#বাদামি_চোখ [১৫]
আমরা দুজনেই বলতে চাচ্ছি আমরা যে মেয়েকে আঁচ করেছি সে কেন এসবের পেছনে থাকবে?
কিন্তু দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছি কে আগে শুরু করে!
আমার উদিত ধারণা সেই মেয়েকে একদম স্পষ্টতর ধরা দিয়েছে, আর কোনো সন্দেহই নেই এখানে।
আমি কিছু না বলে হঠাৎই তনয়ের থেকে চোখ সরিয়ে কল রেকর্ডটা আবার শুরু করলাম। তনয় সেই ভাবনা চক্রেই আছে,হয়তো সে ধারণা করার চেষ্টা করছে তার প্রতি মেয়েটার কিসের এমন প্রতিশোধ নেওয়ার থাকতে পারে?
এদিকে রেকর্ডটা আবার শুনে আমি একেবারেই নিশ্চিত হয়ে ফোনটা রেখে দিলাম। আর তনয়ের হাত ঝাকিয়ে বললাম,
‘ অরলি তাসনিম!?
তনয় চমকে বললো,
‘ হ্যাঁ একদম! অরলিকে কি করে চিনো তুমি?
ওর কথার সাথে সাথে আমিও বললাম,
‘ আরেহ, আপনি কি করে চিনেন? মানে ওকে আপনার চেনার এবং শত্রুতা হওয়ার কোনো রাস্তা তো দেখতে পাচ্ছিনা।
তনয় দম নিয়ে বললো,
‘ আগে তুমি বলো তুমি কীভাবে চিনো আর তোমার সাথে কখনো কোনো ঝামেলা হয়েছিল কিনা?
আমি একটু ভেবে বললাম,
‘ নাহ আমার জানামতে ওর সাথে আমার কখনো ঝামেলা হয়নি, মানে আমরা সরাসরি কখনো কোনো বিষয়ে তর্কেও জড়াইনি। আর আমরা তো ইউনিভার্সিটিতে এসে পরিচিত হয়েছিলাম, একই ডিপার্টমেন্টে ছিলাম দুজন!
তনয় অবাক হয়ে বললো,
‘ কি বলো? কিন্তু আমি জানি সে এই ঢাকা শহরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই পড়ালেখা করেনি। তারা ঢাকাতে থাকেও না। আর সে তোমার এক বছর জুনিয়র!
আমি আমার ঠোঁটের উপর বিষ্ময়ের সাথে ডান হাত তুলে বললাম,
‘ তাইতো! আমিও জানতাম ও এখানে ওর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পড়ালেখা করতে এসেছে। তাদের পুরো পরিবার অন্য বিভাগ এবং অন্য জেলাতে থাকে! কোথায় বলেছিল আমার ঠিক মনে নেই এখন। কিন্তু সে এক বছর পর হুট করে ইউনিভার্সিটি থেকে চলে গিয়েছিল। তার মানে পরবর্তীতে সে নিজের শহরে গিয়ে এক বছর বাদ দিয়ে আবার ভর্তি হয়েছে! জানেন এক বছরেই আমার সাথে ক্লাসে বেশ ভালো বন্ধুত্ব করে নিয়েছিলো? ক্লাসে আসলে সে নিজে থেকে এসে আমার সাথে বসে গল্প করতো। তবে পরের ইয়ারে উঠে ওর কোনো খোঁজ পাইনি, আমরা এক অপরের ফোন নাম্বারও নেইনি। সেসময় ফোনে কথাও হয়নি তাই এখন আমি একদমই ওর কণ্ঠস্বর ফোনে চিনতে পারিনি। তার চেয়ে বড় কথা ওর ওই অভ্যাস! মানে স্বাভাবিক কথার মধ্যেও হেঁচকি উঠা, এটা ক্লাসে সবার নজরে ছিলো। কিন্তু আপনি কি খেয়াল করেছেন এতোগুলো ফোনের মধ্যে শুধু এই একটাতেই এই হেঁচকি শোনা যাচ্ছে?
তনয় মাথা ঝাকিয়ে বললো,
‘ ওই যে বললে এটা সবার নজরে আছে। এটা আমারও খেয়াল আছে। তাই সে এটাকে আঁটকে রাখতে চায়। আর সে কয়েক মিনিট এটাকে আটকাতে পারে, এরপর না চাইতেও অদ্ভুতভাবে হেঁচকে উঠে, তখন ওকে দেখলে মনে হয় কান্না করে এসেছে মাত্র। এমনকি কলটায় ভুল করে মনে হয় এটা প্রকাশ হয়ে গেছে। অথচ এসময় সে জোর গলায় হুমকি দিচ্ছিলো, হেঁচকি আসার কোনো কারণই নেই। এটা নিঃসন্দেহে অরলি, সে-ই এসব করছে।
তনয় এটা বলে আমার দিকে তাকাতেই আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
‘ আপনার সাথে পরিচয় কীভাবে সেটা বলেন তো?
তনয় আমার রাগী চেহেরায় তাকিয়ে এবার হাসতে হাসতে বললো,
‘ প্রতিশোধমূলক পরিচয় আমাদের!
আমি রেগে আবার বললাম,
‘ ফাজলামো রেখে সত্যিটা বলেন।
তনয় হাসতে হাসতে আমার কাছ থেকে উঠে তার বুকশেলফের দিকে এগিয়ে গেলো আর সেখান থেকে একটা ডায়েরি বের করে কিছুক্ষণ ঘেঁটে বললো,
‘ আমার জন্য মোট ৫৭ টা পাত্রী দেখা হয়েছে, অরলি হলো ৫৫ নাম্বার! আর অরলির সাথে এভাবেই পরিচয়! এই দেখো পঞ্চান্ন নাম্বারে ওর নাম লেখা আছে।
তবে জানো? খুব ইচ্ছে ছিল পাত্রী দেখায় সেঞ্চুরি করে তারপর বিয়ে করবো! কিন্তু তোমাকে দেখে সাধের ইচ্ছেকে মাটিচাপা দিয়ে ডায়েরিটাই আড়াল করতে হয়েছে। আর মন থেকে সেঞ্চুরি করার ইচ্ছেকেও বাদ দিতে হলো। পরবর্তীতে মনকে অনেক বুঝালাম, নিজেকে শান্তনা দিলাম এই বলে, হাফ সেঞ্চুরি কম কিসে, যদি এতেই জয়ী হওয়া যায়!?
আমি ওর এসব অদ্ভুত কথায় আর তীব্রতর রাগে নাক ফুলিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। একটানে ডায়েরিটা টেনে নিয়ে বললাম,
‘ সেঞ্চুরি না? ইচ্ছেকে নাকি মাটিচাপা দেওয়ায় মনে খুব কষ্ট জমেছে?
তনয় আমার কথা শুনে আরো হাসছে। আর আমি চোখ নামিয়ে ডায়েরিতে লক্ষ্য করলাম। সিরিয়ালের ছাপ্পান্ন পর্যন্ত ছাপ্পান্ন জনের নাম এবং পুরো ইনফরমেশন লেখা। আর পঞ্চান্নতে লেখা আছে অরলির নাম পাশে ব্রেকেট দিয়ে লেখা (হেঁচকি বালিকা)। এরপর ছাপ্পান্নতে আরো একটা নাম কিন্তু বিস্তারিত লিখা নেই।
আর এরপর আমার নামের সাথে লিখে রেখেছে ( আমার বউ)। পাশে স্যাড ইমোজি এঁকে এটাও লিখে রেখেছে ‘মনের মতো কাউকে পেলে সেঞ্চুরি করার দরকার হয়না!’
আমি ডায়েরিটা ভাঁজ করে এটা দিয়ে তনয়ের মাথায় একটা জোরে আঘাত করে বললাম,
‘ মানুষ কি ডায়েরিতে এসব উল্টা পাল্টা লিখে? আচ্ছা আচ্ছা আমি বুঝতে পারছি খুব দুঃখ নিয়ে আমাকে বিয়ে করেছেন? বাবা মার একমাত্র ছেলে, অন্তত ১০০ টা মেয়ে বেছে বিয়ে করতে না পারার কষ্ট তো আকাশবাতাসকেও কাঁদানোর কথা! আসলেই মাত্র সাতান্নতে থেমে যাওয়া উচিত হয়নি।
তনয় তার নিজের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শুধুই হেসে যাচ্ছে। আমি নিজ হাতে বুকশেলফে রেখে বললাম,
‘ সেঞ্চুরি টেঞ্চুরি রেখে আপনার প্রতি ওই মেয়ের প্রতিশোধ কিসের বলুন?
তনয় এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার বিছানায় বসলো আর আর বলতে লাগলো,
‘ আমার জন্য এতো মেয়ে দেখেও আমার মা মনমতো কাউকে পাচ্ছিলোনা। আর আমার মনমতো তো একদমই না। অবশেষে অরলির সবকিছু মা’র ভালো লেগেছিল শুধু কথা বলার ধরন ছাড়া। আমিও মার উপর সব ছেড়ে দিলাম। এদিকে সবার সাথে কথা বলে মা মেনেই নিয়েছিলেন সবদিকে সবাই যথাযথ পরিপূর্ণ হয়না। তাই অরলিই ফাইনাল! তারপর বিয়ের কথাও প্রায় পাকা ছিল, এর মধ্যে কার কথা শুনে যেন আবার আরেকটা মেয়েকেও দেখলো, সেটা শুধু বাবা দেখেছে। ওইদিকে অরলির সাথে কথা প্রায় ঠিকঠাক সেই অবস্থায় হুট করে তোমার সন্ধান পেলো!
আর সেখানে বেশ সংকোচ নিয়েই প্রথম আমাকে পাঠানোর কথা ভাবলো। আর সেদিন যখন তোমাকে দেখে সেখান থেকে আমি ফিরলাম, তখন আমার পরিবার প্রথমবার আমার চোখেমুখে খুশির ফোয়ারা দেখলো,তারা বুঝলো এতদিনে আমার কাউকে খুব বেশি পছন্দ হয়েছে। এরপর সবাই তোমাকে দেখার পরে তো তোমাকেই পুরোপুরি বউ হিসেবে পাকাপোক্ত করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো!
অন্যদিকে আমার মা অরলির পরিবারকে কীভাবে আলাপ আলোচনা বদলানোর কথা বলেছিলো জানিনা ! তবে ওদেরকে যেভাবেই হোক মানা করে দিয়েছিলো। আর এর আগে অরলির সাথে আমার ১০ মিনিটের মতো দেখা সাক্ষাৎ হয়েছিল, এবং তখন দেখেই মনে হয়েছিলো আমাকে মেয়েটা অনেক পছন্দ করেছে, তবে বিশ্বাস করো আমি ওর মধ্যে আমার ভেতর কোনো মুগ্ধতা খুঁজে পাইনি। সে অবশ্যই সুন্দরী ছিল, কিন্তু সবার চোখ আসলে সবার সৌন্দর্য্য বুঝার জন্য না। দেখো তোমাকে দেখেই আমার চোখ নিজ গন্তব্যে ফিরতে চাচ্ছিলোনা, আরো দেখার আকুলতা প্রকাশ করছিলো শুধু। আমার মন বারবার আমাকে বলছিলো একেই চায় তোর! তাহলে আমি কি করবো বলো? কি করার আছে আমার? আমাদের তো আমাদের মনের কথাই শোনা উচিত তাইনা? কিন্তু হতে পারে সেই পর্যায়ে বিয়ে ভেঙে অন্য জায়গায় আমার বিয়ে সংবাদে তার মধ্যে রাগ, জেদ বেড়ে উঠেছে। সে খোঁজ নিয়ে হয়তো এটাও জেনেছে যে তোমার বাদামি চোখে আমি বেশি আকৃষ্ট হয়েছি, তাই বারবার এই কথাটাই বলছিলো। এছাড়া এই শত্রুতায় আমি আর কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।
আমি তনয়ের কথাগুলো অবিশ্বাস্যভাবে শ্রবণে নিচ্ছি, পারিবারিক সম্মতিতে বিয়েতে বর কনের কি দোষ থাকে? গায়ে হলুদে গিয়েও কোনো ত্রুটিতে বিয়ে ফিরে যায়। তবে এসবকে সময়ে যাচাই করার উপরে ছেড়ে দিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম,
‘ অরলি তো নিজ গন্তব্যে চলে গিয়েছিলো, তাহলে সে আবার এই শহরে?
তনয় ধিরে বললো,
‘ ওই কি আত্মীয় যে! ওখানেই তো আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। এখন কোথায় আছে, কাকে সঙ্গী করে এভাবে ঘুরছে আর এসব করছে তা আমার অজানা।
আমি তনয়ের পাশে বসে গম্ভীর হয়ে বললাম,
‘ আপনাকে হতে পারে তার খুব ভালো লেগেছিলো, এবং ভালোবেসে ফেলেছিলো। আর তাই এটা হতেই পারে সে এভাবে বিয়ে ঠিকঠাক করেও ভেঙে দেওয়ায় খুব রেগে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেছে।
তবে পরবর্তীতে সে আমাকে দেখে হয়তো আমাকে নিয়ে আমার না জানা কোনো জেদ তার মনকে আরও বিষিয়ে দিয়েছে। শুধু একটা কারণে অরলি এমন করবেনা, কয়েকটা কারণ তো নিশ্চয়ই আছে!
তনয় আমার দিকে চিন্তাভরা চোখে ফিরে কিছু বলতে গিয়েও বললো না। কিছু না বলে হঠাৎ দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো।
আমি বুঝলাম না সে এভাবে চলে গেলো কেন? হতে পারে জরুরী কোনো কাজের কথা মনে পড়েছে।
তবে ওর চলে যাওয়ার থেকেও বেশি ভাবছি অরলির কথা!
মেয়েটাকে আমি বেশ সাদাসিধে বলেই জানতাম, এক বছরের চেনাজানা তো কম কিছু নয়। আচ্ছা আমার প্রতি কি ওর কোনো রাগ আছে?
আর ওই ম্যাগাজিনে আমার লেখা কবিতা? আমার হারিয়ে যাওয়া ফোন? এসবের সাথে অরলির কি সংযোগ থাকতে পারে? আমার সাথে কিছু তো গোলমাল নিশ্চয়ই আছে! যা আমি জানিনা।
তবে তনয়কে ভরসা করে আমি আমার মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে দরজায় দাঁড়িয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। দেখলাম, ইতোমধ্যে সবাই রান্নার কাজে বেশ ব্যস্ত হয়ে গেছে । আমাকে নিয়ে যেতে আসা আমাদের বাড়ির লোকজনকে সমাদৃত করতে আজকে এখানে ছোটখাটো আয়োজন করবে। তনয়কে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে কিনা সেটাই দেখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু দেখতে পেলাম না।
এদিকে ৮ বছর বয়সী একটা পিচ্চি বলে উঠলো,
‘ কাকা নেই, চল নতুন কাকীর কাছে যাই!
বলেই ওরা এদিকে ছুটে এলো। আমিও ওদেরকে দেখে দরজা খুলে হেসে দাঁড়ালাম। ওরা আসতেই এক এক করে নাম আর পরিচয় জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। পরে বুঝলাম ওরা তনয়ের চাচাতো ভাইবোনের বাচ্চাকাচ্চা। ওরা অনেক বড় হয়ে গেছে, আর তনয় মাত্র বিয়ে করেছে। আমাদের এখন ছেলেমেয়ে হলে এদের থেকে অনেক ছোট হবে। আর এমন একটা হাস্যকর ভাবনা অজান্তেই মাথায় চলে এলো আর আমি চাপা হাসিকে মূহুর্তে ভেতরেই চাপিয়ে রাখলাম। অন্য হাসির তালে ওদের সাথে গল্প করতে লাগলাম। ওরা বিয়ে উপলক্ষে অনেকদিন পর এক জায়গায় মিলিত হয়েছে, এমনিতে নাকি একেকজন একেক এলাকায় আলাদা আলাদা বাসায় থাকে।
এদের সাথে কথা বলার অনেক সময় পরে ওদের দুজনের মায়েরা এসে প্রবেশ করলো। সম্পর্কে তারা ভাবি হয়, তবে ওদের মধ্যে রসরঙ্গের পরিমাণ কম। তবে এই মূহুর্তে এসে বললো,
‘ আরে বউ দেখি একা সাজগোজও করতে পারেনা। এভাবেই বসে আছে এখানো! এই বাচ্চারা তোমরা এখন যাও, বউকে বউ বানাতে হবে তো।
আমি উনাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললাম,
‘ সাজানোর জন্য আজ লোকজন আসবেনা? আমি তো এটা ভেবেই এভাবে বসে আছি।
উনাদের মধ্যে একজন হেসে বললো,
‘ আমরা কি লোকজন না? আচ্ছা শুধু তাকিয়ে দেখো ওদের থেকেও কতো ভালো সাজাতে জানি!
অপরজন উনার সাথেই বললো,
‘ আজকে আসার কথা থাকলেও ওদেরকে মানা করে দেওয়া হয়েছে। এখানকার আজকের আয়োজন তেমন জাঁকজমক হবেনা কারণ তোমাদের এখান থেকে কম সংখ্যক মানুষ আসবে। তাই এসব বিরক্তিকর মেকাপ করার কি দরকার বলো? এতো ভারী মেকাপে স্কিনের ক্ষতি হবে ভেবে আমরাই বারণ করে দিয়েছি। তবে তনয় চেয়েছিলো।
আমি এটা শুনে এবার হেসে বললাম,
‘ তাই বলেন! আসলে আমারও ভারী মেকাপ পছন্দ নয়। আচ্ছা তাহলে আপনারাই দেখেন কিভাবে সাজবো!
বলার পরে উনারা দুজন মিলে আমার শাশুড়ীর দেওয়া সেই শাড়ীটা পরিয়ে সুন্দর করে চুল ঠিক করে হালকার মধ্যেই বেশ আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তারপর আরেক দফা বউ দেখা আর ছবি তুলতে সবাইকে এখানে ডেকে দিলো।
মূহুর্তেই এই রুম মানুষে পরিপূর্ণ। এরপর এই জায়গা আর আর খালি হলোনা,তনয়ের সাথেও আর দেখা হলোনা।
একদম পড়ন্ত বিকেলে যখন আমাদের ওখানকার সবাই খেয়েদেয়ে জিড়িয়ে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া করলো তখন একবার তনয় রুমে এসেছিলো পোশাক পরিধান করতে। সবার সামনে দিয়েই বাথরুমে গেলো এবং পোশাক পরে আবার বেড়িয়ে গেলো।
আমাকে বিদায় দেওয়া পর্যন্ত কেউই আর আমাকে একা ছাড়লোনা।
যাওয়ার সময় শাশুড়ী মা বারবার ঝাপসা চোখে বলে দিলেন,
‘ আগামীকাল তোমরা ফিরবে! নয়তো একা আমি দমবন্ধ হয়ে মরে যাবো।
এতে তনয় হ্যাঁ সম্মতি দিলো।
সবার ভীড়ে লিয়নের বউকেও দেখা যাচ্ছে। লিয়নের বউয়ের কথাগুলো আজ শোনা হলোনা। আর লিয়নও কিছু বলতে চাচ্ছিলো যেটা আসলেই আমি শুনতে চাইনা।
তবে এখন অরলির থেকে অনেককিছু শোনার ইচ্ছে। গাড়ী বসার পরেও কিছুক্ষণ পর্যন্ত বিদায়ের হাত নাড়ানো অব্যাহত থাকলো।
এরপর সবাইকে আড়াল করার পরে আমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে নড়েচড়ে বসলাম।
তনয় মজার ছলে ইচ্ছে হেঁচকি তুলে বললো,
‘ কান্না পাচ্ছে খুব!
আমি চোখ বাঁকিয়ে বললাম,
‘ আমি জানি আসলেই আপনার কষ্ট হচ্ছে, কেননা মাকে ছেড়ে যাচ্ছেন। তবে এমন হেঁচকি তোলার মানে কি? পরে দেখবেন এমন বদস্বভাব আপনারও হয়ে গেছে!
তনয় হাসতে হাসতে পকেট থেকে ফোন বের করলো
আমি ওর ফোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘ নতুন ফোন?
তনয় কিছু একটা করতে করতে বললো,
‘ কিনলাম আজ। ওই সিম বাতিল করে সিমও তুলেছি । এখন হেঁচকি বালিকাকে ফোন করে প্রথম বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আনন্দ শেয়ার করবো।
ওর কথায় আমি নিঃশব্দে হাসলাম। তনয় সত্যি সত্যি ওকে ফোন দিলো।
আর সাথে সাথে রিসিভও হলো। আর রিসিভ করে ওই মেয়ে ন্যাকা স্বরে বললো,
‘ গাড়ীতে তুমি? শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছো বউ নিয়ে তাইনা?
তনয় আমার দিকে তাকিয়ে চোখ একটু বড় করে আবার ফোনের দিকে মনোযোগ দিয়ে জবাব দিলো,
‘ বিয়ে করেছি, তো শ্বশুরবাড়ি যেতেই হবে। আর আমার শ্বশুরবাড়ি কাছেই, আপনার সাথে কথা বলতে বলতেই পৌঁছে যাবো। তবে আপনাকে বিয়ে করলে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছাতেই রাত পোহাতে হতো!
ওপাশ থেকে জবাব এলো,
‘ মানে? কি বলছো এসব?
আমি আমার মুখ চেপে হাসছি! আমি জানি মেয়েটার এই ভাব কিছুক্ষণ পরে আর অক্ষত থাকবেনা।
এদিকে তনয় তখনি সোজাসাপটা বললো,
‘ মানে কি জিজ্ঞাসা করছেন? আপনি জানেন না বুঝি? আপনাদের বাড়ি যেতে এখান থেকে সুদূর পথ পাড়ি দিতে হয়,মিস অরলি তাসনিম!
তনয় এই কথাটা বলতেই একটা বিকট আওয়াজ আসলো ওই প্রান্ত থেকে, আর সাথে সাথে কলটা কেটে গেলো।
চলবে……
লেখাঃ #তাজরীন_খন্দকার