প্রেমনদীর মাঝি পর্ব-১৯ এবং শেষ পর্ব

0
837

#প্রেমনদীর_মাঝি
#পর্ব_১৯+অন্তিম পাতা
#মুসফিরাত_জান্নাত

বাড়িতে পৌঁছেছি বেশ কিছুক্ষন হলো।গেইট আব্বু খুলে দিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে বসিয়েছে আমাদের।নাস্তা খাবারের আয়োজনও সে করেছে।আম্মু এখনো আমাদের সান্নিধ্যে আসে নি।আমাদের দেখেই ঘরে দরজা লাগিয়ে চুপ করে শুয়ে রয়েছেন।সংশয়ে বুক কাঁপছে আমার।কি হবে না হবে এ এক বিষম চিন্তা।ড্রয়িং রুমে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে।আব্বু মাঝে মধ্যে শশুর শাশুড়ী ও বেয়াই পক্ষের সাথে আলাপ জমানোর চেষ্টা করলেও বিফলে যাচ্ছে বার বার।তার চোখে মুখেও চিন্তারা স্পষ্ট হচ্ছে।ভাজ পড়ছে কপালে।কথার খেই হারাচ্ছে বারংবার।আম্মু কি আদৌ স্বাভাবিক হবে কিনা এই চিন্তা তাকেও পীড়ন দিচ্ছে।তাই আলাপ জমানোর ব্যর্থ চেষ্টা বন্ধ করেছেন তিনি।বরং আম্মুর আচরণে অপ্রস্তুত হয়ে চুপচাপ বসে রয়েছেন।

আমি কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে গেলাম।বুক ভরা সংশয় নিয়ে দরজায় বার কয়েক টোকা লাগালাম।আম্মুকে কয়েক বার সম্বোধন করে ডাকতেই দরজা খুলে দিলো সে।আমি সুযোগ পেয়ে ভিতরে ঢুকে গেলাম।বিছানায় গিয়ে আম্মুর পাশে বসে তার দিকে তাকালাম আমি।আমার দৃষ্টিতে দ্বিধা, ভয়,সংশয় ও কৌতুহল লুকানো।মায়ের দৃষ্টি থেকে তা এড়ানো দায়।কিন্তু হাজার চেয়েও আম্মুর দৃষ্টি পড়তে পারলাম না আমি।কিছুক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লাম।অতঃপর নিরবতার পর্দা সরিয়ে বললাম,

“তুমি সেদিন বলেছিলে তোমাদের অতীত যেনো কখনো না জানতে চাই।আমি কোনো দ্বিরুক্তি করিনি আম্মু।কিন্তু আজ কি করছো এটা?খালুজান নিজে এ বাড়ি নত হয়ে এসেছেন।তবুও তাদের সামনে যাবে না?”

আমার কথার বিপরীতে গভীর চোখে তাকালো আম্মু।অতপর ভারী কণ্ঠে বললো,

“আমার ছেলেমানুষী করার বয়স নেই পুষ্প।আমার কি করা উচিত আমি জানি।হয়তো একটু সময় লাগবে।”

প্রতিউত্তরে নিরব হয়ে গেলাম আমি।আম্মুর বিধ্বস্ত চেহারা দেখে আর কি বলবো ভাষা খুজে পেলাম না।আমার খুব করে অতীতটাকে জানতে ইচ্ছে হলোকিন্তু চাইলেই কি আর সব জানা যায়?আমি নিরব হলেও কথাটার জবাব নানী দিয়ে দিলো।ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতে করতে তিনি বললেন,

“আর কতো সময় লাগবে তোর?বিয়ে হয়েছে,বাচ্চা হয়েছে।এখন শাশুড়িও হয়ে গিয়েছিস।তবুও অতীত ধরে থাকবি?তোর মেয়ের উপর যে এর প্রভাব পড়বে সে খেয়াল আছে?বড় জামাই নিজে থেকে যখন সম্পর্ক ঠিক করতে এসেছে, তখন তোর এভাবে থাকা মানায় বল?লজ্জায় তো মাথা হেট হয়ে আসছে আমার।ছিহ!”

আম্মু জবাবে কেবলই বললো,

“বুড়ো হলে এমনকি মৃ’ত্যু হলেও কি সত্যিটা মিথ্যা হয়ে যাবে মা?কোনো ঘটনা অতীত বলেই কি মন থেকে কখনো মুছে যায়?”

নানীর সাথে খালামনি ও ভিতরে প্রবেশ করলেন।খালামনি আম্মুর কথায় ভ্রু কুঁচকে বললেন,

“অতীত না মুছলেও মানুষ তো মুছে যায় না!তুই এখনো ওকে ভুলতে পারিস নি তাই তো?”

কথাটা শুনে বুকের মাঝে থক করে উঠলো আমার।আজানা কোনো বিষয়টা মনে যেনো হুট করে অপ্রীতিকর চিন্তার উদয় হয়ে এলো।বিষয়টা যে প্রেম ঘটিত তা স্পষ্ট হলো খালামনির কথায়।কিন্তু যা ভাবছি তা যদি সত্যি হয় তবে এর চেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার আর দ্বিতীয়টি হবে না।মনের মাঝে কেমন একটা অনুভুতি হলো।আমি গোল গোল চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম।আম্মু তড়িৎ জবাব দিয়ে বললো,

“বাচ্চাদের সামনে এসব কি বলছো আপু?ভুলে যেও না পুষ্প আছে এখানে!”

খালামনি ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বললেন,

“সেটা তোরও ভুললে চলবে না।লোকটা তোর কাছে নত তো কম হয়নি,তবুও জেদ কমেছে তোর?এখন কিন্তু তোর সিদ্ধান্তের উপর তোর মেয়ের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।আমি কখনোই তোর জন্য আমার মৃ’ত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা স্বামীর বিরুদ্ধাচারণ করবো না।তাই ভেবে দেখ কি করবি!”

আম্মু তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন,

“সে তো শুরু থেকেই করোনি।এটা নতুন কি!”

আম্মুর কথায় খালামনি ফুঁসে উঠে বললেন,

“তারমানে তুই এতদিন চেয়েছিস আমি আমাদের সংসারে অশান্তি করি?”

“আমি সেটা কখনোই চাইনি আপু।আমি কেবলই একটু সময় চেয়েছি।”

খালামনি কিছু বলতে যাবে তখন একটু আওয়াজ দিয়ে খালুজান,নানু ও আব্বু ভিতরে প্রবেশ করলো।আর প্রবেশ পথে খালুজান বললো,

“তোমার যত সময় চাই নাও রেশমা।তবুও ক্ষমা না করতে পারলে করো না।তবে এতটুকুই বলবো আমাদের কাজের জন্য আমাদের সন্তানদের উপর প্রভাব পড়বে এমন কিছু করা উচিত হবে না।”

খালুজানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে আম্মু মুখ নিচু করে ফেললো।খালামনিও নিশ্চুপ হয়ে গেলেন।পরিবেশটা ক্রমেই ভারী হয়ে উঠলো।যেনো পাথর চাপা পড়েছে সবার মুখে।সেই পাথর সড়িয়ে দিয়ে একটু পর ভেসে এলো নানুর গম্ভীর কণ্ঠ,

“বড় জামাই তোমাকে কিছু বলেছে রেশমা।তুমি কি চাইছো?”

কথাটা শুনে অপ্রস্তুত হলো আম্মু।আড়চোখে একবার আমাকে দেখলো কেবল।অতঃপর মিনমিন করে বললো,

“নিজের ভালো পা’গলেও বোঝে আব্বা।আমি নিজের ভালোটাই চাইবো।আমার পুষ্পের জন্য সব মানতে পারবো আমি।”

________
গাঢ় বিষাদ, তিক্ত অতীতকে স্মৃতির পাতায় খুঁড়ে বের করে সেটাকে মেকি ভদ্রতার আড়ালে চাপা দিয়ে ফেললো সবাই।বাড়ির হাড়িতে রান্না চাপলো আম্মু।বেয়াই পক্ষ প্রথম বারের মতো এ বাড়ি এসেছে।আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখা হলো না।খালুজানকে অসম্মানও করলো না আম্মু।তবে তার গুমোট চেহারা দেখেই স্পষ্ট হলো এই আতিথেয়তা কতোটা অনিচ্ছায় করে চললো সে।

একটা পুরোনো ক্ষত যেমন খুব সহজে শুকায় না,একটা জটিল অসুখ যেমন হুট করে সাড়ে না,তেমনি একটা তিক্ত ঘটনার প্রভাবও হুট করে কাটিয়ে স্বাভাবিক করা যায় না।আম্মু সহ সবাই খুব চেষ্টা করলেও নিজেদের মাঝের ব্যবধান, জড়তা এসব থেকেই গেলো।ওনাদের কথা বার্তা একত্রিত হওয়া দেখেই বোঝা গেলো কোনো সচ্ছ কাঁচ যন্ত্রের ভাঙা টুকরোকে আঠা দিয়ে জোড়া লাগানো হয়েছে।সেই ফাঁটলের চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে ফুটে রইলো।যত ঢাকার চেষ্টাই হোক না কেনো ওই ফাটলটা স্পষ্ট হয়ে রইলো।তেমনি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠলো পুরোনো অতীত।এতদিন বিষয়টা আম্মু সযত্নে ঢেকে রাখলেও আজ তা তিনি নিজেই জানালেন আমাকে।আমার মস্তিষ্কে ভুল ভাবনার বিচরণ দূর করতেই তা স্পষ্ট করলেন তিনি।তিনি শাণিত কণ্ঠে বললেন,

“শোন পুষ্প,আমার বিয়ের আগে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিলো।যার সাথে আমার বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছিলো। ওই ছেলে তোর খালুজানের আত্মীয় হয়।তোর খালু চায়নি কখনো আমাদের বিয়ে হোক।তাই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার আগ দিয়ে দুলাভাই ওই পরিবারে গিয়ে আমার নামে মিথ্যা কথা রটিয়ে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন।তিনি বলেছিলেন আমি বন্ধ্যা।আর এতেই ওই পরিবার সড়ে দাঁড়ায়।এমনকি আমার প্রেমিকও আর আমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়নি।আমি হাজার বুঝালেও বিয়েটা ভেঙে যায় আমার।আমার প্রথম প্রেমের সমাধি ঘটে ওনার মিথ্যা রটানোর ফলে।আমি ওকে পা’গলের মতো ভালোবাসতাম।আমার কেবলই মনে হচ্ছিল ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।প্রেমের বিচ্ছেদে উ” ন্মাদ হয়ে যাই তখন।সারা রাত জেগে জেগে কা’টাতাম।তোর খালুকে সব সময় দোষ দিতাম।আমার জীবনের সুখ কেড়ে নেওয়ার জন্য তাকে একদমই সহ্য হতো না আমার।ওনার সাথে প্রচুর খারাপ আচরণ করেছি।শুরুর দিকে মুখ বুঁজে সহ্য করলেও পরবর্তীতে তিনিও প্রতিবাদ শুরু করেন।লেগে যায় আমাদের কলহ।তখন থেকেই আমাদের সম্পর্ক সাপে নেউলে হয়ে যায়।..”

আম্মুকে থামিয়ে আমি জিজ্ঞেস করে বসি,

“খালুজান মিথ্যে বলে তোমার বিয়ে ভাঙলো এটা নানুরা জানেনি?তারা ওনাকে মেনে নিলো কি করে?”

“আব্বা আম্মাসহ কেও শুরুতে বিষয়টা মেনে নেয়নি।পুরো এলাকায় রটে গিয়েছিলো আমি বন্ধ্যা।পরবর্তীতে আমার বিয়েও হচ্ছিল না এজন্য।কিন্তু তোর খালুই আবার তোর বাবার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে।এখানে বিয়ের পর আব্বা আম্মার মাথার ঝামেলা দূর হওয়ায় তার পজিশন আব্বাদের কাছে আবার ঠিক হয়ে যায়।তাছাড়া এ সংসারে আমার পূর্ণাঙ্গ সুখ হওয়ায় ওনার উপর খুশি হয় সবাই।তুই জন্মাবার পর সমাজের মুখও বন্ধ হয়।কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করতে পারিনি।আমার জীবনের যন্ত্রণদায়ক মুহুর্ত গুলো আমি ভুলতে পারিনি।সমাজের লোকের বাঁকা চাহনি আমার মন থেকে মোছেনি।আমার জীবনের বিষাদের জন্য দায়ী যে ছিলো তাকে আমি ক্ষমা করতে পারিনি।আমাকে যতটা যন্ত্রণা দিয়েছে তার সবটা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছি তাকে।এক পর্যায়ে তার মুখ দেখা বন্ধ করি।কথা বন্ধ করি।এমনকি এই বিয়ের ঘটক সে হলেও আমার জন্য এ বাড়ি অবধি তাদের আাসা হয়নি।এটা যে কতটা অপমানিত করেছে তাকে সেটা উপভোগ করেছি আমি।আমার কষ্টে উনি যেমন পৈশাচিক আনন্দ ভোগ করেছে, তা তখন উসুল করে নিয়েছি আমি।তারপর তোর খালুও আর আমার ছায়া মাড়ায়নি।”

কথাটা বলে থামলেন আম্মু।তারপর বললেন,

“কিন্তু তুই ভাবিস না আমি আমার প্রাক্তনকে পাইনি বলে আফসোস করি বা করেছি।সে আমার প্রেমিক ছিলো কিন্তু আমাকে ভালোবাসার মানুষ ছিলো না।যদি বাসতো তবে আমাকে ছেড়ে যেতো না।তাই ওসব নিয়ে আমার আফসোস নেই।কিন্তু ওই মিথ্যাটা পীড়া দেয় আমাকে।আমি এখনো ওই দিনগুলো ভাবলে ঘুমাতে পারি না।বন্ধ্যা না হয়ে বন্ধ্যাত্বের অভিশাপের সবটা ভোগ করেছিলাম আমি।সেসব ভুলি কি করে বল!”

আম্মু তারপর তার জীবনের ওই সময়ের প্রতিকুলতা,নিজের কষ্টের সময়গুলোর কিছু বর্ণনা দিয়েছিলেন আমাকে।খালুজান আমাকে মেনে নিয়েছে জন্য খুশিও হয়েছিলেন।আমাদের হাসি মুখে আপ্যায়ন করে বিদায় দিলেন।তিনি নিশ্চিত করেছিলেন বিয়েতে আসবেন।শুধু খালুজান ও তার মাঝের ফাটলটা এখনো থেকে গেলো।
_____
বাসায় ফেরার পর থেকে আম্মুর কথাগুলো মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছিলো আমার।এ সমাজে বন্ধ্যারা কতো অবহেলিত তা ক্ষনে ক্ষনে অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম।আমার কেবলই মনে হলো,
এস্ট্যাবলিশ না হয়েও অনেক মেয়ে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছে।কিন্তু বাচ্চা না হলে হাজার এস্ট্যাবল মেয়েও মানসিক পীড়ার অসুখে ধুকে ধুকে ম’রছে।এই চিন্তা থেকে মাথায় নতুন চাহিদার উদ্ভব হলো আমার।রাতের শোবার আগে আমি নিভৃতকে কোনো ভণিতা ছাড়াই হুট করে বললাম,

“আচ্ছা আমাদের বেবি হলে কেমন হয়?”

বিছানায় বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে ফোন স্ক্রল করছিলেন উনি।আমার হুট করে এমন কথা বলা দেখে আমার দিকে কেমন করে তাকালেন।অতঃপর নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বললেন,

“হুম ভালোই হয়।”

ওনার জবাবে আহ্লাদী হয়ে আমি বললাম,

“তাহলে চলেন আমরা বেবি নেই।”

আমার এমন কথায় ওনার ভ্রু কুঁচকে আসে। সে আমার দিকে দিকে একবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্বগতোক্তি কন্ঠে বলে উঠেন,

“হটাৎ এমন ইচ্ছা জাগলো কেনো তোমার?”

আমি কাচুমাচু করে বলি,

“এমনি!”

“ওহ!”

ঠোঁট গোল করে কথাটা বলে টেবিলে ফোন রেখে শুয়ে পড়লেন তিনি।ওনার ভাবভঙ্গিতে হতাশ হলাম আমি।আমি যে কিছু বললাম তা গায়েই নিলেন না যেনো।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,

“আমি কিছু বলেছি আপনাকে।”

নিভৃত আমার কথায় অনাগ্রহ প্রকাশ করে বললেন,

“সবকিছুর জন্য সঠিক সময় প্রয়োজন।আগে নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করো তুমি।স্টাডি কমপ্লিট করো।তারপর দেখা যাবে।”

আমি মিনমিনে গলায় বলি,

“এখন বেবি না নিলে পরে যদি না হয়!”

কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলি আমি। যার ফলে এখন আড়ষ্টে পড়ে যাই। তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

“পরের চিন্তা পরে করা যাবে।পরেরটা নিয়ে আগে ভু’ত হয়ে লাভ নেই।”

কথাটা শোনা মাত্র আমার মন বিষিয়ে যায়। ভিতরটা কেমন হাহাকার করে উঠে। চুপ হয়ে যাই আমি। আমাকে এইভাবে চুপ থাকতে দেখে উনি তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,

“পরে যদি বেবি নাও হয় তাতে আমার আপত্তি নেই।এইজন্য আমার কাছে কখনো অবজ্ঞা পাবে না তুমি।কিন্তু এই যুগে প্রতিষ্ঠিত না হলে অন্যের কাছে যোগ্য সম্মান পাবে না।আমার বউ অন্যের অবজ্ঞার পাত্রী হোক তা আমি চাই না।তাই বেবি নিয়ে বিচলিত হওয়ার দরকার নেই।এখন ঘুমাও।”

_____________________
ছাদে হট্টগোল হচ্ছে বেশ। গান-বাজনা, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে সকলে। সকলেই একেক করে নদী আপুকে হলুদ ছোঁয়াচ্ছে।আর সেসব ক্যামেরাতে ধারণ করা হচ্ছে।আম্মু আব্বুও বিয়েতে উপস্থিত হয়েছে বলে বেশ আনন্দ লাগছিলো আমার।পুরোপুরি না হলেও জন্ম থেকে দেখে আসা আত্মীয়দের মাঝের ঝামেলা যে বেশ খানিকটা পুষিয়ে ওঠা গিয়েছে এই ঢের।এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো আত্মীয়দের মাঝে।অন্যপাশে পাত্রপক্ষ থেকে আসা সকলকেই আপ্যায়ন করা হচ্ছে বেশ। জোর করে তাদের খেতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।আমি সেসব কিছু সময় তদারকি করে চলেছি।তাদের আপ্যায়ন শেষে আমি ছাদে গেলাম নদী আপুকে হলুদ ছোঁয়াতে।হটাৎ ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আমার নজর গেলো বাসার নিচে নিরিবিলিতে দাঁড়িয়ে থাকা সায়ান ভাইয়ের দিকে।আমি এগিয়ে গিয়ে সচকিত দৃষ্টিতে তাঁর দিকে তাকাই।তার হাতে সিগারেট দেখে চমকে উঠি আমি।তারপর অন্যপাশে সকলের দিকে নজর বুলিয়ে নিয়ে তড়িৎ নিচে নামি।ভাইয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,

“সায়ান ভাইয়া, তুমি সিগারেট খাও?”

আমার দিকে তাকিয়ে একটু লজ্জিত হলো ভাইয়া।তারপর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,

“আগে তো খেতাম না।কিন্তু এখন খাই।”

ভাইয়ার কথা শুনে বিষ্মিত হয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম,

“কিন্তু কেনো?এটা তো বাজে অভ্যেস।”

ভাইয়া জবাবে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,

“প্রেমের ব্যর্থতা মানুষকে অনেক বাজে অভ্যসেই অভ্যস্ত করে পুষ্প।ওসব তুই বুঝবি না।”

আমি তার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলি,

“বিয়ে হয়ে গিয়েছে আমার।এখনো বুঝবো না বলছো?”

আমার কথায় একটু হাসলো সায়ান ভাই।তারপর বললো,

“ওহ ঠিকই তো।আমাদের চেয়েও তো এখম বড় হয়েছিস তুই।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”

“হু,তা কে ছ্যাকা দিলো তোমাকে?”

ঐকান্তিক হয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করলাম আমি।সায়ান ভাই আমার দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে কাচুমাচু করলো খানিক।কথাটা এড়িয়ে যেতে চাইলো।কিন্তু আমিও নাছোড় বান্দা।তাকে জোরজবরদস্তি করে ঘটনা শুনে যা বুঝলাম তা হলো নদী আপুকে চিঠি দেওয়া সেই অজ্ঞাত প্রেমিক সায়ান ভাই ছিলো।কথাটা শুনে আকাশ থেকে পড়ার যোগাড় হলো আমার।ভাইয়া দুঃখ প্রকাশ করে বললো,

“নদী যদি আমাকে নাই চায়, তাহলে এতোদিন চিঠির জবাব দেওয়ার কি ছিলো বল!শুধু শুধু আমার ইমোশন নিয়ে খেললো।”

ভাইয়ার কথায় ক্যাবলা বনে যাচ্ছিলাম আমি।চিঠির জবাব তো দিয়েছে নিশি।ভাইয়া তো আর তা জানে না।আমি কোনোমতো নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,

“তুমি শিওর নদী আপু তোমাকে চিঠির জবাব দিয়েছে?”

আমার কথার জবাবে ভাইয়া দৃঢ় কণ্ঠে বললো,

“অবশ্যই দিয়েছে।ওর জবাব পেয়েই তো ওর প্রতি আরও দূর্বল হয়েছি আমি।স্বপ্ন বুনেছি কত শত।আগে তো কোনো আশা ছিলো না।হালকা পছন্দ করেছি এই যা!”

আমি কিছু না বলে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকে দেখতে থাকি৷মনে মনে ভাবি অনেক কিছু।হিসেব মিলাই কিছু।খানিক বাদে হালকা হেসে বলি,

“তারমানে তো দাঁড়ালো তুমি আপুর নয় ওই চিঠির প্রেমে পড়েছো!”

আমার কথায় আনমনে সে বললো,

“কি জানি!”

আমি সরু চোখে তাকিয়ে একটু গম্ভীর হয়ে বলি,

“কি জানি না।এটাই সত্যি।”

কথাটা বলে থামলাম আমি।তারপ রগড় করে বলি,

“তোমার মতো আরও একজন এই চিঠির খপ্পরে ছ্যাকা খেয়েছে জানো ভাইয়া!”

ভাইয়া বিষ্মিত হয়ে বললো,

“মানে!”

আমি দাঁত কপাটি করে বলি,

“ওয়েট।”

কথাটা বলে নিশিকে ফোন দিলাম আমি।তারপর ওকে ঝটপট নিচে নামতে বলে খট করে ফোন কাটলাম।ভাইয়া সন্দিগ্ধ হয়ে তাকালো আমার দিকে।নিশি নামতেই সব বিশ্লেষণ করলাম আমি।চিঠির জবাব নিশি দিয়েছে বলতেই অস্বস্তিতে পড়লো সে। তার গাল দুটি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।তারপর সে আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো,

“তুমি তো ঘরের শত্রু বিভীষণ।আমার সিক্রেট ফাঁস করে মজা নিচ্ছো না?আমিও সবাইকে বলে দিবো ঘরের মধ্যে ভাইয়ার..। ”

ওর কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ওর মুখ চেপে ধরলাম আমি।এ বেডি তো আমাদের জামাই বউয়ের ব্যাপার ফাঁস করলে লাগছে।তাও কিনা আমার বড় ভাইয়ের কাছে।আমি স্বতস্ফূর্ত কণ্ঠেবললাম,

“আমি তোর ছ্যাকায় মলম লাগানোর ব্যবস্থা করছি।আর তুই আমার মান ইজ্জত শেষ করতেছু।হা’রামীর মাও।”

নিশি আমার কথার মর্ম না বুঝে ভ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে রইলো।এদিকে সবটা শুনে সায়ান ভাইয়াও তব্দা মে’রে রইলো।এতো সময় পর নিজেকে ধাতস্থ করে সে বললো,

“যা বললি তা সত্যি?”

আমি মাথা নাড়িয়ে বলি,

“সত্যি না হলে এই বা’ঘিনী আমাকে এমনে ধরে?”

সায়ান ভাই এবার মাথা চুলকে বললো,

“প্রেম তাহলে ব্যর্থ হয়নি।যেমন প্রেম, তেমনি আছে।আমি হুদাই স্যাড সং শুনে দেবদাস হয়ে গেছি।আমার তো কঁচু গাছের সাথে ফাঁ’স নেওয়া উচিৎ।”

ভাইয়ার কথা শুনে হেসে ফেললাম আমি।আর নিশি চমকে গেলো।অতঃপর জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে রইলো।আমি সবটা ওকে খুলে বলতেই সে ভাইয়ার দিকে তাকালো।অতঃপর থমথমে কণ্ঠে বললো,

“আপনি আপুকে ভালোবাসতেন না?”

ভাইয়া অকপটে বললো,

“মনে হয় নাহ।আমি নদীকে পছন্দ করে চিঠি দিতাম।কিন্তু চিঠি দাতাকে নয়, ভালোবেসেছিলাম চিঠির উত্তর দাতাকে।”

কথাটা শুনে খানিক চুপ করে রইলো নিশি।তারপর হুট করেই সায়ান ভাইয়ের কলার চেপে বললো,

“ওই জা* এতদিন এটা বলতে কি হইছিলো তোর।তুই এটা আগে বললেই তো এত দুঃখ, কষ্ট, লজ্জা কোনোটা আসতো না আমার জীবনে।আজ তোর একদিন কি আমার একদিন!”

নিশির হুমকি শুনে ভাইয়া দুঃখী গলায় বললো,

“আমি কি জানতাম নাকি!আমি নিজেই তো হুদাই শোকের সাগরে সাঁতার কাটছি।এখন তুমি এসে আমাকে তুলে দেও নিশু।”

শেষ বাক্যটা রোম্যান্টিক ভয়েসে উচ্চারন করলো ভাইয়া।তড়িৎ নিশি রাগ ভুলে লজ্জা পেলো।আমিও ওদের দেখে লজ্জা পেয়ে গেলাম।এখন ওদের মাঝে থেকে কাবাবের হাড্ডি হতে চাই না বলে চটপট জায়গা ত্যাগ করলাম আমি।আর ওরা খু”নসুটিতে মেতে উঠলো।

_______________________
কে’টে গেছে বেশ কিছুদিন।নিকষকালো আঁধারকে ধরনীর বুক থেকে উচ্ছেদ করতে এক ফালি চন্দ্রিমার স্নিগ্ধ আলো গলিয়ে পড়ছে ধরনীর বুকে।দূর থেকে ভেসে আসছে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক।হিম শীতল বাতাস গায়ে পরশ বুলাতেই প্রশান্ত হচ্ছে শরীর মন।আমি করিডরে দাঁড়িয়ে উদাস হয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকালাম।নদী আপুদের বিয়ের পর্ব শেষ হয়ে বাড়ি এখন ফাঁকা হয়ে আছে।কেমন খাঁ খাঁ করছে আত্মীয়ের ভীরে গিজ গিজ করা বাড়িটা।কয়েকদিন পর হয়তো আরও শূন্য হবে।আমি চলে যাবো ঢাকায়।নিজের পছন্দের জায়গায় পড়ার সুযোগ পেয়ে যতটা আনন্দিত হয়েছিলাম ওখানে যাওয়ার কথা মনে হতেই ততটা বিষাদ ছুঁয়ে দিচ্ছে আমাকে।নিভৃতকে ছেড়ে থাকতে হবে ভাবতেই মন বিষিয়ে উঠছে আমার।বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে।বার বার মনে হচ্ছে ঢাকা না যাই,পড়াশোনা লাগবে না আমার।কিন্তু চাইলেই কি আর তা হয়। আমাদের জীবনের প্রয়োজনে অনেক ইচ্ছেকেই দমন করতে হয়।অনেক বিষয় আড়ালে রাখতে হয়।অনেক অনুভুতিকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।একসাথে সূর্যদয় দেখার ও সকালে ঘুমানোর আনন্দ উপভোগ করা যায় না।একটাকে ত্যাগ করেই আরেকটা অর্জন করতে হয়।আকাশের দিকে তাকিয়ে এসবই ভেবে চলেছি আমি।হঠাৎ ঘাড়ে কারো তপ্ত নিঃশ্বাসের সাথে পেটে শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম।সাথে পরিচিত পারফিউমের ঘ্রাণ নাক ছোঁয়ালো।এই ঘ্রাণ আমার অতি চেনা।তাই বুঝতে কষ্ট হলো না মানবটি কে।আমি নীরবেই ওনার বুকের উপর মাথা হেলিয়ে দিলাম।উনি আমায় ওনার উষ্ণ আলিঙ্গনের মাঝে আবদ্ধ রেখে স্মিত হাসলেন।অতঃপর আমার মাথায় তার থুতনি ঠেকিয়ে বললেন,

“কি ভাবা হচ্ছে এতো?”

আমি জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট দু’টি ভিজিয়ে নিয়ে বলি,

“তেমন কিছু না।”

উনি নিরলস কন্ঠে বলেন,

“সেই তেমন কিছু না টাই কি তাই বলো।”

আমি মন ভার করে বলি,

“কিছু দিন পর থেকে হয়তো এই কথাটাই আমাকে জিজ্ঞেস করার কেও থাকবে না।”

আমার কথায় উনি গা ছাড়া ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“হটাৎ এটা মনে হলো কেনো?”

“বারে, কয়েকদিন পর আমি ঢাকা চলে যাবো না!তখন তে আপনি আমার সাথে থাকবেন না।”

কথাটা বলে তপ্ত শ্বাস ছাড়লাম আমি।অথচ উনি তখনো ভাবাবেগ শূন্য।যেনো কিছু হবেই না।তা দেখে রুষ্ট হলাম আমি।আমি চলে যাচ্ছি আর ওনার কোনে ভাবাবেগ নেই!ওনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,

“আমি ঢাকা চলে গেলে আপনি আমায় মিস করবেন বা তাই না?”

উনি সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে রহস্য করে বললো,

“মিস করার কি কিছু আছে!”

কথাটা শুনে আমার রাগ তরতর করে বাড়লো।আমি ওনার জন্য এত ভালোবাসা দিলাম।নিজের জীবনের পুরো রুটিন বদলে ফেললাম।মনের আনাচ কানাচে ওনার নাম লিখলাম।অথচ উনি আমায় সাধারণ মিস অবধি করবেন না?খানিকটা রাগ ও অভিমান মিশিয়ে সেখান থেকে চলে আসতে নিলাম আমি।উনি আমায় পিছন থেকে আমার হাত ধরে কাছে টেনে ফিসফিস করে বললেন,

“যেখানে তোমার বিচরণক্ষেত্র, সেখানে সর্বদা আমার বাসস্থান।তবে মিস করবো কেনো?”

ওনার কথায় ভড়কে গেলাম আমি।মাথা তুলে তাকিয়ে বললাম,

“মানে!”

“আমিও ঢাকা শিফট হচ্ছি।তোমার চান্স পাওয়ার পর থেকেই বদলির চেষ্টা চালাচ্ছিলাম।আর আলহামদুলিল্লাহ সেটা সাকসেস হয়েছে।তাই আমরা ঢাকা গেলেও একত্রে থাকবো।”

ওনার কথাটা শুনে পুলকিত হলাম আমি।মনের মেঘ কে’টে গেলো দূর গগনে।নিজস্ব গগনে এখন শুভ্র এক মেঘের আঁকিবুঁকি চললো।যেই অঙ্কনে ফুঁটে উঠলো আমার মনের লুকায়িত প্রেমের নদীর চিত্রলেখা।আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম তার নির্ঝঞ্ঝাট, পরিষ্কার বয়ে চলা রাস্তা।আমাকে এভাবে তাকানো দেখে উনি মোহগ্রস্ত নয়নে তাকালেন আমার দিকে।সেই দৃষ্টিতে চোখ মিলতেই পিলেই চমকে উঠি আমি।এটা ওনার সেই গভীর চাহনি, যেই দৃষ্টি আমাতে পতিত হয়েছে বারংবার।এতদিন হাজার চেয়েও সে দৃষ্টির মানে বুঝিনি আমি।কিন্তু আজ হটাৎ করেই তা পড়তে পারলাম যেনো।আমার এখন ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছে এই মুহুর্তে তা প্রকাশ করার মত নয়৷আনন্দে চোখ চিকচিক করে উঠলো আমার।চোখের কার্নিশে জমলো মৃদু জলের কনা।উনি তা পরোখ করে বললেন,

“তোমাকে না কাঁদতে বারণ করেছি,তাও কাঁদছো কেনো?”

আমি ছোট করে বলি,

“এটা কষ্টের কান্না নয়।কিছু কান্নার আড়ালে সুখ থাকে।”

নিভৃত কিছুটা সময় সুক্ষ্ম চোখে দেখলেন আমাকে।তারপর আচমকা আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,

“তা কিসে এমন সুখ পেলে, যা ওই মায়াবী চোখে পানি জমাতে বাধ্য করলো।”

আমি উৎফুল্ল কণ্ঠে বলি,

“আমি আপনার দৃষ্টি পড়তে পেরেছি।যা আগে পারতাম না।”

“তাই!”

“হুম।”

“তা কি লেখা ছিলো সেই দৃষ্টিতে?”

“আপনার অনুভুতি।আমার প্রতি আপনার ভালোবাসার কথা।”

কথাটা শুনে স্মিত হাসলেন উনি।অতঃপর জড়িয়ে নিলেন আমায়।আমিও লেপ্টে গেলাম ওনার বুকে।উনি একটু পর আমার নাম ধরে ডেকে উঠলেন,

“পুষ্প!”

আমি সাড়া দিয়ে বললাম,

“জ্বী।”

উনি মোহগ্রস্ত কণ্ঠে বললেন,

“অনেক ভালোবাসি তোমায়!”

কথাটা কর্ণগোচর হওয়া মাত্র আমি থমকে গেলাম। ক্ষণেই নয়ন দুটি আবারও ভিজে গেলো আমার। আমি জড়ানো গলায় কোনোমতো বললাম,

“আমিও।”

কথাটা বলেই লজ্জায় মিইয়ে গেলাম আমি।মুখ লুকিয়ে রইলাম ওনার বুকের মাঝে।আমার লজ্জাটা ধরতে পেরে উনি হালকা হেসে আমার কপালে তাঁর শুষ্ক ঠোঁটের উষ্ণ পরশ এঁকে দিলেন।তারপর ফিসফিসিয়ে বললেন,

“ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাব্যিক অক্ষরে,
অল্প সল্প দুষ্টুমির চাদরে,
আমার বুকের বা পাশটায়
বিনা অনুমতিতে দখলদারিত্ব
লেখা হয়েছে তোমার।
আমার মনের সুপ্ত প্রেমনদীতে
প্রাণ এসেছে তোমার ছোঁয়ায়।
সেই নদীর বুকে আজন্মকাল
পথচলা রচিত হবে
তোমার, আমার ও আমাদের।”

বাক্যগুলো কর্ণপাত হওয়া মাত্র শীতল এক অনুভুতির ঢেউ খেলে যায় সর্বাঙ্গ জুড়ে।প্রচন্ড প্রশান্তি অনুভুত হয় মন মাঝারে।আমি সেই কথায় তাল মিলিয়ে কেবল একটি বাক্যই ওষ্ঠাগত করি,

“আমাদের যেই নদীতে প্রেম রচিত হয়
সেই নদীর একমাত্র মাঝি আপনি নিভৃত।”

কথার জবাবে উনি কিছু বললেন না।কেবল আরও সন্তর্পণে জড়িয়ে নিলেন আমাকে।আমিও অনুভব করলাম ওনার উষ্ণ আলিঙ্গন।যা হয়তো অনুভব করে যাবো মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত।আমাদের পথচলার শেষ বিন্দু পর্যন্ত।এভাবেই বয়ে চলবে আমাদের প্রেমনদী।

~সমাপ্ত~