#বেটারহাফ
#নিশাত_তাসনিম_নিশি
|পর্ব ২৩|
শাওন এতটুকু বলেই চুপ করে গেলো। বোতল থেকে হাতে অল্প পানি নিয়ে মুখে ছিটকাঁতে লাগলো। মাথায় ও হালকা পানি দিয়ে দিলো। রাত্রি নির্বাক হয়ে বসে আছে। নিজেকে তার অনুভূতি শূন্য লাগছে। শাফি হালকা নড়ে উঠতেই সে দু হাতে শক্ত জড়িয়ে ধরলো তাকে। তার মনের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না, এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো হচ্ছে তার?
.
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে। চারপাশ থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক কানে ভেসে আসছে। নিস্তব্ধতায় ঘেরা পুরো শহর। নির্জন পথঘাট। চৌধুরী বাড়ী প্রকৃতির থেকেও নিস্তব্ধ হয়ে আছে। সবাই বসে আছে বসার ঘরটায়, শুধু মাত্র রাত্রি উনুপস্থিত। দরজা টা পুরো খোলা, বাহিরের তাজা হাওয়া পর্দা এলোমেলো করে ভেতরে প্রবেশ করছে।
সবাই সেদিকে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কখন যে রাত্রি আসবে?
শাহিনুর কঠিন দৃষ্টি রেখে তাকিয়ে আছে, বৃষ্টি বসে নখ কামড়াচ্ছে। ওর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কতটা চিন্তিত! সাগর চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।
সোহাগী আর সোহেল দুজনে একসাথে ডাইনিং টেবিলের দুটো চেয়ারে আসে আছে। সোহাগী একটু পর পর তার স্বামীকে পা দিয়ে খোঁচাচ্ছে।
শিফা বিরক্তি নিয়ে একপাশে পায়চারি করছে। সবাই রাত্রির ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। নিরব, ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে ড্রয়িংরুম জুড়ে।
কিছুক্ষণ বাদেই অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে রাত্রি বাড়ীর সামনে এসে পৌঁছালো। একটা দামী কার থেকে তাকে নামতে দেখা যাচ্ছে। ও বের হয়ে মাথা ডুকিয়ে ভেতরে কাউকে জড়িয়ে ধরলো। মাথা টা বের করে বাহিরে এসে দাড়াতেই ওপর পাশ থেকে দরজা খুলে বের হলো শাওন। তার চোখেমুখে খুশির জোয়ার। পুলকিত চেহারা! অত্যাধিক খুশি হলে মুখের হাসি টা অন্যরকম দেখায়, সেটা ই দেখাচ্ছে তার মুখে। রাত্রি তাকে হাসিমুখে, হাত জোড় করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাড়ীর ভেতর ডুকতে লাগলো।
বেইস মেন্ট থেকে ঘরের প্রত্যেক টা সদস্যের চোখে পুরো ঘটনা টা পড়লো। সবাই দাড়িয়ে ওর কর্মকান্ড দেখছিলো। হাজারো বিষ্ময় আর অবাকের রেশ ফুটে উঠেছে প্রত্যেকের মুখে। শুধুমাত্র সাগর গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো।
শিফা আর সোহাগী কানাঘুষো করে বলে,–” দেখেছো, রাত-বিরাতে বাড়ীর সামনে নষ্টামি করছে। একটা চাকরী পেতেই দেখলে রং বদলে গিয়েছে। চাকরী কি আর এমনি এমনি পেয়েছে নাকি! ”
দুজনের কানাঘুষো সাগর,শাহিনুর, সোহেলের কান পর্যন্ত পৌঁছালো। কেউ কিছু বললো না।
সাগর সোজা হয়ে দাড়িয়ে রুমের দিকে হাটা দিয়ে বলে,–” মা, আপনি যে মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন আশা করি তার উত্তর দেখেছেন। তাই এ বৈঠক এখানেই সমাপ্ত। দ্বিতীয় কথা, ও আমার ওয়াইফ, তাই ওর সম্পর্কে আশা করি কেউ যেনো কিছু না বলে। ও কি করছে না করছে সব আমার ব্যাপার। ওর বিষয়ে আপনারা কেউ কোনো কথা বলবেন না। আশা করি আমার কথা বুঝবেন। ”
সাগর গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে গেলো রুমের দিকে। যাওয়ার পথে বৃষ্টিকে ডাক দিয়ে বলে ওর সাথে যাওয়ার জন্য। বৃষ্টি চুপচাপ ওর পেছন পেছন চলে যায়।
সবাই যে যার রুমে চলে গেলো। শাহিনুর তখনও ওখানে দাড়িয়ে রয়েছে। সে কী ভাবলো আর কি হলো?
সবাইকে একসাথ করলো।
রাত্রির জন্য যখন অপেক্ষা করছিলো তখন সাগর অস্থির হয়ে কারণ জানতে চেয়েছিলো সেই সময় শাহিনুর বলেন,–” আমি তোমাদের সম্পর্কের মীমাংসা চাই। কোনো একটা পর্যায় চাই, কেউ ই তো কারো সাথে মিল নেই। তিনজন তিন মূখী হয়ে আছো। আজ আমি তোমাদের সম্পর্কের ফয়সালা চাই, অবশ্যই তিনজনের মতামতের উপর। তোমরা তিনজন যা বলবে তার উপরেই সব ঠিক হবে।”
সাগর সহ সবাই অবাক ছিলো, শুধু বৃষ্টি ছাড়া। কারণ ও মনে মনে ভেবে নিয়েছে ওর সাথে হয়তো আজ সম্পর্ক শেষ করা হবে। জবাবে সাগর তার মাকে বলে,–” আগে রাত্রি আর বৃষ্টি ওদের দুজনের মতামত জানতে চাই। পরা কি চায় আমিও সেটা জানতে চাই? তারপর না হয় আপনি যা সিদ্ধান্ত নিতে চান নিতে পারবেন।”
সবাই ওর কথা মেনে নিয়েছিলো। কিছুক্ষণ চলতে থাকে অপেক্ষা পরবো এরপর তো হলো এসব।
.
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাত্রি এসে বাসায় ডুকলো। প্রচন্ড ক্লান্ত সে, বাচ্চা টাকে সামলানো সহজ ব্যাপার নয়। কষ্টের সাথে তার মধ্যে খুশিও দেখা দিয়েছিলো। তার আরাম লাগছিলো সোনামণি, বাবু, এসব বলে ওকে আদর করা। রাত্রিকে একদম ছাড়তেই চাইছিলো না। রাত্রি অবাক ছিলো সেই সাথে প্রচন্ড খুশিও হয়েছিলো। জোর করে তাকে বাড়ীতে নিয়ে গিয়েছিলো শাফি, সারা বিকাল ওই বাড়ী তে ছিলো। শাফির সাথে কাটানো দিন টা তার জন্য সত্যি স্বপ্নের মতো ছিলো। বোনের ছেলে জানার পর তার প্রতি আরো বেশি টান পেয়েছিলো সে।
আসার সময় রাত্রি ওকে কত কিছু বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে, নামার সময় তো ওকে ছাড়ছিলোই না। রাত্রি নেমে ওকে জড়িয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলেছে যে, –” আজকে আমাকে যেতে হবে তাই না? তুমি যদি যেতে না দাও তাহলে আমি আর আসবো না।”
শাফি কাঁদো কাঁদো মুখে ওকে যেতে দিয়েছে। এরপর শাওন বের হয়ে ওকে এগিয়ে দিয়ে অনেক ধন্যবাদ জানালো।
রাত্রি ভীষণ খুশি মনে ওদের বিদায় জানালো। এতকিছুর মাঝে ওর মনেই ছিলো না আজকে সন্ধ্যায় যে ওকে নিয়ে আলোচনার বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ডুকে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে টা বুকে জড়িয়ে বলে,–” আজকের দিন টা আমার জীবনের সবচেয়ে বেস্ট দিন ছিলো। আই উইশ আমার প্রতিটা দিন এমন সুন্দর হোক। আমি কোনোদিন ভুলবো না এ সুন্দর মুহূর্ত গুলো।”
কথাগুলো বলে তোয়ালে টাকে জড়িয়ে চুমু দিলো, ওর ধারনা এটা শাফি। ও একটা বাচ্চা পেয়ে গেছে! একটা নিঃসন্তান মেয়ে যখন কোনো বাচ্চা পেয়ে যায়, অনুভূতি টা তখন কত টা দামী আর মাধুর্যপূর্ণ সেটা শুধু সে নিজে উপলব্ধি করতে পারবে।
শাওন বলেছে শাফিকে ওকে দিয়ে ও বিদেশ চলে যাবে, এ কথা শুনার পর তো ও পাগলপ্রায়। শাফি চিরদিনের জন্য ওর হয়ে যাবে এরপর ও শান্তিতে শশুড়বাড়ী থাকতে পারবে। কেউ তাকে কিছু বলতে পারবে না, তাছাড়া ও আরো ভাবছে যে এ খবর সাগর শুনলে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।
জানালার পর্দার আড়াল হতে সাগরের চোখে সব পড়ছে। সে শুধু তার প্রেয়সীর খুশি দেখছে। বুক টা অস্বাভাবিক উঠানামা করছে। হৃদস্পন্দন থেমে থেমে চলাচল করছে। সাগর নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজায় টোকা দিলো, রাত্রি উঁকি দিতেই সে বলে,–” ভাত খাবে না? আসো খেয়ে নিবে।”
সাগর কে দেখে রাত্রি উৎফুল্ল হয়ে গেলো। সে প্রায় মুখ দিয়ে বের করেই ফেলেছিলো শাফির কথা। খুশিতে গদগদ হয়ে বলতে নিচ্ছিলো তখন আবার নিজ থেকেই চুপ করে যায়। ভাবলো, এখন বলে কি হবো?তার থেকে বরং শাফিকে নিয়ে এসে একবারেই ওকে চমকে দিবো।
নিজের উত্তেজনা টা চেপে রেখে রাত্রি ক্লান্ত গলায় বলে,–” না, আমি খাবো না। খেয়ে এসেছি, পেট একদম ভরা। এখন ঘুমাবো, খুব ক্লান্ত। ”
সাগর গম্ভীর দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে রইলো, রাত্রি হাত উঠিয়ে আড়মোড়া ভাঙ্গতে লাগলো। সাগর মনেমনে বলে উঠে,’হ্যা দেখতে পাচ্ছি তোমার ক্লান্তি।’
ঠৌঁটে হালকা হাসি এনে বলে, –“আচ্ছা। তাহলে ঘুমাও। কিছু লাগলে আমাকে জানিও।”
রাত্রিও মিষ্টি হেসে ওকে বিদায় দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। দরজা বন্ধ করতেই সাগর লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস ছাড়লো।
রাত্রিকে ছেলেটার ব্যাপার টা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না। নিজের বিবেকে বাধঁলো বিষয়টা। তাই সে চুপচাপ চলে গেলো রুমের দিকে। বুকটা আজ ভীষণ জ্বলছে। ইচ্ছে করছে সব বরফ এনে বুকে লাগিয়ে রাখি তাহলে হয়তো ঠান্ডা হবে এ দহন।
বারান্দায় দাড়িয়ে আধ ঘন্টা যাবৎ সিগারেট টানছে সাগর। এত গুলো খাওয়ার পরেও তার নেশা টা জমলো না। খেয়েই চলছে,খেয়েই চলছে। কী করা উচিত? কাউকেই তো সে খুশি করতে পারছে না। তার জীবন টা নদীর মাঝখানে আটকে আছে, সে এ তীরেও যেতে পারছে না আবার ওই তীরেও যেতে পারছে না। এভাবে হলে তো ও মরে যাবে। কি করবে সে? কি হবে এর শেষ?
বাহিরে থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বারান্দার জানালা দিয়ে তাকাতেই দেখলো বৃষ্টি রুমের টেবিলের ওপর মাথা রেখে বসে কাঁদছে। বৃষ্টিকে সে প্রায় ই কান্না করতে দেখে, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। সে নিরুপায়!
চলবে!
~~~ আপু এত ধীর লেখছেন কেনো?কাহিনী এগুচ্ছে না তো। শুধু পেচিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরঃ আপু প্রথম পর্বেই বলেছি তৃতীয় পক্ষের লেখা টা টাফ। আমি সাজতে পারছি না,মিলাতেও পারছি না। প্রথম পক্ষ হয়ে লিখলে হয়তো সাজিয়ে গুছিয়ে দ্রুত লেখতে পারতাম। এরপরেও তো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই গল্প পড়ার মতো লেখার জন্য এমন ভাবে লিখছি। সময় নিয়ে পর্ব করে লিখছি। সবার বিষয় বিবরণ করছি তাই ধীর। আশা করি বুঝবেন।
*আপু গল্পের নায়িকা কে?
উত্তরঃ আপি গল্পের নাম টা বেটারহাফ মানে বউ। তাহলে এখানে বউ কে?
সবার ভালো লাগবে সে আশায় তো লিখি নি তাই অনেকের কাছে ব্যতিক্রম লাগবে তা জানি। রিচেক করি নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।