প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব-৫০+৫১+৫২

0
308

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫০

জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল সকলে। কালো ফ্যাকাশে সেই মুকুট ঐশ্বর্যের স্পর্শে যেন প্রাণ পেল। অদ্ভুত এক রশ্মি তরান্বিত হতে থাকলো। সকলের চোখ ধাঁধিয়ে গেল। ঐশ্বর্যের দিকে কেউ চোখ রাখতে পারল না। পাশে দাঁড়ানো অরুণের চোখ যেন ঝ’লসে যাবার উপক্রম! রশ্মির তীব্রতা ক্রমাগত বেড়ে উঠছে। সকলে চোখ বন্ধ করে নিল। আর তাকিয়ে থাকা সম্ভব নয়। ঐশ্বর্য ঠাঁই দাঁড়িয়ে সকলের প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকলো। সে নির্দ্বিধায় তাকিয়ে! যখন রশ্মির তেজ কমলো আস্তে আস্তে সকলকে চোখ খুলতে দেখা গেল। তবে ঐশ্বর্যের বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে যে ডেভিল কুইনের অভিষেকের সময় কি এমনটাই হয় সবসময়? এতটাই তীব্র আলো ছড়ায় বুঝি? নাকি অন্য কিছুর সংকেত!

আবারও সকলের জয়ধ্বনিতে চকিতে তাকালো ঐশ্বর্য। ভাবনা সুতো ছিঁড়ে গেল সেই মূহুর্তে। রোজি সহ সকলে একইভাবে বলে উঠল,
“জয় হক ডেভিল কুইনের। জয় হক!”

কথাটা শুধু বলল না অরুণ। সে শুধু একধ্যানে ঐশ্বর্যকে দেখে চলেছে। কখনো কখনো সকলের ধ্বনিতে হেসে উঠছে। যেন তারও কি আনন্দ! ঐশ্বর্যও সকলের এই জয়ের ধ্বনির জবাবে বাঁকা হেসে উত্তর দিল,
“জয় তো হবেই। আমার জয় নিশ্চিত!”

“ঠিকই বলেছো। তোমার জয় নিশ্চিত হবে না তো কার জয় নিশ্চিত হবে? এই রাজ্যের রাণী সাহেবা তুমি। ক্ষমতা, শয়’তানি শক্তি পরিপূর্ণ রয়েছে তোমার মাঝে। আর আগুনের স্ফূলিঙ্গের মতো ক্রোধ আর সীমাহীন জেদ তোমাকে জয়ী করবেই। আমাদের মহাশত্রু ভ্যাম্পায়ার কিংডমের কেউ ছাড় পাবে না তোমার এই ক্রোধের বি’ষে। তাদের সময় ফুরিয়ে এসেছে।”

অরুণের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে নেয় ঐশ্বর্য। হাসিটা আরো রহস্যময় হয়ে ওঠে। তার কোঁকড়ানো ছড়িয়ে রাখা চুলগুলো পিছনের দিকে সরিয়ে দিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলে ওঠে,
“হ্যাঁ। মহাশত্রুর সময় ফুরিয়ে এসেছে। শুধু রাগ আর জেদ নয়। আমার মাঝে আছে সেই আত্মবিশ্বাস যেটা দ্বারা আমি আজকে জিতব।”

ঐশ্বর্যের কথা শুনে সকলের টনক নড়ল। কিছুক্ষণ নিরব হলো। এখন গভীর রাত। এই রাতটা তাদের উৎসবের। কিন্তু ঐশ্বর্য কি করতে চাইছে? রোজি আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল,
“কুইন, আজকে জিতবেন মানে ঠিক বুঝলাম না। আপনি আজকেই…!”

কথার মাঝপথে তাকে থামানো হলো। ঐশ্বর্য কন্ঠে ঝাঁঝ এনে বলল,
“হ্যাঁ আজকেই। যেহেতু আজকে একটা বিশেষ রাত। এই ডেভিল কিংডমের জন্য উৎসবের রাত তাহলে উৎসব আরো জমকালো করতে আজকেই আক্র’মণ করতে ক্ষতি কোথায়?”

রোজি কিছু বলতে চাইলেও তাকে বলতে দেওয়া হলো না। অরুণ তাকে ইশারায় থামিয়ে দিল হাত নাড়িয়ে। আর নিজে সম্মতি জানিয়ে বলল,
“ঠিকই বলেছে ডেভিল কুইন। শুভ কাজে দেরি কিসের? আর কি নেই আমাদের? শক্তি, ক্ষমতা, বাহিনী। আর সবথেকে বড় হচ্ছে কুইন ঐশ্বর্য। সে তো একাই এই ধ্বং’সলীলা করতে যথেষ্ট। রোজি, আর দেরি নয়। আজকেই হবে সব কিছুর হিসাবনিকাশ। আজকেই গুনে গুনে সব যন্ত্রণা আর দুঃখ ফেরত পাবে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের প্রত্যেকে। বিশেষত ভ্যাম্পায়ার কুইন মাধুর্য!”

‘মাধুর্য’ নামটি শুনতেই মস্তিষ্কের শিরায় যেন বিদ্যুৎ উপলব্ধি করে সেই কালো রঙের মুকুট পরিহিত ঐশ্বর্য। তার সরু দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় অরুণের দিকে। অরুণ একটু থেমে বলে ওঠে,
“প্রায় পনেরো বছর ধরে তপস্যা, চিকিৎসা আর শক্তির আদানপ্রদান করার পর তবেই মৃ’তপ্রায় থেকে জীবিত হতে পেরেছি। তবুও হাঁটতে পারি না ঠিকমতো। কষ্ট করে হাঁটি। দুচোখে ঘোলা দেখি। ওই অনুভব আমার দুচোখে এমন আঘাত করেছিল যেন আমার চোখদুটো থেঁত’লে দিয়েছিল। বুকে এখনো ক্ষ’তের সেই গভীর চিহ্ন। চিনচিন করে ব্যথা করে। এই ব্যথা শুধু ক্ষ’তের জন্য নয়, প্রতিশোধেরও।”

রোজি বড় শ্বাস নিয়ে অরুণের কথার মাঝখানে বলে উঠল,
“এসব নিজের কষ্টের কথা বলে নিজের কষ্ট বাড়িয়ে লাভ নেই ওয়ারওল্ফ কিং অরুণ। এবারের সময় আর দাবার প্রতিটা গুটি আমাদের। তাহলে এসব বলে আফসোস করে কি লাভ আছে?”

বলে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে উঠল সে। অরুণও তার কথায় তাল মিলিয়ে বলে উঠল,
“হুমম ঠিক বলেছো। যাও ঐশ্বর্যের প্রধান অস্ত্র অগ্নি তলো’য়ার যেটা রাণীর স্পর্শের অভাবে প্রাণহীন হয়ে রয়েছে সেটাকেও সজীব করে তোলো।”

রোজি মাথা নাড়ায়। ঐশ্বর্য একবার রোজির পানে তাকায় একবার অরুণের পানে। অগ্নি তলো’য়ার? এ কেমন অ’স্ত্র? জানার ও দেখার তীব্র ইচ্ছা জন্মালো ঐশ্বর্যের মনে। রোজি তার বাবার থেকে একটা বড় চাবির গোছা নিয়ে নিল। এরপর ঐশ্বর্যের উদ্দেশ্যে মাথা নুইয়ে বলল,
“আসুন। আপনাকে নিয়ে যেতে চাই সেখানে। যেখানে তুলে রাখা আছে রাণীর প্রধান অ’স্ত্র। যা দ্বারা পরাজিত হতে বাধ্য অধিক শক্তিশালী যে কেউ। হক সে ভ্যাম্পায়ার বা অন্যকেউ। আপনার ছোঁয়ায় আগের মতো করে তুলুন। যার তীব্র ধার এবং মারাত্মক বি’ষ প্রা’ণ শুষে নিতে পারবে।”

ঐশ্বর্য সেখানে যাবার জন্য পা বাড়ালো। সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগলো অরুণ নিজেও। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে সে কিছুটা কষ্ট করে হাঁটছে। ঐশ্বর্য তা লক্ষ্য করলেও কিছু বলল না তৎক্ষনাৎ। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে প্রসাদের এক কোণার রাস্তায় এসে পৌঁছালো তারা। যেখানে কঠিন পাহাড়া। এটা হচ্ছে প্রাসাদের নিষিদ্ধ স্থান। যেখানে ঐশ্বর্য আগেও এসেছিল তবে ঘুরে চলে গিয়েছে রোজির কথায়। এখানে নাকি তার জন্যই চমক রয়েছে যা খোলাসা হতো এইদিন। তাই ঐশ্বর্য অপেক্ষায় রয়েছে। কি সেই অ’স্ত্র?

পথ হেঁটে অবশেষে এক বড় দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো তিনজন। রোজি চাবি দ্বারা তালা খুলতে আরম্ভ করল। একটা দরজাতেই তিনটা তালা। এমন পাহারা আর নিরাপত্তা দেখে এবার ঐশ্বর্যের কৌতূহল বাড়লো! নিশ্চয় এটা সাধারণ কিছু নয়। এরই মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে ঐশ্বর্য অরুণের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
“তা আপনার মতো ম’রে যাবার কথা! আমি রোজির কাছে শুনেছিলাম ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স অনুভবের হাতে নাকি আপনার খুব জঘন্য মৃ’ত্যু হয়েছিল। তাও তার স্ত্রীর দিকে চোখ দেওয়ার অপরাধে? তাও বেঁচে রইলেন যে? জানতে খুব ইচ্ছে করছে।”

অরুণ আয়েশি ভঙ্গিতে বলল,
“অবশ্যই। তুমি তো এখন আমার নিজেরই মানুষ। তোমাকে তো সবটা বলতেই হবে। কারণ আমার হয়ে তোমাকেই শোধ তুলতে হবে। আমি সেদিন মৃ’ত্যুযাত্রী ছিলাম ঠিকই। কিন্তু রিমেম্বার, আমি মানুষ নই আমি ওয়ারওল্ফ। যার মৃ’ত্যু এতোটা সহজ। কৈ মাছের মতো প্রাণ আমাদের। সেদিন অনুভব আমাকে সেই র’ক্তাক্ত করে ফেলে রেখে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ওরা আমার মৃ’তদেহ পায়নি সেদিন। ওদের এমন ব্যস্ততার সুযোগে রোজির বাবা আসে আর আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। কিন্তু আমার দে’হ নিয়ে ওরা মাথা ঘামায় নি বলে বিষয়টা সহজ হয়। তারপর থেকে পনেরো বছর ধরে আমাকে ঠিক করার চেষ্টা চলছিল। কারণ ডেভিল আর ওয়ারওল্ফের সখ্যতা অনেক পুরোনো। শুধুমাত্র মাধুর্যের দিকে নিজের দৃষ্টি দেওয়ার কারণে অনুভব আমার সাথে যা করেছে তা ভোলার মতো নয়। গুনে গুনে সব যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে তাদের।”

ঐশ্বর্য অরুণের কথায় মনোনিবেশ করেছিল। কিন্তু তাদের দুজনের কথোপকথন বন্ধ হয় রোজির কথায়। প্রথম দরজা খুলে যায়। তারপর তারা দরজা পেরিয়ে কিছু দূর হেঁটে আসে। তারপর সামনে দাঁড়িয়ে পরে আবারও আরেক দরজা। হা হয়ে যায় ঐশ্বর্য। আনমনে প্রশ্ন করে ওঠে,
“আর কয়টা দরজা রয়েছে?”

রোজি হেঁসে জবাব দেয়,
“এটা খুলতে পারলে আরো একটা।”

এই বলে সেখানকার তালাও খুলে দেয় রোজি। পরপর তিনটা তালা খোলার পর উপস্থিত হয় একটা কক্ষ। যদি সঠিকভাবে বলা হয় কক্ষটি আয়না কক্ষ। চার শুধু আয়নায় প্রতিবিম্ব তৈরি করেছে তিনজনের। এতো প্রতিবিম্বতে মাথা গুলিয়ে উঠছে ঐশ্বর্যের। তখনি কক্ষের ঠিক মাঝখানে রাখা এক কালো রঙ্গের খাপে মুড়ানো একটা তলো’য়ার। কেউ কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য এগোয়। এগিয়ে কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে দেয় সেই তলো’য়ারের দিকে। ঘাম ছুটে যাচ্ছে। দুরুদুরু বুকে যখন তলো’য়ার ছুঁয়ে নিমিষে আবরণ থেকে তলো’য়ার বের করল তখন সেটির বিকট শব্দে ভেঙে গেল আয়না। ফাটল ধরে চৌচির হলো সমস্ত আয়না। ঐশ্বর্য গোল গোল আঁখি দুটো রাখলো ধারালো তলো’য়ারের দিকে। রোজি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
“সেই তলো’য়ার নিজের সজীবতা শক্তি ফিরে পেয়েছে আপনার সংস্পর্শে।”

ঐশ্বর্য দেখলো তলো’য়ার চকচক করছে। আস্তে করে ঘুরালো সেটা। কৌশলে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
“তা নিয়ে দেখছি তোমার খুব আনন্দ!”

“আসলেই তাই কুইন। তা এই অ’স্ত্রের স্বীকার সর্বপ্রথম কাকে করতে চান?”

হাসিমুখে জিজ্ঞেস করল রোজি। অরুণ নিরবভাবে হালকা হেঁসে দাঁড়িয়ে। সে এতোদিন প্রাণপণে চেয়েছিল যেই মাধুর্যের নিজের ভ্যাম্পায়ার জগত তার শৃঙ্খলা নিয়ে এতো গর্ব তা ছিন্ন করতে। আর সেটা তারই মেয়ে করবে এটা তার কাছে স্বপ্ন। এখন শুধু সে দেখতে চায় তাদের মৃ’ত্যু সচক্ষে।

ঐশ্বর্য কৌশলে তলো’য়ার চালনা করতে করতে রোজির কথার হাসিমুখে জবাব দিল,
“দ্যা ডেভিল রোজি! সে-ই হবে এই মারাত্মক অগ্নি তলো’য়ারের প্রথম স্বীকার।”

রোজি এতোক্ষণ শব্দ করে হাসছিল। হাসি টিকলো না বেশিক্ষণ। হেঁচকি উঠে গেল। হাসি বিলীন হলো আতঙ্কিত চোখেমুখে তাকিয়ে আবারও হাসিমুখে বলল,
“আপনিও না! মজা করছেন? অবশ্য এই সময়টাই তো মজার।”

অরুণ এবার মুখ খুলল। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“অবশেষে আমার মনোবাসনা পূরণ হচ্ছে। মাধুর্যের তৈরি করা শৃঙ্খলার বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে কেউ। তার দয়ামায়ার শরীরে দাগা দিচ্ছে কেউ! এতো চরম আনন্দের সময়।”

ঐশ্বর্য অরুণের কথায় পাত্তা দিল না। সে রোজির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আর ভারি গলায় বলল,
“মজা আমি করছি না রোজি। আর ইউ রেডি?”

রোজি হাসতে হাসতে থামারও সুযোগ পেল না। আচানক তার পেট এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়ে গেল সেই ধারালো তলো’য়ারের। চিৎকার দেওয়ার মতো জ্ঞানও হারালো সে। চোখমুখ খিঁচে ফেলল। আকস্মিক ঘটনায় পিছিয়ে গেল অরুণ। ঐশ্বর্যের নেত্রযুগল ক্রমাগত হতে থাকলো সবুজ বর্ণ। সেই নেত্র দ্বারা অরুণের দিকে তাকিয়ে সে তলো’য়ারটা রোজির পেটে ধরেই বলে উঠল,
“একেই বলে যার ফাঁদে সে-ই পড়া। মিথ্যের বদলে মিথ্যে আর মৃ’ত্যুর বদলে মৃ’ত্যু।”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫১

“এ…তুমি কি করছো? রোজিকে আঘা’ত করছো কেন? পাগল হয়ে গিয়েছো? বন্ধ করো এভাবে তলো’য়ার দিয়ে আঘা’ত করা।”

কন্ঠে কাঁপুনি। চোখে ভয়। মুখটা ফ্যাকাশে। তবুও অরুণের ঐশ্বর্যকে থামাতে বৃথা চেষ্টা। অন্যদিকে রোজির পেটে চালান করে দেওয়া তলো’য়ার ধরে এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে ঐশ্বর্য। তার ক্রোধিত দৃষ্টি অরুণের দিকে স্থির। অরুণ বুঝল মেয়েটা তার এই কথায় মানবে না। সে দুই পা পিছিয়ে গেল। আর ক্রমাগত বলতে থাকল,
“তুমি এই রাজ্যের রাণী। তুমি কি ভুলে গেছো? মনে করে দেখো। তোমার মাথায় এখনো সেই ডেভিল মুকুট। তোমার দায়িত্ব ডেভিলদের রক্ষা করা। আমরা তোমার শত্রু নয়। ম…মনে করার চে…চেষ্টা করো ঐশ্বর্য।”

শেষ কথাগুলো দলা পাকিয়ে গেল অরুণের। ঐশ্বর্যের সবুজ রঙের চোখের সাথে মেশানো রাগ আর জেদ অন্যকিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে। ডেভিলদের চোখের রঙ তো এমন সবুজ হয় না। এটা তো ভ্যাম্পায়ারদের প্রতীক! তবে কি হচ্ছে টা কি? এরই মধ্যে তলো’য়ারটা নিজের শক্তি দিয়ে রোজির পেট থেকে বের করে নিতেই যেন রোজির চোখ উল্টে উঠল। প্রা’ণ যেন বেরিয়ে এলো। মুখ দিয়ে বিকট শব্দ করে উঠল। এই শব্দে, এই আর্তনাদে শুধু যন্ত্রণার কাতরানি। তলো’য়ারটা সোজা করে ধরে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিল ঐশ্বর্য। র’ক্তে মাখানো সেই তলো’য়ার থেকে টপটপ করে পড়ছে র’ক্তের প্রতিটা ফোঁটা। সেই র’ক্তের তাপে পুড়ে কালো হয়ে যাচ্ছে কক্ষের মেঝে। কারণ এটা যে ডেভিলদের র’ক্ত। ঐশ্বর্য ফট করে নিজের বৃদ্ধ আঙ্গুল নিয়ে তলো’য়ার ঘষে আঙ্গুলে ভরিয়ে নিল র’ক্ত। বেরিয়ে এলো তার চিকন আর কালো ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে দুটো তীক্ষ্ণ দাঁত। র’ক্ত তাকে আকর্ষণ করছে। তার লাল জিহ্বা বের করে র’ক্তে মুখ লাগাতে গিয়েও থেমে গেল সে। আ’হত রোজির দিকে তাকালো। রোজি তখন ব্যথায় হাঁটু গেঁড়ে বসেছে। হাত দিয়ে চেপে ধরেছে নিজের পেট। চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে লাল বর্ণের সেই তরল পদার্থ। ঐশ্বর্য তার উদ্দেশ্যে এগোতে এগোতে হিংস্র কন্ঠে বলে ওঠে,
“এই র’ক্ত পান করতে তো পারব না। এতেও ভ্যাম্পায়ার বংশের পাপ। কেমন লাগছে রোজি? সর্বপ্রথম এই অ’স্ত্রের স্বীকার হয়ে? ফিলিং হ্যাপি ওর নট?”

রোজি বলার মতো অবস্থাতেই নেই। অথচ ঐশ্বর্য পাগলের মতো প্রশ্ন করছে। তবুও ছটফট করতে করতে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“আ…আপনি এমন… ”

কথা সম্পূর্ণ হলো না। মুখ দিয়ে আর বের হলো না। তৎক্ষনাৎ ঐশ্বর্যকে পেছন থেকে চেপে ধরা হলো। একহাতে গলা, অন্যহাতে মুখ। ঐশ্বর্য ছটফটিয়ে উঠল। তলো’য়ার হাতে নিয়ে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করল। তার বুঝতে দেরি হলো না তাকে আক্র’মণ করেছে অরুণ। অরুণ পেছন থেকে কৌশলে এবার ঐশ্বর্যের মুখ থেকে তলো’য়ার নিয়ে থাকা হাতের ওপর হাত রাখলো। তাকে ঘুরিয়ে তলো’য়ার ছিনিয়ে নিতেই ঐশ্বর্য পা তুলে লা’থি মারল সোজাসুজি অরুণের বুকে। তলো’য়ার একদিকে ছিটকে পড়ল আর অরুণ অন্যদিকে। দেয়ালের সাথে ঠুকে গিয়ে নিচে পড়ে গেল সে। ঐশ্বর্য ঝড়ের বেগে তার দিকে এগিয়ে তার গলা ধরে টেনে তুলে কটমট করে বলে উঠল,
“গায়ে তো খুব একটা জোর নেই। আমার সাথে লাগতে আসাটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না। আর একটা কথা আমি এই রাজ্যের রাণী নই। হতেও চাই না। আমি ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস ঐশ্বর্য। আর ডেভিল সহ তোমাকে শে’ষ করাই আমার প্রধান কাজ এই মূহুর্তে। মাথায় যে সামান্য মুকুট পড়েছি সেটার পেছনে একমাত্র উদ্দেশ্য হলো এই অগ্নি তলো’য়ার যেটা দিয়ে যে কারো প্রা’ণ আমি অনায়াসেই নিতে পারব। এটাই ছিল আমার একমাত্র উদ্দেশ্য।”

“তু…তুমি এটা ঠিক করছো না ঐশ্বর্য। বেইমানি করছো এই রা…রাজ্যের সাথে। এই রাজ্য তোমাকে কুইন বানাতে চে…চেয়েছে আর তুমি?”

“এটাকে রাণী বানানো নয় অস্তিত্ব হরণ করা বলে। আমার অস্তিত্ব মিশিয়ে ফেলতে চেয়েছিলে তোমরা। আমাকে আমার পরিবার, আমার রাজ্যে আর সেই মানুষটার থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলে যার জন্য আমার পাগলামি, আমার অনুভূতি সীমাহীন।”

অরুণ চোখমুখ খিঁচে রাখা অবস্থায় খ্যাক করে হেঁসে উঠল। আর বলল,
“লাভ কি হলো? তোমার সেই ভালোবাসাকে তুমি নিজে পুড়ে ছাই বানিয়েছো। হেরেছে সেই সীমাহীন অনুভূতি!”

ঐশ্বর্যও বিপরীতে হাসে। অরুণকে ঘুরিয়ে ছিটকে ফেলে। শব্দ করে হেসে উঠে বলে,
“বোকা ওয়ারওল্ফ কিংডমের কিং। এখনো কিছুই বুঝতে পারো নি। হেরে গেলে আমি আমার নিজের অস্তিত্ব ফিরে পেতাম না।”

কথাটা শেষ হওয়া মাত্র অরুণের মুখ থেকে হাসি বিলীন হয়। তৎক্ষনাৎ নিজের বেগে দ্রুত গিয়ে হাতে তুলে নেয় সেই অগ্নি তলো’য়ার আর অরুণের দিকে তাকায়। অরুণ আধশোয়া হয়ে পিছাতে থাকে। ঐশ্বর্যও তার দিকে এগোতে এগোতে বলে,
“অনেক ক্ষমতা এই অ’স্ত্রের। বি’ষের চেয়েও বিষা’ক্ত। ধারালোর থেকেও তীক্ষ্ণ ধারালো। আর যন্ত্রণার চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক মৃ’ত্যু দিতে পারে এটা। তাই না?”

অরুণ ভয়ার্ত গলায় জবাব দেয়,
“না, না, না। আমাকে মা’রার কথা ভেবো না। আমি আবারও ম’রতে চাই না। ক্ষমা করো আমায়। তোমার দাস হয়ে থাকব আজীবন। আমাকে তবুও বাঁচিয়ে রাখো।”

কথা শেষে নিজের হাতজোড় করল অরুণ। ঐশ্বর্য তলো’য়ার ঘুরিয়ে বলল,
“এতোই সোজা নাকি সব? আমার রাজ্য আমার মা-বাবার ক্ষতি করতে চাইলে আমারই হাতে। আর তোমার সামান্য হাতজোড় করায় ছেড়ে দেব? মাধুর্য নমনীয় শান্ত স্বভাবের হতে পারে কিন্তু আমি মাধুর্য নই। আমি ঐশ্বর্য। যে খুব নিষ্ঠুর!”

ঐশ্বর্য এবার তলো’য়ার নিয়ে যেই না অরুণকে আঘাত করতে অরুণ সরে গিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। তার পায়ের কাছে পড়ে থাকা বেশ কয়েকটা কাঁচের টুকরো হাতে নিয়ে পরপর ছুঁড়ে মারল ঐশ্বর্যের দিকে। অতঃপর নিজের আসল রুপ ধারণ করল। রক্তিম বর্ণ ধারণ করল তার আঁখি দুটো। পরপর আ’ঘাতে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করেও পারল না ঐশ্বর্য। একটা কাঁচের টুকরো তার গাল ছুঁইয়ে চলে গেল। বাম গাল কাটলো গাঢ়ভাবে। র’ক্তের ফিনকি গড়িয়ে থুঁতনিতে এসে পড়ল। নিজেকে সামলানোর আগেই অরুণ তার পেছনে ধরে ঘাড়ে তার পশুর মতো বড়বড় দাঁত দ্বারা কামড়ে ধরল। চিৎকার দিয়ে উঠল ঐশ্বর্য। দাঁত বসে গেল তার ঘাড়ে। তবুও দমল না সে তলো’য়ার উল্টো করে করে তার সরু প্রান্ত দ্বারা সরাসরি অরুণের কপালে বসিয়ে দিল। গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে সরে গেল অরুণ। ঐশ্বর্য তার সামনে ঘুরে দাঁড়াল। সবুজ নেত্র দ্বারা আগুনের লাভা ঝরছে। হৃদয়ে দগদগে উত্তপ্ত আগ্নেয় ক্রোধ! অরুণের কপাল থেকে ঝরে পড়ছে র’ক্ত। এবার তলো’য়ার নিয়ে লাফিয়ে সামনে দাঁড়াল ঐশ্বর্য। হুংকার দিয়ে উঠে অরুণের বুক বরাবর ঢুকিয়ে দিল সেই তলো’য়ার। ঐশ্বর্যের হুংকার এবং অরুণের আর্তনাদ মিলে তৈরি হলো উদ্ভট শব্দ। কক্ষের প্রতিটা দেয়াল কেঁপে উঠল। মেঝেতে ঢলে পড়ল অরুণ। কেঁপে কেঁপে উঠে শুয়ে পড়ল। তলো’য়ার টা বুক চিরে বের করে নিয়ে এসে দম ফেলে বলল,
“প্রিন্স অনুভব তোকে পুরোপুরি মৃ’ত্যু দিতে পারেনি ঠিকই। মাধুর্যও তোকে শে’ষ করতে পারেনি ঠিকই। ঐশ্বর্য সেই কাজ সম্পূর্ণ করবে। ঐশ্বর্য হচ্ছে অনুভব আর মাধুর্যের প্রণয়ের মিলন। তাদের মিলন তোর ধ্বং’স করবে। শুধু এই কারণেই হয়ত আগের বার বেঁচে গিয়েছিলি। কিন্তু আমার আ’ঘাত তোকে ক্ষতবিক্ষত করবেই করবে।”

কথাটুকু শেষ হওয়ামাত্র তার অস্ত্র দ্বারা সরাসরি অরুণের ঘাড়ে কো’প মেরে বসে। ঘাড় থেকে আলাদা হয়ে যায় অরুণের মাথা। মাথাটা ছিটকে পড়ে রোজির আহ’ত শরীরের সামনে। আঁতকে ওঠে রোজি। সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। তলো’য়ারের বি’ষে তার চোখমুখ নীল হয়ে এসেছে। ঐশ্বর্য ধীর পায়ে এগিয়ে এসে রোজির সামনে বসে পড়ে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে,
“অগ্নি তলো’য়ার! এর চেয়ে ভয়ানক কোনো অ’স্ত্র নেই। এর শরীর জুড়ে যেমন বিষাক্ত বি’ষ। তেমনই এর আঘা’ত দেয় নরকযন্ত্রণা। আস্তে আস্তে তোমার পুরো শরীরে যখন বি’ষ ছড়িয়ে পড়বে তখন তোমার শরীরের ভেতরটা সেদ্ধ হয়ে যাবে।”

একটু থামে ঐশ্বর্য। অতঃপর আবার বলে ওঠে,
“তোমার প্রা’ণ কেঁড়ে নেওয়ার ইচ্ছে আমার বহুদিনের। যেদিন থেকে আমার মি. আনস্মাইলিং এর দিকে তাকিয়েছিলে ঠিক সেদিন থেকে তোমাকে মনে মনে যে কতবার হ’ত্যা করেছি তার ঠিক নেই। আজ সত্যিই তোমার সমাপ্তি ঘটালাম।”

শেষবারের মতো অরুণের মাথাবিহীন দেহটা দেখে নিল ঐশ্বর্য। তারপর রোজির দিকে রাখলো দৃষ্টি। তার কাতরানো দেখতে ভালোই লাগছে। অদ্ভুত আনন্দ সৃষ্টি হচ্ছে। তলো’য়ারে ভর দিয়ে থুঁতনি রেখে তাদের দুজনের ছটফটানি দেখে উঠে পড়ল সে। আশেপাশে তাকালো। ভার কন্ঠে বলল,
“সময় নেই হাতে। শেষ কাজ সাড়তে হবে।”

প্রাসাদের পেছন দিকটাই দাঁড়িয়ে ঐশ্বর্য। হাতে র’ক্তমাখা ত’লোয়ার। একটু আগেই বেশ কয়েকটা পাহারাদারকে তা দ্বারা হ’ত্যা করেছে। প্রাসাদে এখনো সমস্ত ডেভিলদের উপস্থিতি রয়েছে। ঐশ্বর্যের অন্যহাতে আগুনের মশাল। মাটিটা ভিজে রয়েছে কেরোসিন তেল দিয়ে। একবার আগুনের মশালের দিকে তাকালো সে। আনমনে বলে উঠল,
“দ্যা ডেভিল বুক এর লেখা অনুযায়ী, একমাত্র ডেভিল কুইন-ই পারবে তার সাম্রাজ্য ধ্বং’স করতে। তার মিথ্যেজাল দিয়ে তৈরি এই প্রাসাদ সহ সমস্ত ডেভিলদের গুঁড়িয়ে দিতে। আর এখন যেই আগুন ডেভিলদের শক্তি! সেই আগুনই শুধুমাত্র আমার জন্য ওদের মৃ’ত্যু হয়ে দাঁড়াবে।”

আগুনের মশাল ফেলে দেয় ঐশ্বর্য নিচে। সঙ্গে সঙ্গে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। আগুনের তাপে টিকতে পারে না সে। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সেটা। অনেকটা দূরে সরে গিয়ে নিজের মাথার ওপর থেকে মুকুট সরিয়ে হাতে নেয়। ভালো করে সেটা দেখে নিয়ে শান্ত গলায় বলে,
“তোমার কাজ শেষ। এই মুকুট গুঁড়িয়ে দিলে ডেভিলদের শক্তিও গুঁড়িয়ে যাবে।”

পায়ের নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় সেই মুকুট। কালো রঙের দামি পাথরের নকশা করা চকচকে করা মুকুটের ওপর নিমিষে পা তুলে দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে ঐশ্বর্য। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ করে প্রাসাদের এক অংশ ভাঙতে শুরু করে। ভেঙে পড়ে যায় একেকটা অংশ। ঐশ্বর্য ছিটকে সরে আসে। ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে সকলের আর্তনাদ। কেউ পালাতে পারছে না। আর কোনো রাস্তা নেই। একে একে ভেঙে পড়ছে সব। মাটির ভিত নড়ে উঠছে। ঐশ্বর্য শান্ত ভঙ্গিতে সবটা দেখছে। সে শেষ পর্যন্ত দেখতে চায়। কানে এসে ঠেকছে চিৎকার। ঐশ্বর্যের নীল চোখজোড়া স্থির। হাতের নকল সেই চিহ্নটি মুছে গিয়েছে। তলো’য়ার হাতে একভাবে প্রাসাদ পুড়তে ও ভাঙতে দেখা যাচ্ছে। তার খেয়ালই নেই সে ওখানকার খুব কাছে। আচানক বিস্ফো’রণ ঘটে গেল। চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল প্রাসাদ। সবটা ভেঙে পড়ল। সেই দাবানলের মাঝে হারিয়ে গেল ঐশ্বর্য!

ছোট্ট একটা কুঠির। জালানা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ধ্বং’স হয়ে যাওয়া প্রাসাদ। কিভাবে জ্বলে জ্বলে উঠছে। জানালার কাছেই ঘেঁষে থাকা এক পুরুষালি দেহ নড়াচড়া করছে বার বার। তার হাতে পায়ে বাঁধন! তাও শিকলের শক্ত বাঁধন। ছাড়ানো অসম্ভব প্রায়। তার পুরুষালি দেহের শক্তিও চেষ্টা করতে করতে ফুরিয়ে গেছে। মুখে কাপড় বাঁধা। আধশোয়া হয়ে দেখছে প্রাসাদ সহ ডেভিলদের অন্তিম সমাপ্তি। তা দেখে কেঁপে কেঁপে উঠছে হৃদয়! কারো জন্য অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত সে। মনটা অস্থির হয়ে উঠেছে। নিতে পারছে না এতো চিন্তা। ঘেমে একাকার সে। কাঙ্ক্ষিত জনের জন্য হৃদয়ে যে বিরহ সৃষ্টি হয়েছে! চিন্তা হচ্ছে ভীষণ। ইচ্ছে করছে ছুটে যেতে। তার কিছু হলো না তো? কাজটা তো সোজা নয়। বড্ড কঠিন!

তখনি দরজা খোলার খটমটে শব্দে চকিতে তাকালো সে। দেখা পেল দীর্ঘ পোশাকে আবৃত একটি পায়ের। একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। সেই সাথে সেই পুরুষটির মনের ক্রন্দন বন্ধ হচ্ছে। সেই মোহনীয় জাদুকরী দৃষ্টি বুকে তীরের মতো গিয়ে বিঁধছে। এইতো সেই স্বচ্ছ কাঁচের সমুদ্রের মতো টলটলে চোখ দুটো! কতদিন খুঁজেছে! পায়নি। আজ মনে ভরে দেখছে। সেই স্বচ্ছ চোখের নারীটি যখন নিচু হয়ে বসে পুরুষটির পানে তাকালো স্বস্তিতে চোখ বুঁজে এলো সেই পুরুষের। সেই নারীটি বিচলিত হয়ে প্রথমে খুলে দিল তার মুখের বাঁধন। অতঃপর হাত-পায়ের শিকল। আর ছটফটে কন্ঠে বলল,
“জেদ করতে মানা করেছিলাম আপনাকে। তাহলে এভাবে বন্দি থাকতে হতো না। আপনি বড্ড জেদি হয়ে গিয়েছেন মি. আনস্মাইলিং!”

প্রেম উঠে বসল। তার প্রেয়সীর দিকে তাকালো। গভীর দৃষ্টি দিতেই চোখে পড়ল তার প্রেয়সীর আঘা’তগুলো। ঘাড়ে স্পষ্ট কামড়ের দাগ। দাঁত একেবারে বসিয়ে দিয়েছিল কেউ। তার বাম গালে ক্ষতস্থান ফাঁক করে রয়েছে। লেগে রয়েছে এখনো র’ক্ত। চোখমুখে কালো রঙ দেখে বোঝায় যাচ্ছে সেই অগ্নিকান্ড থেকে উঠে এসেছে মেয়েটা। প্রেম আলতো করে তার হাতটা নিয়ে গিয়ে স্পর্শ করল ঐশ্বর্যের ঘাড়ে। ঐশ্বর্য মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে চোখ বন্ধ করে নিতেই অনুভূত হলো সে জড়িয়ে পড়েছে প্রেমের সাথে। প্রেম দুহাতে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তার গালের ক্ষতস্থানে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল। ঠোঁটের স্পর্শ ছুঁইয়ে দিতেই র’ক্তে লাল হয়ে এলো প্রেমের ঠোঁট। সে ঐশ্বর্যের চোখে চোখ রাখল। দুজনই দুজনের দৃষ্টিতে আবদ্ধ হয়ে একসময় আনন্দে হেঁসে উঠল। হাসি থামিয়ে প্রেম ঐশ্বর্যের হাতটা ধরে বলল,
“আমি তো সেদিন পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আগুনের তাপে নয়। ভিনদেশের রাজকন্যার প্রণয়ে। সেদিন সত্যিই শেখ আনন প্রেমের ওই অস্তিত্বের সমাপ্তি ঘটেছিল। সূচনা হয়েছিল এক নতুন অস্তিত্বের। যেখানে ভিনদেশের রাজকন্যা এবং সাধারণ মানুষ প্রণয়ের সাগরে ভেসে গিয়েছিল।”

চলবে….

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৫২

“ভাগ্যিস সেদিন আপনি বুদ্ধি করে কারাগারে আগু’ন জ্বালিয়ে পালিয়েছিলেন তাও আমার হাত ধরেই। নয়ত হয়তবা আজকেও আমি সেই একইভাবে ডেভিল কুইন থেকে যেতাম। আপনার ভয় লাগে নি একটুও? যে আপনাকে কারাদণ্ড দিয়েছে, যে আপনাকে আঘা’ত করতে চেয়েছে সেই তার হাত ধরেই পালিয়ে আসতে?”

প্রেম নিজের শুষ্ক ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে বুকে দুটো হাতে রেখে স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে। ঐশ্বর্য খেয়াল করে এই কয়দিনে প্রেমের দাড়িগুলো বেশ বড় বড়ই হয়েছে। সেই সাথে গায়ের হলুদ ফর্সা রঙটাও কেমন যেন শ্যামলা বর্ণ ধারণ করেছে। তবে মুখের হাসিটা সেই একরকম! মানুষটার ভালোবাসাও ঠিক একই রকম ঐশ্বর্যের প্রতি। ঐশ্বর্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইল উত্তর পাওয়ার আশায়। প্রেম এবার মুখে হাসি বজায় রেখে বলে উঠল,
“না ভয় লাগেনি আমার। তোমার মনে আছে? তুমি বলেছিলে, তোমার সবটা স্মরণে থাকলেও তুমি আমার আর সবটা ভুলে গেলেও তুমি আমার। তুমি যখন আমাকে বারবার আঘা’ত করতে উদ্যত হয়েছো তখন বারবার আমার কানের কাছে ওই একই কথা বেজে উঠেছে। যখন তুমি আমাকে আ’ঘাত করতে পারলে না তখনই বুঝে গেছি তোমার পাওয়া সেই শয়’তানি শক্তির স্তরটার নিচে এখনো কোথাও সেই অনুভূতির তরঙ্গ বহমান। যখন তুমি ঘোষণা দিলে যে আমাকে কারাগারে কোনোরকমে খাবারদাবার বা পানি দেওয়া হবেনা তারপর নিজেই লুকিয়ে আমার জন্য খাবার পানি আনলে তখনই বুঝেছি আমি পারব। আমি পারব সেই শক্তির স্তর সরিয়ে পুনরায় তোমাকে সেই ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস করে তুলতে। আর দেখো! আমি পেরেছি!”

প্রেমের কথাগুলো মুগ্ধ নয়নে শুনে নেয় ঐশ্বর্য। অতঃপর প্রেমের হাত দুটো নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে ফট করে নিজের চিকন দুটো ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই তার গালে আলতো গোলাপিবর্ণ ফুটে উঠল। তা দেখে আপনমনে হেঁসে উঠল প্রেম নিঃশব্দে। ঐশ্বর্য শান্ত গলায় বলল,
“আপনি সত্যিই একজন মুগ্ধকর মানুষ! আপনি আসার আগ পর্যন্ত অনেক মানুষের সামনাসামনি হয়েছি। তাদের দেখে রাগ হতো খুব। নিজের রাগে কতগুলো মানুষের প্রা’ণ এই দুটো হাত নিয়ে জানা নেই আমার। ওই নাইট ক্লাবে ওই কৌশিক কেও আমি খু’ন করতে যাচ্ছিলাম। মাঝখানে আপনি বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। আপনাকে না জেনে খুব বিরক্ত হয়েছিলাম সেদিন। তারপর আপনি যেভাবে আমাকে নিজের কাছে ধরে সযত্নে আমার ক্ষতগুলো ছুঁইয়ে দিলেন তখন আমার মনে ততক্ষণে অন্যরকম ক্ষতের জন্ম হয়েছিল। সেই ক্ষত সাড়তে যে আপনাকে খুব প্রয়োজন ছিল!”

প্রেম নিরব তখন। সবটা শুনে ঐশ্বর্যের গালে হাত রেখে বৃদ্ধা আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিল ঐশ্বর্যের কা’টা জায়গাটা স্পর্শ করল সে। ব্যথায় শব্দ করে আবারও চোখ বুঁজতেই তার চোখজোড়া ছুঁয়ে গেল প্রেমের ওষ্ঠদ্বয়। বারংবার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে আস্তে আস্তে ঐশ্বর্যের ঘাড়ে গিয়ে ঠেকল তার সেই ওষ্ঠদ্বয়। সেখানেই পড়ছে প্রেমের নিঃশ্বাস। সেই গরম নিঃশ্বাসে তীব্রতা বাড়ছে ঐশ্বর্যের নিঃশ্বাসের। চোখ আর মেলতে পারছে না। এবার প্রেমের একটি কথা কর্ণকুহরে বেজে উঠল তার।
“ঘাড়ে আ’ঘাত ছাড়া কিসের দাগ এটা? এমন লাল হয়ে আছে কেন? তোমাদের প্রাসাদেও বড় পোকামাকড় টাইপ কিছু ছিল বুঝি?”

আস্তে করে চোখ মেলল ঐশ্বর্য। প্রেম অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে ঘাড়ের দাগ দেখে যাচ্ছে। চোখ দুটো সরু করে ঐশ্বর্য তার পেটে গুঁতো মেরে বলে ওঠে,
“খুব ফাজিল হয়েছেন আজকাল!”

“আশ্চর্য! ফাইজলামির কি করলাম?”

প্রেমের লাগামহীন প্রশ্নে চোখমুখ কুঁচকে তাকায় ঐশ্বর্য। তার উত্তরে এবার রেগেমেগে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,
“কি করলেন মানে? কি করেন নি? নিজেই তো চুমু দিতে গিয়ে কামড়ও বসিয়েছেন। খেয়ালে নেই? থাকবে কি করে? পাগল হয়ে গিয়েছিলেন…”

কথাটা সম্পূর্ণ না হতেই থমকে গেল ঐশ্বর্য। মুখ যেন তালা বন্ধ করে দিল। বড় ঢক গিলে প্রেমের দিকে তাকালো। প্রেম তার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে। এমন মুখভঙ্গি দেখে কাঁদো কাঁদো মুখ করে চোখ বন্ধ করে নিল ঐশ্বর্য। দুটো হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করল। বিরবির করে বলতে থাকল,
“কি বললাম এটা! আমিও এই লোকটার সাথে পাগল হয়ে গিয়েছি…”

ঐশ্বর্যের ওপর লজ্জা ভর করেছে ভীষণভাবে। মুখ লুকিয়ে থাকা দেখে হাসি পাচ্ছে তার। শব্দ করে হেঁসে উঠল প্রেম। তারপর দুহাত ছড়িয়ে ঐশ্বর্যকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরল সে। ঐশ্বর্য বিরবির করতেই থাকল। প্রেম তার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
“হ্যাঁ পাগল তো হয়ে গিয়েছিলাম। প্রণয়ের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম যে। ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসকে নিজের করতে উন্মাদ হয়ে উঠেছিলাম!”

“আপনি বড্ড খারাপ একজন মানুষ।”
প্রেমের বুকে মুখ লুকিয়ে চাপা সুরে বলে উঠল ঐশ্বর্য। প্রেম সঙ্গে সঙ্গে আশ্চর্য হয়ে উত্তরে বলল,
“একটু আগেই না বললে আমি ভালো মানুষ? দুই মিনিটের মধ্যে চরিত্রও চেঞ্জ করে দিলে? তুমি তো খুব ডেঞ্জারাস মেয়ে!”

ঐশ্বর্য উত্তর বলল না। শুধুমাত্র মুখ লুকিয়েই রইল। মুখ দেখানোর মতো অবস্থায় সে নেই। তড়তড় করে ঘামছে। লোকটা বোধহয় লজ্জা দিতে খুব পছন্দ করে!

অতীত…
আগুন ধরিয়ে ঐশ্বর্যের হাতটা ধরে দ্রুত সেখান থেকে চলে আসে প্রেম। সামনে এগোতেই রাস্তা ফাঁকা পেয়ে আরো সুবিধা হয় তার। সকল পাহারাদার খেতে ব্যস্ত! ঐশ্বর্যের হাতটা শক্ত করে টানতেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে পড়ে ঐশ্বর্য। সে যেতে চায় না। প্রেমের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে বলে ওঠে,
“কি করতে চাইছো তুমি? পালাতে চাইছো? আর কি ভাবছো? আমি তোমাকে সাহায্য করব? তুমি পার পাবে না! শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে।”

“তোমার থেকে পার পেতে আমি কখনো চাইও নি। বর্তমানে সব পাহারাদারদের থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছি। অন্তত সেই সুযোগ আমাকে দাও। আমার মুখে সবটা শোনার পর যদি তোমার একটুও সন্দেহ জাগে তবে আমি নিজে তোমার আত্মসমর্পণ করব।”

ঐশ্বর্য তবুও দমে না। প্রেমের মতো দৌড়ে পালিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে সে। বড় বড় শ্বাস নিয়ে কন্ঠস্বর জোরে করে বলে ওঠে,
“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না। তুমি একটা মিথ্যেবাদী তাই পালাতে চাইছো। আমি কিছু শুনব না। কে কোথায় আছো! বন্দি ক…”

জোরে জোরে কথা শুনে এক পর্যায়ে ঐশ্বর্যের মুখ চেপে ধরে প্রেম। একহাত দিয়ে ধরে নেয় তার দুটো হাত। অস্থির হয়ে পড়ে ঐশ্বর্য নিজেকে ছাড়াতে। লাভ হয় না তেমন। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় প্রেম। কাউকে না দেখতে পেয়ে পুনরায় ঐশ্বর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে,
“তোমার তো অনেক শক্তি। অনেক ক্ষমতা আমার থেকেও। তবে তুমি কেন সেটা প্রয়োগ করে উল্টো আ’ঘাত করছো না আমাকে?”

নড়াচড়া এবং অস্থিরতা বন্ধ হয় ঐশ্বর্যের। সত্যিই তো! সে চাইলেই এই মূহুর্তে নিজের শক্তি দ্বারা ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে পারবে এই সামান্য মানুষকে। কিন্তু কেন তার হাতে দুটোর ক্ষমতা এই সামান্য একটা মানুষের সামনে অচল? কি এর কারণ? ঐশ্বর্যের চুপচাপ হয়ে যাওয়া দেখে তার মুখ থেকে হাত সরে নেয় প্রেম। বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিতেই হঠাৎই তার মনে পড়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা। আগে তার মনে থাকলে আরো বেশি কাজে দিতো। চট করে নিজের প্যান্টের পেছনের পকেটে হাত দিতেই একটা দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ছবি হাতে চলে আসে। সেটা বের করে মুচড়ে যাওয়া ছবিটাকে স্পষ্ট করে ঐশ্বর্যের সামনে ধরে। সন্দিহান চোখে ছবিটার ওপর রীতিমতো হামলে পড়ে ঐশ্বর্য। কারণ ছবিতে তাকে দেখা যাচ্ছে। শুধু তাকে নয়। সেখানে একজন পুরুষ আরেকজন মহিলাকে দেখা যাচ্ছে। যেই দুজনের ঘাড়ে হাত দিয়ে হাসোজ্জল মুখে ছবি তুলেছে ঐশ্বর্য। ছবিটা দেখে শ্বাস প্রগাঢ় হয়ে ওঠে তার। সবটা ঝাপ্সা হয়ে আসে। প্রেমের দিকে অসহায় পানে তাকায়। বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে,
“আ…আমি এদের চিনি। মনে হচ্ছে এরা খুব কাছের কেউ আমার।”

ছবিতে হাত বুলিয়ে দিল ঐশ্বর্য। মনটা ছটফট করে উঠল। প্রেম স্পষ্টভাবে বলে দিল,
“চেনো বলেই তো ছবি তুলেছো! ওরা তোমার মা-বাবা। তোমাকে জন্ম দিয়েছে ঐশ্বর্য!”

চোখের পলক পড়া বন্ধ হয় ঐশ্বর্যের। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“মা-বাবা?”

প্রেম কিছু বলতে চাইতেই ধুপধাপ পায়ের শব্দ পায় ঐশ্বর্য। শ্রবণশক্তি তীক্ষ্ণ হওয়ায় দ্রুত সে টের পায় কেউ এদিকেই আসছে। তড়িঘড়ি করে প্রেমের হাতটা ধরে ছুটতে থাকে সে। ছুটতে ছুটতে নিজের কক্ষের রাস্তার সামনে এসে থামতেই দাঁড়ায় সে। লক্ষ্য করে তার কক্ষের সামনেই দুজন পাহারাদার। এরা আগেই খেয়ে নিয়েছিল! তাই এখানে পাহারা দিতে ব্যস্ত। ঐশ্বর্য কি করবে ভেবে না পেয়ে প্রেমকে ইশারায় বলে দিল এখানেই দাঁড়াতে। তারপর সেখানে প্রেমকে দাঁড় করিয়ে রেখে নিজের কক্ষের দিকে ধাবিত হলো। ঐশ্বর্যকে দেখামাত্র পাহারাদার তাদের মাথা নুইয়ে ফেলতেই সে ধমকে বলে ওঠে,
“প্রাসাদের পেছন দিকে হইচই হচ্ছে তবুও তোমরা দাঁড়িয়ে রয়েছো? আমি আমার কক্ষের সামনে দিয়ে কাকে যেন যেতে দেখেছি। ওই প্রেম বোধহয় পালিয়েছে! ওইদিকে যাও আর খোঁজো।”

“এক্ষুনি যাচ্ছি। আপনি চিন্তা করবেন না। এখান থেকে কেউ পার পাবে না।”

বলেই ছুটল পাহারাদাররা। খালি হলো কক্ষের সামনের দিকটা। প্রেমকে ঐশ্বর্য ইশারায় বেরিয়ে আসতে বলেই প্রেম চলে এলো। তারপর দুজনেই কক্ষে ঢুকে পড়ল। কক্ষে ঢোকার সাথে সাথে দরজা সজোরে বন্ধ করল ঐশ্বর্য। তারপর সরাসরি প্রেমের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল সে।
“ওরা আমার মা-বাবা হলে আমার সঙ্গে আজ নেই। এই রাজ্য যদি আমার হয় তবে ওরা এখানে নেই কেন!”

প্রেম এগিয়ে এসে ঐশ্বর্যের বাহু চেপে ধরে। ঝাঁকিয়ে বলে,
“কারণ তোমার রাজ্য নয় ঐশ্বর্য। ইউ আর অ্যা ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেস। তুমি এখানকার নও ভ্যাম্পায়ার কিংডমের ভবিষ্যৎ রাণী।”

“আ…আমি বিশ্বাস করি না! কারণ তুমি তো আমায় অবহেলা করেছো, কষ্ট দিয়েছো।”

প্রেমের মেজাজ এবার তুঙ্গে ওঠে। ঐশ্বর্যের বাহু আরো শক্ত করে চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলে ওঠে,
“শাট আপ! আই লাভ ইউ।”

ঐশ্বর্যের মাঝে ভাবান্তর দেখা যায় না। এবার দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে ঐশ্বর্যকে ছেড়ে কক্ষের আশেপাশে তাকায় প্রেম। শেষ প্রান্তে ঝুলিয়ে রাখা দেখতে পায় দুটো ত’লোয়ার। দ্রুত হেঁটে গিয়ে সেখান থেকে একটা তলো’য়ার হাতে নিয়ে আবার ঐশ্বর্যের নিকট ফিরে আসে সে। ঐশ্বর্যের হাতে ধারালো তলো’য়ার ধরিয়ে নিজের দিকে তাক করে নেয় সেটি। আর জোরালোভাবে বলে,
“ঠিক আছে। তাহলে মে’রে দাও আমাকে। আজ এখনি!”

ঐশ্বর্যও স্থির। সেই সাথে প্রেমও। হাতটা তীব্রভাবে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যায় তলো’য়ার ঐশ্বর্যের হাত থেকে। ক্লান্ত হয়ে দুটো হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে সে। বিচলিত হয়ে বলতে থাকে,
“আমার সবসময় মনে হচ্ছে কোথাও কেউ একটা নেই। কোথাও একটা ফাঁকা বোধ করছি। যখন ওই ছবি দেখলাম তখন মনের মধ্যে আচমকায় শান্তির হাওয়া বয়ে গেল। আমাকে আমার মা-বাবার কাছে নিয়ে যেতে পারবে?”

চলবে…