বিনিদ্র রজনী পর্ব-০৮

0
333

#বিনিদ্র_রজনী
#পর্ব_৮_অংশবিশেষ
#মুমতাহিনা_তারিন

মানুষের সারাটা জীবন একটা শিক্ষাক্ষেত্র । নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে তুলির একটু সমস্যা হলেও যথাসম্ভব চেষ্টা করছে সে । সাথে শাপলা বেগমের ভালোবাসা আর যত্নের কথা তো বাদ । বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় বাচ্চাদের বাড়তি পড়িয়ে একটু বেশি বেতন পাবে তুলি । প্রথম দিনটা কেমন তাড়াতাড়ি কেটে গেলো । স্কুলের স্যার ম্যাম দের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লেগেছে । একটা শিক্ষিত পরিবেশে থেকে হয়তো একটু আরাম পাবে তুলি । গ্রামে তার সম্পর্কে জানাজানি হলে হয়তো আর মুখ দেখানো যেত না । মানুষ যাচাই বাছাই না করেই তার উপর দোষ দিয়ে দিত আর সেগুলো মেনে নিয়ে একটা আড়ষ্ট জীবন পার করতে হতো ওকে ।

বেলা কেবল দুটো নিজের ফ্ল্যাটের জানালার কাছে বসে আছে তুলি । গোসল করে নামাজ পরা শেষ । শাপলা বেগম বিছানায় গামছা বিছিয়ে খাবার বাড়ছে ।

” কেমন কাটলো আজকে?কষ্ট হচ্ছে নাকি”

শাপলা বেগমের দুশ্চিন্তা ভরা কণ্ঠের এমন কথা শুনে হালকা হাসলো তুলি । এই সেই আম্মা তো যে ছোটো বেলায় একটু পান থেকে চুন খসলেই পিঠে কয়েকটা মার বসিয়ে দিত । আর এখন কতই নিয়ে মিষ্টি মাখা কথা বলছে ,,মেয়েরা বুঝি এমনই হয়!আম্মার দিকে স্নেহের দৃষ্টি নিয়ে তাকালো তুলি । কণ্ঠে এক রাশ ভালোবাসা নিয়ে বললো –

” অনেক ভালো আম্মা,,,,তুমি কেনো টেনশন করো না তো ”

” তোর এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। আর এখন তোর কাজ করতে হচ্ছে । পেতে বাচ্চা আসলে মেয়েরা মায়ের কাছে আসে যত্ন পাবে ভালোবাসা পাবে বলে আর এখন ,,,”

শাপলা বেগমের কথা শেষ না হতেই দিয়েই কণ্ঠকে আরেকটু নরম করলো তুলি । নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে মায়ের কাছে এসে বসলো । শাপলা বেগমের চোখে জল চিক চিক করছে । নিজের মেয়ের সাথে কেনো এমন করলো আল্লাহ ভেবে পায়না শাপলা বেগম । বার বার আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা চাচ্ছে শাপলা বেগম ।

” তুমিই তো বলো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই। তাহলে এমন কথা বলছো কেনো? আমি সব কিছু ধীরে ধীরে মেনে নিচ্ছি । তুমিও সব কিছু ভুলে যাও আম্মা । তুমি এমন করলে আমার পক্ষে নিজেকে গুছিয়ে নিতে বড্ড কষ্ট হবে ”

” হুম আর ওমন বলবো না মা। ”

_______________________

ভর দুপুরে লাঞ্চ টাইমে বাইরে এসেছিল আদনান । রাস্তায় জ্যাম লেগেছে । একটা রিকশার উপর এক দম্পতি বসে আছে মেয়েটা ছেলের কাধে নিশ্চিন্তে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে ।ছেলেটা মেয়েটার হাত আলতো করে ধরে গল্পঃ করছে । আদনান এর বুকটা কেমন শূন্য লাগলো । এমন তো তুলি আর সে হতেই পারতো মেয়েটা কত কি না করেছে আদনানের ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কিন্তু আদনান বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে । তুলিকে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড ভেবে নিয়েছিল সে ।

সারাদিন অফিসে কাজ করে সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় এসেছে আদনান । শরীর অনেক ক্লান্ত! বাসায় এসে সোজা নিজের রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা আটকে দিলো আদনান । আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করছে আদনান চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে কেমন যেনো শুকিয়ে গেছে মুখ । খাবার খেতে ইচ্ছা হয়না ভালো লাগেনা রান্না। রাহেলা খালা ভালো রান্না করলে মুখে রূচে না আদনানের । রান্নায় সেই ভালোবাসার স্বাদ টা আর নেই ।

এভাবেই কেটে গেছে আরও দুইমাস….

তুলির পেট স্বাভাবিক এর তুলনায় অনেকটা বেশি ফুলে গেছে । এখন অতটা ও কষ্ট হয়না অফিসে যেতে । আগে ছোটো ছোট বাচ্চাদের পড়ানোর সাথে সাথে ক্লাস ফোর ফাইভের স্টুডেন্ট দের ক্লাস নেয় তুলি । তবে প্রতিদিন যেই বিষয়ে ক্লাস নেবে সেই বিষয়টা ভালো করে পড়ে নেয় । আজকে রবিবার ,আকাশ মেঘলা হয়ে আছে পরিবেশটা একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা তাই ,কিছু সবজি কিনতে এসেছে । শাপলা বেগম বাসায় আছে মালতী সাথে এসেছে তুলির । মালতীর সাথে অনেক ভাব হয়ে গেছে মা বেটির । ছেলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে আর স্বামী ব্যাংকে চাকরি করে । সারাদিন বাসায় বসে বসে সময় পার করত মালতী কিন্তু তুলির আসার পর আর কোনো সমস্যা হচ্ছে না মালতী বেগমের। শাপলা বেগম ও জামা কাপড় বানানোর কাজটা শুরু করেছে যাতে তুলির উপর বেশি চাপ না পড়ে । মোটামুটি ভালো ভেবেই তাদের দিন চলে যাচ্ছে ।

ব্যাগ ভর্তি সবজি কিনেছে তুলি বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরোখ করে কেনা । মালতী বেগম সামনে কোনো একটা কাজে গিয়েছে সেজন্য দাড়িয়ে আছে মুখটা ঘামে ভিজে গেছে তুলির । উড়নার পাড় দিয়ে কপাল মুছে যখন কল দিবে মালতী বেগমকে তখন কারো ভরাট কণ্ঠ কানে আসলো –

” ভাবি কেমন আছেন?”

তুলি উক্ত বাক্যের উৎস খুঁজতে সামনে তাকালো । আদনান কলেজ ফ্রেন্ড ফারহান…হাস্যজ্জ্বল মুখে চেয়ে আছে তুলি । তুলি বিনিময়ে একটা সুন্দর হাসি উপহার দিলো ফারহানকে ।
” আলহামদুলিল্লাহ আপনার কি অবস্থা ? কেমন আছেন ?”

“আলহামদুলিল্লাহ,, আর এইখানে কি করছেন ভাবি?আদনানের তো আবার ঢাকাতে ট্রান্সফার হয়েছে । এক মিনিট আপনার কি বাবু হবে? ”

ফারহানের এমন প্রশ্নে তুলি কেমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেলো । হয়তো ফারহান নরমাল ভাবেই বলেছে কিন্তু শুনতে কেমন অদ্ভুত লাগল তুলির ,,, তবুও একটু হেসে প্রতিউত্তর করলো,

” হ্যাঁ। পাঁচ মাস চলতেছে ”

” বাহ আমি তো তাহলে মামু হয়ে যাবো । আদনান তো কিছুই বললো না । আর এই অবস্থায় আপনাকে দিয়ে বাজার করাচ্ছে !!”

” আসলে আমার আর উনার মাঝে আর কিছু নেই ভাইয়া। বলতে চাইনি কিন্তু একটা মিথ্যা কে ঢাকতে গেলে আরো বলতে হবে তাই বলতে হলো”

” মানে!!!!”

” আমাকে উনাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে আমার চরিত্রে সমস্যা আছে তো তাই । বাদ দেন ভাইয়া ভালো থাকবেন আর কাউকে কিছু বলার দরকার নেই আমি ভালো আছি ।”

আর কথা বাড়ালো না তুলি সামনে গিয়ে একটা রিক্সা তে উঠে গেলো । আরেকটু সামনে গেলেই মালতী আন্টিকে পাওয়া যাবে ভেবেই রিকশা চালাতে বললো । এতক্ষন ছায়াতে দাড়িয়েছিল তুলি কিন্তু ফারহানের আগমনে আর থাকা হলো না ।

ফারহান রাস্তার পাশে এখনো স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে । আদনান এমন কিভাবে করতে পারলো! তুলি যে মিথ্যা বলেনি সেটা বুঝতে পেরেছে ফারহান । কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না । তুলিকে আদনান তেমন পছন্দ করত না সেটা সবার জানা কিন্তু তাই বলে জল যে এত দূর গড়াবে কে জানত!!!

____________________

আদনান আর অরোরার বিয়ে ঠিক হয়েছে কিছুদিন আগে । আর তিনদিন পরেই আদনানের বউ হবে অরোরা। আর তুলিকে ডিভোর্স পেপার পাঠাতে চেয়েছিল লিতুন বেগম কিন্তু তুলির কোনো খোঁজ পায়নি অগত্যা নিজের কাছে সব কাগজ রেখে দিতে হয়েছে তাকে । এখন সে নিশ্চিন্ত আদনানের যোগ্য স্ত্রী অরোরা হতে পারবে আরো ছোটবেলায় একসাথে বেড়ে উঠা আন্ডারস্ট্যান্ডিং ও ভালো তাই কোনো সমস্যা অনুভব করতে পারছে না লিতুন বেগম ।

#বিনিদ্র_রজনী
#পর্ব_৮_পরবর্তী_অংশ
#মুমতাহিনা_তারিন

গ্রীষ্ম চলে গেছে বর্ষাকাল ও চলে গেছে এখন শরৎকাল আকাশে সাদা মেঘ গুলো তুলোর ন্যায় ভেসে বেড়াচ্ছে । নদীর ধারে কাশফুল গুলো মাথা উচিয়ে দাড়িয়ে আছে । অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ উপভোগ করছে তুলি । সারাদিন তো স্কুলে কাটিয়ে দেয় নিজেকে ব্যস্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তুলি কিন্তু আদেও সব ভুলের মাফ পাওয়া সম্ভব?রোহানের কল পেয়েছিল গতকাল রাতে অনেক কিছুই বলেছে রোহান ফিরে যেতে বলেছিল,, কিন্তু যার কাছে ফিরে যাবে সে ই যদি তাকে না চায় তাহলে কেনো যাবে? আর যারা তার চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করে দিলো সেইখানে যাবে!!! ওদের উপর তুলির কোনো রাগ নেই অভিমান নেই যাদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই সেইখানে তাদের উপর কিসের রাগ দেখাবে সে?

আদনান এর কথা জিজ্ঞেস করবে না করবে না করেও করলো ,,,যতোই হোক ভালোবাসে তাকে এতো সহজে ভালোবাসা নিঃশেষ করে কি সম্ভব? তাকে ছাড়া কেমন আছে সে সেইটা জানার তীব্র ইচ্ছা নিজের মধ্যে কতক্ষন বা লুকিয়ে রাখবে তুলি? রোহান বিয়ের বিষয়টা জানা সত্ত্বেও কিছু বললো না তুলির সাথে কথা বলে তার বড়ো একটা বিষয় বুঝতে পারলো আদনান যতই ওকে মিস করুক কিন্তু নিজের জীবনে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তুলি? এখন ওর বিয়ের সম্পর্কে জানলে হয়তো বাইরে থেকে কিছু প্রকাশ করবে না ঠিকই কিন্তু মনটা ভেঙে যাবে ।

আছরের আজান দিচ্ছে,,, মনে মনে আযানের উত্তর দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো তুলি নিজের ফুলে উঠা পেটের উপর হাত দিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের মনের কথাগুলো আউড়ে নিলো । কেউ না জানুক কেউ না বুঝুক আল্লাহ তো জানে সে কোনো দোষ করেনি তাহলে নিজেকে প্রমাণ করার কোনো দরকার নেই তার ।

আর বসে থাকলে চলবে না বাসায় গিয়ে আসরের নামাজ আদায় করতে হবে । আল্লাহর কাছে নিজের সন্তানের জন্য হাজারটা দোয়া করতে হবে ।

অনেকদিন পর একা একা একটু পার্কে এসেছিল তুলি ,,,যে পার্কটা তৈরি করেছে তার রুচি বোধের প্রশংসা না করলেই নয় । নদীর পাশে পার্কটা হওয়ায় এর সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে । যেকোনো প্রকৃতি প্রেমীর কাছে এটা সময় কাটানোর আদর্শ স্থান । পার্কটা তুলির বাসা থেকে বেশি দূরে না হওয়ায় তুলি যাওয়ার কথা বলাই দ্বিমত পোষণ করেন নি । মেয়েটা আর কতদিন ঘরে পড়ে থাকবে! ওর একটু আলাদা সময় দরকার ভেবেই যেতে দিয়েছেন । কিন্তু একা একা যেতে দিয়ে এখন ভয় লাগছে শাপলা বেগমের ,,,

____________

হুট করেই লিতুন বেগম অরোরার সাথে বিয়েটা ঠিক করে ফেলেছে আদনানের। অফিস থেকে ক্লান্ত শরীররে বাসায় আসতেই চমকে যায় আদনান বসার ঘরে অরোরা সহ ত্তার আব্বু আম্মু সবাই উপস্থিত। আদনানকে দেখে দ্রুত পেয়ে এগিয়ে আসে লিতুন,,,,নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বলে । আদনান কিছুই বুঝতে পারলো না হঠাৎ কি ঘটছে সাধারণ ভাবেই ভেবে নিলো হয়তো অরোরার আব্বু আম্মু বেড়াতে এসেছে তাই নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো । কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আদনানের হাতে আংটি উঠিয়ে দিল আদরী,,,আদরীর চোখে মুখে আনন্দ উপচে পড়ছে,,, প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিজের মায়ের উপর ফেলতেই ইশারায় অরোরাকে আংটি পড়িয়ে দিতে বললো । মায়ের এমন সিদ্ধান্তে গোটা আকাশ যেনো আদনানের মাথায় ভেঙে পড়লো । অবিশ্বাস্য চোখে অরোরার দিকে তাকাতেই অরোরা লাজুক হাসি দিল । এই হাসি আর এমন পরিবেশ দেখে যা বোঝার সব বুঝে গেলো আদনান। নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্বেও অরোরাকে আংটি পরাতে বাধ্য হলো আদনান। নিজের মাকে সবার সামনে অপমান করা তার পরকখে সম্ভব না আর ওর পক্ষে অপ্রাপ্তব়স্কদের মত আচরণ কেউই আশা করে না ।

বিয়ের কথা অরোরা সবাইকে নিজ থেকেই বলে দিয়েছে । অরোরা আর আদনানের বিয়ের কথা শুনে সবাই অনেক অবাক হলেও পরে সাভাবিক ভাবেই নিয়েছে । বিয়ে তো করতেই পারে আরো এতদিনের বন্ধুত্ব কিন্তু আদনানের ফ্রেন্ড সার্কেল এই বিষয়টা একটু অন্যরকম দৃষ্টি দিয়ে দেখছে । কারোর বিশ্বাস হচ্ছে না আদনান আর অরোরার বিয়ে ,,,, তাও ফ্রেন্ড তাই তাদের পরবর্তী জীবন যাতে সুখের হয় তাই সবাই দোয়া করলো ।

এতদিন অনেক চেষ্টা করেছে তুলিকে খোঁজার কিন্তু কোথাও তার খোঁজ পায়নি আদনান । কিছুদিন আগে লিতুন বেগম তুলির ভাবীদের বাসায় ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে ছিলেন কিন্তু তুলি না থাকায় ডিভোর্সটা হয়নি । কিন্তু সেসব বিষয় একেবারে গায় লাগায়নি অরোরা আর লিতুন বেগম। অরোরা নিজের স্বপ্নের সংসার সাজাতে ব্যস্ত । নিজের কাজ ছেড়ে দিয়ে আদনানের অফিসে চাকরি নিয়েছে তুলি । যদিও একটু কম বেতন তবুও অরোরা আদনানের পাশে থাকবে ভেবে খুশি ,,,। আদনান সব সহ্য করে নিচ্ছে,,কি বলে আটকাবে আদনান?তুলি তার স্ত্রী! তুলিকে ভালোবাসে!!? এসব প্রশ্নের উত্তর তো আদনান দিতে পারবে না । হ্যাঁ এতদিন খুব ভালো করেই বুঝে গেছে আদনান এই অনুভূতিটা ভালোবাসার ও তুলিকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে,,, কখন! নিজেই জানে না । আয়নার সামনে নিজের শরীর দিয়ে বেয়ে পড়া পানির ফোঁটা দিকে তাকিয়ে নিজের সাথেই এতক্ষন এসব কথা বলছিল আদনান । হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলে রাখা ফোনটা ভাইব্রেট করলো ,,, ঘাড়ে তোয়ালে ঝুলিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো আদনান।

” আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আর অরোরা বিয়ে করছিস!”

গলা শুনেই ফারহান কল করেছে বুঝে গেলো আদনান । কানের সাথে ফোন চেপে ধরে একটু হাসলো আদনান প্রতিউত্তরে বললো –

” কেন বিশ্বাস না হওয়ার তো কিছু নেই । ফ্রেন্ডের সাথে ফ্রেন্ডের বিয়ে হয় না নাকি?”

” সেটা না ,,,তুই এতটা পাষাণ কিভাবে হলি রে?একটা মেয়ে তোর বেবি নিয়ে কত কষ্ট করছে আর তুই বিয়ে করছিস বাহ!”

” হোয়াট! কোন মেয়ে?কর কথা বলছিস তুই?”

” নাম ও ভুলে গেছিস! আর কোন মেয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে ???আমি তুলির কথা বলছি প্লিজ ডোন্ট সে দাট তুই কিছু জানিসনা”

” তুলি প্রেগনেন্ট!!!”

” হ্যাঁ ”

” তোকে কে বলেছে? আর তুই কিভাবে জানলি?”

” আমি নিজে চোখে দেখেছি আর তুলির সাথে কথা ও বলেছি ”

আর কোনো কথা বলার আগেই আদনানের ফোন বন্ধ হয়ে গেলো । আদনান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না । ও বাবা হবে ! ওর রক্ত একটা ছোটো প্রাণের শরীরে প্রবাহিত হচ্ছে । আদনান কি করবে কিছু বোঝে ঊঠতে পারছে না । ফারহানের নাম্বার শুধু ওর ফোনেই আছে কোথাও লেখা নেই । তাই দিক বেদিক শূন্য হয়ে স্টোররুমে চলে গেলো । ঘরে ঢুকতেই নাকে একটা মিষ্টি সুবাস আসলো কিন্তু সেইসব নিয়ে এখন ওর মাথা ব্যাথা নেই তুলি সবকিছু নিয়ে গেছে জেনেও সব কিছু উল্টে পালটে দেখছে আদনান । বিছানার গদি উঠাতেই একটা কাগজ ভাজ করা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পেলো ,,,,,কাগজটার এক কোনা ভিজে গিয়েছিলো তার দাগ থেকে গেছে । নিজের হৃদপিন্ড প্রচণ্ড বেগে রক্ত পাম্প করছে বুকটা ধড়াস ধড়াস করছে ওর। ভাজ খুলতেই ফ্লোরে বসে পড়লো আদনান ,,,,,,,,,

চলবে,,,