#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :৩২
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
সামিয়ার কথা শেষ না হতেই কোলে তুলে নিলো ইয়াসির।চাঁদের এক পাশে দোলনা। সেই দোলনায় বসিয়ে দিলো সামিয়াকে।সামিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
-“আরে করছেন কি?’
-“চুপ থাকুন।আমি যা যা বলছি চুপ চাপ শুনবেন।”
………
-“জানেন সামিয়া কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে শুনেছিলাম বাবা নাই।তখন আমার বয়স আট।সাজিয়া মাত্র হয়েছে।তখন পাশে কেউকে পাই নি।ওই যে বলে না দু সময়ে কেউকে পাশে পাওয়া যায় না ঠিক তেমন যখন আব্বুর মৃত্যু হয় তখন দাদুর বাসায় সবাই আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।আমাদের ঠাই হয় মামার বাসায়।তখন মামা আমাদের সব খরচ দিতো।মা নিজের আর আমাদের হাত খরচের জন্য এটা ছোট কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে টিচার হিসেবে যোগ দেন।বলতে গেলে মামী আমাদের দেখে শুনে রাখতে।নিশি হওয়ার পর ও তিনি আমাদের আদর যত্ন কোনো কমতি করেন নি।বলা চলে একদম মায়ের মত তিনি আমাদের ভালোবাসতো ও যত্ন করতে।”
ইয়াসির শ্বাস টেনে আবার বলতে লাগলো।
-“মাকে দেখেছি দিন রাত এক করে কষ্ট করে কাজ করতে। প্রায় সময় দেখতাম মা চোখের কোনে জমে থাকা পানি অতি যত্নে মুছে ফেলতো।তখন বুঝতাম না।তারপর আসতে আসতে বড় হওয়া শুরু করি। দায়িত্ব গুলো নিজের কাধে নিতে শুরু করি।কাজের সুবাদে ঢাকায় শিফট হই।সাজিয়াকে বেলীর স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি করায়।তারপর একদিন সাজিয়াকে স্কুলে দিতে গেলে এক বেনি করা স্কুল পড়ুয়া মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম। না! আসলে ভালোবাসে ফেলেছিলাম।।ভেবে ছিলাম মেয়েটাকে মনের কথা বলবো।তবে মেয়েটা একটু বড় হলে।তারপর কেটে যায় বহু দিন।কিন্তু মেয়েটার ভালোবাসায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।তাই ভেবেছিলাম মেয়েটাকে সব বলবো।কিন্তু সেই দিন আম্মুর কাছে শুনি সেই মেয়েকে মামী নিজের ছেলের বউ করে নিবেন।কথা টা শুনে কেমন যেনো হচ্ছিলো মনের মধ্যে।মনে হচ্ছিলো অসহ্য যন্ত্রণায় আমি মা*রা যাবো।সেদিন কেনো জানি এতো গুলো বছর পর চোখ জল গড়িয়ে পড়েছিল।হয়তো সেই মেয়েকে না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে এমন হয়েছিল। তার পর থেকেই সেই মেয়ে থেকে দূরে দূরে থাকতাম। তবে এতটুকু জানতাম যে মেয়েটা আমাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।কি করার ?যে মামী আমাদের নিজের মায়ের মত ভালোবাসা দিয়েছে,আদর যত্ন করে করেছে,তাকে দুঃখ দেয়ার কোনো মানে হয় না।তার হাসি কেরে নেয়ার কোনো মানেই হয় না।তাই অতি কষ্টে মেয়েটার থেকে দূরে দূরে থাকতাম।তবে এটা বিশ্বাস করতাম যে , সৃষ্টি কর্তা যদি চান তবে ঠিকই সেই মেয়েটি আমার হবে।তার পর…
-“তারপর কি?”
-“তারপর আজ সেই মেয়েটির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো।সেই মেয়েটি আমার ঘরের রাণী হবে বলে ঠিক হলো।”
কথাটা বলে ইয়াসির উঠে বসলো।সামিয়া লক্ষ করলো ইয়াসিরের চোখে পানি।ইয়াসিরের চোখের পানি মুছে দিলো সামিয়া।সামিয়ার চোখ দিয়েও দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। ইয়াসিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।বেশ কিছু ক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে ইয়াসিরকে উদ্দেশ্যে করে বললো সামিয়া।
-“শুনতে চাই”
-“কি শুনতে চাও?”
-“যা আপনি সেই মেয়েকে বলতে চেয়েছিলেন।কিন্তু বলা হয়ে উঠে নি।যা শুনার জন্য আমার হৃদয় ছট ফট করছে এবং যা বহু দিন আগেই বলা উচিত ছিল আপনার।”
-“খুব ভালোবাসি সামিয়া।খুব বেশি ভালোবাসি আপনাকে।নিজের থেকে বেশি আপনাকে ভালোবাসি।আপনি কি আপনার হৃদয়ের রাণী হবেন?”
-“ভালোবাসি।অসম্ভব রকমের ভালোবাসি।আমিও চাই আপনার হৃদয়ের রাণী হয়ে থাকতে।”
-“কখনো আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলবেন না।অনেক কষ্টে আপনাকে পেয়েছি আমি। আর হারাতে চাই না।”
-“হারাবো না।পাশে থাকবো আজীবন।”
একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো পরম আবেশে।তাদের ভালোবাসা প্রকাশের সাক্ষী হলো বৃষ্টি।তখনই শুরু হলো বৃষ্টি।একদম নিমিষেই ভিজে গেলো দুজন।সামিয়া ইয়াসিরকে ছেড়ে দিলো।পুরো শরীর সাথে জামা লেপ্টে গেলো।সমিয়ার গাল,গলা বেয়ে পানি পড়ছে।চুল গুলো ভিজে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে।সামিয়া চলে আসতে নিলেই ইয়াসির তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।কেমন ঘর লাগা দৃষ্টি ইয়াসিরের।
-“ইয়াসির ভাই।”
-” হুশ”
সামিয়াকে কাছে টেনে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল।পর পর গলায় ঘাড়ে চু’মু খেলো।ঠোটের কাছে ঠোঁট নিতেই মেঘের গর্জনে ঘোর কাটলো ইয়াসিরের।ছেড়ে দিল সামিয়াকে।
-“চলে যান সামিয়া।আপনি চলে যান।”
……
-“আপনি এখানে থাকলে নির্ঘাত কোনো ভয়ংকর ভুল করে ফেলবো আমি।যে ভুল আপনি নিতে পারবেন না।যে ভুল আপনার জন্য যন্ত্রণা দায়ক।”
সামিয়া আর এক মিনিট দাড়ালো না।দৌড়ে নীচে চলে এলো।
_____________
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো।সুন্দর ভাবে বিয়ে পড়ানো শেষ হলো।সে দিন রাতেই মিতা বেগম নিজ পরিবার নিয়ে সিলেট চলে গেলেন। নিজেদের বাড়ি খালি করে মেয়ে গুলো চলে গেলো অন্যের বাড়ি।এটাই মেয়েদের নিয়তি যে মানুষ গুলোকে এতো ভালোবাসে একটা সময় সেই মানুষ গুলো থেকে দূরে চলে যেতে হয়।অন্য পরিবারে সাথে মানিয়ে নিতে হয়। স্যাক্রিফাইস করতে হয়।
সামিয়াকে ফুলে সাজানো বাসর ঘরে বসানো হলো।ফুলের ঘ্রাণে চার পাশ মো মো করছে।ইয়াসিরের সাথে তার বোনেরা টাকা নিয়ে কথা বলছে।আজ নাকি পকেট খালি না করলে রুম ঢুকতে দিবে না।অবশেষে সব পর্ব চুকিয়ে ইয়াসির ঘরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো।শেষ শব্দে কেপে উঠলো সামিয়া।এই দিন টার জন্য কত অপেক্ষা করেছে সে তা বলার বাইরে।কত স্বপ্ন এই দিন টার জন্য।তবে কি হলো আজ!কেমন ভয় লাগছে। শ্বাস – প্রশ্বাস ঘন হচ্ছে। অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।বুকের মধ্যে দ্রিম দ্রিম শব্দ হচ্ছে।
সামিয়ার ভাবনার মাঝে ইয়াসির সামিয়ার কাছে এলো।সামিয়ার পরনে লেহেঙ্গা একটু উচু করলো।পা নিজের কাছে টেনে ধরলো।পর পর কয়েক টা চু’মু খেলো পায়ের পাতায়।সামিয়া কেপে উঠলো।সামিয়ার শরীর জুড়ে বিদ্যুৎ গতিতে শিহরণ খেলে গেলো।সাজিয়া ওড়না খামচে ধরলো।ইয়াসির যত্নে সামিয়ার পায়ে নুপুর পরিয়ে দিলো। ইয়াসির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামিয়া জুয়েলারি খোলার কথা বলে আয়নার সামনে দাড়ালো। একে একে জুয়েলারি খুলে এক পলক আয়নায় তাকালো।দেখতে পেলো এক জোড়া চোখ তাকে ভীষণ ভাবে লক্ষ্য করছে।সামিয়া চোখ সরিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।বেশ কিছু ক্ষন পর নিজের ঘাড়ে কারো উষ্ণ নিশ্বাস ও পেটে কারো হাতের বিচরণ লক্ষ্য করলো। কেপে উঠলো সামিয়া। শুকনো ঢোক গিললো।ইয়াসির সামিয়ার ঘাড়ে পর পর চু’মু খেল।সামিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট গুঁজে দিলো।মিনিট দশেক পর ছেড়ে দিল।সামিয়া হাপাতে লাগলো।এভাবে কেউ চু’মু খায় নাকি?
।লজ্জায় লাল হয়ে গেলো সামিয়া।ফির সামিয়ার ঠোটের কাছে ঠোঁট নিলে বাধা দেয় সামিয়া।
-“আজ এর কোনো বাধা মানবো না।বহু দিন অপেক্ষা করেছি এই দিনের জন্য।আর না।আজ একটু সহ্য করেন সামিয়া।এই পাগল আমি টাকে আগলে নিন।”
বলেই আবার ঠোটের মাঝে ঠোঁট গুজে দিলো ইয়াসির।বেশ কিছু ক্ষন পর ছেড়ে দিল।
-“এবার আপনি তৈরি হন মিসেস ইয়াসির আজ আপনাকে আমার ভালোবাসায় সিক্ত করবো।অতি যত্নে ছুঁয়ে দিবো আপনাকে। আপনার সারা শরীর জুড়ে শিহরণ খেলে যাবে এই ইয়াসিরের ভালোবাসায়।মুঠো বন্ধু করবো এই সময়টাকে। অতি কাছে থেকে আপনাকে উপলব্ধি করবো।
সামিয়ার কানের কাছে ফিসিফিসিয়ে বললো ইয়াসির।সামিয়া দু হাতে ইয়াসিরকে জড়িয়ে ধরলো।কোলে তুলে নিলো সামিয়াকে ইয়াসির।
সামিয়ার মাঝে ডুব দিলো।আরো একটি ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো আজ।
______
কেটে গেছে আরও দুটি মাস।বেলীর ফার্স্ট ইয়ারে এক্সাম শেষ।বেলী ও সুবাস যাচ্ছে কক্স বাজারে। এইতো আজ সন্ধ্যা বেলা সুবাস হঠাৎ করে ফোনে করে বলে যে তারা নাকি আজ রাতের বাসে কক্স বাজারে যাচ্ছে।বেলী প্রথমে হতোবাক হলেই মনে মনে খুশি হলো।যাক এবার সমুদ্র দেখা হবে।বহু দিনের শখ বেলীর যে, প্রিয় মানুষের হাতে হাত ধরে হাঁটবে সমুদ্রের কিনারা ধরে। পাশাপাশি থেকে সময় গুলো উপলব্ধি করবে।তাই সব কিছু রেডী করে নিলো।সুবাস বাসায় ফিরলে ফ্রেশ হয়ে সবাইকে বলে তারা বেরিয়ে গেলো কক্স বাজারে যাওয়ার উদ্দেশে।( লেখিকা – মেঘকন্যা)
রাত একটা। ক্লান্তিতে সুবাস দু চোখ বুজে ঘুমিয়ে আছে।কিন্তু বেলীর চোখে ঘুম নেই।তার চোখ তো তার ব্যাক্তি গত পুরুষকে দেখতে ব্যস্ত।এই যে এই লোক ছাড়া আজ বেলীর চলে না। প্রতি মুহূর্তে শুধু এই লোককে পাশে চায় মন ।নানা বাহানায় ছুয়ে দিতে মন চায়।সুবাসের পাশাপাশি থাকতে মন চায়।সুবাসের সাথে থাকলে মনের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করে। সময়গুলো সুন্দর ভাবে উপভোগ করে।আজ বেলীর মস্তিস্ক জুড়ে শুধু আর শুধু মাত্র সুবাসের বসবাস।বেলী কথা গুলো ভেবে সুবাসকে জড়িয়ে ধরে।সুবাসের দিকেকে তাকিয়ে বলে
-”””সকলে প্রশ্ন করে” নারী কিসে আটকায়?
অন্য সবার কথা তো জানি না তবে “আমি,এই আমি আপনাতে আটকে গেছি!
ভীষণ বা’জে ভাবে আটকে গেছি
মৃ*ত্য ছাড়া অন্য কোনো কিছুই আপনাকে আমার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”””
বলেই সুবাস হাতে চুমু খেলো বেলী।সুবাসের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো।
কক্সবাজার পৌঁছে তারা হোটেলে উঠলো।গোসল করে নাস্তা করলো।সারাদিন বিশ্রাম নিয়ে বিকাল বেলা সমুদ্র পারে হাঁটতে গেলো। সমুদ্র পারে যেতে বেলী বাচ্চাদের মত ছুটো ছুটি করতে লাগলো।এতো সুন্দর দৃশ্য।বেলী বাচ্চাদের মত সুবাসকে এটা সেটা দেখাতে লাগলো।সুবাসের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে সমুদ্র পার ঘেষে হাঁটতে লাগলো।সুবাস শুধু মুগ্ধ হবে তার প্রেয়সীকে দেখতে লাগলো।
-“কি দেখেন এতো মুগ্ধ হয়ে?”
-“আমার প্রেয়সীকে।”
-“থাকবে এই মুগ্ধতা সব সময়?”
-“জানি না সব সময় থাকবে কি না।তবে এই চোখ আর কখনও কোনো কিছুতে মুগ্ধ হবে না তা হলোক করে বলতে পারি।”
-“ওহ।ভালো।তবে কি শুধু মুগ্ধতা নাকি অন্যকিছু?”
-“অন্যকিছু বলতে?”
-“ভালোবাসেন?”
-“বলতে হবে?”
-“বলা উত্তম।”
-“কেনো?তুমি উপলব্ধি করতে পারো নি?”
-“উপলব্ধি সবাই করে।কিন্তু প্রিয় মানুষের মুখে কিছু কথা সবাই শুনতে চায়।”
-“অন্য সবার কথা বাদ ।তুমি কি চাও?তুমি শুনতে চাও?”
সুবাসের প্রশ্নে বেলী লজ্জা পেলো।সুবাসের ঠোঁট প্রসারিত হলো।আজ যেনো,তার প্রেয়সী,সময় ,পরিস্থিতি,সুযোগ সব কিছু চাইছে তার মনের কথা ঠোঁটে নিয়ে আসতে।
-”” দেখতে পাচ্ছো কি এই সাগরের বিশালতা?
এর বিসালতার চেয়ে বেশি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা!””
“”এই যে,সাগরের গভীরতা তার চেয়ে বেশি তোমার প্রতি আমার মুগ্ধতা!””
“সাগরের দিকে চেয়ে থেকে সে দিকে দৃষ্টি রেখা শেষ হয় ঠিক সেই জায়গা থেকে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার শুরু!””
কথা গুলো বলে বেলীর হাতে ঠোঁট ছোঁয়ালো সুবাস।বেলী লজ্জা পেলো।বেলীকে জড়িয়ে ধরে বললো
-“খুব ভালোবাসি বেলী ফুল। পাগলের মতো ভালোবাসি।অনেক অনেক বেশি ভালবাসি আমার বেলী ফুলকে।”
“ভালোবাসি সুবাস।অসম্ভব রকমের ভালোবাসি আপনাকে।”
সমাপ্ত
(কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ)