প্রেয়সী পর্ব-১৮

0
1049

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃmoumita_mehra
#পর্বঃ১৮

৩৫.

হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই আমার ফোনটা হাতে তুলে নিলাম! কিছুক্ষণ আগে অপরিচিত লোকটার নম্বর থেকে আসা ম্যাসেজ গুলো পূনরায় স্ক্রল করতে লাগলাম! ভেতরটা ক্রমশই অস্থির হচ্ছে। ম্যাসেজ গুলো স্ক্রল করেও যেন শান্তি হচ্ছে না! তাই উত্তেজিত হয়েই টাইপ করলাম তার নম্বরে।

—-” আপনার হঠাৎ গান গাইতে কেন ইচ্ছে হলো?”

সেন্ড অপশনে ক্লিক করে আঁড়চোখে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম! এখন শুধু দেখার বাকি উনি ফোনটা হাতে তুলেন কি না! অস্থিরতায় হাসফাস করছে মনের ভেতর। টানা দুই মিনিট পেরিয়ে যেতেও যখন দেখলাম রাহিয়ান ভাইয়া ফোনটা বের করছেন না তখন অধৈর্য্য হয়েই নিজের ফোনটা চেক করলাম! ম্যাসেজ টা গেলো কি গেলো না? নাকি উত্তেজনার বসে অন্য কাউকে সেন্ড করে দিয়েছি! একদম নিখুঁতভাবেই অপরিচিত লোকটার নম্বর টা চেক করলাম! আর তার সাথে ম্যাসেজ গুলোও। সবই ঠিকঠাক। ম্যাসেজও সময় মতো গিয়েছে তবুও কেন উনি ফোনটা হাতে তুলছেননা! আমার ভাবনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে উনি নিশ্চিত ফোনটা বের করবেন।

আরফান ভাইয়া, রূপ ভাইয়া,অরিন আপু আর রাহিয়ান ভাইয়া চারজন মিলে কোনো এক জরুরী আলাপে ব্যস্ত আছেন দেখা যাচ্ছে। বাকিরা সবাই যে যার মতো করে কথা বলছেন! মনে হচ্ছে না রাহিয়ান ভাইয়া ফোনটা বের করবেন! উনি যদি এই মুহুর্তে ফোন বের নাও করেন অথবা ম্যাসেজের রিপ্লাই নাও দেন তবুও আজ অনেক ধোঁয়াশা কেটে যাবে। হয়তো এটাও হতে পারে যে উনি ফোন বেরই করলেননা অথচ ম্যাসেজের রিপ্লাই ঠিকই আসলো! নিজের ভাবনাকেই যেন ধীরে ধীরে বাস্তবতায় রূপ পেতে দেখছি।

—-” নিধিইইইই ওঠ না এবার! জলদি আমার সাথে রুমে চল! আয়….”

রাইয়ের হাঁকে চমকে উঠলাম। মেয়েটা ঠিক সময় মতো হারিকেনের আলো নিভিয়ে দিতে ওস্তাদ! গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে ওকে ধমক দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত হলাম ঠিক এমন সময়ই আমার ফোন ভাইব্রেট করল। চোখ জোড়া আমার আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো। অপরিচিতর ম্যাসেজ এসেছে। খুশিতে মনটা নেচে উঠতে চাইলেই আমি গলা চেপে ধরে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়া তো একই ভাবেই বসে আছেন। তার নির্বিকার ভঙ্গিতে ক্ষনিকের জন্য হতাশ হলেও পরক্ষণেই আবারও খুশিতে মনটা নাচ পাড়লো। মনে স্বস্তি নিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! মনকে শান্তনা দিয়ে বেঝালাম, “অপরিচিত লোকটা তবে উনি নন।”

—-” নিধু উঠবি প্লিজ!”(চিল্লিয়ে)

রাইয়ের চিল্লানিতে লাফ মেরে দাঁড়িয়ে গেলাম! বাকি সবাইও অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো। আমি ওর মুখ চেপে ধরে সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে সোজা রুমে চলে এলাম! রুমে ঢুকেই গেট টা লক করতে করতে অপরিচিতর ম্যাসেজে চোখ বুলালাম!

—-” তুই ভালোবাসা মাখানো শেষ দৃষ্টি,
আমি প্রতিটি ক্ষনে অপেক্ষার প্রহর গুনি ভালোবেসে মাতাবো বলে…..!
ইহা আমার কল্পনা স্রোত শুধু,
তবুও চলতে থাকুক অবিরত।

কি ভাবছো? ছেলেটা ভীষণ পাগলাটে টাইপের? কবিদের মতো শুধু কবিতা শুনিয়েই যাচ্ছে তোমাকে! জানো আমি নিজেই বড্ড বেশি অবাক!!! এর আগে আমি কখনোই কবিতা আবৃত্তি করিনি! কিন্তু এখন! রোজ…তিনবেলা শুধু কবিতাই লিখে চলেছি! কি এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে আমার মাঝে! আমি তোমাকে তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছি নীলাদ্রিতা।”

আমি নীরব দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকালাম! আমার সমস্ত অস্থিরতা কেটে গিয়ে পূনরায় সেই অস্থিরতা গুলো আবারও আমার শরীরের মাঝে বিচরণ করে চলেছে! মানুষটা অদ্ভুত। ভীষণ অদ্ভুত!

—-” নিধি!”(চিল্লিয়ে)

মেয়েটা আজ বড্ড বেশি চেঁচাচ্ছে। রেগে গিয়ে ওর কটমট চোখে তাকাতেই চুপসে গেলো রাই। কাচুমাচু করে বলল,

—-” মা কল দিচ্ছে বারবার! বাবার নাকি প্রেশার বেড়েছে! আমার বাসায় ফিরতে হবে!”

—-” কি বলছিস?”

—-” হ্যাঁ রে! এই যে দেখ.. এখনও কল দিয়ে যাচ্ছে! কি করি বলতো? ভাইয়াও যে বাসায় নেই! মা ভীষণ চিন্তা করছে রে! আমাকে যেতেই হবে!”

আমি করুন চোখে তাকালাম রাইয়ের দিকে। এই মুহুর্তে ওকে আঁটকানো কিছুতেই ঠিক হবে না! কিন্তু এতো রাতে ওকে একাই বা ছেড়ে দেই কি করে? রাই অস্থিরতায় হাস ফাঁস করছে! আমার মুখ চেয়ে কিছু বলছে না পাছে আমি বকে দেই এই ভেবে! বাবার চিন্তা যে কতটা মারাত্মক তা আমার চেয়ে আর কে ভালো বলতে পারবে!

—-” আচ্ছা তুই এখানে বস আমি তোর যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করছি!”

আমি যেতে নিলে রাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমায় কোথাও যেতে বারন করে বলল,

—-” তোর কোনো ব্যবস্থা করতে হবে না! আমি এই সামনে থেকেই একটা সিএনজি ধরে ঠিক চলে যাবো!”

—-” কি বলছিস কি? পাগল হয়ে গেলি নাকি? আমি এই রাতে তোকে একা ছেড়ে দিবো তুই ভাবছিস কি করে বলতো? আবার বলছিস সিএনজি করে চলে যাবি! হাউ ষ্টুপিড!”

রাই বুঝতে পারলো বুঝি! তাই আবারও মাথা নীচু করে নিলো। আমি চটজলদি দরজা খুলে সোজা ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম! কিন্তু ছাদ অব্দি পৌঁছানোর আগেই পেছন থেকে ডাক পড়লো বউমনির। বউমনিকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই আমি একই স্পিডে ফেরত গেলাম তার কাছে। খানিকক্ষণ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বউমনির হাত ধরে বললাম,

—-” আমি তোমাকে খুঁজতেই ছাদে যাচ্ছিলাম গো!”

বউমনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আমাকে খুঁজতে?”

—-” হু! একটা প্রবলেম হয়েছে গো বউমনি! একটা আর্জেন্ট হেল্প দরকার!”

—-“কি হয়েছে? সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?”

বউমনি বিচলিত হয়ে উঠতেই আমি তাকে শান্ত করে রাই এর ব্যপারটা খুলে বললাম! বউমনি সবটা শুনে তৎক্ষনাৎ সলিউশনও বের করে দিলো। কিন্তু এই সলিউশনটা আমার প্রথম দফায় পছন্দ না হলেও পরক্ষণে রাইয়ের কথা ভেবে মেনে নিতে হলো। রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে রাইকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু রাই বাঁধালো আরেক বিপত্তি! সে বলছে “এতখানি পথ আমি একা রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে যেতে পারবো না!আমার প্রচুর আনইজি লাগবে!” তাই বাধ্য হয়ে বাধ্য মেয়ের মতো আমিও উঠে পড়লাম তার গাড়িতে। মেয়েটা সত্যি বড় তার ছিঁড়া। কবে যে একটু বুঝবে কে জানে!

৩৬.

রাইয়ের বাসায় ওকে নামিয়ে দিয়ে ফিরতে ফিরতে আমাদের রাত ২-টা বাজলো। ফিরতে ফিরতে বলতে এখনো মাঝপথেই আছি! বাড়ির গেট দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়ে উঠেনি! তখনকার আকাশটা তাঁরাদের মাঝে বেশ ঝকঝক করতে থাকলেও এখন বেশ মেঘলাটে হয়ে আছে! চোখের সামনে দূরবীন রাখলেও একটা তাঁরারও দেখা মিলবে না! সেই সাথে বারে বারে দমকা হাওয়ারও আচ পাচ্ছি। চুপচাপ কোনো কথা না বলেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন মহাশয়। সেই দুপুরের পর থেকে এখনো অব্দি একটা কথাও আওড়ালেন না আমার সাথে! আচ্ছা উনি কি রাগ করে আছেন আমার উপর? একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো? ধুর বাবা! আমি জিজ্ঞেস করলেই বা কি? উনি কি ধিতাং ধিতাং ধিন-তা না করে আমাকে বলবেন, “হ্যাঁ নিধি আমি তোমার উপর মারাত্মক রেগে আছি!” উফফ! না বললে নাই! উনার কথা বলার ধরন শুনলেই তো আমি আচ করতে পারবো যে উনি রেগে আছেন কি নেই!

—-” উহুম উহুম!”

গলা টা ভালো করে ঝেড়ে নিচ্ছি! আসলে তেমন কিছুই না! এমন করার মানে হলো আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই,আর এই মুহুর্তে আমি উনার ফুললি এটেনশনও চাই তাই সংকেত দিচ্ছি! উনি যদি বুঝেন তাহলে তো আর নেক্সট পদক্ষেপ নিতে হবেনা আর যদি না বুঝেন তবে যে নেক্সট পদক্ষে….

—-” কিছু বলবে?”

গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন উনি! আমি তো অবাক! না দেখেও বুঝতে পারলাম অবাক-খুশিতে আমার চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির আকার নিয়েছে। আমি চোখ ঝাপটে উনার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে বললাম,

—-” আ..আপনি কি… না মানে! আ..আমি কি… স..সরি সরি! (ইশশ কি যা তা বকছি! শাটআপ নিধি!) বলছিলাম যে,…”

—-” হোয়াট!”

উনার হোয়াট বলার ভঙ্গি যেন ইট তুলে ছুঁড়ে মারার মতো লাগলো! আমি চমকে উঠে গাড়ির সিটের সাথে লেপ্টে গেলাম! অকারনেই আবারও ভয় পাচ্ছি এই লোকটাকে! কি যে হচ্ছে! যেন নিজের উপর কোনো কন্ট্রোলই নেই! চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম! নিজের এমন আচরণে যে আমি নিজেই চরম বিরক্ত! বিরক্ত বিরক্ত বিরক্ত!

—-” এনিথিং রং?”

আমি ঝড়ের বেগে দু’পাশ করে মাথা ঝাঁকালাম। আমতাআমতা করে বললাম,

—-” এভরিথিং ইজ ফাইন!”

—-” আই থিংক এভরিথিং ইজ নট ফাইন! গলার মধ্যে লাভ বাইট নিয়ে ঘোরাঘুরি করছো দেখছি।”

আমার দম আঁটকে এলো। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কিছুক্ষণ চুপসে থাকার পর মনে পড়লো হাতটা মুখে নয় গলায় চাপলে বেশি কার্যকর হবে! তৎক্ষনাৎ ফড়িংএর মতো তিড়িং বিড়িং করে ওড়না টা টেনে চেপে ধরলাম গলায়। উনি যেন আর বুঝতেই না পারে তার জন্য চুলগুলোও সব একপাশে নিয়ে এলাম! ভেতরটা ক্রমশই ধড়ফড় ধড়ফড় করে চলেছে! দাগটা আর কারোর চোখে পড়তে পারলো না শুধু এই মানুষটার চোখেই পড়তে হলো! কেন?

—-” ঢেকে কি হবে? কলঙ্ক যদি ঢেকেই মুছে ফেলা যেতো তবে চাঁদ কেন তা করেনি?”

আমার ভেতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে! “কলঙ্ক”! সত্যিই যে কলঙ্কের দাগ পড়েছে আমার শরীরে।

—-” বয়ফ্রেন্ড এসেছিলো বুঝি?”

উনি কেবল বলেই চলেছেন! কিন্তু একটা কথারও যে জবাব আমি দিতে পারছি না!

—-” বেশ তো! তবে একটুই কেন কলঙ্কিত হলে? পুরোটাই হতে পারতে! জানো-তো এসব মানুষ গুলোই আমার ভীষণ অপছন্দের। বিশেষ করে ছেলেগুলো! মনে করো সম্পর্কের একমাস যেতে না যেতেই শুরু হয়ে যাবে তাদের আসল পরিচয় দেওয়া। মেয়ে গুলোকে এমন ভাবে ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলবে যে সে যা-ই বলবে সেটাই মেয়েটার কাছে মধুর স্বাদ লাগবে। এম আই রাইট অর রং?”

আমার গলায় কম্পন ধরেছে তা বেশ বুঝতে পারলাম! উনি সামান্য একটা দাগ দেখে আমাকে কোন কাতারে ফেলে দিয়েছেন ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। হৃদ আর আমার সম্পর্কটা কখনো এমন পর্যায়ে আসেইনি যেখানে এমন কিছু হতে পারে আর….
আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি! গলার মধ্যে ব্যাথা করছে হঠাৎ। কান্নারা সব দলা পাকিয়ে গলাতেই এসে আঁটকে পড়েছে! কষ্ট হচ্ছে! উনার আড়ালেই চোখের জল ফেললাম। সম্পূর্ণ অসহ্য একটা লোক! আমি কিছুতেই আর উনার গাড়িতে উনার সাথে পাশাপাশি বসে যেতে চাই! কিছুতেই না!

—-” গাড়ি থামান!”

—-” কেন?”

—-” আমি বলেছি তাই! গাড়ি থামান।”

—-” বয়ফ্রেন্ড আসবে বুঝি? রুমডেট নিশ্চয়ই! তুমি কিন্তু সেই বুদ্ধিমতি নিধি! সময়টা কিন্তু একদম পার্ফেক্ট। আব তুমি চাইলে আমি তোমাদের জন্য স্পেশাল রুম বুকিং করে দিতেই পারি! ধানমন্ডিতে কিন্তু এই সময়ে স্পেশাল রুমের বুকিং হয়! উইথ টুয়েন্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট। কি করবো?”

আমি নির্বিকার! আমার কান্না পাচ্ছে কি না সে কথাও ভুলে গিয়েছি আমি। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে! কেননা, আমি যে কথা বলতেও ভুলে গিয়েছি!

বড় একটা হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামালেন উনি! গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। আমি ঘৃনায় তাকাতে পারছিনা উনার দিকে! চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। এই মানুষটা কে খুন করে তার লাস টা কে কুটিকুটি করে কেটে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে উনি আমার বড়-খালামনি ছেলে!

আমাকে বসে থাকতে দেখে হেঁচকা টেনে বের করে আনলেন উনি! আমি ঘৃণিত চোখে উনার দিকে তাকালেও উনি ভ্রুক্ষেপহীন। আমার দিকে একবার তাকানোরও প্রয়োজন মনে করছেন না! কিছুদূর এক ভাবেই টানতে টানতে নিয়ে গেলেন! আমি চেঁচাবো বলে ঠিক করেই ফেলেছি এমন মুহুর্তে উনি বলে উঠলেন,

—-” কি টেনশন হচ্ছে? কেউ জানবে কি না? আরে বোকা মেয়ে যেখানে রাহিয়ান রাফিদ স্বয়ং তোমার হেল্প করছে সেখানে বারো যুগেও এসব কারোর জানা সম্ভব নয়! কাকপক্ষীতেও টের পাবে না! ট্রাস্ট মি!”

—-” ছাড়ুন আমায়! আপনি যে কতটা বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ আমার ধারনাও ছিলো না! আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে চাই না! ছেড়ে দিন আমার হাত! আমি এই মুহুর্তে আমার নিজের বাড়ি ফিরে যাবো। আর কখনো আপনার বাড়িতে পা রাখবোনা! আপনার মতো এমন খারাপ মানুষের মুখ আমি আর কখনোই দেখবো না! ছাড়ুন আমায়!”

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলতেই উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে তেড়ে আসলেন আমার দিকে। আমি ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উনার রক্তচক্ষু চোখ জোড়া দেখে লেপ্টে গেলাম দেয়ালের সাথে। উনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন দেয়ালের সাথে। অতঃপর গলার আওয়াজ নীচু করে বললেন,

—-” শশশ! এই হোটেলে কিন্তু কেউ কাঁদতে কাঁদতে ঢোকেনা! সবাই উল্লাস, উনমাদনা নিয়ে আসে! দিনশেষের ক্লান্তি ঝাড়তে এখানেই আসে। এটা কোনো পতিতালয় থেকে কিন্তু কম নয়! এভাবে চেঁচামেচি করো না! লোকে কি ভাববে?”

আমি চুপসে গেলাম! আমার হাত-পা সমানে কাঁপতে লাগলো৷ শরীরটাও যেন অসার হয়ে আসছে। সামনে যা দেখছি কেবল ঘোলাটে আর অন্ধকার।

উনি আবারও আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। কাউন্টারে এসে ম্যানেজারের সাথে আস্তে আস্তে কিছু কথাও বললেন যা আমার কান অব্দি পৌঁছালো না! ম্যানেজার আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে উনার হাতে একটা চাবি তুলে দিলেন! চাবিটা হাতে নিয়ে উনি বিজয়ের হাসি হাসলেন! আমার দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত নরম সুরে বললেন,

—-” নো টেনশন! আজ যা হবে ভালোর জন্যই হবে! চলো।”

“১৩০৪” নম্বর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি দু’জনেই! উনি আমার দিকে তাকিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাবিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” শুভ কাজটা তুমিই করো!”

নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলো না! চোখের জল অঝোরে ঝড়িয়েই স্ব-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম উনার গালে! থাপ্পড় খেয়ে উনি দু’পা পিছিয়ে গেলেন! গালে হাত রেখে আমার দিকে তাকাতেই আমি তেড়ে গিয়ে উনার শার্টের কলার্ট চেপে ধরলাম! রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,

—-” অনেকক্ষণ ধরে আপনার বাজে বকবকানি শুনে যাচ্ছি! কি মনে করে নিজেকে? আপনি যা খুশি তাই বলে যাবেন আর যা খুশি তাই করে যাবেন সেটা আমি চুপচাপ সহ্য করবো? আপনাকে কিছুই বলবো না? আমাকে দেখে আপনার পতিতালয়ের মেয়ে মনে হয়? আমার গলায় একটা সামান্য দাগ দেখে আপনি কিছু না জেনে,না বুঝে সেটাকে তিল থেকে তাল করে ফেললেন? আপনার একটুও মুখে বাঁধলো না! খারাপ লাগলো না? একবারও মনে হলো না আপনার এই থার্ড ক্লাস কথাবার্তায় আমার মনের উপর কতটা আঘাট পরতে পারে? আপনাকে আমি কতটা ভালো এবং সৎ ভেবেছিলাম আর আপনি? আ…আপনি কতটা নীচু মনমানসিকতা পোষণ করেন আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে!!”

কথা গুলো বলে উনাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজেই কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়লাম! উনি নিজেকে সামলে নিয়েই দৌড়ে এলেন আমার দিকে। আমাকে নীচে পড়তে দেখে আমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরে সটান হয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন! রাগে উনার চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলছে। তবুও সে নীরব। আমি আবারও চেতে উঠলাম! কিন্তু এবার আর কিছু বলার সুযোগ হলো না! উনি আমাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলেন। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালাতেই আরও শক্ত করে জাতাঁকলে পিষে নিলেন আমায়। আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। কিন্তু উনি অনুভূতি শূন্য। আমাকে নিয়েই রুমের দরজার লক খুললেন! লকটা খুলে যেতেই এক লাত্থি মেরে দরজাটা খুলে দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন ভেতরে। আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই চোখ পড়লো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে মুড়িয়ে থাকা বিছানায়। আর তারউপর অর্ধনগ্ন হয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা দুজন অপ্রত্যাশিত মানুষের উপর! মুহুর্তেই আমার নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। থমকে গেলো আমার সাজানো গোছানো ছোট্ট পৃথিবী টা। সামনে ভেসে থাকা সত্যটাকে মেনে নেওয়ার থেকেও বিষপান করা বেশি সুখকর বলে মনে হচ্ছে।

—-” হৃদ!!!!”

না চাইতেও কাঁপা কাঁপা স্বরে ডেকে উঠলাম তার নামটা! হায় রব! এমন দৃশ্য দেখার পূর্বে আমার চোখ জোড়া পঁচে গেলো না কেন?

#চলবে____________________