বৃষ্টি নামার পরে পর্ব-১৪

0
4320

#বৃষ্টি_নামার_পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-১৪

২৩.
“এভাবেই বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।মোটামুটি ভালোভাবেই সবকিছু চলছে।তবে অনুর ছ্যাছড়ামি আগের চেয়ে দিনদিন বাড়ছে,যখন তখন যেখানে সেখানে অনু’র এইসব ঢং দেখতে দেখতেবাড়ির লোকেরা যেমন ক্লান্ত!ঠিক তেমনই মৃন্ময় আর গুঞ্জনও ক্লান্ত।কিন্তু কেউই মুখ ফুটে ওকে কিছু না বললেও গুঞ্জন সবসময় মুখের উপর সবকিছু বলে দেয়!”

“আজ সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।ঠান্ডা দিন হওয়ায় দাদীমা মৃন্ময়কে অফিসে যেতে দিলেন না।সেজন্য মৃন্ময়ও আর গেলো না।কিন্তু অস্বাভাবিক ভাবে দুপুরের পর কাঠফাটা রোদ উঠলো। অনু সকাল থেকেই মৃন্ময়ের পেছনে আঠার মতো লেগে আছে,তা দেখে মৃন্ময় সোজা ওর রুমে চলে গেলো।গিয়ে দেখে গুঞ্জন টি-শার্ট আর প্লাজু পরে সোফায় পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে।মৃন্ময়ের চোখ আটকে গেলো গুঞ্জনের ফর্সা পায়ের দিকে।ঘুমের ঘোরে প্লাজুটা প্রায় হাটু পর্যন্ত উঠে এসেছে।মৃন্ময় সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে রইলো,রইলো যে রইলোই।রোদের আলোগুলো পড়ছিলো পাগলি মেয়েটার চোখে-ঠোঁটে।ধুয়ে দিচ্ছিলো গুঞ্জনের লালচে গোলাপি মুখখানা।”

“মৃন্ময় চোখ ফিরিয়ে নিলো,ওর বুকের ধুকপুকানি বাড়ছে ক্রমশই।আজকাল গুঞ্জনকে দেখলেই ওর এমন হয়।কেন এমন হয় এটা ও জানে না,জানতে চায়ও না।যদি নিজের কাছে নিজেই ধরা পড়ে যায়?যদি কিছু কঠিন সত্য বেরিয়ে আসে তাহলে?নাহ!আর ভাবতে পারছে না মৃন্ময়।অজান্তেই ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে থাকা গুঞ্জনের কাছে।মুখে এসে পড়া এলোমেলো চুলগুলো সরিয়ে দিলো,গুঁজে দিলো কানের পেছনে।খুব ইচ্ছে করছে গুঞ্জনের ঠোঁটজোড়া ছুঁয়ে দিতে খুব,খুব খুব।আচ্ছা, গুঞ্জন তো ঘুমিয়ে আছে!এই ফাঁকে ছুঁয়ে দিতেই পারে,তাই না?গুঞ্জন তো টেরই পাবে না।আবার এটাও ভাবলো যে,ঘুমন্ত কোনো মানুষের সাথে এরকম করাটা কি ঠিক হবে?এটা কি অপরাধ নয়?কিন্তু খুব যে ইচ্ছে করছে!”

“অবশেষে ঠিক করলো মৃন্ময় এ অপরাধটা ওর করতেই হবে।তাই আস্তে করে নিজের হাতের আঙগুলটা রাখলো গুঞ্জনের নরম ঠোঁটে। আর ঠিক এমন সময়ই গুঞ্জন বসিয়ে দিলো একটা কামড়,ঘুমের ঘোরেই।ছাড়ছে না কিছুতেই,মৃন্ময় আর না পেরে গুঞ্জনকে ঠেলতে লাগলো।ব্যথায় আউচ আউচ করছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে।”

“নিজের হাতে কারো ঝাঁকানো অনুভব করে গুঞ্জন পিটপিট করে তাকালো।নিজের মুখের ভেতর মৃন্ময়ের আঙুল দেখে হতভম্ব হয়ে রইলো।”

“মৃন্ময় আহতস্বরে বললো, ছাড়ো প্লিজ!”

“গুঞ্জন ছাড়লো।অতঃপর কিছু একটা মনে হতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো। সোফার উপর হাতড়ে হাতড়ে নিজের ওড়না খুঁজলো,নাহ নেই কোথাও।ইশ,কি অস্বস্তিতে পড়া গেলো রে বাবা।কেন যে এসব পড়ে ঘুমালো আর কেন যে দরজাটাই বা আটকালো না ভেবে নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে গুঞ্জনের।এখন এই লোকটার সামনে দাঁড়াবে কি করে?ওফফ!”

“মৃন্ময় বললো, কিছু খুঁজছো নাকি?”

-“জ্বি!”

-“কি খুঁজছো?”

-“আপনি যান রুম থেকে!”

“মৃন্ময় অবাক হয়ে বললো,কেন?”

-“প্লিজ যান না!”

“মৃন্ময়ের কি হলো কে জানে,রেগে গেলো।রকিং চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো,যাবো না!”

“গুঞ্জন বুঝলো একে আর বলে লাভ নেই।তাই গুঞ্জন জড়োসড়ো হয়ে বসলো।দম নিয়ে বললো,আমার ওড়না খুঁজে পাচ্ছি না।আপনি যদি একটু বেরুতেন তাহলে আমি খুঁজে নিতাম।”

“মৃন্ময় মৃদু হেসে বসে রইলো। একসময় উঠে গুঞ্জনের সামনে দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বললো,তোমার ওড়না কোথায়?”

-“জানলে কি আমি ঘ্যানঘ্যান করতাম নাকি, আজব!”

“মৃন্ময় খোঁজাখুঁজি না করে আলমিরা খুলে একটা ওড়না এনে ধরলো গুঞ্জনের সামনে।গুঞ্জন ইতস্তত করে বললো, ধন্যবাদ।”

-“এখানে ধন্যবাদের কি আছে?”

-“কিছু না!”

-“আর তুমি এইসময়ে ঘুমুচ্ছিলে কেন?এতদিন তো একবারও দেখিনি কখনো ঘুমাতে?”

“গুঞ্জনের মুখটা চুপসে গেলো।কথা কাটাবার জন্যে সন্দেহী গলায় বললো, বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি করছিলেন?”

-“মানে?”

-“ওহহ!এখন ভাব দেখাচ্ছেন?”

-“লিসেন গুঞ্জন।আমি ভাব দেখাই না।”

-“তাহলে আপনি আমার কলিজার উপর কি করছিলেন?”

-“যা ইচ্ছা তাই।তোমাকে এক্সপ্লেইন করবো না,গট ইট!”

“গুঞ্জন বললো, তাই?ওকে।না বললে নেই।বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।”

“অনু রুমে বসে ভিডিও কলে কারো সাথে কথা বলছিলো। গুঞ্জন রুমে ঢুকেই বললো, অনু অনু তোমাকে উনি ডাকছে!”

“অনু বিরক্ত হয়ে বললো, কে?”

-“তোমার জান!”

-“ক্লিয়ার করে বলো,নয়তো গেট আউট!”

-“আরে তোমার মুনু তোমাকে ডাকছে!”

“অনু তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিয়ে বললো,সত্যিই?”

-“হুম!”

-“কিন্তু কেন?”

“গুঞ্জন মুখটা হাসি হাসি করে বললো,আসলে উনি আজ আমাদের সবাইকে ঘুরতে নিয়ে যাবেন।স্পেশালি তোমার জন্য এই ট্রিপ।সো রেডি হয়ে নাও তাড়াতাড়ি।তারপর গুঞ্জন চোখ টিপ মেরে বললো,তুমি না আজ শাড়ি পরে যেও,হুম?তোমাকে একেবারে হিরোইনের মতো লাগবে।আর তোমার সাথে মিসবিহেভ করার জন্য আমি স্যরি।আসলেই তুমি একটা গুড গার্ল।সো বি রেডি?আমি যাই নাবিলা, আরিশাকে বলে আসি।আর শুনো,তুমি কালো শাড়ি পড়বে,হুম?বাই!”

“এক নিঃশ্বাসে সব বলে গুঞ্জন দৌড়ে বেরিয়ে গেলো।অনুকে কিছু বলতেই দিলো না।আর এদিকে অনুর মনে লাড্ডু ফুটছে।নাচতে ইচ্ছে করছে!”

_________

২৪.

“মৃন্ময়কে গুঞ্জন এভাবে ফাঁসানোর পরে মৃন্ময় রেগে একাকার হয়ে গেলো। ওদেরকে নিয়ে যাবার বদলে রাগ দেখাতে লাগলো।গুঞ্জন তখন নিঞ্জা টেকনিক বের করে দাদীমাকে নিয়ে আসলো।দাদীমা এসেই বললো,তুমি নাকি ওদেরকে নিয়ে যাবে বলেছিলে?তাহলে এখন যাচ্ছো না কেন?”

“গুঞ্জনও সাথে তাল মেলালো।বললো,দেখো দিদা!আমাকে বলেছে ওইসময় এখন নিয়ে যাচ্ছে না!”

-“হোয়াটটট?আমি কখন বললাম তোমাদের বাইরে নিয়ে যাবো?মিথ্যে বলার জায়গা পাও না?”

“গুঞ্জন মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বললো,দেখলে দিদা?আমাকে কি মিথ্যা বলছে তোমার নাতি?নিজেই বললো ওগো, আসো তোমাদের ঘুরিয়ে নিয়ে আসি!আর এখন নিজেই অস্বীকার করছে!”

“দাদীমা গম্ভীরমুখে বললেন,দাদুভাই তুমি ওদের বাইরে নিয়ে যাবে,বুঝলে?আর কোনো কথা নয়।আর বিয়ের পর একদিনও তো গুঞ্জনকে কোথাও নিয়ে যাওনি!”

“মৃন্ময় অসহায় ভঙ্গিতে দাদীমার কথা মেনে নিলো।দাদীমা চলে গেলো ভেতরের ঘরে।মৃন্ময় রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে রেডি হয়ে এলো।সাদা রঙের শার্ট,ইন করা কালো প্যান্ট, চোখে সানগ্লাস আর চুলগুলো একপাশে সেট করা।দেখতে পুরাই হিরো।গুঞ্জন হঠাৎ আনমনে হাসলো।অথচ সবাইকে রেডি হতে বলে নিজেই তেমন একটা রেডি হয়নি।
শুধু সালোয়ার-কামিজেই ওর সাজ শেষ!মৃন্ময়ের হঠাৎ মনে হলো গুঞ্জন কি অসুস্থ?ওকে দেখতে এরকম লাগছে কেন?”

“কিছুক্ষণ পর নাবিলা আর আরিশা রেডি হয়ে এলো।ওদের দুজনকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।আর তক্ষুনি একটা কালো শাড়ি গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো অনু।তা দেখে মৃন্ময়ের চোখ কপালে উঠে গেলো!”

“অনু মুচকি হাসি দিয়ে বললো,হাই গাইজ!কেমন লাগছে আমায়?”

“গুঞ্জন আর নাবিলা একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, দারুণ।তোমাকে একেবারে হট লাগছে,হট!”

-“রিয়েলি?”

“গুঞ্জন হাসার ভান করে বললো,ডেফিনেটলি!”

“অনু মৃন্ময়ের কাছে গিয়ে বললো,মুনু তুমি বলো কেমন লাগছে আমায়?তোমার কমেন্টই বেস্ট হবে আমি জানি। বলো বলো,,!”

“মৃন্ময় তখনও হা হয়ে আছে।অবাক হয়ে কোনোমতে বললো,অনু?তুমি সত্যিই শাড়ি পড়েছো?আই কান্ট বিলিভ?হাউ দিস পসিবল!!”

-“ইয়াহ!আমিই!”

-“সুন্দর লাগছে।এবার চলো প্লিজ!”

“গুঞ্জন বললো,জ্বি এবার চলুন।”

“মৃন্ময় বসলো ড্রাইভিং সিটে।পেছনে নাবিলা আর আরিশা।আর এদিকে অনুর ইচ্ছে সে মৃন্ময়ের পাশে বসবে,কিন্তু সে আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে গুঞ্জন বসে পড়লো মৃন্ময়ের পাশে।আর মৃন্ময় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।গাড়ি একসময় স্টার্ট করলো।সবুজ সালোয়ার-কামিজের সাথে সাদা ওড়নায় গুঞ্জনকে অপ্সরাদের মতো লাগছে।বাতাসে গুঞ্জনের চুলগুলো এসে লাগছে মৃন্ময়ের গালে,মুখে!মৃন্ময় বুদ্ধিভ্রংশ হয়ে হঠাৎ করে গুঞ্জনের ওড়নার একটা অংশ হাতে নিয়ে মুঠোতে প্যাঁচিয়ে নিলো।ওর রেশমি চুলে গভীরভাবে ঠোঁট ছুঁয়ালো,নাক ডুবালো!”

চলবে….ইনশাআল্লাহ!