বেলী ফুলের সুবাস পর্ব-১৩+১৪

0
671

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৩
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

দুপুর গড়িয়ে বিকেল বেলা। আকাশ পরিষ্কার।মৃদু বাতাস বইছে।ছোটরা সকলে মিলে হাঁটতে বের হয়েছে।বড়দের যাওয়ার কথা থাকলেও শেষে যাওয়া হলো না। আর যায় নি সামিয়া এবং ইয়াসির। ইয়াসির সচরাচর কোথাও যায় না। সামিয়া মাথা ব্যথার অজুহাত দিয়ে যায় নি।ইয়াসিরের সাথে কথা বলার জন্য স্পেস খুঁজছিল পেয়েও গেলো বটে।ইয়াসির আগে থেকেই ছাদে দাড়িয়ে ছিল।সামিয়া ছাদে লাগানো ফুলের গাছে পানি দেয়ার বাহানায় ছাদে এসেছে।যদি কোনো ভাবে ইয়াসির কে তার ভালোবাসা বুঝানো যায়।চেষ্টা করতে সমস্যা কোথায়? সে তো আর প্রেম করতে চাইছে না।একবার শুধু মানুষ টা হুম বলুক।ডিরেক্ট দিয়ে করে নিবে। ছাদের এক কোনায় ইয়াসির দাড়িয়ে ছিল।ইয়াসিরের কাছে গিয়ে বললো সামিয়া
-ইয়াসির ভাই ভালোবাসায় এত যন্ত্রণা কেনো?

-ভুল মানুষকে ভালবাসলে যন্ত্রণা পেতেই হবে? এই বয়স টাই আবেগের।এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।

-এতো সহজে কি ভালোবাসা ভুলে থাকা যায়?

-মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।আপনি চেষ্টা করে দেখুন।আপনি পারবেন।

-আমাকে আগলে নিলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো আপনার?আমি শুধু আপনার পাশে থাকতে চাই ইয়াসির ভাই।

-আপনি আমার পাশে থাকলে শুধু ক্ষতি নয় ভয়ংকর কিছু হয়ে যাবে। চাইলেই সবাইকে পাশে পাওয়া যায় না। নিয়তি মেনে নিতে হয়।

-আপনি আমার ভালোবাসা কবুল করলে আমাদের নিয়তি অন্যরকম হবে।একটা বার আমার ভালোবাসাকে নিজের করে দেখুন না?কেনো আপনার প্রতি এত টান অনুভব হয় বলুন না?

-শুনুন মেয়ে চাইলেও কিছু কিছু কাজ করা আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। চুম্বক এবং লোহা এক সাথে থাকলে চুম্বক লোহাকে নিজের দিকে আকর্ষণ কাজ করবেই। নিজের প্রতি টানবেই ।তাই লোহার উচিৎ চুম্বকের থেকে দূরে থাকা। তেমনি আপনার ও উচিৎ আমার থেকে দূরে থাকা।

-আপনি বড্ডো নিষ্ঠুর ব্যক্তি ইয়াসির ভাই।

-নিষ্ঠুরতা আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশ্রিত।

বেশ অনেক ক্ষন হাটার পর তারা হাঁটতে হাঁটতে নদীর ঘাটে চলে এলো ।সকলে মিলে নৌকায় উঠবে বলে ঠিক করে।বেশ বড় একটা নৌকা ভাড়া করে নদী ঘুরলো তারা।নৌকা থেকে নেমেই চোখে পড়লো হওয়াই মিঠাই।অনেক পছন্দ এটা বেলীর।তাইতো চোখে পড়ার সাথে সাথেই খাওয়ায় জন্য বায়না ধরলো বেলী।সকলে মিলে হওয়াই মিঠাই সহ ফুচকা,আরো কিছু খাবার খেয়ে বাসায় ফিরলো।

-সামিয়া তুই এভাবে একা বসে আছিস কেনো?(সাজিয়া)
– বেশি মাথা ব্যাথা করছে?(বেলী)

সামিয়া চোখ তুলে তাকালো তাদের দিকে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে যে অনেক ক্ষন যাবৎ কান্না করার ফলে এমন হয়েছে।

– কান্না করেছিস কেনো তুই?
একনাগাড়ে বলে উঠলো বেলী আর সাজিয়া।
-ইয়াসির ভাই কি আমার ভালবাসা কখনো কবুল করবে না? (সামিয়া)
-তুই মন খারাপ করিস না।সব ঠিক হবে (সাজিয়া)
-তোরা আর আমাকে আশা দিস না।আমি আর তদের মিথ্যা আশা নিতে পারবো না।(সামিয়া)
-তুই আগে কান্না করা বন্ধ কর।মুড ঠিক কর।আমি ইয়াসির ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখবো (সাজিয়া)
-তুই যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তোকে এই অবস্থায় কেউ দেখলে হাজার টা প্রশ্ন ছুড়বে। (বেলী)
-হুম।

বসার ঘরে খাওয়ায় পর্ব শেষ করে সকলে বসে আছে।শুধু উপস্থিত নেই সামিয়া।মাথা ব্যথার কথা বলে আগেই রূমে চলে গিয়েছে।রাজিয়া বেগম বেলীকে বললেন সামিয়া যে ডাকতে।

-চাচী সামিয়ার তো মাথা ব্যাথা।
-কিছু হইবো না তুই সামিয়াকে ডেকে নিয়ায়।
বললেন বিলকিস বেগম।

বেলী সামিয়া কে ডাকতে চলে গেলো।চিন্তা করতে লাগলো কি এমন হয়েছে যে সামিয়া কে এখনই ডেকে পাঠালো।

সামিয়া যখন ক্লাস টেনে পড়ে তখন মিতা বেগম তার ছেলে নিহালের জন্য সামিয়ার হাত চেয়েছেন।সামিয়াকে ছোট বেলা থেকেই খুব ভালোবাসেন। বলতে গেলে তিনি আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন যে সামিয়াকে নিজের ছেলের জন্য চাইবেন।তাইতো বড়রা সকলে মিলে দুজনের বিয়ে ঠিক করে রাখেন। এই যে সামিয়ার এইচ এস সি এক্সামের পড়ে বিয়ে হবে। বোনের কাছে মেয়ে দিবেন বলে মোর্শেদ হোসেন ও আপত্তি করেন নি।তবে রাজিয়া বেগম প্রথমে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন যে আত্মীয় মধ্যে এই রকম সম্পর্ক তার কাছে ভালো লাগে না। তা ছাড়া তিনি মেয়েকে নিজের পায়ে দারকরানোর পর বিয়ে দিতে চান।তিনি মনে করেন আত্মীয়র মধ্যে সম্পর্ক না করলেই ভালো।তবে সকলের বুঝানোর পর তিনি এই বিয়েতে রাজি হোন।মোর্শেদ হোসেন স্ত্রীকে বোঝান।মেয়ে ফুপুর কাছে থাকবে এটা তো ভালো কথা।নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন তারা ।মেয়ে শান্তিতে থাকবে আর ভালো ছেলের কাছে কেই বা না চাইবে মেয়ে দিতে।অবশেষে রাজিয়া বেগম রাজি হন।সব কিছু ঠিক থাকলেও তারা বাচ্চাদের মতামত নিতে চাইলেন।তাইতো সামিয়াকে ডেকে পাঠালেন।

-সামিয়া তুমি কি এই বিয়েতে রাজি ?
সামিয়াকে জিজ্ঞাস করলেন রাজিয়া বেগম।

সামিয়া এক পলক ইয়াসিরের দিকে তাকালো।নাহ লোকটার কোনো ভাবান্তর নেই।সামিয়া চুপ থাকলো। একে তো নিজের ভালোবাসার মানুষ কে কাছে পেলো না তার উপর আবার বিয়ে।প্রতিটা মেয়ের জন্য খুব কষ্টের মুহূর্ত এটা।নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্য বাড়িতে যেতে হবে।আপন মানুষ গুলোকে ছেড়ে আসতে হবে।তাই তো সামিয়ার চুপ থাকাকে সকলে সম্মতি ভেবে নিলো।সামিয়া এক দৌড় রুমে চলে গেলো।সকল ভাবলো হয়তো লজ্জা পেয়েছে।অথচ কেউ তার বুকের ভেতর রক্ত ক্ষরণ দেখতে পেলো না।বুকের ভেতর চলতে থাকা ঘুর্ণি ঝড় কেউ টের পেলো না।মন ভাঙার আওয়াজ কেউ পেলো না।বুকের ভিতর যে তান্ডব চলচ্ছে তা কেউ লক্ষ্য করলো না।নিহাল কে জিজ্ঞেস করা হলে সেও কিছু না বলে জায়গা ছেড়ে চলে যায়। দুই পরিবার বেশ খুশি।অবশেষে ছেলে মেয়েদের হাত এক করে বিয়ে টা হবে।

রাত গভীর ঝি ঝি পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। নিস্তব্ধ রাত।মৃদু বাতাস বইছে।সকলে নিদ্রায় ডুব দিলেও ডুব দিতে পারে নাই এক কন্যা ।সামিয়া নিজেকে অনেক ক্ষন যাবৎ আটকে রেখেছে।বেলী আর সাজিয়া তাকে অনেক বুঝিয়েছে।বলেছে যে লাস্ট বারের মতো তারা ইয়াসিরের সাথে কথা বলবে।এইবার ইয়াসির না বললে তাকে নিহালের সাথে বিয়ে বসতে হবে।আচ্ছা ভালোবাসার মানুষকে ভুলে অন্য কেউ কে গ্রহণ করা কি খুব সহজ? যারা ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যায় তাদের কি বুক কাপে না? মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়ে না? হাত পা অবশ হয়ে যায় না? বুকের মাঝে রক্ত ক্ষ’র’ণ হয় না?পা*গল পা*গল লাগে না?নিজেকে শূন্য লাগে না?প্রিয় মানুষের কথা ভেবে কি চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে না?একটা বার কি প্রিয় মানুষের কথা মনে পড়ে না?পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ গুলোর মধ্যে একটি হলো ভালোবাসার মানুষকে ভুলে থাকা।এই কঠিন কাজ আর দশটা মানুষ করলেও সামিয়া করতে পারবে না আর করতেও চায় না।যে করেই হোক আজ এই লোকের সাথে একটা বিহিত করতেই হবে।

চলবে…..?

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :১৪
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

সামিয়া ইয়াসিরের রুমে প্রবেশ করে চোখ বুলালো পুরো রূমে। কোথাও ইয়াসির নেই।বারান্দা থেকে সি*গ্রেটের গন্ধ আসছে।সামিয়া বারান্দায় যেয়ে দেখলো ইয়াসির আকাশের দিকে তাকিয়ে সি*গ্রেট খাচ্ছে। সামিয়া দেরি না করে এক ঝটকায় পিছন থেকে ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরলো।ইয়াসিরের পিঠে মাথা ঠেকিয়ে দু চোখের অশ্রু বিসর্জন দিলো। ঘটনা বুজতে পেরে ইয়াসির সামিয়াকে এক ঝটকায় নিজের থেকে সরিয়ে নিলো।
-এতো রাতে আমার রুমে কেনো এসেছেন?

-আপনার কি আমার জন্য একটুও মায়া হয় না? আমি আপনার কাছে দু হাত জোড় করে বলছি আমার ভালোবাসা মেনে নিন।আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।

-ভালো ঘরের মেয়েরা রাতের বেলায় অন্য কোনো পুরুষের ঘরে যায় না।আপনি কেনো এসেছেন?চলে যান বলছি ।
ঝাজালো কণ্ঠে বলে উঠলো ইয়াসির।

-আমি যাবো না।আপনি প্লিজ এমন করবেন না।আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।আমি ম*রে যাবো।আমাকে নিজের করে নিন না।
বলেই সামিয়া আবারও ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরলো।বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে ইয়াসির।

-আপনি এতো রাতে আমার ঘরে এসেছেন এই কথা কেউ জানতে পারলে কে\লে\ঙ্কারি হয়ে যাবে।আপনার চরিত্রে দাগ লাগবে।
নিজেকে সামিয়ার থেকে ছাড়িয়ে সামিয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল ইয়াসির।

-দা’গ লাগুগ আমার সর্বাঙ্গ জুড়ে ,ছেয়ে যাক শহর জুড়ে আমার নামে দু’শ চরিত্রে কা’লী ,তবুও আমার আপনাকে চাই ।আপনাকে পেতে সকল ক/ল/ঙ্কের দাগ মাথা পেতে নেব আমি।সব কিছুর উর্ধ্বে আমার আপনাকে চাই।

-আপনি কেনো বুঝেন না আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আপনি কেনো আমার পিছে পরে আছেন?আপনি প্লিজ বিয়েটা করে নিন। আমি আপনাকে গ্রহণ করতে পারবো না।লাস্ট বার বলছি আমার থেকে দূরে থাকবেন। ফার্দার আমার পিছন পরে থাকলে কিন্তু অনেক খারাপ হয়ে যাবে। আর শুনে রাখুন আমার জীবনে অন্য কেউ আছে।ইস্ দেট ক্লিয়ার।
বেশ জোড়ে চেঁচিয়ে বললো ইয়াসির।সামিয়া কেপে উঠলো।প্রিয় মানুষের মুখে অন্য জনের কথা শুনা কি খুব সহজ?নাহ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সামিয়ার যে ইয়াসিরের জীবনে অন্য কেউ আছে। অস্রুসিক্ত নয়নে ইয়াসিরের দিকে তাকালো।নিঃশব্দে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

সকাল আটটা।সকলে বেশ খুশি।সকলে মিলে ঘুরতে যাচ্ছে সাদা পাথর। সিলেটের সবচেয়ে সুন্দর ভিজিটিং স্পট গুলোর মধ্যে একটি।বেলী তো আসার আগে অনেক খুশি ছিলো। কতো মজা করবে ভেবেছিল কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।তার সব চেয়ে কাছের মানুষের মন ভালো নেই সেখানে তাঁর মন কিভাবে ভালো হয়?সকাল বেলা সে আর সাজিয়া গিয়েছিল ইয়াসিরের কাছে।ইয়াসির সাফ সাফ তাদের কথা শুনতে বারণ করে দিয়েছে। সকাল সকাল ঢাকায় ব্যাক করেছে ইয়াসির।বলেছে কি এক ইম্পর্টেন্ট কাজ চলে এসেছে।কি আর করার।সামিয়াকে বুঝিয়ে রেডি হয়ে নিয়েছে।এখন মন ম*রা হয় থাকলে হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।তাইতো সুন্দর করে রেডি হয়ে নিলো।সকলে এক সঙ্গে বেরিয়ে গেলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সকলে সাদা পাথরে পৌঁছে গেলো। এতক্ষণ মাইক্রো দিয়ে আসলেও মেইন লোকেশন যেতে একটি ট্রলার ভাড়া করতে হবে।তাই ট্রলার ভাড়া করে নিলো। পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর তারা সাদা পাথরে চলে এলো।কি সুন্দর দৃশ্য।যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে।একদম সরাসরি ইন্ডিয়ান পাহাড় গুলো দেখা যাচ্ছে।সেই সাথে বড় বড় ঝর্না। কি সুন্দর করে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তাই না?মানুষ মুগ্ধ হতে বাধ্য।যে কারো চোখ এই অপরূপ দৃশ্য দেখে পুলোকিত হবার কথাই। তাও যদি প্রথমবার এমন দৃশ্য দেখা যায়।বেলীর মন ও ভালো হয়ে গেলো।সুবাসের হাত ধরে পানির উপর পাথরে বসে পড়লো।শুধু পাথর আর পাথর দেখা যাচ্ছে।বড়রা কেউ পানিতে নামবে না তাই ট্রলারে বসে রইলো। ছোটরা মিলে মানিতে নামলো।বেশ কিছু ছবি তুলে নিলো। সেখানে একটা মার্কেট ও বসে।সেই মার্কেট থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনলো বেলী।সাথে রিদিতা ও কেনা কাটা করলো।সাজিয়া ও তার পছন্দ মতো কিছু জিনিস কিনে নিলো।শুধু কিছু কিনে নাই সামিয়া।মন ভালো না থাকলে কি কিছু ভালো লাগে নাকি ? তার কাছেও সব কিছু বিষাক্ত লাগছে।অবশেষে ঘুরো ঘুরি করার পর বাসায় ফিরলো তারা।

যে যার মতো রেস্ট করে বসার ঘরে বসে আছে।
আজকের দিন টা কিন্তু বেশ ভালোই কাটলো।খুব মজা করেছি আজ।(সাজিয়া)
-হুম সাজিয়া আপু সাথে মাইক্রোতে বমিও করেছো। এই দেখো তোমার একটা সুন্দর ছবি ও তুলেছি আমি।
বলেই নিশি সাজিয়াকে ছবিটা দেখলো।ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সাজিয়া বমি করছে।হাতের বমির পলি।চোখ মুখ কেমন বাজে দেখাচ্ছে।নাক দিয়ে পানি বের হচ্ছে সাথে বেলুনের মতো ফুলে আছে।কি এক বিচ্ছিরি অবস্থা।

-এই ছবি ডিলিট কর বে/য়া/দব।রিদিতা আপু ওকে ছবি ডিলিট করতে বলো(সাজিয়া)
-আমি এই ছবি তোমার হবু জামাইরে দেখাবো(নিশি)
-ডিলিট দে তাড়াতাড়ি পরে ওর হবু জামাই দেখলে মান সম্মান থাকবে না ওর (রিদিতা)
রিদিতার কথা শুনে হাসতে লাগলো সবাই।হাসির মাঝে এক অন্যরকম আওয়াজ হলো।আওয়াজ টা আর কিছুর না কে যেন পাদ দিয়েছে।পদের শব্দ এসেছে মিহিরের দিক থেকে। আবার এক দফা হাসির আওয়াজ শোনা গেলো।

-তুমি কি পা’দ দিয়েছো নাকি মিহির?(সায়েম)
-অতিরিক্ত হাসির ফলে পেটের গ্যাস গুলো হওয়ায় রূপান্তর হয়ে বেরিয়ে এসেছে।কি দুর গন্ধ। ছিহ (নিশি)
-এখানে ছি করার কি আছে তোমার বুঝি পাদ আসে না।থাক এই টপিক বাদ দাও।এখন বলো কাল কোথায় যাচ্ছি আমরা?(মিহির)
-এখন দেখেছো তোমরা কিভাবে কথা ঘুরাচ্ছে
মিহির (নিশি)
-কাল যে যেদিক মন চায় যেও আমি আর বেলী ঢাকা ব্যাক করবো (সুবাস)

সুবাসের কথা শুনে সবার মুখ বাংলার পাঁচের মতো হয়ে গেলো।বেলীর মুখ কালো হয়ে গেলো। সবে মাত্র এলো এখনই আবার যাওয়ার কথা।

-কেউ কোথাও যাবে না।তোমরা আরো দুই দিন থেকবে তার পর যাবে।
মিতা বেগম বললে উঠলেন।
-আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে ফুপু।মাত্র দুদিনের ছুটি নিয়ে এসেছে।
-কিছু হবে না আমি ইয়াসিরের সাথে কথা বলে নিয়েছে। সে সব কিছু হ্যান্ডেল করে নিবে বলেছে। আর কোনো কথা নয়।(মিতা বেগম)
-ফুপু দুই দিন থাকা হবে না। আর আমার কাজ তো আমাকেই হ্যান্ডেল করতে হবে তাই না?আবার বেলীর কোচিং মিস হচ্ছে।থাকলে হয়তো কাল থেকে পরশু চলে যাবো।

মিতা বেগম আর কথা বলেন না।এই ছেলে এক দিন থাকতে চেয়েছে এটাই বেশি।বেশি জুড়ো জুড়ি করা ঠিক হবে না। বেলী ও হাসলো খানিকটা । একদিন বেশি থাকতে পারবে।নাহলে তো কালকেই ঢাকা ব্যাক করতে হতো।

রাতে বেডে শুয়ে আছে বেলী।সুবাস ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।বেলীর ফোনে টুক করে ম্যাসেজ আসলো।দেখলো সাজিয়া একটা ছবি পাঠিয়েছে।ছবির নিচে লিখা -দেখেছিস সুবাস ভাইয়া তোর দিকে কিভাবে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।
ছবিটা আজ তুলেছে সাজিয়া।বেলীর দিকে সুবাস তাকিয়ে ছিল আর তখনই ছবিটা তুলে নেয় সাজিয়া।

-বেশি কথা না বলে ঘুমা। (বেলী)
– কই একটু ধন্যবাদ দিবি যে এত সুন্দর ছবি তুলে দিলাম তা না করে,ঘুমাতে বলছিস(সাজিয়া)
-চুপ চাপ ঘুমা। আমিও ঘুমাই গুড নাইট।(বেলী)
-তুই এখন ঘুমাবি কেনো? তোর তো এখন জামাইর সাথে রোমান্স করার সময়।তার মধ্যে আজ ওয়েদার টাও কি রোমান্টিক। আহা(সাজিয়া)
-তোর মাথায় শুধু উল্টো পাল্টা কথা ঘুর ঘুর করে। অসভ্য একটা।(বেলী)
-উচিৎ কথা বললেই অসভ্য শুনতে হয়।শুন না আমাদের খালামণি ডাক কবে শুনাবি? প্রোসেসিং কি শুরু করেছিস নাকি?(সাজিয়া)
বেলী আর কথা বাড়ালো না।এদের সাথে কথা বলা মানে উল্টো পাল্টা কথা শুনতে হবে। ফোন অফ করে ঘুমিয়ে গেলো।
ঘুমের মধ্যে অনুভব করলো কেউ তাকে আষ্ট পৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।করো গরম নিঃশ্বাস বেলীর কাঁধে পড়ছে।গ্রামে তো এমনি রাতে বেলা ঠান্ডা লাগে।তার উপর আজকে আবার বৃষ্টি পড়েছে। চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল।তাই তো ঘুমের ঘোরে বেলীকে জড়িয়ে ধরে আছে সুবাস।বেলী সুবাসের দিকে তাকায়,দ্রিম লাইটের আলোয় লোকটাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।কেমন বাচ্চাদের মত ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমিয়ে আছে।বেশ স্নিগ্ধ লাগছে।বেলী সুবাসের দিকে তাকিয়ে থেকে কিছুক্ষণ অতিবাহিত করে পুনরায় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।

চলবে……..?