ভালোবাসা_কেবল_শুরু
পর্ব -১৩
#লিখা -নীলকন্ঠী
খেতে বসেও ঠিক ঠাক খেতে পারছে না আদি।
–কিরে ভালো হয়নি? খাচ্ছিস না কেন?
–আম্মু রুহি কোথায়?
–ও মনে হয় বেশ ক্লান্ত। একা হাতে সব করলো তো। হয়ত রেস্ট নিচ্ছে। তুই খেয়ে নে। ও পরে খাবে।
আদি উঠে পড়লো। হাতের প্লেট টাতে আরেকটু খিচুড়ি মাংস একে একে তুলে নিয়ে ই রুমের দিকে চলল। আদির মা মনে মনে বেশ খুশি হলো। যাক একজন আরেকজনের কেয়ার তো নিচ্ছে।
রুমে ঢুকেই দেখলো এলোমেলো চুল করে রুহি শুয়ে আছে। সাইড টেবিলে প্লেট রেখে আদি বিছানায় বসলো। কি আশ্চর্য মেয়ে টা ঘুমাচ্ছে। টের ই পায় নি কিচ্ছু। একটা মানুষ এত তারা তারি কিভাবে ঘুমায়? আদি ও চুপচাপ বসে রইলো। ঘুম ভাঙ্গাতে এক দম ইচ্ছা হচ্ছে না ওর।
রুহি ঘুমের মাঝে একটু নড়ে উঠতেই টের পেলো পাশেই বিছানায় কেউ একজন বসে আছে। হুর মুর করে উঠে বসলো।
–নাস্তা খেতে আসো নি কেন?
–ভালো লাগছিলো না।
–কেন? ভালো লাগছিল না? শরীর খারাপ? খুব কস্ট হয়েছে তোমার?
–না মানে আমি ঠিক আছি। এমনিতেই। আপনি খান নি?
–আমি বলেছি টেবিলে আসতে, তুমি আসো নি তাহলে খাবো কিভাবে বলো?
রুহি খুব ইতস্ততঃ হয়ে বলল
–আপনি যান , আমি টেবিলে আসছি। যখন ই নামতে যাবে তখন ই আদি বাধা দিয়ে বলল
–বসো চুপচাপ। আমি খাবার নিয়ে এসেছি।
আদি প্লেট হাতে নিয়ে লোক মা তুলে দিলো। রুহি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলতে লাগলো আপনি খান আমি নিয়ে নিচ্ছি।
–কেন? আমার হাতে খেতে কি সমস্যা? নাও খাও বলছি।
রুহি আর মানা করেনি। চুপচাপ খেতে থাকলো। কি এক অদ্ভুত অনুভূতিতে মন ছুঁয়ে গেলো। টপ টপ করে চোখের জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।
–এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন?
রুহি ফুপিয়ে কাঁদতেই লাগলো। আদি হাতের প্লেট টা বিছানায় রেখে বা হাতের উলটো পিঠ দিয়ে রুহির চোখ মুছে দিলো।
–আমি জানি আমাকে আপনি ভালোবাসেন না।
–তাই তুমি জানো? আর কি জানো?
হ্যা আমি জানি বলেই রুহি হুঁ হুঁ করে কেঁদে চললো।
–আর কি জানো?
–জানিনা কিছুই জানিনা। শুধু জানি আমার এক্সাম শেষ হলে আমাকে আবার পাঠিয়ে দিবেন।
–এই এ কথা কবে বল্লাম?
–বলতে হবে কেন? আমি বুঝি।
–বাহ কত কিছু বুঝো শুধু আমাকে ছাড়া ।
–উহু আপনাকে ও বুঝি।
–কি বুঝো শুনি, এই মুহুর্তে আমি কি চাচ্ছি বলো তো শুনি দেখি কত টুকু বুঝো আমায়।
রুহি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল
–আপনার আরেক্টু খিচুড়ি খেতে মন চাইছে। তাই না?
উচ্চস্বরে হেসে উঠলো আদি। হ্যা ইচ্ছা হচ্ছে তবে অবশ্যই তোমার হাতে। শুধু এটাই না আরো ভয়ানক ভয়ানক কিছু ইচ্ছা ও হচ্ছে।
রুহি কিছু ক্ষন চুপ থেকে ঢোক গিলে বলল কি ইচ্ছা হচ্ছে শুনি!
হুম না থাক তোমার শুনে কাজ নাই। তুমি তো আর আমার আগের রুহি নেই যে আমার ইচ্ছা পূরণ করবে ।
রুহি মুখ কালো করে নিচে তাকিয়েই বলল,
–আপনি তো এমন রুহি কেই চেয়েছেন। বিছানা থেকে প্লেট টা নিয়ে রুহি উঠে গেলো।
আদি তার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলতে থাকে তুমি যদি বুঝতে তোমাকে নিজের করে পেতে ইচ্ছা করে, অবাধ্য ছেলের মতো আদর করতে ইচ্ছা করে । তুমি যদি বুঝতে, এই আদি আর আদি নেই। রুহির ভালোবাসার জালে আটকা পড়েছে। এখন আদির জীবন শুধু ই রুহি ময়।
দেখতে দেখতে রুহির এক্সাম চলে আসলো। পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পরীক্ষার সময় টুকু রুহি আবদার করলো তাদের বাসায় থাকবে তার আম্মুর কাছে। আদি ও আর মানা করেনি। তবে বেলা করে রুহি কে পড়াতে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বেলী ফুলের মালা নিয়ে যাওয়া ছিলো আদির অভ্যাস। আর এই ছোট খাটো ব্যপার গুলোতেই তাদের ভালোবাসার বন্ধন টাকে গভীর করে তুলছে।
প্রতিদিন আদির জন্য অপেক্ষা করা, আদি আসবে বলে নিজেকে পরিপাটি রাখা, এক দিন একটু দেরি করলেই অভিমানের ঝুলি খুলে বসা, এভাবেই দিন চলতে থাকে তাদের।
দেখতে দেখতে রুহির এক্সাম শেষ হয়ে যায়। ভালো কোথাও চান্স পেতে হবে তাকে, আদি ই তাকে গাইড লাইন দেয়। রুহি ও চেষ্টা করতে থাকে খুব। আজ রুহির রেসাল্ট দিবে । টেনশনে গা হাত পা কাপছে রুহির। রুমে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে।
আজ আদির জীবনের অনেক গুরুত্বপূ্র্ণ দিন। তার পরিশ্রম সার্থক। এই দিন টার জন্য রুহি কে অনেক প্রেশারে রেখেছে। হ্যা রুহি গোল্ডেন এপ্লাস পেয়েছে। রেসাল্ট জেনেই মিষ্টি নিয়ে ছুটেছে রুহির বাসার দিকে। রুহির উজ্জ্বল চক চকে নিষ্পাপ চেহারা টা দেখতে চায় আদি।
আদি বাসার ভিতরে ঢুকে সোজা রুহির রুমে ছুটে যায়। মেয়েটা যে কি খুশি হবে তা ভাবতেই আদির অসম্ভব ভালো লাগছে। দরজায় এসে রুহিকে ডাকতেই গিয়ে ই আদি থমকে দাঁড়ায়। পায়ের নিচের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।
রাফান! আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রুহি কে।অস্ফুট শব্দে রুহি ডেকেও যেন সব শব্দ দলা পাকিয়ে আসে আদির গলায়। হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট ছুড়ে ফেলে হাত তালি দিয়ে বাহ! বলে উঠে সে।
চমকে উঠে রাফান রুহিকে ছেড়ে দেয়। রুহি ভয়ে জড়ো সরো হয়ে আদি কে বুঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।
–আমি তো তোমাদের রোমান্সের ব্যঘাত ঘটালাম। কি কপাল দেখো! এসেছি এতো খুশির সংবাদ নিয়ে, এসে আরো একটি চমৎকার দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হলো।
–আদি শুনুন, রুহি আদির হাত ধরতে গেলে আদি দুরে থাকার জন্য হাতে ইশারা করে।
রাফান ও নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
—ভাবেছিলাম তুমি আমায় ভালোবাসো। আমি ভুল ছিলাম। তুমি হয়ত রাফানের সাথে ই ভালো থাকবে।
তোমাদের দুজন কেই অভিনন্দন।
রুহি পিছন পিছন ছুটলেও রাফানের যেন ভ্রুক্ষেপ ই নেই। হ্যা সে তো এটাই চেয়েছে। এতে করে যদি রুহি কে নিজের করে পাওয়া যায় তাহলে সে এ অন্যায় করতেও দ্বিধা করবে না।
চলবে ….