ফুল শর্য্যায় ছ্যাকা পর্ব-১৫

0
1925

গল্পঃ #ফুল_শর্য্যায়_ছ্যাকা
লেখকঃ #রাইসার_আব্বু
#পর্ব_১৫
” রাফির কাছে এমন কথা শুনে অপরিচিতার বুকটা ফেটে যাচ্ছে! রাফি তাকে এতো ভালবাসার পরও না জানিয়ে তাও ভালবেসে বিয়ে করলো? আচ্ছা তোমার বউ “রাফিয়া ইসলাম মন” সে কোথায়? দেখতাম তোমার ভালবেসে বিয়ে করা বউটাকে। নাকি তাও দেখদে দিবেনা (কথাটা বলে কেদে দিলে অপরিচতা)

— হুম দেখবে তুমি মনকে অবশ্যই দেখাবো। জানো অপরি, ৫৭৮ জন যাএী নিয়ে যাওয়ার পথে বার বার মনে পড়ছিল কখন ফ্ল্যাইট ল্যান্ড করবো।কখন তোমার কাছে আসবো। তুমি তো সন্তান সম্ভবা ছিলে। যেদিন তোমার ডেলিভারী হবে। সেদিনই তুরস্কে একটি ফ্ল্যাইট পড়ে। ছুটি চেয়েও নিতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে ফ্ল্যাইট ফ্রাই করতে হয়।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ফ্ল্যাইট ইন্দোনেশিয়ার পৌছার পর কানেকশন ফেল হয়ে যায়। ১ ঘন্টা সংযোগ বিহীন ফ্ল্যাইট পরিচালনা করার পর বিমান সাগরে গিয়ে পড়ে তার পর আর কিছু মনে নেই।

—- তারপর চোখ খুলেই দেখি আশেপাশে লোক গুলো বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!সবাই কানে কানে কি যানি বলছে! কাউকে চিনতে পারছিনা! দেখে মনে হচ্ছে উপজাতি হবে! আমি এখন কোথায়?

— আমার কথা বলা দেখে! ওরা একেকজন একেজনের দিকে তাকাচ্ছে! কি সব বলছে কিছু বুঝতেছিনা। মনে মনে বলছি আল্লাহ এ কোন জায়গায় নিয়ে আসলা আমায়!

— হঠাৎ তারা কি যেনো বলে সবাই চুপ হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে কেউ আসছে তাদের কথা বার্তায় বুঝা যাচ্ছে। হঠাৎ একটা মেয়ের আগমন, এতো সুন্দর মেয়ে! মনে হচ্ছে আল্লাহ সৌন্দর্য্যের সবটাই এর মাঝে দিয়েছে। সবার থেকে আলাদা মনে হচ্ছে বাগানে ফুটে ওঠা একটা রক্তিম লাল গোলাপ। চেহারা থেকে সোনালী আভা বের হচ্ছে। মেয়েটার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।

— who are you? (মেয়েটা)

— who am i ?( আমি)

— What? Who do you know where do you live! What is your name?( মেয়েটা)

— I do not know who I am What is my name Well, why am I here?

— You are found on the seashore. From there the neighbors got you up. Now you can not say anything. Well who are you? Please try to remember where to live.( মেয়েটা)

— কি সব বলছেন! আমি সাগর পাড়ে থাকবো কেনো?

— আপনি বাংলাদেশী! oh my God ( মেয়েটা)

— মানে কি বলছেন বাংলাদেশ সেটা আবার কী? (আমি)

— বাংলাদেশ হচ্ছে একটা দেশ! আচ্ছা আপনারা শুনেন ওনি সাময়িক ভাবে, স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আপনারা কেউ ওকে ডিষ্টাব করবেন নাহ্! আমি ওনাকে সুস্হ করে তুলবো! ( মেয়েটা)

– হাই, আমি রাফিয়া ইসলাম মন। আর আমি বাংলা পারি। একলিস্ট আমি বাংলাদেশ থেকে পড়াশুনা করেছি। ওহ হ্যা তোমার নামটা যেনো কী!ওহ! আচ্ছা তোমার তো নাম নেই! আচ্ছা তোমায় একটা নাম দেয় কেমন? (মেয়েটা)

— নাম দিবেন? আপনার ইচ্ছা।

—- রিহানুল ইসলাম (মাহিন)! আমি তোমাকে মাহিন বলেই ডাকবো কেমন?

— জি! আচ্ছা।

— তার পর থেকে মনের সাথে পাহাড়ি ঝরনা দেখা, একসাথে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো।আর জায়গাটা ছিল ইন্দোনশীয়ার একটি পাহাড়ী এলাকা সাগর পাড়ের ছোট্ট একটি দীপ নিয়ে গঠিত। এখানে সবাই অশিক্ষিত! তাই সবাই মিলে মনকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে। মন দেখতে যেমন ভালো ছিল তেমনী বুদ্ধিমতী। ভালোই চলছিল রূপকথার সেই দিনগুলো। কখন যে নিজেদের অজান্তে দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে জানতামই নাহ্। খুব ভালোবাসতাম মন কে। মনও খুব ভালোবাসতো। হঠাৎ একদিন মনের বাবা, অসুস্হ হয়ে পড়ে। এবং মরে যাওয়ার আগে মনকে আমার হাতে তুলে দেয়। তার পর কেমন করে যেনো বিয়ে হয়ে যায়।

— আজ আমার আর মনের ফুলশর্য্যা। পাহাড়ী ফুল দিয়ে সাজানো বিছানাটা খুব সুন্দর করে। আজ প্রথম মন শাড়ী পড়েছে তবে লাল বেনারশী নয় নীল শাড়ি। মনে হচ্ছে নীল পরী বসে আছে। জানালার ফাক দিয়ে চাঁদের আলো মনের মুখের ওপর পড়ছে! আমি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছি।

— হা করে তাকিয়ে আছো কেনো?

– তোমায় দেখছি?

— আর কোনদিন দেখোনি?

– হুম দেখেছি তবে এ সাজে নাহ্। যানো আজ তোমাকে স্বর্গের অপন্সীর মতো লাগছে!

— হুম ভালোই তো এভাবে শুধু দেখবেন আর কিছু করবেন না? কথাটা বলে মুখ টা নিচের দিকে করে ফেললো।

— আচ্ছা আর কী করবো শুধু তো দেখতেই হয় তাইনা?

— তোমার মাথা! এ তো দেখছি কিছু বুঝেনা কাকে বিয়ে করলাম। এই কথা বলে, মন আমায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁট দুটি আমার ঠুঁটের সাথে মিশিয়ে ফেললো।

— কিছুক্ষণ এভাবে, থাকার পর হঠাৎ মনকে ধাক্কা দিয়ে ছাড়িয়ে নিলাম।

— এই তুমি আমাকে ছাড়িয়ে নিলে কেনো??

— মেরে ফেলবা বললেই হতো এভাবে বিয়ে করার কি আছে! ঠোঁঠের সাথে ঠোঁঠ মিশিয়ে তাও আবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, যেনো যেতে না পারি। ওভাবে কেউ ঠোঁঠের সাথে ঠোঁঠ লাগিয়ে দেয়! আর একটু হলে মরেই যেতাম ধম বন্ধ হয়ে। আর ঠোঁঠে কামড় দিয়েছো কেনো? আমার কষ্ট হয়না বুঝি। পঁচা মেয়ে ছি ছি একজনের মুখ আরেকজন লাগায়। আমি আর নাই মরার সাধ জাগে নাই ভাগ্যিস ছাড়িয়ে ফেলেছি যে ভাবে জড়িয়ে থুক্কু মরার ফাঁদ বানিয়েছিলে। ( আমি)

— আল্লাহ কার কাছে বিয়ে হলো আমার। যে কিনা ভালবাসাটাও বুঝেনা এই বলে কেঁদে দিলো। আচ্ছা তুমি থাকো! এই বলে বালিশ নিয়ে মন নিচে শুতে চাইতেই। টানদিয়ে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম! আলতো করে কপালে ভালবাসার স্পর্শ একে দিলাম। মন এখনো কাঁদছে তাই নাকে নাক ঘষতেই!

— এই ছাড়া এখন সোহাগ দেখাতে হবে না! ( মন)

— ওহ তাই এ কথা বলে, মন কে আর কথা বলতে দিলাম না। ঠোঁঠের সাথে ঠোঁট হারিয়ে গিয়েছে। মনের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে তার পর “” আস্তে আস্তে মনের শাড়ীটা টান দিতেই “””” থাক আর বলবো না কীভাবে তাকায় আছে সবাই।

— খুব সুখে শান্তিতে দিনগুলিতে চলতেছিল। হঠাৎ একদিন মন আচার নিয়ে আসতে বলে।

— বাজার থেকে আচার নিয়ে আসার পর। আচার নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে, সে যা বলেছিল তাতে মনে হয় পৃথিবীটা আমার কাছে স্বর্গ মনে হচ্ছিল। খুশিতে চোখ দিয়ে পানি এসে পরে। কারণ আমার সোনা মনা টা যে মা হতে চলেছে। আর আমি বাবা।

— দিনগুলি স্বপ্নের মতো পার হতে হতে আজ মনের ডেলিভারী। বাহিরে বসে আছি। হঠাৎ বাচ্চার কান্নার আওয়াজ দৌঁড়ে গেলাম অপারেশন থিয়েটার রুমের দরজার। একটু পড় ডাক্তার বের হলো।

— ডাক্তার ম্যাডাম আমাদের কী বেবি হয়েছে?

— মিঃ মাহিন আপনার মেয়ে হয়েছে। মেয়ের কথা শুনেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলাম। হঠাৎ, মিঃ মাহিম, কিন্তুু মেয়ের মা বেঁচে নেই। আই এম সরি। ( ডাক্তার)

— ডাক্তারের মুখে এমন কথা শুনে পায়ের নিচের মাটি মনে হয় সরে যাচ্ছে। মুহূর্তের মাঝে সাজানে স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। বুক থেকে মনে হচ্ছে তাজা রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। আলতো পায়ে হেটে যাচ্ছি। আর কানে ভেসে আসছে মনের সে কথা গুলো ” জানো আমাদের একটা পিন্সেস হবে শুধু আমায় মম, মম বলে ডাকবে তোমায় ডাকবে নাহ্ ভালো হবেনা। জানো আমার মেয়ে যেদিন আমাকে মা বলে ডাকবে সেদিন যে আমায় কেমন লাগবে,।মনে হচ্ছে সেদিন আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। এই তুমি মুখটা বাংলার পাঁচ করে রেখেছো কেনো?যাও তোমাকেও বাবাই ডাকবে। এখন আমাকে পাপ্পি দিবা এওোগুলো। আর বুকে নিবে কেমন? আমার সুইট বর! “। কথাগুলো মনে পড়তেই দুচোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। মনে হচ্ছে” মনের পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটাকে গলা টিপে মেরে ফেলি। কিন্তু সেদিন রোজার কান্না সইতে পারিনি বুকে টেনে নিয়েছি।

— রোজাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকলাম। এক, এক করে দুটি বছর পার হয়ে যায়। একদিন শহর থেকে রোজাকে নিয়ে ফেরার মতো গাড়ি একসিডেন্ট করে তার পর সবাই হসপিটালে নিয়ে যায়। * সেন্স ফেরায় পর আমার সব মনে পড়ে। মনে পড়ে আমার দেশের কথা, তোমার কথা। আর মনে পড়ে। তখন মনের শেষ স্মৃতি রোজাকে নিয়ে বাংলাদেশে এসে পড়ি। আর এসেই তোমাকে খুজতে লাগি। আর বাসায় গিয়ে সব জানতে পারি। জানতে পারি ” রাইসার কথা।

—- অপরিচিতা জানো ” রোজার “মা বাবা দু’টোই আমি। “”

—- মেয়েটার আগামিকাল জন্মদিন! এখনই জন্মদিনের গিফট চাচ্ছে। যেদিন জানবে তার জন্মদিনই তার মা সন্ধ্যা আকাশের তারা হয়ে গেছে সেদিন হয়তো আর গিফট চাইবে না, । গতকাল আমার রোজা আম্মুর তৃতীয় জন্মদিন
….
— হুম মন রোজাকে জন্মদিতে সময় আমাকে চিরদিনের জন্য একা করে চলে যায়।! জানো আমার মেয়েটা তার মার দুধ পর্যন্তও খেতে পারেনাই। মা নামক একটা মধুর ডাক কখনো ডাকতে পারেনি। এই কথা গুলো বলে রোজার গালে মুখে চুমু দিয়ে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আর অপরি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো!এতোদিন তোমাদের কোনো খুজ নিতে পারিনি। স্বামীর কোন দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। ( রাফি)

— রাফি! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও! আমি না যেনে ওইসব বলছি। আর কে বলছে ” রোজার মা নেই। রোজার মা তো আমি এই বলে রোজাকে কুলে তুলে নেয়!

— সবাই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে রাফি আর অপরিচিতার দিকে?

— হঠাৎ মা, মা, তুমি ওই মেয়েকে কুলে নিচ্ছো কেনো?আর তোমার সাথে ওই লোকটা কে? ( রাইসা)

— মামনি, ওইটা তোমার বাবা! আর রোজা তোমার বোন।( অপরিচিতা)

— ছিঃ মা আমার বাবাই তো আছে।আমার বাবা কতো ভালো! আর লোকটা পঁচা ওইটা আমার বাবা হতে যাবে কেনো। মম তুমি পঁচা তুমি না বাবাই কে ভালবাসতে এখন কেনো অন্য লোককে আমার বাবাই বানাচ্ছো?

I hate you mon.I just hate you( রাইসা)

— সবাই রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে! রাফি অনেকটা বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!রুমটাতে পিন- পিনে নীরবতা বিরাজ করছে!

— মামনি ওমন বলেনা! ওইটা তোমার বাবা! তুমি যখন জন্ম নাওনি তখন তোমার বাবা একটা দুর্ঘটনাই হারিয়ে যায়! ( অপরিচিতা)

— ছিঃ মামনী তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি না বাবাইকে অনেক ভালবাসতে। বাবার ছবি বুকে নিয়ে কেদেছো! আর এখন অন্য একটা লোককে আমার বাবা বানাচ্ছে। তোমাকে আর মা ডাকবোনা।। আর মা কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা। তুমি চলে যাও। চলে যাও আমার সামনে থেকে। আমি বাবার সাথে থাকবো! ( রাইসা)

— এদিকে নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা বলে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলোনা চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়তে লাগলো!

— রাফি অনেকটা রাগি ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে!
**নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”**
— মামনী রাগ করে না মা আমার! আসো আমার কুলে আসো!এই বলে রাইসাকে কুলে নিতে গেলেই, মা আমাকে ছোঁবে না। তুমি পঁচা। তুমি আমার মা না।তুমি এমন কেনো বাবাকে না তুমি অনেক বেশি ভালবাসতে। এই তোমার ভালবাসা। তুমি বাবাইকে ভুলে যেতে পারো আমি না! ( রাইসা)

— মহারানী মা আমার! ওইটা তোমার বাবা! আর মমকে ওমন কথা বলতে নেই আল্লাহ নারাজ হয়। (আমি)

— তুমি চুপ করবা! তোমাকে কথা বলতে বলছি কি বাবাই! (রাইসা)

— মামনী, মা আমার তোমার বাবা বিদেশে ছিলো! তাই তুসি চিনো না! প্লিজ মামনি রাগ করেনা। চলো বাসায় চলো তোমার জন্য পায়েস রান্না করবো! ( অপরিচিতা)

— লাগবেনা! আমার বাবাই অসুস্হ তুমি বাবাইকে ভুলে গেলেই আমি ভুলতে পারবো না! বাবাই আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে মরতে বসেছিল। বাবাই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যেনো কেউ তোমার থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে। ( রাইসা)

— মামনি, মা আমার তুমি জেদ করোনা আর!রাফি তোমার মেয়েকে তুমি বুঝাও ( অপরিচিতা)

—- রাইসা, মামনি, রাজকন্যা আমার তোমার বাবা কান ধরেছে! তোমার বাবাই কে ক্ষমা করে দাও! ( রাফি)

— আমি আপনার মেয়ে না! আমি আমার বাবাই এর মহারানী! বাবাই আমাকে শক্ত করে ধরো ওই লোকটা নিয়ে যেতে চাইছে! ( রাইসা)

— মামনি, কেন বুঝতেছে না! তোমার বাবা এইটা! অপরিচিতা রাফিকে দেখিয়ে দিয়ে!

-তুমি যাবে এখান থেকে কতো মিথ্যা বলবে! বাবাই এর সাথে লিপিস্টিক নিয়ে খেলছো! একসাথে আমাকে নিয়ে থাকছো! আর এখন বাবাইকে ভুলে ওই লোকটাকে বাবাই বলে ডাকতে বলছো। কখনোই ডাকবোনা আমি! ( রাইসা)

— রাইসার এমন কথা শুনে মনে হলো সবার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো! কথা কেমন যানি করুণ দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে!

— নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে রাফি বের হয়ে চলে গেলে! অপরিচিতা দাঁড়িয়ে কাদছে।

—অপরিচিতা রাফিকে বোঝাও যাও আমি রাইসাকে বুঝিয়ে বলবো! অপরিচিতা আমার কথা শুনে রাফির পিছন পিছন চলে গেলো!

— রাফি বাসায় গিয়ে ভাবছে! ছিঃ আমি তো অপরি কে কত ভালবাসতাম আমার অবর্তমানে না কিছু ভাবতে পারছিনা! অতীতের স্মৃতিগুলো মনে করছে আর কাঁদছে। হঠাৎ দরজার কে যেনন বারবার নর্ক করছে! অনেকটা বিরক্তি নিয়ে শার্টের হাতা দিয়ে চোখ মুছে দরজা খুলতে দেখে যে অপরিচিতা।

—– রাফি! আমাকে ক্ষমা করে দাও! ( অপরিচিতা)

— ক্ষমা তো তোমায় সে কবেই করে দিয়েছি! আমি তোমাকে ডির্ভোস দিয়েছি! কোন দুশ্চরিএ মেয়ে আমার জীবনে প্রয়োজন নেই!তোর মতো দুশ্চরিএার মুখ দেখতেও ঘৃণা লাগছে। তোর মুখ আল্লাহ যেনো আর আমাকে না দেখায়। এই বলে ডির্ভোস পেপার টা বের করে দিলো! আমি সই করে দিয়েছি আশা করি তুই করে দিবে। ( রাফি)

— রাফির কাছে ডির্ভোসের কথা শুনে পায়ের তলার মাটি সরে গেলো অপরিচিতার ! মনে হচ্ছে দেহ থেকে প্রাণটা বেরিয়ে যাচ্ছে । মনে হচ্ছে বুকের পাজর গুলো চুরমার হয়ে যাচ্ছে। রাফিকে কি ভাবে বুঝাবে সে ভাষা জানা নেই অপরিচিতার । কাঁদতে কাদঁতে রাফির হাত থেকে ডির্ভোস পেপার টা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো অপরিচিতা।

— রাফির বুকটা ফেটে যাচ্ছে অপরিচিতার চোখে পানি দেখে। কারণ রাফি সব সহ্য করতে পারলেও অপরিচিতার চোখের পানি সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু কিভাবে ক্ষমা করবে অপরিচিতা। নিজের মেয়ে যদি মার সম্পর্ক এমন কথা বলে এসব ভাবতে ভাবতে ফ্লরে বসে কাঁদতে থাকে!

— রাফিরর দেয়া ডির্ভোস পেপারটা অপরিচিতা কেঁদে ভিজিয়ে ফেলে। অপরিচিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো ” আল্লাহ কি এমন অপরাধ করেছি যার শাস্তি এভাবে দিচ্ছো আমায়! জন্মের পর পরই মাকে তুলে নিলে।মা ডাক তো দূরের কথা একফোঁটা দুধও খেতে দাওনি।দাওনি মায়ের বুকে মাথা পেতে একটু শুয়ে থাকতে। সবাই স্কুলে আমাকে বলতো মা নেই আমার। আমি নাকি অপয়া জন্ম নেওয়ার সময় মাকে খেয়েছি। আল্লাহ তুমি তো যাকে পছন্দ তাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও তাহলে সবার কেনো তখন অপয়া বলতো। আল্লাহ তবুও তোমার কাছে কোন নালিশ করেনি। আল্লাহ তারপর মাথার উপর থেকে ধরদী বাবাটাকেও তোমার কাছে তুলে নিলে। বাবাতো আমার কষ্টের ঢালস্বরূপ ছিল। একটু দুঃখ পেলেই বাবা বুকে টেনে নিতো! সকল দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিতো। কিন্তু সে বাবাটাকেও তোমার কাছে নিয়ে নিলো! আমার কাছ থেকে মেয়েটাকেও কেড়ে নিলে মেয়েটার মুখে মা ডাক শুনলে সব দুঃখ ভুলে যেতাম। তার চাঁদ মুখটা দেখলেই কলিজাটা ভরে যেতো। কিন্তু মেয়েটার কাছেও খারাপ বানালে।বাঙালি মেয়ে নাকি স্বামীর বাড়ি যায় বউ সেজে আর বের হয়ে লাশ হয়ে। কিন্তু আল্লাহ তুমি আমাকে লাশ বানিয়ে বের করলে না। এখন জীবিত থেকেও মৃত লাশ আমি। আজ আমি আমার স্বামীর কাছে দুশ্চরিএ। আল্লাহ কি করবো এ জীবন দিয়ে।আমি কি দুঃখ পাবার জন্যই জন্য নিয়েছি। আল্লাহ আমাকে তোমার কাছে নিয়ে নাও! আল্লাহ তুমি না রহিম রহমান।কিন্তু আমি কেন এত কষ্ট পাচ্ছি। এসব মনে মনে বলতে বলতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে আসে বুঝেনাই। হঠাৎ পিছন দিক থেকে একটা কার্র এসে জোরে ব্রেক করলেও গাড়ি এসে অপরিচিতাকে ধাক্কা দেয়।

— রাফি রাতে শোবার সময় বালিশ টানদিতেই দেখে একটা ডাইয়ি!

…অনেক ক্ষণ ভেবে ডাইয়িটা খুলতেই দেখে ডাইরিতে নীল কালিতে লেখা ” তোমায় ভেবে লেখা ”
নীচে লেখা ” অপরিচিতা”!

— প্রিয় রাফি, আজ একটি বছর হয়ে গেলো! তোমার মেয়ে রাইসা মা ডাকতে শুরু করেছে! আজ যদি তুমি থাকতে হয়তো তার মা ডাকটা পূর্ণতা পেল।জানো রাফি, প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ নামায পড়ে আল্লাহ কাছে দোয়া করি যেনো তুমি ভালো থেকে। সবাই জানে তুমি মারা গিয়েছে। কিন্তু আমার মন বলে তুমি বেঁচে আছো! প্রতিটা রাত তোমার প্রতিক্ষায় থাকি! জানো যখন খুব তোমাকে মনে পড়তো তখন তোমার শার্টটা বুকের সাথে জড়িয়ে ভাবতাম তুমি আমার কাছেই আছো। বিশ্বাস করো প্রতিটা দিন প্রতিটা ক্ষণ তোমায় ভেবে পার করতাম। দিনগুলো তোমার স্মৃতিগুলো নিয়েই পার করতেছিলাম। যখন রাইসা ৩ বছরে পা রাখে তখন মেয়েটার কিডনী নষ্ট হয়ে যায়। মেয়েটা রাজকে দেখে বাবাই ডাকতো! কথা আপু রাজকে বাসা থেকে বের করে দিলে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজকে বাসায় নিয়ে আসি। জানিনা এ ডাইয়ি তোমার হাতে কখনো পৌঁছাবে কিনা। বিশ্বাস করো আমি কোন ভুল করিনি।
ইতি” তোমার অপরি”

— রাফি ডাইরিটা পড়ে আর নিজের কান্না লুকিয়ে রাখতে পারলো না। চোখ দিয়ে অবিরাম পানি পড়ছে। আর মনে মনে ভাবছে অপরিচিতার প্রতি বড় অন্যায় করে ফেলেছে। এসব ভাবতে ভাবতে অপরিচাতাকে খুজতে বের হয়ে পড়ে।

-এদিকে আমি রাইসাকে অনেক কষ্ট করে বুঝাতে সক্ষম হয় রাইসার প্রকৃত বাবা রাফি।

— কথাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বাসায় যায়। বাসায় যেতে যেতে বিকেল হয়ে যায়। রাইসা বাসায় বসে বসে কার্টুন দেখছে। আমি ড্রয়িং রুমে বসে আছি। হঠাৎ কথার ডাক, কোথায় রাইসার আব্বু একটু রুমে আসবে? ( কথা)

— কথার ডাক শুনে রুমের দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেলাম কথা টাওয়াল পড়ে আছে! হাতে শাড়ী! নিজের হাত দিয়ে চোখ দুটি ধরে ফেললাম। হঠাৎ কথা টান দিয়ে রুমের ভেতর নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

— ওই চোখ খুলো। চোখ বন্ধ থাকলে শাড়ী পড়িয়ে দিবে কেমনে! এই নাও শাড়ী পড়িয়ে দাও! ( কথা)

— এদিকে শাড়িটা হাতে নিয়ে কথার চোখে চোখ রেখে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে। কথার চোখ বলছে কথাকে আরো বেশি আপন করে নিতে। কথার চুল থেকে এক প্রকার সুভাস বের হচ্ছে মনে হচ্ছে পাগল হয়ে যাবো। কথার কোমড়ে শাড়িটা ঘুজতেই আমার হাতের স্পর্শে কেমন করে ওঠলো। কথার গরম নিঃশ্বাপ পড়ছে আমার মুখে। আস্তে আস্তে দুজনের চোখ বন্ধ হয়ে যায়। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট দুটি মিলিয়ে যায় মনে হচ্ছে অজানা এক ভালবাসার সাগরে ডুবে যাচ্ছিে।

— হঠাৎ রাইসা বাবাই বাবাই করে ডাকছে…

— রাইসার ডাকে দুজনের হুশ ফিরে। এদিকে সন্ধ্যায় রিসান আর পাখি এসে বাসর ঘর সাজিয়ে দেয়।

— আমি রিসান আর পাখিকে থাকতে বলি। রিসান, আর পাখি রাইসাকে নিয়ে পাশের রুমে চলে যায়।

— আজ আমাদের বাসর রাত। কি যে আনন্দ লাগছে। মনের মাঝে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। কত বছর পর ভালবাসা পূর্ণতা পাবে। কথাকে আপন করে নিবো। এসব ভাবতে ভাবতে রুমের দরজা খুলতেই দেখি। ফুলে- ফুলে রুমটা সাজানো। সবগুলো ফুলের মাঝে আজ আরেকটি উজ্জল ফুল চাঁদের আলোর মতো জ্বল- জ্বল করছে। বিছানায় বসতেই কথা এসে সালাম করলা।। কথাকে কুলে করে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিলাম। ঘোমটা সড়াতেই দেখে পূর্ণিমার চাঁদটা মনে হচ্ছে আমার ঘরে আজ উদয় হয়েছে।

— কি দেখছো ওমন করে? (কথা)

— পূর্ণিমার চাঁদ দেখছি। গোধূলির রং দেখছি। ফুলের সুবাস নিচ্ছি। মনের মাঝের রাজকুমারীটাকে বাস্তবের রাজকুমারীটার সাথে মিলিয়ে নিচ্ছি। ( আমি)

— ইশ! আমার বুঝি লজ্জা করেনা?( কথা)

— ওহ তাই বুঝি লজ্জা করে! আজ তোমায় সব লজ্জা ভেঙ্গে দিবো এই বলে কপালে একটা ভালবাসার স্পর্শ একে দিলাম। আস্তে আস্তে কথার ঠোঁঠে ঠোঁঠ মিলিয়ে দিলাম। মাথাটা কেমন যানি করে ওঠলো। মাথাটা ঘুরাচ্ছে। কথা এদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। আমিও কথাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ভালবাসার এক মহাসাগরে হারিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসলো, মাথাটা মনে হয় ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে।

—কথা আমাকে বাঁচাও আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমাকে আমি চেয়ে দেখতে পাচ্ছিনা চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। এই কথা বলার পর আর কিছু মনে নেই।

— রাজ কি হয়েছে ওমন করছো কেনো?এই রাজ কথা বলো প্লিজ। কি হয়েছে কথা বলো ওই কলিজার টুকরা কথা বলোনা। আমাকে একা রেখে কোথায় যাবে।আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা। কে আছো আমার স্বামীকে বাঁচাও। ( কথা)

— এদিকে কথার কান্না শুনে রিসান আর পাখি এসে দেখে রাজ অচেতন হয়ে পড়ে আছে। ভাবী রাজের কি হয়েছে? (রিসান)

— আমার জীবন কথা বলছেনা! আমার জীবনকে ছাঁড়া বাঁচবো না। প্লিজ তোমরা কিছু একটা করো ( কাঁদতে কাঁদতে কথা)

— হঠাৎ হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বললো ‘ সরি আমাদের কিছু করার নেই “”””
চলবে…..