বিয়ের বন্ধন পর্ব:- (০৩)

0
2150

গল্প:-#বিয়ের_বন্ধন পর্ব:- (০৩)
লেখা_মোহাম্মাদ_সৌরভ
!!!
নিজের স্ত্রীকে ছাদের উপর রাত ১২টার সময় অন্যের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে একটুও অবাক হয়নি। বরং নিজের প্রতি অনেকটা বিরক্ত হয়েছি বলতে পারেন। কারন বাসর রাতে তসিবা আমাকে ওর মনের সব কথা বলে দিয়েছে। তাও কেনো জানি আমি তসিবার সাথে ওর বাপের বাড়ীতে এসেছি। তসিবা আমাকে ওর স্বামী হিসাবে মেনে নিলেও ইমরান ওর হৃদয় জুড়ে থাকবে। এই একটা কথা আমার কানে বার বার বাজতে থাকে।

আচ্ছা এখন যেহেতু এতটা কষ্ট করে ছাদের উপর এসেছি। দেখে যাই তসিবা কার সাথে এমন ভাবে হেসে কথা বলতেছে। যখনি আরেকটু সামনে গেলাম তখনি পুরা ছাদ লাল নীল হলুদ আর সাদা লাইটের আলোতে জ্বলে উঠেছে। আর সবাই এক সাথে হেপিবাড্ডে টু ইউ বলে চিল্লাই উঠছে। তাবু আর তাসলি এসে তসিবাকে জড়িয়ে ধরছে।

তাসলি:- আপু তুই কি দুলাভাইকে সাথে নিয়ে এসেছিস। বাব্বাহ দুই দিনে এত মায়া। স্বামী ছাড়া কোথাও যাওয়া বারন আছে নাকী?

তসিবা:- আরে আপনি কখন আসছেন?

(আমি এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। তখনি তাবু বলে,,,)

তাবু:- দুলাভাই আপু তো আপনাকে বলছে।

আমি:- মানেটা কি আমাকে তো তুমি আসতে বলছো?

তসিবা:- আমি বলছি কখন?

আমি:- তসিবা তুমিও না তুমি তো আমাকে ইশারা দিয়ে ছাদে আসতে বলছো।

শ্বশুড়:- বুঝতে পারছি আচ্ছা এখন বাদ দাও। আসো বাবা এই তসিবা নে কেকটা কেটে নে।

তসিবা:- হ্যা আসতেছি। (তসিবা গিয়ে কেকে কেটে প্রথমে ওর আব্বুকে তারপর তাবু আর তাসলিকে খায়িয়ে দিয়েছে)

তাবু:- আপু সৌরভ ভাইয়াকে খাওয়াবি না কেক।

তসিবা:- সরি ভূলে গেছি। (তসিবা কেক নিয়ে আমার দিকে আসছে। আর আমি মোবাইলটা শুধু কানে দিয়ে কথা বলার মত করে নিছে নেমে এসেছি। তসিবা আমার পিছু পিছু কেক নিয়ে নিছে নেমে চলে আসছে।) এই আপনি কেক না খেয়ে চলে আসছেন কেনো?

আমি:- অন্যের স্ত্রীর হাতে আমি কেক খেতে যাবো কেনো?

তসিবা:- মানে?

আমি:- বাংলা বুঝতে সমস্যা হয় নাকী?

তসিবা:- আপনি এমন কেনো শুনি?

আমি:- আমি যেমনি হয় না কেনো তাতে তোমার কোনো সমস্যা হবে না। অনেক রাত হয়ছে এখন ঘুমাবো দেখি সরেন।

তসিবা:- আমি জানি কেনো আপনি কেক খেতে চাচ্ছেন না।

আমি:- হ্যা তা তো তুমি ভালো করে জানতে পারছো। এখন সরো আমার ঘুম পাচ্ছে তসিবাকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছি।

তসিবা:- কেক খেয়ে নেন আমাকে কোনো উপহার দিতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি আমাকে গিফট করতে হবে বলে কেক খাচ্ছেন না।

আমি:- অন্যের গ্রালফ্রেন্ডকে আমি কেনো উপহার দিতে যাবো। আর তাছাড়া তুমি আমার কেও না। যদিও বিয়ের একটা বন্ধনে জড়িয়েছি ঠিকই কিন্তু সেইটা মাত্র লোক দেখানো।

তসিবা:- আমি জানি আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না। কিন্তু আমার ভাগ্য খারাপ কারন আপনার কাছে আরো ১০ মাস থাকতে হবে আমাকে।

আমি:- ১০ মাস কেনো? তুমি না বলছো ৯ মাস আর ৯ মাস থেকে তো ৪ দিন চলে গেছে। আর মাত্র ৮ মাস ২৬ দিন থাকবে। আর এই সময় গুলা যে কি করে কাটাবো সেইটা আমি চিন্তা করতেছি।

তসিবা:- আরো ৯ মাস ২৬ দিন ১১ ঘন্টা আমার আপনার বউ হয়ে থাকতে হবে। এরপর আপনাকে বলতে হবে না আমি নিজেই আপনাকে ডির্ভোসের কাগজ পাঠিয়ে চলে যাবো।

আমি:- ৯ মাস না ৮ মাস এর বেশি ১ দিন রাখবো না। দেখি পেচাল কম করে আমাকে ঘুমাতে দাও। তসিবা সরে গেছে আমি শুয়ে পড়েছি সাথে তসিবাও। দুজনে দুই দিকে মুখ করে শুয়ে আছি তখনি তসিবা বলে,,,,

তসিবা:- আচ্ছা আপনি কি কখনো কোনো মেয়েকে ভালোবেসেছেন?

আমি:- আমাকে কি পাগলা কুত্তা কামড় দিয়েছে আমি অন্যের বউ পাহারা দিতে যাবো।

তসিবা:- মানে?

আমি:- তুমি এত কিছু বুঝবে না এখন ঘুমাও আর সকালে উঠে ফজর নামায পড়বে। তসিবা কোনো কথা বলেনি আমি ঘুরে তসিবার দিকে তাকিয়ে দেখি তসিবা স্বপ্নের দেশে চলে গেছে। তসিবার ঘুমের চেহারাটা দেখতে একদম বাচ্ছাদের মত লাগছে। তসিবার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে চোখে ঘুম চলে আসছে বলতেও পারবো না।

সকালে আজান শুনে ঘুম ভাঙ্গছে তসিবাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে আমি নামায পড়তে চলে গেলাম। নামায পড়ে এসে দেখি তসিবা শুয়ে আছে চুল গুলা এলো মেলো হয়ে আছে। না এত সুন্দর ঘুমটা ভাঙ্গার দরকার নেই। আমি শাওয়ার নিতে চলে গেছি উয়াশ রুমে। শাওয়ার শেষ করে বের হয়ে দেখি তসিবা রুমে নেই। আমি কাপড় পরে রেডি হয়েছি কারন আজকে বাড়ীতে যেতে হবে। ঐ দিকে অফিসে আজ থেকে জয়েন করতে হবে। এখন তসিবাকে বাড়ীতে রেখে আমি অফিসে চলে আসবো। রুম থেকে বের হবো তখনি তসিবার সাথে ধাক্কা খেয়েছি,,,,

তসিবা:- ও মা গু,,,,, বলছে তখনি তসিবার মুখ চেপে ধরেছি।

আমি:- ঐ তোমার গলার এত আওয়াজ কেনো?

তসিবা:- ওমমম ওমমমম।

আমি:- আরে ওমম ওমমম করছো কেনো? (তখনি তসিবা ওর মুখ থেকে আমার হাতটা সরিয়ে বলে,,,)

তসিবা:- মুখ চেপে ধরে রাখলে কথা বলবো কি করে?

আমি:- এত কথা না বলে তারা তারি রেডি হয়ে নাও। তোমাকে বাড়ীতে রেখে আমি অফিসে যাবো।

তসিবা:- আজকে আমার কলেজে যেতে হবে।

আমি:- কেনো?

তসিবা:- দরকার আছে। আর আমি আপনার আব্বুকে বলছি বিয়ের পর আমার ফাইনাল পরীক্ষা দিবো। ওনি রাজি হয়ছে তাই তো আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ছি।

আমি:- তোমাকে আমি পড়া লেখার খরচ দিতে পারবো না।

তসিবা:- দিতে হবে না আমি টিউশন করি এতে আমার হয়ে যায়।

আমি:- যা খুশি তা করো তাতে আমার কি? দেখি সামনে থেকে সরো। তসিবা সরে গেছে আমি রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছি। নিছে নেমে সুফায় বসেছি এমনি তাবু আর তাসলি দুই শালী দুই দিকে বসেছে। দুজনে দুই দিক দিয়ে খুচা দিতে লাগলো। আর আমিও সহ্য করতে না পেরে দুই টাকে কাতু কুতু দিতে লাগলাম। দুজনের সাথে দুষ্টমি করতেছি এমনি তসিবা এসে হাজির। আমি তসিবার দিকে তাকিয়ে ওদেরকে ছেড়ে দিলাম।

তসিবা:- দুষ্টমি শেষ হলে খেতে আসেন।

তাসলি:- দুলাভাই আপুর সাথে ঝগড়া করছেন নাকী?

আমি:- আরে না চলো খেতে যাবো। সবাই বসে এক সাথে নাস্তা করেছি। নাস্তা শেষ করে শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে সালাম করে তাবু আর তাসলির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।

তসিবার সাথে রাস্তায় তেমন কোনো কথা হয়নি। সকালে রাস্তায় জ্যাম নেই তাই তারা তারি বাড়ীতে চলে এসেছি। বাড়ীর ভীতরে ঢুকে আম্মাকে বলে বাইকের চাবিটা নিয়ে অফিসের জন্য রওনা দিবো তখনি,,,,

তসিবা:- আপনি অফিসে যাবার সময় আমাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাবেন।

আমি:- আমার তো কোনো কাজ নেই। দেখি সরো এমনিতে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

তসিবা:- দেখছেন আম্মা আপনার ছেলে আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছে না। (আরে আম্মা আসলো কেনো দূর কিছু একটা বলে এখান থেকে নিয়ে যায়।)

আমি:- হয়ছে আম্মাকে বলতে হবে না আমি তোমার সাথে মজা করেছি। আসো বসো তসিবা এসে বাইকে বসেছে। আমি বাইক চালাচ্ছি কিছুটা পথ যাওয়ার পর দেখি ম্যাডাম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ম্যাডামের কাছে যেতেই বলে,,,,

ম্যাডাম:- আরে সৌরভ তুমি সাথে নতুন বউ নিশ্চয়। (ম্যাডামের কথা শুনে তসিবার দিকে তাকিয়ে দেখি। তসিবা অনেকটা আগ্রোহের সাথে নিজেকে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে। তখনি আমি বলি,,,)

আমি:- আরে না মেম ও তো আমার কাজিন কলেজে যাবে তাই সাথে নিয়ে এসেছি। সামনে ওর কলেজ আপনার গাড়ীর কি হয়ছে?

ম্যাডাম:- হঠাত করে গাড়ীটা স্টার্ট নিচ্ছে না। আর আজকে অনেক জুরুরী একটা মেটিং আছে এখন কি যে করি।

আমি:- তসিবা তুমি একটু বাইক থেকে নামো।

তসিবা:- কেনো?

আমি:- আগে নামো তারপর বলছি। (তসিবা বাইক থেকে নেমে দাড়িয়েছে) নাও ৫০ টাকা তুমি রিক্সা করে কলেজে চলে যাও। আর ম্যাডাম আপনি আসেন আমিও অফিসে যেতেছি। তসিবা দাঁড়িয়ে আছে ৫০ টাকা হাতে আর আমি ম্যাডামকে বাইকে বসিয়ে চলে আসছি,,,,,,
To be continue