ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব – ১২
#লিখা – নীলকন্ঠী
জ্ঞান ফিরেছে রুহির। কিন্তু এখনো কথা বলা মানা। চোখ খোলার পর ই দেখলো আদি তার একটা হাত এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেন সুযোগ পেলেই রুহি উড়াল দিবে । ভালোবাসা টা কখন কিভাবে শুরু হয়েছে তা আদির জানা নেই। কিন্তু শুরু টা হয়েছে তো!
রুহি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আর চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে। রুহির এই কষ্ট আদির আর সহ্য হচ্ছে না। একটু সুস্থ হলেই নিজের কাছে নিয়ে আসবে সে। আগলে রাখবে ।কিন্তু মনের মাঝে এখনো খচ খচ করছে, রুহি কি চায়। সে কি আদি কেই চায় নাকি রাফান কে?
কিন্তু যাকেই চায় না কেন আদি রুহিকে নিজের কাছেই রাখবে। পরের টা পরে দেখা যাবে।
রাফান বাইরে অনেক ক্ষন যাবত হইচই করছে। রুহিকে শুধু এক নজর দেখার জন্য।
–প্লিজ খালা মনি এক বার আমাকে দেখতে দাও। তারপর আর চাইবো না প্রমিজ।
নিজের বোনের ছেলের এমন ছন্নছাড়া অবস্থা রুহির আম্মুর সহ্য হলো না ।কিন্তু উনি এ ও বুঝলেন আদির আম্মু কোন কিছুই ভালো ভাবে নিচ্ছে না।
রাফান পাগলের মতো রুহির রুমে ঢুকে কান্না শুরু করে।
রুহি ভয়ে আরো আড়ষ্ট হয়ে যায়। না কিছু বলতে পারছে না কিছু করতে। রাফান শুধু চিৎকার করে বলছিলো আমি ঠিক তোকে চেয়ে নিবো রুহি ঠিক নিজের করে নিবো। আদি চাচ্ছিলো না কোন ঝামেলা হোক।
বহু কষ্টে নার্স রা রাফান কে সেখান থেকে সরায়। কয়েক দিন পর ই রুহি কে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিলো। আদি এক প্রকার জেদ ধরেই রুহি কে নিজের বাসায় এনে রাখে।
রাহেলা বেগম আদির হাত শক্ত করে শুধু বলে,
–আমার মেয়ে টা ভীষণ অবুঝ বাবা, এত টুকু বয়সে অনেক সয়েছে। ওকে আগলে রেখো।
এই রুহি আর আগের রুহির মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। চুপচাপ বাসাতেই থাকে। পারলে রুমেই আবদ্ধ থাকে। নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিয়েছে। রুহির শুধু মনে হতো ওর জন্য এত গুলো মানুষ কষ্ট পেয়েছে। ও যত দূরে থাকবে ততোই সবাই ভালো থাকবে।
চুপচাপ পড়তে বসা, মাঝে মাঝে শাশুড়ি মাকে সাহায্য করা , বারান্দায় আনমনে বসে থাকাতেই রুহির জীবন। হ্যা চোখের সামনে আদি কে দেখে আজকাল ভিতরের হৃদয় টা হুহু করে উঠে। মাঝে মাঝে মনে হয় মন খুলে কথা বলি। কিন্তু কোথায় যেন কিসের জড়তা কাজ করে।
আদি ও সেদিনের কথা আর জানতে চায় নি। এ প্রসঙ্গে কথাও বাড়ায় নি। রুহির হয়ত একারণে ই অভিমানের পাহাড় জমেছে।
সন্ধ্যা হলেই আদির কাছে পড়তে বসতে হয়। ওই সময় টুকু বুকের ভীতরে উথাল পাথাল ঝড় চলে। আদির চোখে তাকাতে ও পারে না সে। আর আদি, সেতো পারে ফ্রি হতে না সেও তো তার মতোই থাকে।
“”আমি তো এমন ই রুহি, কিন্তু তুমি তো আমাকে তোমার মায়াজালে আটকেছিলে। এখন সেই আগের রুহি রুহি গন্ধ টা পাইনা। তোমার তুমি কে ও খুজে পাইনা। শুধু সময়ের অপেক্ষা কবে তুমি একটু স্বাভাবিক হবে। “”এক দৃষ্টি তে রুহির দিকে তাকিয়ে মনের মাঝে কথা গুলো আঊরাচ্ছিলো।
আজ আদির জন্মদিন, সকাল থেকেই আসমা বেগম খুব আয়োজন শুরু করলো। রুহিকে আদেশ দিলো আজ যেন একটু পরিপাটি থাকে। আদির বন্ধু বান্ধব আসবে। আর রান্না তে ও দু এক টা আইটেম যেন রুহি করে। মনের মাঝে হাজার শংকা নিয়ে শাশুড়ি মা কে রুহি বলল,
মা সকালের নাস্তা টা আমি বানাই। আমি তো বেশি কিছু পারিনা। যা পারি তাই করবো।
আসমা বেগম ও মানা করলো না। ভোর বেলা ফজর পড়েই ওরনা কেঁচে রুহি কাজে লেগে পড়লো। মুরগি ভুনা, বেগুন চাঁটনি, খিচুড়ি আর ইলিশ ভাঁজা করবে।একা একা ই সব গুছিয়ে ফেললো।
ঘুম থেকে উঠেই আদি রুহির মুখ টাই দেখতে চাচ্ছিলো। কিন্তু মেয়ে টার কোন খোঁজ নেই। সারা বাড়ি খোঁজে মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলো রুহি রান্না ঘরে।
–আমি সাহায্য করবো?
রুহি চঁমকে উঠে কিন্তু পিছনে না ফিরেই জবাব দেয়,
–না না হয়েই গেছে সব। আপনি টেবিলে বসুন আমি নিয়ে আসছি।
আদি তারপর ও দাঁড়িয়ে থাকে। আর এক মনে রুহির কাজ করা দেখে। মেয়ে টা ঘেমে একাকার। কোমড়ে ওরনা গুজে রান্না করছে, কখনো সালাদ কাটছে কখনো তরকারি নাড়াচাড়া করছে। পুরাই গিন্নি গিন্নি ভাব চলে এসেছে। নিজের অজান্তেই কাছে গিয়ে আদি কপাল থেকে চুল সরিয়ে দেয় রুহির, গুঁজে থাকা ওরনার কোনা খুলে কপাল টা মুছে দেয়। তারপর গালটা আলতো করে স্পর্শ করে বলে,
–আজকে খুদা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। টেবিলে এসো । আমি অপেক্ষা করছি।
এত্তোক্ষন কি হলো রুহি যেন কিছুই বুঝতে পারছে না । তার হাত পা রীতিমতো কাঁপা শুরু করলো। জলদি রান্না শেষ করে সব টেবিলে সার্ভ করেই রুমে চলে গেলো। আদি খেতে বসে খুব যতনে রান্না করা সব পেলো কিন্তু মানুষ টা কে ই পেলো না ।
চলবে ……