর।আর তারা একের পর এক পালাক্রমে জামাই আদর করে চলেছেন।উনি বারংবার বলছেন আর খাবেন না, কিন্তু কে শোনে কার কথা।খাবার ফেলে উঠতেও দেওয়া হচ্ছে না ওনাকে।মুরুব্বীদের উপর কিছু বলতেও পারছেন না।তাই আমার শরণাপন্ন হয়েছেন।ওনার এমন ভঙ্গিতে আমার কি হলো জানি না।হঠাৎ মাথায় দুষ্টুমি চেপে বসলো।এক সময় আমাকেও জোর করে কতো কাজ করানো হয়েছে না?আমিও মনে মনে বললাম এটাই সময় পুষ্প, এতদিনের অত্যাচার ও ঘারত্যাড়ামির সকল শোধ উসুল করে নে।এটাই মোক্ষম সুযোগ আর সুযোগের সৎ ব্যবহার না করে ফেলে রাখতে নেই। কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো এক পৈচাশিক হাসির রেখা। আমি দুষ্টুমি করে নিচু কণ্ঠে বললাম,

“যদি না বলি?”

উনি বিস্মিত হয়ে বলেন,

“বলবে না মানে?এতো খাবার কি ব্যাগে ভরবো আমি?”

আমিও এবার ওনার বলা পুরাতন কথার সুরে বলি,

“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন খাবার ব্যাগে না পেটে ভরতে হয়।আর দরকার হলে আপনি ব্যাগেই ভরবেন।তাও ওদের মানা করবো না আমি।”

কথাটা বলে এক গাল হাসলাম আমি।এবার বোঝো খাটাশ।খাটাশগিরীর ফল কি!উনি গম্ভীর হয়ে বলেন,

“বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু।”

“হলে হচ্ছে,তাতে আমার কি!”

কথাটা বলে আপন মনে খেতে নিলাম আমি।চাচি পাশ থেকে বললেন,

“ওমা একি জামাই, তুমি খাচ্ছো না কেনো?মুরগির মাংস মজা হয় নি?আচ্ছা গরুর মাংস নেও।আরেকটা মাছ ভাজি এনে দিবো?”

উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি দাঁত কেলিয়ে বললাম,

“একটা কেনো চাচি আরও কয়েকটা দাও।উনি মাছ ভাজি অনেক পছন্দ করেন।সাথে গরুর মাংসও।”

কথাটা শুনতেই চাচি বাটি থেকে কয়েক পিছ মাংস ওনার প্লেটে দিয়ে মাছ ভাজি আনতে কিচেনে গেলেন।উনি সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন।অতঃপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে আমাকে বললেন,

“তুমি চাইছো টা কি বলোতো?”

কথাটা শোনার সাথে সাথে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে আমার। এই তো লাইনে এসছো বাছাধন! আমি এইবার খানিকটা ভাব সমেত বলি,

“বেশি কিছু না।শুধু আমার কাছে সুন্দরভাবে রিকুয়েষ্ট করে বলতে হবে আপনি আর খেতে পারছেন না,বেশি খেলে আপনার পেট খারাপ হবে।অতএব আপনি আমার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছেন।এইতো এতেই যথেষ্ট।”

উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাবে বললেন,

“স্বপ্ন দেখো।”

আমি বাঁকা হাসি দিয়ে বলি,

“তাহলে আমার স্বপ্নে গিয়েই খাওয়া থেকে রেহাই নিয়েন।বেস্ট অফ লাক।”

কথাটা বলে নিজের খাবার সমাপ্তি টেনে চলে আসি আমি।তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে কাজিনের সাথে সুখ দুঃখের আলাপ জুরে দেই।আমার এ পক্ষের কাজিন বলতে বড় চাচার বড় এক মেয়ে আর ছোট এক ছেলে।চাচার বড় মেয়ে হওয়ার প্রায় বিশ বছর পর ছেলেটা হয়।তাই তালিকায় সে আমার ছোট হয়ে আছে।উনি এসেছেন বলে আদিল এ বাড়ি আসতে লজ্জা পাচ্ছিলো।এখনও ওনার থেকে নিজেকে আড়াল রাখতে এখানে ঘাপটি মে’রে আছে।আমি ওর কাছে গিয়ে ধপ করে বসে কাধে এক চাপড় মে’রে বলি

“কিরে আমার পর্দানশীন ভাই।কি করিস একা একা?”

আমাকে দেখে এক পশলা হাসলো আদিল।তারপর ইতস্তত করে বললো,

“তেমন কিছু না।কেমন আছো তুমি?”

আমি কপট রাগ দেখিয়ে বলি,

“এতোক্ষণে এটা জিজ্ঞেস করার সময় হলো তোর?বিয়ের পর পরই করে দিলি।”

আদিল লজ্জালু হেসে বললো,

“তোমাকে কাছে পেয়েছি নাকি?আছো তো জামাইয়ের সাথে লেপ্টে।”

কথাটা শুনে ফুঁসে উঠি আমি।

“এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিতে পারলি তুই?কানের নিচে দিব একখান।”

“হু দিবাই তো।সত্যি কথার ভাত নাই, মা’ইর আছে তা আর নতুন কি!”

ওর কথা শুনে আমি হেসে ফেলি।তারপর আমাদের আলাপ চলতে থাকে।এই গ্রামের সবার খোঁজ নেই ওর থেকে।ওই পাড়ার নুপুর তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।পাশের বাড়ির বাবলু ভাই নয়া বিয়ে করেছে।আবার দুই বাড়ি পরে খোদেজা দাদী মা’রা গিয়েছে মাস খানেক হলো।মনোয়ারা চাচিরা ঝগড়া লেগে সংসার আলাদা করেছে।এমন হাজারও আলাপ চলছিলো আমাদের।মাত্র তিন চার মাস এ গ্রাম ছেড়ে গিয়েছি তাতেই যেনো এক আকাশ সম পরিবর্তন হয়েছে মনে হলো।কারো খবর হাসালো,কারো খবর পুলকিত করলো আবার কারো খবর আমাকে কাঁদালো।

______________________

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে।আকাশের ঘন নীলের রঙ লালাভ হচ্ছে।সূর্যের সোনালি রঙ খেলা করছে মেঘে মেঘে।তপ্ত রোদ নরম হয়ে এসেছে। দৃষ্টির সীমানা জুড়ে একের পর এক নদীর ঢেউ চোখে পড়ছে।আমি ছাদের রেলিং এর উপর দুই হাত রেখে উপভোগ করছি প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য।পড়ন্ত বিকেলের হাওয়ায় আমার কোমড় অবধি ছড়ানো চুলগুলো উড়ছে।আর আমি সেসবকে মুক্ত করে উড়ার সুযোগ করে রেখেছি।লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে প্রকৃতি উপভোগ করতে নিতেই হটাৎ থমকে গেলাম।আমার মনে হলো পিছনে কেও দাঁড়িয়ে আছে।ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনটা দেখতেই চোখ স্থির হয়ে যায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে। সামনেই নিভৃত আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।মুখে গম্ভীরতা বিরাজমান।সদ্য বিছানা ছেড়ে উঠে আসায় চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে ওনার।রোদের সোনালি আলোয় এই এলোমেলো ওনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। যা বরাবর আমার চোখে বিঁধছে।উনি কিছু না বলে আমার দিকে এগিয়ে আসেন।তা দেখে আমি সাথে সাথে কয়েক কদম পিছিয়ে যাই।তখন ওনাকে ওভাবে ফেলে আসায় চাচী ও দাদী ইচ্ছামতো খাইয়েছে ওনাকে।ফলে এতক্ষন ওভার লোড পেট নিয়ে চিৎপটাং হয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন সাথে হাঁসফাঁস করছিলেন।আমি তখন ওনার এই হাল দেখে অনেক মজা নিয়েছি।আমাকে রিকুয়েষ্ট করলেই তো ওমন হতো না!কিন্তু এখন ওনাকে দেখে কেমন ভয় বিরাজ করছে আমার মাঝে।কেমন রাগী দেখাচ্ছে ওনাকে।ওনার এগিয়ে আসার সাথে তাল মিলিয়ে আমি আরও পিছাতে লাগলাম।একটু পর কোমড় অবধি পিছনে রেলিং এর সাথে ঠেকে গেলাম।সুযোগ পেয়ে উনিও একদম আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।আমার কোমরের দুইপাশ দিয়ে ইট সিমেন্টে বাঁধাই করা রেলিংয়ের উপর হাত রেখে আমাকে ওনার মাঝে আবদ্ধ করে ফেললেন।ওনার এই এমন কাজে ভড়কে গেলাম আমি।আমতা আমতা সুরে বললাম,

“কি সমস্যা হয়েছে?এভাবে কাছে আসলেন কেনো?”

উনি আমার মুখের পানে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বললেন,

“তোমার সাথে রোম্যাঞ্চ করতে কাছে এসেছি।তখন আমার বহুত উপকার করেছো, তার প্রতিদান স্বরুপ আদর দিতে হবে না?”

আমি অস্ফুটস্বরে বললাম,

“কখন?”

উনি আমার দিকে আরও একটু ঝুঁকে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,

“কেন মনে নেই তোমার?”

আমি তটস্থ কন্ঠে বলে উঠি,

“ইয়ে মানে আছে।আসলে আমি তো কেবল…!”

উনি আমার দিকে আরও সরু চোখে আসতেই আমার কথাগুলো গলায় তালগোল পাকিয়ে আটকে যায়।মুখ দিয়ে চেয়েও আর কোনো শব্দ বের করতে পারি না। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমায় এইভাবে চুপ থাকতে দেখে তিনি বললেন,

“কি?”

আমি কোন মতো ইনিয়েবিনিয়ে বলি,

“কিছু না।”

কথাটা বলে আমি ওনাকে এক ঝটকায় ধাক্কা দিয়ে পালাতে নিতেই উনি আমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন। আর আমার মাথা গিয়ে ঠেকলো ওনার বুকের বা পাশটায়। বুকের ভিতর ধক করে ওঠে আমার।খাইছি ধরা।এই ব্যাটা আমার জন্য চারশো বিশ নাম্বার বিপদ সংকেত।এর থেকে যত দূরে থাকা যায় ততো উত্তম।কেনো যে এর সাথে লাগতে গিয়েছিলাম।এবার কি হবে?মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে থাকি।আল্লাহ এ যাত্রার ন্যায় বাঁচিয়ে দেও।আর জীবনে ওনাকে এত খাবার খাওয়ার মুখে ফেলবো না।দরকার হলে না খাইয়ে শুটকি বানিয়ে রাখবো।তাও এ যাত্রায় একটা বুদ্ধি দেও।মনে মনে বিড়বিড় করতে থাকি আমি।একটু পর উনি আমাকে ছাড়িয়ে দাঁড়াতে চাইলে কি মনে করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরি ওনাকে।ওনার থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় এটা মনে হলো।জড়িয়ে থাকলে নিশ্চয়ই কিছু করতে পারবেন না আমাকে।থা’পড়ানোর জন্যও তো নূন্যতম দূরত্ব দরকার।সে দূরত্ব আমি রাখলাম না।আমার এহেন কাণ্ডে ভড়কে গেলেন উনি।অবাক হয়ে বললেন,

“কি হচ্ছেটা কি পুষ্প?ছাড়ো বলছি।”

ওনার কথা শুনে আমি অকপটে বললাম,

“পা’গল নাকি?আমি ছাড়ি আর আপনি আমাকে শায়েস্তা করেন।এ দেহে প্রাণ থাকতে তা হতে দিচ্ছি না।”

আমার এমন উত্তরে চুপ করে রইলেন উনি।আমি ওনার বুকে মুখ গুঁজে চুপ করে রইলাম।উনি ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছেন।ওনার নিশ্বাসের বাতাস এসে বাড়ি খাচ্ছে আমার মাথায়।ধীরে ধীরে মনে হলো ওনার নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।আমি এও স্পষ্ট টের পেলার ওনার হৃস্পন্দনের শব্দ বৃদ্ধি পাচ্ছে।উনি নিজেকে ধাতস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালালেন।অতপর শীতল কণ্ঠে বললেন,

“ছাড়ো পুষ্প, এখন আর শায়েস্তা করা হবে না।”

ওনার কণ্ঠ কেমন যেন ঠেকলো আমার নিকট।বিশ্বাস করতে পারলাম না ওনাকে।ওভাবেই থেকে বললাম,

“আগে কথা দিন কিছু বলবেন না।”

উনি জড়ানো গলায় বললেন,

“কথা দিতে হবে না।অনুভুতিরা পাল্টে গিয়েছে।”

ওনার কথা শুনে কি যেন হলো আমার।আমি ফট করে ছেড়ে দিলাম ওনাকে।কেমন হাত পা অসাড় অসাড় লাগছিলো।তারপরও দৌড়ে নিচে চলে এলাম।ওনার সামনে দাঁড়ানোর আর সাহস হচ্ছিল না আমার।কেমন যেনো সর্বনাশের আভাস পাচ্ছিলাম।যেন ওখানে থাকলেই তা ঘটে যেত।
_________________

রাত প্রায় আটটার অধিক বাজে।চারপাশে ঘন আঁধারের চাদর বিছানো।ঝড়ো বেগে বাতাস বইছে।মাটির ধুলোয় একাকার অবস্থা।উত্তপ্ত পরিবেশটা ক্রমশ শীতল হয়ে আসছে।হয়তো দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে।খুব শীঘ্রই এদিকটায়ও নেমে পড়বে।টুপটাপ করে ভিজিয়ে দিবে গ্রাম্য পরিবেশ।অন্যসময় এই মুহুর্তটা উপভোগ্য হলেও আজ বেশ অস্থির লাগছে আমার।বাড়ির ভিতর পায়চারি করছি অনবরত।দুপুরে ওনার বেশি খাওয়ার দরুন হজমে গণ্ডগোল হয়েছে।উনি বিকেল থেকে বার কয়েক ওয়াশরুম টু বেডরুমে দৌড়াদৌড়ি করে মোড়ের ছোট বাজারে গিয়েছেন ওষুধ কিনতে।একটু দূরেই ওই বাজার।পায়ে হেঁটে দশ মিনিটের পথ।আব্বুকে দিয়ে আনাতে চাইলে উনি আড়ষ্টতার দরুন রাজী হননি।তাছাড়া আব্বুর ফিরতেও অনেক রাত হবে।উনি ব্যবসার জন্য আজ শেরপুর গিয়েছেন।কখন ফেরেন ঠিক ঠিকানা নেই।তাই নিজেই চলে গিয়েছেন।এদিকে হুট করে আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণে চিন্তা হচ্ছে আমার।এমনি অসুস্থ হয়েছেন,তারমাঝে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর না বেঁধে যায়।আকাশের ভাব দেখে মনে হচ্ছে যখন তখন কেঁদে দিবে।আমি আর থাকতে পারলাম না।আম্মুর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি তিনি এশার নামাযে দাঁড়িয়েছেন।আমি চাবি ও একটা ছাতা হাতে নিয়ে কিছু না বলে বাহিরে এলাম।মেইন গেইটে তালা ঝুলিয়ে ছাতা হাতে বেরিয়ে পড়লাম।এরমাঝে টুপটাপ করে বৃষ্টি ঝরতে লাগলো।আমি ছাতা ফুটিয়ে রাস্তায় টর্চের আলো ফেলে জোরে জোরে হাঁটতে লাগলাম মোড়ের উদ্দেশ্যে।আমাদের বাড়ি থেকে মোড়ের বাজার অবধি রাস্তার দু ধারেই সারি সারি বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।এর আগেও রাত বিরাত কত যাতায়াত করেছি।আমি জানি এ গ্রামে খারাপ মানুষের সংখ্যা অনেক হলেও মেয়েদের জন্য নিরাপদ।সবাই একে অন্যের মেয়েকে নিজের মেয়ের মতো হেফাজতে রাখে।তাই ভয় করলো না আমার।আমি হন্তদন্ত পায়ে এগোতে লাগলাম।দশ মিনিটের পথ ছয় মিনিটে পারি দিলাম।বাজারের নিকট গিয়ে দেখি উনি একটা দোকানে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছেন।আমি এগিয়ে যেতেই উনি ভ্রু কুটি করে তাকালেন।অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“এত রাতে এখানে এসেছে কেনো?”

প্রতিউত্তরে আমি মিষ্টি হেসে বললাম,

“ছাউনিরও ছাউনি হতে এসেছি!”

আমি ভেবেছিলাম ওনার কথায় সেদিন যেমন আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম, উনিও আজ তাই হবেন।কিন্তু উনি আদৌ মুগ্ধ হলেন কিনা বোঝা গেলো না।বরং আমার ছাতার নিচে এসে হাঁটা দিলেন উনি।

চলবে