#প্রেমের_সাতকাহন
#পর্ব_১৪
#সুমাইয়া_জাহান
সকাল থেকে খুব এক্সাইটেড ছিলাম কিন্তু এখন সব এক্সাইটেড হাওয়া হয়ে ফুস করে আকাশে উড়ে গেছে।মুখে এক হাত রেখে সামনে থাকা এলোমেলো শাড়ি টার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।কি করে পরবো এইটা?সেই নিয়েই ভেবে চলেছি।আজ ভার্সিটিতে নবীন বরণ অনুষ্ঠান আছে। কাল সবাই মিলে ঠিক করা হয়েছে আজ সবাই শাড়ি পরে যাবে।কাল বাড়ি আসার পর এই শাড়ি পরার ব্যবপার টা একদমই ভুলে গেছি।একটু আগে রিমি ফোন করে জিজ্ঞেস করছে আমি আজ কোন রঙের শাড়ি পরছি তখন মনে পরলো শাড়ি পরার কথা।আসলে আমি শাড়ি একদমই পরতে পারি না।তাই তাড়াতাড়ি শাড়ি নিয়ে মামনীর ঘরের দিকে ছুট লাগালাম কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আজ সকালেই মামনী তার এক পুরোনো বান্ধবীর বাড়ি গেছে।ফিরতে ঘন্টা দুয়েক লাগবে।কিন্তু আমাকে তো আধা ঘণ্টার মধ্যেই বেরোতে হবে।কি শাড়ি পরবো ভাবতে ভাবতে ইউটিউব এর কথা মনে পরলো।তাই কয়েকটা শাড়ি পরার ভিডিও দেখে শাড়ি পরার চেষ্টা করেছি।কিন্তু শাড়ি ঠিকই পরেছি তবে শাড়ি আমার গায়ে পেঁচানো নাকি আমি শাড়ির গায়ে পেচানো বোঝাই যাচ্ছে না।একদম বিচ্ছিরি ভাবে শাড়ি পরা হয়েছে।পর পর কয়েকবার চেষ্টা করেও ভালোভাবে শাড়ি পরতে সক্ষম হইনি।এদিকে টাইমও আর বেশি নাই। কি করবো ভেবেই পাচ্ছি না।এখন যদি কোনো রকমে ওইভাবে পেঁচিয়ে শাড়ি পরে যাই তাহলে তো মানসম্মান সব আলুর ভর্তা হয়ে যাবে।তাহলে কি শাড়ি না পরেই যাবো?কিন্তু সবাই তো আজ শাড়ি পরেই আসবে!ভেবেই আবারও মনটা খাবার হয়ে গেলো।
শাড়ি পরতে যা যা লাগে সেসব পরে একটা ওড়না গায়ে জড়িয়ে এসবই ভাবছি ঠিক তখনই নীর আমার রুমের সামনে দিয়ে হালকা নীল রঙের পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে যাচ্ছিলো।আমি তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে দরজা আড়ালে দাঁড়িয়ে মুখটা বের করে জোরে এক ডাক দিলাম।
—- নীর দাঁড়ড়ড়ড়ড়া!!!!!
আমার ডাকে নীর কানে হাত চেপে দাঁড়ালো আর পিছনে ঘুরে ঘুরেই বললো,
—- কি হয়েছে কি ষাঁড়ের মতো চেচাচ্ছিস কেন?বাড়িতে কি ডাকাত পরেছে না…….
আমার দিকে তাকাতেই নীরের কথা থেমে গেলো।দুই হাত ভাজ করে ভ্রু উঁচু করে আবার বললো,
—- দরজার ফাঁক দিয়ে বানরের মতো মুখ বের করে আছিস কেন?
একটু আগে ষাড় বললো এখন আবার বানর বলছে! আমাকে পশু পাখি গোডাউন বানিয়ে দিচ্ছে। রাগে গা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু মুখে এখন কিছু বলা যাবে না।আগে ওর থেকে হেল্প নিয়ে নেই তারপর দেখে নিবো ওকে।তাই নিজের রাগটাকে দমিয়ে রেখে মুখ একটা চওড়া হাসি ফুটিয়ে বললাম,
—- তুই শাড়ি পরতে পারিস?
নীর মনে হয় আমার থেকে এমন কথা মোটেও আশা করেনি তাই কিছুক্ষণ আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছে আমি ঠিক কি বললাম। তারপর চোখমুখ খিঁচে বললো,
—- আমাকে দেখে তোর কি মনে হয় বলতো?আমি একটা ছেলে হয়ে শাড়ি পরতে যাবো কেন?ডাফার!
কি বলতে কি বলে ফেলছি! এই শাড়ির টেনশনে মাথা আমার পুরাই গেছে।একটা বোকা হাসি দিয়ে বললাম,
—- এমা না না আমি তা বলতে চাইনি আমি তো জিজ্ঞেস করছিলাম তুই শাড়ি পরাতে পারিস কিনা?
শেষের কথাটা মনমরা হয়ে বললাম।নীর দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,
—- নাহ্ পারিনা!
আমি ওর উত্তর শুনে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। আমার এমন আকস্মিক ভাবে কেঁদে দেওয়াতে নীর ঘাবড়ে গেলো।আমি এমন ওর ধরনার বাইরে ছিলো।তাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—- এই তুই এইভাবে কাঁদছিস কেন?আমি শাড়ি না পরাতে পারার মধ্যে কান্নার কি সম্পর্ক!সেই কখন থেকে আজব আজব ব্যবহার কেন করছিস?দেখি তো জ্বর হলো নাকি!
দরজা ঠেলে ভিতরে আসতে নিলে আমি কান্না বন্ধ করে দরজাটা আরো শক্ত করে ধরে নীরকে আঁটকে দিয়ে বললাম,
—- এই এই একদম ভিতরে আসবি না।
—- কেন?
ভ্রুকুটি করে বললো নীর।তারপর নীর সব বললাম।নীর আমার কথা শুনে ঘর কাঁপানো হাসিতে ফেটে পরলো।হাসতে হাসতেই বললো,
—- লাইক সিরিয়াসলি!তুই ইউটিউব দেখেই শাড়ি পরতে পারলি না!
একটু ভেবে আবার বললো,
—- কিন্তু সেইদিন বিয়েতে তো খুব সুন্দর করেই শাড়ি পরেছিলি তাহলে?
—- ওটা আমি পরিনি পার্লারের মেয়েগুলো পরিয়ে দিয়েছে।ওসব এখন বাদ দে এখন তুইও একটু শাড়ি পরার ভিডিও গুলো দেখ না!তাহলে অন্তত আমাকে একটু হেল্প তো করতে পারবি।এতোক্ষণ ধরে যা শিখলাম তাতে একটু হেল্প করলেই মুটামুটি পরতে পারবো মনে হয়।
—- ঠিক আছে ভিডিও টা দে এখন!
তারপর ফোনটা নীরের হাতের দিলাম।নীর ফোনটা নিয়ে ভিডিও টা বেশ কয়েকবার মনযোগ দিয়ে দেখলো।তারপর চোখ বুজে কিছু একটা মনে মনে হিসাব করতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে একটা চওড়া হাসি ফুটিয়ে বললো,
—- তোর হেল্পের প্রয়োজন নেই আমি একাই পরাতে পারবো।
—- তুই সিউর পারবি?
আমি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম।নীর আমার প্রশ্নের বিনিময়ে মাথা নেরে হ্যা বোধক জানালো।ভিতর থেকে একটা ওড়না নিয়ে নীরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
—- ওড়না টা দিয়ে তাড়াতাড়ি চোখটা বেধে নে। তারপর ভিতরে এসে আমায় শাড়ি পরানো শুরু কর।
—- চোখ বাঁধলে শাড়ি পরাবো কি করে?
—- সে আমি জানি না!শাড়ি পরাতে হলে চোখ বেঁধেই পরাতে চোখ বেঁধেই পরাতে হবে।
নীর খুব ভালো করেই জানে আমি কিরকম ঘাড়ত্যাড়া মেয়ে। একবার একটা কথা বললে ওই কথা থেকে আমাকে আর নড়ানো যায় না তাই একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আমার হাত থেকে ওড়না টা নিয়ে চোখ বেঁধে নিলো।আমি দরজার আড়াল থেকে বেড়িয়ে ওর হাত ধরে ভেতরে আনলাম।তারপর ও শাড়ি পরানো শুরু করলো।এভাবে শাড়ি পরাতে ওর বেশ কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমিও আমার কথায় এরকম চোখ খুলে কিছুতেই শাড়ি পারানো যাবে না।এভাবেই পুরো শাড়ি পরানো শেষ করে কুঁচি টা কোমরে গুঁজতে যাওয়ার আগেই ছো মেরে ওর হাত থেকে নিয়ে কুঁচি নিজই গুঁজে দিলাম।তারপর একটা জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।এতোক্ষণ মনে হয় দম আঁটকে যাচ্ছিলো।নীর এমন আকস্মিক ঘটনায় ভ্রুকুটি করে বললো,
—- পুরো শাড়ি টা আমি এতো কষ্ট পরালাম আর তুই এখন শেষটুকু কেরে নিয়ে নিজে পুরো কাজটার ক্রেডিট নিয়ে নিলি!
—- তোর ক্রেডিট তোরই থাকবে ওকে।আচ্ছা এসব এখন রাখ।তোর চোখ এবার খুলতে পারিস।
আমি কথাটা বলতে সময় লাগলেও নীর চোখের বাঁধনটা খুলতে এক সেকেন্ডও সময় লাগলো না। যেন ও এতোক্ষণ এই কথাটার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলো।আমি আর ওইদিকে পাত্তা না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে বসলাম।নীরও এক কোনায় গিয়ে দাড়িয়ে ফোনটা বের করে ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়েই বললো,
—- আর মাত্র পনেরো মিনিট আছে তাই ঘন্টার পর ঘন্টা ময়দা মাখতে বসে যাস না আবার!
নীর জানে আমি অন্য সব মেয়েদের মতো মেকআপ একদম পছন্দ করিনা।আর কখনো মেকআপ করিও না। তাও এখন আমাকে রাগানোর জন্য এসব বলছে।আমি ওর দিকে একটা বিরক্তি সূচক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবারও ড্রেসিং টেবিলের দিকে ঘুরে বসলাম।নীর ফোন দেখতে দেখতে কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে আমাকে দেখছে।আমি আমার কাজ মানে সাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকাতে তা দেখতে পেলাম না।
💗💗
একটু হালকা পিংক লিপস্টিক আর চোখে কাজল দিয়ে কানে একজোড়া ঝুমকো পরে নিলাম।ব্যস এতেই আমার সাজ কমপ্লিট। আমি বরাবরই খুব হালকা সাজ পছন্দ করি।তাই আমার সাজ বলতে এটুকুই।আজ সাজ কমপ্লিট করে উঠে দাড়িয়ে আমার দিকে একবার ভালোভাবপ তাকিয়ে নীর দিকে তাকিয়ে অবাক। কারণ কাকতালীয় ভাবে আজ দুজনেই নীল রঙ পরেছি।আমার নীল শাড়ির সাথে নীরের পাঞ্জাবি প্রায় অনেকটাই মেসিং।নীর নীল পাঞ্জাবি পরা হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে একহাত পকেটে ডুকিয়ে আরেক হাত দিয়ে ফোন ধরে রাখা।
এক পা একটু উচু করে পিছনের দেয়ালের সাথে ঠেক দেওয়া আছে।আর চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা।সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে নীরকে।না চাইতেও আজ কেন জানি ওর থেকে চোখ সরাতে পারছি না।ওকে যদি এখন এই অবস্থায় কেউ দেখে তাহলে এক দেখায়ই ক্রাশ খেয়ে যাবে।কথাটা মনে পরতেই আমি তাড়াতাড়ি ওর কাছে গিয়ে ওর সেট করা চুল গুলো এলোমেলো করে ফোল্ড করা হাতাটা নামিয়ে দিলাম।হঠাৎ করে আমার এমন কাজে নীর আহাম্মক বনে গেলো।
—- তূবা এটা কি করলি তুই?
—- যা করেছি বেশ করেছি!ভার্সিটি গিয়ে মেয়েদের কে পটানোর জন্য এতো সেজেছিস আর ভেবেছিস আমি কিছু বুঝবো না।ঘরে বউ রেখে বাইরে মেয়েদের পটানোর ধান্দা করবি?তা তো আর হবে নীর চৌধুরী!আজ প্রথমদিন বলে শুধু এইটুকুতেই ছেড়ে দিলাম।কিন্তু আর যদি কখনো এতো সেজে কথাও বেরিয়েছিস তাহলে মুখে কালি মেখে পুরা ঢাকা ঘরাবো মনে রাখিস।
রেগে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম।
এদিকে তূবার এমন জেলাসি ফিল হওয়াতে বেশ মজা পেয়েছে।তূবাকে জ্বালানোর নতুন বুদ্ধি পেয়ে গেছে নীর।ডেভিড মার্কা হাসি দিয়ে বললো,
—- বউ গো তুমি তো জানোই না তুমি নিজেই নিজেকে পটানোর বুদ্ধি দিয়ে গেলে।এবার দেখো আগে আগে হো তা হে কেয়া!
তারপর শিস বাজাতে বাজাতে নীরও বেরিয়ে গেলো।
💗💗
আমাদের আস্তে আস্তে কিছুটা লেট হয়ে গেছে।এরমধ্যেই অনুষ্ঠানের শুরু হয়ে গেছে।আমরা গাড়ি থেকে নামতেই নীরের একটা কল আসে কল টার দিকে নীর কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করলো।ওপাস থেকে কি বললো জানি না নীর “ওকে এখুনি আসছি” বলেই কলটা কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—- তূবা তুই গিয়ে ভিতরে রিমি ভাবির সাথে গিয়ে বস।আমি আধা ঘণ্টার ভিতরেই আসছি।
—- তুই আজও অফিস যাবি?
—- হুম খুব জরুরি একটা মিটিং পরেছে গেছপ। তাই যেতেই হবে তবে আধা ঘণ্টার ভিতরেই চলে আসবো।আর শোন অচেনা কোনো মানুষের সাথে একদম কথা বলবি না।এদিক ওদিক কোথাও যাবি না।
কথাগুলো বলেই নীর তাড়াতাড়ি গাড়ি উঠে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো।ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভেতরে চলে গেলাম।
💗💗
ভেতরে ডুকতে রিমির সাথে দেখা হয়ে গেলো।ও আজ একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরেছে।সঙ্গে ভারী মেকআপ। দেখতে মাশাআল্লাহ দারুণ লাগছে।আমাকে দেখেই আমার দিকে এগিয়ে এসে কড়া গলায় বললো,
—- তুই এতো লেট করে আসিস কেন বলতো?তোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমার সামনের জায়গাটা দখল হয়ে গেছে।এখন তাড়াতাড়ি আয় না হলে মাঝখানের জায়গাটাও দখল হয়ে যাবে।
আমাকে একরকম টেনে নিয়ে মাঝ বরাবর একটা সিটে বসালো।এতোক্ষণে নাচ গানও শুরু হয়ে গেছে।আমি অনুষ্ঠান দেখেছি বেশ ভালোই লাগছে।তবে নীরের জন্য একটু মন খারাপ লাগছে।ও থাকলে আরো ভালো লাগতো।এসব নিয়েই ভাবছি হঠাৎ করে আমার ফোন টা বেজে উঠলো।একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে।হয়তো নীর করেছে এই ভেবেই ফোনটা রিসিভ করলাম।কিন্তু এখানে গানের শব্দে কিছুই শোনা যাচ্ছে তাই আমি ওখান থেকে বেরিয়ে মাঠে আসলাম।এবার ঠিকভাবে শোনা যাচ্ছে।কিন্তু ফোনের ওপাস থেকে যা শুনলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম।
—- নানানানানা!!!!!!
চলবে,,,,,,
[আজও রিচেক করা হয়নি তাই অনেক বানান ভুল থাকতে পারে।🙂]