প্রেমপ্রদীপ পর্ব-৩৬ এবং বিশেষ পর্ব

0
3091

#প্রেমপ্রদীপ
Part–36
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

আয়না সটাং হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার গা রাগে থরথর করে কাপছে। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ছে। সে আক্রোশ ভরা চোখে মহিলা দুটির দিকে তাকালো এবং বলল, রন্টজেনিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা কত? উত্তর বলতে পারলে আমি হেটে দেখাব৷

মহিলা দুটি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এমন উদ্ভট শব্দ লাগে কোন দিন শোনেনি না!

আয়না তৃপ্তির হাসি হাসল। সে এবারে মজার ছলে বলে, আচ্ছা, আগের প্রশ্ন বাদ! এবার বলেন তো অ্যালডিহাইড প্রস্তুতি তে কত পারসেন্ট মারকিউরিক সালফেট দিতে হয়?

অথৈ আয়নার হাত চেপে ধরে বলে, চল মা বাসায় যাই! ভুল হয়ে গেছে আমার। চল। বাসায় যাই।

— না মা। ওনারা উত্তর দিক তারপর যাব। তারপর মহিলা দুটির দিকে তাকিয়ে বলে, বলেন চুলের PH কত? কি পারবেন না?

একজন মহিলা বলে উঠে, এমন প্রশ্ন কোন দিন শুনিই নি জীবনে পারব কেমনে?

আয়না ফিক করে হেসে দিয়ে বলে, এতো সহজ প্রশ্নের উত্তর জানেন না আর ভাইভা নিতে এসেছেন। আচ্ছা যান আরো সহজ একটা প্রশ্ন করি, এটা না পারলে আপনারা ফেইল। বলেন তো, ১ মোল পরমাণু তে কতটি পরমাণু থাকে?

একজন মিনমিনে সুরে বলে, জানি না তো মা।

আয়না মুচকি হেসে বলে, রিজেক্টেড আপনারা। এই সামান্য জ্ঞান নেই আবার ঢং করতে আসছেন! রাস্তার পাগল ও জানে রন্টজেনিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা কত! আর আপনারা জানেননা!

মহিলাটা জোর গলায় বলে, শোন মেয়ে, এসব জানার কোন দরকার নাই!

— মূর্খদের কোনকিছুরই জানার প্রয়োজন পড়েনা।

আয়না উঠে দাড়ালো তারপর গটগট করে বাসার বাইরে হাটা দিলো। তার মা পিছনে ডাক দিলো। সে সায় দেয়না সামনে এগিয়ে যায়৷

আয়না একা একাই বাসায় ফেরে। তাকে একা ফিরতে দেখে, ফাতেমা বেগম অবাক হয়ে গেল এবং বলল, তোর মা কই?

আয়না ভারাক্রান্ত গলায় বলে, আসছে!

সে নিজের রুমে গিয়ে গেট লাগিয়ে দেয়। অসহ্য লাগছে তার! দ্রুত হাতে কাপড় নিয়ে গোসলে গেল। ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে মাথা ঠান্ডা হবে।

সে গোসল সেরে বের হয়ে, সমুদ্র কে কল লাগায়৷

সমুদ্র রিসিভ করেই আয়নাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে থেকে বলা আরম্ভ করল, আয়ু আমার মন-মেজাজের অবস্থা খুব খারাপ। মুড ও ঠিক নেই।ঝামেলায় আছি । মেজাজ খিটখিটে আছে, যার তার উপর চিৎকার করছি। আমি তোমার সাথে মিসবিহেইভ একদম করতে চাই না। তাই এখন কথা বলতে পারব না। সর‍্যি। রাখি কেমন। আল্লাহ হাফেজ।

আয়না হতভম্ব হলো। হুট করে সমুদ্রের কি হয়েছে। যেদিন দেখা হয় তাদের, মুড তো ভালোই ছিল। কি হয়েছে তা জানার জন্য পুনরায় ফোন দেওয়ার সাহসে কুলাচ্ছে না তার!

সে চুপচাপ বসে থাকে। হুট করে সমুদ্রের নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে, ভালোবাসি তো! শুধু মন ভালো নেই!

আয়নার স্মিত হেসে দেয়। ছেলেটা এতো ভালো কেন? এমন ভয়ংকর ভাবে কেন তাকে ভালোবাসে?

বিকেলের দিকে বাড়িতে মেঘ ফিরে আসলে সবার মধ্যে রেডি হওয়ার ধুম পড়ে যায়। সবাই রেডি হচ্ছে। দাদা-দাদি সহ সবাই চাইনিজ খেতে যাওয়া হবে।

আয়না একটা কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পড়ে সাজতে বসলো। হুট করে তার সাজগোজ করতে মন চাচ্ছে। সে চোখে মোটা করে কাজল দিলো। মাশকারা দিলো। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিলো। তারপর নিজেকে দেখতে লাগলো। সে নিজেকে দেখে নিজেই অবাক। এতো সুন্দর সে? হাতে কালো রেশমি চুড়ি পড়লো। দুই হাতে ছয়-ছয় বারোটা চুড়ি পড়ে নেয় সে। তারপর দুই হাত চোখের সামনে এনে হাত নাড়াচাড়া করে চুড়ির ঝুনঝুন আওয়াজ শুনতে লাগে।

মেঘ এসে মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে।,চল বের হই। আলিয়া রেডি?

আলিয়া পাশ থেকে বলে উঠে, না আব্বু। আরো পাচ মিনিটের মতো লাগবে?

–আচ্ছা। আমরা সবাই রেডি। জলদি কর।

পাচ মিনিটের মধ্যে সবাই রওনা হলো ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে। যেই চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এসেছে তারা এখানকার খাবার নাকি খুব সুস্বাদু। আয়না যেহেতু বড় তাই মেন্যু কার্ড দেখে তাকে খাবার ওডার দিতে দেওয়া হয়।

দাদার স্যুপ পছন্দ এজন্য সে সবার আগে স্যুপ ওডার দেয়। দাদি চাইনিজের সবই খায়। বিশেষ কিছু তার পছন্দ নেই। মাও তাই! বাবা অন্থন পছন্দ করে, আলিয়া চিকেন ফ্রাই খেতে পছন্দ করে জন্য সবার পছন্দের খাবারই ওর্ডার দেওয়া হয়। তারা ফুল কোস খাবে। প্রথমে এপিজাইটার, তারপর মেইন কোস দেন ডেজার্ট দাদা-দাদি খাবে না৷ এখানে আইসক্রিম ছাড়া কিছু নেই। আয়নার আইসক্রিম পছন্দ তাই তার আর আলিয়ার জন্য বাটারস্কজ ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে দেয়।

মেঘের বাবা তালুকদার সাহেব খুব খুশি আজকে। কতদিন পর নাতনিদের নিয়ে বাইরে এলেন। তবে শেষ বয়সে তিনি আর তার স্ত্রী গ্রামেই বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছে। মেয়ে বিদেশ থেকে এসেছে জন্য সে গ্রাম ছেড়ে ছেলের বাসায় আছে। ছেলে তার খুব অনুগত। কিন্তু কেন যেন বউমা তাদেরকে খুব একটা পছন্দ করেনা। শেষ বয়সে তারাও একা থাকতে চায়না। নাতনী আর ছেলের সাথেই থাকতে চান। কিন্তু নিজেকে বোঝা মনে হয় ছেলের ঘরে! চাকরি নেই তার। বেতন নেই। কোন সেভিংস আর নেই। সব খরচ হয়ে গেছে৷ ছেলের ও অবস্থা খুব শোচনীয় না। এমন অবস্থায় তারা দুই বুড়া-বুড়ি কিভাবে ছেলের বোঝা হয়? তালুকদার সাহেব মেয়ের কাছ থেকে টাকা নেন না। তার কেন জানি ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে টাকা নিতে লজ্জা লাগে।এজন্য গ্রামের বাড়িতে চাষাবাদ করছেন দুজন কৃষক নিয়ে, এতেই চলে যায় তাদের৷ কিন্তু চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালোনা সেখানে।

স্যুপ চলে এলে সে বেশ তৃপ্তি নিয়ে খান। আয়নার প্রতি তার অন্যরকম টান। তার নাতনীটা একদম অন্যরকম। সবার সবকিছুর দিকে মেয়েটার নজর৷ এতো ভালো মেয়ে সে। কিন্তু ভাগ্যে সুখ সয় না।

কিছু কিছু মানুষের ভাগ্য হয় পর!

রোদেলার সাথে মাঝখানে অথৈয়ের সমস্যা হয়েছিল। রোদেলা তার পরিচিত এক অফিস কলিগের ছেলের সাথে আয়নার প্রস্তাব এনেছিল। কিন্তু ওই ছেলে আয়নাদের আর্থিক অবস্থা দেখে বিয়েতে রাজী হয়নি। এজন্য অথৈয়ের রোদেলার সাথে অনেক সমস্যা। সে মনে করে, রোদেলা ইচ্ছে করে এমন করেছে তাদেরকে ছোট করার জন্য । এই কাহিনির একমাস পর আয়নার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের আগে তাদেরকে জানায় নি পর্যন্ত! বিয়ের পর মেঘ ফোন করে জানিয়েছিল তালুকদার সাহেব কে। সেরাতে তালুকদার সাহেব খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। রাতে ভাত ও খাননি তিনি। প্রেসারের ঔষধ ও খাননি সে। সে অভিমান করে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এর মাঝে একবারো ঢাকায় আসেনি। তালুকদার সাহেব সুপ্য মুখে দিয়ে আয়নার দিকে তাকালো। আয়না তাকে দেখে মুচকি হাসি দিল।

তিনি মন থেকে আয়নার জন্য দোয়া করে বলে, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমার নাতনীকে পৃথিবীর সব সুখে দেয়। আল্লাহর রহমতে থাকে যেন আমার সব নাতী-নাতনীরা।

★★★

সমুদ্রের মেজাজ প্রচুর খারাপ। তার সকাল থেকেই পেট ব্যথা। দুইবার বাথরুম হয়েছে হাসপাতালে এসে। সে মাত্র স্যালাইন খেল। অফিসে এসেই ম্যাট্রিল খেয়ে নিয়েছে৷ কালকে পিউ কীসব অখাদ্য বানিয়েছিল, সেগুলো খেয়ে এখন তার পেটে অসুখ দেখা দিচ্ছে৷ পিউয়ের উপর ও মেজাজ খারাপ হচ্ছে। রান্না না পারলে রাধুনি হওয়ার চেষ্টা করার মানে কি?আজব! কিসব আধ সেদ্ধ মাংস দিয়ে সালাদ না কিসব বানাইলো। তা খেয়েই এই অবস্থা! পেট ব্যথা করায় এখন তার মাথা ব্যথা করছে৷

আসলে ব্যথা হলো সংক্রামক। এক জায়গায় ব্যথা করলে সব জায়গায় ব্যথা ব্যথা লাগে!

সে স্যালাইনে চুমুক দিলো। আবারো সম্ভবত ওয়াশ রুমে যেতে হবে। যতবারই সে ওয়াশ রুমে যাচ্ছে, ততোবারই পিউ ইনোসেন্ট ফেসে তাকে তার রুমে এসে খাবারের বাটি দিয়ে বলা কথা গুলো মনে পড়ছে৷

কি সুইট ভয়েসে বলেছিল, ভাইয়া আমি তোমার জন্য কুক করেছি খেয়ে বলো কেমন হয়েছে আর সর‍্যি! আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ!

সে আল্লাদে আটখানা হয়ে পুরা বাটি শেষ করেছিল। এখন এই অবস্থা!

সমুদ্র বাথরুম যেতে যেতে দাতে দাত চেপে বলে, কুক করেছে এজন্য আমার এই হাল! রান্না-বান্না করলে আজকে সুস্থ থাকতাম!

সমুদ্র বাথরুম থেকে ফিরে ওয়াড ভিজিটিংয়ে গেল। এমনি এই জায়গায় নতুন সে৷ তার উপর এমন লজ্জাজনক ব্যাধি! অসহ্যকর! সব দোষ পিউয়ের! অকর্ম একটা!

★★★
শ্রাবণ তার বাবার ঢাকার অফিসে এসেছে৷ অফিসের সবাই তাকে চেনে। চেনার ই কথা। মাত্র চল্লিশ জন কর্মচারী। তাদের চিটাগংয়ের অফিস মানুষ দূর থেকে দেখতে আসে। এমন হাইফাই লেভেলের। আর ঢাকার অফিসে মাছি ঘুরে! এসিও নাই অফিসে৷

শ্রাবণ কে দেখে ক্যাশিয়ার সাহেব এসে বলে, ছোট স্যার সালাম?

শ্রাবণ চাপা হেসে বলে, ওয়ালাইকুম আসসালাম চাচা। ভালো আছেন?

–হ্যা৷ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি৷

শ্রাবণ ফিসফিস করে বলে, আব্বু কি আমাকে অফিসে বসার অনুমতি দিয়েছে?

ক্যাশিয়ার সাহেব হতাশ গলায় বলে, আজ্ঞেনা। বড় স্যার সাফ বলেছেন, আপনাকে অন্য কোন অফিসের জয়েনিং লেটার দেখাতে হবে।

শ্রাবণ মুখ ভোতা করলো এবং বিড়বিড় করে বলে, অন্য অফিসে চাকরি পাইলে এই ফাউল অফিসে কেন আসব?

ক্যাশিয়ার সাহেব বলে, আমার পরিচিত একজন আছে। যে আপনাকে জব দিতে পারবে৷ ইন্টারভিউ পরীক্ষা কিছু ই লাগবে না?

শ্রাবণ মুখ ভোতা রেখেই বলে, আপনার বাসায় ড্রাইভারের জব দিবেন নাকি?

ক্যাশিয়ার সাহেব হেসে উঠে বলে, আপনি খুব মজার মানুষ। তবে আমি সত্য বলছি। সেখানে এক মাস কাজ করতে হবে এটাই শর্ত৷ আপনাকে জবটা দেওয়ার জন্য তাদের পায়ে পড়ে রাজী করিয়েছি।

শ্রাবণ ভ্রু কুচকে বলে, এতো দরদ আমার জন্য?

— যার লবন খাই তার প্রতি কৃজ্ঞত হবো না!

শ্রাবণ মুচকি হেসে বলে, কারেকশন যার বাপের লবন খান!

ক্যাশিয়ার হোহো করে হেসে বলে, এবার যান ওই অফিসে। তারপর এক মাস কাজ করে এখানে সিইও এর পোস্ট আপনার!

— বাব আমাকে কোন দিন ই সিইও বানাবে না৷।

— এই কাজ আমার উপর ছেড়ে দেন৷ আপনি আমাদের ভবিষ্যত সিইও সাহেব৷

শ্রাবণ অনীহা দেখিয়ে বলে, যে অফিস তার আবার সিইও লাগে! পিয়ন দিয়েও এই অফিস চালানো যাবে৷

শ্রাবণ জব লেটার নিয়ে তার নতুন অফিসে যাচ্ছে।কালকে সবার মন খারাপ ছিল৷ তাই আজকে কাজে বের হলো।

সে অফিসে গেল৷

রিসিভশনে বলা হলো, ম্যাডামের সাথে দেখা করতে।

শ্রাবণ ম্যাডামের রুমে ঢুকেই থ মেরে যায়৷ আয়েশা বসে আছে চেয়ারে।

শ্রাবণ রেগে যায়। ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট নিয়েও সে চাকরি পাচ্ছেনা আর এই মেয়ে সার্টিফিকেট ছাড়া অফিসে বসেছে৷

আয়েশা শ্রাবণ কে দেখে বলে উঠে, হাই বেবি৷গুড মর্নিং। কেমন আছো?

তারপর শ্রাবণের দিকে চোখ রেখে বলে, হট ওর কোল্ড?

শ্রাবণ রেগে লাল হতে লাগলো।

আয়েশা হেসে বলে, আই মিন টি অর পেপসি?

— তুমি এখানে কি করছো?

–বাবা ইন্ডিয়া গেছে সো আমি অফিস সামলাচ্ছি। এনি প্রব্লেম?

শ্রাবণ রাগের বশে ফাইল ফেলে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গটগট করে হাটা ধরে।

আয়েশা ওপাশ থেকে চেচিয়ে উঠে বলে, এই পেপসি খেয়ে যাও!

শ্রাবণ তা শুনে বিড়বিড় করে বলে, রাখ তোর পেপসি!

★★★

সমুদ্র মাত্র বাসায় ফিরেছে। এমনি সকাল থেকে কিছুটা অসুস্থ লাগছে তার। তার উপর মাথায় এক হাজার প্যাসকেলের চাপ। সব মিলিয়ে সে কাহিল।

বাসায় আসতেই পিউ তাকে এক গ্লাস কি যেন খেতে দিলো। গ্লাসে বোধহয় দুধ। দুধের মধ্যে কিসব কিলবিল করছে। তার আর খাওয়ার সাহস জুটেনা। সে রেখে দিলো। বহু কষ্টে সে সুস্থ বোধ করছে। আবার অসুস্থ হতে চায় না সে৷

রুমে আসতেই আয়ুর কল আসে। সে তৃপ্তিময় হাসি হেসে কল ধরে বলে, হু বল!

— সমুদ্র ওরা আমাকে পছন্দ করেছে।তুমি আসো প্লিজ!

সমুদ্র না বুঝেই বলতে লাগলো, তুমি তো পছন্দ করার মতোই কেউ একজন!

— তুমি বুঝছো না। এই পছন্দ সেই পছন্দ না!

সমুদ্র হতবাক হয়ে গেল এবং বলল, কোন ছেলে তোমাকে দেখতে এসে পছন্দ করেছে?

–হুম।

সমুদ্র রাগে ফোন ফেলে দিয়ে, শিট বলে উঠে। তারপর রুম ছেড়ে ঘূর্ণিঝড়ের গতিতে বের হয়৷

★★★

আয়নার বাসায় গিয়ে সমানে বেল বাজাচ্ছে সমুদ্র। চোখ-মুখ রাগে লাল হয়ে আছে তার। বুকের হৃদপিন্ড ভীষণ জোড়ে ধুকপুক করছে। সমুদ্র পারলে গেট ভাঙ্গে ভেতরে ঢুকে। কিছুক্ষন পর আলিয়া গেট খুলে দেয়৷

সমুদ্র জোড়ে চেচিয়ে উঠে বলে, গেট খুলতে এতো টাইম লাগে কারো?

আলিয়া ভয় পেয়ে যায় সমুদ্র কে দেখে। এতো রেগে আছে যে কিছু বলার কোন সাহস নেই।

সমুদ্র তড়িঘড়ি করে ভেতরে ঢুকে দেখে তিনজন মানুষ ড্রয়িং রুমে বসে আছে। এরমধ্যে একজন পুরুষ ও আছে৷

সে রাগে ক্ষোভে আলিয়াকে প্রশ্ন করে, তোমার বোন কোথায়?

আলিয়া তোতলানো শুরু করে বলে, র,,রু,,,রুমে।

সমুদ্র এক সেকেন্ড দেরি না করে আয়নার রুমে গিয়ে ঢুকে পড়ে।

আয়না রুমে কাচুমাচু হয়ে বসে ছিল। হুট করে সমুদ্র কে আসতে দেখে ঘাবড়ে গেলেও সে শান্তি পায়!

সমুদ্র তার হাত চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলে, পাত্রপক্ষের সামনে চেহারা দেখানো বের করছি!

আয়না চমকে উঠে। সে কেদে দিল।

সমুদ্র টান মেরে তাকে রুমে থেকে নিয়ে যায়।

সবার সামনে আয়নার হাত ধরে হাটা ধরে সমুদ্র। আয়না মাথা নিচু করে আছে।

মাঝপথে ড্রয়িং রুমে মেঘ সমুদ্র কে থামিয়ে বলে, ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস বাবা?

— আমার বউকে যেখানে খুশি নিয়ে যাব।

চলবে৷

#প্রেমপ্রদীপ
#বিশেষ_পর্ব
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)

আবেগ রোদেলার পেছনে এসে দাঁড়ালো। রোদেলা গাছে পানি দিচ্ছে। রোদেলা বেশ মনোযোগ দিয়েই গাছে পানি দিল। সে পেছনে ঘুরতে ই আবেগকে দেখতে পায়৷ আবেগ মুচকি হাসে৷ রোদেলা ও বিনিময়ে স্মিত হাসে৷

তারা দুজনেই বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। হুট করে রোদেলা বলে উঠে, আবেগ তুমি কি সত্যি আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছো?

–অবশ্যই।

রোদেলার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল এবং সে পুনরায় প্রশ্ন করে, সত্যি?

— হ্যা! এখন কি আমি গলায় প্লাকাড নিয়ে ঝুলব যে রোদেলা কে ক্ষমা করা হয়েছে!

রোদেলা মুচকি হাসলো। তখনি রুমে সমুদ্র প্রবেশ করে, মা আর বাবাকে একসাথে দেখে তার রাগ উঠে যায়।

সে ধারালো কন্ঠে বলে, আব্বু, তোমার সাথে জরুরি কথা আছে। একটু বাইরে আসো৷

আবগ রোদেলা কে রেখে সমুদ্রের সাথে যায়। সমুদ্র সোজা ছাদে উঠে, আবেগ ও তার পিছু পিছু যায়। ছাদে গিয়েই সমুদ্র জোড় গলায় বলে, আব্বু তুমি ঐ নারীকে কিভাবে ক্ষমা করে দিলে যে কিনা ব্যভিচারে লিপ্ত? এটা কবিরা গুনাহ। ব্যভিচারে লিপ্ত নারী জাহান্নামি। এদের শাস্তি হওয়া উচিত।

আবেগ প্রসঙ্গ পালটে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করে, বাবা আজকে ফজরের ফরজ ওয়াক্তের পর আয়তুল কুরসি পড়েছিলে?

আচমকা এমন প্রশ্নে ভড়কে যায় সমুদ্র। সে আমতাআমতা করে বলে, আসলে ফযরের ওয়াক্তে উঠতে পারিনি। প্রচুর ক্লান্ত ছিলাম গতরাতে।

— কাজা পড়োনি?

–উহু। অফিসে লেট হচ্ছিল জন্য সময় হয়নি।

— সালাত হলো ইসলামের পাচটা স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। সালাতকে ইসলামের খুটি বলা হয়।ফযরের ওয়াক্তে যখন বলা হয়, নিশ্চয়ই ঘুম থেকে সালাম উত্তম! তবুও ঘুমিয়েছিলে তুমি?

— বাবা। একদিন ই তো। আল্লাহ মাফ করে দিবেন। আরবপরবর্তী ওয়াক্তের ক্ষমা চেয়ে নিব। সমস্যা নাই৷

এবারে আবেগ মুচকি হেসে বলে, সালাম না কায়েম করা হলো কবিরা গুনাহ । তাহলে সালাম না পড়লে ক্ষমা পাবে!

সমুদ্র চুপ হয়ে যায়। আবেগ বলতে লাগে, হাশরের ময়দানে সবার আগে কিসের হিসাব নেওয়া হবে? হাশরের ময়দানে সবার আগে সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। তোমার সালাত ঠিক আছে কিনা সেটা সবার আগে দেখা হবে। অথচ সেটাই মিস দিলে? এবার আসি, ব্যভিচার নিয়ে, ব্যভিচার যদি কবিরা গুনাহ হয়, তাহলে,মিথ্যা কথা বলা, আমানতের খেয়ানত করা, ওয়াদা পালন না করা, জুয়া খেলা, জুলুম অত্যাচার করা, উপকার করে খোটা দেওয়া, অবৈধ উপায়ে উপার্জন রা, ঘুষ নেওয়াও কিন্তু কবিরা গুনাহ। মদপান করাও কবিরা গুনাহ। সেখানে আমাদের সমাজে ডান্স বার তৈরি হচ্ছে। ছেলে মদ ব নেশায় আসক্ত হলে, আমরা সমাজ বলি, বিয়ে দিয়ে দাও। বউ ঘরে আসলে ঠিক হয়ে যাবে ছেলে৷ একবারো কেউ বলে না, তাকে শাস্তি দেওয়া হোক।

আবার যারা ঘুষ খেয়ে অবৈধ উপায়ে টাকা কামিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে যখন টুথপিক দিয়ে দাত খুটিয়ে দাতে জমে থাকা মাংস সমাজের মুখে ছুড়ে মারে। আমরা মুসলিম হয়েও চুপ থাকি। তার দোষ দেখেও দেখিনা। এই যে তুমি সিগারেট খাও। সেটাও হারাম ইসলামে।এটাও এক ধরনের নেশা। এবার ভেবে দেখো, ব্যভিচার এবং নেশা করা উভয় ই কবিরা গুনাহ হওয়া সত্ত্বেও তুমি সিগারেটে টান মেরে ফুক দিয়ে বলছো, ব্যভিচারকারী জাহান্নামে যাবে। সে শাস্তি পাবে৷ আর তুমি? তুমি ও একই কাতারের গুনাহ করে অপরজনের শাস্তি নিয়ে নাচানাচি করছো? তুমি চল্লিশ দিনের মধ্যে যদি মারা যাও, তবে জান্নাতে ঢুকতে পারবেনা।

সমুদ্র তব্দা খেয়ে গেল৷ মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না তার।

আবেগ বললো, এই যে সমাজে এনগেজমেন্টের নামে ছেলেদের বাইশ ক্যাডেটের আংটি পড়িয়ে দেওয়া হয়, এটাও তো কবিরা গুনাহ। পরিমাণে পণ্য কম দেওয়া, ঘুষ খাওয়া, মিথ্যা বলা, নামাজ না পড়া এসবও কবিরা গুনাহ কিন্তু এগুলা আহরহ আশেপাশে হচ্ছে। অথচ আমরা তাকিয়ে দেখে যায়। কিছু বলি না। সেই আমরাই ব্যভিচার দেখলে শাস্তির জন্য উঠেপড়ে লেগে যাই! অথচ ঘুষ খাওয়া লোকের পা চাটি। আহা কি ন্যায়? আহা কি বিচার? উচিত তো দুই ক্ষেত্রেই সোচ্চার হওয়ার কিন্তু হইনা।কেন হইনা? কারন ঘুষখোর স্যারের বিরুদ্ধে কিছু বললে যদি চাকরি চলে যায়?এবার আসি শাস্তি নিয়ে কথায়। ইসলামের শাস্তির বিধান অবশ্য ই আছে কিন্তু ক্ষমার ও মার্জানার নির্দেশও আছে। এর দৃষ্টান্ত আমরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনদশায় দেখতে পাই। তিনি (সাঃ) যখন দেখেন যে অপরাধীর সংশোধিত হয়ে গেছে তিনি চরম শত্রুকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। রাসুল (সাঃ), তার সন্তান-সন্তাদির উপর, তার প্রিয় সাহাবিদের উপর এমন কোন অন্যায় বা অত্যাচার নেই যা করা হয়নি। কিন্তু শত্রু যখন ক্ষমা প্রত্যাশী হয়ে ক্ষমা কামনা করেছে, তখন বিশ্ব নবী, মানবতার নবী, ও ক্ষমার মূর্ত প্রতীক মুহাম্মদ (সাঃ) সবকিছু ভুলে গিয়ে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অতীব ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা পছন্দ করেন।পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আর অন্যায়ের প্রতিশোধ অন্যায়ের অনুপাতে হয়ে থাকে৷ কিন্তু (অন্যায়কারী কে)শুধরাবার উদ্দেশ্যে যে ক্ষমা করে তার প্রতিদান আল্লাহর কাছে আছে। নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘন কারীদেরকে পছন্দ করেনা৷ (সূরা আশ সুরা আয়াত ৪০)

এক হাদিসে বর্ণিত আছে যে, মক্কা থেকে হিজরতের সময় মহানবীর (সাঃ) প্রিয় কন্যা যয়নাবের উপর এক পাষন্ড হাব্বার বিন আসাদ বর্শা দিয়ে প্রানহানির চেষ্টা করে। তিনি তখন অন্তঃসত্তা ছিলেন। সেই হামলার কারনে তিনি মারাত্মক ভাবে আহত হন। এবং তার গর্ভপাত ঘটে, অবশেষে এই আঘাত তার জন্য প্রানহানীর কারনে পরিনত হয়। এই অপরাধে সেই ব্যক্তির উপর হত্যার রায় দেওয়া হলো। মক্কা বিজয়ের সময় এই ব্যক্তি কোথাও পালিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী তে মহানবী যখন মদিনায় ফিরে আসেন, তখন হাব্বার মহানবীর সকাশে উপস্থিত হয়ে বলে, আপনার ভয়ে আমি পালিয়ে ছিলাম, আমার বড় বড় অপরাধ রয়েছে এবং আপনি আমাকে হত্যার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন৷ কিন্তু আপনার দয়া ও মার্জানার খবর আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে৷ যদিও আপনি আমার বিরুদ্ধে শাস্তির রায় দিয়েছেন, কিন্তু আপনার দয়া ও মার্জানা এতো ব্যাপক যে এর ফলে আমার মধ্যে এতো সাহস সঞ্চার হয়েছে যে আমি আপনার কাছে উপস্থিত হয়েছি। আরও বলতে লাগলো, হে আল্লাহর নবী! আমরা অজ্ঞতা ও শিরকে লিপ্ত ছিলাম, আল্লাহ তায়ালা আপনার মাধ্যমে আমাদের জাতিকে হিদায়েত দিয়েছেন, এবং ধ্বংস থেকে রক্ষা করেছেন। আমি আমার সীমালঙ্ঘন এবং অপরাধ স্বীকার করছি, আপনি আমার অজ্ঞতা উপেক্ষা করুন।

এতে মহানবী (সাঃ) তার কন্যার হত্যাকারী হাব্বাসকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং বলেছেন, যাও আব্বাস! তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ হয়েছে, তিনি তোমাকে ইসলাম গ্রহণের এবং সত্যিকার তওবা বা অনুশোচনা করার তৌফিক দিয়েছেন। (আল মাজুমুল কাবীর লিল তিবরানী, ২২ তম খন্ড, পৃ ৪৩১। মুসনাদ আন নিসায়ে যিকরে সুনানে জয়নাব, হাদিস নং,১০৫১। আল সিরাতুল হালবিয়া, ৩য় খন্ড, পৃ,
১৩১-১৩২, বৈরুত ২০০২।)

অনুরুপ ভাবে আরেক হাদিসে বর্ণিত যে, একজন কবি যার নাম ছিল কা’ব বিন জহির। সে মুসলমান নারীদের সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে কবিতা লিখত। তাদের সম্ভ্রমে হামলা করত। তার উপর ও শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যখন মক্কা বিজয় হয় তখন কা’বের ভাই তাকে পত্র লিখে যে, মক্কা বিজয় হয়ে গেছে। তোমার জন্য ভালো মহানবীর (সাঃ) কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।

সে মদিনায় এসে একজনের বাড়িতে অবস্থান করে।এবং মসজিদে নববীতে গিয়ে মহানবী (সাঃ) এর সাথে ফযরের নামাজ আদায় করে।

এরপর নিজের পরিচয় না দিয়ে বলে, হে আল্লাহর রাসুল(সাঃ) কা’ব বিন জহির অনুশোচনার সঙ্গে ফিরে এসেছে এবং ক্ষমা চাচ্ছে। যদি অনুমতি থাকে তবে তাকে আপনার সাকশে উপস্থিত করা যেতে পারে৷

তিনি (সাঃ) যেহুতু তার চেহারা সম্পর্কে জানতেন না। তাই তিনি (সাঃ) বলেন, হ্যা সে আসতে পারে।

তখন সেই ব্যক্তি বলে, আমিই সেই কা’ব বিন জহির।
তখন এক আনসারী তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, কেননা তার অপরাধের কারনে তাকেও দন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মহানবী (সাঃ) বলেন, একে ছেড়ে দাও। কারন সে ক্ষমা প্রত্যাশী হয়ে এখানে এসেছে৷ এরপর মহানবী (সাঃ) এর সান্নিধানে একটি কাসীদা বা কবিতার অর্ঘৈ পেশ করা হয়। এবং তিনি (সাঃ) তার এক দৃষ্টিনন্দন্ন চাদর তথা তাকে পুরষ্কার দেওয়া হয়।

সুতরাং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন সেটা বলার তুমি আমি কেউ না! এটা সম্পূর্ণ তার অনুশোচনার উপর নির্ভর করছে৷ এছাড়া আল্লাহ এক পতিতাকেও কেবল পিপাসাকাতর কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য ক্ষমা পেয়েছিল। সুতরাং তোমার উচিত তোমার রবের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

এ ছাড়াও মক্কার বিজয়ের পর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ক্ষমার এক দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন৷

এবার আসি আমার আর রোদেলার বিবাহ নিয়ে কথাবার্তায়।

সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, পুরুষেরা নারীদের উপর কতৃত্বশীল এইজন্য যে, আল্লাহ একের উপর অপর বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, এজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে, সে মতে নেকদার স্ত্রীগন হয় অনুগতা। এবং আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলে দিয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালেও তা হেফাজত করবে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্ক কর, তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর, তাদের প্রহার করো,,,,, আবেগকে শেষ করতে না দিয়ে সমুদ্র চেচিয়ে উঠে বলে, আম্মুও তোমার অবাধ্য ছিল সুতরাং তাকে প্রহার কর। তালাক দাও। এড়িয়ে চল।

আবেগ স্মিত হেসে বলে, নিজের ধর্মকে এখনো চিনলে না? আমার কথা শেষ হয়নি। পুরোটা বলতে দাও। অর্ধেক শুনে না বুঝেই লাফানো মূর্খের লক্ষন। এরপরের লাইন হলো,

যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।

। আমি পুরাটা আবার বলছি,

সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, পুরুষেরা নারীদের উপর কতৃত্বশীল এইজন্য যে, আল্লাহ একের উপর অপর বৈশিষ্ট্য দান করেছেন, এজন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে, সে মতে নেকদার স্ত্রীগন হয় অনুগতা। এবং আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলে দিয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালেও তা হেফাজত করবে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্ক কর, তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর, তাদের প্রহার করো
যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য কোন পথ অনুসন্ধান কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। এর অর্থ কেউ যদি বাধ্য হয়ে যায় তবে তাকে ক্ষমা কর, এজন্য ই তো অন্য কোন পথ দেখতে বারং করা হয়েছে। আরো একটা বিষয় এখানে কিন্তু আল্লাহ তায়াল চক্ষু আড়ালে যা হেফাজত করতে বলা হয়েছে সেটার অবাধ্যতার সাপেক্ষে আয়াত নাযেল হয়েছে । আমার স্ত্রী সর্বদা তার হেফাজত স্থান হেফাজত করে এসেছে। তবুও সমাজ তাকে চরিত্রহীন বলছে !

ধরে নেই, রোদেলা প্রথমে আমার অবাধ্যতা এই অবাধ্যতা হলো কথা অমান্য করা। সে অবশ্যই অবাধ্যতা করেছিল।সে কিন্তু থাইল্যান্ড থেকে ফিরে এসে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। আমি তাকে মৌখিক ভাবে ক্ষমা করে দেই। কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে করতে পারছিলাম না কারন মহান আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দেননি তখনো। কোথাও মনের মধ্যে খুতখুত করছিলো। তবে তাকে ক্ষমা করার নিয়ত ছিল আমার। আমার স্ত্রী কিন্তু আর অবাধ্য হয়নি! মনে করে দেখো, আমি ট্রেনিং এর সময় রোদেলাকে নিজে এয়ারপোর্টে গিয়ে রেখে এসেছিলাম। আমি পুরাপুরি সাপোর্ট না করলেও পরে মেনে নিয়েছি। বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাকে নিয়ে যেতে বারং করেছিলাম। সে ওটাও মেনেছে। সে অনুতপ্ত ছিল। ক্ষমা চেয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ঝামেলা হবেই। স্বামী-স্ত্রীর মধ্য বিবাদ, স্ত্রীর স্বামীর অবাধ্য হওয়া, অযথা তালাক চাওয়াও কবিরা গুনাহ। আমাদের এসব পরিহার করে চলতে হবে। তবুও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়ে থাকে। এজন্য গালমন্দ করা উচিত না৷ আমি আমার স্ত্রীকে রাগবশত কারনে বাজারি মেয়ে বলেছিলাম। কিন্তু আবু দাউদে বলা আছে,তাদের আঘাত কর না এবং গালি দিও না৷ তবুও আমি বলে ফেলেছি। তাকে অবিশ্বাস করেছি। এর জন্য আমি অনুতপ্ত। সেও ভুল করেছে, আমিও করেছি। এছাড়াও এক হাদিসে মহানবী (সাঃ) বলেন, যদি আমি দুনিয়াতে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সেজদা করার উপদেশ দিতাম, তবে নারীকে হুকুম করতাম স্বামীকে সেজদা দিতে। কিন্তু সেজদা যেহেতু অন্যকারো জন্য বৈধ না তাই এই নির্দেশ দেইনি।

আমাদের আল্লাহ তায়াল অতীব দয়ালু। তোমাকে স্মরণ করিয়ে দেই, আল্লাহর কিছু গুনবাচক নাম তাহলো, আল ক্বাহার (কঠোর), আল গফফার (ক্ষমাশীল), যূল যালালি ওয়াল ইকরাম (মহিম্বানিত ও দয়াবান সত্তা।, আস সাবূরু (ধৈর্যশীল)। একটু ভেবে দেখো, মহানবী (সাঃ) স্বামীকে কত উচু অবস্থান ও সম্মান দেখিয়েছেন! তাহলে আমাদের পুরুষ দের কি করনীয়?আল্লাহ রাব্বুল আলা আমিনের এই সব গুনাবলি মেনে চলার চেষ্টা করা বাস্তব জীবনে। যেখানে মক্কা বিজয়ের দিন বিশ্ব নবী আমার নবী, মক্কা বিজয়ের পর ঘোষনা দেন, আমি তোমাদেরকে ঠিক তাই বললো যা নবী ইউসুফ (আঃ) তার ভাইয়ের কে বলেছিলেন। আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। তোমরা যেতে পারো কারন তোমরা মুক্ত। দেখ এখানে আমার নবী(সাঃ) মক্কা বিজয়ের পর ক্ষমা করে দিয়েছিল মক্কাবাসীকে। তাহলে আমি তার উম্মত কি পারি না রোদেলা কে ক্ষমা করতে? বিয়ের পর স্বামীই স্ত্রীর অভিভাবক হয়। অভিভাবক মানে এই না যে কেবল শাসন ই করবে। অভিভাবকরা ক্ষমা করে শুধরানোর সুযোগ দেয়। সে অপরাধ করেছে , আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। সে শুধরাতে চেয়েছে, আমি সুযোগ দিয়েছি কারন,

আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে।

আমার স্ত্রী অবাধ্যতা করেছে, সে অনুতপ্ত এবং পরবর্তী তে আর অবাধ্যতা করেনি। আমি এতেই সন্তষ্ট।

— এটা তোমার আর তোমার স্ত্রীর ব্যাপার। কিন্তু সে ব্যভিচার করেছে। ইসলামে বলা আছে, কোন মহিলার পারফিউমের গন্ধের জন্য যদি কোন পুরুষ আকৃষ্ট হয় তাহলে সেই নারীর ভয়াবহ শাস্তি হবে। সেখানে তোমার স্ত্রী পরপুরুষ এর সঙ্গে রঙ তামাশা করেছ৷ এর সাপেক্ষে কি বলবে বল!

আবেগ মুচকি হেসে বলে, কুরআন পরিপূর্ণ জ্ঞানের ভান্ডার। এখানে সবকিছুর সমাধান আছে। তুমি যেটা বলছো সেটাও একটা আয়াত এটা ঠিক। কিন্তু বলার ধরনটা ভুল। ব্যাপারটা এমন দাড়ালো যে, ফযরের নামাজ পড়তে আমার কষ্ট হয় এজন্য আমি আমার সুবিধার জন্য বললাম, এই নামাজ চার ওয়াক্ত পড়লেই হবে। (নাউযুবিল্লাহ)।এখন যারা জানে না নামাজ দিনে পাচ ওয়াক্ত আদায় করতে হয় বা যারা পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে উদাসিন তারাই তোমার কথার সাথে তাল মেলাবে।

কেউ যদি ভুল শুধরে দিয়ে বলে, না এসব কি বলো! ফযর ও ফরয! তখন তুমি সুর টেনে বললে, আরে হ্যা হ্যা। ত অবশ্যই ফরয! কিন্তু সকালের তো তাই বলিনি! (নাউযুবিল্লাহ)

ঠিক এই আয়াতের মাধ্যমে তুমি পুরুষদের পর্দা করার কথা উহ্য রাখছো৷

লজ্জা নারীদের ভূষণ। ইহা সঠিক । তবে আমাদের সমাজে এর ভুল প্রয়োগ করা হচ্ছে, অনেকের ধারণা লজ্জা কেবল নারীদের থাকবে, পর্দা নারীরা করবে। অথচ ঈমাণের একটি শাখাই লজ্জা৷ (বুখারী)। নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা ফরজ। কিন্তু উভয়ের পর্দা ধরন আলাদা হলেও গুরুত্ব সমান৷ আল্লাহ তায়ালা বলেন, মুমিন পুরুষ দের বল, তারা যেন নিজের দৃষ্টি সংযত করে এবং নিজের লজ্জাস্থান হেফাজতে রাখে। এটিই তাদের জন্য উত্তর। ওরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। (সূরাতুন নূর (২৪) আয়াত ৩০)

এবার হাদিসে আসি,

জারীর (রাঃ) আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, কোন মহিলার উপর আচমকা আমার নজর পড়ে গেলে আমি কি করব?

তিনি(সাঃ) জবাব দিলেন, তোমার নজর ফিরিয়ে নাও। (তিরমিযী) অর্থাৎ হাদিস ও আয়াত থেকে বোঝা যায় কোন নারী যদি পারফিউম কেন অতিমাত্রায় আর্কষনীয় হয়েও আসে, মহানবী (সা;) এর হাদিস মতে আমি আমার দৃষ্টি সরিয়ে নিব। এজন্য আমার পাপ হবেনা। যে আর্কষনীয় হয়ে এসেছে, পুরুষ কে পথভ্রাষ্ট করতে চায়, সে পাপী হবে৷ কিন্তু সে পর্দা করেনি জন্য আমার তাকে দেখার অনুমতি, ইসলাম থেকে আমাকে দেওয়া হয়নি। সে পর্দা না করলে তার গুনাহ হবে। আমি ও যদি চোখের পর্দা না করে তার দিকে কামুকতা নিয়ে তাকাই তবে উভয়ই ব্যভিচারে লিপ্ত! উভয়ই পাপী। এখন প্রশ্ন করতে পারো আমার মুমিন ভাই যদি রাস্তায় কোন নারী কে দেখে ফেলে অনিচ্ছায় তবে কি তার গুনাহ হবে। উত্তর হলো না।

কারন আরো একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল(সাঃ) বলেন, একবার নজর পড়ে গেলে আর দ্বিতীয়বার তাকিয়ে দেখোনা৷ প্রথমবারের (অনিচ্ছায়) তোমার জন্য বৈধ৷ কিন্তু দ্বিতীয়বারের নজর তোমার জন্য বৈধ না। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিযী) বুঝেছো! তুমি পুরুষ এজন্য আল্লাহ তোমাকেও কিছু বিধি দিয়েছে। কিন্তু তুমি সেটা উহ্য রাখলে। কারন পুরুষের পর্দা করা কঠিন। মস্তিষ্কের সাথে লড়াই করতে হয়। এজন্য এ-সব হাদিস আমরা পড়িনা। আমরা জানি শুধু মেয়েরা পর্দা করবে৷ এখন কিন্তু কেউ প্রথমের বলা উপমার উদাহরণস্বরূপের মতো সুর টেন্ব বলবে, আরে জানি তো! পুরুষের জন্য পর্দা ফরয! যেহুতু ফরয সুতরাং তুমি আগে কেন বললে না? কেন ব্যাপার টা লুকাছাপা দিলে? কেন তুমি তোমার দোষ অন্য কারো ঘাড়ে চাপাচ্ছো? ইসলাম কিন্তু ছাড় দিবেনা। মনগড়া কথা তুমি বানাতেই পারো। তাই বলে আল্লাহ তায়ালা তোমার শাস্তি মওকুফ করবেনা৷ একান্ত ক্ষমা ব্যতিত তুমি নারীর পারফিউম নাকে লাগায় তার দিকে তাকানোর জন্য তোমাকেও শাস্তি দেওয়া হবে পরকালে। তোমার জন্য তো পর্দা ফরজ ছিল ইহকালে। ইসলামে কোথাও কি বলা আছে? কোন পারফিউম মেখে আসা নারী আমার মুমিন ভাইয়ের সামনে এসে দাড়ালে, ভাইয়ের চোখের পর্দা যেটা কিনা ফরয তা মুক্ত হয়ে যাবে কারন সুগন্ধি নাকে লাগছে! (নাউযুবিল্লাহ এমন মনগড়া কথা কোথাও নেই বরং আল্লাহ তায়াল বলেন, তোমরা দৃষ্টি সংযত করো৷)

আচ্ছা বল, মুনাফিক কাকে বলে?

সমুদ্র আমতাআমতা করে বলে, আ,,,,মনে আসছে না।

আবেগ বলে, সমস্যা নেই। তুমি জেনে নেও। কারন কুরআনের প্রথমের আয়াতের প্রথম শব্দই হলো পড়! এই পড় কিন্তু বর্তমান কালে আছে। অথাৎ আমি এসএসসি ক্যান্ডিডেট স্টুডেন্ট স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের হাদিস জানিনা। কুরআন এ বলা হয়েছে পড়! প্রেজেন্ট টেনসড এ আছে এই শব্দ। চল্লিশ বছরের আমি জানি না ইশরাকের নামাজ কিভাবে আদায় করা হয়, ইসলাম পুনরায় বলে পড়ো৷ শিখো। আজকে শিখো। আজকে থেকে প্রয়োগ করা। নাও গুগলে সার্চ দাও মুনাফিক কাকে বলে৷

সমুদ্র বলে, বাবা গুগল দিয়ে তো ইসলাম চলবে না।

আবেগ ভ্রু কুচকে বলে, ইসলাম কি গাড়ি যে গুগল দিয়ে চলবে? এমন নির্বোধের মতো কথা বলো না। বরঙ ইসলাম হল চিরন্তন সত্য। এটাকে কেউ চালাতে পারবেনা। তবে হ্যা তুমি চাইলে গুগল থেকে তথ্য নিতেই পারো। কারন যুগের বিপ্লব ঘটছে৷ আগে মুখস্ত করে কুরআন সংরক্ষণ করা হত, এর পর পাতায় ছাপানো হয়।এর মানে এই হয়, পাতায় ছাপানো তথ্য গুলো ভুল! যেহেতু গুগল সবার জন্য তাই সাবধান থাকবে ভুল তথ্য সংগ্রহ করছো কিনা! মনে রাখবে গুগলে যদি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের কাহিনি দিয়ে সাচ দাও সেটা আসবে এবং সাজেশনেও এমনই ইসলামিক তথ্য আসবে। কিন্তু যদি তুমি হরহামেশাই এডাল্ট জিনিস সার্চ দিতেই থাকো এবং এটা ভেবে রাখো গুগলে কেবল এডাল্ট জিনিস পাওয়া যায় এটা টেকনোলজির মিসইউস এবং তোমার মানসিকতার সমস্যা। নাও সার্চ দিয়ে পড়ো কি বলা আছে৷

সমুদ্র গুগল এ মুনাফিক নিয়ে সাচ দেয়। তারপর পড়তে লাগে, নিফাক অর্থ ভন্ডামি,কপটতা, ধোকাবাজি, প্রতরণা ইত্যাদি। এর ব্যবহারিক অর্থ হলো, অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন রেখে, মুখে ইসলাম কে স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। এমন কাজ যারা করে তারা মুনাফিক।

মুনাফিকের তিনটা চিহ্ন তিনটা তাহলো যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, আর যখন কোন কিছু তার নিকট আমানত রাখা হয় তার খিয়ানত করে৷

— হুম। কুরআন নিয়ে কিছু বলি,

আমি আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি প্রত্যক বিষয়ের স্পষ্ট ব্যাখা স্বরুপ। (সূরা আন-নাহল)

আর আমি খন্ড-খন্ডভাবে কুরআন নাজিল করেছি যাতে আপনি তা মানুষের নিকট ক্রমে ক্রমে পাঠ করতে পারেন আর আমি তা ক্রশম নাজিল করছি৷ (সূরা বনি ইসরাইল)। কুরআন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনা, কাহিনির সাপেক্ষে মহানবীর (সাঃ) এর মাধ্যমে নাজিল হয়েছে৷

— সমুদ্র বললো ব্যভিচারের কি ক্ষমা আছে?

— অবশ্যই ক্ষমা করা যাবে। ব্যভিচার হলো কবিরা গুনাহ। এই গুনাহের শাস্তি জাহান্নাম। তবে মহান আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল। তার দরবারে খাটি দিলে তওবা করে অনুশোচনা বোধ এনে যদি পুনরায় এমন কাজ না করার তওবা করা হয় বা ক্ষমা চাওয়া হয় তবে আশা রাখা যায় তাকে ক্ষমা করা হবে৷ কারন,
হাদিস শরিফে এসেছে যে, যে ব্যক্তি একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ভিন্ন মাবুদ নেই)বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারি শরিফ)

এছাড়াও, নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের কবিরা গুনাহওয়ালার জন্য আমি সুপারিশ করতে থাকব৷ (বুখারি শরিফ)। রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, ততোক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ বান্দাদের তওবা কবুল করতে থাকেন, যতোক্ষন পর্যন্ত বান্দা বিরক্ত হয় না। তবে এই তওবার মধ্যে অবশ্যই আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ইখলাস থাকতে হবে৷ তুমি ও সিগারেট খেয়েছো যেখানে ইসলামে বলা আছে, যা নেশা সৃষ্টি করে তাই মদ আর যা নেশা সৃষ্টি করে তাই হারাম। ব্যভিচারের মতোন এটাও কিন্তু কবিরা গুনাহ! কিন্তু ইসলামে ব্যভিচার কে গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়েছে কারন ব্যভিচারদের মাধ্যমে অনৈতিকতা এবং বিশৃঙ্ঘলা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায়৷

— সবই বুঝলাম৷ কিন্তু কথা বলো সে আমার মা। কিন্তু সে আমার দায়িত্ব পালনে অনিহা প্রকাশ করেছে৷ আমাকে অবহেলা করেছে। সুতরাং আমার ও উচিত তাকে অবহেলা করা। ঠিক বলেছি না?

আবেগ মুচকি হেসে বলে, তুমি কি জানো না! আল্লাহ বলেন, আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোন বস্তুকে শিরক করোনা, এবং মাতা-পিতার প্রতি উত্তম আচরণ কর৷ (নিসা ৩৬)

সমুদ্র অনেকটা ভেবে বলে, কিন্তু আমি আমার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি! সেজন্য তাকেও আমিও তার হক থেকে বঞ্চিত করব৷

আবেগ আবারো বলে, সন্তানের প্রতি যেমন বাবা-মায়ের অধিকার রয়েছে, তেমনি মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের অধিকার রয়েছে৷ সে তার দায়িত্ব পালন করেনি এটা সে তোমার প্রতি অন্যায় করেছে। কিন্তু তুমি তোমার দায়িত্ব বা অধিকার পালন করবে৷ তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করতে বলে তাহলে তাদের অমান্য করার কথা ইসলামের নির্দেশ আছে, সেই এটাও বলা আছে, তাদের ক্ষমা করে দেও৷

সমুদ্র বললো, কিন্তু সে আগে ব্যভিচার করেছে, সন্তানের প্রতি অবহেলা করেছে এখন সে অনুতপ্ত কিন্তু আগে তো এসব খারাপ কাজ করেছে তাই না? তাহলে তো একটা কিন্তু রয়ে যায়?

আবেগ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, কেন তুমি উমর ফারুক (রাঃ) এর জীবনী পড়োনি? তিনি প্রথম দিকে ইসলামের ঘোর শক্রু ছিল৷ একদা তিনি মহানবী (সাঃ) কে হত্যা করার জন্য খোলা তরবারি নিয়ে বের হলো৷ পথে শুনল,তার বোন ও ভগ্নিপতি সাঈদ মুসলমান হয়ে গেছেন৷ তিনি তাদেরকে হত্যা করার জন্য তাদের বাড়ি যান। এবং অনেক অত্যাচার করেন৷ তাদের ইসলাম ত্যাগ করতে বলেন কিন্তু তারা প্রাণের বিনিময়েও ইসলাম ত্যাগ করতে রাজী হননি৷ তাদের অনড় অবস্থা দেখে সে ভাবান্তর হলো৷ এবং সে মুসলিম হওয়ার জন্য ব্যাকুল হল৷ তিনি মহানবী (সাঃ) এর দরবারে গিয়ে নিজের তরবারিটি রেখে মহানবী (সাঃ) পায়ের কাছে রেখে মুসলিম হয়ে যান৷ এবং তিনিই হলেন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর ফারুক (রাঃ)৷ তার পূর্বের কৃত কাজের জন্য পরবর্তীতে একদমই খোটা বা অপমান করা হয়নি। কারন কারো উপকার করে খোটা দেওয়াও ব্যভিচারের মতো কবিরা গুনাহ৷

সমুদ্র মুচকি হেসে উত্তর দিল, you are the best! সব প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে আছে!

— শুধু আমি বেস্ট না। বরং যারা ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন, ইসলাম কে স্বার্থের জন্য ব্যবহার না করে পুরোপুরি জানা ও মানার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তারা প্রত্যকেই এই পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল নক্ষত্র। ইসলাম কে কখনো একক প্রেক্ষাপটে দেখবেনা। ইসলাম নিয়ে রিয়া করবেনা। সবার সামনে চেচিয়ে অর্ধেক হাদিস বলে নিজের ফেসবুক টাইম লাইন, ফ্রেন্ড লিস্টে পরনারীকে জায়গা দিবে তাও অনুচিত! আর একটা কথা মাথায় রাখবে, মহানবী (সাঃ) বিদায় হজে বলে গেছে,

হে বিশ্বাসী গন তোমরা স্ত্রীদের প্রতি সদয় ব্যবহার করবে, তাদের প্রতি তোমাদের যেমন অধিকার আছে, তাদের ও তোমাদের প্রতি অধিকার আছে৷ এবং আরো বলেছেন,
ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কর না। পূর্বের অনেক জাতি একারনেই ধ্বংস হয়েছে। নিজ যোগ্যতা বলে ক্রীতদাস যদি নেতা হয় তার অবাধ্য হবে না৷ বরং তার আনুগত্য করবে৷

আযান পড়ে যাচ্ছ। আবেগ বললো যাও নামাজ পড় আর মুখ কালো কেন আমার ছেলের?

সমুদ্র মুচকি হেসে উত্তর দিল, আই এম প্রাউড অফ ইউ!

আবেগ সমুদ্রের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, এজন্য ই আমি তোর বাপ! লেস প্রিপারেশন নিয়ে মাঠে নামিনি৷ আমি খেলোয়ার নতুন কিছু কাচা না! এই যে মুচকি হাসলে এতেও তোমার সওয়াব হলো। দেখলে কি ভাগ্য আমাদের! আমাদের উচিত সঠিক জ্ঞান লাভ করা। ভুল বা অশুদ্ধ হতে দূরে থাকা। যাও নিচে যাও৷

সমুদ্র নিচে যেতে থাকলো। তার মনের মধ্যে অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে।সে নিজের রুমে না গিয়ে মায়ের রুমে গেল।

রোদেলা কাপড় গুচ্ছাছিল। সমুদ্র পেছনে থেকে বলে উঠে, আম্মু!

সমুদ্রের মুখে আম্মু ডাক শুনে রোদেলা পেছনে ফেরে। তার ছেলে তার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠে,

আমাকে ক্ষমা করে দিও কারণ তোমার প্রতি দায়িত্ব আমি পালন করিনি আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।

কারন, সূরা আরাফে বলা আছে, আপনি ক্ষমা করতে থাকুন আর ভালো ভালো কাজের আদেশ দিতে থাকুন, আর মূর্খদের সঙ্গে অর্থহীন তর্ক-বির্তক এড়িয়ে চলুন৷

চলবে।