প্রেমমানিশা পর্ব-৩৭ এবং শেষ পর্ব

0
443

#প্রেমমানিশা(৩৭)
[ সমাপ্তি পর্ব ]

‘ আমার নাম কি সেটা কি তুমি জানো লিজা ? ‘

প্রণয় খানিকটা সতর্কতার সহিত জিজ্ঞেস করলো। লিজা আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত। খাওয়া শেষে তারা দুজনেই আইসক্রিম নিয়েছে। প্রণয়ের আইসক্রিম শেষ হলেও লিজারটা শেষ হয়নি। খেতে খেতেই লিজা আনমনে বললো ‘ জানবো না কেন ? তোমাকে কে না চিনে। তুমি তো প্রণয় ইফতেজার। এ প্রফেসর অফ বাংলা ডিপার্টমেন্ট। ‘

প্রণয় লিজার উত্তরের অপেক্ষাই যেন করছিলো। উত্তর শুনে ও তির্যক হাসলো। বললো ‘ কিন্তু আমি তো মিস ইন্ডিয়াকে আমার নাম বলিনি। তাহলে তুমি কি করে জানলে আমার নাম প্রণয় ইফতেজার আর আমি প্রফেসর ? মিস ইন্ডিয়ার না জানা থাকলে তোমার তো জানার কথা না। ‘

প্রণয়ের কথা শুনে লিজার হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে গেলো। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না এতক্ষণ এক এক করে সাজানো গুটি ওর একটা ভুলে পাসা বদলে দিয়েছে। প্রণয় ওর দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে তার চাপা হাসি খেলা করছে যেন লিজাকে নাস্তানাবুদ করতে পেরে সে অনেক খুশি।

—-

সানাহ্কে আসতে বলে এখন নিজেই দেরী করে ফেলেছে ফারহান। সানাহ্ এসে ধানমন্ডি লেকের পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে আশেপাশের সমস্ত দৃশ্য দেখতে আরও ভালো লাগে। ফারহান একটু আগেই ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়েছে সে রাস্তায় জ্যামে আটকে গেছে। এখন সানার কাছে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

প্রেমিক আসার কথা জানিয়ে আসতে দেরী করলে প্রেমিকার অপেক্ষা করার ব্যাপারটা জনম জনম ধরে চলছে। কিন্তু ওদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। ওরা প্রেমিক প্রেমিকা নয়, স্বামী স্ত্রী। তবে প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্কের চেয়ে স্বামী স্ত্রীয়ের সম্পর্ক পবিত্র।

সানাহ্ এবার খানিকটা হেঁটে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে। লেকের এক বাদামওয়ালার কাছ থেকে বাদাম কিনেছিল। এখন সেটাই খাচ্ছে। বাদামের খোসা ছাড়িয়ে বাদাম খাওয়া তার জন্য এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার। সে হাত দিয়ে খোসা ছাড়াতে পারে না। দুই দাতের মাঝে রেখে হালকা চাপ দিয়ে খোসা ছাড়ায়।

মিনিট দশেকের মধ্যে ফারহান হাজির। সানাহ্ লক্ষ্য করলো এতক্ষণ জ্যামে আটকে থেকে ফারহানের ফর্সা মুখ রক্তিম হয়ে উঠেছে। পড়ন্ত বিকেলের সোনালী রোদ্দুর ফারহানের ঘর্মাক্ত মুখে আছড়ে পড়ে চিকচিক করছে। সানাহ্ সেইদিকে একবার তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। সুন্দর জিনিসের দিকে বেশি নজর দিতে নেই। নাহলে নজর লেগে যায়।

ফারহান এসেই ধপ করে বসে পড়লো সানার পাশে। তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। সানাহ্ ফারহানের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ফারহানের ঘর্মাক্ত মুখের সব ঘাম মুছে দিতে লাগলো। ফারহান প্রেয়সীর এই আদর মাখা যত্ন স্মিত হেসে অনুভব করছে। তবে তার এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী রইলো না। হঠাৎই তার কানে ভেসে এলো কিছু অযাচিত কথা।

‘ আজকাল টাকা থাকলে কত কিছুই না হয়। বুইড়া ব্যাটারে আজকালকার মেয়েরা প্রেমিকও বানায়। হায় কপাল… আজকের এই দুনিয়ায় আর কত রঙ্গ দেখতে হবে কে জানে। ‘

‘ আসলেই এই মেয়েগুলো যে কি। এদের জন্যই এখনকার ছেলেরা সিঙ্গেল ঘুরছে। জোয়ান ছেলেদের রেখে বুড়োদের ধরেছে। ‘

ফারহান লক্ষ্য করলো কথাগুলো সানাহ্ও শুনেছে কিন্তু সে কোনো প্রতিবাদ না করে আপনমনে কাজ করে চলেছে। তার চোখ জোড়া ফারহানের মাঝেই নিবদ্ধ যেন জগৎ সংসার ভুলে বসে আছে। তবে সানার এমন না শোনার ভান ফারহান ঠিকই ধরতে পেরেছে আর এতে ফারহানের বেশ খারাপও লাগলো। সানার নীরবতা যেন বুঝিয়ে দিল সানাহ্ কথাগুলোতে নীরবে সম্মতি দিয়েছে।

ফারহান আড়চোখে কথাগুলো যেই মানুষটা বললো তার দিকে নজর দিল। ওদের পাশে একটা বেঞ্চ আছে। সেই বেঞ্চেই দুটো ছেলে মেয়ে বসে আছে। মেয়েটাই কথাগুলো বলেছে আর ছেলেটাও তাল মিলিয়েছে। ফারহান এটাও লক্ষ্য করলো ছেলেটার পরনে ছেড়াফাড়া জিন্স আর গলায় কিসব লকেট।
ফারহান এবার সানার দিকে তাকিয়ে বললো ‘ ওই মেয়েটা তোমার হাজবেন্ডকে এতকিছু বললো… তুমি কিছু বললে না ? ‘

ফারহানের কথার জবাবে সানাহ্ আঁচল ঝেড়ে সোজা হয়ে দাড়াল আর বললো ‘ কথা তো ভুল কিছু বলেনি। আপনি তো আর ২৫ বছরের তাগড়া জোয়ান নন। আপনি আসলেই বুড়ো। ‘

সানার বলা গম্ভীর কথাগুলো ফারহানের বুকে শেলের মতো বিধলো। কথাগুলো শুনে কেন যেন বুকে চিনচিন ব্যথা উঠেছে। ফারহানের সানগ্লাসের কাচ উষ্ণ হয়ে উঠেছে। ফারহান খানিকটা সরে বসলো এবার। কিন্তু সানার সেই দিকে নজর নেই। সে এবার এগিয়ে গেলো ছেলে মেয়ে দুটোর দিকে যারা ফারহানকে নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল।

সানাহ্কে সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ছেলে মেয়ে দুটো ভ্রু কুচকে তাকালো। সানাহ্ এবার গলা খাকারি দিয়ে মেয়েটাকে বললো ‘ আমি নাহয় বুড়োকে ধরেছি কিন্তু তুমি তো প্রেম করছো। তা প্রেম করছো আর এটা জানো না তোমার প্রেমিক সেকেন্ডে দুশোবার আমার দিকে নজর দিচ্ছে ? আমার হাসব্যান্ড অন্তত পরস্ত্রী এর দিকে নজর দেয়নি। তাহলে আমার বুড়ো বর নিশ্চই তোমার জোয়ান তাগড়া প্রেমিকের থেকে ভালো তাইনা ? ‘

কথাগুলো বলে সানাহ্ আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না সেই জায়গায়। এমনিতেই এসব লোকেদের সঙ্গে কথা বলতে তার রুচিতে বাঁধে। সে শুধু তার দায়িত্ব পালন করেছে। সানাহ্ আর কোনদিকে নজর না দিয়ে সোজা ফারহানের দিকে এগিয়ে গেলো। নজর দিলে হয়তো দেখতে পেত পিছনে দুটো বিস্ময় জাগানো চোখ আর দুটো ক্রোধ মেশানো চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে।

ফারহান সানার মুখ থেকে এই কথাগুলো শুনে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ওর যেন বিশ্বাস হচ্ছে না সানাহ্ ওর হয়ে প্রতিবাদ করেছে। অন্তত সানার কিছুক্ষণ আগে করা ব্যবহার তো অন্য কিছু বলে। সানাহ্ এবার ফারহানের পাশে এসে বসলো। একটু ফারহানের গা ঘেঁষেও বসলো। তারপর ব্যাগ থেকে খোসাওয়ালা বাদাম ফারহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ‘ মুখটা বন্ধ করুন নাহলে মাছি ঢুকে যাবে। ‘

সানার কথায় ঢোক গিলে নিজেকে সামলে নিলো ফারহান। সানার কাছ থেকে বাদাম নিয়ে বললো ‘ একটু আগে ওই মেয়ের কথা শুনে আমাকে বুড়ো বলে এখন নিজেই মেয়েটাকে কথা শুনিয়ে এলে ? ব্যাপারটা হজম হলো না। ‘

‘ কথাগুলো মেয়েটা ঠিকও বলেছে আবার ঠিক বলেও নি। আপনি যে বুড়ো সেই ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি যে টাকার জন্য আপনাকে প্রেমিক বানিয়েছি তাতে ঘোরতর সন্দেহ আছে আমার।
আই মিন সিরিয়াসলি! আমার কি টাকার অভাব পড়েছে যে এভাবে প্রেমিক বানাবো। তাছাড়া জীবনে এগোতে হলে একজন লাইফ পার্টনারের দরকার মানি পার্টনারের নয়। আমি লাইফলং প্রমিসে বিশ্বাসী। ক্ষনিকের মোহের প্রেমে আমি পড়িনা। আমার তাগড়া জোয়ান প্রেমিকের দরকার নেই। আমার জন্য বুড়ো বরই ঠিক আছে। ‘

কথাগুলো বলেই ফারহানের খোসা ছাড়ানো বাদামটা ফারহানের হাত থেকে নিয়ে নিজে খেয়ে নিলো সানাহ্। ফারহান সানার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না স্বল্পভাষী সানার কাছে সে এতটা মূল্যবান। হাস্যোজ্বল সানার মুখটা যেন কনে দেখা আলোয় আরও ঝলমল করছে। ফারহান সেই দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

অথচ এতকিছু কি আদৌ তার পাওনা ছিল ? সে সানার মতো অত বড় ধনী পরিবারে বড় হয়নি। তাদের স্বচ্ছলতা আছে কিন্তু সেটা সানাহ্দের তুলনায় কিছুই না। সানাহ্ নিঃসন্দেহে তার মতো আরও দশটা ফারহানকে চোখের এক ইশারায় কিনে নিতে পারবে। অথচ এই মেয়েটাই নাকি এক প্রকার হেসে খেলে ওকে নাচতে নাচতে বিয়ে করে নিয়েছে।

ফারহান জানে তার ভালোবাসা হয়তো সানাহ্কে মানসিক শান্তি দিবে কিন্তু শারীরিক শান্তি! তার কি হবে ? চিরকাল ঐশ্বর্যে বড় হওয়া সানাহ্ কি পারবে তাদের উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে মানিয়ে নিতে ? ফারহান পারবে তো তাকে চাকচিক্যের শারীরিক তৃপ্তি দিতে ?
সানাহ্ ফারহানের পাশে বসেই বাদাম খেতে ব্যস্ত ছিল।

কি মনে করে ফারহানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ফারহানের চোখ মুখের ভাব দেখে ব্যাপারটা খানিক আন্দাজ করে বললো ‘ এত দ্বিধা দ্বন্ধে থাকলে কি করে হবে ? জীবনকে তার নিজ হাতে ছেড়ে দিন। নিজের মতো বাঁচতে শিখুন আর ইনজয় করতে শিখুন। ‘

ফারহান সানার কথায় মৃদু হাসলো। এই মেয়েটার কথা তার মাঝে মাঝে খুব ভালো লাগে। অল্প কথায় মূল্যবান কথা তুলে ধরে সবার সামনে। ফারহান এবার নিজের মনে থাকা দ্বিধা দ্বন্ধকে এক পাশে সরিয়ে রেখে সময়গুলো সানার সঙ্গে উপভোগ করাতে মন দিল।
তার মনে হলো তার জীবনের পরম প্রাপ্তি হলো এই স্বল্পভাষী, স্বল্পহাসি মেয়েটা যে ওকে প্রাণাধিক ভালোবাসে। এই মেয়েটা কিন্তু সহজে হাসে না তবুও ফারহান তার না হাসার কারণেই তার প্রেমে পড়েছে। মেয়েটা সবসময় না হাসলেও যখন হাসে তখন যেন তার সঙ্গে সঙ্গে ভুবনও হাসে। পুরো জগৎ সংসার মেতে উঠে নাম না জানা খুশিতে।

ফারহান চায় এই মেয়েটাকেই সে তার সারাজীবনের পুঁজি করে সঙ্গে রাখতে যাতে মন খারাপের দিনও সানাহ্কে দেখে তার মন ভালো হয়ে যায়। ফারহান চায় সানার সঙ্গে তার স্বপ্ন সংসার সাজাতে তাইতো সে সানার হাতে হাত রেখে অস্তমান সূর্যের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,

ও আলো তুমি সুন্দর হয়ে এসো,
প্রিয়ার মুখে প্রকাশ হয়ে প্রেমের সূধা ঢালো।
ও রং তুমি প্রেমময় হয়ে এসো,
প্রিয়ার হৃদয় রাঙিয়ে আমায় বাসো ভালো।

গোধূলির এ রঙিন আলোয়
প্রিয়া আছে আমি আছি,
হৃদয় উজার করে আজ
ভালোবাসি ভালোবাসি….
~ কর্মকার অনুপ কুমার

—-

‘ কি ব্যাপার মিসেস অতসী ? এখানে একা কেন ? জলজ্যান্ত আমি থাকতে তুমি একা এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। সো স্যাড…. ‘ ঠোঁটে শিস তুলে অতসীর পাশে এসে দাড়িয়ে বললো প্রণয়।

আচমকা প্রণয়ের আগমনে আর কথাবার্তায় চমকে উঠলো অতসী। লাফিয়ে দূরে সরে গিয়ে বুকে হাত রেখে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে প্রণয়ের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি দিলো। প্রণয় তার এহেন ভাবসাব দেখে অবাক হওয়ার ভান ধরে বললো ‘ আমার সঙ্গে এত হাই লেভেলের কনস্পেরেসি করে নিজেই এখন রাগ দেখাচ্ছো ? অথচ রাগটা আমার দেখানো উচিত তাইনা ? ‘

অতর্কিতে প্রণয়ের আগমনে ঘাবড়ে গিয়ে রেগে গেলেও এবার রাগটা ভয়ে পরিণত হলো। সচকিত গলায় অতসী বললো ‘ মা… মানে ? ‘

‘ যাকে তাকে ধরে এনে মিস ইন্ডিয়া বলে ধরিয়ে দিবে আর আমিও বিশ্বাস করে নিবো মনে করেছো ? সবার চোখ ফাঁকি দেওয়া গেলেও প্রণয় ইফতেজারের চোখ ফাঁকি দেওয়া যায় না। প্রণয় তার অধিকারে হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না। যেটা তার সেটা সে ছিনিয়েও নিতে জানে। ‘

প্রণয়ের কথা শুনে স্বাভাবিক ভাবেই দাড়িয়ে রইলো অতসী। তার বোঝা হয়ে গেছে প্রণয় সব জেনে গেছে। আর জেনে যাওয়ার পর আবার অস্বীকার করা মূর্খামি ছাড়া কিছুই না। তাই সে শান্ত গলায় বললো ‘ আপনার কি মনে হয় আমি আদতে কখনও আপনার ছিলাম ? ‘

‘ তুমি আমার কিনা জানিনা তবে মিস ইন্ডিয়া যে মিস্টার অপরিচিতরই ছিল সেটা আমার জানা। মিস্টার অপরিচিত কিন্তু তার অধিকার ছেড়ে দেয় না। এখন এতদিন আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা আর আমাকে এভাবে ঘুরানোর শাস্তি এখন পাবে নাকি বিয়ের পর পাবে সেটা ভেবে দেখার বিষয়। ‘

প্রণয়ের কথায় উত্তর দিলো না অতসী। মুখ গোজ করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। সূর্যের শেষ চিকন লালাভ রশ্মি দেখা যাচ্ছে। সময়টা গৌধূলির। সূর্য তার আপন মহিমায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে ডুবে যাচ্ছে। হঠাৎ কানের কাছে প্রণয়ের ফিসফিস কন্ঠে শুনতে পেলো ‘ খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। এইবার আর আমায় তাড়াতে পারবে না তুমি মিস ইন্ডিয়া। ‘

অতসী কিছু বললো না। তার ঠোটে খেলে গেছে এক স্নিগ্ধ হাসি। হয়তো সে চেয়েছিল প্রণয়ের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে কিন্তু হৃদয়ের সম্পর্ক কি ছিন্ন করা যায় ? আত্মার সম্পর্ক কি ছিন্ন করা যায় ? এবার নাহয় খানিকটা স্বার্থপরই হবে। উঠুক তাদের সম্পর্কে প্রশ্ন… ভালোবাসা যদি অপরাধ হয় তাহলে সে সেই অপরাধ করতে রাজি। তবুও ছাড়বে না নিজের ভালোবাসাকে।

স্টুডেন্ট হয়ে যদি প্রফেসরকে ভালোবাসা অপরাধ হয় তবে ভালোবাসার উপর থেকে হয়তো অনেকেরই বিশ্বাস উঠে যেত। হয়তো ওদের সম্পর্কে হাজার প্রশ্ন উঠবে কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর তারা দুজনে মিলে দিবে। ভালোবাসা এমনই। কাউকে নতুন করে বাঁচতে শিখায় আবার কাউকে সবসময়ের জন্য ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
অতসী এতকিছুর পর প্রণয়কে আর হারাতে চায় না। তাই সে বললো ‘ আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য। একদিন,দুইদিন,তিনদিন কিংবা হাজারদিন। আমার আপনার কাছ থেকে কিছু চাইনা। শুধু আমার জীবনে এক চিলতে প্রেমমানিশা হয়ে থাকবেন। আমার জন্য তাই যথেষ্ট। ‘

বিনিময়ে প্রণয় কিছু বললো না। এগিয়ে এসে অতসীর ডান হাতটা নিজের বাম হাতের মুঠোয় নিয়ে গৌধুলি পানে চেয়ে রইলো। অস্ফুট স্বরে বলল,
কোনো এক গোধূলি বেলায়
স্নিগ্ধ হাওয়ায়
সূর্যের মত একটু হেলে
দিগন্তে মুখখানি আড়াল করে
চেয়ে থাকবো তোমায়….।

আকাশের পানে চেয়ে দেখো
কত না সুন্দর আকাশের নীলিমা!
সে-ই নীলিমায়
হারিয়ে যাবো তোমায় নিয়ে
যাবো বহু দূর
কেউ পাবেনা খুঁজে।

অহ! ভুলেই তো গিয়েছি
গোধূলি বেলায় শুধু কি চেয়ে
থাকবো তোমায়?না,
তোমায় ছুঁয়ে দিবো
পরশ-পাথর হয়ে থাকতে চাই বলে,
তোমাকে দিয়ে স্বপ্ন বোনাবো
সে-ই স্বপ্ন পূরণের সারথি হবো বলে…।

~ সাখাওয়াত হোসাইন ফরহাদ

~ সমাপ্ত….